You are currently viewing হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কাব্যপ্রীতি -ইসলাম তরিক
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কাব্যপ্রীতি

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কাব্যপ্রীতি -ইসলাম তরিক

হযরত মুহাম্মদ সাঃ

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কাব্যপ্রীতি

ইসলাম তরিক

পৃথিবীর যে কোন সাহিত্যের সূচনা কবিতা দিয়ে।এবং সাহিত্যের এই শাখাটিই সবচেয়ে উত্তম এবং সমৃদ্ধ। বর্তমান কালে আমরা যেমন কবিতার মধ্য দিয়ে সমাজের বিভিন্ন দিক ফুটে তুলি। তেমনি প্রাচীন কালেও মানুষ কবিতার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতেন। আরব সমাজেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর আবির্ভাবের প্রাক্কালে আরবি কাব্য সাহিত্যের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল।

তখনকার আরবের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, গোত্রীয় তথা সমাজে জীবনের সকল দিকই তাদের কবিতার মধ্যে চিত্রিত হতো। একারণেই ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন-Poetry is the public resister of Arab.

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ছিলেন সর্বযুগেরর শ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক, মার্জিত, রুচিশীল, স্পষ্টভাষী, মননশীল মহামানব। তিনি সকল বিষয়ের ন্যায় কবিতার মার্জিত রুপকে অপছন্দ করতেন না। কখনও তিনি সুন্দর কবিতাগুলো আগ্রহভরে শুনতেন, কখনো এর প্রশংসা করতেন। কখনো পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কখনো এর প্রতি অন্যদের অনুপ্রাণিত করতেন। আবার কখনো উত্তম কবিতার জন্য পুরুস্কারের ব্যবস্থা করতেন। তিনি বলেন- কবিতা হলো সুসামঞ্জস্য কথামালা। যে কবিতা সত্যনিষ্ঠা, তা সুন্দর। আর যে কবিতায় সত্যের অপলাপ হয়েছে তাতে কোন কল্যাণ নেই।

তিনি কবিতা রচনার জন্য সাহাবাদের মাঝে মাঝে নির্দেশ দিতেন। যেমন দিয়েছিলেন হাসান বিন সাবিত (রা:) কে। কাফির মুশরিকরা যখন ব্যাঙ্গাত্বক কবিতা রচনা করে তাঁকে কষ্ট দিচ্ছিল, তখন তিনি কাফিরদের অশোভনীয় আচরনের যথার্থ জবাব দেয়ার জন্য সাহাবাদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,”যারা হাতিয়ার দ্বারা আল্লাহ ও তার রাসুলকে (সা:) সাহায্য করেছেন, তাদেরকে কথার দ্বারা সাহায্য করতে কে বাধা দিয়েছে?”

কাব্য চর্চার মাধ্যমে যারা ইসলামী চেতনাকে সমুন্নত রাখার চেষ্টায় আত্ননিয়োগ করেছিলেন, মহানবী (সা:) তাদের নাজাত ও জান্নাতের জন্য আল্লাহর নিকট দো’য়া করতেন। কখনো তিনি তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন। যেমন হাসান বিন সাবিত (রা:) এর জন্য তিনি প্রায়শই দো’য়া করতেন-“হে আল্লাহ, তুমি জিব্রাইলের মাধ্যমে তাকে সাহায্য কর”।

রাসূল (সা:) ইসলামী চেতনাসমৃদ্ধ কবিতা শ্রবন করে অত্যন্ত খুশি হতেন। এমন কি, তিনি খুশি হয়ে কখনো কখনো কবিদের পুরস্কারও দিতেন। যেমন, ইবনে সিরদাক (রা:) রাসূল (সা:) এর প্রশংসায় কবিতা আবৃতি করেছিলেন। মহানবী তা শুনে তাকে একটি কাপড় প্রদান করেন। শুধু তাই- ই নয়, হযরত কাব বিন যুহাইর (রা:) এর প্রতি ঘোষিত মৃত্যুদন্ড ও প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তার কবিতা শুনে। কাব বিন যুহাইর এর কবিতা শুনে তিনি এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তার মৃত্যুদন্ড-ই শুধু প্রত্যাহার করেননি, বরং তার কবিতা শুনে তাকে একটি

চাদরও উপহার দিয়েছিলেন।

যারা ইসলামী চেতনাসমৃদ্ধ কবিতা রচনা করতেন, তাদেরকে অলৌকিকভাবে আল্লাহ সাহায্য করেছেন। ইসলামী চেতনাসমৃদ্ধ কবিতা রচনা করায়, কারো কারো ভাগ্যে স্বপ্নে মহানবীর (সা:) দর্শন লাভ করার সৌভাগ্যও হয়েছিল। যেমন- বিশ্বখ্যাত কবি শেখ সাদী (রহ:) সংক্ষিপ্ত পরিসরে মহানবী (সা:) এর জীবনী তুলে ধরার মানসে একটি নাতিদীর্ঘ কবিতা লিখেছিলেন-

*বালাগাল উলা বি কামালিহি

*কাশাফাদ দুজা বি জামালিহি

*হাসানাতু জামিয়া খেসালিহি

অর্থাৎ-

নিজগুনে পৌঁছেছেন তিনি সকলের শীর্ষে

বিশ্বজাহান আলোকিত হলো তার সৌন্দর্যে

তার স্বভাব চরিত্র সবই অতীব সুন্দর…….

এই তিন লাইন লিখে চতুর্থ লাইনটি মিলানোর জন্য তিনি ভাবতে থাকেন, চতুর্থ লাইনে মহানবী (সা:) এর চরিত্র মাধুর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি সাবলীল যথার্থ বাক্য প্রয়োগ করার দৃঢ় মানসিক অভিপ্রায় নিয়ে ভাবতে থাকেন। ভাবতে ভাবতে বারো বৎসর কেটে গেল। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কাব্যপ্রীতি

তবুও চতুর্থ লাইনটি মিলাতে পারলেন না। খুঁজে পেলেন না উপযুক্ত কোন বাক্য। অবশেষে একদিন রাতে ইশার সালাত আদায়ের পর শেখ সাদী (রহ:) জায়নামাজে ঘুমিয়ে পড়লেন।

চতুর্থ লাইনটি ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলে, তিনি স্বপ্ন দেখলেন। হ্যাঁ স্বপ্নে তিনি রাসূল (সা:) কে দেখলেন। স্বয়ং রাসূল (সা:) তার সামনে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে শেখ সাদী তুমি তোমার চতুর্থ লাইনে লিখো-

“সাললু আলাইহি ওয়া আলিহি”

অর্থাৎ- দরুদ পাঠাও তার ও তার পরিবারের উপর।

আরও পড়তে পারেন–মহানবী (সা) এর কাছে খোলা চিঠি – ফাতিহা আয়াত

প্রখ্যাত আরবি সাহিত্যিক মুহাম্মাদ শরফুদ্দীন ইবনে আল বুসিরী দীর্ঘ দিন যাবৎ পক্ষাঘাত রোগে ভুগছিলেন। শেষ পর্যন্ত রোগ বৃদ্ধি হওয়ায় তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় তিনি রাসূল (সা:) এর শানে একটি কাসিদা রচনা করেন। এবং এর অসিলায় আল্লাহর কাছে রোগমুক্তি কামনা করেন। নিয়্যত অনুযায়ী পূর্ণ ভক্তি অনুসারে তিনি কাসিদাটি আবৃতি করে, রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে ঘুমিয়ে পড়েন। অতঃপর স্বপ্নে তিনি রাসূলঅতঃপর স্বপ্নে তিনি রাসূল (সা:) এর দর্শন লাভ করেন।

তিনি রাসূল (সা:) কে পুরো কাসিদাটি স্বপ্নে পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। রাসূল (সা:) তার কবিতা শুনে খুশি হয়ে তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন। এবং তার গায়ে নিজের চাদর জড়িয়ে দিয়ছিলেন। ফলে তার রোগ ভালো হয়ে গিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে তিনি সত্যি সত্যি দেখতে পেলেন যে, তার গায়ে কোন রোগ নেই। এবং শরীরেও কোন ধরনের ব্যাথা নেই।(সুবহানআল্লাহ্) এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, ইসলামী চেতনা সমৃদ্ধ কবিতা রচনা করলে আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রিয় বান্দা হওয়া যায়। এবং এটা সওয়াবের কাজও বটে।

রাসূল (সা:) অনেক সময় কবিদের কবিতাও সম্পাদনা করতেন। একবার এক কবি তার নিজের লেখা কবিতা রাসূল (সা:) এর সামনে পেশ করলেন। যার একটি রচনা ছিল এরকম-

“বার্ধক্য আর ইসলাম জানি মানুষকে পৃথিবীর

পাক সাফ করে পবিত্র যেমন স্বচ্ছ নীড়”।

রাসূল (সা:) তার কবিতা পছন্দ করলেন ঠিকই।

কিন্তু শব্দ বিন্যাস সম্পর্কে বললেন যে, ইসলাম শব্দটিকে পরে না রেখে সামনে আনতে হবে।

বন্ধুরা, রাসূল (সা:) শুধু কবিতা পছন্দ বা সম্পাদনাই করেননি। তিনি কবিতাও লিখেছিলেন। হযরত সালমান ফারসী (রা:)

থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (সা:) খন্দক খননের সময় নিম্নোক্ত চরণ আবৃতি করেছিলেন-

“আল্লাহর নামে শুরু করি এই কাজ

যার অসিলায় পেলাম পথের দিশা

ইবাদত তার ছাড়িলে হবে অপমান লাজ

নামিয়া আসিবে দুর্ভোগ অমানিশা”।

ওহুদের যুদ্ধে কাফিরদের পৈশাচিক হামলায় নবীজী (স:) এর আঙ্গুল কেটে রক্ত ঝড়ছিল।প্রবাহমান শোনিতের পানে তাকিয়ে তিনি কাব্যিক সুরে বললেন-

“তুমি তো আঙ্গুল শুধু রুধিবে রঞ্জিত

আল্লাহর রাস্তায় হলো কি পরিলক্ষিত?”

বুন্ধগণ, উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বুঝতে পারলাম যে, কবিতা হোক, আর সাহিত্যেরর অন্য কোন শাখা হোক, তাতে যদি আল্লাহ ও তার রাসূলের গুনগান থাকে এবং ইসলামী ভাবধারা পরিস্ফুটিত হয়, তবে তা অবশ্যই ইসলাম সমর্থিত, এবং তা নেক কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। ইসলামী ভাবধারাই সাহিত্য চর্চা কলমী জিহাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তা ইবাদতের শামিল।

৩১,০১,১৬

ইসলাম তরিক
ইসলাম তরিক

ইসলাম তরিক

সান্তাহার,বগুড়া।