সূরা আর-রাদ (আরবি: الرعد) কুরআন মাজিদের ১৩তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ একটি সূরা এবং এর আয়াত সংখ্যা ৪৩টি। এই সূরার নাম “আর-রাদ” (বজ্র) নেওয়া হয়েছে ১৩ নং আয়াতে বজ্রের উল্লেখ থেকে। সূরাটি আল্লাহর একত্ব, কুরআনের সত্যতা, এবং প্রকৃতির মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করে। এটি মানুষের জন্য হিদায়াত ও চিন্তার উপাদান সরবরাহ করে।
সূরা রাদ
সূরা আর-রাদ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদ কুরআনের কততম সূরা?
উত্তর: ১৩তম সূরা।
২. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদ মক্কী না মাদানী?
উত্তর: মক্কী সূরা।
৩. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদের আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তর: ৪৩টি আয়াত।
৪. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদের মূল বিষয় কী?
উত্তর: আল্লাহর একত্ব, কুরআনের সত্যতা, এবং প্রকৃতির মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শন।
৫. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদের প্রথম আয়াতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: “আলিফ-লাম-মিম-রা। এগুলো কিতাবের আয়াত…”
৬. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদের অন্য নাম কী?
উত্তর: “সূরা রাদ” (বজ্র)।
৭. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে বজ্র কীসের প্রতীক?
উত্তর: আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার প্রতীক।
৮. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে কিসের মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: প্রকৃতি ও সৃষ্টিজগতের মাধ্যমে।
৯. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: এটি সত্য এবং মানুষের জন্য হিদায়াত।
১০. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে কাফিরদের অবস্থা কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং শাস্তির যোগ্য।
১১. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে মুমিনদের কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: জান্নাত ও আল্লাহর রহমত।
১২. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে আল্লাহর রহমতের উদাহরণ কী?
উত্তর: বৃষ্টি দ্বারা মৃত জমির পুনর্জীবন।
১৩. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: এগুলো চিন্তাশীলদের জন্য শিক্ষণীয়।
১৪. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
১৫. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে আল্লাহর কিতাবের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: মানুষকে সত্য পথে পরিচালিত করা।
১৬. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে আল্লাহর নিদর্শন উপেক্ষাকারীদের কী বলা হয়েছে?
উত্তর: তারা ধ্বংসের যোগ্য।
১৭. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে আল্লাহর রহমত ও শাস্তির উদাহরণ কী?
উত্তর: বৃষ্টি ও বজ্রপাত।
১৮. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে আল্লাহর কিতাবের সত্যতা প্রমাণ কী?
উত্তর: এর আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট ও যুক্তিপূর্ণ।
১৯. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা করার আহ্বান কেন করা হয়েছে?
উত্তর: মানুষ যেন সত্য উপলব্ধি করতে পারে।
২০. প্রশ্ন: সূরা আর-রাদে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের কী বলা হয়েছে?
উত্তর: তারা আল্লাহর রহমত ও জান্নাতের অধিকারী।
সূরা আর-রাদ সম্পর্কে ২৫টি MCQ
১. সূরা আর-রাদ কুরআনের কততম সূরা?
- a) ১০ম
- b) ১১তম
- c) ১২তম
- d) ১৩তম
উত্তর: d) ১৩তম
২. সূরা আর-রাদের আয়াত সংখ্যা কত?
- a) ৪০
- b) ৪৩
- c) ৪৫
- d) ৫০
উত্তর: b) ৪৩
৩. সূরা আর-রাদ মক্কী না মাদানী?
- a) মক্কী
- b) মাদানী
উত্তর: a) মক্কী
৪. সূরা আর-রাদের প্রথম আয়াতে কোন অক্ষরগুলো উল্লেখ করা হয়েছে?
- a) আলিফ-লাম-মিম
- b) আলিফ-লাম-রা
- c) আলিফ-লাম-মিম-রা
- d) আলিফ-লাম-সাদ
উত্তর: c) আলিফ-লাম-মিম-রা
৫. সূরা আর-রাদের অন্য নাম কী?
- a) সূরা বজ্র
- b) সূরা রহমত
- c) সূরা কিয়ামত
- d) সূরা নূর
উত্তর: a) সূরা বজ্র
৬. সূরা আর-রাদে বজ্র কীসের প্রতীক?
- a) আল্লাহর রহমত
- b) আল্লাহর ক্ষমতা
- c) আল্লাহর শাস্তি
- d) আল্লাহর নিদর্শন
উত্তর: b) আল্লাহর ক্ষমতা
৭. সূরা আর-রাদে আল্লাহর নিদর্শন কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে?
- a) প্রকৃতির মাধ্যমে
- b) মানুষের মাধ্যমে
- c) ফেরেশতাদের মাধ্যমে
- d) জিনদের মাধ্যমে
উত্তর: a) প্রকৃতির মাধ্যমে
৮. সূরা আর-রাদে আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
- a) এটি মানুষের তৈরি
- b) এটি সত্য
- c) এটি অসম্পূর্ণ
- d) এটি শুধু আরবদের জন্য
উত্তর: b) এটি সত্য
৯. সূরা আর-রাদে কাফিরদের অবস্থা কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে?
- a) তারা সত্য গ্রহণ করে
- b) তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে
- c) তারা সত্য উপেক্ষা করে
- d) তারা সত্য ভুলে যায়
উত্তর: b) তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে
১০. সূরা আর-রাদে মুমিনদের কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে?
- a) শাস্তি
- b) জান্নাত
- c) ধন-সম্পদ
- d) ক্ষমতা
উত্তর: b) জান্নাত
১১. সূরা আর-রাদে আল্লাহর রহমতের উদাহরণ কী?
- a) বৃষ্টি
- b) সূর্য
- c) চাঁদ
- d) বাতাস
উত্তর: a) বৃষ্টি
১২. সূরা আর-রাদে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
- a) এগুলো অপ্রয়োজনীয়
- b) এগুলো শিক্ষণীয়
- c) এগুলো ভুল
- d) এগুলো মানুষের তৈরি
উত্তর: b) এগুলো শিক্ষণীয়
১৩. সূরা আর-রাদে আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
- a) তিনি দুর্বল
- b) তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান
- c) তিনি শুধু মানুষের উপর ক্ষমতাবান
- d) তিনি শুধু ফেরেশতাদের উপর ক্ষমতাবান
উত্তর: b) তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান
১৪. সূরা আর-রাদে আল্লাহর কিতাবের উদ্দেশ্য কী?
- a) মানুষকে বিভ্রান্ত করা
- b) মানুষকে সত্য পথে পরিচালিত করা
- c) মানুষকে শাস্তি দেওয়া
- d) মানুষকে ধনী করা
উত্তর: b) মানুষকে সত্য পথে পরিচালিত করা
১৫. সূরা আর-রাদে আল্লাহর নিদর্শন উপেক্ষাকারীদের কী বলা হয়েছে?
- a) তারা সফল
- b) তারা ধ্বংসের যোগ্য
- c) তারা আল্লাহর প্রিয়
- d) তারা নিরাপদ
উত্তর: b) তারা ধ্বংসের যোগ্য
১৬. সূরা আর-রাদে আল্লাহর রহমত ও শাস্তির উদাহরণ কী?
- a) বৃষ্টি ও বজ্রপাত
- b) সূর্য ও চাঁদ
- c) দিন ও রাত
- d) সমুদ্র ও পাহাড়
উত্তর: a) বৃষ্টি ও বজ্রপাত
১৭. সূরা আর-রাদে আল্লাহর কিতাবের সত্যতা প্রমাণ কী?
- a) এর আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট
- b) এর আয়াতসমূহ অস্পষ্ট
- c) এর আয়াতসমূহ মানুষের তৈরি
- d) এর আয়াতসমূহ অসম্পূর্ণ
উত্তর: a) এর আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট
১৮. সূরা আর-রাদে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা করার আহ্বান কেন করা হয়েছে?
- a) মানুষ যেন বিভ্রান্ত হয়
- b) মানুষ যেন সত্য উপলব্ধি করতে পারে
- c) মানুষ যেন শাস্তি পায়
- d) মানুষ যেন ধনী হয়
উত্তর: b) মানুষ যেন সত্য উপলব্ধি করতে পারে
১৯. সূরা আর-রাদে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের কী বলা হয়েছে?
- a) তারা আল্লাহর রহমতের অধিকারী
- b) তারা শাস্তির যোগ্য
- c) তারা ধনী
- d) তারা ক্ষমতাবান
উত্তর: a) তারা আল্লাহর রহমতের অধিকারী
২০. সূরা আর-রাদে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
- a) এগুলো অপ্রয়োজনীয়
- b) এগুলো শিক্ষণীয়
- c) এগুলো ভুল
- d) এগুলো মানুষের তৈরি
উত্তর: b) এগুলো শিক্ষণীয়
২১. সূরা আর-রাদে আল্লাহর কিতাবের উদ্দেশ্য কী?
- a) মানুষকে বিভ্রান্ত করা
- b) মানুষকে সত্য পথে পরিচালিত করা
- c) মানুষকে শাস্তি দেওয়া
- d) মানুষকে ধনী করা
উত্তর: b) মানুষকে সত্য পথে পরিচালিত করা
২২. সূরা আর-রাদে আল্লাহর নিদর্শন উপেক্ষাকারীদের কী বলা হয়েছে?
- a) তারা সফল
- b) তারা ধ্বংসের যোগ্য
- c) তারা আল্লাহর প্রিয়
- d) তারা নিরাপদ
উত্তর: b) তারা ধ্বংসের যোগ্য
২৩. সূরা আর-রাদে আল্লাহর রহমত ও শাস্তির উদাহরণ কী?
- a) বৃষ্টি ও বজ্রপাত
- b) সূর্য ও চাঁদ
- c) দিন ও রাত
- d) সমুদ্র ও পাহাড়
উত্তর: a) বৃষ্টি ও বজ্রপাত
২৪. সূরা আর-রাদে আল্লাহর কিতাবের সত্যতা প্রমাণ কী?
- a) এর আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট
- b) এর আয়াতসমূহ অস্পষ্ট
- c) এর আয়াতসমূহ মানুষের তৈরি
- d) এর আয়াতসমূহ অসম্পূর্ণ
উত্তর: a) এর আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট
২৫. সূরা আর-রাদে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা করার আহ্বান কেন করা হয়েছে?
- a) মানুষ যেন বিভ্রান্ত হয়
- b) মানুষ যেন সত্য উপলব্ধি করতে পারে
- c) মানুষ যেন শাস্তি পায়
- d) মানুষ যেন ধনী হয়
উত্তর: b) মানুষ যেন সত্য উপলব্ধি করতে পারে
সূরা আর-রাদের সানে নুযূল (অবতরণের কারণ)
সূরা আর-রাদ মক্কী সূরা হওয়ায় এটি মক্কার কাফিরদের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয়েছে। মক্কার কাফিররা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অবিশ্বাস ও সত্য প্রত্যাখ্যান করত। এই সূরার মাধ্যমে তাদেরকে আল্লাহর একত্ব, কুরআনের সত্যতা এবং প্রকৃতির মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়াও, এটি মুমিনদেরকে আল্লাহর রহমত ও জান্নাতের সুসংবাদ দেয়।
সূরা আর-রাদের গুরুত্বপূর্ণ দিক
১. আল্লাহর একত্ব ও ক্ষমতা: সূরাটি আল্লাহর একত্ব, ক্ষমতা ও মহিমা সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করে।
২. কুরআনের সত্যতা: কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সত্য কিতাব এবং এটি মানুষের জন্য হিদায়াত।
৩. প্রকৃতির মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শন: বৃষ্টি, বজ্র, পাহাড়, নদী ইত্যাদি আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪. কাফিরদের অবস্থা: কাফিররা সত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদের জন্য শাস্তি অবধারিত।
৫. মুমিনদের প্রতিশ্রুতি: মুমিনদের জন্য আল্লাহর রহমত ও জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
৬. চিন্তা ও উপলব্ধির আহ্বান: মানুষকে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা ও উপলব্ধি করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূরা আর-রাদের শিক্ষা
১. আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস: আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা ও প্রতিপালক, তাঁর কোনো শরিক নেই।
২. কুরআনের সত্যতা: কুরআন আল্লাহর বাণী এবং এটি মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ হিদায়াত।
৩. প্রকৃতির মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শন উপলব্ধি: প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান আল্লাহর ক্ষমতা ও মহিমার প্রতীক।
৪. কাফিরদের পরিণাম: সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য শাস্তি অবধারিত।
৫. মুমিনদের সাফল্য: মুমিনরা আল্লাহর রহমত ও জান্নাতের অধিকারী।
৬. চিন্তা ও গবেষণা: মানুষকে আল্লাহর সৃষ্টি ও নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা ও গবেষণা করতে হবে।
৭. ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল: মুমিনদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করতে বলা হয়েছে।
সূরা আর-রাদের মূল বিষয়বস্তু
১. আল্লাহর একত্ব ও ক্ষমতা: সূরাটি আল্লাহর একত্ব, ক্ষমতা ও মহিমা সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করে।
২. কুরআনের সত্যতা: কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সত্য কিতাব এবং এটি মানুষের জন্য হিদায়াত।
৩. প্রকৃতির মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শন: বৃষ্টি, বজ্র, পাহাড়, নদী ইত্যাদি আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪. কাফিরদের অবস্থা: কাফিররা সত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদের জন্য শাস্তি অবধারিত।
৫. মুমিনদের প্রতিশ্রুতি: মুমিনদের জন্য আল্লাহর রহমত ও জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
৬. চিন্তা ও উপলব্ধির আহ্বান: মানুষকে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা ও উপলব্ধি করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৭. আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস: আখিরাতের দিনে সবাইকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং প্রত্যেকের কর্মফল প্রদান করা হবে।
সূরা আর-রাদ মানুষের জন্য একটি গভীর চিন্তার উপাদান সরবরাহ করে এবং আল্লাহর একত্ব, কুরআনের সত্যতা ও প্রকৃতির মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে সচেতন করে। এটি মুমিনদের জন্য সান্ত্বনা ও কাফিরদের জন্য সতর্কবাণী।
সূরা রাদ আয়াত ১৩, ৮, ১১, ২৮, ৮, ৭ অর্থসহ ব্যাখ্যা
সূরা রাদ কুরআনের ১৩তম সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরার আয়াতগুলোতে আল্লাহর মহিমা, প্রকৃতির নিদর্শন, মানুষের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা, এবং ঈমান ও তাকওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে উল্লিখিত আয়াতগুলোর অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
সূরা রাদ আয়াত ১৩
আয়াত:
وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ وَذُو عِقَابٍ أَلِيمٍ
অর্থ:
“নিশ্চয়ই তোমার রব ক্ষমাশীল এবং কঠোর শাস্তিদাতা।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর দুটি গুণবাচক নামের কথা বলা হয়েছে: তিনি ক্ষমাশীল এবং কঠোর শাস্তিদাতা। আল্লাহর ক্ষমা তাঁর অনুগ্রহের প্রতীক, কিন্তু যারা অবাধ্যতা ও পাপে লিপ্ত থাকে তাদের জন্য তিনি কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখেন। এই আয়াত মানুষকে সতর্ক করে যে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও শাস্তি উভয়ই বাস্তব।
সূরা রাদ আয়াত ৮
আয়াত:
وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ أُنْثَىٰ وَمَا تَغِيضُ الْأَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ ۖ وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِمِقْدَارٍ
অর্থ:
“আল্লাহ জানেন প্রত্যেক নারী কী গর্ভধারণ করে এবং জরায়ু কী কমায় বা বাড়ায়। আর প্রত্যেক বস্তু তাঁর কাছে পরিমিত।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর সর্বজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। তিনি প্রত্যেক নারীর গর্ভধারণ, ভ্রূণের বিকাশ, এবং জরায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে সম্যক অবগত। সবকিছুই তাঁর নির্ধারিত পরিমাপ ও নিয়ম অনুযায়ী ঘটে। এটি আল্লাহর সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণের মহিমা প্রকাশ করে।
সূরা রাদ আয়াত ১১
আয়াত:
لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ
অর্থ:
“মানুষের জন্য তার সামনে ও পিছনে পর্যায়ক্রমে প্রহরী নিযুক্ত আছে, তারা আল্লাহর নির্দেশে তাকে রক্ষা করে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ মানুষের জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন, যারা তাদের রক্ষা করেন। তবে এটি শুধু শারীরিক সুরক্ষা নয়, বরং আল্লাহর নির্দেশে মানুষের ভাগ্য ও কর্মের উপরও প্রভাব পড়ে। এটি আল্লাহর করুণা ও নিয়ন্ত্রণের প্রতীক।
সূরা রাদ আয়াত ২৮
আয়াত:
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
অর্থ:
“যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়। জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে শান্তি পায়। আল্লাহর জিকির (স্মরণ) মানুষের অন্তরে প্রশান্তি আনে এবং তা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মানুষের আধ্যাত্মিক শান্তি ও তৃপ্তির উৎস।
সূরা রাদ আয়াত ৭
আয়াত:
وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْلَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِنْ رَبِّهِ ۗ إِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ ۖ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ
অর্থ:
“কাফিররা বলে, ‘তার রবের পক্ষ থেকে তার উপর কোনো নিদর্শন কেন অবতীর্ণ হয় না?’ তুমি তো শুধু সতর্ককারী, এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে পথপ্রদর্শক।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে কাফিরদের একটি সাধারণ অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। তারা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে নিদর্শন চায়। আল্লাহর জবাব হলো, নবী শুধু সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহর পথপ্রদর্শক রয়েছে। এটি মানুষের দায়িত্ব ও ঈমানের পরীক্ষার দিক নির্দেশ করে।
সারমর্ম:
সূরা রাদের এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর ক্ষমা ও শাস্তি, তাঁর সর্বজ্ঞতা, মানুষের সুরক্ষা, ঈমানের মাধ্যমে হৃদয়ের প্রশান্তি, এবং নবীর দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই আয়াতগুলো মানুষকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার, তাঁর স্মরণে নিজেকে শান্ত করার, এবং তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করার আহ্বান জানায়।