সূরা নূহ এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা নূহ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।
সূরা নূহ
সূরা নূহ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ
১. সূরা নূহ কত নং সূরা?
উত্তর: ৭১ নং সূরা।
২. সূরা নূহ কয়টি আয়াত নিয়ে গঠিত?
উত্তর: ২৮টি আয়াত।
৩. সূরা নূহ কোন ধরনের সূরা?
উত্তর: এটি মাক্কী সূরা (মক্কায় নাযিল হয়েছে)।
৪. সূরা নূহে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: হযরত নূহ (আ.)-এর কথা।
৫. হযরত নূহ (আ.) কত বছর ধরে দাওয়াত দিয়েছেন?
উত্তর: ৯৫০ বছর (সূরা আনকাবুত, ২৯:১৪)।
৬. নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে কী বলত?
উত্তর: তারা তাকে ‘মাজনুন’ (পাগল) বলত (সূরা নূহ, ৭১:৭)।
৭. নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের প্রধান পাপ কী ছিল?
উত্তর: মূর্তিপূজা ও আল্লাহকে অস্বীকার করা।
৮. নূহ (আ.)-এর নৌকায় কতজন বিশ্বাসী উঠেছিল?
উত্তর: অল্প সংখ্যক (সূরা হুদ, ১১:৪০)।
৯. নূহ (আ.)-এর পুত্রের নাম কী ছিল?
উত্তর: কানআন (সূরা হুদ, ১১:৪২-৪৩)।
১০. নূহ (আ.) আল্লাহর কাছে কী দোয়া করেছিলেন?
উত্তর: তিনি কাফিরদের ধ্বংসের জন্য দোয়া করেছিলেন (সূরা নূহ, ৭১:২৬)।
১১. নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের শাস্তি কী ছিল?
উত্তর: মহাপ্লাবন ও ডুবে মরা (সূরা নূহ, ৭১:২৫)।
১২. নূহ (আ.)-এর নৌকা কোথায় থেমেছিল?
উত্তর: জুদি পাহাড়ে (সূরা হুদ, ১১:৪৪)।
১৩. সূরা নূহে আল্লাহর কী কী নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: চন্দ্র-সূর্য, বৃষ্টি, ফসল ইত্যাদি (সূরা নূহ, ৭১:১৫-১৬)।
১৪. নূহ (আ.)-এর দাওয়াতের মূল বিষয় কী ছিল?
উত্তর: এক আল্লাহর ইবাদত ও তাকওয়া অবলম্বন।
১৫. নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের লোকেরা কীভাবে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল?
উত্তর: তারা তাকে অবজ্ঞা করেছিল এবং মিথ্যাবাদী বলেছিল।
১৬. নূহ (আ.) আল্লাহর কাছে কী বলেছিলেন তাঁর সম্প্রদায় সম্পর্কে?
উত্তর: তিনি বলেছিলেন, “হে আমার রব! তারা আমার কথা মানেনি।” (সূরা নূহ, ৭১:২১)।
১৭. সূরা নূহে আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, নূহ (আ.) মানুষকে তাওবার দাওয়াত দিয়েছিলেন (সূরা নূহ, ৭১:১০)।
১৮. নূহ (আ.)-এর সময়কার মূর্তিগুলোর নাম কী ছিল?
উত্তর: ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাস্র (সূরা নূহ, ৭১:২৩)।
১৯. নূহ (আ.)-এর দাওয়াতের পরিণতি কী হয়েছিল?
উত্তর: কাফিররা ধ্বংস হয়েছিল, আর মুমিনরা রক্ষা পেয়েছিল।
২০. সূরা নূহ থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?
উত্তর: আল্লাহর আনুগত্য করা, ধৈর্য ধারণ করা এবং দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যাওয়া।
সূরা নূহ সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)
১. সূরা নূহ কত নং সূরা?
- a) ৬৯
b) ৭০
c) ৭১ ✅
d) ৭২
২. সূরা নূহে কতটি আয়াত আছে?
- a) ২৬
b) ২৮ ✅
c) ৩০
d) ৩২
৩. সূরা নূহ কোন যুগে নাযিল হয়?
- a) মাদানী
b) মাক্কী ✅
c) উভয়টিই
d) কোনোটিই নয়
৪. নূহ (আ.) কত বছর দাওয়াত দিয়েছেন?
- a) ৫০০
b) ৭৫০
c) ৯৫০ ✅
d) ১০০০
৫. নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায় তাকে কী বলত?
- a) সত্যবাদী
b) মাজনুন (পাগল) ✅
c) নবী
d) জাদুকর
৬. নূহ (আ.)-এর পুত্রের নাম কী ছিল?
- a) ইসমাইল
b) কানআন ✅
c) ইয়াহিয়া
d) হারুন
৭. নূহ (আ.)-এর নৌকা কোথায় থেমেছিল?
- a) আরারাত পর্বত
b) জুদি পাহাড় ✅
c) সিনাই পর্বত
d) হিরা পর্বত
৮. নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের শাস্তি কী ছিল?
- a) ভূমিকম্প
b) মহাপ্লাবন ✅
c) আগুনের বৃষ্টি
d) ঘূর্ণিঝড়
৯. নূহ (আ.)-এর দাওয়াতের মূল বার্তা কী ছিল?
- a) সম্পদ বণ্টন
b) একত্ববাদ ✅
c) যুদ্ধ করা
d) ব্যবসা করা
১০. নূহ (আ.) আল্লাহর কাছে কাফিরদের জন্য কী চেয়েছিলেন?
- a) ক্ষমা
b) সুযোগ
c) ধ্বংস ✅
d) সম্পদ
১১. সূরা নূহে আল্লাহর কোন নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে?
- a) চন্দ্র-সূর্য ✅
b) পাহাড়
c) সমুদ্র
d) মরুভূমি
১২. নূহ (আ.)-এর সময়কার মূর্তিগুলোর মধ্যে কোনটি ছিল না?
- a) ওয়াদ
b) সুওয়া
c) লাত ✅
d) নাস্র
১৩. নূহ (আ.)-এর নৌকায় কারা রক্ষা পেয়েছিল?
- a) কাফিররা
b) মুমিনরা ✅
c) ব্যবসায়ীরা
d) যোদ্ধারা
১৪. নূহ (আ.)-এর দাওয়াতের সফলতা কেমন ছিল?
- a) সবাই মান্য করেছিল
b) অল্প কিছু লোক মান্য করেছিল ✅
c) কেউই মান্য করেনি
d) শুধু যুবকরাই মান্য করেছিল
১৫. নূহ (আ.) আল্লাহর কাছে কোন গুনাহ মাফ চাইতেন?
- a) শিরক
b) নিজের ও মুমিনদের গুনাহ ✅
c) শুধু নিজের গুনাহ
d) কারো গুনাহ নয়
১৬. সূরা নূহে বৃষ্টিকে কী বলা হয়েছে?
- a) রহমত ✅
b) আজাব
c) পরীক্ষা
d) বরকত
১৭. নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের লোকেরা কীভাবে মারা গিয়েছিল?
- a) আগুনে পুড়ে
b) পানিতে ডুবে ✅
c) ভূমিকম্পে
d) রোগে
১৮. নূহ (আ.)-এর দাওয়াতের সময় কাফিররা কী করত?
- a) শুনত
b) উপহাস করত ✅
c) সাহায্য করত
d) ভয় পেত
১৯. নূহ (আ.)-এর সন্তানদের মধ্যে কে কাফির ছিল?
- a) সবাই
b) শুধু কানআন ✅
c) কেউই নয়
d) সবাই মুমিন ছিল
২০. সূরা নূহের মূল শিক্ষা কী?
- a) সম্পদ উপার্জন
b) ধৈর্য ও দাওয়াত ✅
c) যুদ্ধ করা
d) রাজনীতি করা
২১. নূহ (আ.)-এর নৌকা কিসে তৈরি হয়েছিল?
- a) লোহার
b) কাঠের ✅
c) পাথরের
d) বাঁশের
২২. নূহ (আ.) আল্লাহর কাছে কোন প্রার্থনা করেছিলেন?
- a) সম্পদের
b) ক্ষমার ✅
c) শক্তির
d) বিজয়ের
২৩. সূরা নূহে আল্লাহর কোন গুণের কথা বলা হয়েছে?
- a) রহমত ✅
b) শাস্তি
c) লুকানো
d) ভয়
২৪. নূহ (আ.)-এর দাওয়াতের পদ্ধতি কী ছিল?
- a) গোপনে
b) প্রকাশ্যে ✅
c) শুধু রাতে
d) শুধু দিনে
২৫. সূরা নূহের শেষে আল্লাহ কী বলেছেন?
- a) নূহ (আ.) বিজয়ী হয়েছেন
b) কাফিররা ধ্বংস হয়েছে ✅
c) সবাই ক্ষমা পেয়েছে
d) নতুন নবী আসবে
এই প্রশ্নোত্তরগুলো সূরা নূহ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেবে এবং পরীক্ষার জন্য সহায়ক হবে।
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত
সূরা নূহের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
সূরার নাম: সূরা নূহ
আয়াত সংখ্যা: ২৮
নাযিলের স্থান: মক্কা (মাক্কী সূরা)
পারা: ২৯তম পারায় অবস্থিত
রুকু সংখ্যা: ২
নাযিলের ক্রম: ৭১তম সূরা (মুফাসসিরদের একাংশের মতে)
শানে নুযূল (নাযিলের প্রেক্ষাপট)
সূরা নূহ মক্কায় নাযিল হয়, যখন নবী মুহাম্মদ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীরা কুরাইশদের অত্যাচার ও শিরকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিলেন। এই সূরায় হযরত নূহ (আ.)-এর দীর্ঘ ৯৫০ বছরের দাওয়াত, তাঁর সম্প্রদায়ের অবাধ্যতা ও পরিণতির বর্ণনা রয়েছে। এটি মুসলমানদেরকে ধৈর্য ধারণ ও আল্লাহর পথে অবিচল থাকার শিক্ষা দেয়।
সূরা নূহের গুরুত্বপূর্ণ দিক
- তাওহীদের দাওয়াত: নূহ (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান করেছিলেন।
- মূর্তিপূজার নিন্দা: সূরায় কাফিরদের মূর্তিপূজার ভ্রান্তি উল্লেখ করা হয়েছে (আয়াত: ২৩)।
- দাওয়াতের পদ্ধতি: নূহ (আ.) দিন-রাত, গোপনে-প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছিলেন (আয়াত: ৫-৯)।
- আল্লাহর নিদর্শন: বৃষ্টি, ফসল, সূর্য-চন্দ্র ইত্যাদিকে আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে (আয়াত: ১৫-১৬)।
- কাফিরদের পরিণতি: মহাপ্লাবনের মাধ্যমে নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছিল (আয়াত: ২৫)।
সূরা নূহের শিক্ষা
- দাওয়াতের ধৈর্য: নূহ (আ.) ৯৫০ বছর ধরে দাওয়াত দিয়েছেন—এ থেকে ধৈর্য ও অবিচলতার শিক্ষা নেওয়া যায়।
- শিরকের বিপদ: মূর্তিপূজা ও আল্লাহকে অস্বীকারের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।
- আল্লাহর রহমত ও শাস্তি: আল্লাহ ক্ষমাশীল, কিন্তু অবাধ্যতার জন্য কঠোর শাস্তি দেন।
- তাওবার গুরুত্ব: নূহ (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে বারবার তাওবার আহ্বান জানিয়েছেন (আয়াত: ১০-১২)।
- আল্লাহর উপর ভরসা: নূহ (আ.) সবসময় আল্লাহর সাহায্য চেয়েছেন, যা মুমিনদের জন্য আদর্শ।
সূরা নূহের মূল বিষয়বস্তু
- নূহ (আ.)-এর দাওয়াতের ইতিহাস: তাঁর দীর্ঘ সংগ্রাম ও কাফিরদের প্রত্যাখ্যান।
- কাফিরদের যুক্তি ও অহংকার: তারা নূহ (আ.)-কে পাগল বলে উপহাস করত (আয়াত: ৭)।
- মূর্তিপূজার অসারতা: ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাস্র নামক মূর্তিগুলোর ব্যর্থতা (আয়াত: ২৩)।
- দোয়া ও শাস্তি: নূহ (আ.)-এর দোয়ায় কাফিররা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় (আয়াত: ২৬-২৭)।
- মুমিনদের বিজয়: নূহ (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের নৌকার মাধ্যমে রক্ষা পাওয়া (আয়াত: ২৮)।
সূরা নূহের ফযিলত (মর্যাদা ও উপকারিতা)
- গুনাহ মাফের সূরা: এই সূরা তিলাওয়াত করলে আল্লাহ গুনাহ মাফ করেন (হাদীসের ইঙ্গিত)।
- দাওয়াতের শক্তি: এটি দাঈ (ইসলাম প্রচারক)দের জন্য প্রেরণাদায়ক, কীভাবে ধৈর্য ধরে দাওয়াত দিতে হয় তা শেখায়।
- আখিরাতে সাফল্য: নূহ (আ.)-এর মতো ঈমান ও তাওয়াক্কুলের শিক্ষা আখিরাতে মুক্তি দেবে।
- ফিতনা থেকে হিফাজত: সূরা নূহ পড়লে শিরক ও কুফরি থেকে হিফাজত হয়।
- প্রাকৃতিক বিপদ থেকে রক্ষা: নূহ (আ.)-এর কিসসা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া যায়।
উপসংহার
সূরা নূহ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাক্কী সূরা, যা তাওহীদ, দাওয়াত, ধৈর্য ও আল্লাহর শাস্তির বর্ণনা বহন করে। এটি মুমিনদেরকে শিরক থেকে বেঁচে থাকা, দাওয়াতি কাজে আত্মনিয়োগ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখার শিক্ষা দেয়। এই সূরার বার্তা আজও সমভাবে প্রাসঙ্গিক, বিশেষত যারা ইসলামী দাওয়াত ও সংস্কারের কাজে নিয়োজিত।
সূরা নূহ আয়াত ১০-১২ , ২৩, ১০ ১১ ১২, ২৮, আয়াত এবং এর বাংলা অর্থসহ ব্যাখ্যা
সূরা নূহের নির্বাচিত আয়াতসমূহের বাংলা অনুবাদ ও ব্যাখ্যা
আয়াত ১০-১২:
আরবি:
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا (১০) يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا (١١) وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا (١٢)
বাংলা অনুবাদ:
“অতঃপর আমি বললাম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল (১০)। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন (১১), ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে তোমাদের সাহায্য করবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন (১২)।”
ব্যাখ্যা:
- ক্ষমা প্রার্থনার গুরুত্ব: নূহ (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে তাওবা ও ইস্তিগফারের প্রতি আহ্বান জানান। আল্লাহর ক্ষমা লাভের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত হয়।
- প্রাকৃতিক নিয়ামত: ইস্তিগফারের ফলে বৃষ্টি, ফসল, সম্পদ ও সন্তানের বারাকাহ বৃদ্ধি পায় (হাদীসে এসেছে: “যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে মুক্তির পথ বের করে দেবেন” — সুনান আবু দাউদ)।
- আধ্যাত্মিক ও জাগতিক সুখ: আল্লাহর রহমত শুধু আখিরাতেই নয়, দুনিয়ার জীবনেও প্রশান্তি আনে।
আয়াত ২৩:
আরবি:
وَقَالُوا لَا تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا
বাংলা অনুবাদ:
“তারা বলল, তোমরা তোমাদের দেবতাদেরকে কখনো পরিত্যাগ করো না, আর পরিত্যাগ করো না ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াউক ও নাস্রকে।”
ব্যাখ্যা:
- মূর্তিপূজার জেদ: নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায় তাদের পূর্বপুরুষদের প্রবর্তিত মূর্তিগুলোকে (ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াউক, নাস্র) ছাড়তে অস্বীকার করে। এগুলো মূলত পাঁচজন পুণ্যবান ব্যক্তির নাম ছিল, যাদের মৃত্যুর পর তাদের স্মরণে মূর্তি তৈরি করে পূজা করা হতো (তাফসিরে ইবনে কাসীর)।
- শিরকের ভিত্তি: এটি মানুষের প্রবৃত্তির দুর্বলতা দেখায়—যারা নেককার মানুষকে অতিমানবীয় পর্যায়ে তুলে ধরে।
- সতর্কবার্তা: আজও যেকোনো প্রকারের শিরক (ব্যক্তি, মতবাদ বা বস্তুর উপাসনা) থেকে সাবধান থাকার শিক্ষা দেয় এই আয়াত।
আয়াত ২৮:
আরবি:
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارًا
বাংলা অনুবাদ:
“হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে মুমিন আমার ঘরে প্রবেশ করে তাকে এবং সকল মুমিন নর-নারীকে ক্ষমা করুন। আর জালিমদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছু বাড়িয়ে দেবেন না।”
ব্যাখ্যা:
- নবীর দোয়ার নমুনা: নূহ (আ.) শুধু নিজের জন্য নয়, পরিবার, অনুসারী ও সব মুমিনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এটি নবীদের উদারতার প্রতীক।
- জালিমদের প্রতি দোয়া: কাফিরদের অবাধ্যতার কারণে তাদের ধ্বংস কামনা করা হয়েছে, যা আল্লাহর ন্যায়বিচারের প্রতিফলন।
- সম্প্রীতির শিক্ষা: মুমিনদের মধ্যে ঐক্য ও পারস্পরিক দোয়ার গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।
সারসংক্ষেপ:
- আয়াত ১০-১২: ইস্তিগফারের মাধ্যমে দুনিয়াবি ও আধ্যাত্মিক কল্যাণ লাভ।
- আয়াত ২৩: শিরকের অন্ধ অনুকরণ ও তার ভয়াবহ পরিণতি।
- আয়াত ২৮: নবীদের দোয়ার বিশালতা ও মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা।
এই আয়াতগুলো থেকে আমরা শিখতে পারি:
১. তাওবার শক্তি,
২. শিরক থেকে দূরে থাকা,
৩. মুমিনদের জন্য দোয়ার গুরুত্ব।