সূরা তাওবা (আরবি: سورة التوبة) কুরআন মাজিদের ৯ম সূরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয় এবং এর আয়াত সংখ্যা ১২৯টি। এই সূরাটির অন্য নাম “আল-বারাআ” (বর্জন), যা মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের বার্তা বহন করে। এটি একমাত্র সূরা যার শুরুতে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” উল্লেখ করা হয়নি, কারণ এটি মুশরিক ও মুনাফিকদের প্রতি কঠোর বার্তা বহন করে। সূরাটি জিহাদ, তাওবা, মুনাফিকদের চরিত্র এবং মুমিনদের দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে।
সূরা তাওবা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবা কুরআনের কততম সূরা?
উত্তর: সূরা আত-তাওবা কুরআনের ৯ম সূরা।
২. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবা কতটি আয়াত নিয়ে গঠিত?
উত্তর: সূরা আত-তাওবা ১২৯টি আয়াত নিয়ে গঠিত।
৩. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবার অন্য নাম কী?
উত্তর: সূরা আত-তাওবার অন্য নাম হলো “আল-বারাআ” (বর্জন)।
৪. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” কেন নেই?
উত্তর: এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে কাফেরদের প্রতি একটি কঠোর বার্তা, তাই এতে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” উল্লেখ করা হয়নি।
৫. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কী বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে?
উত্তর: এ সূরায় মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ, জিহাদ, মুনাফিকদের চরিত্র এবং তাওবার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
৬. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় মুনাফিকদের কী চরিত্র বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী, প্রতারক এবং মুসলিমদের ক্ষতির কারণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
৭. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় জিহাদের কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে।
৮. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় তাওবার কী গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: তাওবা বা অনুশোচনা করা এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসার গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
৯. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কোন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: তাবুকের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
১০. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে “মসজিদে দিরার” নির্মাণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে?
উত্তর: মুনাফিকদেরকে “মসজিদে দিরার” নির্মাণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
১১. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর শত্রু বলা হয়েছে?
উত্তর: মুশরিক এবং মুনাফিকদেরকে আল্লাহর শত্রু বলা হয়েছে।
১২. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে সত্যিকার মুমিন বলা হয়েছে?
উত্তর: যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখে এবং জিহাদে অংশগ্রহণ করে তাদেরকে সত্যিকার মুমিন বলা হয়েছে।
১৩. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে ক্ষমা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: যারা তাওবা করে এবং সৎপথে ফিরে আসে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে।
১৪. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মুনাফিক এবং কাফেরদেরকে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
১৫. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে দান-খয়রাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: মুমিনদেরকে দান-খয়রাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১৬. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: মুমিন এবং মুজাহিদদেরকে আল্লাহর সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
১৭. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে?
উত্তর: মুনাফিকদেরকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে।
১৮. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর রহমতের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: যারা তাওবা করে এবং সৎপথে চলে তাদেরকে আল্লাহর রহমতের কথা বলা হয়েছে।
১৯. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর ক্রোধের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: কাফের এবং মুনাফিকদেরকে আল্লাহর ক্রোধের কথা বলা হয়েছে।
২০. প্রশ্ন: সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে সত্যিকার মুসলিম বলা হয়েছে?
উত্তর: যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে এবং জিহাদে অংশগ্রহণ করে তাদেরকে সত্যিকার মুসলিম বলা হয়েছে।
সূরা আত-তাওবা সম্পর্কে ২৫টি MCQ
১. সূরা আত-তাওবা কুরআনের কততম সূরা?
ক) ৭ম
খ) ৮ম
গ) ৯ম
ঘ) ১০ম
উত্তর: গ) ৯ম
২. সূরা আত-তাওবার অন্য নাম কী?
ক) আল-ফাতিহা
খ) আল-বারাআ
গ) আল-ইখলাস
ঘ) আল-কাওসার
উত্তর: খ) আল-বারাআ
৩. সূরা আত-তাওবায় কতটি আয়াত রয়েছে?
ক) ১০০
খ) ১১০
গ) ১২৯
ঘ) ১৫০
উত্তর: গ) ১২৯
৪. সূরা আত-তাওবায় “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” কেন নেই?
ক) এটি একটি কঠোর বার্তা
খ) এটি একটি গোপন সূরা
গ) এটি একটি মক্কী সূরা
ঘ) এটি একটি মুনাফিকদের সূরা
উত্তর: ক) এটি একটি কঠোর বার্তা
৫. সূরা আত-তাওবায় কোন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে?
ক) বদরের যুদ্ধ
খ) উহুদের যুদ্ধ
গ) তাবুকের যুদ্ধ
ঘ) খন্দকের যুদ্ধ
উত্তর: গ) তাবুকের যুদ্ধ
৬. সূরা আত-তাওবায় মুনাফিকদের কী চরিত্র বর্ণনা করা হয়েছে?
ক) সত্যবাদী
খ) মিথ্যাবাদী
গ) সাহসী
ঘ) দানশীল
উত্তর: খ) মিথ্যাবাদী
৭. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর শত্রু বলা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুশরিক
গ) ফেরেশতা
ঘ) নবী
উত্তর: খ) মুশরিক
৮. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) ফেরেশতা
ঘ) নবী
উত্তর: খ) মুনাফিক
৯. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: ক) মুমিন
১০. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে তাওবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) সবাই
উত্তর: ঘ) সবাই
১১. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) ফেরেশতা
ঘ) নবী
উত্তর: খ) মুনাফিক
১২. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর রহমতের কথা বলা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: ক) মুমিন
১৩. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর ক্রোধের কথা বলা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) ফেরেশতা
ঘ) নবী
উত্তর: খ) মুনাফিক
১৪. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে সত্যিকার মুসলিম বলা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: ক) মুমিন
১৫. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে দান-খয়রাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: ক) মুমিন
১৬. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে “মসজিদে দিরার” নির্মাণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: খ) মুনাফিক
১৭. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর শত্রু বলা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: গ) কাফের
১৮. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে ক্ষমা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: ক) মুমিন
১৯. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে জিহাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: ক) মুমিন
২০. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: ক) মুমিন
২১. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: খ) মুনাফিক
২২. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর রহমতের কথা বলা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: ক) মুমিন
২৩. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে আল্লাহর ক্রোধের কথা বলা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: খ) মুনাফিক
২৪. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে সত্যিকার মুসলিম বলা হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: ক) মুমিন
২৫. সূরা আত-তাওবায় কাদেরকে দান-খয়রাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
ক) মুমিন
খ) মুনাফিক
গ) কাফের
ঘ) মুশরিক
উত্তর: ক) মুমিন
সূরা আত-তাওবার গুরুত্বপূর্ণ দিক
১. মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ: সূরাটির শুরুতে মুশরিকদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২. মুনাফিকদের চরিত্র উন্মোচন: মুনাফিকদের মিথ্যাচার, প্রতারণা এবং মুসলিম সমাজে তাদের ক্ষতিকর ভূমিকা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।
৩. জিহাদের নির্দেশ: মুমিনদেরকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণ এবং আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪. তাওবার গুরুত্ব: সূরাটিতে তাওবার গুরুত্ব ও আল্লাহর ক্ষমার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
৫. দান-খয়রাত ও সামাজিক দায়িত্ব: মুমিনদেরকে দান-খয়রাত ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৬. তাবুকের যুদ্ধ: তাবুকের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মুমিনদের ঈমান ও আত্মত্যাগের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
সূরা আত-তাওবার শিক্ষা
১. মুশরিক ও মুনাফিকদের থেকে সতর্কতা: মুশরিক ও মুনাফিকদের চরিত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং তাদের থেকে দূরে থাকা।
২. তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা: গুনাহ থেকে তাওবা করা এবং আল্লাহর ক্ষমা লাভের চেষ্টা করা।
৩. জিহাদের প্রেরণা: আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা এবং ঈমানের দৃঢ়তা বজায় রাখা।
৪. সামাজিক দায়িত্ব পালন: দান-খয়রাত, অসহায়দের সাহায্য এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করা।
৫. মুনাফিকদের চরিত্র থেকে শিক্ষা: মুনাফিকদের মিথ্যাচার ও প্রতারণা থেকে শিক্ষা নিয়ে সত্যিকার মুমিন হওয়ার চেষ্টা করা।
৬. আল্লাহর সাহায্যের প্রতি আস্থা: আল্লাহর সাহায্য ও রহমতের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা।
সূরা আত-তাওবার মূল বিষয়বস্তু
১. মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ: মুশরিকদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ।
২. মুনাফিকদের চরিত্র: মুনাফিকদের মিথ্যাচার, প্রতারণা এবং তাদের ক্ষতিকর ভূমিকা সম্পর্কে সতর্কতা।
৩. জিহাদের নির্দেশ: মুমিনদেরকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণ এবং আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার আহ্বান।
৪. তাওবার গুরুত্ব: গুনাহ থেকে তাওবা করা এবং আল্লাহর ক্ষমা লাভের চেষ্টা করা।
৫. দান-খয়রাত ও সামাজিক দায়িত্ব: মুমিনদেরকে দান-খয়রাত ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশ।
৬. তাবুকের যুদ্ধ: তাবুকের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মুমিনদের ঈমান ও আত্মত্যাগের পরীক্ষা।
৭. আল্লাহর সাহায্য ও রহমত: মুমিনদেরকে আল্লাহর সাহায্য ও রহমতের প্রতি আস্থা রাখার শিক্ষা।
সূরা আত-তাওবা মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা, যা ঈমান, তাওবা, জিহাদ এবং সামাজিক দায়িত্বের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ দেখায়।
সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত অর্থসহ ব্যখ্যা
সূরা তাওবা (সূরা ৯) হল কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরার শেষ দুই আয়াত (১২৮ ও ১২৯ নং আয়াত) বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এগুলোকে প্রায়ই “আয়াতুস সাকালাইন” (দুটি ভারী আয়াত) বলা হয়। নিচে এই দুই আয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
১২৮ নং আয়াত:
আরবি:
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
অনুবাদ:
“নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল। তোমাদের কষ্ট তাঁকে কষ্ট দেয়। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ গুণাবলী বর্ণনা করেছেন। তিনি আমাদের মধ্য থেকেই এসেছেন, যা তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ককে আরও নিকটবর্তী করে। তিনি আমাদের কষ্টে কষ্ট পান এবং আমাদের মঙ্গল চান। মুমিনদের প্রতি তিনি অত্যন্ত স্নেহশীল ও দয়ালু। এই আয়াতটি রাসূল (সা.)-এর মানবিক গুণাবলী এবং তাঁর উম্মতের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের প্রতিফলন ঘটায়।
১২৯ নং আয়াত:
আরবি:
فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
অনুবাদ:
“অতএব, যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলো, ‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের মালিক।'”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা রাসূল (সা.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যদি কেউ তাঁর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তিনি যেন আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন। আল্লাহই তাঁর জন্য যথেষ্ট। এই আয়াতটি তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা) এবং তাওহিদের (আল্লাহর একত্ব) শিক্ষা দেয়। এটি মুমিনদেরকে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে এবং কোনো অবস্থাতেই হতাশ না হতে উৎসাহিত করে।
সারমর্ম:
সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মহান গুণাবলী এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসার শিক্ষা দেয়। এটি মুমিনদেরকে রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও অনুসরণ এবং আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস রাখতে উদ্বুদ্ধ করে। এই আয়াতগুলো আমাদেরকে ধৈর্য, বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার শিক্ষা দেয়।
সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত
সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত (১২৮ ও ১২৯ নং আয়াত) কুরআনের অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আয়াত। এই আয়াত দুটিকে “আয়াতুস সাকালাইন” (দুটি ভারী আয়াত) বলা হয়। এগুলোর বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা রয়েছে, যা বিভিন্ন হাদিস ও ইসলামী বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে এই আয়াত দুটির ফজিলত ও গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ গুণাবলীর বর্ণনা:
এই আয়াত দুটিতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মহান গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি উম্মতের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, দয়ালু এবং তাদের কল্যাণকামী। এই আয়াত দুটি পাঠ করলে রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায় এবং তাঁর সুন্নত অনুসরণের তাগিদ তৈরি হয়।
২. আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসার শিক্ষা:
১২৯ নং আয়াতে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা (তাওয়াক্কুল) করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটি মুমিনদেরকে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর আস্থা রাখতে এবং হতাশ না হতে উৎসাহিত করে। এই আয়াতটি পাঠ করলে অন্তরে প্রশান্তি ও আল্লাহর উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়।
৩. কঠিন সময়ে সুরক্ষা ও সাহায্য:
এই আয়াত দুটি পাঠ করলে আল্লাহর বিশেষ সাহায্য ও সুরক্ষা লাভ করা যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এই আয়াত দুটি পাঠ করতেন এবং উম্মতকেও তা পাঠ করতে উৎসাহিত করেছেন। এটি কঠিন সময়ে আল্লাহর সাহায্য লাভের একটি মাধ্যম।
৪. রোগ-শোক ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি:
এই আয়াত দুটি পাঠ করলে আল্লাহর রহমতে রোগ-শোক, বিপদ-আপদ ও কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি একটি শিফা (আরোগ্য) হিসেবে কাজ করে এবং মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি দেয়।
৫. রাতের কিয়াম ও তাহাজ্জুদে পাঠের ফজিলত:
রাসূলুল্লাহ (সা.) রাতের তাহাজ্জুদ নামাজে এই আয়াত দুটি পাঠ করতেন। এটি রাতের ইবাদতের সময় পাঠ করলে বিশেষ সওয়াব ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
৬. হাদিসে বর্ণিত ফজিলত:
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত রাতে পাঠ করবে, তার জন্য এটা সারা রাত ইবাদত করার সমতুল্য হবে।”
(তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
৭. আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি:
এই আয়াত দুটি পাঠ করলে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং অন্তরে আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। এটি মুমিনকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে।
৮. কুরআনের সমগ্র শিক্ষার সারমর্ম:
এই আয়াত দুটিতে কুরআনের মূল শিক্ষা—তাওহিদ (আল্লাহর একত্ব), রিসালাত (নবীর প্রতি বিশ্বাস) এবং তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা)—সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এগুলো পাঠ করলে কুরআনের মূল বাণী হৃদয়ঙ্গম হয়।
উপসংহার:
সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত অপরিসীম। এটি পাঠ করলে রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়, আল্লাহর উপর ভরসা শক্তিশালী হয় এবং বিপদ-আপদ থেকে সুরক্ষা লাভ করা যায়। এই আয়াত দুটি নিয়মিত পাঠ করা মুমিনের জন্য একটি মহান ইবাদত এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যম।
সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত
সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত (১২৮ ও ১২৯ নং আয়াত) নিম্নে আরবি ভাষায় উল্লেখ করা হলো:
সূরা তাওবা ১২৮ নং আয়াত:
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
সূরা তাওবা ১২৯ নং আয়াত:
فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
এই আয়াত দুটি কুরআনের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ অংশ এবং এগুলোর ফজিলত ও বরকত অপরিসীম। এগুলো নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করা যায়।
সূরা তাওবা এর আলোকে বিষয় ভিত্তিক ৫টি আয়াতের অর্থসহ ব্যখ্যা
সূরা তাওবা (সূরা ৯) কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরায় মুসলিম উম্মাহর জন্য বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা ও শিক্ষা রয়েছে। নিচে সূরা তাওবার আলোকে বিষয়ভিত্তিক ৫টি আয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
১. তাওবা (ক্ষমা প্রার্থনা) ও আল্লাহর দিকে ফিরে আসা:
সূরা তাওবা আয়াত ১০৪
أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
অনুবাদ:
“তারা কি জানে না যে, আল্লাহই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং সদকা গ্রহণ করেন? নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাওবার গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। তিনি বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং তাদের ক্ষমা করে দেন। এটি মুমিনদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এবং পাপ থেকে তাওবা করার প্রতি উৎসাহিত করে। আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা অসীম, তাই কোনো পাপী হতাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে।
২. মুনাফিকদের চরিত্র ও তাদের শাস্তি:
সূরা তাওবা আয়াত ৬৮
وَعَدَ اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ هِيَ حَسْبُهُمْ ۚ وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُقِيمٌ
অনুবাদ:
“আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং কাফিরদেরকে জাহান্নামের আগুনের ওয়াদা দিয়েছেন, যেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে লা’নত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মুনাফিকদের চরিত্র ও তাদের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। মুনাফিকরা মুখে ঈমানের দাবি করে কিন্তু অন্তরে কুফরি পোষণ করে। তাদের জন্য আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। এটি মুমিনদেরকে মুনাফিকির চরিত্র থেকে সতর্ক করে এবং ঈমানের সত্যতা বজায় রাখতে উৎসাহিত করে।
৩. জিহাদ ও আল্লাহর পথে সংগ্রাম:
সূরা তাওবা আয়াত ৪১
انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ
অনুবাদ:
“তোমরা হালকা ও ভারী অবস্থায় বের হয়ে পড়ো এবং আল্লাহর পথে তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে জিহাদ করো। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানো।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। জিহাদ শুধু যুদ্ধের ময়দানে নয়, বরং আল্লাহর পথে সম্পদ ও জীবন উৎসর্গ করাও এর অন্তর্ভুক্ত। এটি মুমিনদেরকে আল্লাহর পথে আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
৪. মসজিদে দিরার বিষয়:
সূরা তাওবা, আয়াত ১০৭:
وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مَسْجِدًا ضِرَارًا وَكُفْرًا وَتَفْرِيقًا بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ وَإِرْصَادًا لِمَنْ حَارَبَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ مِنْ قَبْلُ ۚ وَلَيَحْلِفُنَّ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا الْحُسْنَىٰ ۖ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
অনুবাদ:
“আর যারা মসজিদ তৈরি করেছে ক্ষতি সাধন, কুফরি ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং তাদের জন্য অপেক্ষার স্থান হিসেবে, যারা পূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তারা শপথ করে বলবে, ‘আমরা তো শুধু ভালোই চেয়েছি।’ কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মুনাফিকদের দ্বারা নির্মিত “মসজিদে দিরার” কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য তৈরি করা হয়েছিল। আল্লাহ তা’আলা তাদের মন্দ উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছেন এবং মুমিনদেরকে এ ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।
৫. আল্লাহর উপর ভরসা:
সূরা তাওবা আয়াত ১২৯
فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
অনুবাদ:
“অতএব, যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলো, ‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের মালিক।'”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা (তাওয়াক্কুল) করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটি মুমিনদেরকে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর আস্থা রাখতে এবং হতাশ না হতে উৎসাহিত করে। আল্লাহই সব কিছুর মালিক, তাই তাঁর উপর ভরসা করাই মুমিনের কর্তব্য।
উপসংহার:
সূরা তাওবা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা। এতে তাওবা, মুনাফিকদের চরিত্র, জিহাদ, আল্লাহর উপর ভরসা এবং ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আলোচিত হয়েছে। এই আয়াতগুলো মুমিনদেরকে সঠিক পথে চলার এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ দেখায়।