You are currently viewing সূরা বাকারা সম্পর্কে ২০টি কুইজ প্রশ্ন এবং MCQ সহ বিস্তারিত
Quranic knowledge : সূরা আল বাকারা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

সূরা বাকারা সম্পর্কে ২০টি কুইজ প্রশ্ন এবং MCQ সহ বিস্তারিত

মহা গ্রহন্থ আল কুরআনে সূল বাকারা হলো দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে বড় সূরা ।  সূরা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা দিতে উত্তর সহ ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও MCQ দিলোম। এছাড়া সূরা বাকারা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো । আশাকরি আপনারা উকৃত হবেন।

সূরা বাকারা সম্পর্কে ২০টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :

সাধারণ তথ্য:

  1. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহ কুরআনের কততম সূরা?
    উত্তর: এটি কুরআনের দ্বিতীয় সূরা।
  2. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহতে কয়টি আয়াত রয়েছে?
    উত্তর: ২৮৬টি আয়াত।
  3. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহ কোথায় অবতীর্ণ হয়?
    উত্তর: মদিনায়।
  4. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহর অর্থ কী?
    উত্তর: “গাভী”।
  5. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহর নামকরণের কারণ কী?
    উত্তর: এতে বনি ইসরাইলের একটি গাভী জবাই করার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে (আয়াত ৬৭-৭৩)।

 বিষয়বস্তু:

  1. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহর শুরুতে কাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে?
    উত্তর: মুত্তাকী (খোদাভীরু) ব্যক্তিদের।
  2. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহতে মুনাফিকদের কী বলা হয়েছে?
    উত্তর: তারা কপটতা প্রদর্শন করে এবং ঈমানের দাবি করে, কিন্তু অন্তরে অবিশ্বাস পোষণ করে।
  3. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহতে কোন নবীদের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে?
    উত্তর: আদম (আ.), ইব্রাহিম (আ.), মুসা (আ.) এবং অন্যান্য নবীদের ঘটনা।
  4. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহতে কোন বিধানগুলো আলোচিত হয়েছে?
    উত্তর: নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, জিহাদ, বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার ইত্যাদি।
  5. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহতে “আয়াতুল কুরসি” কোন আয়াত?
    উত্তর: আয়াত ২৫৫।

শিক্ষা ও গুরুত্ব:

  1. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহর শেষ দুই আয়াতের বিষয়বস্তু কী?
    উত্তর: আল্লাহর প্রতি ঈমান, ক্ষমা প্রার্থনা, এবং মানুষের দুর্বলতার স্বীকৃতি।
  2. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহতে আল্লাহর ক্ষমার কী বার্তা দেওয়া হয়েছে?
    উত্তর: আল্লাহ মানুষের দুর্বলতা ও ভুলত্রুটিকে ক্ষমা করতে প্রস্তুত, যদি তারা তাওবা করে।
  3. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহতে ন্যায়বিচারের কী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?
    উত্তর: সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  4. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহতে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
    উত্তর: ব্যবসায় সততা ও ন্যায়বিচার বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
  5. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহতে জিহাদের কী তাৎপর্য রয়েছে?
    উত্তর: জিহাদ হল আল্লাহর পথে সংগ্রাম এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই।

বিশেষ আয়াত ও দোয়া:

  1. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহর কোন আয়াতকে “আয়াতুল কুরসি” বলা হয়?
    উত্তর: আয়াত ২৫৫, যা আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতা বর্ণনা করে।
  2. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহর শেষ আয়াতে কী প্রার্থনা করা হয়েছে?
    উত্তর: আল্লাহর ক্ষমা, রহমত, এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে।
  3. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহতে কোন দোয়া বারবার পাঠ করা হয়?
    উত্তর: “رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا” (হে আমাদের রব, আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুল করি তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না)।

অন্যান্য তথ্য:

  1. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহতে বনি ইসরাইলের কী ঘটনা বর্ণিত হয়েছে?
    উত্তর: তাদের গাভী জবাই করার ঘটনা এবং মুসা (আ.)-এর সাথে তাদের আচরণ।
  2. প্রশ্ন: সূরা বাকারাহ কেন মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
    উত্তর: এটি ইসলামী জীবনব্যবস্থার একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা এবং ঈমান, ইবাদত, ও সমাজের জন্য পথনির্দেশক।

এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো সূরা বাকারাহর মূল বিষয়বস্তু, শিক্ষা, এবং গুরুত্ব সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদান করে।

সূরা বাকারা সম্পর্কে কিছু এমসিকিউ (MCQ)

১. সূরা বাকারা কুরআনের কত নম্বর সূরা?

  1. a) ১ম
  2. b) ২য়
  3. c) ৩য়
  4. d) ৪র্থ

উত্তর: b) ২য়

২. সূরা বাকারা মোট কয়টি আয়াত নিয়ে গঠিত?

  1. a) ২৮৬
  2. b) ২০০
  3. c) ১৫০
  4. d) ১০০

উত্তর: a) ২৮৬

৩. সূরা বাকারা কোন ধরনের সূরা?

  1. a) মাক্কী
  2. b) মাদানী
  3. c) মিশ্র
  4. d) কোনোটিই নয়

উত্তর: b) মাদানী

৪. সূরা বাকারার সবচেয়ে দীর্ঘ আয়াত কোনটি?

  1. a) আয়াতুল কুরসি
  2. b) আয়াতুল দাইন
  3. c) আমানার রাসুল
  4. d) আয়াতুশ শাহাদাহ

উত্তর: b) আয়াতুল দাইন (২৮২ নং আয়াত)

৫. সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত কী নামে পরিচিত?

  1. a) আয়াতুল কুরসি
  2. b) আমানার রাসুল
  3. c) আয়াতুল হুকুম
  4. d) আয়াতুল জিহাদ

উত্তর: b) আমানার রাসুল

৬. সূরা বাকারায় কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত কোনটি?

  1. a) আয়াতুল কুরসি
  2. b) আয়াতুল দাইন
  3. c) আমানার রাসুল
  4. d) আয়াতুল জিহাদ

উত্তর: a) আয়াতুল কুরসি (২৫৫ নং আয়াত)

৭. সূরা বাকারায় কোন নবীর ঘটনা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে?

  1. a) হযরত নূহ (আ.)
  2. b) হযরত ইব্রাহিম (আ.)
  3. c) হযরত ইউসুফ (আ.)
  4. d) হযরত মুহাম্মদ (সা.)

উত্তর: b) হযরত ইব্রাহিম (আ.)

৮. সূরা বাকারায় কাফির, মুনাফিক ও মুমিনদের বৈশিষ্ট্য কোথায় বর্ণনা করা হয়েছে?

  1. a) শেষে
  2. b) মাঝখানে
  3. c) শুরুতে
  4. d) কোথাও নয়

উত্তর: c) শুরুতে

৯. সূরা বাকারায় রোজার বিধান কোন আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে?

  1. a) ১০০-১০৫
  2. b) ১৮৩-১৮৭
  3. c) ২০০-২০৫
  4. d) ১৫০-১৫৫

উত্তর: b) ১৮৩-১৮৭

১০. সূরা বাকারায় বনি ইসরাইলের ইতিহাস কেন আলোচিত হয়েছে?

  1. a) তাদের প্রশংসা করার জন্য
  2. b) তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য
  3. c) তাদেরকে অনুসরণ করার জন্য
  4. d) কোনোটিই নয়

উত্তর: b) তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য

এই এমসিকিউ প্রশ্নগুলো সূরা বাকারা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করতে সাহায্য করবে।

সূরা বাকারা সম্পর্কে আরও কিছু **এমসিকিউ (MCQ)** প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো:

১১. সূরা বাকারায় কিসের মাধ্যমে শয়তানকে প্রতিরোধ করার কথা বলা হয়েছে?

  1. a) দোয়া
  2. b) নামাজ
  3. c) তাকওয়া
  4. d) জিহাদ

উত্তর: c) তাকওয়া

১২. সূরা বাকারায় “আয়াতুল কুরসি” কোন আয়াত নম্বরে অবস্থিত?

  1. a) ২৫৫
  2. b) ২৮৬
  3. c) ২০০
  4. d) ১০০

উত্তর: a) ২৫৫

১৩. সূরা বাকারায় কত প্রকার মানুষের কথা বলা হয়েছে?

  1. a) ২ প্রকার
  2. b) ৩ প্রকার
  3. c) ৪ প্রকার
  4. d) ৫ প্রকার

উত্তর: b) ৩ প্রকার (মুমিন, কাফির, মুনাফিক)

১৪. সূরা বাকারায় কোন প্রাণীকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে?

  1. a) গরু
  2. b) উট
  3. c) গাধা
  4. d) ভেড়া

উত্তর: c) গাধা

১৫. সূরা বাকারায় কোন নবীর কাহিনীতে গরু জবাই করার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে?

  1. a) হযরত মূসা (আ.)
  2. b) হযরত ইব্রাহিম (আ.)
  3. c) হযরত ঈসা (আ.)
  4. d) হযরত আদম (আ.)

উত্তর: a) হযরত মূসা (আ.)

১৬. সূরা বাকারায় কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ কোন আয়াতে দেওয়া হয়েছে?

  1. a) ১০০
  2. b) ১৪৪
  3. c) ২০০
  4. d) ২৫৫

উত্তর: b) ১৪৪

১৭. সূরা বাকারায় কতটি রুকু রয়েছে?

  1. a) ২০
  2. b) ৩০
  3. c) ৪০
  4. d) ৫০

উত্তর:  c) ৪০

১৮. সূরা বাকারায় কোন নবীর কাহিনীতে পাখির মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমতা প্রদর্শিত হয়েছে?

  1. a) হযরত ইব্রাহিম (আ.)
  2. b) হযরত ঈসা (আ.)
  3. c) হযরত মুহাম্মদ (সা.)
  4. d) হযরত সুলাইমান (আ.)

উত্তর: a) হযরত ইব্রাহিম (আ.)

১৯. সূরা বাকারায় “তালুত ও জালুত” এর ঘটনা কোন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে?

  1. a) ২৪৬-২৫১
  2. b) ২০০-২০৫
  3. c) ১৫০-১৫৫
  4. d) ১০০-১০৫

উত্তর: a) ২৪৬-২৫১

২০. সূরা বাকারায় কোন আয়াতে আল্লাহর রঙে রঙিন হওয়ার কথা বলা হয়েছে?

  1. a) ১৩৮
  2. b) ১৫৫
  3. c) ২০০
  4. d) ২৫৫

উত্তর: a) ১৩৮

২১. সূরা বাকারায় কতটি সিজদার আয়াত রয়েছে?

  1. a) ১
  2. b) ২
  3. c) ৩
  4. d) ৪

উত্তর: a) ১ (১৫তম পারায়, আয়াত নং ১৫৮)

২২. সূরা বাকারায় “আসহাবে সাবত” এর ঘটনা কোন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে?

  1. a) ৬৫-৬৬
  2. b) ১০০-১০৫
  3. c) ১৫০-১৫৫
  4. d) ২০০-২০৫

উত্তর: a) ৬৫-৬৬

২৩. সূরা বাকারায় কোন আয়াতে আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম পানাহারের কথা বলা হয়েছে?

  1. a) ১৭২
  2. b) ২০০
  3. c) ২৫৫
  4. d) ২৮৬

উত্তর: a) ১৭২

২৪. সূরা বাকারায় “হিজর” এর ঘটনা কোন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে?

  1. a) ৮০-৮২
  2. b) ১০০-১০৫
  3. c) ১৫০-১৫৫
  4. d) ২০০-২০৫

উত্তর: a) ৮০-৮২

২৫. সূরা বাকারায় কতটি রুকুতে “আয়াতুল কুরসি” অবস্থিত?

  1. a) ২০তম
  2. b) ২৫তম
  3. c) ৩০তম
  4. d) ৩৫তম

উত্তর: c) ৩০তম

 

এই এমসিকিউ প্রশ্নগুলো সূরা বাকারা সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করবে।

সূরা বাকারা : সংক্ষিপ্ত পরিচয়

সূরা বাকারাহ (আরবি: سورة البقرة) হল পবিত্র কুরআনের দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে দীর্ঘ সূরা। এতে মোট ২৮৬টি আয়াত রয়েছে। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয় এবং এর নামকরণ করা হয়েছে “বাকারাহ” (গাভী) শব্দ থেকে, যা সূরার ৬৭-৭৩ নং আয়াতে বনি ইসরাইলের একটি গাভী জবাই করার ঘটনার প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা বাকারাহ ইসলামী জীবনব্যবস্থা, ঈমান, ইবাদত, আইন-কানুন, ন্যায়বিচার, এবং ইতিহাসের একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা।

শানে নুযূল (অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট):

সূরা বাকারাহ মদিনায় অবতীর্ণ হয়, যখন মুসলিম সম্প্রদায় একটি নতুন সমাজ গঠনের প্রক্রিয়ায় ছিল। এটি মুসলমানদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা প্রদান করে, যা তাদের ঈমান, ইবাদত, সামাজিক ন্যায়বিচার, এবং ব্যক্তিগত আচরণের দিকনির্দেশনা দেয়। সূরাটি মুনাফিক (কপট) ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য, ইহুদি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক, এবং ইসলামী শরিয়াহর বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে।

সূরা বাকারা গুরুত্বপূর্ণ দিক:

  1. ঈমান ও তাকওয়া: সূরার শুরুতে মুত্তাকী (খোদাভীরু) ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে, যারা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস রাখে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আল্লাহর দেওয়া রিজিক থেকে দান করে।
  2. কুফর ও মুনাফিকি: যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাস করে এবং মুনাফিকি (কপটতা) প্রদর্শন করে, তাদের বৈশিষ্ট্য ও পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে।
  3. ইতিহাস ও উপদেশ: আদম (আ.), ইব্রাহিম (আ.), মুসা (আ.) এবং বনি ইসরাইলের বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য শিক্ষণীয়।
  4. ইবাদত ও বিধান: নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, জিহাদ, এবং অন্যান্য ইসলামী বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
  5. আইন ও ন্যায়বিচার: বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, ব্যবসা-বাণিজ্য, এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
  6. প্রার্থনা ও ক্ষমা: সূরার শেষে একটি সুন্দর দোয়া রয়েছে, যা মানুষের দুর্বলতা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার প্রতিফলন।

সূরাটির শিক্ষা:

  1. ঈমান ও তাকওয়া: আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ এবং তাকওয়া (খোদাভীরুতা) অর্জন করা।
  2. ন্যায়বিচার: সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।
  3. ইবাদত: নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন।
  4. দায়িত্বশীলতা: প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
  5. ক্ষমা ও রহমত: আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের প্রতি আশা রাখা এবং মানুষের দুর্বলতার স্বীকৃতি দেওয়া।

সূরাটির মূল বিষয়বস্তু:

  1. ঈমান ও তাকওয়া: সূরার শুরুতে মুত্তাকী ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে।
  2. কুফর ও মুনাফিকি: অবিশ্বাসী ও মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য ও পরিণতি।
  3. ইতিহাস ও উপদেশ: পূর্ববর্তী নবীদের ঘটনা এবং বনি ইসরাইলের ইতিহাস।
  4. ইবাদত ও বিধান: নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, জিহাদ ইত্যাদি।
  5. আইন ও ন্যায়বিচার: বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, ব্যবসা-বাণিজ্য, এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।
  6. প্রার্থনা ও ক্ষমা: সূরার শেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সাহায্য প্রার্থনা।

সূরাটির বিশেষ গুরুত্ব:

  • সূরা বাকারাহর শেষ দুই আয়াত (২৮৫-২৮৬) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়ই মুসলমানরা এগুলো পাঠ করে থাকেন।
  • সূরাটির মধ্যে “আয়াতুল কুরসি” (আয়াত ২৫৫) রয়েছে, যা ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রায়ই পাঠ করা হয়।
  • সূরা বাকারাহ ইসলামী জীবনব্যবস্থার একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা এবং মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সূরা বাকারাহ মুসলমানদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা প্রদান করে এবং এটি তাদের ঈমান, ইবাদত, এবং সমাজের জন্য একটি পথনির্দেশিকা।

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত

সূরা বাকারাহ (সূরা ২) এর শেষ দুই আয়াত (২৮৫-২৮৬) নিম্নরূপ:

আয়াত ২৮৫:

آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

অনুবাদ:
রাসূল বিশ্বাস স্থাপন করেছেন তাঁর প্রতি তাঁর রবের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা নিয়ে এবং মুমিনগণও। সবাই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। তারা বলে, “আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনোরূপ পার্থক্য করি না।” আর তারা বলে, “আমরা শুনলাম এবং মান্য করলাম। হে আমাদের রব, আমরা আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন।”

আয়াত ২৮৬:

لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ ۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنتَ مَوْلَانَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

অনুবাদ:
আল্লাহ কোন প্রাণীকে তার সাধ্যের অতীত দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্য এবং সে যা অর্জন করে তা তার বিরুদ্ধে। “হে আমাদের রব, আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুল করি তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না। হে আমাদের রব, আমাদের উপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিও না, যেমন আপনি আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়েছিলেন। হে আমাদের রব, আমাদের উপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিও না, যা বহন করার ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদেরকে মাফ করুন এবং আমাদের উপর রহম করুন। আপনি আমাদের মাওলা, তাই কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।”

এই দুই আয়াত ইসলামী বিশ্বাস ও প্রার্থনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং প্রায়ই মুসলমানরা তাদের দৈনন্দিন প্রার্থনা ও ইবাদতে এগুলো পাঠ করে থাকেন।

সূরা বাকারা

সূরা বাকারাহ (আরবি: سورة البقرة) হল পবিত্র কুরআনের দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে দীর্ঘ সূরা। এতে মোট ২৮৬টি আয়াত রয়েছে। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয় এবং এর বিষয়বস্তুতে ঈমান, ইবাদত, সমাজ, ন্যায়বিচার, আইন-কানুন, ইতিহাস, এবং মানুষের জন্য আল্লাহর নির্দেশনা ও উপদেশ রয়েছে। সূরাটির নাম “বাকারাহ” (গাভী) এর পেছনে কারণ হল এতে বনি ইসরাইলের একটি গাভী জবাই করার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে (আয়াত ৬৭-৭৩)।

সূরা বাকারার প্রধান বিষয়বস্তু:

  1. ঈমান ও তাকওয়া: সূরার শুরুতে মুত্তাকী (খোদাভীরু) ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে, যারা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস রাখে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আল্লাহর দেওয়া রিজিক থেকে দান করে।
  2. কুফর ও মুনাফিকি: যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাস করে এবং মুনাফিকি (কপটতা) প্রদর্শন করে, তাদের বৈশিষ্ট্য ও পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে।
  3. ইতিহাস ও উপদেশ: আদম (আ.), ইব্রাহিম (আ.), মুসা (আ.) এবং বনি ইসরাইলের বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য শিক্ষণীয়।
  4. ইবাদত ও বিধান: নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, জিহাদ, এবং অন্যান্য ইসলামী বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
  5. আইন ও ন্যায়বিচার: বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, ব্যবসা-বাণিজ্য, এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
  6. প্রার্থনা ও ক্ষমা: সূরার শেষে একটি সুন্দর দোয়া রয়েছে, যা মানুষের দুর্বলতা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার প্রতিফলন।

বিশেষ গুরুত্ব:

  • সূরা বাকারাহর শেষ দুই আয়াত (২৮৫-২৮৬) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়ই মুসলমানরা এগুলো পাঠ করে থাকেন। এগুলোতে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, এবং মানুষের দুর্বলতার স্বীকৃতি প্রকাশ পেয়েছে।
  • সূরা বাকারাহতে “আয়াতুল কুরসি” (আয়াত ২৫৫) রয়েছে, যা ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রায়ই পাঠ করা হয়।

সূরা বাকারাহর প্রথম আয়াত:

الٓمٓ
আলিফ-লাম-মিম।
(এগুলো কুরআনের রহস্যময় বর্ণ, যার প্রকৃত অর্থ আল্লাহই ভালো জানেন।)

সূরা বাকারাহর শেষ আয়াত (২৮৬):

لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا…
“আল্লাহ কোন প্রাণীকে তার সাধ্যের অতীত দায়িত্ব দেন না…”

সূরা বাকারাহ ইসলামী জীবনব্যবস্থা, ঈমান, এবং সমাজের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা। এটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়ই এর বিভিন্ন আয়াত ও অংশ বিশেষ উপলক্ষ্যে পাঠ করা হয়।

সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত

সূরা বাকারাহ (সূরা ২) এর শেষ তিন আয়াত (২৮৪-২৮৬) নিম্নরূপ:

আয়াত ২৮৪:

لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَإِن تُبْدُوا مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اللَّهُ ۖ فَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

অনুবাদ:
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। তোমরা তোমাদের মনের কথা প্রকাশ কর বা গোপন রাখ, আল্লাহ তোমাদেরকে তা দিয়ে হিসাব নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

আয়াত ২৮৫:

آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

অনুবাদ:
রাসূল বিশ্বাস স্থাপন করেছেন তাঁর প্রতি তাঁর রবের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা নিয়ে এবং মুমিনগণও। সবাই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। তারা বলে, “আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনোরূপ পার্থক্য করি না।” আর তারা বলে, “আমরা শুনলাম এবং মান্য করলাম। হে আমাদের রব, আমরা আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন।”

আয়াত ২৮৬:

لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ ۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنتَ مَوْلَانَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

অনুবাদ:
আল্লাহ কোন প্রাণীকে তার সাধ্যের অতীত দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্য এবং সে যা অর্জন করে তা তার বিরুদ্ধে। “হে আমাদের রব, আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুল করি তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না। হে আমাদের রব, আমাদের উপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিও না, যেমন আপনি আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়েছিলেন। হে আমাদের রব, আমাদের উপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিও না, যা বহন করার ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদেরকে মাফ করুন এবং আমাদের উপর রহম করুন। আপনি আমাদের মাওলা, তাই কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।”

বিশেষ গুরুত্ব:

  • এই তিন আয়াত ইসলামী বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ, এবং মানুষের দুর্বলতা ও ক্ষমা প্রার্থনার প্রতিফলন।
  • শেষ আয়াত (২৮৬) একটি সুন্দর দোয়া, যা প্রায়ই মুসলমানরা তাদের প্রার্থনায় পাঠ করে থাকেন।
  • এই আয়াতগুলো সূরা বাকারাহর সমাপ্তি হিসেবে মানুষের জন্য আল্লাহর রহমত, ক্ষমা, এবং সহজ বিধানের বার্তা বহন করে।