You are currently viewing শিশু কিশোর বিষয়ক অনু ভাবনা-অধ্যাপক আবু তাহের বেলাল

শিশু কিশোর বিষয়ক অনু ভাবনা-অধ্যাপক আবু তাহের বেলাল

শিশু কিশোর বিষয়ক অনু ভাবনা

শিশু কিশোর বিষয়ক অণু ভাবনাটা মূলত বাচ্চাদের জীবন ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাভাবিক বিকাশের লক্ষ্যেই লিখতে চাচ্ছি। যার টার্গেটকৃত পাঠক হচ্ছে অভিভাবক তথা বয়স্করাই। তবে বাচ্চাদের পড়া বারণ নেই। বাচ্চারাও এই লেখাটা পড়তে পারে। পড়ার মধ্য দিয়ে যতোটুকু বোধ অর্জন করে ততোটুকুই কল্যাণকর। পিতা মাতা বা অভিভাবক আমার এই একান্ত অনুভূতি জাত লেখাটি পড়ে ভালো লাগলে বা যৌক্তিক মনে করলে সে অনুযায়ী পারিবারিক জীবন গঠনে আগ্রহী ও আন্তরিক হবেন বলে আমি আশাকরি।

আজকের আলোচনার শুরুতেই শিশুদের সম্পর্কে আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু কথা, নীতিবাক্য, ছড়া কবিতার উল্লেখ করতে চাই যাতে শিশুদের সম্পর্কে আবহমান কাল ধরে আমাদের সমাজে প্রচলিত ইতিবাচক কিছু আইডিয়া তুলে ধরা হয়েছে। যেমন:

ক। শিশুরাই জান্নাতী ফুল,আল্লাহ তায়ালার রহমের অপার কণা।

খ। আজকের শিশুই আগামী দিনের কর্ণধার।

গ। আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যৎ।

ঘ। বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।

ঙ। ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।

এজাতীয় আরো অনেক কথা আমরা বলি, আমরা শুনি।

 

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “সবুজের অভিযান” শিশু কিশোর কবিতাটাও আমাদের মনকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়:

ওরে সবুজ ওরে অবুঝ

ওরে আমার কাঁচা

আধ মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।

রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে

আজকে যে যা বলে বলুক তোরে

পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা।

আয় জীবন্ত আয়রে আমার কাঁচা।।

 

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাজ ও সংস্কৃতির পরিবর্তনে শিশু কিশোরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু শিশুকিশোরদের সংকট সমস্যার কথা তিনি সেভাবে ভাবতে পারেন নি। যেমনটি পরবর্তীতে এসে ভেবেছিলেন কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। এই ভাবারও যৌক্তিক কারণ ছিলো। তিনি তার ছাড়পত্র কবিতায় বলেছেন:

 

এসেছে নতুন শিশু

তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান,

জীর্ন পৃথিবীতে ব্যর্থ মৃত আর ধ্বংসস্তূপ পিঠে

চলে যেতে হবে আমাদের।

চলে যাবো তবু আজ যতোক্ষণ দেহে আছে প্রাণ

প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল

এপৃথিবীকে এশিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি

তারপর হবো ইতিহাস

নবজাতকেরর কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।…

কিংবা – আরেক কবির কথা এখানে বলতে পারি:

সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি

সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।

আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে

আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে।

কাজী নজরুল ইসলামের “ভোর হল” কিশোর কবিতার অংশ বিশেষও এখানে উল্লেখ করা যায়।কবি আহ্বান করেছেন:

ভোর হল দোর খোল খুকুমণি ওঠরে

ঐ ডাকে জুঁই শাখে ফুলখুকী ছোটরে।

….. …… ….. ……. ….

আলসে নয় সে ওঠে রোজ সকালে

রোজ তাই চাঁদা ভাই টিপ দেয় কপালে।

(সংক্ষেপিত)

শিশুদের নিয়ে আমাদের অনেক চাওয়া,অনেক স্বপ্ন। কিন্তু শিশুদের স্বপ্ন পুরনে আমরা মোটেও আন্তরিক নই। শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশে নেই আমাদের যথাযথ কোন পরিকল্পনা। আজ আমি শিশুদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে আমাদের করণীয় সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করতে আগ্রহী।

প্রথমত পরিস্কার করতে চাই- শিশু বলতে আমরা কাদেরকে বুঝি? প্রচলিত ধারণা মতে জন্মের পর থেকে বিদ্যালয়ে গমনের পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ এক থেকে পাঁচ বা ছয় বছর বয়স পর্যন্ত সময় কালকে শিশু(শৈশবকাল) এবং শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পড়ালেখার (১ম শ্রেণি থেকে এস.এস.সি) সময়কালকে কিশোরকাল(কৈশোর) হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। বাংলাদেশের সংববিধানে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এই সময়ে কেউ কোন অপরাধ করলেও তাকে শিশুকিশোর আইনের অধীনে বিচার আচার করা হয়ে থাকে। যা অনেকটাই অবাস্তব, অযৌক্তিক।

সাম্প্রতিকালে পুলিশ তনয়া ঐশি রহমানের কথা উল্লেখ করা যায়- বখে যাওয়া মাদকাসক্ত এই মেয়ে অতি পরিকল্পিতভাবে তার পিতা মাতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হন্তারক মেয়েরও বিচার হয়েছে শিশু আইনে। আইন প্রণেতাদের এই জায়গাটাতে ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি।

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার আঠারো বছর বয়স কবিতায় বলেছেন:

আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ

স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি

আঠারো বছর বয়সেই অহরহ

বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।

…. …… …… …… ……

অাঠারো বছর বয়সের নেই ভয়

পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাঁধা,

এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়

আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।

(সংক্ষেপিত)

শিশুকিশোরদের জীবন গঠনে, তাদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাভাবিক বিকাশে আমাদের বেশ কিছু করণীয় আছে, বেশ কিছু বিষয়ের দিকে আমাদের সজাগ ও সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলোকে (আমার একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি) এখানে তুলে ধরলাম:

 

গর্ভে থাকাকালীন শিশু ও মায়ের পরিচর্যা

সাধারণত মা গর্ভধারণের পর থেকে দীর্ঘ দশমাস শিশুসন্তান মায়ের গর্ভে অবস্থান করে। একটা শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশের জন্যে এই সময়টাতে আমাদের অনেক করণীয় রয়েছে। বিশেষ করে গর্ভকালীন মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য ক্লিনিক বা ডাক্তারের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে।

গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টি মায়ের পুষ্টির ওপরেই নির্ভর করে, তার সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকা নির্ভর করে মায়ের সুস্থ থাকার ওপরই। তাই মাকে পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তা বিধানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা এবং মাকে মানসিক চাপমুক্ত রেখে হাসিখুশীভরা অানন্দময় জীবন যাপনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মা যে সন্তান ধারণ করবেন সে ক্ষেত্রে তার বয়সের একটি ভারসাম্য থাকতে থাকতে হবে। মা হবার ক্ষেত্র কম বয়স ও বেশি বয়স দুটোই সমস্যা। সেক্ষেত্রে বাচ্চা ও মা উভয়ই স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

 

প্রসবকালীন সতর্কতা

প্রসবকালীন সময়ে প্রসূতী মায়ের জীবন বেশ ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এখন আধুনিক মায়েরা প্রসববেদনা ও ঝুঁকিকে Avoided করার জন্যে সিজার পদ্ধতির দিকে ঝুকে পড়ছেন। এতে বেশ কিছু সমস্যা প্রকট হচ্ছে। যেমন:

ক। সন্তানের সাথে মায়ের বন্ধন নিবিড় হচ্ছে না।

খ। সিজারিয়ান শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে একটু পেছন পড়ে থাকছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

গ। সিজারের সময় একটু অসচেতনতা বা গাফলতি মারাত্মক পরিণতির দিকে মা ও শিশুকে ঠেলে দিচ্ছে।

ঘ। অনেক কসাই ডাক্তার সিজারকে নিয়েছে টাকা ইনকামের সহজ রাস্তা হিসেবে। প্রয়োজন ও অপ্রয়োজন পার্থক্য ভুলে তারা সিজারের পরামর্শ দিচ্ছেন- রোগী ও রোগীর সজনের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে যেনতেন ভাবে সিজার সম্পন্ন করছেন। এতে মা ও নবজাতক শিশু উভয়ের জীবন ও স্বাস্থ্য বিপন্নের মুখে পড়ে অনেকাংশে।

 

যারা গ্রামে বসবাস করছেন বা সাধারণ জীবন যাপন করছেন-তারা গ্রামের অশিক্ষিত বা প্রশিক্ষণহীন ধাত্রীর মাধ্যমে ডেলিভারির কাজ সম্পন্ন করে থাকেন প্রায়শই। তারা গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা ক্লিনিকেও যেতে চান না। এমনকি সনাতন ধারণা অনুযায়ী সহজ ডেলিভারির জন্য গর্ভবতী মাকে দিয়ে ঢেকিতে ধান ভানানোর কাজটাও সম্পন্ন করেন। পুষ্টির দিকে মোটেও খেয়াল রাখেন না। প্রসবের প্রকৃত সময়কাল সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। সম্পূর্ণ অনুমান বা হাত গণনার মাধ্যমেই ডেলিভারির দিনক্ষণ নির্ধারণ করে থাকেন।

মায়ের প্রসব বেদনা শুরু হলেই হইচই হাঁকডাক পড়ে যায়। তড়িঘড়ি করে ধাত্রী ডেকে প্রাচীন পদ্ধতিতেই ডেলিভারির কাজ করানো হয়। এর দ্বারা মা ও শিশু দুজনই ঝুঁকির মধ্যে থাকে। অনেক বাচ্চা মাথায় চাপ খায়, এর দ্বারা সে প্রতিবন্দ্বী বা বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। সিজারের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে বরং স্বাস্থ্য ক্লিনিকে যোগাযোগ রেখে নিয়মিত গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যা করালে নিরাপদ প্রসব সম্ভব। মনে রাখতে হবে- সুস্থ শিশুর জন্যে তার স্বাভাবিক জন্মগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন–শিশুর খাবারে অরুচি :: কেন শিশু খেতে চায় না? জেনে নিন করনীয় কী?

 সুন্দর নামকরণ

সন্তানের সুন্দর নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেকে সন্তানের নামকরণে শুধু খেয়াল খুশির পরিচয় দিয়ে থাকেন। কিছু নাম দেখি- পল্টু, বল্টু, কমলা,আপেল,আঙ্গর ও বেদানামার্কা। আবার কিছু আধুনিক মানসিকতা সম্পন্নদের ধর্ম নিরেপক্ষ নাম রাখার প্রবণতা দেখি। যেমন- অর্ণব,নদী,পবন,অরণ্য, সমুদ্র,সাগর, আকাশ,নীল,তরু,বৃষ্টি, সৃষ্টি,দৃষ্টি,হৃদয়, মোহনা,হীমেল,তুষার প্রভৃতি।

এজাতীয় নাম করণে শিশুকিশোরদের মনে ইতিবাচক কোন প্রভাব পড়ে না। ধর্ম,বর্ণ ও গোত্রের পরিচয়হীন নাম- শিশুকে কখনো কখনো অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়তেও সহযোগিতা করে থাকে।

শিশুর নাম রাখার ক্ষেত্রে অর্থবোধক সুন্দর নামকরণ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কোন মহামানব,বিশেষ শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক,গবেষক,দানবীর, বীরপুরুষ,আবিষ্কারক, সংস্কারক,সমাজ সেবক মানুষের নামের সাথে মিলিয়ে (বিশেষ অর্থবোধক) নাম রাখলে শৈশব ও কৈশোর বেলা না হোক পরবর্তীকালেও এর একটা ইতিবাচক ফল আমরা লক্ষ্য করতে পারবো।

 

পোষাক পরিচ্ছদে স্বাতন্ত্র্যবোধ

শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ এবং মানসিক উৎকর্ষের জন্যে শিশুকাল থেকেই তাদের পোষাক পরিচ্ছদে স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিতে হবে। মার্জিত রুচিসম্মত পোষাক নির্বাচনে অভিভাবকদেরই ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে শিশুর মন অহংকার ও দম্ভ মুক্ত থাকতে পারে। বিকৃতরুচির পোষাক (নায়ক নায়িকা কেমন পোষাক পরলো তা-দেখেই এখন অনেকেই পোষাক কিনে থাকে) পরিধান করানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

শিশুদের খেলনা দেবার বিষয়ে সচেতনতা

শিশুকিশোররা খেলনা বা খেলাধুলা সামগ্রীর ক্ষেত্রে সব সময় উদগ্রীব থাকে। বাজারেও অাছে অনেক জাতের খেলনা সামগ্রী বা উপকরণ। বাচ্চাদের খেলনা কেনার সময়েও অভিভাবককে সচেতন থাকতে হবে।

পিস্তল,বন্দুক বা মারামারি করার উপকরণ জাতীয় খেলনা কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ জাতীয় খেলনায় খেলতে খেলতে বাচ্চারা মাস্তান চরিত্রের সাথে নিজেদের মিলিয়ে ভাবতে পছন্দ করে। ছোটকাল থেকে এই মাস্তানী ও সন্ত্রাসীর ট্রেনিং এর কোন প্রয়োজন নেই।

 

বাচ্চাদের মিথ্যে আশ্বাস,প্রলোভন ও ভয় দেখানো

আমরা অনেক সময় বাচ্চাদের কান্নাকাটি থামাতে তাদেরকে বিভিন্ন মিথ্য ভয় দেখাই। যেমন বলি- পুলিশ আসছে, বাঘ আসছে, শিয়াল আসছে। কখনও ভূতের ভয়ও দেখাই। আবার কখনো মিথ্যে প্রলোভন দেখাই, লোভ দেখাই, বিভিন্ন কিছু দেবার আশ্বাস দিই। খেলনা কেনার কথা, আইসক্রিম-চুইঙ্গাম দেবার আশ্বাস দিই। বাচ্চার কান্না থেমে গেলে আমরা কিন্তু আশ্বাস অনুযায়ী তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসগুলো কিনে দেই না। এজাতীয় আচরণ শিশু কিশোরদের মনে দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব ফেলে। তারা মিথ্যে কথা বলতে শেখে, প্রতারণা করতে শেখে।

 

বাচ্চাদের সাথে সুন্দর ও কোমল কন্ঠে কথা বলা

বাচ্চারা ছোটবেলায় ভুলত্রুটি করবে এটাই স্বাভাবিক, বড়রাও যেখানে পদে পদে ভুল করি। তাদের ভুলত্রুটির জন্যে ধমক না দিয়ে, কঠোর শাসন না করে- তাদের সাথে সুন্দর করে, কোমল স্বরে কথা বলতে হবে। পিতা মাতা তাদের কাছে আতঙ্কের নাম হলে-তারা কখনই স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে না। পিতামাতার কর্কশ রূঢ় আচরণ তাদেরকেও কর্কশ ও রূঢ় হতে উদ্বুদ্ধ করে। প্রকারন্তরে তারা পিতামাতার সাথেও খারাব আচরণ করতে থাকে। তাদের সাথে স্বাভাবিক সময়েও স্নেহমাখা কণ্ঠে হাসিমুখে কথা বলতে হবে।

আরও পড়ুন–ইসলামে নারীর মর্যাদা ও কুরআনের একটি আয়াতের অপব্যখ্যার জবাব । ফাতেমা জাহান লুবনা

বাচ্চাদের সামনে অভিভাবকের আচরণ

আমাদের অনেক অভিভাবক বা পিতামাতার আচরণ সন্তানের সামনে বা আড়ালে কাঙ্ক্ষিত নয়। পারিবারিক বা দাম্পত্য জীবনের বোঝাপড়ার তারতম্য অনেক সময় স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়াঝাটির রূপ নেয়। যতদূর সম্ভব বাচ্চাদের সামনে এজাতীয় ঝগড়াঝাটি বা কথা কাটাকাটি থেকে বিরত থাকতে হবে। পরস্পরের প্রতি সম্মান বা মর্যাদা বজায় রেখে কথাবার্তা বলতে হবে। নতুবা বাচ্চারা এই বিরূপ আবহে বিগড়ে যাবে, ঝগড়া শিখবে, পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা হারাবে। পরবর্তীতে তারা মানসিক বিকার গ্রস্হ হিসেবে বেড়ে উঠবে,খারাপ সঙ্গে মিশবে। পিতা মাতার অবাধ্য হয়ে পড়বে। সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে হলে অনেক ক্ষেত্রে নিজের মতকে বিসর্জন দিতে হবে, অন্যের মতকে গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আদর্শ পরিবারই পারে অাদর্শ সন্তান উপহার দিতে।

 

পিতা মাতা শিক্ষিত হওয়া আবশ্যক

বৈজ্ঞানিক নেপোলিয়ানের কথাটা খুব মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন: “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো।” অভিভাবক হিসেবে পিতা মাতা দুজনকেই শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সন্তানের জীবন গঠনে ও মানসিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা থাকে সবচেয়ে বেশি। তাই মা শিক্ষিত হবার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মা হচ্ছে

সন্তানের প্রথম শিক্ষক। মায়ের আচরণ,আদর্শ

সন্তানের ওপর রেখাপাত করে সবচে বেশি। এজন্যে আমরা আমাদের সন্তানের ভালোর জন্যে হলেও তার মাকে শিক্ষিত করে তুলতে যেন সচেষ্ট থাকি।

 

শুদ্ধ ও সুন্দরভাবে কথা ও লেখা শেখানো

প্রত্যেক জাতির ভাষা তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে,লালন করে। বাংলাভাষা আমাদের মাতৃভাষা। এভাষার মাধ্যমে আমরা বিশ্বসভায় পরিচিত। কবি ফররুখ বলেছেন:

“মাতৃভাষা বাংলাভাষা খোদার সেরা দান।” শুদ্ধ ও সুন্দরভাবে প্রতিটি শিশুকিশোরকে এই ভাষা শেখাতে হবে। তার যখন বোল ফোটা শুরু করে, তখন থেকে অত্যন্ত সচেতনভাবে অভিভাবকবৃন্দ তাদের বাচ্চাদেরকে শুদ্ধ বলে কথা শেখাবেন। যতদূর সম্ভব আঞ্চলিক রূপ পরিহার করে শিষ্ট চলিত রূপে শিশুকিশোরদের অভ্যস্থ করে তুলতে হবে। পরিবারে, স্কুলে, খেলার মাঠে সুন্দর ও শুদ্ধ ভাষারীতির প্রয়োগে বাচ্চারা সফলকাম হচ্ছে কি না – সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। বস্তুত বর্ণমালার শুদ্ধ জ্ঞানটা খুবই অপরিহার্য। বলতে দ্বিধা নেই: আমরা অধিকাংশই বিশ্বিবদ্যালয়ের সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রিধারীরাও শুদ্ধ করে ৫০টি বর্ণ বলতে ও লিখতে পারি না। ভুল পাঠে সয়লাব আমাদের প্রাথমিক স্তর। স্কুল,মাদ্রাসা,মক্তব,পাঠশালার স্যার ম্যাডাম, প্রাইভেট টিউটর কেউই (ব্যতিক্রম ছাড়া) শুদ্ধরীতিতে বর্ণমালার শুদ্ধ পাঠ প্রদান করেন না। কারণ তাদের নিজেদেরই শুদ্ধরূপটা জানা নেই। উচ্চারণগত সমস্যার পাশাপাশি শুদ্ধরূপে লেখার নজির আরও বিরল। তিন ধরণের বর্ণ রয়েছে বাংলা বর্ণমালায় (স্বরবর্ণ -১১টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণ-৩৯টি= মোট ৫০টি।) :

ক। মাত্রাহীন বর্ণ: ১০ (এ,ঐ,ও,ঔ,ঙ,ঞ,ৎ,ং,ঃ,ঁ)

খ। অর্ধমাত্রার বর্ণ: ০৮ (ঋ,খ,গ,ণ,থ,ধ,প,শ)

গ। পূর্ণ মাত্রার বর্ণ:৩২ ( অবশিষ্ট বর্ণগুলো)।

বাচ্চাদের বই বা একটা আদর্শ লিপি নিয়ে মিলিয়ে দেখুন তো- আপনি এযাবৎকাল কিভাবে কোন্ বর্ণটি লিখছেন, আর প্রকৃতপক্ষে বর্ণটা কেমন! বাচ্চাদেরকে হাতেখড়ি দেবার প্রারম্ভিক কাল থেকেই শুদ্ধভাবে বর্ণমালা লেখাও শেখাতে হবে।

এছাড়া প্রত্যেকের হাতের লেখা যেন সুন্দর হয় সেজন্যেতো পরিকল্পিত ভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। যাদের হাতের লেখা ভালো, তাদের কাছে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। ধারে কাছে ভালো হাতের লেখার অধিকারী কাউকে না পেলে কম্পিউটার থেকে অন্তত বর্ণমালাটা বড় করে প্রিন্ট দিয়ে সেটা অনুসরণ করে লেখাতে হবে বাচ্চাদের। ভালো রেজাল্টের জন্যে ভালো হাতের লেখা অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখে। অপরদিকে সুন্দর বাচনভঙ্গি, শুদ্ধরূপে কথা বলার যোগ্যতা মানুষের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে।

 

সময় মতো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো

শিশুদের অক্ষরজ্ঞান মায়ের হাতেই মূলত শুরু হলেও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ ছয় বছর থেকে প্রাথমিক শিক্ষার সূচনাকাল বলে মনে করেন। বর্তমান সময়ে প্রাক প্রাইমারি (Pree. Education) শিক্ষার বেশ তোড়জোড় আমাদের চোখে পড়ে। বিশেষকরে কিন্ডারগার্টেন গুলোতে তিন বছর বয়স থেকেই প্রি প্রাইমারি সেকশন বা প্লে নার্সারিতে বাচ্চাদের কে ভর্তি করানো হচ্ছে। বাচ্চা স্কুলগামী হবার আগেই আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে- বাচ্চাকে আপনি কোন লাইনে পড়াশোনা করাবেন(জেনারেল নাকি ধর্মীয়)! সে মোতাবেক আপনার একটা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হবে। প্রতিষ্ঠান বাছাই করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো আপনার বিবেচনায় নিতে হবে:

ক। প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের পরিবেশ,শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ কেমন?

খ। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্যার ম্যাডামদের একাডেমিক ক্যারিয়ার ও পাঠদানের মান কেমন?

গ। কর্মরত স্যার ম্যাডামদের নৈতিক মান কতটুকু?

ঘ। কমর্রত স্যার ম্যাডামদের Personality কেমন, তাদের ভাষাজ্ঞান ও অনুশীলন Capacity কেমন?

ঙ। প্রতিষ্ঠানের প্রিভিয়াস একাডেমিক রেজাল্ট কেমন?

চ। প্রতিষ্ঠানে সহপাঠ ও খেলাধুলার পরিবেশ আছে কি না?

ছ। প্রতিষ্ঠানের সেনিনেশন ব্যবস্থা কেমন?

জ। প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের পৃথক টয়লেট আছে কি না?

ঞ। প্রতিষ্ঠানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা আছে কি না?

ট। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কমিটির সভাপতির গ্রহণযোগ্যতা কেমন?

ঠ। প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব ও লাইব্রেরি আছে কি না?

ড। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত কি না?

ঢ। প্রতিষ্ঠানের Location সহজ কি না?

ণ। প্রতিষ্ঠানটি এককথায় শিশু শিক্ষাবান্ধব কি না?

এভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে বাচ্চাকে সময়মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। বাচ্চা স্কুল/ প্রতিষ্ঠানের প্রতি কতোটা আগ্রহী বা মনোযোগী হয়ে উঠছে তা খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানে যেতে অনাগ্রহী হলে তার কারণ নির্ণয় করে কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে হবে। স্কুল মাদ্রাসায় পাঠানোর আগে ভালোভাবে নাস্তাটা করিয়ে দিতে হবে। বাসা থেকেই সাধ্যমতো চেষ্টা করতে হবে টিফিনের ব্যবস্থা করতে। বাইরের টিফিন বা খাবার খেতে অনুৎসাহিত করতে হবে। তার জামা কাপড় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শিখছে কি না- তার খেয়াল রাখতে হবে।

 

প্রতিটি শিশুকিশোরকে স্বাস্থ্য সচেতন করা:

আদর্শ নাগরিকের জন্যে আদর্শ শিশু অপরিহার্য। তাই প্রতিটি শিশুকে লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদেরকে স্বাস্থ্য সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। সময় মতো গোসল করা, সময় মতো খাওয়া, সময় মতো ঘুমটা নিশ্চিৎ করতে হবে। ঢেকে রাখা খাবার খেতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। খাবার গ্রহণের পূর্বে যেন সুন্দর করে হাত মুখ ধোয়-সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হলুদ ও সবুজ শাকসব্জি খাওয়া শেখাতে হবে। ছোট মাছ খাওয়া শেখাতে হবে। নখ কেটে পরিস্কার করে রাখতে হবে। অযথা রোদের মাঝে খেলাধুলা করা, বৃষ্টির পানিতে ভেজা, পুকুরে নেমে অনেকক্ষণ সাঁতার দেয়া থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জামা কাপড় পরতে উৎসাহিত করতে হবে। পেট ভরে নিজ হাতে পুষ্টিকর খাবার খেতে অনুপ্রাণিত করতে হবে।

 

আত্মনির্ভরশীল করে তোলা

আপনার সন্তান যেন প্রতিটি কাজে আপনার বা অন্য কারো ওপর নির্ভরশীল না হয়ে পড়ে- সেদিকে আপনার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। নিজের কাজ যেন নিজে করতে পারে- সেই পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেমন:

ক। স্কুল ব্যাগটা নিজে নিজে রুটিন মাফিক গুছানো

খ। স্কুলের টিফিনটা ব্যাগে ঢুকানো

গ।water pot -এ পানি ভরে ব্যাগে নেয়া

ঘ। School dress টা নিজে নিজে পরা ও গুছিয়ে রাখা।

ঙ। নিজের পড়ার টেবিলটা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা।

চ। নিজের জামাকাপড়টা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা।

ছ। বাচ্চার খাবার সব সময় মুখে তুলে না দিয়ে একটু একটু করে নিজের হাতে তাকে খেতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

এরকম আরএ অসংখ্য বিষয় আছে- যার মাধ্যমে আপনার সন্তানকে অার্তনির্ভরশীল হতে সহায়তা করবে।

 

উদার মানসিকতা সম্পন্ন করে গড়ে তোলা

শিশুকিশোরকাল থেকেই বাচ্চাদেরকে উদার ও বড় মনের অধিকারী করে গড়ে তুলতে হবে। তারা যাতে অন্য মানুষের প্রতি সহনশীল হয়, গরীরদুঃখীদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে, জীব জন্তুর প্রতি যেন দরদী হয়- সেদিকে নজর দিতে হবে। তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে যে কাজ গুলো আমরা করতে পারি:

ক। অসহায় মানুষদেরকে সাহায্য করা

খ। গরীব দুঃখীকে টাকা পয়সা দান করা

গ। অন্ধ মানুষকে হাতধরে রাস্তা পার করে দেয়া

ঘ। কোন বৃদ্ধ মানুষের ব্যাগ বা বোঝাটা বহন করা

ঙ। রিক্সা বা গাড়ির চালকের সাথে ভালো ব্যবহার করা

চ। বাড়ির বুয়া,আয়া ও অন্যান্য কাজের মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা। আয়া বুয়া না ডেকে একটা সম্পর্ক (নানি,খালা,চাচী,মামী,আপা) উল্লেখ করে ডাকা।

ছ। সুযোগ পেলে দানের টাকাটা বাচ্চার হাত দিয়েই দেয়ানো।

জ। সবার সাথে ভালোভাবে কথা বলা এবং বাচ্চার সাথে বিভিন্ন মনীষী,দানবীর, মহানাববের অনুকরণযোগ্য গল্পগুলো বলা।

 

বাচ্চার সাথে বন্ধুত্বভাব গড়ে তোলা

আমরা আমাদের বাচ্চাদের সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাব ধরি বা মুড দেখাই। বাচ্চাদের সাথে সহজ সরলভাবে মিশি না। বাচ্চারা মা বাবার সাথে প্রাণখুলে তার মনের কথাগুলো বলতে পারে না। তাদের সুবিধা অসুবিধা শেয়ার করতে পারে না। সব সময় একটা চাপা অাতঙ্কে বা ত্রাসে তারা তটস্থ থাকে। বাচ্চার কল্যাণের জন্যে তাদের সাথে Free & Frank আচরণ করতে হবে। তারা যেন তাদের মনের কথা গুলো অকপটে পিতামাতার কাছে প্রকাশ করতে পারে।

পাশাপাশি আপনার জীবনের ব্যর্থতা ও অসাফল্যের কারণগুলো বয়সভেদে সময় মতো বাচ্চার কাছে তুলে ধরতে হবে, যেন আপনার উপদেশ ও ইতিবাচক কথাগুলো তার কাছে ভাড়ামো মনে না হয়।

 

বাচ্চাকে স্বপ্ন দেখা শেখাতে হবে

‘যে স্বপ্ন ঘুমের মধ্যে দেখা হয় তা স্বপ্ন নয়, বরং যে স্বপ্ন মানুষকে ঘুমোতে দেয় না- সেটাই প্রকৃত স্বপ্ন।” একথা আমরা অনেকেই জানি। বাচ্চাকে বড় হবার স্বপ্ন দেখা শেখাতে হবে। তার সামনে সফল মানুষদের জীবন কাহিনী, বড় হবার গল্প শোনাতে হবে।

 

বাচ্চাদেরকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে

আপনার বাচ্চাকে পরিকল্পিতভাবে বেশিবেশি সময় দিতে হবে।তাদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের পূর্ব শর্ত এটি। আপনার চাকরী ব্যবসা বা অন্য যে কাজই থাকুক না কেন- অবসর খুঁজে নিয়ে বাচ্চাদেরকে সময় দিতে হবে। আপনি সময় পেলে চা স্টলে বসে গল্প করবেন, মোবাইল বা ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, বাচ্চা কোলে কাঁধে উঠতে চাইলে বিরক্ত প্রকাশ করবেন- তা মোটেও ইতিবাচক নয়। বাচ্চাকে নিয়ে খেলবেন, ঘুরতে যাবেন, গল্প করবেন, সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার দাবার, খেলনা কিনে দেবেন। দেখবেন- আপনার সন্তান আপনারই থাকবে, বিগড়ে যাবে না।

এছাড়া সন্তানকে ইতিবাচক পরিবেশ দান করা,নৈতিক চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখা, নৈতিক তথা ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করা, সাথে করে ব্যক্তিগত ইবাদত যেমন নামাজ রোজা পালনে আন্তরিক থাকা,খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করা, গান কবিতা অভিনয় তথা সহপাঠ কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করা আপনার আমার সবারই দায়িত্ব। সত্যকথার উপকার ও মিথ্যাকথার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করা, রাগদ্বেষ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া,জন্মদিন পালনে অনুৎসাহিত করা,দুষ্ট বা খারাব বন্ধু বান্ধবের সঙ্গ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।

সবশেষে শিশু কিশোরদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কিত নিচে বর্ণিত আমার স্বরচিত “আমরা যে সব কাজ করি” শীর্ষক কিশোর কবিতাটি পারলে আপনার সন্তানকে মুখস্থ করানো এবং সে অনুযায়ী তারা চলছে কিনা- সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে পারেন।

 

আলসে মোরা নইতো কেহ উঠি সকাল বেলা,

ভালো করে মুখ ধুয়ে নিই কেউ করি না হেলা।

খেলার সময় খেলি এবং পড়ার সময় পড়ি,

নিয়ম নীতি পালন করে জীবনটাকে গড়ি।

বাবা মায়ের কথা মেনে আমরা সবাই চলি,

সালাম দিয়ে হাসি মুখে মিষ্টি কথাই বলি।

নখ কেটে নিই সময় মতো খাই ফুটিয়ে পানি,

ময়লা কাপড় পরলে কেহ কয় না ভালো জানি।

ঢেকে রাখা খাবার ছাড়া আমরা কিছু খাই না,

ভালো ছেড়ে মন্দ পথে আমরা কভু যাই না।

কলার খসা ময়লা যদি দেখি পথের মাঝে,

নিজের হাতে দিই সরিয়ে কেউ মরি না লাজে।

গোমড়া মুখে কেউ থাকি না বেড়াই হেসে খেলে,

অনেক বড় হবো মোরা জ্ঞানের আলো পেলে।

***** *****

সবাই সন্তানের প্রতি যত্নবান হবেন, তাদের মানস গঠনে আন্তরিক হবেন। তাদের জীবনবোধ তৈরিতে সচেতন থাকবেন সেই প্রত্যাশায় আজকের লেখার ইতি টানছি।

(নোট: এই ছড়া কবিতার ভেতরে ‘মোরা’ শব্দটা সচেতন ভাবেই দুবার ব্যবহার করেছি। মোরা শব্দের প্রয়োগ কেউ কেউ সেকেলে ভাবতে পারেন। কিন্তু যখন এর বিকল্প ব্যবহারে কান ও মন সায় দিতে চায় না,হাহাকার করে ওঠে-তখন এই সেকেলে পুরোনো শব্দই অনিবার্য বা অপরিহার্য শব্দে পরিণত হয়।) শিশুকিশোর, শিশুকিশোর, শিশুকিশোর, শিশুকিশোর, শিশু কিশোর,শিশুকিশোর, শিশু কিশোর,শিশু কিশোর,শিশু কিশোর,শিশু কিশোর,শিশু কিশোর,শিশু কিশোর,শিশু কিশোর,শিশু কিশোর, শিশু কিশোর,শিশু কিশোর

খুলনা

৪অক্টোবর-২০১৭

 

Leave a Reply