You are currently viewing গল্প । নীরব দহন – নার্গিস নাহার রুনু
নীরব দহন

গল্প । নীরব দহন – নার্গিস নাহার রুনু

নীরব দহন

নার্গিস নাহার রুনু গল্প 

 

প্রতিদিনের মতো গ্রুপের জন্য কবিতা লিখছিলো অবনী। বলতে গেলে লেখাটা ওর নেশা হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া সময়ও কাটে। আশাহীন জীবনের মাঝে একটুকরো আলোর ঝলক এনে দেয় এই ফেসবুকের জগৎ। হঠাৎ মেসেঞ্জারে সম্বোধন বিহীন একটা মেসেজ আসে। গল্প 

-ঝটপট আপনার ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিন তো আমার মেসেঞ্জারে। আপনাকে সেরা লেখার জন্য পুরস্কার দেয়া হবে।

-পুরস্কার? ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প

-তো কি! ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প

আসলে অবনী মনে করতে পারছিলো না কোন লেখাটার জন্য। অপরপক্ষকে জিজ্ঞেস করলেই লেখাটি পাঠায়।

 

যখন নিষিদ্ধ নগরীর সুরায়

কল্যাণী…

কে বলবে আমাকে?

নিষিদ্ধ ঠিকানার ম্যানহোলে পঁচে পঁচে

খুঁজে ফিরি জীবনের মানে।

কতদিন পার হয়ে গেল,

তুলিতে মাখিনা রঙ, ক্যানভাসে জলরঙে

আঁকিনাকো স্বজনের মুখ।

অকল্যাণে ছেঁয়ে গেছে গোধূলীর রঙ

পছন্দের গানগুলি পড়ে আছে

পাংশু চত্বরের বুকে ধূলোট শরীরে।

আমিতো রয়েছি এক নিষিদ্ধ নগরে

নিষ্প্রাণ মমিপ্রায় নির্জীব হয়ে,

অকলংকিত জোৎস্নাকে ম্লান করি

কলংকিত পরকীয়া প্রেমে।

সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্তের হিসাব –

রাখিনাতো আর, রাখিনা কলমটিকে

কবিতার নরম শরীরে।

ঘেন্নায় ভালোবাসা গুটিয়েছে মুখ

শামুকের মতো; সুখেরাও শুক্তির মতো

ভেসে গেছে সমুদ্রের প্রতিকূল স্রোতে।

আমিতো রয়েছি এক অজ্ঞাত বাসে

কথকের কাহিনীর ককটেলে

উপমা আমার, স্বৈরিণী বেশবাশে।

আটপৌরে জীবনের সেই এলো শাড়ী

হারিয়েছি বৈশাখী তোড়ে –

ভেঙে গেছে পাতার কুটির।

মুছে গেছে নাম ফলক, জীবনের সব খতিয়ান

স্মৃতির অলিন্দে শুধু বিবর্ণ পাতারা –

নিঃশেষ হয়ে গেছে পেয়ালার সুরা

তবু কেন, সাকি বলে ডেকে চলো

মাতাল খৈয়াম।

আরও পড়ন -- কবি নার্গিস নাহার রুনু’র গল্প - মনের বদল

-ওহ হো, ধন্যবাদ আপনাকে। আমার মনে ছিলো না।

আসলে অবনী ও জানে লেখাটি ভালো তবে যে পুরস্কার পাবে এ আশা করেনি। তারপর এই লেখার সুত্র ধরে টুকটাক কথা হয় ছেলেটির সাথে। বিশেষ করে ছেলেটি বলে ও শোনে। আসলে অবনী ঘর পোড়া গরু তাই সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। একটি দূর্ঘটনায় তার স্বপ্নীল জীবনের সব রঙ নিঃশেষ করে নিয়েছে। এখন সামনে শুধু নিকষ আঁধার।

অনিন্দ্য যে খারাপ ছেলে তা সে না বুঝে ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলো। যখন তখন টাকা পয়সা ধার চাইলে সাধ্যমতো অবনী দিতো। কিন্তু পরে জানতে পারে অনিন্দ্য একজন নেশাখোর। ঘেন্নায় যখন আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলো তখন অনিন্দ্যর পক্ষথেকে আসতে লাগলো হুমকি। কতদিন গা বাঁচিয়ে চলবে ও।

একদিন মুখোমুখি হতেই অপমান করলো জনসম্মুখে অনিন্দ্য। জ্বালা সইতে না পেরে ঠাশ করে অনিন্দ্যর মুখে চড় মেরেছিল ও। প্রতিশোধে সুযোগ বুঝে তার সুন্দর মুখটা এসিডে ঝলসে দিলো। মুহুর্তের মধ্যেই একটি জীবন নাটকের যবনিকা পাত ঘটলো।

মামলা করেও কোন লাভ হয়নি। ধরাছোঁয়ার বাইরে অনিন্দ্য। অনেক কাটখড় পুড়িয়ে ক্ষত সারলো ঠিকই। কিন্তু নিজের চেহারায় বিভৎসতায় আর কখনো আয়না দেখেনি ও। অন্ধকারে থেকে যখন নিজের জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছিলো তখন প্রিয়জনদের অনুরোধে ফেসবুকে লেখা। সে জানে সে ভালো লেখে কিন্তু অলসতার কারণে জাতীয় দৈনিকে পাঠায় না। প্রোফাইলে একগোছা রজনীগন্ধার ছবি রেখেছে। এখন সে ফুলের মতো গন্ধ বিলাতে চায়।

ওই ছেলেটি মাঝে মাঝে মেসেজ পাঠায়। অবনীর ইচ্ছা হলে উত্তর দেয়, নাহলে নয়। হঠাৎ সেদিন আবার সম্বোধন বিহীন মেসেজ আসে, “আমি প্রেমে পড়ে গিয়েছি”

-লেখার? ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প ভালোবাসার গল্প

-উহু আপনার!

শুনে লজ্জায় কুকড়ে যায় অবনী। বুকের ভিতর তেরশতো নদীর ঢেউ উথালপাতাল করতে থাকে। চোখে শ্রাবণের ঢল নামে। চুপ করে থাকে।

-ছেলেটি তবু ও বলতে থাকে, আপনিতো কোনদিন আমার নাম ও জানতে চাননি!

-কি হবে জেনে?

-আমি একটু সহজ করে দিলাম এবার বলুন আমার নাম

স্বরবর্ণের দ্বিতীয় বর্ণ।

অজান্তেই অবনীর মুখ হতে বের হয় আকাশ।

উচ্ছসিত হয়ে ছেলেটি বলে, “আমি জানতাম আপনি

বলতে পারবেন। আসলে কখন যে আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি জানিনা। আপনার সাথে আমার একটু দেখা হওয়ার দরকার ছিলো। অনেক কথার ঝুলি জমিয়ে রেখেছি বলব বলে।”

অবনী ও সহজে রাজী হয়। আসলে সম্পর্কটা বেশিদূর গড়াতে চায়না ও। আকাশকে কখনো সে ঠকাবে না। দিনক্ষণ জায়গা বলে দেয়।

-তো চিনবো কীভাবে?

অবনী হেয়ালী করে বলে, “আমার প্রোফাইল।”

একঝলক দেখেই চিনে ফেলে আকাশ অবনীকে। কালো নেকাবে মুখঢাকা। হাতে একগোছা রজনীগন্ধা। ভীরু পায়ে পাশে যেয়ে বসে আকাশ। কি বলে কথা শুরু করবে তা ভাবতে না ভাবতেই অবগুণ্ঠন মুক্ত করে অবনী। এসিডে ঝলসানো বিভৎস মুখ দেখে চিৎকার করে ওঠে আকাশ, “এ হতে পারে না! তুমি অবনী নও।”

অবনী আকাশকে শান্ত হতে বলে জীবন কাহিনী বলে। তারপর বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। এরপর কয়ের মাস কেটে যায়। আবার মেসেজ আসে, “তুমি আমাকে বাঁচাও অবনী, তোমাকে ছাড়া… “।

-না আকাশ তা হবার নয়, ভুলে যাও আমাকে। আমার বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটা তুমি কেড়ে নিতে চাও? তোমার এ আবেগ মূল্যহীন। বাস্তব বড় কঠিন।

না আকাশ আর কখনো বিরক্ত করেনি ওকে। কোথায় যে হারিয়ে গেল তা জানতে পারেনা অবনী। শুধু নীরব দহনে নিজে দগ্ধ হয়ে ফেসবুকে একের পর এক লিখে যেতে থাকে বিরহের কবিতা।

খুলনা। গল্প গল্প গল্প গল্প গল্প গল্প

 

Leave a Reply