You are currently viewing কাজী নজরুল ইসলামের জাগরণী ১৪টি বিদ্রোহী কবিতা গান- ভিডিও
কাজী নজরুল ইসলামের জগরণী ১৪টি বিদ্রোহী কবিতা

কাজী নজরুল ইসলামের জাগরণী ১৪টি বিদ্রোহী কবিতা গান- ভিডিও

বিদ্রোহী কবিতা- তোরা সব জয়ধ্বনি কর

প্রলয়োল্লাস

কাজী নজরুল ইসলামের জগরণী ১৪টি বিদ্রোহী কবিতা

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বোশেখির ঝড়।

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

বিদ্রোহী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

আস্‌ছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য-পাগল,

সিন্ধু-পারের সিংহ-দ্বারে ধমক হেনে ভাঙ্ল আগল।

মৃত্যু-গহন অন্ধ-কূপে

মহাকালের চণ্ড-রূপে–

ধূম্র-ধূপে

বজ্র-শিখার মশাল জ্বেলে আস্‌ছে ভয়ঙ্কর–

ওরে ঐ হাস্ছে ভয়ঙ্কর!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

বিদ্রোহী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ঝামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপ্‌টা মেরে গগন দুলায়,

সর্বনাশী জ্বালা-মুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায়!

বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে

রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে

দোদুল্‌ দোলে!

অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর–

ওরে ঐ স্তব্ধ চরাচর!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

বিদ্রোহী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

দ্বাদশ রবির বহ্নি-জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন-কটায়,

দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!

বিন্দু তাহার নয়ন-জলে

সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে

কপোল-তলে!

বিশ্ব-মায়ের আসন তারি বিপুল বাহুর ‘পর–

হাঁকে ঐ ‘জয় প্রলয়ঙ্কর!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

মাভৈ মাভৈ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে!

জরায়-মরা মুমূর্ষদের প্রাণ লুকানো ঐ বিনাশে!

এবার মহা-নিশার শেষে

আস্‌বে ঊষা অরুণ হেসে

করুণ বেশে!

দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু চাঁদের কর,

আলো তার ভর্‌বে এবার ঘর।

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

একটি বিদ্রোহী কবিতা ‘’কসম’’ -কবি আবদুল হাই সিকদার

ঐ সে মহাকাল-সারথি রক্ত-তড়িত-চাবুক হানে,

রণিয়ে ওঠে হ্রেষার কাঁদন বজ্র-গানে ঝড়-তুফানে!

খুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!

গগন-তলের নীল খিলানে।

অন্ধ করার বন্ধ কূপে

দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যূপে

পাষাণ স্তূপে!

এই তো রে তার আসার সময় ঐ রথ-ঘর্ঘর–

শোনা যায় ঐ রথ-ঘর্ঘর।

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? –প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!

আসছে নবীন– জীবন-হারা অ-সুন্দরে কর্‌তে ছেদন!

তাই সে এমন কেশে বেশে

প্রলয় বয়েও আস্‌ছে হেসে–

মধুর হেসে!

ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চির-সুন্দর!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

ঐ ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!–

বধূরা প্রদীপ তুলে ধর্!

কাল ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর!–

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

নজরুল সংগীত তোরা সব জয়ধ্বনি কর – ভিডিও


কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

বিদ্রোহী কবিতা- কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

কারার ঐ লৌহকপাট,

ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,

রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।

ওরে ও তরুণ ঈশান,

বাজা তোর প্রলয় বিষাণ

ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

গাজনের বাজনা বাজা,

কে মালিক, কে সে রাজা,

কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?

হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান পরবে ফাঁসি,

সর্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে!

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

ওরে ও পাগলা ভোলা,

দে রে দে প্রলয় দোলা,

গারদগুলা জোরসে ধরে হেচ্কা টানে

মার হাঁক হায়দারী হাঁক, কাধে নে দুন্দুভি ঢাক

ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে।

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

নাচে ওই কালবোশাখী,

কাটাবী কাল বসে কি

দেরে দেখি ভীম ারার ঐ ভিত্তি নাড়ি

লাথি মার ভাঙ্গরে তালা,

যত সব বন্দী শালায়-আগুন-জ্বালা, আগুন-জ্বালা,

ফেল উপাড়ি।।

কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল — ভিডিও সংগীত


কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

বিদ্রোহী কবিতা- কান্ডারী হুশিয়ার

 

দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার

লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,

ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?

কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।

এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!

যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।

ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,

ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন

কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন।

হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?

কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার

 

গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ,

পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!

কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?

করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার!

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,

বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!

ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!

উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার।

 

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,

আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান

আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?

দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!

দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার–সংগীত

বিদ্রোহী কবিতা- এক আল্লাহ জিন্দাবাদ

 

উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ;

আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।

উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,

আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ।

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই;

নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই!

ওরা মরিবেনা, যুদ্ব বাধিঁলে ওরা লুকাইবে কচুবনে,

দন্তনখরহীন ওরা তবু কোলাহল করে অঙ্গনে।

 

ওরা নির্জীব; জিব নাড়ে তবু শুধূ স্বার্থ ও লোভবশে,

ওরা জিন, প্রেত, যজ্ঞ, উহারা লালসার পাঁকে মুখ ঘষে।

মোরা বাংলার নব যৌবন,মৃত্যুর সাথে সন্তরী,

উহাদের ভাবি মাছি পিপীলিকা, মারি না ক তাই দয়া করি।

 

মানুষের অনাগত কল্যাণে উহারা চির অবিশ্বাসী,

অবিশ্বাসীরাই শয়তানী-চেলা ভ্রান্ত-দ্রষ্টা ভুল-ভাষী।

ওরা বলে, হবে নাস্তিক সব মানুষ, করিবে হানাহানি।

মোরা বলি, হবে আস্তিক, হবে আল্লাহ মানুষে জানাজানি।

 

উহারা চাহুক অশান্তি; মোরা চাহিব ক্ষমাও প্রেম তাহার,

ভূতেরা চাহুক গোর ও শ্মশান, আমরা চাহিব গুলবাহার!

আজি পশ্চিম পৃথিবীতে তাঁর ভীষণ শাস্তি হেরি মানব

ফিরিবে ভোগের পথ ভয়ে, চাহিবে শান্তি কাম্য সব।

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

হুতুম প্যাচারা কহিছে কোটরে, হইবেনা আর সূর্যোদয়,

কাকে আর তাকে ঠোকরাইবেনা, হোক তার নখ চষ্ণু ক্ষয়।

বিশ্বাসী কভু বলেনা এ কথা, তারা আলো চায়, চাহে জ্যোতি;

তারা চাহে না ক এই উৎপীড়ন এই অশান্তি দূর্গতি।

 

তারা বলে, যদি প্রার্থনা মোরা করি তাঁর কাছে এক সাথে,

নিত্য ঈদের আনন্দ তিনি দিবেন ধুলির দুনিয়াতে।

সাত আসমান হতে তারা সাত-রঙা রামধনু আনিতে চায়,

আল্লা নিত্য মহাদানী প্রভূ, যে যাহা চায়, সে তাহা পায়।

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

যারা অশান্তি দুর্গতি চাহে, তারা তাই পাবে, দেখো রে ভাই,

উহারা চলুক উহাদের পথে, আমাদের পথে আমরা যাই।

ওরা চাহে রাক্ষসের রাজ্য, মেরা আল্লার রাজ্য চাই,

দ্বন্দ্ব-বিহীন আনন্দ-লীলা এই পৃথিবীতে হবে সদাই।

 

মোদের অভাব রবে না কিছুই, নিত্যপূর্ণ প্রভূ মোদের,

শকুন শিবার মত কাড়াকাড়ি করে শবে লয়ে– শখ ওদের!

আল্লা রক্ষা করুন মোদেরে, ও পথে যেন না যাই কভূ,

নিত্য পরম-সুন্দর এক আল্লাহ্ আমাদের প্রভূ।

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

পৃথিবীতে যত মন্দ আছে তা ভালো হোক, ভালো হোক ভালো,

এই বিদ্বেষ-আঁধার দুনিয়া তাঁর প্রেমে আলো হোক, আলো।

সব মালিন্য দূর হয়ে যাক সব মানুষের মন হতে,

তাঁহার আলোক প্রতিভাত হোক এই ঘরে ঘরে পথে পথে।

 

দাঙ্গা বাঁধায়ে লুট করে যারা, তার লোভী, তারা গুন্ডাদল

তারা দেখিবেনা আল্লাহর পথ চিরনির্ভয় সুনির্মল।

ওরা নিশিদিন মন্দ চায়, ওরা নিশিদিন দ্বন্দ চায়,

ভূতেরা শ্রীহীন ছন্দ চায়, গলিত শবের গন্ধ চায়!

 

তাড়াবে এদের দেশ হতে মেরে আল্লার অনাগত সেনা,

এরাই বৈশ্য, ফসল শৈস্য লুটে খায়, এরা চির চেনা।

ওরা মাকড়সা, ওদের ঘরের ঘেরোয়াতে কভু যেয়ো না কেউ,

পর ঘরে থাকে জাল পেতে, ওরা দেখেনি প্রাণের সাগর ঢেউ।

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

বিশ্বাস করো এক আল্লাতে প্রতি নিঃশ্বাসে দিনে রাতে,

হবে দুলদুল – আসওয়ার পাবে আল্লার তলোয়ার হাতে।

আলস্য আর জড়তায় যারা ঘুমাইতে চাহে রাত্রিদিন,

তাহারা চাহে না চাঁদ ও সূর্য্য, তারা জড় জীব গ্লানি-মলিন।

 

নিত্য সজীব যৌবন যার, এস এস সেই নৌ-জোয়ান

সর্ব-ক্লৈব্য করিয়াছে দূর তোমাদেরই চির আত্বদান!

ওরা কাদা ছুড়ে বাঁধা দেবে ভাবে – ওদের অস্ত্র নিন্দাবাদ,

মোরা ফুল ছড়ে মারিব ওদের, বলিব – এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।

এক আল্লাহ জিন্দাবাদ- আবৃত্তি মতিউর রহমান মল্লিক

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

বিদ্রোহী কবিতা- জাগো রে তরুণ জাগো রে ছাত্রদল 

 

জাগরণী

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

জাগো রে তরুণ জাগো রে ছাত্রদল

স্বতঃ উৎসারিত ঝর্ণাধারায় প্রায় জাগো প্রাণ-চঞ্চল

ভেদ-বিভেদের গ্লানির কারা-প্রাচীর

ধুলিসাৎ করি জাগো উন্নত শির

জবাকুসুম-সঙ্কাশ জাগে বীর,

বিধি নিষেধের ভাঙ্গো ভাঙ্গো অর্গল।

ধর্ম বর্ণ জাতির ঊর্ধ্বে জাগো রে নবীন প্রাণ

তোমার অভ্যুদয়ে হোক সব বিরোধের অবসান

সঙ্কীর্ণতা ক্ষুদ্রতা ভোলো ভোলো

সকল মানুষে ঊর্ধ্বে ধরিয়া তোলো

তোমাদের চাহে আজ নিখিল জনসমাজ

আনো জ্ঞানদীপ এই তিমিরের মাঝ,

বিধাতার সম জাগো প্রেম প্রোজ্জ্বল।

কবিতা । প্রেমের কবিতা । বিদ্রোহী কবিতা । ভালোবাসার কবিতা । 

বিদ্রোহী কবিতা- চল্ চল্ চল্

কবর কবিতা – বনলতা সেন কবিতা -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

চল্ চল্ চল্।

ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল,

নিম্নে উতলা ধরণী-তল,

অরুণ প্রাতের তরুণ-দল

চলের চলের চল্

চল্ চল্ চল্।

ঊষার দুয়ারে হানি’ আঘাত

আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,

আমরা টুটাব তিমির রাত

বাধার বিন্ধ্যাচল।

কবর কবিতা – বনলতা সেন কবিতা -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

নব নবীনের গাহিয়া গান

সজীব করিব মহাশ্মশান,

আমরা দানির নতুন প্রাণ

বাহুতে নবীন বল।

চলের নৌ-জোয়ান,

শোনরে পাতিয়া কান

মৃত্যু-তোরণ দুয়ারে দুয়ারে

জীবনের আহ্বান।

রণ সংগীত – চল্ চল্ চল্ – আসিফ আকবর

বিদ্রোহী কবিতা- মোরা ঝঞ্চার মত উদ্দ্যাম

 

মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম

মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল,

মোরা বিধাতার মত নির্ভয়

মোরা প্রকৃতির মত স্বচ্ছল।।

মোরা আকাশের মত বাঁধাহীন

মোরা মরু সঞ্চার বেদুঈন,

বন্ধনহীন জন্ম স্বাধীন

চিত্তমুক্ত শতদল।।

মোরা সিন্ধু জোঁয়ার কলকল

মোরা পাগলা জোঁয়ার ঝরঝর।

কল-কল-কল, ছল-ছল-ছল

মোরা দিল খোলা খোলা প্রান্তর,

মোরা শক্তি অটল মহীধর।

হাসি গান শ্যাম উচ্ছল

বৃষ্টির জল বনফল খাই-

শয্যা শ্যামল বনতল।।

মোরা ঝঞ্চার মত উদ্দ্যাম – বাংলাদেশ সেনাবাহিনী


কবর কবিতা – বনলতা সেন কবিতা -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

বিদ্রোহী কবিতা- নতুন পথের যাত্রা-পথিক চালাও অভিযান

অভিযান

কবর কবিতা – বনলতা সেন কবিতা -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

নতুন পথের যাত্রা-পথিক

চালাও অভিযান!

উচ্চ কণ্ঠে উচ্চার আজ –

“মানুষ মহীয়ান!”

চারদিকে আজ ভীরুর মেলা,

খেলবি কে আর নতুন খেলা?

জোয়ার জলে ভাসিয়ে ভেলা

বাইবি কি উজান?

পাতাল ফেড়ে চলবি মাতাল

স্বর্গে দিবি টান্।।

কবর কবিতা – বনলতা সেন কবিতা -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

সরল সাজের নাইরে সময়

বেরিয়ে তোরা আয়,

আজ বিপদের পরশ নেব

নাঙ্গা আদুল গায়।

 

আসবে রণ-সজ্জা করে,

সেই আশায়ই রইলি সবে!

রাত পোহাবে প্রভাত হবে

গাইবে পাখি গান।

আয় বেরিয়, সেই প্রভাতে

ধরবি যারা তান।।

কবর কবিতা – বনলতা সেন কবিতা -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

আঁধার ঘোরে আত্নঘাতী

যাত্র-পথিক সব

এ উহারে হানছে আঘাত

করছে কলরব!

অভিযানে বীর সেনাদল!

জ্বালাও মশাল, চল্ আগে চল্।

কুচকাওয়াজের বাজাও মাদল,

গাও প্রভাতের গান!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

ঊষার দ্বারে পৌছে গাবি

‘জয় নব উত্থান!’

 

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

বিদ্রোহী কবিতা- বল বীর –বল উন্নত মম শির!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

বল        বীর –
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল        বীর –
বল   মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
মম   ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা
বল        বীর –
আমি   চির উন্নত শির!

আমি   চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা-    প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি   মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি   দুর্বার,
আমি   ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি   অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি   দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি   মানি না কো কোন আইন,
আমি   ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি   ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর
আমি   বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!
বল        বীর –
চির-উন্নত মম শির!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

আমি  ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি,
আমি   পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’।
আমি  নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি   আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি   হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি   চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’
ফিং দিয়া দিই তিন দোল;
আমি   চপলা-চপল হিন্দোল।
আমি   তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা,
করি    শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা,
আমি   উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা!
আমি   মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর;
আমি   শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর!
বল        বীর –
আমি  চির উন্নত শির!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

আমি চির-দুরন্ত দুর্মদ,
আমি   দুর্দম, মম প্রাণের পেয়ালা হর্দম হ্যায় হর্দম ভরপুর মদ।

আমি   হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক জমদগ্নি,
আমি   যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি।
আমি   সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি   অবসান, নিশাবসান।
আমি   ইন্দ্রাণী-সুত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য
মম      এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর রণ-তূর্য;
আমি   কৃষ্ন-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা-বারিধীর।
আমি   ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল        বীর –
চির –           উন্নত মম শির!

আমি    সন্ন্যাসী, সুর-সৈনিক,
আমি    যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক।
আমি    বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,
আমি    আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
আমি    বজ্র, আমি ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার,
আমি    ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা হুঙ্কার,
আমি    পিণাক-পাণির ডমরু ত্রিশূল, ধর্মরাজের দন্ড,
আমি    চক্র ও মহা শঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড!
আমি    ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি    দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব।
আমি    প্রাণ খোলা হাসি উল্লাস, – আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস,
আমি    মহা প্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু গ্রাস!
আমি    কভূ প্রশান্ত কভূ অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি    অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্পহারী!
আমি    প্রভোন্জনের উচ্ছ্বাস, আমি বারিধির মহা কল্লোল,
আমি উদ্জ্বল, আমি প্রোজ্জ্জ্বল,
আমি    উচ্ছ্বল জল-ছল-ছল, চল-ঊর্মির হিন্দোল-দোল!

আমি    বন্ধন-হারা কুমারীর বেণু, তন্বী-নয়নে বহ্ণি
আমি    ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি    বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা হুতাশ আমি হুতাশীর।
আমি    বন্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি    অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ – জ্বালা, প্রিয় লান্চিত বুকে গতি ফের
আমি    অভিমানী চির ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়
চিত      চুম্বন-চোর কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম প্রকাশ কুমারীর!
আমি    গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল-ক’রে দেখা অনুখন,
আমি    চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা’র কাঁকন-চুড়ির কন-কন!
আমি    চির-শিশু, চির-কিশোর,
আমি    যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচড় কাঁচলি নিচোর!
আমি    উত্তর-বায়ু মলয়-অনিল উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি    পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া।
আমি    আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি
আমি    মরু-নির্ঝর ঝর ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি!
আমি    তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ আমি উন্মাদ!
আমি    সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!

আমি    উথ্থান, আমি পতন, আমি অচেতন-চিতে চেতন,
আমি    বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয়-কেতন।
ছুটি          ঝড়ের মতন করতালি দিয়া
স্বর্গ মর্ত্য-করতলে,
তাজী    বোররাক আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে!

আমি    বসুধা-বক্ষে আগ্নিয়াদ্রি, বাড়ব-বহ্ণি, কালানল,
আমি    পাতালে মাতাল অগ্নি-পাথার-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি    তড়িতে চড়িয়া উড়ে চলি জোর তুড়ি দিয়া দিয়া লম্ফ,
আমি    ত্রাস সন্চারি ভুবনে সহসা সন্চারি’ ভূমিকম্প।

ধরি   বাসুকির ফণা জাপটি’ –
ধরি     স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি’।
আমি    দেব শিশু, আমি চঞ্চল,
আমি   ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব মায়ের অন্চল!
আমি    অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা-     সিন্ধু উতলা ঘুমঘুম
ঘুম      চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝঝুম
মম     বাঁশরীর তানে পাশরি’
আমি  শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি   রুষে উঠি’ যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে    সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি   বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

আমি   শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা,
কভু    ধরনীরে করি বরণীয়া, কভু বিপুল ধ্বংস-ধন্যা-
আমি   ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি   অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি   ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণী!
আমি   ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি   জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!

আমি   মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি   অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়।
আমি   মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি   তাথিয়া তাথিয়া মাথিয়া ফিরি স্বর্গ-পাতাল মর্ত্য!
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!!

আমি   পরশুরামের কঠোর কুঠার
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম-স্কন্ধে
আমি     উপাড়ি’ ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।
মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে       উত্‍পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না –
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না –
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।

আমি     বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি     স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি     বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি     খেয়ালী-বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!

আমি চির-বিদ্রোহী বীর –
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

বিদ্রোহী কবিতা- দুঃশাষনের রক্ত পান

 

বল রে বন্য হিংস্র বীর,

দুঃশাসনের চাই রুধির।

চাই রুধির রক্ত চাই,

ঘোষো দিকে দিকে এই কথাই

দুঃশাসনের রক্ত চাই!

দুঃশাসনের রক্ত চাই!!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

অত্যাচারী সে দুঃশাসন

চাই খুন তার চাই শাসন,

হাঁটু গেড়ে তার বুকে বসি

ঘাড় ভেঙে তার খুন শোষি।

আয় ভীম আয় হিংস্র বীর,

কর অ-কণ্ঠ পান রুধির।

ওরে এ যে সেই দুঃশাসন

দিল শত বীরে নির্বাসন,

কচি শিশু বেঁধে বেত্রাঘাত

করেছে রে এই ক্রূর স্যাঙাত।

মা-বোনেদের হরেছে লাজ

দিনের আলোকে এই পিশাচ।

বুক ফেটে চোখে জল আসে,

তারে ক্ষমা করা? ভীরুতা সে!

হিংসাশী মোরা মাংসাশী,

ভণ্ডামি ভালবাসাবাসি!

শত্রুরে পেলে নিকটে ভাই

কাঁচা কলিজাটা চিবিয়ে খাই!

মারি লাথি তার মড়া মুখে,

তাতা-থৈ নাচি ভীম সুখে।

 

নহি মোরা ভীরু সংসারী,

বাঁধি না আমরা ঘরবাড়ি।

দিয়াছি তোদের ঘরের সুখ,

আঘাতের তরে মোদের বুক।

যাহাদের তরে মোরা চাঁড়াল

তাহারাই আজি পাড়িছে গা’ল!

তাহাদের তরে সন্ধ্যা-দীপ.

আমাদের আন্দামান-দ্বীপ!

তাহাদের তরে প্রিয়ার বুক

আমাদের তরে ভীম চাবুক।

তাহাদের ভালবাসাবাসি,

আমাদের তরে নীল ফাঁসি।

বরিছে তাদের বাজিয়া শাঁখ,

মোদের মরণে নিনাদে ঢাক।

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

জীবনের ভোগ শুধু ওদের,

তরুণ বয়সে মরা মোদের।

কার তরে ওরে কার তরে

সৈনিক মোরা পচি মরে?

কার তরে পশু সেজেছি আজ,

অকাতরে বুক পেতে নি বাজ।

ধর্মাধর্ম কেন যে নাই

আমাদের, তাহা কে বোঝে ভাই?

কেন বিদ্রোহী সব-কিছুর?

সব মায়া কেন করেছি দূর?

কারে ক’স মন সে-ব্যথা তোর?

যার তরে চুরি বলে চোর।

যার তরে মাখি গায়ে কাদা,

সেই হয় এসে পথে বাধা।

 

ভয় নাই গৃহী! কোরো না ভয়,

সুখ আমাদের লক্ষ্য নয়।

বিরূপাক্ষ যে মোরা ধাতার,

আমাদের তরে ক্লেশ-পাথার।

কাড়ি না তোদের অন্ন-গ্রাস,

তোমাদের ঘরে হানি না ত্রাস;

জালিমের মোরা ফেলাই লাশ,

রাজ-রাজড়ার সর্বনাশ!

ধর্ম-চিন্তা মোদের নয়,

আমাদের নাই মৃত্যু-ভয়!

মৃত্যুকে ভয় করে যারা,

ধর্মধ্বজ হোক তারা।

শুধু মানবের শুভ লাগি

সৈনিক যত দুখভাগী।

ধার্মিক! দোষ নিয়ো না তার,

কোরবানির১ সে, নয় রোজার২ !

তোমাদের তরে মুক্ত দেশ,

মোদের প্রাপ্য তোদের শ্লেষ।

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

জানি জানি ঐ রণাঙ্গন

হবে যবে মোর মৃৎ-কাফন৩

ফেলিবে কি ছোট একটি শ্বাস?

তিক্ত হবে কি মুখের গ্রাস?

কিছুকাল পরে হাড্‌ডি মোর

পিষে যাবি ভাই জুতিতে তোর!

এই যারা আজ ধর্মহীন

চিনে শুধু খুন আর সঙিন;

তাহাদের মনে পড়িবে কার

ঘরে পড়ে যারা খেয়েছে মার?

ঘরে বসে নিস স্বর্গ-লোক,

মেরে মরে তারে দিস দোজখ৪!

ভয়ে-ভীরু ওরে ধর্মবীর!

আমরা হিংস্র চাই রুধির!

শহতান মোরা? আচ্ছা, তাই।

আমাদের পথে এসো না ভাই।

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

মোদের রক্ত-রুধির-রথ,

মোদের জাহান্নামের পথ,

ছেড়ে দেও ভাই জ্ঞান-প্রবীণ,

আমরা কাফের ধর্মহীন!

এর চেয়ে বেশি কি দেবে গা’ল?

আমরা পিশাচ খুন-মাতাল।

চালাও তোমার ধর্ম-রথ,

মোদের কাঁটার রক্ত-পথ।

আমরা বলিব সর্বদাই

দুঃশাসনের রক্ত চাই!!

 

চাই না ধর্ম, চাই না কাম,

চাই না মোক্ষ, সব হারাম

আমাদের কাছে: শুধু হালাল৫

দুশমন-খুন লাল-সে-লাল॥

শ্লোক আবৃত্তি একাডেমির পরিবেশনায় — দুঃশাসনের রক্ত পান 

 

বিদ্রোহী কবিতা- এস অষ্টমী-পূর্ণচন্দ্র! এস পূর্ণিমা-পূর্ণচাঁদ! 

 

পূর্ণ অভিনন্দন

এস অষ্টমী-পূর্ণচন্দ্র! এস পূর্ণিমা-পূর্ণচাঁদ!

ভেদ করি পুন বন্ধ কারার অন্ধকারের পাষাণ-ফাঁদ!

এস অনাগত নব-প্রলয়ের মহা সেনাপতি মহামহিম!

এস অক্ষত মোহান্ধ-ধৃতরাষ্ট্র-মুক্ত লৌহ-ভীম!

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

 

ছয়বার জয় করি কারা-ব্যুহ, রাজ-রাহু-গ্রাস-মুক্ত চাঁদ!

আসিলে চরণে দুলায়ে সাগর নয়-বছরের মুক্ত-বাঁধ!

নবগ্রহ ছিঁড়ি ফণি-মনসার মুকুটে তোমার গাঁথিলে হার,

উদিলে দশম মহাজ্যোতিষ্ক ভেদিয়া গভীর অন্ধকার!

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

স্বাগত শুদ্ধ রুদ্ধ-প্রতাপ, প্রবুদ্ধ নব মহাবলী!

দনুজ-দমন দধীচি-অস্থি, বহ্নিগর্ভ দম্ভোলি!

স্বাগত সিংহ-বাহিনী-কুমার! স্বাগত হে দেব-সেনাপতি!

অনাগত রণ-কুরুক্ষেত্রে সারথি-পার্থ-মহারথী!

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

 

নৃশংস রাজ-কংস-বংশে হানিতে তোমরা ধ্বংস-মার

এস অষ্টমী-পূর্ণচন্দ্র, ভাঙিয়া পাষাণ-দৈত্যাগার!

এস অশান্তি-অগ্নিকাণ্ডে শান্তিসেনার কাণ্ডারি!

নারায়ণী-সেনা-সেনাধিপ, এস প্রতাপের হারা- তরবারি!

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন-পদ্মা-ভাগীরথীর!

 

ওগো অতীতের আজো-ধূমায়িত আগ্নেয়গিরি ধূম্রশিখ!

না-আসা-দিনের অতিথি তরুণ তব পানে চেয়ে নিনিমিখ।

জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি-অন্তরীণ!

জয় যুগে-যুগে-আসা-সেনাপতি, জয় প্রাণ আদি-অন্তহীন!

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

স্বর্গ হইতে জননী তোমার পেতেছেন নামি মাটিতে কোল,

শ্যামল শস্যে হরিৎ ধান্যে বিছানো তাঁহারই শ্যাম আঁচল।

তাঁহারি স্নেহের করুণ গন্ধ নবান্নে ভরি উঠিছে ঐ,

নদীস্রোত-স্বরে কাঁদিছেন মাতা, ‘কই রে আমার দুলাল কই?’

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

 

মোছো আঁখি-জল, এস বীর! আজ খুঁজে নিতে হবে আপন মায়,

হারানো মায়ের স্মৃতি-ছাই আছে এই মাটিতেই মিশিয়া,হায়!

তেত্রিশ কোটি ছেলের রক্তে মিশেছে মায়ের ভস্ম-শেষ,

ইহাদেরি মাঝে কাঁদিছেন মাতা, তাই আমাদের মা স্বদেশ।

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন-পদ্মা-ভাগীরথীর!

 

এস বীর! এস যুগ-সেনাপতি! সেনাদল তব চায় হুকুম,

হাঁকিছে প্রলয়, কাঁপিছে ধরণী, উদ্‌গারে গিরি অগ্নি-ধূম।

পরাধীন এই তেত্রিশ কোটি বন্দির আঁখি-জলে হে বীর,

বন্দিনী মাতা যাচিছে শক্তি তোমার অভয় তরবারির।

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, পাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

গল-শৃঙ্খল টুটেনি আজিও, করিতে পারি না প্রণাম পা’য়,

রুদ্ধ কণ্ঠে ফরিয়াদ শুধু গুমরিয়া মরে গুরু ব্যথায়।

জননীর যবে মিলিবে আদেশ, মুক্ত সেনানী দিবে হুকুম,

শত্রু-খড়্‌গ-ছিন্ন-মুণ্ড দানিবে ও-পায়ে প্রণাম-চুম।

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, পাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

 

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

বিদ্রোহী কবিতা- গাহি সাম্যের গান

সাম্যবাদী

গাহি সাম্যের গান-

যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান

যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্লিম-ক্রীশ্চান।

গাহি সাম্যের গান!

কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?

কন্ফুসিয়াস্? চার্বআখ চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো!

বন্ধু, যা-খুশি হও,

পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,

কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-

জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব প’ড়ে যাও, যত সখ-

কিন্তু, কেন এ পন্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?

দোকানে কেন এ দর কষাকষি? -পথে ফুটে তাজা ফুল!

তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,

সকল শাস্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ!

তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,

তোমার হৃষয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।

কেন খুঁজে ফের’ দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে?

হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

বন্ধু, বলিনি ঝুট,

এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।

এই হৃদ্য়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,

বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম্ এ, মদিনা, কাবা-ভবন,

মস্জিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,

এইখানে ব’সে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।

এই রণ-ভূমে বাঁশীর কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,

এই মাঠে হ’ল মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা।

এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি

ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি’।

এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহবান,

এইখানে বসি’ গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান!

মিথ্যা শুনিনি ভাই,

এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।

গাহি সাম্যের গান আবৃত্তি – টিটো মুন্সী

বাংলা কবিতা – জীবনানন্দ দাশের কবিতা – রোমান্টিক কবিতা

[gs-fb-comments]

Leave a Reply