You are currently viewing সূরা আল ইমরান সম্পর্কে ২০টি প্রশ্ন ও MCQ
সূরা আল ইমরান

সূরা আল ইমরান সম্পর্কে ২০টি প্রশ্ন ও MCQ

সূরা আল ইমরান (আরবি: سورة آل عمران) হল পবিত্র কুরআনের তৃতীয় সূরা। এটি একটি মাদানী সূরা, অর্থাৎ এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের পরে অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরাটি ২০০ আয়াত নিয়ে গঠিত। সূরার নাম “আল ইমরান” (ইমরানের পরিবার) এসেছে সূরার ৩৩ নং আয়াত থেকে, যেখানে হযরত ইমরানের পরিবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই পরিবারে হযরত মরিয়ম (আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা অন্তর্ভুক্ত।

সূরা আল ইমরান প্রধান বিষয়বস্তু:

  1. তাওহীদ ও রিসালাত: সূরাটির শুরুতে আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর গ্রন্থের সত্যতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
  2. পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী: হযরত মরিয়ম, হযরত ঈসা (আ.) এবং অন্যান্য নবীদের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
  3. জ্ঞান ও হিকমাহ: জ্ঞান অর্জন এবং আল্লাহর নিদর্শনগুলো বুঝার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
  4. জিহাদ ও সংগ্রাম: ঈমানদারদেরকে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করতে এবং ধৈর্য ধারণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
  5. আখিরাত ও হিসাব: আখিরাতের জীবনের প্রতি বিশ্বাস এবং আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ গুরুত্ব:

  • সূরা আল ইমরানে হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম ও মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যা খ্রিস্টানদের সাথে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য স্পষ্ট করে।
  • এই সূরায় ঈমানদারদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং বিভেদ এড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
  • সূরাটির শেষ অংশে মুমিনদেরকে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের জন্য প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

সূরা আল ইমরান কুরআনের একটি গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ সূরা, যা ঈমান, জ্ঞান, এবং আল্লাহর পথে অবিচল থাকার শিক্ষা দেয়।

সূরাটি সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ

সূরা আল ইমরান সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর:

  1. প্রশ্ন: সূরা আল ইমরান কুরআনের কত নম্বর সূরা?
    উত্তর: ৩য় সূরা।
  2. প্রশ্ন: সূরা আল ইমরান কতটি আয়াত নিয়ে গঠিত?
    উত্তর: ২০০টি আয়াত।
  3. প্রশ্ন: সূরা আল ইমরান কি মাক্কী না মাদানী সূরা?
    উত্তর: মাদানী সূরা।
  4. প্রশ্ন: সূরাটির নাম “আল ইমরান” কেন রাখা হয়েছে?
    উত্তর: কারণ এতে হযরত ইমরানের পরিবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
  5. প্রশ্ন: সূরা আল ইমরানে কোন নবীর জন্ম কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
    উত্তর: হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম কাহিনী।
  6. প্রশ্ন: সূরাটির শুরুতেই আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে?
    উত্তর: “الحي القيوم” (আল-হাইয়্যুল কাইয়ূম)।
  7. প্রশ্ন: সূরা আল ইমরানে কোন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে?
    উত্তর: বদর ও উহুদ যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
  8. প্রশ্ন: সূরাটিতে আল্লাহর নিদর্শনগুলো চিন্তা করার জন্য কী বলা হয়েছে?
    উত্তর: আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আল্লাহর নিদর্শনগুলো চিন্তা করতে বলা হয়েছে।
  9. প্রশ্ন: সূরা আল ইমরানে ঈমানদারদেরকে কী করতে উৎসাহিত করা হয়েছে?
    উত্তর: আল্লাহর পথে সংগ্রাম (জিহাদ) ও ধৈর্য ধারণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
  10. প্রশ্ন: সূরাটিতে কাদেরকে “উম্মতে ওয়াসাত” (মধ্যপন্থী উম্মত) বলা হয়েছে?
    উত্তর: মুসলিম উম্মাহকে।
  11. প্রশ্ন: সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য কোন দোয়া শেখানো হয়েছে?
    উত্তর: “رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا” (সূরা আল ইমরান, আয়াত ৮)।
  12. প্রশ্ন: সূরাটিতে আল্লাহর কাছে কী চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে?
    উত্তর: জ্ঞান, হিকমাহ এবং দৃঢ়তা।
  13. প্রশ্ন: সূরা আল ইমরানে কাদেরকে “أولي الألباب” (বুদ্ধিমান) বলা হয়েছে?
    উত্তর: যারা আল্লাহর নিদর্শনগুলো চিন্তা করে এবং শিক্ষা গ্রহণ করে।
  14. প্রশ্ন: সূরাটিতে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের জন্য কী করতে বলা হয়েছে?
    উত্তর: তাওবা ও ইস্তিগফার করতে বলা হয়েছে।
  15. প্রশ্ন: সূরা আল ইমরানে কাদেরকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত বলা হয়েছে?
    উত্তর: যারা আল্লাহর আয়াতগুলোর অর্থ বিকৃত করে।
  16. প্রশ্ন: সূরাটিতে আল্লাহর পথে কী দিয়ে জিহাদ করতে বলা হয়েছে?
    উত্তর: জীবন ও সম্পদ দিয়ে।
  17. প্রশ্ন: সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কাছে কী চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে?
    উত্তর: দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ।
  18. প্রশ্ন: সূরাটিতে আল্লাহর কাছে কীভাবে প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে?
    উত্তর: বিনয় ও গোপনে।
  19. প্রশ্ন: সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কাছে কী চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে?
    উত্তর: ঈমানের দৃঢ়তা ও সঠিক পথের হিদায়াত।
  20. প্রশ্ন: সূরাটিতে আল্লাহর কাছে কী চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে?
    উত্তর: শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়।

সূরা আল ইমরান সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন):

  1. সূরা আল ইমরান কুরআনের কত নম্বর সূরা?
    a) ১ম
    b) ২য়
    c) ৩য়
    d) ৪র্থ
    উত্তর: c) ৩য়
  2. সূরা আল ইমরানে কতটি আয়াত রয়েছে?
    a) ১৫০
    b) ২০০
    c) ২৫০
    d) ৩০০
    উত্তর: b) ২০০
  3. সূরা আল ইমরান কোন ধরনের সূরা?
    a) মাক্কী
    b) মাদানী
    c) উভয়ই
    d) কোনোটিই নয়
    উত্তর: b) মাদানী
  4. সূরা আল ইমরানে কার পরিবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে?
    a) হযরত ইব্রাহিম (আ.)
    b) হযরত ইমরান
    c) হযরত মুসা (আ.)
    d) হযরত নূহ (আ.)
    উত্তর: b) হযরত ইমরান
  5. সূরা আল ইমরানে কোন নবীর জন্ম কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
    a) হযরত মুসা (আ.)
    b) হযরত ঈসা (আ.)
    c) হযরত ইব্রাহিম (আ.)
    d) হযরত ইউসুফ (আ.)
    উত্তর: b) হযরত ঈসা (আ.)
  6. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে?
    a) الرحمن الرحيم
    b) الحي القيوم
    c) العزيز الحكيم
    d) السميع البصير
    উত্তর: b) الحي القيوم
  7. সূরা আল ইমরানে কোন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে?
    a) বদর
    b) উহুদ
    c) খন্দক
    d) a ও b উভয়ই
    উত্তর: d) a ও b উভয়ই
  8. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর নিদর্শনগুলো চিন্তা করার জন্য কী বলা হয়েছে?
    a) আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী
    b) পর্বত ও সমুদ্র
    c) গাছ ও পানি
    d) মানুষ ও জীবজন্তু
    উত্তর: a) আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী
  9. সূরা আল ইমরানে ঈমানদারদেরকে কী করতে উৎসাহিত করা হয়েছে?
    a) জিহাদ
    b) ধৈর্য ধারণ
    c) উভয়ই
    d) কোনোটিই নয়
    উত্তর: c) উভয়ই
  10. সূরা আল ইমরানে কাদেরকে “উম্মতে ওয়াসাত” বলা হয়েছে?
    a) ইহুদি
    b) খ্রিস্টান
    c) মুসলিম
    d) হিন্দু
    উত্তর: c) মুসলিম
  11. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য কোন দোয়া শেখানো হয়েছে?
    a) رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً
    b) رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا
    c) رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي
    d) رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
    উত্তর: b) رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا
  12. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কাছে কী চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে?
    a) জ্ঞান
    b) হিকমাহ
    c) দৃঢ়তা
    d) সবকটি
    উত্তর: d) সবকটি
  13. সূরা আল ইমরানে কাদেরকে “أولي الألباب” বলা হয়েছে?
    a) যারা আল্লাহর নিদর্শনগুলো চিন্তা করে
    b) যারা জ্ঞানী
    c) যারা ধৈর্যশীল
    d) সবকটি
    উত্তর: d) সবকটি
  14. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের জন্য কী করতে বলা হয়েছে?
    a) তাওবা
    b) ইস্তিগফার
    c) উভয়ই
    d) কোনোটিই নয়
    উত্তর: c) উভয়ই
  15. সূরা আল ইমরানে কাদেরকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত বলা হয়েছে?
    a) যারা আল্লাহর আয়াত বিকৃত করে
    b) যারা মিথ্যা বলে
    c) যারা অহংকারী
    d) সবকটি
    উত্তর: a) যারা আল্লাহর আয়াত বিকৃত করে
  16. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর পথে কী দিয়ে জিহাদ করতে বলা হয়েছে?
    a) জীবন
    b) সম্পদ
    c) উভয়ই
    d) কোনোটিই নয়
    উত্তর: c) উভয়ই
  17. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কাছে কী চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে?
    a) দুনিয়ার কল্যাণ
    b) আখিরাতের কল্যাণ
    c) উভয়ই
    d) কোনোটিই নয়
    উত্তর: c) উভয়ই
  18. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কাছে কীভাবে প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে?
    a) বিনয় ও গোপনে
    b) জোরে ও প্রকাশ্যে
    c) শুধু বিনয়
    d) শুধু গোপনে
    উত্তর: a) বিনয় ও গোপনে
  19. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কাছে কী চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে?
    a) ঈমানের দৃঢ়তা
    b) সঠিক পথের হিদায়াত
    c) উভয়ই
    d) কোনোটিই নয়
    উত্তর: c) উভয়ই
  20. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কাছে কী চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে?
    a) শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়
    b) ধন-সম্পদ
    c) সুস্বাস্থ্য
    d) দীর্ঘ জীবন
    উত্তর: a) শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়
  21. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য কোন দোয়া শেখানো হয়েছে?
    a) رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا
    b) رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا
    c) رَبِّ اغْفِرْ لِي
    d) رَبِّ ارْحَمْنَا
    উত্তর: b) رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا
  22. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর কাছে কী চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে?
    a) জ্ঞান
    b) হিকমাহ
    c) দৃঢ়তা
    d) সবকটি
    উত্তর: d) সবকটি
  23. সূরা আল ইমরানে কাদেরকে “أولي الألباب” বলা হয়েছে?
    a) যারা আল্লাহর নিদর্শনগুলো চিন্তা করে
    b) যারা জ্ঞানী
    c) যারা ধৈর্যশীল
    d) সবকটি
    উত্তর: d) সবকটি
  24. সূরা আল ইমরানে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের জন্য কী করতে বলা হয়েছে?
    a) তাওবা
    b) ইস্তিগফার
    c) উভয়ই
    d) কোনোটিই নয়
    উত্তর: c) উভয়ই
  25. সূরা আল ইমরানে কাদেরকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত বলা হয়েছে?
    a) যারা আল্লাহর আয়াত বিকৃত করে
    b) যারা মিথ্যা বলে
    c) যারা অহংকারী
    d) সবকটি
    উত্তর: a) যারা আল্লাহর আয়াত বিকৃত করে

সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু

সূরা আল ইমরান সংক্ষিপ্ত পরিচয়:

সূরা আল ইমরান (আরবি: سورة آل عمران) হল পবিত্র কুরআনের তৃতীয় সূরা। এটি একটি মাদানী সূরা, অর্থাৎ এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের পরে অবতীর্ণ হয়েছে। সূরাটি ২০০টি আয়াত নিয়ে গঠিত। সূরার নাম “আল ইমরান” (ইমরানের পরিবার) এসেছে সূরার ৩৩ নং আয়াত থেকে, যেখানে হযরত ইমরানের পরিবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই পরিবারে হযরত মরিয়ম (আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা অন্তর্ভুক্ত।

সূরা আল ইমরানের শানেনুযূল (অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট):

সূরা আল ইমরান মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছিল, যখন মুসলিম সম্প্রদায় একটি নতুন সমাজ গঠনের প্রক্রিয়ায় ছিল। এই সময়ে মুসলিমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে, খ্রিস্টানরা হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রকৃতি নিয়ে মুসলিমদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। সূরাটি এই বিতর্কের প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয় এবং হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রকৃতি, তাঁর জন্ম ও মিশন সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করে। এছাড়াও, সূরাটি মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার, আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার এবং ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দেয়।

সূরা আল ইমরানের গুরুত্বপূর্ণ দিক:

  1. তাওহীদ ও রিসালাত: সূরাটির শুরুতে আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর গ্রন্থের সত্যতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
  2. পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী: হযরত মরিয়ম, হযরত ঈসা (আ.) এবং অন্যান্য নবীদের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
  3. জ্ঞান ও হিকমাহ: জ্ঞান অর্জন এবং আল্লাহর নিদর্শনগুলো বুঝার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
  4. জিহাদ ও সংগ্রাম: ঈমানদারদেরকে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করতে এবং ধৈর্য ধারণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
  5. আখিরাত ও হিসাব: আখিরাতের জীবনের প্রতি বিশ্বাস এবং আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সূরা আল ইমরানের শিক্ষা:

  1. তাওহীদের গুরুত্ব: আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করা ঈমানের মূল ভিত্তি।
  2. জ্ঞান অর্জন: আল্লাহর নিদর্শনগুলো চিন্তা করে জ্ঞান অর্জন করা এবং হিকমাহ লাভ করা।
  3. ঐক্য ও সংগ্রাম: মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
  4. ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল: বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।
  5. আখিরাতের প্রস্তুতি: দুনিয়ার জীবনের চেয়ে আখিরাতের জীবনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া।
  6. তাওবা ও ইস্তিগফার: আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাওবার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করা।

সূরা আল ইমরানের মূল বিষয়বস্তু:

  1. আল্লাহর একত্ববাদ: সূরাটির শুরুতে আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর গ্রন্থের সত্যতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
  2. নবীদের কাহিনী: হযরত ইমরানের পরিবার, হযরত মরিয়ম এবং হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম ও মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
  3. জ্ঞান ও হিকমাহ: আল্লাহর নিদর্শনগুলো চিন্তা করে জ্ঞান অর্জন এবং হিকমাহ লাভের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
  4. ঈমানদারদের দায়িত্ব: ঈমানদারদেরকে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করতে, ধৈর্য ধারণ করতে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
  5. আখিরাতের স্মরণ: আখিরাতের জীবনের প্রতি বিশ্বাস এবং আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
  6. তাওবা ও ইস্তিগফার: আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাওবার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সূরা আল ইমরানের বিশেষ গুরুত্ব:

  • সূরা আল ইমরানে হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রকৃতি ও মিশন সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যা খ্রিস্টানদের সাথে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য স্পষ্ট করে।
  • সূরাটি মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং বিভেদ এড়ানোর নির্দেশ দেয়।
  • সূরাটির শেষ অংশে মুমিনদেরকে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের জন্য প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

সূরা আল ইমরান কুরআনের একটি গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ সূরা, যা ঈমান, জ্ঞান, এবং আল্লাহর পথে অবিচল থাকার শিক্ষা দেয়।

সূরা আল ইমরান থেকে বিষয়ভিত্তিক ১০টি আয়াত :

১. তাওহীদ ও আল্লাহর একত্ববাদ:

আয়াত ২:
আরবি:
“اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ”
অর্থ:
“আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক হওয়ার গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

২. জ্ঞান ও হিকমাহ:

আয়াত ১৯০:
আরবি:
“إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ”
অর্থ:
“নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শনগুলো চিন্তা করে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

. ঈমানদারদের দায়িত্ব:

আয়াত ২০০:
আরবি:
“يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ”
অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্য্যে অটুট থাকো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে ঈমানদারদেরকে ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা এবং তাকওয়া অবলম্বন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৪. তাওবা ও ইস্তিগফার:

আয়াত ১৩৫:
আরবি:
“وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ”
অর্থ:
“এবং যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে বা নিজের উপর জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

৫. আখিরাতের স্মরণ:

আয়াত ১৮৫:
আরবি:
“كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ”
অর্থ:
“প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে পুরস্কার দেওয়া হবে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মৃত্যু ও আখিরাতের জীবনের প্রতি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

৬. জিহাদ ও সংগ্রাম:

আয়াত ১৪০:
আরবি:
“إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ”
অর্থ:
“যদি তোমাদের কোনো আঘাত লাগে, তবে অনুরূপ আঘাত ঐ সম্প্রদায়কেও লেগেছে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর পথে সংগ্রামে ধৈর্য ধারণ করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

৭. আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা:

আয়াত ১৩৩:
আরবি:
“وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ”
অর্থ:
“তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে দৌড়াও, যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমান।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের জন্য ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

৮. ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব:

আয়াত ১০৩:
আরবি:
“وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا”
অর্থ:
“তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভেদ সৃষ্টি করো না।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং বিভেদ এড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৯. হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রকৃতি:

আয়াত ৫৯:
আরবি:
“إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ”
অর্থ:
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে ঈসা (আ.)-এর উদাহরণ আদম (আ.)-এর মতো, যাকে তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

১০. দোয়া ও প্রার্থনা:

আয়াত ৮:
আরবি:
“رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا”
অর্থ:
“হে আমাদের রব! আমাদের হৃদয়কে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত করো না, আমাদেরকে হিদায়াত দান করার পর।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর কাছে হিদায়াত ও ঈমানের দৃঢ়তা চাওয়ার জন্য দোয়া শেখানো হয়েছে।

এই আয়াতগুলো সূরা আল ইমরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতিফলন ঘটায় এবং মুসলিমদের জন্য গভীর শিক্ষা ও নির্দেশনা বহন করে।