সূরা আল মাআরিজ এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা আল মাআরিজ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।
সূরা আল মাআরিজ
সূরা আল মাআরিজ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ
- প্রশ্ন: সূরা আল-মাআরিজ কত নং সূরা?
উত্তর: ৭০ নং সূরা। - প্রশ্ন: সূরা আল-মাআরিজ মক্কী না মাদানী?
উত্তর: মক্কী সূরা। - প্রশ্ন: সূরা আল-মাআরিজের আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তর: ৪৪ টি। - প্রশ্ন: “আল-মাআরিজ” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: “উর্ধ্বারোহণকারী সিঁড়িসমূহ” বা “উচ্চ স্তরসমূহ”। - প্রশ্ন: সূরা আল-মাআরিজের মূল বিষয় কী?
উত্তর: কিয়ামতের ভয়াবহতা, মানুষের ধৈর্যের গুরুত্ব ও পরকালের শাস্তি ও পুরস্কার। - প্রশ্ন: সূরাটির শুরুতেই কার সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে?
উত্তর: একজন অবিশ্বাসী ব্যক্তি যে আল্লাহর শাস্তি চেয়েছিল। - প্রশ্ন: কিয়ামতের দিন আকাশ কীসের মতো হয়ে যাবে?
উত্তর: গলিত তামার মতো। - প্রশ্ন: সূরায় মানুষের কোন গুণটির প্রশংসা করা হয়েছে?
উত্তর: ধৈর্য ধারণ করার গুণ। - প্রশ্ন: সূরায় কোন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: হযরত মুসা (আ.)-এর নাম উল্লেখ রয়েছে। - প্রশ্ন: সূরায় জাহান্নামের নাম কীভাবে উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: “হাওয়িয়াহ” (ধ্বংসের গহ্বর) হিসেবে। - প্রশ্ন: সূরায় বর্ণিত মুমিনদের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: তারা নামাজে নিষ্ঠাবান ও সম্পদে গরীব-অসহায়দের হক আদায় করে। - প্রশ্ন: সূরায় আল্লাহ কিসের শপথ করেছেন?
উত্তর: ফেরেশতাদের এবং রূহ (জিবরাঈল আ.)-এর শপথ করেছেন। - প্রশ্ন: সূরায় কাফিরদের শাস্তি কী বলা হয়েছে?
উত্তর: তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং সেখানে তাদের ত্বক পুড়িয়ে দেওয়া হবে। - প্রশ্ন: সূরায় মানুষের কোন দোষের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: তারা অল্পতেই অধৈর্য হয়ে পড়ে এবং বিপদে ধৈর্য হারায়। - প্রশ্ন: সূরায় বর্ণিত জান্নাতের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: সেখানে মুমিনরা সম্মানিত হবে এবং কোনো ভয় বা চিন্তা থাকবে না। - প্রশ্ন: সূরায় আল্লাহ মানুষকে কোন কাজের আদেশ দিয়েছেন?
উত্তর: ধৈর্য ধারণ করা, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা ও দান-খয়রাত করা। - প্রশ্ন: সূরায় কোন পাপকে ধ্বংসাত্মক বলা হয়েছে?
উত্তর: অহংকার, অল্পতেই অসন্তুষ্ট হওয়া ও গরীবদের প্রতি কৃপণতা। - প্রশ্ন: সূরার শেষে আল্লাহ কী বলেছেন?
উত্তর: এই কুরআন সতর্ককারী, এখন যার ইচ্ছা সে আল্লাহর পথ অবলম্বন করুক। - প্রশ্ন: সূরায় আল্লাহর কীসের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: তাঁর অসীম ক্ষমতা ও কিয়ামতের নিশ্চয়তার প্রতি। - প্রশ্ন: সূরাটি তিলাওয়াতের ফজিলত কী?
উত্তর: এটি কিয়ামতের ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ধৈর্য ও ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করে।
সূরা আল-মাআরিজ সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন)
- সূরা আল-মাআরিজ কত নং সূরা?
a) ৬৯
b) ৭০
c) ৭১
d) ৭২ - সূরা আল-মাআরিজের আয়াত সংখ্যা কত?
a) ৪০
b) ৪২
c) ৪৪
d) ৪৬ - “আল-মাআরিজ” শব্দের অর্থ কী?
a) শাস্তি
b) পুরস্কার
c) উর্ধ্বারোহণের সিঁড়ি
d) ফেরেশতা - সূরা আল-মাআরিজ কোন ধরনের সূরা?
a) মাদানী
b) মক্কী
c) উভয়টি
d) কোনোটিই নয় - সূরাটির শুরুতে কার কথা বলা হয়েছে?
a) একজন মুমিন
b) একজন অবিশ্বাসী
c) একজন নবী
d) একজন ফেরেশতা - সূরায় কিয়ামতের দিন আকাশ কেমন হবে?
a) স্বচ্ছ
b) গলিত তামার মতো
c) অন্ধকার
d) উজ্জ্বল - সূরায় জাহান্নামের কী নাম বলা হয়েছে?
a) জাহীম
b) হাওয়িয়াহ
c) সাকার
d) লাযা - সূরায় কার নাম উল্লেখ করা হয়েছে?
a) হযরত ইব্রাহীম (আ.)
b) হযরত মুসা (আ.)
c) হযরত ঈসা (আ.)
d) হযরত নূহ (আ.) - সূরায় মানুষের কোন গুণের প্রশংসা করা হয়েছে?
a) বাহাদুরি
b) ধৈর্য
c) বুদ্ধিমত্তা
d) সম্পদ - সূরায় আল্লাহ কিসের শপথ করেছেন?
a) ফেরেশতা ও রূহ (জিবরাঈল)
b) সূর্য ও চন্দ্র
c) পাহাড় ও সমুদ্র
d) মানবজাতি - সূরায় মুমিনদের বৈশিষ্ট্য কী?
a) নামাজ ও দান-খয়রাত
b) ব্যবসা-বাণিজ্য
c) যুদ্ধ করা
d) কবিতা বলা - সূরায় কাফিরদের শাস্তি কী?
a) তারা জাহান্নামে যাবে
b) তারা ক্ষমা পাবে
c) তারা পৃথিবীতে শাস্তি পাবে
d) তাদের কোনো শাস্তি নেই - সূরায় মানুষের কোন দোষ বলা হয়েছে?
a) তারা ধৈর্য হারায়
b) তারা অতিরিক্ত ধৈর্যশীল
c) তারা সবসময় সত্য বলে
d) তারা খুব বিনয়ী - সূরায় জান্নাতের বৈশিষ্ট্য কী?
a) সেখানে ভয় ও চিন্তা থাকবে
b) সেখানে কোনো ভয় বা চিন্তা নেই
c) সেখানে শুধু খাবার থাকবে
d) সেখানে শুধু পানীয় থাকবে - সূরায় আল্লাহ মানুষকে কী করতে বলেছেন?
a) ধৈর্য ধরতে, নামাজ পড়তে ও দান করতে
b) শুধু নামাজ পড়তে
c) শুধু দান করতে
d) শুধু ধৈর্য ধরতে - সূরায় কোন পাপকে ধ্বংসাত্মক বলা হয়েছে?
a) অহংকার ও কৃপণতা
b) অতিথিপরায়ণতা
c) সত্য কথা বলা
d) নামাজ পড়া - সূরার শেষে আল্লাহ কী বলেছেন?
a) এটি সতর্ককারী
b) এটি শুধু একটি গল্প
c) এটি শুধু মুমিনদের জন্য
d) এটি শুধু কাফিরদের জন্য - সূরায় আল্লাহর কোন শক্তির কথা বলা হয়েছে?
a) তাঁর অসীম ক্ষমতা
b) তাঁর দুর্বলতা
c) তাঁর শুধু সৃষ্টি করার ক্ষমতা
d) তাঁর শুধু শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা - সূরাটি তিলাওয়াতের ফজিলত কী?
a) এটি ধৈর্য ও ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করে
b) এটি শুধু অর্থবহ
c) এটি শুধু কাফিরদের জন্য
d) এটি শুধু মুমিনদের জন্য - সূরায় আল্লাহ কিসের নিশ্চয়তা দিয়েছেন?
a) কিয়ামতের
b) শুধু পৃথিবীর
c) শুধু জান্নাতের
d) শুধু জাহান্নামের - সূরায় মানুষের কোন আচরণ নিন্দনীয় বলা হয়েছে?
a) তারা অল্পতেই অসন্তুষ্ট হয়
b) তারা সবসময় সন্তুষ্ট
c) তারা সবসময় দান করে
d) তারা সবসময় নামাজ পড়ে - সূরায় আল্লাহ কাদেরকে সম্মানিত করবেন?
a) মুমিনদের
b) কাফিরদের
c) মুনাফিকদের
d) সবাইকে - সূরায় আল্লাহর পথে কে চলবে?
a) যে ইচ্ছা করবে
b) শুধু মুমিনরা
c) শুধু নবীরা
d) শুধু ফেরেশতারা - সূরায় আল্লাহ কীসের সাক্ষ্য দিয়েছেন?
a) তাঁর কিতাবের
b) তাঁর নবীদের
c) ফেরেশতা ও রূহের
d) শুধু মানুষের - সূরায় আল্লাহ কীভাবে মানুষকে সতর্ক করেছেন?
a) কিয়ামতের ভয় দেখিয়ে
b) শুধু জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে
c) শুধু জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে
d) শুধু দুনিয়ার শাস্তির কথা বলে
এই প্রশ্নোত্তরগুলি সূরা আল-মাআরিজের মূল বিষয়বস্তু ও শিক্ষাকে সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত
সূরা আল-মাআরিজ: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু ও ফযিলত
১. সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
- নাম: সূরা আল-মাআরিজ (المعارج)
- অর্থ: “উর্ধ্বারোহণের সিঁড়িসমূহ” বা “উচ্চ স্তরসমূহ”
- সূরার নম্বর: ৭০
- আয়াত সংখ্যা: ৪৪
- পর্ব: ২৯
- মাক্কী/মাদানী: মাক্কী সূরা (মক্কায় অবতীর্ণ)
- রুকু সংখ্যা: ২
২. শানে নুযূল (প্রেক্ষাপট):
সূরা আল-মাআরিজ মক্কার কাফিরদের প্রতি সতর্কবাণী হিসেবে নাযিল হয়েছে। বিশেষত, নাদর ইবনে হারিস নামক এক কাফির নেতা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, “হে মুহাম্মাদ! যদি তুমি সত্যবাদী হও, তাহলে আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসুক!”
এ কথার প্রেক্ষাপটে সূরাটির প্রথম কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়, যেখানে আল্লাহ তাআলা ওই কাফিরের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “একজন (অবিশ্বাসী) ব্যক্তি আল্লাহর শাস্তি তলব করল, যা অবিশ্বাসীদের উপর অবধারিত…” (আয়াত: ১-২)
৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- কিয়ামতের ভয়াবহতা: সূরায় কিয়ামতের দিনের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে—আকাশ গলিত তামার মতো হবে, পাহাড় ধুলোর ন্যায় উড়ে যাবে।
- মানুষের ধৈর্যের পরীক্ষা: আল্লাহ মানুষের ধৈর্য ধারণের গুণের প্রশংসা করেছেন এবং অল্পতেই অধৈর্য হওয়ার নিন্দা করেছেন।
- জাহান্নামের শাস্তি: কাফিরদের জন্য “হাওয়িয়াহ” (ধ্বংসের গহ্বর) প্রস্তুত করা হয়েছে।
- মুমিনদের গুণাবলি: যারা নামাজে ধৈর্যশীল, দান-খয়রাত করে এবং আখিরাতে বিশ্বাস করে, তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
- আল্লাহর শপথ: ফেরেশতা ও রূহ (জিবরাঈল আ.)-এর শপথ করে কিয়ামতের সত্যতা ঘোষণা করা হয়েছে।
৪. সূরাটির শিক্ষা:
ধৈর্য ধারণ: বিপদে ধৈর্য ধরা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
নামাজ ও দান: নিয়মিত নামাজ আদায় ও গরীবদের সাহায্য করা ঈমানের লক্ষণ।
কিয়ামতের স্মরণ: দুনিয়ার জীবনে মোহগ্রস্ত না হয়ে আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়া।
অহংকার ত্যাগ: সম্পদ ও ক্ষমতায় গর্ব না করে বিনয়ী হওয়া।
আল্লাহর শাস্তি থেকে সতর্কতা: কাফিরদের মতো আল্লাহর শাস্তি তলব না করে তাওবা ও ইস্তিগফার করা।
৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু:
কিয়ামতের ভয়াবহতা ও পরকালের হিসাব।
মুমিন ও কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য।
মানুষের স্বভাবগত দুর্বলতা (অধৈর্য, লোভ, অহংকার)।
ফেরেশতাদের মাধ্যমে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন।
জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা।
৬. সূরাটির ফযিলত (মাহাত্ম্য):
কিয়ামতের স্মরণ: এ সূরা তিলাওয়াত করলে কিয়ামতের ভয়াবহতা স্মরণ হয়, যা গুনাহ থেকে বিরত রাখে।
ধৈর্য বৃদ্ধি: সূরায় ধৈর্যের গুরুত্ব বর্ণিত হওয়ায় এটি মুমিনকে সহিষ্ণু হতে উদ্বুদ্ধ করে।
জাহান্নাম থেকে মুক্তি: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূরা আল-মাআরিজ পড়বে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের ‘হাওয়িয়াহ’ থেকে বাঁচাবেন।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
আধ্যাত্মিক উন্নতি: সূরাটি ঈমান বাড়ায় এবং দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে রাখে।
সারসংক্ষেপ:
সূরা আল-মাআরিজ কিয়ামত, পরকালীন জবাবদিহি, ধৈর্য ও ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে। এটি মুমিনদের জন্য সতর্কবার্তা ও সুসংবাদ বহন করে, আর কাফিরদের জন্য ভয়ংকর সতর্কতা। সূরাটি তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করে আমরা দুনিয়ার জীবনে সঠিক পথে চলতে পারি এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি।
﴿فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِيلًا﴾
“অতএব, আপনি ধৈর্যধারণ করুন সুন্দর ধৈর্য।” (সূরা আল-মাআরিজ: ৫)