You are currently viewing ভ্রাতৃত্বের করুণ পরিণতি বনাম অশান্ত পৃথিবী- আলানূর হোসাঈন
ভ্রাতৃত্বের করুণ পরিণতি বনাম অশান্ত পৃথিবী

ভ্রাতৃত্বের করুণ পরিণতি বনাম অশান্ত পৃথিবী- আলানূর হোসাঈন

ভ্রাতৃত্বের করুণ পরিণতি বনাম অশান্ত পৃথিবী

মহান সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীতে মানব জাতি সৃষ্টি করেছেন এক আদম (আ) থেকে। আজ ধরণীতে লক্ষ কোটি মানুষের বসবাস। প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা বংশ পরিচয়, রূপে জ্ঞানেও আলাদা। চিন্তা-চেতনার সাথেও কারো পূর্ণ মিল নেই।

নানা বৈশিষ্ট্যে সৃষ্টি করবার পরও কিছু বিষয় এক ও অভিন্ন ঘোষণা করেছেন। মানব জাতির জীবন পরিচালনার ম্যানুয়াল হলো আল-কুরআন। আর যারা আল কুরআনের বাণী ঈমানের সাথে মেনে নিবেন, তারাই হলো মুসলমান। আর মুসলমানরা হল পরস্পর ভাই ভাই তথা পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে থাকবে। এখানে আপন রক্তের ভাইয়ের কথা বলা হয়নি।

রাসূল (স) পরিস্কার বলেছেন , এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। আপন ভাই বোনের প্রতি যেরকম সম্মান, প্রেম-ভালোবাসা, মমতা থাকবে তেমনি অপর মুসলমানের জন্যও অনুরূপ সম্মান, ভালোবাসা, প্রেম, মমতা থাকবে। মায়ের পেটের ভাইয়ের কষ্টে যেমন ব্যাথিত হই তেমনি একজন মুসলিম ভাইয়ের প্রতিও তেমনটা ব্যাথিত হতে হবে। সে যদি কোন বিপদে থাকে তাকে সাহায্য করতে হবে। তার জন্য হৃদয় কাঁদতে হবে।

রাসূল (স.) এমনও বলেছেন যে,  এক মুসলমান অপর মুসলমাননের হাত ও জিহ্বা থেকে থেকে নিরাপদ থাকবে’’। তিনি আরও বলেছেন, তোমরা ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না আল্লাহকে ভালোবাসবে, তোমরা ততক্ষণ আল্লাহকে ভালোবাসতে পারবে না যতক্ষণ না রাসূল (স.) কে ভালোবাসবে, আর তোমরা ততক্ষণ রাসূল (স.)কে ভালোবাসতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা মানুষকে ভালোবাসবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে অবশ্যই মানুষকে ভালোবাসতে হবে। একটি সমাজ, পরিবার তথা একটি রাষ্ট্রে শান্তি, সুখ, সমৃদ্ধি বয়ে আনতে পারে মানুষের প্রতি মানুষের আন্তরিক ভালোবাসা।

এভাবেই পৃথিবীতে বিরাজ করবে সুখ ও শান্তিময় পরিবেশ। যার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন রাসূল (স) এর সাহাবীগণ। অর্ধ পৃথিবীর খলিফা হয়েও তার প্রজাদের নিজের ভাই ভেবে রাতের অন্ধকারে খবর নিতেন। মুসলিম ভাই হাবসি গোলাম বেলাল (রা) প্রতি তার মালিকের অত্যাচার দেখে আবুবকর (রা) তাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দেন। তাদের অন্তরে কখনো অহংকারের স্থান ছিল না। আজ সেই মুসলিম ভাইয়ে ভাইয়ে করুন অবস্থা। যা জাহেলিয়াতের ঘোর অন্ধকারও হার মেনে যায় এক ভাইয়ের প্রতি অপর ভাইয়ের আচরণ দেখ। এক মুসলিম ভাই বিপদে পরলে আরেক ভাই উপহাস করে, আনন্দ পায়। একজনের উন্নতি দেখে আরেকজন হিংসাত্বক হয়। আরেকজনকে ঠকিয়ে নিজেকে মহান করে।

ক্ষমতা, লোভ, লালসা, বড়ত্ব, আমিত্বের আকাঙ্খা নিজের অজান্তেই নিজের অন্তরে বাসা বাধে এক ভয়ংকর পশুত্ব। যাকে এক পর্যয়ে মানুষ তাকে আপন করে নেয়।এই পশুত্বকে মানুষ ত্যাগ করতে পারে না। ফলে তার মাঝে মায়, মমতা, দ্বীন, ধর্ম বিলীণ হতে থাকে। তার মাঝে মনুষত্য থাকে না। তার মতের বিপরিত সহ্য করতে পারে না, নিজেদের মতাদর্শকেই শ্রেষ্ঠ মনে করে। অপর ভাইয়ের প্রতি সহিষ্ণু হতে পারে না। এভাবে ধীরে ধীরে গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে মানব সভ্যতা। ভাতৃত্ব, সভ্যতা, মানবতা এমন পর্যয়ে পৌঁছেছে যে, একটা সুস্থ তরতাজা মানুষকে নির্মম পাশবিতায় পিটিয় পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে অবার উল্লাস করে হিংস্র হায়েনার মত। যেন ক্ষুধার্ত বাগ্রের ন্যায় ছিড়ে ছিড়ে তার মাংস খেতে চাচ্ছে। নারী জাতিকে যেখানে রাসূল (স) মায়ের সম্মান দিয়েছেন আর আজ সেখানে হাজার জনতার সামনে নারীদের বস্ত্র হরণ করে বৈশাখী উৎসব করছে। কোথায় আজ মানবতা, কোথায় ভ্রাতৃত্ব বোধ।

আজ জীবনের মূল্য মাপা হচ্ছে তুচ্ছ টাকা দিয়ে। কেউ কারো থেকে নিরাপদ নয়। ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের প্রেম ভালোবাসা মায়া মমতা দিনে দিনে শুন্যের কোটায় নেমে আসতে শুরু করছে। কেন ভ্রাতৃত্বের এই চরম অবক্ষয় ? রাস্তার পাশে এক ভাইয়ে প্রতি অপর ভাইয়ের অত্যাচার দেখে শত শত মানুষ কোনও প্রতিবাদ না করে দর্শকের মত খেলা দেখছে । কেন মানব সভ্যতার এমন পরিণতি? এর থেকে কি মানব সভ্যতা মুক্তি পাবে না? ভ্রাতৃত্ববোধই পারে এই ভয়ংকর পরিণতি থেকে মুক্তি দিতে।

আরও পড়তে পারেন–দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, সত্য জানুন :: ঘটনার আড়ালে যে ঘটনা

যেসব কারনে ভ্রাত্বের এই চরম অবক্ষয়

১)পারিবারিক ভালোবাসার অভাব ২) ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার অভাব ৩) আল্লাহর ভয় না থাকা। ৪) অভাব-অনটন, ৫) অসৎ বন্ধুত্বের সংস্পর্শ ৬) একাকিত্ব, বেকারত্ব ৭) রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ৮) স্বার্থপরতা ইত্যাদি কারনে মানুষের হৃদয় থেকে ভ্রাতৃত্ববোধ চলে যাচ্ছে।

#পারিবারিক ভালোবাসা থেকে সন্তান বঞ্চিত হচ্ছে। বাবা মা সন্তাদের নৈতিক ও ভদ্রতার শিক্ষা দিতে পারছে না। আবার পারিবারিক কলহ দেখে সন্তান রুষ্ট হচ্ছে।একটি পরিবার হলো একটি সন্তানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে শিশু থেকেই মা, বাবা, ভাই বোনসহ বড়দের থেকে তারা অনুকরণ করে শিখে শিখে বড় হতে থাকে। শিশুরা তাদের সুপ্ত কোমল মনে বড়দের সব কিছু যায়গা করে নেয়। এ জন্য পরিবারে যদি পরিপাটি ও পারস্পারিক ভালোবাসা বিরাজ থাকে , তাদের প্রতিটি কাজ যদি সুন্দর হয় তাহলে শিশুটি এই দেখা ও শোনা থেকে যে শিক্ষা পেলো তা সে সারাজীবন ধরণ করবে।

#দেশের সর্বচ্চ ডিগ্রীধারী এক ভাইয়ের ক্ষতি করে অপর ভাইয়ের থেকে অর্থ আদায় করছে ধর্ম ও নীতি শিক্ষা নেই বলে। #অর্থ নেশায় মানুষ এতটাই অন্ধ হয়েছ যে জন্মদাতা বাবা মাকেও খুন করতে দ্বিধা করছে না সেখান মুসলিম ভাই তো দূরের কথা। #রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে,  যেখানে রাজনৈতিক স্বার্থে অপর ভাইকে ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে। নিরপেক্ষ মন নিয়ে কোন সত্য মিথ্যার যাচাই করা হচ্চে না। সে তার বিরোধী দলের কর্মী সুতরং সে মরুক তাতে কিছু যায় আসে না।  সেখানে সাধারণ মানুষের মাঝে কিভাবে ভ্রাতৃত্ববোধ জন্মাবে?

আরও পড়ুন–আল-কুরআনে জালিমদের পরিচয় ও ভয়াবহ পরিণতি -হামিদ হোসাঈন মাহদী

#মানুষ সদা নিজের স্বার্থ নিয়েই পরে থাকে, ফলে অপর ভাইয়ের খবর রাখেনা, স্বার্থ উদ্ধারে সে যা খুশি তাই করতে পারে। এসব কারনে ভাতৃত্বের অবক্ষয় চরম রুপ ধারণ করছে। আজ যদি ভ্রাতৃত্ব বোধ থাকত তাহলে বিশ্বজিৎকে নির্মম ভাবে খুন হতে হত না, কিশোর রাজনদের আত্ম চিৎকার এখনো কানে ভেসে অসত না, ২৮ অক্টবর পিটিয়ে হত্যা করে লাশের উপর নৃত্য দেখতে হত না, বিয়ানি বাজার পিটিয়ে হত্যা হত না, বৈশাখী উৎসবে হাজার জনতার সামনে নারীকে উলঙ্গ করতো না।

অতএব আমরা যদি নিজেদের সৃষ্টির সেরা মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে চাই,  তবে আসুন আমরা পরস্পরকে বুকে টেনে আপন করে নেই। নিজেদের অন্তর থেকে আমিত্ব, বড়ত্ব, অহংবোধ ঝেড়ে ফেলে দেই।  কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরস্পরকে ভালোবেসে সুখে- দুঃখে এগিয়ে আসি। সবাইকে আপন ভাই মনে করি। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে অটুট থেকে গড়ে তুলি এক সুন্দর সোনালী সুখময় আবাসভুমি প্রিয় বাংলাদেশ।। আর মৃত্যুর পর একসাথে থাকতে চাই জান্নাতে।

আলানূর হোসাঈন