নতুন ছন্দের ছড়া”র বইয়ের সোজাসাপটা বয়ান
তাজ ইসলাম
“ছন্দবিজ্ঞান ও অলঙ্কার” নামক ছন্দের সাড়া জাগানো গ্রন্থ লিখেছেন বিশিষ্ট কবি প্রাবন্ধিক হাসান আলীম। কবিতা, কবিতার অলংকার ছন্দের বিষদ বিশ্লেষণে অনন্য একটি বই। পাঠকপ্রিয় সে বইয়ে ছন্দের বহুবিধ তথ্য হাজির করেছেন কবি হাসান আলীম। এবং প্রতিটি ছন্দের সপক্ষে উদাহরণ স্বরূপ উপস্হাপন করেছেন কবিতা ও ছড়া। হাসান আলীম উপস্হাপিত ছন্দ নতুন না।তবে বহু পাঠকেরই এসব বিষয়ে জানাশোনা কম।ছন্দের বহু প্রকরণ অপ্রচলিত। কাজেই এসব বিষয় যখন পাঠকের নজরে আসে তখন তা নতুনত্ব নিয়েই হাজির হয়।
বাংলাদেশে ও বাংলা ভাষায় ছড়া শিল্পীগণ সচরাচর ছন্দের প্রচলিত ফর্মেই নিজেদের ছড়ার চর্চা অব্যাহত রাখেন।হাসান আলীম চেষ্টা চালিয়েছেন অপ্রচলিত ছন্দে ছড়া চর্চার। এবং দৃষ্টান্ত রেখেছেন লিখে।এসব ছড়া নিয়ে তার নতুন ছড়াগ্রন্থ ” নতুন ছন্দের ছড়া”।
ছড়াগুলো লিখে প্রতিটি ছড়ার সাথে যুক্ত করেছেন ছড়া লেখার নিয়ম বা সূত্র সংকেত।
সূত্র উল্লেখ করেছেন রু মু রু মু এরকমভাবে।এই ছড়াটির পর্ব বিন্যাস রুদ্ধদল মুক্তদল,আবার রুদ্ধদল মুক্তদল।ছড়াটি হল :
৬. খৈয়াছড়া ঝর্ণা ।
রুমকি চুমকি/
চলছে দুলকি/
অগ্নি ফুলকি/
কর্ণে দুল কী?/
রুমকি চুমকি/
অগ্নি ফুল কী?/”!
এর পরের ছড়া রু মু মু রু।এভাবে কবি লিখেছেন ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের ছড়া।
আমরা এবার পাঠ করি
” আমার পুত্র/
তোমার কন্যা/
সুখের সূত্র/
আলোর বন্যা।/” কবির দেয়া সূত্র মতে ছড়াটি মু রু রু মু ফর্মে লেখা।
আর উক্ত বইয়ের প্রথম ছড়াটি লিখে সূত্রে তিনি বলেছেন এটি
রু রু রু রু
অর্থাৎ সবগুলো রুদ্ধূদল।কবির রচিত এই ছড়াটি মুক্তদল মুক্ত।
১. ছোটদের ছড়া
“রুম ঝুম রুম ঝুম/
মেঘ গুম গুম গুম/
কুন্তল কুমকুম/
রুম ঝুম,বুম বুম/।”
ছন্দের কসরত বলা যায়।তবে ছন্দের কসরত করতে গিয়ে অন্তমিলের সবল মজবুতির দিকে দৃষ্টি দিতে ভুলে গেছেন কবি।
বইয়ের দ্বিতীয় ছড়ার নাম “ছট ফট”
“ছট ফট মনটা/
দিন রাত কষ্ট/
ঝুট টুট কোনটা/
বল সব পষ্ট।/
মন ভর মেঘটা/
দেয় আজ ঘুমটা/।”
এর সূত্রে লিখেছেন রু রু রু মু
অর্থাৎ তিনটা রুদ্ধদল শেষটা মুক্তদল।দলের অস্তিত্ব ঠিক রাখতে গিয়ে হয়তো বেভুলে অন্তমিল দিয়েছেন মেঘটা ঘোমটা।সুতরাং নতুন ছন্দের এটি একটি উদাহরণ হলেও অন্তমিলে অনুকরণীয় নয়।
আরও পড়ুন— কবিতা । ছড়া । কবি নার্গিস নাহার রুনু’র ১১৮ টি ছড়া কবিতা
৩ নং ছড়াটি রু রু মু মু এবং ৪ নং টি রু রু মু রু। এই ধারাবাহিকতায় তিনি ছড়া লিখেছেন মোট ১৬ টি।
এর কোনটিতে সব রুদ্ধদল,কোনটির সব মুক্তদল।প্রতিটি ছড়ার শুরুতে সূত্র সংকেত দেয়া আছে মু রু মু মু,/ মু মু রু রু/ মু মু রু মু/ বা মু মু মু রু এভাবে।১৬ নং ছড়াটি মু মু মু মু ফর্মে লেখা।ছড়াটি হল
ভালোবেসে/ হেসে হেসে/ পথে পথে/ যেতে যেতে/ যাকে পাবে/ কাছে যাবে/।ভালোবেসে/ অবশেষে/ যাবে মিশে/ দিশে দিশে/”।ছড়ার বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে এগুলোকে আনন্দহীন রুক্ষ ননসেন্স ছড়া হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
যা কেবলই ছন্দ প্রয়োগের দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশে বইয়ের বাজারে বইয়ের প্রচলিত আকার অনুসারে ” নতুন ছন্দে ছড়া” বইটিকে শিশুতোষ বইই মনে হয়। কিন্ত ছন্দের পরীক্ষা ও পরীক্ষার নমুনা হিসেবে উপস্হাপনের কাঠিন্যে বইটি আর শিশুতোষ রয়নি।শিশুর কোমল মন ছড়ার গড়নে ছন্দের পরীক্ষা নীরিক্ষার ভার ভারিক্কি গ্রহণে অনুপযুক্ত।বইটির বিষয় প্রাপ্ত বয়স্কের আর পরিবেশনার পাত্র মতে শিশুতোষ। সহজে বললে ভাতের প্লেটে নুডুলস কিংবা নুডুলসের বাটিতে ভাত পরিবেশনের অবস্থা।
ছন্দ নমুনার ১৬ টি ছড়া ছাড়াও আছে আরও কয়েকটি ছড়া।এগুলো যথাক্রমে ইসমা,সোনা মা/ বেটার বৌ/ হরেক রকম ছড়া/ ছি কুত কুত ছি/সুস্মিত/ পদ্মা সেতু/ সোনার মেয়ে স্বর্ণা/ ইত্যাদি।সুস্মিতাকে নিয়ে কবির উচ্ছসিত পঙক্তি ” স্বর্ণকান্তা সুস্মিতা/ দুধে আলতা পুস্পিতা/ এই ছড়াটি পাঠ করতে করতে শেষে এসে পাঠক পাঠের তাল ঠিক রাখতে তার যথেষ্ট কষ্ট হবে।যখন পাঠ করবে
হরিণ চক্ষু/ মায়াময়,/ মাখন মনটা/ সুধাময়/কিংবা
” সোনার মেয়ে সুস্মিতা/ ডালিম- ঠোঁটের স্মিতা/।” এমনকি স্মিতা কে ইস্মিতা পাঠ করলেও মন ভরবে না।
পাঠকের মন জোগানোর জন্য একজন ছড়াকারকে প্রচুর জানার পরও যে কাজটি করা দরকার তা হল নিজের লেখার প্রতি যত্নবান হওয়া। এবং একটি লেখার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সতর্ক নজর রাখা।বইটি ছন্দের প্রকরণ এবং ব্যাকরণের তত্ত্ব জানতে সহায়ক বই হিসেবে হাতের কাছে রাখা জরুরি। কিশোর কলম প্রকাশনা প্রকাশ করেছে নন্দিত কবি হাসান আলীম র ” নতুন ছন্দের ছড়া” বইটি।এ ফোর সাইজে ১৬ পৃষ্ঠার বইটি আর্ট পেপারে পিনাপ করা।প্রচ্ছদ এঁকেছেন সোহাগ পারভেজ।আর অলংকরণ শেখ সাদী।মূল্য ৮০ টাকা মাত্র। হাসান আলীম র বই কিনুন।কবিকে জানুন,নিজে সম্বৃদ্ধ হউন।
ছন্দ । ভালোবাসার ছন্দ । ভালোবাসার ছন্দ কষ্টের । কষ্টের ছন্দ । হাসির ছন্দ । সুন্দর ছন্দ । বিদায় অনুষ্ঠানের ছন্দ। ছন্দ লেখা পিকচার ।