You are currently viewing ঈদ উপহার-তিনে একে এক-ছোটগল্প-নাসীমুল বারী
ঈদ উপহার-ছোটগল্প-

ঈদ উপহার-তিনে একে এক-ছোটগল্প-নাসীমুল বারী

ঈদ উপহার-১ (ছোটগল্প-২১)

তিনে একে এক

নাসীমুল বারী 

আচমকা ব্রেক কষে সাইকেলটা লাগিয়ে দেয় রাফির পায়ে। রাফি পড়ে যায় মাঠে। অট্টহাসি দিয়ে ওঠে শিমুল। হাইয়ান তাড়াতাড়ি সাইকেল থেকে নেমে রাফিকে তুলতে তুলতে বলে, আহারে, মাঠে এক্সিডেন্ট করলি! রোডে করলেই না জাকির স্যারের ক্লাসে একটা প্যারাগ্রাফ লেখতে পারতাম ‘এ রোড এক্সিডেন্ট’। চাক্ষুস দেখা এক্সিডেন্ট তো!

উঠতে উঠতে রাফি বলে, ফাজলামি করছ!

তারপরই ঘুরে একটা ঘুসি মারে। হাইয়ান এক পা সরে যায়। ঘুসিটা গিয়ে পড়ে শিমুলের ঊর্ধবাহুতে। অমনি সে রাফির কলারটা টেনে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, এ্যাই আমারে মারলি ক্যা।

এক ঝাটকায় হাতটা ছাড়িয়ে রাফি বলে, অইছে একই কথা, সবাই সাধু তো।

অট্টহাসি দিয়ে ওঠে হাইয়ান। তারপরই শিমুলকে বলে, কিরে শিমুল, অপরাধের সাজা পেলি? ভালো ভালো।

ঠিক তখনই রাফি দৌড়ে এসে একটা ফ্লাইংকিক মারে হাইয়ানকে। সাথে সাথে শিমুল হাসতে হাসতে বলে, এবার ঠিক ঠিক অপরাধী সাজা পেয়েছে।

তারপরই সবাই হাসিতে ফেটে পড়ে।

রাফি, হাইয়ান ও শিমুল- তিন বন্ধু। কৈশোরের চঞ্চলতায় উদ্যাম ওরা।

লেখাপড়ায়ও মনযোগী। ক্লাসে সাতের মধ্যেই থাকে; তবে কোচিং, প্রাইভেট কিংবা ফেসবুকের কয়েদি হতে ইচ্ছুক না। তাই তো বিকেলে বা স্কুলছুটিতে সাইকেল নিয়ে বেড়াবেই। শুধু যে চালাবেই, তা নয়; ঘুরে ঘুরে শহরের নানান দর্শনীয় স্থানে যাবে। দেখবে। ওসব সম্পর্কে জানবে।

আজ যাবে এনার্জি পার্ক দেখতে।

দোয়েলচত্ত্বরের কোণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ পার্কটি নিয়ে ওদের দারুণ কৌতূহল। মূলত সৌরশক্তি নিয়ে নানাবিদ গবেষণা, অধ্যয়ন আর চর্চার কেন্দ্র এটি। সেই কৌতূহল মেটাতেই আজকের সকালের প্রোগ্রাম এনার্জিপার্ক দেখা। স্পোর্সের জন্য আজ স্কুল বন্ধ। নিজেদের পড়াশোনা শেষ করে এগারটায় সবাই মিলিত হলো এলাকার মাঠে। সবাই-ই সাইকেল নিয়ে আসবে। কিন্তু একি! হাইয়ান ছাড়া আর কেউ সাইকেল আনেনি। ব্যাপার কী! এদিক ওদিক তাকায়। কোথাও রাখল কী আবার? না, নেই। একটু চমক জাগানো ভাব নিয়ে হাইয়ান দুজনকেই জিজ্ঞেস করে, এতক্ষণের প্যারায় তো খেয়ালই করিনি। তোদের সাইকেল?

দুজনেই মিটি মিটি হাসছে। হাইয়ান আবার বলে কিরে সাইকেলের মতো নিজেরাই পাংচার হয়ে গেলি নাকি? তাহলে আজকের ট্যুর!

রাফি সাথে সাথে জবাব দেয়, আরে তালা তালা! কঠিন তালা! তালাতেই পাংচার!

-মানে! কে মারলো? খালু বুঝি? কেনরে?

সাথে সাথে শিমুল বলে, দেখ কারো বাবা সম্পর্কে খারাপ ধারণা করবি না। এটা একটা বিশ্রি ব্যাপার।

আরও পড়ুন–সংজ্ঞা কি? ২৬টি বিষয়ের সংজ্ঞা – নাসীমুল বারী

কাঠ বাদাম । কাজু বাদাম । পেস্তা বাদাম । চিনা বাদাম এর উপকারিতা

-সরি।

শান্ত কণ্ঠে হাইয়ান বলে। এবার রাফি বলে ঘটনাটা।

শিমুলের সাইকেলের গিয়ার সিস্টেমটা ভেঙ্গে গেছে। ঠিক করানোর টাকার ব্যবস্থা করতে পারেনি। তাই তালা মেরে রেখেছে। আর রাফির সাইকেলে আরেক জনে তালা মেরে রেখেছে। কথাটা শুনে চমক নিয়ে হাইয়ান বলে, মানে! আরেক জনে তালা…! কী ব্যাপার!

-সহজ ব্যাপার। এপার্টমেন্টের নিচতলায় সাইকেল রাখি। এক বড়ভাইও পাশে রাখে। আজ উনি রাখতে গিয়ে সম্ভবত বেখেয়ালে আমারটাসহ চেইন পেঁচিয়ে তালা মেরেছে। বড়ভাইকে খুঁজে পেলাম না।

রাফির এ কথায় খটখটিয়ে হেসে দেয় ওরা দুজন। তারপর হতাশ কণ্ঠে হাইয়ান বলে, মানে আজকের প্ল্যান বাদ তাহলে? আজকের ট্যুরও বাদ!

রাফি ঝটপট বলে, আরে ধ্যাত! এত অল্পতেই হতাশ হলে চলে নাকি! সমস্যাকে নিয়ে হতাশ হলে কি হয়? তাতে তো কোনো সমাধানই হবে না! সমস্যা যখন হয়েছে, সমাধান হবেই। ট্যুরও হবে।

তারপরই সিদ্ধান্ত হয় ওরা রিকসায় চড়ে যাবে। রিকসায় চড়ার ব্যাপারে হাইয়ান বলে, তোরা দু’জন সিটে বসবি। আমি তোদের মাঝ দিয়ে উপরে বসব।

শিমুল বলে, মাঝখানে কেন? একপাশে বসলেই না ইজি হবে।

-ধ্যাত, সে জন্যে না তো। আমি মাঝে উপরে বসলে একটা গাণিতিক প্রতিক হবে। বলত কী?

হাইয়ানের এ কথায় দুজনে একটু ভাবে। ক্ষণিক পরেই রাফি-শিমুল একসাথেই বলে ফেলে, ‘সুতরাং’।

বলেই হেসে পড়ে তিনজনই। হাসতে হাসতে শিমুল বলে, তুই মাঝে মাঝে মজার কথা বলিস।

সাথে সাথেই হাইয়ান বলে, বলত কোন ফল কাঁচা অবস্থায় গাছ থেকে পেড়ে, কেটে সরাসরি খাই আমরা। পাকলে আর গাছ থেকে পেড়ে খাই না। কোনো উপায়ে সংগ্রহ করলেও সরাসরি খাই না, রান্না করে খাই।

-ফল না সবজি?

রাফি জিজ্ঞেস করে।

-ফল। খাঁটি ফল।

সাথে শিমুল বলে, কাঁঠাল।

শিমুলের ও কথা শুনে হাইয়ান মিটি মিটি হাসে। রাফি শিমুলকে বলে, মনে হয় তোরটা উল্টো হয়েছে। কাঁঠাল তো কাঁচা রান্না করা হয়। আর ও বলেছে পাকাটা রান্না করা হয়।

-তাই তো! ছোটগল্প

এবার আর ঝটপট উত্তর দিতে পারে না।

রিকসায় যেতে হলে তো হাইয়ানের সাইকেলটা রাখতে হবে কোথাও। কী করবে এখন- ভাবছে। ভাবনার মাঝেই রাফি বলে, নামতো হাইয়ান।

হাইয়ান নামে। রাফি সাইকেলে চড়ে সামনে পিছনে দুজনকে নিয়ে তিনজনে চলে আসে হাইয়ানের বাসায়। সাইকেল রেখে তিনজনেই রিকসায় চড়ে যায় এনার্জি পার্কে। যেতে যেতে হাইয়ান বলে, বলতে পারলি না তো ফলের নামটা!

রাফি বলে, আচ্ছা বল আমাকে। পুরস্কার হিসেবে তুই যে এক্সিডেন্ট করেছিস, সেটা ক্ষমা করে দেব।

-শিমুল কী দিবিরে?

-প্রোটেক্ট দেব।

-প্রোটেক্ট! কিসের প্রোটেক্ট!

-রাফি যাতে ওর ‘ক্ষমা’টা উইড্রো না করে, সেটা।

অট্টহাসি দিয়ে ওঠে হাইয়ান-রাফি। তারপরই হাইয়ান বলে, আচ্ছা বুঝলাম। শোন, সে ফলটা হলো…! কিরে বলব…?

-দেখ, মেজাজ খারাপ করিস না।

-তাল। কচি তাল গাছ থেকে পেড়ে আমরা কাঁচাই খাই। কিন্তু পাকা তাল কখনো গাছ থেকে পাড়া হয় না। পেকে ওটা গাছ থেকে নিজে নিজেই পড়ে। তারপর সংগ্রহ করা পাকা তাল রান্না করে খাওয়া হয়।

-ইস্, তাল-নারকেল-মুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে রে!

শিমুল বলে। ছোটগল্প

-নাম, নাম, তাল-মুড়ি খেতে হবে না।

নেমে পড়ে ওরা এনার্জিপার্কের সামনে। ঘুরে ঘুরে দেখে সৌরবিদ্যুতের বিভিন্ন প্রকল্প। বিভিন্নভাবে সোলার চিপস সূর্যের দিকে তাক করে সাজানো। ওগুলোই সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুত নিংড়ে নিয়ে আমাদেরকে দিচ্ছে। বিদ্যুত নিংড়ানো সে কায়দা নিয়েই নিরন্তর গবেষণা চলছে এখানে। কৌতূহল আর মুগ্ধতায় এখানে কাটে কিছু সময় ওদের।

দেখা শেষে দোয়েল চত্ত্বরের কোণায় এসে দাঁড়ায় তিনজনে। রাফি বলে এবার কোথায় যাবি- ভাবছিস? হঠাৎ হাইয়ান বলে, ‘ভাষণচত্ত্বর’টা দেখে আসি।

-ভাষণচত্ত্বর!

চমকে জিজ্ঞেস করে ওরা দুজনেই। তারপরই শিমুল বলে- এমন কিছুর নাম তো শুনিনি!

-আরে বোকা বন্ধুরা, তোদের সাথে কথাই বলা যাবে না।কিচ্ছু টার্মও বুঝিস না।

-বলেন, প্লিজ স্যার! বুঝে নেই আপনার টার্মিং কথা!

কথাটা বলে। হেসে ওঠে দুজনে। হাইয়ান হেসে কাছে টেনে বলে, হে প্রিয় বৎসরা শোনো।

-জ্বী বলেন।

শান্ত শিষ্যের মতো বলে দুজনে।

-তোমরা কি জান না ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণস্থল কোথায়?

হো, হো, হো…। হেসে দেয় ওরা। ‘সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের স্বাধীনতা চত্ত্বর! তা এ নাম পেলি কইরে?’ দুজনেই একসাথে বলে ওঠে।

-মনে এলো বললাম। জানিস তো ওটা আমাদের অস্তিত্বের শেকড়! শেকড়সন্ধানী অস্তিত্বের উৎসস্থলটা দেখার ও জানার জন্যে যাব ওদিকে, বুঝলি?

-আচ্ছা, তাই তো! চল যাই।

কথাটা বলেই রাফি একটা রিকসা ডাকে। হাইয়ান থামিয়ে বলে, এতটুকুন রাস্তা রিকসায় যাবি!

-কেমনে যাব?

সাথে সাথেই প্রশ্ন করে রাফি। হাইয়ান ওর কানটা টেনে বলে, এই যে বৎস শুনো, আমরা যাব, ‘জার্নি বাই ঠ্যাং’এ!

-জ্বী স্যার, কী ‘জার্নি’র রচনা যেন লিখতে বললেন?

-রচনা লেখা নয়, রচনা এ্যাপ্লাই করতে হবে।

তারপর হাসতে হাসতেই হাইয়ান বলে, চল্ চল্ যাই ‘জার্নি বাই ঠ্যাং’এ!

ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ | ঈদ উপহার বিতরণ | প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার | ছোট গল্প। শিশুদের গল্প। গল্প ।

Leave a Reply