সূরা আনআম পবিত্র কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা তাওহীদ, শিরকের কুফল, আল্লাহর নিদর্শন এবং পরকালের সচেতনতা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান প্রদান করে। এটি মুসলিমদের ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং শিরক ও কুসংস্কার থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়। সূরাটি সম্পর্কে বিস্তারিত দেয়া হলো।
সূরা আনআম সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর:
১. সূরা আনআম কুরআনের কততম সূরা?
উত্তর: সূরা আনআম কুরআনের ৬ষ্ঠ সূরা।
২. সূরা আনআম মক্কী না মাদানী সূরা?
উত্তর: সূরা আনআম মক্কী সূরা।
৩. সূরা আনআমে কয়টি আয়াত রয়েছে?
উত্তর: সূরা আনআমে ১৬৫টি আয়াত রয়েছে।
৪. সূরা আনআমের মূল বিষয়বস্তু কী?
উত্তর: তাওহীদ, আল্লাহর একত্ববাদ, এবং শিরকের বিপদ।
৫. সূরা আনআমে কয়টি রুকু রয়েছে?
উত্তর: সূরা আনআমে ২০টি রুকু রয়েছে।
৬. সূরা আনআমে আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম বেশি আলোচিত হয়েছে?
উত্তর: “আল-খালিক” (স্রষ্টা) এবং “আর-রাজ্জাক” (রিজিকদাতা)।
৭. সূরা আনআমে কোন নবীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: ইব্রাহীম (আ.)-এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৮. সূরা আনআমে শিরকের কুফল সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: শিরক একটি মহা অন্যায় এবং আল্লাহ কখনও তা ক্ষমা করবেন না।
৯. সূরা আনআমে আল্লাহর নিদর্শনগুলোর কথা কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, রাত ও দিনের পরিবর্তন ইত্যাদি আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
১০. সূরা আনআমে মুশরিকদের কোন ভ্রান্ত ধারণার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: তারা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা বলে বিশ্বাস করত।
১১. সূরা আনআমে আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ হিসেবে কী উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: সমগ্র সৃষ্টিজগতের ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে।
১২. সূরা আনআমে কিয়ামতের দিনের কী বর্ণনা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: কিয়ামতের দিন সবাই নিজ নিজ আমলের হিসাব দেবে।
১৩. সূরা আনআমে আল্লাহর রহমতের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: বৃষ্টি দ্বারা মৃত জমিকে জীবিত করা।
১৪. সূরা আনআমে আল্লাহর আদেশ অমান্যকারীদের কী পরিণতি হবে?
উত্তর: তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
১৫. সূরা আনআমে আল্লাহর নবীগণের প্রতি মানুষের কী আচরণের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মানুষ নবীগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে এবং তাদের বিরোধিতা করেছে।
১৬. সূরা আনআমে আল্লাহর কিতাবের প্রতি মানুষের দায়িত্ব কী?
উত্তর: আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করা এবং তা মেনে চলা।
১৭. সূরা আনআমে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা।
১৮. সূরা আনআমে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কী কী নিদর্শন রয়েছে?
উত্তর: পাহাড়, নদী, গাছপালা, প্রাণী ইত্যাদি।
১৯. সূরা আনআমে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার কী আহ্বান জানানো হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা এবং শিরক পরিত্যাগ করা।
২০. সূরা আনআমে আল্লাহর নেয়ামতের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: ফলমূল, শস্য, পশু-পাখি ইত্যাদি।
সূরা আনআম সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন):
১. সূরা আনআম কুরআনের কততম সূরা?
ক) ৫ম
খ) ৬ষ্ঠ
গ) ৭ম
ঘ) ৮ম
উত্তর: খ) ৬ষ্ঠ
২. সূরা আনআমে কয়টি আয়াত রয়েছে?
ক) ১৫০
খ) ১৬৫
গ) ১৭৫
ঘ) ১৮০
উত্তর: খ) ১৬৫
৩. সূরা আনআম কোন ধরনের সূরা?
ক) মাদানী
খ) মক্কী
গ) মিশ্র
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: খ) মক্কী
৪. সূরা আনআমে কোন নবীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে?
ক) মুসা (আ.)
খ) ইব্রাহীম (আ.)
গ) ঈসা (আ.)
ঘ) নূহ (আ.)
উত্তর: খ) ইব্রাহীম (আ.)
৫. সূরা আনআমে আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম বেশি আলোচিত হয়েছে?
ক) আল-খালিক
খ) আল-রহমান
গ) আল-মালিক
ঘ) আল-জাব্বার
উত্তর: ক) আল-খালিক
৬. সূরা আনআমে শিরকের কুফল সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
ক) এটি ক্ষমাযোগ্য
খ) এটি মহা অন্যায়
গ) এটি ছোট গুনাহ
ঘ) এটি কোনো সমস্যা নয়
উত্তর: খ) এটি মহা অন্যায়
৭. সূরা আনআমে আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে কী উল্লেখ করা হয়েছে?
ক) আকাশ ও পৃথিবী
খ) রাত ও দিন
গ) পাহাড় ও নদী
ঘ) সবকটি
উত্তর: ঘ) সবকটি
৮. সূরা আনআমে মুশরিকদের কোন ভ্রান্ত ধারণার কথা বলা হয়েছে?
ক) ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা
খ) আল্লাহর কোনো অস্তিত্ব নেই
গ) নবীগণ মিথ্যাবাদী
ঘ) কিয়ামত নেই
উত্তর: ক) ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা
৯. সূরা আনআমে আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ হিসেবে কী উল্লেখ করা হয়েছে?
ক) সৃষ্টিজগতের ভারসাম্য
খ) মানুষের বুদ্ধিমত্তা
গ) প্রাকৃতিক দুর্যোগ
ঘ) কোনোটি নয়
উত্তর: ক) সৃষ্টিজগতের ভারসাম্য
১০. সূরা আনআমে কিয়ামতের দিনের কী বর্ণনা দেওয়া হয়েছে?
ক) সবাই নিজ নিজ আমলের হিসাব দেবে
খ) কোনো হিসাব হবে না
গ) শুধু ভালো লোকেরা হিসাব দেবে
ঘ) শুধু মন্দ লোকেরা শাস্তি পাবে
উত্তর: ক) সবাই নিজ নিজ আমলের হিসাব দেবে
১১. সূরা আনআমে আল্লাহর রহমতের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
ক) বৃষ্টি দ্বারা মৃত জমিকে জীবিত করা
খ) সূর্যের আলো
গ) বাতাস
ঘ) সবকটি
উত্তর: ক) বৃষ্টি দ্বারা মৃত জমিকে জীবিত করা
১২. সূরা আনআমে আল্লাহর আদেশ অমান্যকারীদের কী পরিণতি হবে?
ক) তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে
খ) তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে
গ) তারা ক্ষমা পাবে
ঘ) তাদের কোনো শাস্তি নেই
উত্তর: খ) তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে
১৩. সূরা আনআমে আল্লাহর নবীগণের প্রতি মানুষের কী আচরণের কথা বলা হয়েছে?
ক) তারা নবীগণকে সম্মান করত
খ) তারা নবীগণকে মিথ্যাবাদী বলত
গ) তারা নবীগণকে সাহায্য করত
ঘ) তারা নবীগণকে উপেক্ষা করত
উত্তর: খ) তারা নবীগণকে মিথ্যাবাদী বলত
১৪. সূরা আনআমে আল্লাহর কিতাবের প্রতি মানুষের দায়িত্ব কী?
ক) তা উপেক্ষা করা
খ) তা মেনে চলা
গ) তা বিকৃত করা
ঘ) তা অস্বীকার করা
উত্তর: খ) তা মেনে চলা
১৫. সূরা আনআমে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
ক) আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
খ) আল্লাহকে ভুলে যাওয়া
গ) আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করা
ঘ) কোনোটি নয়
উত্তর: ক) আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
১৬. সূরা আনআমে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কী কী নিদর্শন রয়েছে?
ক) পাহাড়, নদী
খ) গাছপালা, প্রাণী
গ) আকাশ, পৃথিবী
ঘ) সবকটি
উত্তর: ঘ) সবকটি
১৭. সূরা আনআমে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার কী আহ্বান জানানো হয়েছে?
ক) আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা
খ) শিরক পরিত্যাগ করা
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটি নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
১৮. সূরা আনআমে আল্লাহর নেয়ামতের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
ক) ফলমূল, শস্য
খ) পশু-পাখি
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটি নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
১৯. সূরা আনআমে আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে কী উল্লেখ করা হয়েছে?
ক) মানুষের সৃষ্টি
খ) প্রাণীদের সৃষ্টি
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটি নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
২০. সূরা আনআমে আল্লাহর রহমতের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
ক) বৃষ্টি
খ) সূর্যের আলো
গ) বাতাস
ঘ) সবকটি
উত্তর: ক) বৃষ্টি
২১. সূরা আনআমে আল্লাহর আদেশ অমান্যকারীদের কী পরিণতি হবে?
ক) তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে
খ) তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে
গ) তারা ক্ষমা পাবে
ঘ) তাদের কোনো শাস্তি নেই
উত্তর: খ) তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে
২২. সূরা আনআমে আল্লাহর নবীগণের প্রতি মানুষের কী আচরণের কথা বলা হয়েছে?
ক) তারা নবীগণকে সম্মান করত
খ) তারা নবীগণকে মিথ্যাবাদী বলত
গ) তারা নবীগণকে সাহায্য করত
ঘ) তারা নবীগণকে উপেক্ষা করত
উত্তর: খ) তারা নবীগণকে মিথ্যাবাদী বলত
২৩. সূরা আনআমে আল্লাহর কিতাবের প্রতি মানুষের দায়িত্ব কী?
ক) তা উপেক্ষা করা
খ) তা মেনে চলা
গ) তা বিকৃত করা
ঘ) তা অস্বীকার করা
উত্তর: খ) তা মেনে চলা
২৪. সূরা আনআমে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
ক) আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
খ) আল্লাহকে ভুলে যাওয়া
গ) আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করা
ঘ) কোনোটি নয়
উত্তর: ক) আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
২৫. সূরা আনআমে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কী কী নিদর্শন রয়েছে?
ক) পাহাড়, নদী
খ) গাছপালা, প্রাণী
গ) আকাশ, পৃথিবী
ঘ) সবকটি
উত্তর: ঘ) সবকটি
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু
সূরা আনআমের সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
সূরা আনআম কুরআন মাজিদের ৬ষ্ঠ সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১৬৫টি। সূরাটির নাম “আনআম” (প্রাণী) এসেছে ১৩৬, ১৩৮ ও ১৩৯ নং আয়াতে প্রাণী সম্পর্কিত আলোচনা থেকে। এই সূরাটি তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ), রিসালাত (নবুওয়াত) এবং আখিরাত (পরকাল) সম্পর্কে গভীর আলোচনা করে। এটি মুশরিকদের ভ্রান্ত ধারণা ও শিরকের কুফল সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করে।
সূরা আনআমের শানেনুযূল (অবতরণের প্রেক্ষাপট):
সূরা আনআম মক্কী জীবনের মধ্যভাগে অবতীর্ণ হয়েছিল। তখন মুশরিকরা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দাওয়াতের বিরোধিতা করছিল এবং শিরক ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল। তারা আল্লাহর একত্ববাদকে অস্বীকার করত এবং মূর্তি পূজা করত। এই সূরাটি তাদের ভ্রান্ত ধারণাগুলো খণ্ডন করে এবং তাওহীদের সত্যতা প্রতিষ্ঠা করে। এতে ইব্রাহীম (আ.)-এর মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদের দলিলও উপস্থাপন করা হয়েছে।
সূরা আনআমের গুরুত্বপূর্ণ দিক:
১. তাওহীদ ও শিরকের বিরোধিতা: সূরাটি আল্লাহর একত্ববাদের উপর জোর দেয় এবং শিরকের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে।
২. আল্লাহর নিদর্শন: সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন নিদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
৩. নবুওয়াতের প্রমাণ: নবীগণের আগমন ও তাদের দাওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করা হয়েছে।
৪. পরকালের আলোচনা: কিয়ামত, হিসাব-নিকাশ ও জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
৫. ইব্রাহীম (আ.)-এর আদর্শ: ইব্রাহীম (আ.)-এর মাধ্যমে শিরকমুক্ত সমাজ গঠনের আদর্শ উপস্থাপন করা হয়েছে।
সূরা আনআমের শিক্ষা:
১. তাওহীদের গুরুত্ব: আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা এবং শিরক থেকে দূরে থাকা।
২. আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া: আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
৩. সৃষ্টির নিদর্শনে চিন্তা: প্রকৃতি ও সৃষ্টিজগতের নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর মহিমা উপলব্ধি করা।
৪. নবীদের অনুসরণ: নবী-রাসূলগণের আদর্শ অনুসরণ করা এবং তাদের দাওয়াত মেনে চলা।
৫. পরকালের প্রস্তুতি: আখিরাতের জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং ভালো আমল করা।
৬. শিরকের কুফল থেকে সতর্কতা: শিরক একটি মহা অন্যায় এবং এর পরিণতি ভয়াবহ।
সূরা আনআমের মূল বিষয়বস্তু:
১. তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ): সূরাটি আল্লাহর একত্ববাদের উপর জোর দেয় এবং শিরকের ভ্রান্তি খণ্ডন করে।
২. আল্লাহর নিদর্শন: আকাশ, পৃথিবী, রাত-দিন, পাহাড়-নদী, গাছপালা ও প্রাণীজগতের মাধ্যমে আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
৩. নবুওয়াত ও রিসালাত: নবী-রাসূলগণের আগমন ও তাদের দাওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করা হয়েছে।
৪. শিরকের কুফল: শিরক একটি মহা অন্যায় এবং এর পরিণতি ভয়াবহ।
৫. ইব্রাহীম (আ.)-এর আদর্শ: ইব্রাহীম (আ.)-এর মাধ্যমে শিরকমুক্ত সমাজ গঠনের আদর্শ উপস্থাপন করা হয়েছে।
৬. পরকালের আলোচনা: কিয়ামত, হিসাব-নিকাশ, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
৭. আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত: আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৮. মানুষের দায়িত্ব: আল্লাহর আদেশ মেনে চলা এবং নবী-রাসূলগণের অনুসরণ করা।
সূরা আনআম পবিত্র কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা তাওহীদ, শিরকের কুফল, আল্লাহর নিদর্শন এবং পরকালের সচেতনতা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান প্রদান করে। এটি মুসলিমদের ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং শিরক ও কুসংস্কার থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়।
সূরা আনআমের বিষয়ভিত্তিক আয়াতসমূহের অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:
সূরা আনআম আয়াত ৬
আয়াত:
أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّن قَرْنٍ مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ مَا لَمْ نُمَكِّن لَّكُمْ وَأَرْسَلْنَا السَّمَاءَ عَلَيْهِم مِّدْرَارًا وَجَعَلْنَا الْأَنْهَارَ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُم بِذُنُوبِهِمْ وَأَنشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قَرْنًا آخَرِينَ
অর্থ:
তারা কি দেখে না, তাদের পূর্বে আমরা কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যাদেরকে আমরা পৃথিবীতে এমন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলাম, যা আমরা তোমাদেরকে দেইনি? আমরা তাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করতাম এবং তাদের পায়ের নিচে নদী প্রবাহিত করতাম। অতঃপর তাদের পাপের কারণে আমরা তাদের ধ্বংস করেছি এবং তাদের পরে অন্য সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ পূর্ববর্তী সম্প্রদায়গুলোর ধ্বংসের কথা উল্লেখ করেছেন, যারা পৃথিবীতে সুযোগ-সুবিধা পেয়েও আল্লাহর অবাধ্যতা করেছিল। তাদের ধ্বংসের কারণ ছিল তাদের পাপ ও অহংকার। এটি একটি সতর্কবার্তা যে, আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলা অপরিহার্য।
সূরা আনআম আয়াত ১৭
আয়াত:
وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ ۚ يُصِيبُ بِهِ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۚ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থ:
আল্লাহ যদি তোমাকে কোনো কষ্ট দেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমাকে কোনো কল্যাণ দিতে চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ ফিরিয়ে দেয়ার কেউ নেই। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তা দিয়ে থাকেন। আর তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর একত্ব ও ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। তিনি ছাড়া কেউ কষ্ট দূর করতে বা কল্যাণ দান করতে পারে না। এটি বান্দাকে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখার শিক্ষা দেয় এবং তাঁর রহমত ও ক্ষমার প্রতি আশাবাদী হতে উৎসাহিত করে।
সূরা আনআম আয়াত ১৬২
আয়াত:
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থ:
বল, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ ইবাদত ও আত্মসমর্পণের কথা বলা হয়েছে। এটি মুমিনের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিবেদিত হওয়ার শিক্ষা দেয়।
সূরা আনআম আয়াত ১৬৩
আয়াত:
لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
অর্থ:
তাঁর কোনো শরীক নেই। এজন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম মুসলিম (আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী)।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে তাওহীদের ঘোষণা করা হয়েছে যে, আল্লাহর কোনো শরীক নেই। নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে এই বার্তা দিয়ে পাঠানো হয়েছে এবং তিনি প্রথম মুসলিম হিসেবে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
সূরা আনআম আয়াত ৩৩
আয়াত:
قَدْ نَعْلَمُ إِنَّهُ لَيَحْزُنُكَ الَّذِي يَقُولُونَ ۖ فَإِنَّهُمْ لَا يُكَذِّبُونَكَ وَلَٰكِنَّ الظَّالِمِينَ بِآيَاتِ اللَّهِ يَجْحَدُونَ
অর্থ:
আমি জানি, তারা যা বলে তা তোমাকে দুঃখিত করে। বস্তুত তারা তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে না, কিন্তু জালিমরা আল্লাহর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করে।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে নবীজি (সা.)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে যে, কাফিররা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করে না, বরং তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করে। এটি নবীজি (সা.)-এর ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দেয়।
সূরা আনআম আয়াত ৩৬
আয়াত:
إِنَّمَا يَسْتَجِيبُ الَّذِينَ يَسْمَعُونَ ۘ وَالْمَوْتَىٰ يَبْعَثُهُمُ اللَّهُ ثُمَّ إِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
অর্থ:
যারা শোনে, কেবল তারাই সাড়া দেয়। আর মৃতদেরকে আল্লাহ পুনরুত্থিত করবেন, তারপর তাঁর কাছেই তাদের ফিরে যেতে হবে।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে সত্য গ্রহণ করার জন্য হৃদয়ের প্রস্তুতি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মৃতরা সাড়া দিতে পারে না, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন এবং সবাই তাঁর কাছেই ফিরে যাবে।
সূরা আনআম আয়াত ১৫১
আয়াত:
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ ۖ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۖ وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُم مِّنْ إِمْلَاقٍ ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ ۖ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ۖ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
অর্থ:
বল, এসো, আমি তোমাদেরকে পাঠ করে শুনাই, তোমাদের রব যা কিছু হারাম করেছেন: তা হলো, তোমরা তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো, দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না, আমি তোমাদের ও তাদেরকে রিজিক দেই, অশ্লীল কাজের কাছে যেও না, প্রকাশ্য হোক বা গোপন, এবং আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, তাকে হত্যা করো না, ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া। এগুলোই তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ হারাম কাজগুলোর একটি তালিকা দিয়েছেন, যেমন শিরক, পিতা-মাতার অবাধ্যতা, সন্তান হত্যা, অশ্লীলতা এবং অন্যায়ভাবে হত্যা করা। এটি মানুষের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
সূরা আনআম আয়াত ৫৯
আয়াত:
وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ ۚ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۚ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
অর্থ:
আর তাঁর কাছেই গায়েবের চাবিকাঠি রয়েছে, তিনি ছাড়া কেউ তা জানে না। তিনি জানেন যা স্থলে ও সমুদ্রে রয়েছে। কোনো গাছের পাতাও পড়ে না, কিন্তু তিনি তা জানেন। আর পৃথিবীর অন্ধকারে কোনো বীজও পড়ে না, না কোনো শুকনো বা তরল বস্তু, কিন্তু তা সুস্পষ্ট কিতাবে রয়েছে।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর সর্বজ্ঞতা ও গায়েবের জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে। তিনি সবকিছু জানেন, এমনকি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ও তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। এটি বান্দাকে আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের শিক্ষা দেয়।
সারসংক্ষেপ:
সূরা আনআমের এই আয়াতগুলোতে তাওহীদ, আল্লাহর একত্ব, নৈতিক দায়িত্ব, আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা, এবং পরকালের বিশ্বাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। এই আয়াতগুলো মুমিনদের জন্য পথনির্দেশিকা এবং আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেয়।