মল্লিকীয় গানের স্বতন্ত্র ধারা: বিপন্ন সম্ভাবনা
সুস্থ সংস্কৃতি বা সংস্কৃতির সুস্থ ধারা কথাটি আমরা খুব বেশিদিন আগে রপ্ত করতে পারি নি। সংস্কৃতি যে জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ, সেটাও অনেকের কাছে এখনও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। যে কোন আদর্শের বিপ্লবের জন্যে সেই অাদর্শ সঞ্জাত সাংস্কৃতিক বিপ্লব সর্বাগ্রে অপরিহার্য।
সাংস্কৃতিক বিপ্লব ছাড়া কোন বিপ্লবই টেকসই হয় না মোটেও। আমরা যদি সুস্থ সামাজিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি- তবে আমাদের সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে, ক্ষেত্র নির্মাণ করতে হবে, সাংস্কৃতিক কর্মীদের আত্মবিশ্বাসকে বাড়ানোর জন্যে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে।
এজাতীয় কথা সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবক্ষেত্রে দৃশ্যমান করতে হবে।
সাংস্কৃতিক কর্মীদেরও কিছু কাজ আছে, দায়িত্ব আছে। সে কাজ ও দায়িত্বকে পেছনে ফেলে যখন শুধু শিল্পী গায়ক অভিনেতা হিসেবে সাফল্য পাওয়ার বিষয়টি প্রধান হয়ে ওঠে তখন আর সুস্থ সাংস্কৃতিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা যায় না। মতিউর রহমান মল্লিক
সুস্থ সংস্কৃতির কথায় আবারও ফিরে আসি। যে সংস্কৃতি মেধা মননকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে না দেয়, তারুণ্যকে যৌনতা আর উশৃঙ্খলতার দিকে ধাবিত না করে, মানুষের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক শুদ্ধ পবিত্র ভালোবাসার বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে ভূমিকা রাখে, যে কোন ধরনের অন্যায় অবিচার থেকে বিরত থাকতে প্রেরণা যোগায়, সামাজিক নিপীড়ন ও অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হবার শিক্ষা দেয়, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে অনুঘটকের কাজ করে, পৃথিবীর যাবতীয় ধর্ম বর্ণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে স্বধর্ম প্রতিপালনে উৎসাহিত করে ; সংক্ষেপে সেই সংস্কৃতিই সুস্থ সংস্কৃতি। সাংস্কৃতিক জ্ঞানবোধে অামরা অনেকটাই খণ্ডিত চিন্তা বা বিশ্বাসে “আবতির্ত তৃণলতা”
আরো পড়ুন– গল্প — বিবর্তন —
আমরা অনেকেই মনে করি গান কবিতাই বোধহয় শুধু সংস্কৃতি। আসলে তা নয়- মূলত কর্ষিত পূর্ণাঙ্গ জীবনবোধই সংস্কৃতি। সুস্থ জীবনবোধই সুস্থ সংস্কৃতির নিয়ামক শক্তি। জীবনের নিকষিত বিশ্বাসই সুস্থ সংস্কৃতির মৌল উপাদান।
সুস্থ সংস্কৃৃৃতির কথা বার বার এজন্যেই এখন সামনে আসছে তার কারণ আমাদের জীবন বোধের চরম অবক্ষয়, নৈতিক বিপর্যয় আজ প্রান্ত সীমায় দাঁড়িয়ে গেছে। টোটাল বিপর্যয় ও অধঃপতন রোধে পবিত্রতম আখিরাতমুখী বিশ্বাসজাত সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসার অপরিহার্য।
সংস্কৃতির অনেক ডালপালা শাখা প্রশাখা রয়েছে। একজন মানুষের জীবনে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যা যা প্রয়োজন পড়ে- তা সবই তার সংস্কৃতি। কেবল কর্ষিত বোধ বিশ্বাস ও তার আলোকে আচরিত কার্যক্রমই সুস্থ সংস্কৃতির উপাদান উপকরণ।
ইতিহাসের পাতায় ছোট করে চোখ রাখলে আমরা দেখতে পাবো : সুস্থ সংস্কৃতি সম্পর্কে একান্ত নিবিড়ভাবে দৃপ্ততার সাথে উচ্চকিত হয়েছিলেন মরহুম অগ্রজ কবি মতিউর রহমান মল্লিক। কবি হিসেবে তার যতোটা খ্যাতি, তার চাইতে তার গানের অবদান অনেক বেশি। তিনি গানটাকে বেছে নিয়েছিলেন মূলত অসুস্থ সংস্কৃতির বাতায়নে সুস্থ সংস্কৃতির আবির পেলব ছড়াতে। পথটা তার জন্যে মোটেও মসৃণ ছিলো না।বিশ্বাসে দার্শনিকতায় কর্মের প্রতিফলনে তার গান ছিলো হাতিয়ার। তার কথা মনে পড়ে দার্শনিক মনোভঙ্গিতে:
না হয় হলো মন শুকনো কোন মরুভূমি
আশাহত হয়ো নাকো তুমি,
আরো কিছু পথ চলো মরীচিকা মাড়িয়ে
দেখবে সাগর আছে দুটি বাহু বাড়িয়ে…
:;:;; মতিউর রহমান মল্লিক
দৃষ্টি তোমার খুলে রাখো
দৃপ্তসৃষ্টির জন্য
দেখবে খোদার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ
কতো না অনন্য।
মল্লিক ভাই ছিলেন নির্মোহ গানের পাখি। তার স্বার্থ ছিলো একটাই:
গান শোনাতে পারি
যদি তুমি কথা দিতে পারো….
এই মানুষটি আমাদের কাছে বৈষয়িক কোন কিছুর প্রত্যাশী ছিলেন না। গান লিখে, গান গেয়ে অর্থবিত্ত উপার্জনের ধ্যানে জ্ঞানে বিভোর ছিলেন না। তার নিবেদিত প্রাণ মানসিকতা আর ত্যাগের ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি সংস্কৃতির নতুন ধারা। যার নাম দিয়েছি সুস্থ্ সংস্কৃতি -“মল্লিকীয় ধারা”। তিনি যে সংস্কৃতির বুনিয়াদ নির্মাণ করেছিলেন তার একটি শক্তিমত্ততা যেমন আমার বুকে অাশার সঞ্চার করেছে, তেমনই কিছু হতাশা শঙ্কা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে ফিরছে।(চলবে)…
“””‘””””‘”””””””””‘”””””””””””””””””””””””””””””
আরো পড়ুন— দ্বিতীয় পর্ব
ঢাকার পথে ( কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে)
০৩ আগস্ট-২০১৭