ভালোবাসার প্রতিদান
আজ আমি বড় অসহায় হয়ে নিজেই নিজের দিকে লজ্জায় তাকতে পারছি না। খুব কষ্ট লাগছে আমার জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। রমাজানের একটি মাস কেউ আমাকে দুবেলা খাবার দিতে আগ্রহ প্রকাশ করতেছে না। হচ্ছে না। সময় যত ঘণিয়ে আসছে ততই অস্থির হচ্ছি দুদিন পরেই রমজান মাস শুরু হবে, বর্ডিংয়ের খাবার বন্ধ হবে। এর পর কোথায় খাবো।
সমনে পরীক্ষা বাড়িতে যাওয়া সম্ভব না। কোথাও না কোথাও খাবারের ব্যাবস্থা হবে। কিন্তু ৫ দিন ধরে কোনও ভালো সংবাদ পেলাম না। বন্ধু জাহিদও চেষ্টা চালাচ্ছে, ও মনে মনে ধরে নিয়েছে কোথাও না হলে ওদের বাসায় ব্যাবস্থা করবে। এজন্য অপেক্ষা করছে যে ওদের চেয়ে যেন ভালো খাবারের ব্যাবস্থা হয় এমন কোথাও পাওয়া যায় কিনা । আমি তা জানতাম না। প্রিন্সিপ্যালও চেষ্টা করেছেন কোথাও ঠিক করে দিতে পারেন কি না। তিনি ব্যার্থ হয়ে আজ শুক্রবার জুময়ার নামাজ শেষে ঘোষণা দিলেন, আপনাদের মধ্য এমন কেহ আছেন যিনি আমাদের এক ছাত্রকে , আলানূর তুমি দাড়াও এই ছাত্রকে রমজান মাসের খাবারের ব্যাবস্থা করতে পারবেন? তখন নিজেকে কতটা ছোট মনে হল প্রকাশ করতে পারবো না। সবচেয়ে বড় দুঃখ লাগল উপস্থিত জনতার একজনও সারা দেয়নি।ভালোবাসার প্রতিদান
রমজানের আগের দিন বিকেলে জাহিদ আমাকে সাথে করে ওদের বাড়িতে নিয়ে গেল। ওর চাচাত ভাই বশার ভাইয়ের বাসায় নিল। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। জাহিদের চাচা বললেন, এই আমাদের লজিন মাষ্টার তখন আমি বুঝতে পারলাম। আমি জানতাম না জাহিদদের খাবারের তুলনায় এদের খাবার অনেক ভালো হয় কারন ওরা প্রতিদিন মাছ ধরে। তাই ও তাদেরকে বলল রমজানের একমাস আপনাদের বাসায় খাবে আর জহিরুল , সাথি, বিথীকে ছেপারা কায়দা পড়াবে।
যাই হোক আমাকে প্রথমে দেখেই তারা ভীষণ খুশি। পরে একটা কথা জানতে পালাম আমাকে এর আগেও আপু ও তার ছোট মেয়ে দেখেছিল একটি ফতুয়া গায়ে একটি ট্রাকটরে আর্ট করে নাম লিখতে। তখন সাথি ওর মাকে বলেছিল, দেখছ মা কত সুন্দর করে আর্ট করে। ওর মা বল এত সুন্দর মানুষটি যদি আমাদের বাসায় থাকতো! তাই আমাকে দেখে তারা অবাক হয়ে গেল জাহিদ যে আমাকেই নিয়ে আসবে কল্পনাও করেনি।ভালোবাসার প্রতিদান
সাথি তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে। আর বিথি আরো ছোট। দুটোর খুব লজ্জা ছিল আমার কাছে আসেনি তখন। আমাকে তখন সন্ধ্যার পরে রাতের খাবার দিল। প্লেটে হাত ধুয়ে যখন পানি ছুড়ে ফেলবো তখনি হাত থেকে প্লেট ফসকে পানির সাথে প্লেট ছুড়ে ফেলে দেই অনেকগুলো খন্ড হয়ে যায়। খুব লজ্জা লেগেছিল । এটা কি করলাম । জাহিদের চাচি বলল মনে কিছু নিয়েন না , এটা কোন ব্যাপার না। পরে অন্য প্লেটে খাবার শেষ করলাম।ভালোবাসার প্রতিদান
কিছুদিনের মানষিক কষ্ট শেষ হল। হোষ্টোলে রাতে থাকতাম । ভোর রাতে আমি আর জাহিদ একসাথে বাসায় এসে খেয়ে যেতাম আর ভোরবেলা ওদের পড়াতে আসতাম।
তারা সাধারণত বিকেলে রান্না করে তা দিয়ে সেহরি খেত কিন্তু আমার জন্য প্রতিদিন রাত দুটায় উঠে গরম খাবার রান্না করত । কয়েক আইটেমের তরকারি রান্না করতো। আমি তৃতীয় দিন মসজিদে ইফতার করেছিলম তাই রাগ করে বলল, আপনি প্রতিদিন বাসায় এসে ইফতার করবেন মসজিদে কারা কি দেয় না দেয়। আমায় নিয় আপু খুব চিন্তিত থাকত কিভাবে প্রতিদিন ভালো খাবার আমার সামনে দিতে পারা যায়।
এক এক করে দিন যেতে লাগল রমজান মাসও প্রায় শেষের দিকে। সাথি বিথী আমাকে যে ভীষণ ভালো বাসত আমি বুঝতাম।
সাথীর চেয়ে বিথী ছিল খুব চালাক এবং জ্ঞানী ও মেধাবী ছিলো। আমাকে দেখলে মুচকি হাসতো। ওকে আমার খুব ভালো লাগত। খালা বলে ডাকতাম আর সাথীকে আম্মু বলে ডাকতাম।
ওদের নাম পরিবর্তন করে রাখলাম। বড় মেয়ে সাথির নাম রহিমা আর ছোট মেয়ে বিথীর নাম রাখলাম আয়েশা। সবাই আমার দেয়া নাম পছন্দ করলো। সবাই এনামেই ডাকতে লাগল।ভালোবাসার প্রতিদান
আজ রমজানের শেষ দিন। বিদায় নেবার পালা। যখন বললাম আপনাদের একটি মাস অনেক কষ্ট দিয়েছি। সাথে সাথেই আপু বলল, ’’কষ্ট দিয়েছি মানে আপনি কোথাও যেতে পারবেন না, আপনি যতদিন কোটালী পাড়া থাকবেন ততদিন আমাদের বাসায় খাবেন’’। বোডিংয়ে কি খাবার দেয় তা আমাদের জানা আছে, দুবেলা খাবার দেয় আর ডাল আলু ভর্তা আর মাঝে মাঝে এক আইটেমের এক বালতি ঝোল দিয়ে তরকারি। এই খাবার খেয়ে আপনি বাঁচবেন না।
তারা জোর করায় আমি থেকে যেতে রাজি হলাম। রমজান মাস ছিল আপুর দুই বেলার চিন্তা এখন তিন বেলার।
তারা কৃষক পরিবার । আয়ের উৎস হলো ট্রাকটর চালিয়ে পরের জমি চাষ করে দেয়া । আর নিজেদের সামান্য জমি থেকে যা আয় হয় এ দিয়েই সংসার চলে। কিন্তু সেখানে আমি হলাম প্রতিদিনের মেহমান।ভালোবাসার প্রতিদান
একদিন দুই দিন একমাস পাঁচ মাস এভাবে দিন যেতে লাগলো। রহিমাকে মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেনীতে ভর্তি করালাম। রহিমা আমাকে নিয়ে গর্ব অনুভব করতো মাদ্রাসায় যখন ওদের ক্লাসে ক্লাস নিতে আসতাম তখন ও ওর সাথীদের বলত , জান এই হুজুর মামা আমাদের বাসা লজিন থাকে । সে খুব ভালো । আমাদের অনেক ভালোবাসে।
এভাবে যেতে লাগল দিন। ঐ বাড়ির সবাই খুব ভালোবাসতো আমাকে। তারা নিজেদের বাড়ির ছেলে মনে করতো। কেউ ভালো কিছু তৈরি করলে আমাকে খাওয়াতো। এভাবে তিন বছর অতিবাহিত হয়েগেল। ভালোবাসার প্রতিদান
কোটালীপাড়া আমার শিক্ষাস্তর শেষ হেয়েগেলো। ২০১০ সালের শেষের দিকে ফাজিল ডিগ্রী পরিক্ষা শেষ হয়েছে। হৃদয়ে বিদায় ঘণ্টা বাঝতে শুরু করেছে । এই বিদায় ঘন্টা শুধু আমার নয় ঐ পরিবার সহ বাড়ির প্রতিটি পরিবারের।
আয়েশা বললো মামা, আপনি সারা জীবন আমাদের বাড়ী থাকতে পারেন না!? সময় যত এগিয়ে আসছে ততই হৃদয় চুর্ণ বিচুর্ণ হচ্ছে। এই ছোট জীবনে এই তিন বছর যে সুখ পেয়েছি আগে কথনও কোথাও পাইনি। এত ভালোবাসা, আদর,মমতা বাবা মায়ের পরে এখানে পেয়েছি । ———————- ——————- ১৫ দিন হয় পরীক্ষা শেষ হয়েছে। অনেকগুলো বিদায় এক সাথে নেয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘ ১০বছর এই পরবাসের মাটি ও মানুষের সাথে মিশে একাকার হয়েছিলাম। কত স্মৃতি চারদিক থেকে হানা দিচ্ছে।
আব্দুল্লাহ আল নোমান আমার পিছু ছাড়ছে না। ক্লাস টু থেকে আমার সঙ্গ ছাড়ে নি। এখন তিতুমিরে অনার্সে পড়ে। এর আগেও এক বাসায় লজিন ছিলাম প্রায় তিন বছর। সেখানেও আছে ভালোবাসার এক ইতিহাস। মাদ্রাসার ওয়ান থেকে ফাজিল পর্যন্ত ৮০% ছাত্র ছাত্রী আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো, সমস্ত মাদ্রাসা জুড়ে ছিল আমার লেখা লেখি আর্ট , বানী চিরন্তনী। যা আমি প্রতিদিন একবার হলেও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে চেষ্টা করতাম । সেগুলোও স্মৃতি হতে যাচ্ছে। আরো কত কিছু বলে শেষ করা যাবে না। এলাকার সবাই খুব ভালোবাসত। এতকিছু একসাথে বিদায় দিতে হবে । ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। ভালোবাসার প্রতিদান
অন্যদিকে ঢাকায় ভর্তি হওয়া নিয়ে নানা কৌতুহল সৃষ্টি হতে লাগল। স্বপ্নের জাল বোনা শুরু হল। এতদিন কত ভালোবাসার মানুষের ভিতরে ছিলাম । ঢাকাতে কেউ থাকবে না আমি আবার শুন্য হয়ে যাবো। আত্মবিশ্বাস ছিল ঢাকা এসে আবার একটা জগত তৈরি করতে পারবো। আমার হৃদয় দুইদিকে ছুটে চলছে । বাড়িতেও বাবা মা অপেক্ষমান।
সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আর বেশিদিন এখানে থাকা যাবে না । ঢাকায় ভর্তির সময় চলে যাবে। তাই কালকেই চলে যাবো অনেকের কাছ থেকে আগেই বিদায় নিয়েছি। লজিন বাসায় আজ জানাবো। প্রথমে বিশ্বাস করল না আমি কাল যেতে চাচ্ছি। জোড় করলাম । রাতে অনেক কিছু রান্না করলো। ভাবছি দিনের বেলা বিদায় নিতে পারবো না । কি বলে বিদায় নিবো । কত মানুষ বিদায়ের বেলায় কত সুন্দর গুছিয়ে মাফ চেয়ে, ক্ষমা চেয়ে কত কিছু বলে বিদায় নেয় । অথচ আমি কিছুই বলতে পারি না । মুখ থেকে কিছু বের হয় না । শুধু ভাবছি কি বলবো । আয়েশাকে বললাম তোমার আম্মুকে বল আমি কাল চলে যাবো। দুপুরের খাবারের সময় বলেছিলাম। রাতে এসে চুড়ান্ত ভাবে বললাম আমি কাল খুব ভোরে চলে যাবো।
এতক্ষণে তাদের অন্তর কেঁপে উঠেছে। সবার চোখে মুখে কি যেন ভাসছে দেখতে পাচ্ছি। পারে না শুধু আমাকে তাদের হৃদয়ের গভিরে লুকিয়ে রাখতে ।
রহিমা, আয়েশা কান্না করছে সাথে তার ছোট ছেলে ইমরুলও। আপুর কান্না আর বেদনায় তার চোখ থেকে জল পড়েছে হয়ত কেউ বুঝতে পারেনি। রাতের খাবার খেয়েই, চললাম বলেই চলে এলাম। বিদায় বেলা যা বলে কিছুই বলতে পারলাম না ।
সারা রাত আমার ঘুম হয়নি তারাও রাতে কিছু খায়নি । খুব ভোরে ভাইয়া আর আপু বর্ডিংয়ে চলে এসেছে নাস্তা করিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিবে বলে। গাড়িতে ওঠার সময় জোড় করে কিছু টাকা পকেটে ঢুকিয়ে দিলে । বলল দুপুরে কিছু খাবেন আর গাড়ী ভাড়া দিবেন। তার কিছুক্ষণ আগে আব্দুল্লাহ আল নোমান ও তার বন্ধু ঝন্টু এসে আমাকে জড়িয়ে কান্না শুরু করে দিল। ওরা সবাই মিলে গাড়িতে উঠিয়ে দিল । অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত দাড়িয়েছিল। ভালোবাসার প্রতিদান
সারাদিন স্মৃতির কল্পনায় ভাসতে ভাসতে চলে এলাম আপন ঠিকানায়। এখন আর রাতে তেমন ঘুম আসে না। অতীত স্মৃতিগুলো চার দিক থেকে ঘিরে ধরেছে । একদিন রাতে ঘুম না আসায় কতক্ষণ আলোর দিকে চেয় থাকি আবার বই পড়ি আবার চোখ বুঝে থাকি কোন ভাবেই ঘুম আসছে না ,অতপর একটা খুটির সাথে মাথাকে আঘাত করলাম। আমি পাগোলের মতো হয়ে যাচ্ছি ।
ভাবলাম ঢাকা চলে যাই, সেখনে গেলে নানা ব্যাস্ততায় অতীত ভুলে থাকা যাবে ।তার কয়েকদিন পরই ঢাকা চলে আসলাম । তাদের সাথে মাঝে মাঝে ফোনে যোগাযোগ হতো। বাড়ি থাকতে নেটওয়ার্কে সমস্যা করতো যোগাযোগ কম হতো। ঢাকায় কামিল মাস্টার্সে ভর্তি হলাম ।
অপ্রত্যাশিত একটা ভিন্ন জগতে প্রবেশ করলাম। ধীরে ধীরে তাদের সাথে আমার যোগাযোগ কমে যাচ্ছে । খুব কম যোগাযোগ হয়। প্রায় ছয়মাস পর কোটালী পাড়া তাদের বাসায় বেড়াতে গেলাম। আমার আসার সংবাদ পেয়ে বশার ভাই পুকুরের মত একটি ডোবার পানি শুকিয়ে মাছ ধরে জিইয়ে রেখেছিলো। আমার আসায় তারা অনেক খুশি হল। প্রায় ১০দিনের মতো তাদের বাড়িতে ছিলাম। বিদায় বেলা গাড়ি ভাড়া দেয়ার জন্য আপু আয়েশার হাতে ৫০০টাকার একটা নোট দিলো আমাকে দেয়ার জন্য।আমি তো নিবো না, আয়েশা খুব জোর করেছিলো
আয়েশা বলণ টাকা না নিলে আপনাকে নৌকায় পাড় করবো না । আমাকে একেবারে জড়িয়ে ধরলো। আমি বললাম ঠিক আছে তুমি নৌকা পাড় করো। পড়ে উঠতেই টাকাটা নৌকার উপর রেখে একা ভোদৌড়। আয়েশা কেঁদেছিল। চলে এলাম ঢাকাতে। মাঝে মাঝে যোগাযোগ হতো। ভালোবাসার প্রতিদান
প্রায় চার পাঁচ মাস পর আমার ভীষণ অসুখ হয়েছিল। মনে করলাম আমি বাঁচবো না। জাহিদও কিছুটা অসুস্থ । কোটালী পাড়ার আরো একটি ছেলে অসুস্থ ওরা বাড়িতে যাবে আমি বললাম আমাকেও নিয়ে চল।
আমাকে নিয়ে গেলো ওদের বাড়িতে।শরীরে লাল গুড়ি গুড়ি কিযে উঠেছিল বুঝতে পারছিলাম না। কিছুই খেতে পারতাম না। বাড়িতে জাহিদের মা তৈল পড়া এনে দিল। তাদের যত্নে তিনদিন পরে সুস্থ হয়েছিলাম ।
একসপ্তাহ সেখানে থেকে আবার ঢাকা চলে এসেছি। তখন দেখে এলাম বশার ভাই হাসের ফার্ম করেছে। তিন লক্ষ টাকার মত লোন করেছিল । ঢাকা এসে যোগাযোগ ক্রমশ কমেই গেল। এক পর্যয়ে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু কেন জানি না । আমি সব সময়ই তাদের মনে করতাম। কিন্তু কেন যোগাযোগ করতে পারতাম না এখনও জানি না। প্রায় সাত আট মাস কোনও যোগাযোগ করিনি। ভালোবাসার প্রতিদান
একদিন জাহিদ বলল, বশার ভাই তো সবাইকে নিয়ে ঢাকা চলে এসেছে। শুনে অবাক হয়ে জানতে চাইলাম কেন? কোথায়? বলল তাদের হাস সব মারা গেছে । প্রায় চার লাখ টাকার মত দেনা। তাই কাজের জন্য সবাইকে নিয়ে চলে এসেছে । গাজিপূর থেকে আরও উত্তরে । শুনে খুব কষ্ট পেলাম। তখন প্রচন্ড শীত ছিল । আমি তিনদিন পর ঠিকানা নিয়ে দেখতে গেলাম। মানুষ বাধ্য হয়ে কত নির্মম কষ্ট করতে পারে সেখানে দেখলাম । কি কষ্টে দিন কাটাচ্ছে চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না।
আমি কষ্টের গভিরতা বুঝার জন্য ওখানে রাতে থেকে গেলাম। শীতে আমিই খুমাতে পারিনি । তার ভিতরে ছোট বাচ্ছা ছেলে মেয়ে কী ভীষণ কষ্টে থাকে।
রহিমাকে অনেক কষ্টে গার্মেন্সে ভর্তি করেছে। তারা ঠিক মতো বেতনও দেয় না। ভাইও কোনও কাজ পাচ্ছে না পরিবারে ৭জন সদস্য। এক ভয়াবহ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। আমি এসে নিজের পুরোনো লেপটি জহিরুলের কাছে দিয়ে দিলাম। কি ভাবে একটু সহযোগিতা করবো কিছুই পাচ্ছি না। ক্রমশ ভুলেই গেলাম কেমন আছে । কয়েকমাস পর তারা এলাকার এক পরিচিতজনের মাধ্যমে মোহাম্মাদপুর চলে এলো। তার কিছুদিন পর আমি আর জাহিদ দেখতে গেলাম।
ভাই রিক্সা চালাচ্ছে, রহিমা ও আপু গার্মেন্সে চাকরি নিয়েছে । আয়েশা বাসায় থাকে ছোট দুই ভাই বোনকে নিয়ে।ভালোবাসার প্রতিদান
চলে এলাম আবারও ভুলে গেলাম আবার বন্ধ হয়ে গেল আমার যোগাযোগ। কিন্তু স্বরণ করি প্রতিদিন। জাহিদকেও মাঝে মাঝে তাদেরকথা জিজ্ঞাসা করি।
একবার শুনলাম বড় ছেলে জহিরুলের ভিষণ অসুখ হয়েছে। আমাকেও দেখতে আসতে বলল । কেন যেন যেতে পারিনি । মহাখালি কলেরা হাসপাতালে এনেছিল, আমাকে আসার অনুরোধ করেছিল। ঐ সময়ে তাদের কাছের মানুষ বলতে কেউ তখন ছিল না ।
আমি কেন যেন যেতে পারিনি অথচ বাড্ডা থেকে মহাখালী বেশি দূর ছিল না। পরে অবশ্য সুস্থ হয়েছে । মাঝা মাঝে যেতে খুব ইচ্ছা করে । একবার দেখে আসি কিন্তু কোন অদৃশ্য শক্তি আমাকে আটকায় জানি না । অনেকদিন গত হল। হঠাৎ বিকেল বেলা একটা কল আসল। এই ভাবে ভুলে যাইয়েন না। রহিমার অবস্থা ভালো না। হাসপাতালে এনেছি কিডনিতে পাথর হয়েছে , অপারেশন করতে হবে । একটু এসে দেখে যান, আপনাকে দেখতে চায় । শুধু আপনার কথা বলে ।
বললাম, আমি কাল বিকেলে আসবো । যেতে পারি নি । পরের দিন জাহিদের সাথে কথা বলে আসলাম । কিন্তু প্রথমে দিশা হারিয়ে শাহাবাগ গিয়েছিলাম পরে পরে মহাম্মাদ পুর হাসপাতালে গেলাম। এসে দেখি আম্মুজান একে বারে শুকিয়ে গেছে। কিছু খেতে পারে না। তখন হাসপাতালে ওর দাদী আর ও ছিল , আমি জাহিদ আর জাহিদের বন্ধু ছিলাম। দেখে খুব কষ্ট লাগল।ভালোবাসার প্রতিদান
আমাকে দেখে রহিমা মুচকি হেসেছিল। বলল এরকম কি ভাবে ভুলে থাকতে পারেন মামা। ৪১দিনের ঔষধ দিয়েছে তার পরে অপারেশন হবে। এর পর আর খবর নিলাম না । একদিন কল করলো কল্যাণপূর ইবনেসিনা হাসপাতালে ওর অপারেশন । কালকে পারলে একটু দেখে যাইয়েন। ভালোবাসার প্রতিদান
যেতে চেয়েও কেন যেন যেতে পারলাম না । দুদিন পরে জাহিদকে ফোন দিয়ে বলি রহিমার কি অবস্থা। বলল, এখন সুস্থ আছে।
এর কয়েকদিন পর আপু ফোন দিল ঐদিন তো আসলেন না এখন একদিন বাসায় আসেন । বললাম ঠিক আছে আসবো।
আজ থেকে প্রায় আড়াইমাস অতিক্রম হয়েছে এখনও যাইনি ও যোগাযোগ করা হয়নি।।
ভালোবাসার প্রতিদান,