You are currently viewing তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত, সময়, দোয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত, সময়, দোয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত

তাহাজ্জুদ শব্দটি আরবী تهجد শব্দ থেকে এসেছে। এর আভিধানিক অর্থ রাতের নামাজ বা কিয়ামুল লাইল নামেও পরিচিত। কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদের নামাজ মুসলমানদের একটি ঐচ্ছিক ইবাদত। এটা বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইসলামের নবী করিম (সঃ) নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন এবং তার সাহাবীদেরকেও এটা পালনে উৎসাহিত করতেন। আজ আপনাদের জেন্য তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সহ তাহাজ্জুদ নামাজের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত , তাহাজ্জুদ নামাজের সময় আলোচনা করা হলো । আশা উপকৃত হবেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে আল কুরআনের বণী:

আল কুরআনের সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ১৭-১৮ এ উল্লেখ করা হয়েছে, “তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে।”

সূরা আল মুজাম্মিল এ উল্লেখ করা হয়েছে “অবশ্য রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা জিকর একেবারে যথার্থ।”

সূরা আল ফুরকান-এর ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে “আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।”

এছাড়াও সূরা আল ইমরানের ১৭ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, “তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী”।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে হাদীসের বণী:

হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।” (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)

হজরত আবু হোরায়রা থেকে আরো একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন- কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? (বুখারি ও মুসলিম)

ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে এ নামাজ আদায় করতেন। প্রিয়নবির প্রতি কিছু সময় নামাজ পড়ার নির্দেশ ছিল না বরং রাতের কিছু অংশ ছাড়া সারারাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায়ের নির্দেশ ছিল।

আমাদের মুসলিম সমাজের অনেকেই তাহাজ্জুদ নামাজের কিভাবে পড়তে হয় জানিনা। তাই আজ আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব:

তাহাজ্জুদের নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত। যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবেন, তাদের মধ্যে একশ্রেণির মানুষ হলেন তারা, যারা যত্নের সঙ্গে তাহাজ্জুদের নফল নামাজ আদায় করেন। নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। এই নামাজকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত হিসাবে ঘোষণা করেছেন। তিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন এবং সাহাবীদের এই নফল নামাজ পালনে উৎসাহিত করতেন। কুরআনের বিভিন্ন সুরায় এ নামাজের প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে।

 আরও পড়ুন -- মহান আল্লাহর ৯৯ নাম অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ

তাহাজ্জুদ নামাজ‌ কি?

তাহাজ্জুদ নামাজ‌ বা রাতের নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত, ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফজিলত সবচেয়ে বেশী। এ নামাজ আদায় করলে অশেষ পুণ্য লাভ করা যায়, কিন্তু আদায় করতে না পারলে কোনো গুনাহ হবে না।

মুসলমানদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই নবীজী কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকেন নি। তবে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এটা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

কখন তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে হয়?

ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত যেকোন সময় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। আল কুরআনের ভাষ্যমতে রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার মর্মার্থ হলো এই যে, রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর উঠে নামায পড়া। তাহাজ্জুদের সর্বোত্তম সময় এই যে, এশার নামাযের পর লোকেরা ঘুমাবে। তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে নামায পড়বে। নবী (সাঃ) কখনো মধ্য রাতে, কখনো তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে-ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়াত তেলাওয়াত করতেন। তারপর মেসওয়াক ও অযু করে নামায আদায় করতেন।

তাহাজ্জুদের নামাজ কত রাকাআত?

তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া বর্ণনা পাওয়া যায়। সর্ব নিম্ন ২ রাকাআত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত। রাসূল (স.) ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে এটা পড়া আবশ্যক নয়। তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ আদায় করা। তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম। সম্ভব না হলে ৪ রাকাআত আদায় করা। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে ২ রাকাআত হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করা ভালো। তবে তাহাজ্জুদ নামাজের কোনো কাজা নেই।

১। অতঃপর দু’রাকাত করে, তাহাজ্জুদের নামায সাত রাকাত পড়তে চাইলে দু’সালামে চার রাকাত পড়ে তিন রাকাত বিতর পড়বে। (বুখারী, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)
২। তাহাজ্জুদ নামায বিতরসহ ১৩, ১১, ৯ কিংবা ৭ রাকাত পড়া যায়। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নাত নাকি নফল?

তাহাজ্জুদের নামাজ‌ বা রাতের নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত। ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী।তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ

 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

নিয়ত মানে সংকল্প করা, ইচ্ছা করা । নামাজের নিয়ত বাংলা আরবী দুই ভাবেই করা যায়। তবে যদি আরবীতে ভুল উচ্চারণ করার সম্ভাবনা থাকে তাহলে বাংলাতে নিয়ত করাই ভালো।

তাহাজ্জুদ নামাজের আরবীতে নিয়ত:

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِاَللهُ اَكْبَر

তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকাতাই ছলাতিত তাহাজ্জুদী কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবা।

বাংলা অর্থ: অর্থ : দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি.. অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ পড়া।

অথবা,

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত

“আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলার দিকে মুখ করিয়া তাহাজ্জুদের দু-রাকআত নফল নামাজের নিয়ত করিলাম। আল্লাহু আকবার।”

আর আল্লাহ তো জানেনই আমাদের মনের খবর। তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামায পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন।

মধ্য রাতে অথবা রাতের শেষ দিকে ঘুম থেকে উঠে ওজু করে পুত:পবিত্র হয়ে নিবেন। একাকি অথবা স্ত্রীকে সাথে নিয়ে নির্জণে করো ঘুমের বেঘাত না করে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ধ্যানে দুই রাকাত দুই রাকাত করে ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত পড়তে পারেন।

কিন্তু কেউ যদি এ নামাজ ২ রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তার তাহাজ্জুদ আদায় হবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।” তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম। কেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারও কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি পড়া উত্তম।

– তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা।
– অতঃপর ছানা পড়া। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
– সুরা ফাতেহা পড়া। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
– অন্য সূরা বা সূরার অংশবিশেষ বা কেরাত পড়া। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা। তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে দোয়া পড়তেন:

রাসূল (স.) গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের জন্য ওঠে কুরআনের এ আয়াতসহ সুরা আল-ইমরানের শেষ পর্যন্ত পড়তেন। – (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ – رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ – رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلإِيمَانِ أَنْ آمِنُواْ بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأبْرَارِ

উচ্চারণ: রাব্বানা মা খালাক্বতা হাজা বাত্বিলান, সুবহানাকা ফাক্বিনা ‘আজাবান্নার। রাব্বানা ইন্নাকা মাং তুদখিলিন্নারা ফাক্বাদ্ আখঝাইতাহু, ওয়া মা লিজজ্বালিমিনা মিন্ আংছার। রাব্বানা ইন্নানা সামি’না মুনাদিআই ইউনাদি লিল ইমানি আন আমিনু বিরাব্বিকুম ফাআমান্না; রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফ্‌ফির আন্না সাইয়্যেআতিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মাআ’ল আবরার।’তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ

অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। পবিত্রতা তোমারই জন্য। আমাদেরকে তুমি জাহানড়বামের শাস্তি থেকে বাঁচাও। হে প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি যাকে জাহানড়বামে নিক্ষেপ কর তাকে অপমানিত কর। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের প্রভু!

আমরা ঈমান আনার জন্য একজন আহবানকারীকে আহবান করতে শুনে ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদের সকল গোনাহ মাফ করে দাও। আমাদের সকল দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও। আর নেক লোকদের সঙ্গে আমাদের মৃত্যু দাও।’

আরও পড়ুন- কবি মতিউর রহমান মল্লিক’র গানের সতন্ত্র ধারা ও বিপন্ন সম্ভাবনা

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী (আহমাদ, মেশকাত ১১০ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) বলেন, মহান আল্লহ তা’আলা প্রত্যেক রাত্রে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন যখন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকে। অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের মাঝে যে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব । যে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব। যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব ।(মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)

নবীকরীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামায পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন। তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

অনুরুপ কোন স্ত্রী যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকে নামাযের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে (আবু দাউদ, নাসায়ী, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)

রাসুল (সাঃ) বলেন, আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় নামায দাউদ (আঃ) এর নামায। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং রাতেন তৃতীয় ভাগে নামাযে দাঁড়াতেন আর ৬ষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমাতেন (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ) মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

কেয়ামতের ভয়াবহ বিপর্যয় ও কঠিন হিসাব-নিকাশের দিবসে কোন ব্যক্তি যদি সহজ হিসাব কামনা করে, তবে তার উচিত হবে নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (র.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হাশরের ময়দানে সহজ হিসাব কামনা করে, তার উচিত হবে আল্লাহ যেন তাকে রাত্রির অন্ধকারে সেজদারত ও দাঁড়ানো অবস্থায় পান। তার মধ্যে পরকালের চিন্তা ও রহমতের প্রত্যাশাও থাকা দরকার। (তাফসিরে কুরতুবি, মা’আরেফুল কোরআন, ক্বিয়ামুল লাইল)।

মহান রব তাহাজ্জুদগুজার বান্দাদের জন্য জান্নাতে অসাধারণ বালাখানা সাজিয়ে রেখেছেন। হজরত আবু মালেক আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (স.) বলেন, ‘জান্নাতে এমন কক্ষ থাকবে যার ভিতরের অংশ বাহির থেকে এবং বাইরের অংশ ভিতর থেকে দৃষ্টিগোচর হবে।’ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (স.) এসব কক্ষ কাদের জন্য? উত্তরে রাসূল (স.) বললেন, যে ব্যক্তি সালাম করে, ক্ষুধার্তকে আহার করায় এবং রাত্রে যখন সবাই নিদ্রিত থাকে, তখন সে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে।(মুসনাদে আহমদ, বায়হাকী তিরমিজি ) (তাফসিরে মাজহারি, মা’আরেফুল কোরআন)। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম , তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম , তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

মহান আল্লাহ হাশরে ময়দানে সমগ্র সৃষ্টিকুলের উপস্থিতিতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী প্রিয় বান্দাহদেরকে মহান সম্মানে ভূষিত করবেন। হজরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ হতে বর্ণিত আছে যে, ‘রাসূল (স.) এরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন যখন মহান রব পূর্ববর্তী মানবজাতিকে একত্রিত করবেন, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক আহ্বানকারী (যার আওয়াজ সমগ্র সৃষ্টিকুল শুনতে পাবে) দাঁড়িয়ে আহ্বান করবেন হে হাশরের মাঠে সমবেত মানজাতি, আজ তোমরা জানতে পারবে যে, আল্লাহপাকের নিকট সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী কে? অত:পর সে ফেরেশতা ‘যাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে পৃথক থাকে’ এরূপ গুণের অধিকারী লোকগণকে দাঁড়াতে আহ্বান করবেন। এই আওয়াজ শুনে এসব লোক (তাহাজ্জুদগুজার) দাঁড়িয়ে যাবেন, যাদের সংখ্যা হবে খুবই নগণ্য। এদের হিসাব গ্রহণ ব্যতিতই বেহেশতে প্রেরণ করা হবে। অতঃপর অন্যান্য সমগ্র লোক দাঁড়াবে এবং তাদের হিসাব গ্রহণ করা হবে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, মাজহারি, মা’আরিফুল কোরআন)। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ হলো মন্দ কাজের কাফফারা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহান সুযোগ।

তিরমিযি শরীফে হজরত আবু উমামা বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল (স.) এরশাদ করেছেন, নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়। কেননা এটি তোমাদের পূর্ববর্তী সব নেক বান্দাহর অভ্যাস ছিল। এটা তোমাদেরকে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্যদানকারী, মন্দ কাজের কাফফারা এবং গুনাহ থেকে নিবৃত্তকারী। (মাজহারি, মাআরেফুল কোরআন)। প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি কামনা করেন, আল্লাহ যেন তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেন, তার এবাদত-বন্দেগি কবুল করেন এবং তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন। এসব চাওয়া-পাওয়ার প্রধান অবলম্বন হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম , তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম , তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

Leave a Reply