You are currently viewing গ্রামের প্রতি অগাধ ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি “ছোট্ট নদীর বাঁক”-উম্মে হাবিবা
ছোট্ট নদীর বাঁক

গ্রামের প্রতি অগাধ ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি “ছোট্ট নদীর বাঁক”-উম্মে হাবিবা

বুক রিভিউ

বই- ছোট্ট নদীর বাঁক
লেখক- আজিজ হাকিম
পৃষ্ঠা- ৪৮
প্রকাশনী- দেশজ প্রকাশন
নির্ধারিত মূল্য: ২০০৳

★গ্রাম, গ্রামের মাটি, মাঠ-ঘাট, আলো-বাতাসের প্রতি মানুষের আজন্ম প্রেম। সে প্রেমে ঘুরে-ফিরে বারবার গ্রামের পানেই মন ছুটে যায়। এমন এক নিখাঁদ প্রেমের প্রতিচ্ছবি ‘ছোট্ট নদীর বাঁক’। বইয়ের আকর্ষণীয় মলাট আর লেখক ও প্রকাশকের কথা পড়ে এমন কিছুই ধারণা করছি। সামনে এগুনো যাক।

★চলে এলাম ‘বন পাহাড়ের দেশে’ শিরোনামের কবিতায়। যে দেশের চতুর্দিকে বন,পাহাড় আর নদীর ছড়াছড়ি, সে দেশের অলিগলিতে কবি মন সবুজ ডানা ছড়িয়ে উড়ে বেড়ায় স্বর্গলোকের বেহেশতি জাল বুনে। কী বিমুগ্ধতার রেশ! পড়তে পড়তে নিজেই হারিয়ে গেলাম বাংলাদেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।

এমন সুন্দর বাংলাদেশের কোনো কোনো গাঁয় বেড়ে ওঠে ফুলের হাসির মতো স্নিগ্ধ ,ভোরের আলোর মতো দীপ্ত, পূবাল হাওয়ার মতো চঞ্চল, নদীর মতো খরস্রোতা কিছু দামাল ছেলে। কোনো এক অজানা কারণে সে দামাল ছেলে হঠাৎ হারিয়ে যায়। ফলে থমকে থাকে হাসি আনন্দ আর সকল দস্যিপনা। এনিয়ে রচিত ‘দামাল ছেলের বিয়োগ ব্যথা’। এ ব্যথা যেন শুধু একটা গাঁয়ের না,সারা বাংলাদেশের।

‘উত্তর গাঁ’ পড়তে গিয়ে খুব সুন্দর সামাজিক সম্পর্কের দেখা মিললো যা এখানে দিন দিন লোপ পাচ্ছে। এরকম কিছু উত্তর গাঁ থাকলে এ দেশ আরো সুন্দর হতো।

“বুকের মাঝে মিটিমিটি নিয়ন বাতির রাখবে আলো” এমন আর্তি করে শেষ হলো ‘ও গাঁ তুমি ভালো থেকো’। গ্রাম তো দেশের প্রাণ। আসলে এ গ্রাম ভালো না থাকলে আমরা শহুরে ক্লান্তির শেষে নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গাটুকুই পাবো না।

বিরহ,এতদিন কোথায় ছিলে, গাঁয়ের মানুষ, শীতল ছায়া, ফেরার চিঠি এমন কিছু ছড়া কবিতার পর কথা হচ্ছে ‘বনের পাখি’র সাথে।দেশ সমাজের কিছু উল্টো নীতি দেখে আহত কবিমন বনের পাখিকে বন্ধু বানিয়ে তার সাথে নিরুদ্দেশ হওয়ার জল্পনা করছেন। যা যদিও সম্ভব নয়,তবু এ অভিমান থেকে সমাজের যে খুঁত উঠে এসেছে তা সংস্কারের জন্য আমাদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে।

গ্রাম ছেড়ে দূরে থাকা,গ্রামে গিয়ে শৈশবে চষে বেড়ানো এলাকায় বিচরণ করতে না পারা- এমন বেশকিছু মনোকষ্টের সমন্বয়ে লেখা ‘ছোট্ট নদী’ যার সমাপ্তিতে এসে কবি লেখেন “তুমি আমায় ঘৃণাই করো একলা ভালোবাসি, তাইতো আমি বারেবারে তোমার নীড়ে আসি”।

এমন নানান অনুভূতি, আকুতি, বিরহ- বিষন্নতার ব্যঞ্জনায় গাঁথা ‘ছোট্ট নদীর বাঁক’। বেশিরভাগ লেখাই অন্তর ছুঁয়েছে। কিছু কবিতা গীতিকবিতায় রূপ দেয়া যেতে পারে।

সংস্কারের উদ্দেশ্যে সমালোচনা- বুক রিভিউ
পুরো বইতে একেবারে গুটিকয়েক শব্দে ত্রুটি দেখেছি যা ঘষামাজা করলে আরো ভালো লাগবে। ‘গাঁয়ের মানুষ’ কবিতায় “গাঁয়ের নদী আনে যদি ঘোলা জলের পানি” এ চরণে স্পষ্ট ত্রুটি রয়েছে। এ ছাড়া ছোটখাটো কিছু বানান ত্রুটি দেখা গিয়েছে।

গ্রাম দেশের প্রাণকেন্দ্র৷ গ্রামকে ভুলে যাওয়া মানে শেকড় কেটে ফেলা। গ্রামের প্রতি অগাধ ভালোবাসা গ্রামকে জিইয়ে রাখুক শান্তির আশ্রয়স্থল হিসেবে।

উম্মে হাবিবা রাহনুমা
০৭/০৪/২০২৩ ইং

[gs-fb-comments]

Leave a Reply