সূরা আল-কাহফ (আরবি: سورة الكهف) কুরআন মাজিদের ১৮তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১১০টি। সূরাটির নাম “আল-কাহফ” (গুহা) এসেছে এতে বর্ণিত “আসহাবে কাহফ” বা গুহার বাসিন্দাদের কাহিনী থেকে। সূরা আল কাহফ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ , সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিকসহ সূরা কাহফ এর ফজিলত তুলে ধরা হলো।
সূরা কাহফ
সূরা আল-কাহফ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. সূরা আল-কাহফ কুরআনের কততম সূরা?
উত্তর: সূরা আল-কাহফ কুরআনের ১৮তম সূরা।
২. সূরা আল-কাহফে কয়টি আয়াত রয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-কাহফে ১১০টি আয়াত রয়েছে।
৩. সূরা আল-কাহফ কোন ধরনের সূরা?
উত্তর: সূরা আল-কাহফ মাক্কী সূরা।
৪. সূরা আল-কাহফে কয়টি প্রধান কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-কাহফে চারটি প্রধান কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
৫. সূরা আল-কাহফের প্রথম কাহিনীটি কী?
উত্তর: প্রথম কাহিনীটি হলো “আসহাবে কাহফ” বা গুহার বাসিন্দাদের কাহিনী।
৬. আসহাবে কাহফ কত বছর ঘুমিয়ে ছিলেন?
উত্তর: আসহাবে কাহফ ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে ছিলেন।
৭. সূরা আল-কাহফের দ্বিতীয় কাহিনীটি কী?
উত্তর: দ্বিতীয় কাহিনীটি হলো দুজন বাগানের মালিকের কাহিনী।
৮. সূরা আল-কাহফের তৃতীয় কাহিনীটি কী?
উত্তর: তৃতীয় কাহিনীটি হলো হযরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর সাক্ষাতের কাহিনী।
৯. সূরা আল-কাহফের চতুর্থ কাহিনীটি কী?
উত্তর: চতুর্থ কাহিনীটি হলো যুলকারনাইনের কাহিনী।
১০. যুলকারনাইন কে ছিলেন?
উত্তর: যুলকারনাইন ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক, যাকে আল্লাহ বিশেষ ক্ষমতা দান করেছিলেন।
১১. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দাদের সংখ্যা কত ছিল?
উত্তর: গুহার বাসিন্দাদের সংখ্যা সাতজন ছিল।
১২. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দাদের কুকুরের নাম কী ছিল?
উত্তর: কুকুরের নাম ছিল কিতমীর।
১৩. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত দুজন বাগানের মালিকের মধ্যে একজন কীভাবে তার বাগান হারায়?
উত্তর: একজন বাগানের মালিক আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে বাগান হারায়।
১৪. হযরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর সাক্ষাতে কয়টি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: তিনটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
আরও পড়তে পারেন– সূরা রাদ : ৪৫ টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত আলোচনা
১৫. যুলকারনাইন কাকে বাধা দিয়েছিলেন?
উত্তর: যুলকারনাইন ইয়াজুজ ও মাজুজকে বাধা দিয়েছিলেন।
১৬. সূরা আল-কাহফের মূল শিক্ষা কী?
উত্তর: সূরা আল-কাহফের মূল শিক্ষা হলো দুনিয়ার জীবনের মোহ থেকে দূরে থাকা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করা।
১৭. সূরা আল-কাহফ তিলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত কী?
উত্তর: সূরা আল-কাহফ তিলাওয়াতকারীকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করা হয়।
১৮. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দারা কোন শহরে ছিলেন?
উত্তর: তারা ইফেসাস শহরে ছিলেন।
১৯. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দাদের ধর্ম কী ছিল?
উত্তর: তারা একেশ্বরবাদী ছিলেন এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিলেন।
২০. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত যুলকারনাইনের বাধাটির নাম কী?
উত্তর: বাধাটির নাম হলো “সাদ্দে যুলকারনাইন”।
আরও পড়ুন– সূরা ইউসুফ : ৪৫ টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত আলোচনা
সূরা আল-কাহফ সম্পর্কে ২৫টি MCQ
১. সূরা আল-কাহফ কুরআনের কততম সূরা?
- a) ১৫তম
- b) ১৮তম
- c) ২০তম
- d) ২২তম
উত্তর: b) ১৮তম
২. সূরা আল-কাহফে কয়টি আয়াত রয়েছে?
- a) ১০০
- b) ১১০
- c) ১২০
- d) ১৩০
উত্তর: b) ১১০
৩. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দারা কত বছর ঘুমিয়ে ছিলেন?
- a) ১০০ বছর
- b) ২০০ বছর
- c) ৩০৯ বছর
- d) ৪০০ বছর
উত্তর: c) ৩০৯ বছর
৪. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দাদের কুকুরের নাম কী ছিল?
- a) কিতমীর
- b) রক্স
- c) টমি
- d) বেলো
উত্তর: a) কিতমীর
৫. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দাদের সংখ্যা কত ছিল?
- a) ৫
- b) ৭
- c) ১০
- d) ১২
উত্তর: b) ৭
৬. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত দুজন বাগানের মালিকের মধ্যে একজন কীভাবে তার বাগান হারায়?
- a) প্রাকৃতিক দুর্যোগে
- b) আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে
- c) চোরের কারণে
- d) যুদ্ধের কারণে
উত্তর: b) আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে
৭. হযরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর সাক্ষাতে কয়টি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে?
- a) ২
- b) ৩
- c) ৪
- d) ৫
উত্তর: b) ৩
৮. যুলকারনাইন কাকে বাধা দিয়েছিলেন?
- a) ইয়াজুজ ও মাজুজ
- b) ফেরাউন
- c) কাফেরদের
- d) জিনদের
উত্তর: a) ইয়াজুজ ও মাজুজ
৯. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দারা কোন শহরে ছিলেন?
- a) মক্কা
- b) মদিনা
- c) ইফেসাস
- d) কায়রো
উত্তর: c) ইফেসাস
১০. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত যুলকারনাইনের বাধাটির নাম কী?
- a) সাদ্দে যুলকারনাইন
- b) সাদ্দে মুসা
- c) সাদ্দে খিজির
- d) সাদ্দে ইব্রাহিম
উত্তর: a) সাদ্দে যুলকারনাইন
১১. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দাদের ধর্ম কী ছিল?
- a) মুশরিক
- b) একেশ্বরবাদী
- c) খ্রিস্টান
- d) ইহুদি
উত্তর: b) একেশ্বরবাদী
১২. সূরা আল-কাহফের মূল শিক্ষা কী?
- a) দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থাকা
- b) সম্পদ অর্জন করা
- c) যুদ্ধ করা
- d) ধনী হওয়া
উত্তর: a) দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থাকা
১৩. সূরা আল-কাহফ তিলাওয়াতকারীকে কী থেকে রক্ষা করে?
- a) দাজ্জালের ফিতনা
- b) রোগ
- c) দারিদ্র্য
- d) শত্রু
উত্তর: a) দাজ্জালের ফিতনা
১৪. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দাদের কুকুরের অবস্থান কোথায় ছিল?
- a) গুহার ভিতরে
- b) গুহার বাইরে
- c) গুহার প্রবেশপথে
- d) গুহার ছাদে
উত্তর: c) গুহার প্রবেশপথে
১৫. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দারা কোন সময়ে ঘুমিয়ে ছিলেন?
- a) রাতে
- b) দিনে
- c) সকালে
- d) সন্ধ্যায়
উত্তর: a) রাতে
১৬. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত দুজন বাগানের মালিকের মধ্যে একজন কীভাবে তার বাগান হারায়?
- a) প্রাকৃতিক দুর্যোগে
- b) আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে
- c) চোরের কারণে
- d) যুদ্ধের কারণে
উত্তর: b) আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে
১৭. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত হযরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর সাক্ষাতে প্রথম ঘটনাটি কী ছিল?
- a) নৌকা ভেঙে ফেলা
- b) একটি শিশুকে হত্যা করা
- c) একটি প্রাচীর মেরামত করা
- d) একটি গাছ কাটা
উত্তর: a) নৌকা ভেঙে ফেলা
১৮. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত হযরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর সাক্ষাতে দ্বিতীয় ঘটনাটি কী ছিল?
- a) নৌকা ভেঙে ফেলা
- b) একটি শিশুকে হত্যা করা
- c) একটি প্রাচীর মেরামত করা
- d) একটি গাছ কাটা
উত্তর: b) একটি শিশুকে হত্যা করা
১৯. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত হযরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর সাক্ষাতে তৃতীয় ঘটনাটি কী ছিল?
- a) নৌকা ভেঙে ফেলা
- b) একটি শিশুকে হত্যা করা
- c) একটি প্রাচীর মেরামত করা
- d) একটি গাছ কাটা
উত্তর: c) একটি প্রাচীর মেরামত করা
২০. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত যুলকারনাইনের বাধাটি কোন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল?
- a) লোহা ও তামা
- b) পাথর ও কাঠ
- c) সোনা ও রূপা
- d) কাচ ও মাটি
উত্তর: a) লোহা ও তামা
২১. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দাদের ঘুমের সময়কাল কত বছর ছিল?
- a) ১০০ বছর
- b) ২০০ বছর
- c) ৩০৯ বছর
- d) ৪০০ বছর
উত্তর: c) ৩০৯ বছর
২২. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দাদের কুকুরের নাম কী ছিল?
- a) কিতমীর
- b) রক্স
- c) টমি
- d) বেলো
উত্তর: a) কিতমীর
২৩. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দারা কোন শহরে ছিলেন?
- a) মক্কা
- b) মদিনা
- c) ইফেসাস
- d) কায়রো
উত্তর: c) ইফেসাস
২৪. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত যুলকারনাইনের বাধাটির নাম কী?
- a) সাদ্দে যুলকারনাইন
- b) সাদ্দে মুসা
- c) সাদ্দে খিজির
- d) সাদ্দে ইব্রাহিম
উত্তর: a) সাদ্দে যুলকারনাইন
২৫. সূরা আল-কাহফে বর্ণিত গুহার বাসিন্দাদের ধর্ম কী ছিল?
- a) মুশরিক
- b) একেশ্বরবাদী
- c) খ্রিস্টান
- d) ইহুদি
উত্তর: b) একেশ্বরবাদী
সূরা কাহফ এর শানে নুযুল
সূরা আল-কাহফ মক্কী সূরা হিসেবে মক্কার কাফেরদের চ্যালেঞ্জ ও মুসলমানদের ঈমানকে মজবুত করার উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয়েছে। বিশেষত, মক্কার কাফেররা নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে বিভিন্ন প্রশ্ন করে পরীক্ষা করতে চাইত। তাদের একটি প্রশ্ন ছিল “গুহার বাসিন্দাদের” সম্পর্কে। এই প্রশ্নের উত্তরে সূরা আল-কাহফ অবতীর্ণ হয় এবং এতে গুহার বাসিন্দাদের বিস্তারিত কাহিনী বর্ণনা করা হয়। এছাড়াও, এই সূরায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী ও শিক্ষা উপস্থাপন করা হয়েছে।
সূরা কাহফ এর গুরুত্বপূর্ণ দিক
১. চারটি প্রধান কাহিনী:
– আসহাবে কাহফ (গুহার বাসিন্দাদের কাহিনী)
– দুজন বাগানের মালিকের কাহিনী
– হযরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর সাক্ষাতের কাহিনী
– যুলকারনাইনের কাহিনী
২. দাজ্জালের ফিতনা থেকে সুরক্ষা:
এই সূরাটি তিলাওয়াতকারীকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি সূরা আল-কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।
৩. ঈমান ও তাওহীদের বার্তা:
এই সূরাটি ঈমান, তাওহীদ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে।
৪. দুনিয়ার মোহ থেকে সতর্কতা:
সূরাটি দুনিয়ার মোহ ও সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ থেকে সতর্ক করে।
সূরা কাহফ এর সূরাটির শিক্ষা
১. আল্লাহর উপর ভরসা:
গুহার বাসিন্দাদের কাহিনী থেকে শিক্ষা হলো, আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং তাঁর সাহায্যের প্রতি আস্থা রাখা।
২. দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থাকা:
দুজন বাগানের মালিকের কাহিনী থেকে শিক্ষা হলো, দুনিয়ার সম্পদ ও মোহ থেকে সতর্ক থাকা এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া।
৩. জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা:
হযরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর কাহিনী থেকে শিক্ষা হলো, মানুষের জ্ঞান সীমিত এবং আল্লাহর জ্ঞান অসীম।
৪. ন্যায়পরায়ণ শাসন:
যুলকারনাইনের কাহিনী থেকে শিক্ষা হলো, ন্যায়পরায়ণতা ও শক্তির সঠিক ব্যবহার।
৫. আখিরাতের প্রস্তুতি:
সূরাটি আখিরাতের জীবনের প্রতি সচেতন করে এবং দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা সম্পর্কে সতর্ক করে।
সূরা কাহফ এর মূল বিষয়বস্তু
১. ঈমান ও তাওহীদ:
সূরাটি আল্লাহর একত্ববাদ, তাঁর ক্ষমতা ও মহিমা সম্পর্কে আলোচনা করে।
২. আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস:
সূরাটি আখিরাতের জীবনের প্রতি বিশ্বাস ও প্রস্তুতির গুরুত্ব তুলে ধরে।
৩. দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা:
সূরাটি দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা ও সম্পদের মোহ থেকে সতর্ক করে।
৪. জ্ঞান ও হিকমত:
হযরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর কাহিনী থেকে জ্ঞান ও হিকমতের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।
৫. ন্যায় ও শাসন:
যুলকারনাইনের কাহিনী থেকে ন্যায়পরায়ণ শাসন ও শক্তির সঠিক ব্যবহারের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
৬. দাজ্জালের ফিতনা থেকে সুরক্ষা:
সূরাটি দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুমিনদের সুরক্ষা দেওয়ার বার্তা বহন করে।
সূরা আল-কাহফ কুরআনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা ঈমান, তাওহীদ, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস এবং দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়। এটি মুমিনদের জন্য একটি পথনির্দেশক ও সুরক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সূরা কাহফের আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ:
১. ঈমানের পরীক্ষা:
আয়াত: “নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, আমি তাদের সৎকাজ ব্যর্থ করব না।” (১৮:৩০)
অর্থ: আল্লাহ ঈমানদারদের প্রচেষ্টা ও সৎকাজ কখনও বৃথা যেতে দেবেন না।
২. দুনিয়ার মোহ:
আয়াত: “আর তুমি দুনিয়ার জীবনকে তাদের কাছে সুশোভিত করে দিয়েছ, যদিও পরকাল তাদের কাছে উত্তম।” (১৮:৪৬)
অর্থ: দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতই চিরস্থায়ী।
৩. জ্ঞান ও হিকমত:
আয়াত: “তারা বলল, হে খিজির, আপনি যদি চান, তবে আমি আপনার সাথে থাকতে পারি, যাতে আপনি আমাকে যা শিখাবেন তা আমি শিখতে পারি।” (১৮:৬৬)
অর্থ: জ্ঞান অর্জনের জন্য ধৈর্য ও বিনয় প্রয়োজন।
৪. ন্যায়বিচার:
আয়াত: “তিনি বললেন, যা আমার রব আমাকে দান করেছেন, তা উত্তম। সুতরাং তোমরা শক্তি দিয়ে আমাকে সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করব।” (১৮:৯৫)
অর্থ: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় শক্তির সঠিক ব্যবহার।
৫. কিয়ামত ও পুনরুত্থান:
আয়াত: “যেদিন আমি পর্বতসমূহকে চালিত করব এবং তুমি পৃথিবীকে দেখবে উন্মুক্ত, সেদিন আমি তাদের একত্রিত করব এবং তাদের কাউকে বাদ দেব না।” (১৮:৪৭)
অর্থ: কিয়ামতের দিন সবাইকে একত্রিত করা হবে এবং কাউকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না।
সূরা কাহফ এর ফজিলত
সূরা কাহফের ফজিলত অত্যন্ত ব্যাপক ও গভীর। এই সূরাটি তিলাওয়াত, অধ্যয়ন ও আমলের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি অনেক বরকত ও ফযিলত লাভ করতে পারে। নিম্নে সূরা কাহফের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত উল্লেখ করা হলো:
১. দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা:
সূরা কাহফের বিশেষ ফজিলত হলো এটি দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুমিনকে রক্ষা করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৮০৯)
এছাড়াও অন্য হাদিসে এসেছে:
“যে ব্যক্তি সূরা কাহফের শেষ দশ আয়াত পাঠ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।”
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩২১)
২. জুমার দিন সূরা কাহফ তিলাওয়াতের ফজিলত:
জুমার দিন সূরা কাহফ তিলাওয়াত করলে বিশেষ বরকত ও নূর লাভ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে নূর উজ্জ্বল করা হবে।”
(আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস নং ৫৮৫৬)
৩. আধ্যাত্মিক শান্তি ও হিদায়াত:
সূরা কাহফ তিলাওয়াত করলে আত্মিক প্রশান্তি ও হিদায়াত লাভ হয়। এই সূরায় বর্ণিত ঘটনাগুলো মুমিনকে দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে রাখে এবং আখিরাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
৪. কিয়ামতের দিন নূর লাভ:
সূরা কাহফ তিলাওয়াতকারী কিয়ামতের দিন নূর লাভ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি সূরা কাহফ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য একটি নূর হবে যা তার অবস্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত করবে।”
(মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৬৪৭৭)
৫. গুনাহ মাফ ও রহমত লাভ:
সূরা কাহফ তিলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমত নাজিল হয় এবং গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য আল্লাহর রহমত নাজিল হবে এবং তার গুনাহ মাফ করা হবে।”
(তাফসীরে ইবনে কাসীর)
৬. দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ:
সূরা কাহফ তিলাওয়াতকারী দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করে। এই সূরায় বর্ণিত ঘটনাগুলো মুমিনকে দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে রাখে এবং আখিরাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
৭. বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা:
সূরা কাহফ তিলাওয়াত করলে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই সূরায় বর্ণিত ঘটনাগুলো মুমিনকে ধৈর্য ও আল্লাহর উপর ভরসা করার শিক্ষা দেয়।
৮. জ্ঞান ও হিকমত লাভ:
সূরা কাহফে বর্ণিত মূসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা থেকে জ্ঞান ও হিকমত লাভের শিক্ষা পাওয়া যায়। এই ঘটনা মুমিনকে আল্লাহর হিকমতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে শেখায়।
৯. আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়:
সূরা কাহফে বর্ণিত দুটি বাগানের মালিকের ঘটনা থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১০. কিয়ামত ও পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস:
সূরা কাহফে কিয়ামত ও পুনরুত্থানের বর্ণনা মুমিনকে আখিরাতের প্রতি সচেতন করে তোলে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসার তাওফিক দেয়।
১১. সূরা কাহফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে সওয়াব:
সূরা কাহফ তিলাওয়াত করলে অনেক সওয়াব লাভ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য দশটি নেকী লেখা হবে।”
(তাফসীরে ইবনে কাসীর)
১২. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন:
সূরা কাহফ তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করে মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। এই সূরায় বর্ণিত ঘটনাগুলো মুমিনকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ দেখায়।
১৩. দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্তি:
সূরা কাহফে বর্ণিত ঘটনাগুলো মুমিনকে দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত করে আখিরাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
১৪. ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলের শিক্ষা:
সূরা কাহফে বর্ণিত আসহাবে কাহফের ঘটনা থেকে ধৈর্য ও আল্লাহর উপর ভরসা করার শিক্ষা পাওয়া যায়।
১৫. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার শিক্ষা:
সূরা কাহফে বর্ণিত জুলকারনাইনের ঘটনা থেকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার শিক্ষা পাওয়া যায়।
১৬. আল্লাহর হিকমতের প্রতি বিশ্বাস:
সূরা কাহফে বর্ণিত মূসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা থেকে আল্লাহর হিকমতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের শিক্ষা পাওয়া যায়।
১৭. আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়:
সূরা কাহফে বর্ণিত দুটি বাগানের মালিকের ঘটনা থেকে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের শিক্ষা পাওয়া যায়।
১৮. কিয়ামত ও পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস:
সূরা কাহফে কিয়ামত ও পুনরুত্থানের বর্ণনা মুমিনকে আখিরাতের প্রতি সচেতন করে তোলে।
১৯. সূরা কাহফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে সওয়াব:
সূরা কাহফ তিলাওয়াত করলে অনেক সওয়াব লাভ করা যায়।
২০. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন:
সূরা কাহফ তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করে মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।
সূরা কাহফের ফজিলত অত্যন্ত ব্যাপক এবং এটি মুমিনের জীবনে অনেক বরকত ও কল্যাণ বয়ে আনে। তাই নিয়মিত এই সূরা তিলাওয়াত, অধ্যয়ন ও আমল করা উচিত।