You are currently viewing সূরা আল আহযাব সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন উত্তর সহ বিস্তারিত
সূরা আল আহযাব

সূরা আল আহযাব সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন উত্তর সহ বিস্তারিত

সূরা আল-আহযাব: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু, ফযিলত ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত সহ সূরা আল আহযাব সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন উত্তর দেয়া হলো । আশাকরি সূরাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

সূরা আল আহযাব 

সূরা আল আহযাব সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ

সূরা আল-আহযাব সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

১. সূরা আল-আহযাব মদিনায় না মক্কায় নাযিল হয়েছে?

উত্তর: মদিনায়।

২. সূরা আল-আহযাবের আয়াত সংখ্যা কত?

উত্তর: ৭৩টি।

৩. সূরা আল-আহযাবের অন্য নাম কী?

উত্তর: সূরা আল-আযহাব।

৪. “আহযাব” শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: জোট বা সম্মিলিত শত্রুবাহিনী।

৫. আহযাব যুদ্ধের আরেক নাম কী?

উত্তর: খন্দকের যুদ্ধ (গাযওয়াতুল খন্দক)।

৬. সূরা আল-আহযাবে কোন যুদ্ধের কথা বর্ণিত হয়েছে?

উত্তর: আহযাব (খন্দক) যুদ্ধ।

৭. সূরা আল-আহযাবে মুমিনদের কীভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল?

উত্তর: ভয় ও ক্ষুধার মাধ্যমে।

৮. সূরা আল-আহযাবে মুনাফিকদের আচরণ কী ছিল?

উত্তর: তারা ভয়ে পালাতে চেয়েছিল ও অজুহাত দেখিয়েছিল।

৯. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ মুমিনদের কী সাহায্য দিয়েছিলেন?

উত্তর: ঝড় ও ফেরেশতা প্রেরণ করে।

১০. সূরা আল-আহযাবে নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের কী উপদেশ দেওয়া হয়েছে?

উত্তর: তারা যেন পর্দা করেন ও বিনয়ী হন।

১১. সূরা আল-আহযাবে জায়েদ (রা.)-এর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী কে ছিলেন?

উত্তর: যায়নাব বিনতে জাহশ (রা.)।

১২. সূরা আল-আহযাবে নবী (সা.)-এর জন্য কোন বিশেষ বিধান দেওয়া হয়েছে?

উত্তর: তিনি দত্তক পুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারবেন।

১৩. সূরা আল-আহযাবে নবী (সা.)-এর উপর লানতকারীদের শাস্তি কী?

উত্তর: তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত।

১৪. সূরা আল-আহযাবে নারীদেরকে কী বলা হয়েছে?

উত্তর: তারা যেন নিজেদের ঘরে অবস্থান করে ও বেপর্দা না হয়।

১৫. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসীদের কর্তব্য কী?

উত্তর: তার আনুগত্য করা ও সম্মান প্রদর্শন করা।

১৬. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ কাদেরকে ক্ষমা ও পুরস্কার দেবেন?

উত্তর: যারা তাওবা করে ও সৎকর্ম করে।

১৭. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ নবী (সা.)-কে কী বলেছেন?

উত্তর: তিনি মুমিনদের জন্য নিজের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

১৮. সূরা আল-আহযাবে নবী (সা.)-এর স্ত্রীদেরকে কী বলা হয়েছে?

উত্তর: তারা উম্মাহতুল মুমিনীন (মুমিনদের মা)।

১৯. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ কাদেরকে ধোকা দেবেন?

উত্তর: মুনাফিক ও কাফিরদের।

২০. সূরা আল-আহযাবে শেষ বিচারের দিনের কী সতর্কতা দেওয়া হয়েছে?

উত্তর: সব কাজের হিসাব নেওয়া হবে।

সূরা আল-আহযাব সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)

১. সূরা আল-আহযাব কততম সূরা?

  1. a) ৩০
    b) ৩৩ ✅
    c) ৩৫
    d) ৪০

২. “আহযাব” শব্দের অর্থ কী?

  1. a) একক শত্রু
    b) জোটবদ্ধ শত্রু ✅
    c) বন্ধু
    d) সাহায্যকারী

৩. আহযাব যুদ্ধের আরেক নাম কী?

  1. a) বদরের যুদ্ধ
    b) উহুদের যুদ্ধ
    c) খন্দকের যুদ্ধ ✅
    d) তাবুকের যুদ্ধ

৪. সূরা আল-আহযাবে কার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ হয়েছে?

  1. a) যায়নাব বিনতে জাহশ ✅
    b) খাদিজা (রা.)
    c) আয়েশা (রা.)
    d) ফাতিমা (রা.)

৫. সূরা আল-আহযাবে নবী (সা.)-এর স্ত্রীদেরকে কী বলা হয়েছে?

  1. a) মুমিনদের বোন
    b) মুমিনদের মা ✅
    c) মুমিনদের শিক্ষিকা
    d) মুমিনদের নেত্রী

৬. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ কাদেরকে সাহায্য করেছিলেন?

  1. a) ফেরেশতা প্রেরণ করে ✅
    b) বৃষ্টি দিয়ে
    c) ভূমিকম্প দিয়ে
    d) আগুন দিয়ে

৭. সূরা আল-আহযাবে মুনাফিকদের আচরণ কেমন ছিল?

  1. a) সাহসী
    b) ভীতু ও অজুহাতদাতা ✅
    c) ধৈর্যশীল
    d) উদার

৮. সূরা আল-আহযাবে নবী (সা.)-এর জন্য কোন বিশেষ বিধান দেওয়া হয়েছে?

  1. a) দত্তক পুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করার অনুমতি ✅
    b) একাধিক স্ত্রী রাখার নিষেধাজ্ঞা
    c) যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি
    d) সম্পদ ভাগ করার নির্দেশ

৯. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ নবী (সা.)-কে কী বলেছেন?

  1. a) তিনি সাধারণ মানুষ
    b) তিনি মুমিনদের জন্য নিজের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ✅
    c) তিনি শুধু আরবদের জন্য
    d) তিনি শুধু ধনীদের জন্য

১০. সূরা আল-আহযাবে নারীদেরকে কী করতে বলা হয়েছে?

  1. a) ঘরে অবস্থান করতে ও পর্দা করতে ✅
    b) ব্যবসা করতে
    c) যুদ্ধে অংশ নিতে
    d) পুরুষদের সাথে মেলামেশা করতে

১১. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ কাদেরকে ক্ষমা করবেন?

  1. a) তাওবাকারী ও সৎকর্মশীলদের ✅
    b) শুধু ধনীদের
    c) শুধু আলেমদের
    d) শুধু পুরুষদের

১২. সূরা আল-আহযাবে নবী (সা.)-এর উপর লানতকারীদের শাস্তি কী?

  1. a) শুধু দুনিয়ার শাস্তি
    b) দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশাপ ✅
    c) শুধু জরিমানা
    d) কোনো শাস্তি নেই

১৩. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ কাদেরকে ধোকা দেবেন?

  1. a) মুমিনদের
    b) মুনাফিক ও কাফিরদের ✅
    c) শিশুদের
    d) ফেরেশতাদের

১৪. সূরা আল-আহযাবে নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের কী উপদেশ দেওয়া হয়েছে?

  1. a) তারা যেন বেপর্দা হন
    b) তারা যেন পর্দা করেন ও বিনয়ী হন ✅
    c) তারা যেন সম্পদ জমা করেন
    d) তারা যেন পুরুষদের সাথে কাজ করেন

১৫. সূরা আল-আহযাবে মুমিনদের কীভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল?

  1. a) সম্পদ দিয়ে
    b) ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে ✅
    c) শুধু যুদ্ধ দিয়ে
    d) শুধু কথার মাধ্যমে

১৬. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহর রাসূলের প্রতি মুমিনদের কর্তব্য কী?

  1. a) তার আনুগত্য করা ✅
    b) তাকে উপেক্ষা করা
    c) শুধু তার কথা শোনা
    d) শুধু তার জন্য দোয়া করা

১৭. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ নবী (সা.)-এর জন্য কোন বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন?

  1. a) তিনি দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী
    b) তিনি মুমিনদের জন্য নিজের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ✅
    c) তিনি শুধু আরবদের নবী
    d) তিনি শুধু যোদ্ধা

১৮. সূরা আল-আহযাবে শেষ বিচারের দিনের কী সতর্কতা দেওয়া হয়েছে?

  1. a) সব কাজের হিসাব নেওয়া হবে ✅
    b) শুধু নামাজের হিসাব
    c) শুধু রোজার হিসাব
    d) শুধু যাকাতের হিসাব

১৯. সূরা আল-আহযাবে নবী (সা.)-এর দত্তক পুত্র কে ছিলেন?

  1. a) হাসান (রা.)
    b) হুসাইন (রা.)
    c) জায়েদ (রা.) ✅
    d) আলী (রা.)

২০. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ কাদেরকে সাহায্য করেন?

  1. a) ধৈর্যশীল ও আল্লাহভীরুদের ✅
    b) শুধু ধনীদের
    c) শুধু যোদ্ধাদের
    d) শুধু আলেমদের

২১. সূরা আল-আহযাবে নারীদের পর্দার নির্দেশ কেন দেওয়া হয়েছে?

  1. a) তাদের সম্মান ও নিরাপত্তার জন্য ✅
    b) তাদেরকে বন্দী করার জন্য
    c) তাদেরকে দুর্বল করার জন্য
    d) তাদেরকে কাজ করতে নিষেধ করার জন্য

২২. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ মুনাফিকদের কী বলেছেন?

  1. a) তারা মুমিন
    b) তারা কাফির ✅
    c) তারা ফেরেশতা
    d) তারা নবী

২৩. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ মুমিনদের কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন?

  1. a) ক্ষমা ও মহান পুরস্কার ✅
    b) শুধু দুনিয়ার সম্পদ
    c) শুধু সুখী জীবন
    d) শুধু দীর্ঘ জীবন

২৪. সূরা আল-আহযাবে নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের সম্বোধন করে কী বলা হয়েছে?

  1. a) তারা যেন অহংকারী হন
    b) তারা যেন বিনয়ী হন ✅
    c) তারা যেন সম্পদ লুট করেন
    d) তারা যেন পুরুষদের সাথে প্রতিযোগিতা করেন

২৫. সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ কাদেরকে সত্যায়িত করেছেন?

  1. a) মুনাফিকদের
    b) মুমিনদের ✅
    c) কাফিরদের
    d) শিরককারীদের

এই প্রশ্নোত্তরগুলো সূরা আল-আহযাবের মূল শিক্ষা ও বিষয়বস্তু বুঝতে সহায়ক হবে।

সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই

সূরা আল-আহযাব: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু, ফযিলত ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত

১. সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়

  • নাম: সূরা আল-আহযাব (আরবি: الأحزاب)
  • অর্থ: জোট বা সম্মিলিত শত্রুবাহিনী
  • আয়াত সংখ্যা: ৭৩টি
  • রুকু: ৯টি
  • সূরার অবস্থান: ৩৩তম সূরা (মাদানী সূরা)
  • নাযিলের সময়: হিজরী ৫ম সালে, খন্দক (আহযাব) যুদ্ধের পর

২. শানে নুযূল (নাযিলের প্রেক্ষাপট)

সূরা আল-আহযাব মূলত খন্দকের যুদ্ধ (গাযওয়াতুল খন্দক) এবং এর পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে নাযিল হয়েছে। এ সময় মক্কার কুরাইশ, ইহুদি গোত্র বনু নাদীর ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলো জোট বেঁধে মদিনা আক্রমণ করে। মুসলিমরা খন্দক খনন করে শত্রুদের প্রতিহত করে। এ সূরায় মুমিন, মুনাফিক ও ইহুদিদের আচরণ, নারীদের পর্দার বিধান, নবী (সা.)-এর পরিবারের মর্যাদা এবং দত্তক পুত্রের বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক

  1. আহযাব (খন্দক) যুদ্ধের বর্ণনা ও মুমিনদের পরীক্ষা।
  2. মুনাফিকদের চরিত্র ও তাদের শাস্তির কথা।
  3. নারীদের পর্দার বিধান ও নবী পরিবারের সম্মান।
  4. দত্তক পুত্রের স্ত্রীকে বিবাহের বৈধতা (যায়নাব বিনতে জাহশের ঘটনা)।
  5. নবী (সা.)-এর প্রতি আনুগত্য ও সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ।
  6. মুমিনদের জন্য আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি।

৪. সূরাটির শিক্ষা

✔️ আল্লাহর উপর ভরসা রাখা: খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমরা সংখ্যায় কম ছিল, কিন্তু আল্লাহর সাহায্যে বিজয়ী হয়েছিল।
✔️ মুনাফিকী থেকে বেঁচে থাকা: মুনাফিকরা যেকোনো সংকটে মুমিনদের ছেড়ে যায়।
✔️ পর্দার বিধান মেনে চলা: নারী-পুরুষের শালীনতা ও সম্মান রক্ষার নির্দেশ।
✔️ নবীর আদর্শ অনুসরণ: নবী (সা.)-এর আনুগত্য করা ঈমানের অংশ।
✔️ দত্তক পুত্রের প্রকৃত বিধান: ইসলামে দত্তক পুত্র প্রকৃত পুত্র নয়, এ সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করা।

৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু

📌 যুদ্ধ ও সংঘাত: খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমদের সংগ্রাম ও আল্লাহর সাহায্য।
📌 সমাজ সংস্কার: নারী-পুরুষের সম্পর্ক, পর্দা ও নৈতিকতা।
📌 নবী (সা.)-এর মর্যাদা: তাঁর পরিবারের বিশেষ অবস্থান ও মুমিনদের কর্তব্য।
📌 আখিরাতের সতর্কতা: কাফির-মুনাফিকদের পরিণতি ও মুমিনদের পুরস্কার।

৬. সূরাটির ফযিলত

🔹 নবী (সা.) বলেছেন:

“যে সূরা আল-আহযাব পড়বে, সে কিয়ামতের দিন নবী ও সিদ্দিকদের সাথী হবে।” (তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন)
🔹 এই সূরায় নবী (সা.)-এর বিশেষ মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে।
🔹 পর্দার বিধান ও নারী-পুরুষের শিষ্টাচার শেখায়।

৭. সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ)

(১) আল্লাহর উপর ভরসা ও সাহায্য

আয়াত ৯:
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে আসছিল, অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রবল বাতাস ও অদৃশ্য সৈন্য প্রেরণ করেছিলাম।”
শিক্ষা: আল্লাহই মুমিনদের সাহায্যকারী, তাই সব অবস্থায় তাঁর উপর ভরসা রাখতে হবে।

(২) মুনাফিকদের চরিত্র

আয়াত ১২:
“আর যখন মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা বলছিল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে তো শুধু ধোকাই দিয়েছেন!’”
শিক্ষা: মুনাফিকরা সবসময় সন্দেহ ও ভয় প্রকাশ করে, তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

(৩) পর্দার বিধান

আয়াত ৫৯:
“হে নবী! তোমার স্ত্রী, কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের চাদর নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে এবং তারা উত্যক্ত হবে না।”
শিক্ষা: পর্দা নারীর সম্মান ও নিরাপত্তার রক্ষাকবচ।

(৪) নবীর আনুগত্য

আয়াত ৩৬:
“আর কোনো মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য এটা ঠিক নয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিলে তারা নিজেদের জন্য অন্য কোনো সিদ্ধান্তের অধিকারী হবে।”
শিক্ষা: নবী (সা.)-এর নির্দেশ মান্য করা ঈমানের দাবি।

(৫) দত্তক পুত্রের বিধান

আয়াত ৪০:
“মুহাম্মাদ তোমাদের কারো পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী।”
শিক্ষা: ইসলামে দত্তক পুত্র প্রকৃত পুত্র নয়, এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে।

সারসংক্ষেপ:

সূরা আল-আহযাবে যুদ্ধ, ঈমান, মুনাফিকী, পর্দা, নবীর মর্যাদা ও সমাজ সংস্কার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। এটি মুমিনদের জন্য একটি পথনির্দেশক সূরা, যা ব্যক্তিগত, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে ভারসাম্য আনে।

সূরা আল আহযাব আয়াত ২৫, ৩৩, ৩৫ , ৫৬, ৫০, ৫৭, ৪০, ৫৯, ৫৮, ৩ আয়াত ও অর্থসহ ব্যাখ্যা

সূরা আল-আহযাবের নির্বাচিত আয়াতসমূহ: অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

১. আয়াত ২৫ (খন্দক যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য)

আয়াত:

وَرَدَّ اللَّهُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِغَيْظِهِمْ لَمْ يَنَالُوا خَيْرًا ۚ وَكَفَى اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ الْقِتَالَ ۚ وَكَانَ اللَّهُ قَوِيًّا عَزِيزًا
অর্থ:
“আল্লাহ কাফিরদেরকে তাদের রাগান্বিত অবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন; তারা কোনো কল্যাণ অর্জন করতে পারেনি। আর আল্লাহ মুমিনদেরকে যুদ্ধের কষ্ট থেকে রক্ষা করলেন। আল্লাহ প্রভাবশালী, পরাক্রমশালী।”

ব্যাখ্যা:

  • খন্দক যুদ্ধে কাফিররা ব্যর্থ হয় এবং তাদের পরিকল্পনা ধ্বংস হয়।
  • আল্লাহ মুমিনদেরকে যুদ্ধের কষ্ট থেকে রক্ষা করেন, যা তাঁর শক্তি ও ক্ষমতার প্রমাণ।

২. আয়াত ৩৩ (আহলুল বাইতের পবিত্রতা)

আয়াত:

إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
অর্থ:
“হে আহলুল বাইত (নবী পরিবার)! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান।”

ব্যাখ্যা:

  • এ আয়াত নবী (সা.)-এর পরিবার (আহলুল বাইত)-এর বিশেষ মর্যাদা নির্দেশ করে।
  • তাদেরকে রিজক (পাপ ও অপবিত্রতা) থেকে পবিত্র রাখার আল্লাহর ইচ্ছা প্রকাশিত হয়েছে।

৩. আয়াত ৩৫ (মুমিন নর-নারীর গুণাবলী)

আয়াত:

إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِوَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِوَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
অর্থ:
“নিশ্চয় মুসলিম নর-নারী, সত্যবাদী নর-নারী, ধৈর্যশীল নর-নারী… আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নর-নারী—আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহান পুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন।”

ব্যাখ্যা:

  • মুমিনদের ইবাদত ও নৈতিক গুণাবলীর বর্ণনা।
  • নারী-পুরুষ উভয়ই সমানভাবে সওয়াবের অধিকারী।

৪. আয়াত ৫৬ (দরূদ প্রেরণের নির্দেশ)

আয়াত:

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থ:
“নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর উপর দরূদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর উপর দরূদ পাঠ কর এবং সালাম পেশ কর।”

ব্যাখ্যা:

  • নবী (সা.)-এর প্রতি দরূদ পাঠ ঈমানের অংশ।
  • এটি মুমিনদের জন্য বিশেষ সওয়াবের কাজ।

৫. আয়াত ৫০ (নবী (সা.)-এর বিবাহ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান)

আয়াত:

وَامْرَأَةً مُّؤْمِنَةً إِن وَهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ إِنْ أَرَادَ النَّبِيُّ أَن يَسْتَنكِحَهَا خَالِصَةً لَّكَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ
অর্থ:
“আর কোনো মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পণ করে এবং নবী তাকে বিবাহ করতে ইচ্ছা করেন, তবে তা শুধু আপনার জন্যই বৈধ, অন্য মুমিনদের জন্য নয়।”

ব্যাখ্যা:

  • নবী (সা.)-এর জন্য বিশেষ বিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
  • এটি সাধারণ মুমিনদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

৬. আয়াত ৫৭ (নবীকে কষ্টদানকারীর শাস্তি)

আয়াত:

إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
অর্থ:
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের উপর দুনিয়া ও আখিরাতে লানত (অভিশাপ) করেছেন।”

ব্যাখ্যা:

  • নবী (সা.)-কে কষ্ট দেওয়া মারাত্মক পাপ।
  • এর শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশাপ।

৭. আয়াত ৪০ (নবী (সা.)-এর খাতামুন নাবিয়্যীন হওয়া)

আয়াত:

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ
অর্থ:
“মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের কারো পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী।”

ব্যাখ্যা:

  • নবী (সা.) দত্তক পুত্র জায়েদ (রা.)-এর পিতা নন।
  • তিনি সর্বশেষ নবী (খাতামুন নাবিয়্যীন)।

৮. আয়াত ৫৯ (পর্দার বিধান)

আয়াত:

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ
অর্থ:
“হে নবী! আপনার স্ত্রী, কন্যাদের ও মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদর নিজেদের উপর টেনে দেয়।”

ব্যাখ্যা:

  • নারীদের পর্দার নির্দেশ।
  • এটি তাদের সম্মান ও নিরাপত্তার জন্য।

৯. আয়াত ৫৮ (মুমিন নারীদের প্রতি সম্মান)

আয়াত:

وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا
অর্থ:
“যারা মুমিন নর-নারীকে অকারণে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।”

ব্যাখ্যা:

  • মুমিনদেরকে কষ্ট দেওয়া নিষিদ্ধ।
  • এটি সামাজিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১০. আয়াত ৩ (আল্লাহর উপর ভরসা)

আয়াত:

وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا
অর্থ:
“আর আল্লাহর উপর ভরসা কর। আল্লাহই যথেষ্ট কর্মবিধানকারী।”

ব্যাখ্যা:

  • সব অবস্থায় আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা মুমিনের কর্তব্য।
  • তিনি সব বিষয়ের ব্যবস্থাপক।

সারসংক্ষেপ:

এই আয়াতগুলোতে নবীর মর্যাদা, পর্দা, দরূদ, আহলুল বাইতের পবিত্রতা, সমাজিক ন্যায়বিচার ও আল্লাহর উপর ভরসা ইত্যাদি বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সূরা আল-আহযাব মুমিনদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান উপস্থাপন করে।