সূরা হুদ কুরআন মাজীদের ১১তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ একটি সূরা এবং এর আয়াত সংখ্যা ১২৩টি। এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে নবী হুদ (আ.) এর নামে, যিনি আদ জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন। সূরা হুদে বিভিন্ন নবীর কাহিনী, আল্লাহর একত্ববাদ, রিসালাত, আখিরাত এবং আল্লাহর শাস্তি ও রহমতের কথা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
সূরা হুদ
২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. সূরা হুদ কুরআনের কততম সূরা?
উত্তর: সূরা হুদ কুরআনের ১১তম সূরা।
২. সূরা হুদ মক্কী না মাদানী সূরা?
উত্তর: সূরা হুদ মক্কী সূরা।
৩. সূরা হুদের আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তর: সূরা হুদের আয়াত সংখ্যা ১২৩টি।
৪. সূরা হুদের মূল বিষয় কী?
উত্তর: সূরা হুদের মূল বিষয় হলো তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত এবং পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী।
৫. সূরা হুদের কোন নবীর নামে নামকরণ করা হয়েছে?
উত্তর: সূরা হুদের নামকরণ করা হয়েছে নবী হুদ (আ.) এর নামে।
৬. নবী হুদ (আ.) কোন জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন?
উত্তর: নবী হুদ (আ.) আদ জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন।
৭. সূরা হুদের শুরুতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: সূরা হুদের শুরুতে বলা হয়েছে, “আলিফ-লাম-রা, এটা এমন কিতাব যার আয়াতসমূহ সুদৃঢ় করা হয়েছে।”
৮. সূরা হুদের মধ্যে কয়টি নবীর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: সূরা হুদের মধ্যে ৭টি নবীর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
৯. সূরা হুদের মধ্যে কোন নবীদের কাহিনী রয়েছে?
উত্তর: নূহ, হুদ, সালেহ, ইব্রাহীম, লূত, শুয়াইব এবং মুসা (আ.) এর কাহিনী রয়েছে।
১০. সূরা হুদের মধ্যে আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম বেশি ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: “আল-আলীম” (সর্বজ্ঞ) এবং “আল-হাকীম” (প্রজ্ঞাময়) নাম বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।
১১. সূরা হুদের মধ্যে কিয়ামতের কী কী আলোচনা রয়েছে?
উত্তর: কিয়ামতের ভয়াবহতা, পুনরুত্থান এবং হিসাব-নিকাশের আলোচনা রয়েছে।
১২. সূরা হুদের মধ্যে আল্লাহর শাস্তির কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: নূহ (আ.) এর সম্প্রদায়, আদ, সামুদ এবং লূত (আ.) এর সম্প্রদায়ের শাস্তির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
১৩. সূরা হুদের মধ্যে আল্লাহর রহমতের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: নূহ (আ.) এর নৌকা, ইব্রাহীম (আ.) এর নিরাপত্তা এবং শুয়াইব (আ.) এর সম্প্রদায়ের প্রতি রহমতের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
১৪. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে তাওহীদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর একত্ববাদ, তাঁর সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে।
১৫. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে নবীদের ধৈর্যের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: নবীদের বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ এবং আল্লাহর উপর ভরসা করার কথা বলা হয়েছে।
১৬. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে মুশরিকদের প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে?
উত্তর: মুশরিকদের মিথ্যা দেব-দেবীর উপাসনা এবং তাদের ভ্রান্তির কথা বলা হয়েছে।
১৭. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে আল্লাহর কিতাবের গুরুত্ব বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর কিতাব সত্য এবং এর অনুসরণ করা আবশ্যক বলে বলা হয়েছে।
১৮. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, পর্বত, নদী ইত্যাদি আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু এবং তিনি তাওবাকারীদের ক্ষমা করেন বলে বলা হয়েছে।
২০. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে আখিরাতের জীবনের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আখিরাতের জীবনে প্রত্যেককে তার কর্মের ফল ভোগ করতে হবে বলে বলা হয়েছে।
সূরা হুদ সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন)
১. সূরা হুদ কুরআনের কততম সূরা?
ক) ১০ম
খ) ১১তম
গ) ১২তম
ঘ) ১৩তম
উত্তর: খ) ১১তম
২. সূরা হুদ কোন ধরনের সূরা?
ক) মাদানী
খ) মক্কী
গ) মিশ্র
ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর: খ) মক্কী
৩. সূরা হুদের আয়াত সংখ্যা কত?
ক) ১০০
খ) ১১০
গ) ১২৩
ঘ) ১৩০
উত্তর: গ) ১২৩
৪. সূরা হুদের নামকরণ করা হয়েছে কোন নবীর নামে?
ক) নূহ (আ.)
খ) হুদ (আ.)
গ) ইব্রাহীম (আ.)
ঘ) মুসা (আ.)
উত্তর: খ) হুদ (আ.)
৫. নবী হুদ (আ.) কোন জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন?
ক) আদ জাতি
খ) সামুদ জাতি
গ) কুরাইশ
ঘ) ইসরাঈল
উত্তর: ক) আদ জাতি
৬. সূরা হুদের শুরুতে কোন হরফে শুরু হয়েছে?
ক) আলিফ-লাম-মীম
খ) আলিফ-লাম-রা
গ) আলিফ-লাম-সাদ
ঘ) আলিফ-লাম-মীম-সাদ
উত্তর: খ) আলিফ-লাম-রা
৭. সূরা হুদের মধ্যে কয়টি নবীর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
ক) ৫টি
খ) ৬টি
গ) ৭টি
ঘ) ৮টি
উত্তর: গ) ৭টি
৮. সূরা হুদের মধ্যে কোন নবীর কাহিনী নেই?
ক) নূহ (আ.)
খ) হুদ (আ.)
গ) ইউসুফ (আ.)
ঘ) শুয়াইব (আ.)
উত্তর: গ) ইউসুফ (আ.)
৯. সূরা হুদের মধ্যে আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম বেশি ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) আল-রহীম
খ) আল-আলীম
গ) আল-কাদির
ঘ) আল-মালিক
উত্তর: খ) আল-আলীম
১০. সূরা হুদের মধ্যে কিয়ামতের কী আলোচনা রয়েছে?
ক) শুধু ভয়াবহতা
খ) শুধু পুনরুত্থান
গ) ভয়াবহতা ও পুনরুত্থান
ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর: গ) ভয়াবহতা ও পুনরুত্থান
১১. সূরা হুদের মধ্যে আল্লাহর শাস্তির কোন উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
ক) নূহ (আ.) এর সম্প্রদায়
খ) আদ জাতি
গ) লূত (আ.) এর সম্প্রদায়
ঘ) সবকটি
উত্তর: ঘ) সবকটি
১২. সূরা হুদের মধ্যে আল্লাহর রহমতের কোন উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
ক) নূহ (আ.) এর নৌকা
খ) ইব্রাহীম (আ.) এর নিরাপত্তা
গ) শুয়াইব (আ.) এর সম্প্রদায়
ঘ) সবকটি
উত্তর: ঘ) সবকটি
১৩. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে তাওহীদের কথা বলা হয়েছে?
ক) আল্লাহর একত্ববাদ
খ) আল্লাহর সৃষ্টি
গ) আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ
ঘ) সবকটি
উত্তর: ঘ) সবকটি
১৪. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে নবীদের ধৈর্যের কথা বলা হয়েছে?
ক) বিপদে ধৈর্য ধারণ
খ) আল্লাহর উপর ভরসা
গ) উভয়টি
ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়টি
১৫. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে মুশরিকদের প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে?
ক) মিথ্যা দেব-দেবীর উপাসনা
খ) তাদের ভ্রান্তি
গ) উভয়টি
ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়টি
১৬. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে আল্লাহর কিতাবের গুরুত্ব বলা হয়েছে?
ক) সত্য হিসেবে
খ) অনুসরণ করা আবশ্যক
গ) উভয়টি
ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়টি
১৭. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের কথা বলা হয়েছে?
ক) আকাশ ও পৃথিবী
খ) পর্বত ও নদী
গ) উভয়টি
ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়টি
১৮. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের কথা বলা হয়েছে?
ক) ক্ষমাশীল ও দয়ালু
খ) তাওবাকারীদের ক্ষমা
গ) উভয়টি
ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়টি
১৯. সূরা হুদের মধ্যে কীভাবে আখিরাতের জীবনের কথা বলা হয়েছে?
ক) কর্মের ফল ভোগ
খ) শাস্তি ও পুরস্কার
গ) উভয়টি
ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়টি
২০. সূরা হুদের মধ্যে আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম বেশি ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) আল-আলীম
খ) আল-হাকীম
গ) উভয়টি
ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়টি
২১. সূরা হুদের মধ্যে কোন নবীর কাহিনী সবচেয়ে বিস্তারিত?
ক) নূহ (আ.)
খ) হুদ (আ.)
গ) ইব্রাহীম (আ.)
ঘ) মুসা (আ.)
উত্তর: ক) নূহ (আ.)
২২. সূরা হুদের মধ্যে আল্লাহর শাস্তির কোন উদাহরণ সবচেয়ে বিস্তারিত?
ক) নূহ (আ.) এর সম্প্রদায়
খ) আদ জাতি
গ) লূত (আ.) এর সম্প্রদায়
ঘ) শুয়াইব (আ.) এর সম্প্রদায়
উত্তর: ক) নূহ (আ.) এর সম্প্রদায়
২৩. সূরা হুদের মধ্যে আল্লাহর রহমতের কোন উদাহরণ সবচেয়ে বিস্তারিত?
ক) নূহ (আ.) এর নৌকা
খ) ইব্রাহীম (আ.) এর নিরাপত্তা
গ) শুয়াইব (আ.) এর সম্প্রদায়
ঘ) মুসা (আ.) এর মুক্তি
উত্তর: ক) নূহ (আ.) এর নৌকা
২৪. সূরা হুদের মধ্যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের কোন উদাহরণ সবচেয়ে বিস্তারিত?
ক) আকাশ ও পৃথিবী
খ) পর্বত ও নদী
গ) উভয়টি
ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়টি
২৫. সূরা হুদের মধ্যে আখিরাতের জীবনের কোন দিক সবচেয়ে বিস্তারিত?
ক) কর্মের ফল ভোগ
খ) শাস্তি ও পুরস্কার
গ) উভয়টি
ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়টি
সূরা হুদ এর গুরুত্বপূর্ণ দিক
১. নবীদের কাহিনী: সূরা হুদে নূহ, হুদ, সালেহ, ইব্রাহীম, লূত, শুয়াইব এবং মুসা (আ.) এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
২. আল্লাহর একত্ববাদ: সূরাটিতে তাওহীদের উপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং শিরকের ভ্রান্তি তুলে ধরা হয়েছে।
৩. আখিরাতের আলোচনা: কিয়ামত, পুনরুত্থান এবং হিসাব-নিকাশের কথা বলা হয়েছে।
৪. আল্লাহর শাস্তি ও রহমত: বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শাস্তি এবং নবীদের প্রতি আল্লাহর রহমতের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
৫. ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল: নবীদের ধৈর্য এবং আল্লাহর উপর ভরসার কথা বলা হয়েছে।
সূরা হুদ এর শিক্ষা
১. তাওহীদের গুরুত্ব: আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা এবং শিরক থেকে দূরে থাকা।
২. নবীদের অনুসরণ: নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং তাদের পথ অনুসরণ করা।
৩. ধৈর্য ও ভরসা: বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করা।
৪. আখিরাতের প্রস্তুতি: আখিরাতের জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং সৎকর্ম করা।
৫. আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা: আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের জন্য তাওবা করা এবং তাঁর নিদর্শনসমূহ নিয়ে চিন্তা করা।
সূরা হুদ এর মূল বিষয়বস্তু
১. তাওহীদ ও রিসালাত: আল্লাহর একত্ববাদ এবং নবীদের মাধ্যমে তাঁর বাণী প্রেরণের কথা বলা হয়েছে।
২. নবীদের কাহিনী: বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে আল্লাহর শাস্তি ও রহমতের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
৩. আখিরাতের সতর্কতা: কিয়ামতের ভয়াবহতা এবং আখিরাতের জীবনের হিসাব-নিকাশের কথা বলা হয়েছে।
৪. শিরকের ভ্রান্তি: মুশরিকদের মিথ্যা দেব-দেবীর উপাসনা এবং তাদের ভ্রান্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
৫. আল্লাহর নিদর্শন: আকাশ, পৃথিবী, পর্বত, নদী ইত্যাদি আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৬. ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল: নবীদের ধৈর্য এবং আল্লাহর উপর ভরসার কথা বলা হয়েছে।
সূরা হুদ মুমিনদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা তাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং আল্লাহর পথে অবিচল থাকার শিক্ষা দেয়।
সূরা হুদ হল কুরআনের ১১তম সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরায় বিভিন্ন নবী-রাসূলদের কাহিনী এবং তাদের সম্প্রদায়ের সাথে তাদের সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নে আপনার উল্লেখিত আয়াতগুলোর আরবী, বাংলা অর্থ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
সূরা হুদ আয়াত ৬
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
বাংলা অর্থ:
“পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে, তাদের সকলের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপর। তিনি তাদের অবস্থানস্থল ও সংরক্ষণস্থল জানেন। সবকিছুই এক সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন যে তিনি সমস্ত সৃষ্টির রিজিকের মালিক। প্রতিটি প্রাণীর রিজিক, বাসস্থান এবং মৃত্যুর পর তার অবস্থান আল্লাহর জ্ঞানে রয়েছে। সবকিছুই লাওহে মাহফুজে (সংরক্ষিত কিতাবে) লিপিবদ্ধ আছে। এটি মানুষের মনে আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও ভরসা স্থাপনের শিক্ষা দেয়।
সূরা হুদ আয়াত ১০
وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ نَعْمَاءَ بَعْدَ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ عَنِّي ۚ إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ
বাংলা অর্থ:
“আর যদি আমরা তাকে দুঃখ-কষ্টের পর সুখ-সমৃদ্ধি আস্বাদন করাই, তবে সে অবশ্যই বলবে, ‘আমার থেকে সকল অকল্যাণ দূর হয়ে গেছে।’ নিশ্চয়ই সে উল্লসিত ও অহংকারী।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মানুষের স্বভাব বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষ যখন কষ্টের মধ্যে থাকে, তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়। কিন্তু যখন সুখ-সমৃদ্ধি আসে, তখন সে ভুলে যায় এবং অহংকারী হয়ে উঠে। এটি মানুষের অকৃতজ্ঞতা ও আল্লাহর প্রতি অবহেলার একটি উদাহরণ।
সূরা হুদ, আয়াত ১১
إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَٰئِكَ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ
বাংলা অর্থ:
“কিন্তু যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ধৈর্যশীল ও সৎকর্মশীলদের জন্য মহান পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। তারা কষ্টের সময় ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহর ইচ্ছার উপর ভরসা রাখে। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও জান্নাতের মহান প্রতিদান।
সূরা হুদ আয়াত ১১৪
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ ۚ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ۚ ذَٰلِكَ ذِكْرَىٰ لِلذَّاكِرِينَ
বাংলা অর্থ:
“তুমি দিনের দুই প্রান্তে এবং রাতের কিছু সময়ে সালাত প্রতিষ্ঠা কর। নিশ্চয়ই নেক কাজগুলো পাপগুলোকে দূর করে দেয়। এটি স্মরণকারীদের জন্য উপদেশ।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে সালাতের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। দিনের শুরু ও শেষে এবং রাতের কিছু সময়ে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নেক আমল পাপ মোচন করে এবং মানুষকে আল্লাহর স্মরণে রাখে।
সূরা হুদ আয়াত ৪৪
وَقِيلَ يَا أَرْضُ ابْلَعِي مَاءَكِ وَيَا سَمَاءُ أَقْلِعِي وَغِيضَ الْمَاءُ وَقُضِيَ الْأَمْرُ وَاسْتَوَتْ عَلَى الْجُودِيِّ ۖ وَقِيلَ بُعْدًا لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
“আর বলা হল, ‘হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল এবং হে আকাশ! তুমি বিরত হও।’ পানি সরে গেল এবং কাজ সম্পন্ন হল। নৌকা জুদী পর্বতে স্থির হল এবং বলা হল, ‘অত্যাচারী সম্প্রদায়ের জন্য ধ্বংস।'”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে নূহ (আ.)-এর কাহিনীর শেষ অংশ বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহর আদেশে পানি সরে গেল এবং নূহ (আ.)-এর নৌকা জুদী পর্বতে স্থির হল। এই ঘটনা অত্যাচারী সম্প্রদায়ের ধ্বংসের ইঙ্গিত দেয়।
সূরা হুদ আয়াত ৯৮
يَقْدُمُ قَوْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَوْرَدَهُمُ النَّارَ ۖ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُودُ
বাংলা অর্থ:
“কিয়ামতের দিন সে তার সম্প্রদায়কে অগ্রবর্তী করবে এবং তাদের জাহান্নামে নিয়ে যাবে। আর কত নিকৃষ্ট সেই পানস্থল!”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। ফিরআউন কিয়ামতের দিন তার সম্প্রদায়কে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। এটি অহংকার ও আল্লাহর অবাধ্যতার পরিণতির একটি উদাহরণ।
সূরা হুদ আয়াত ৭
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۗ وَلَئِن قُلْتَ إِنَّكُم مَّبْعُوثُونَ مِن بَعْدِ الْمَوْتِ لَيَقُولَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَٰذَا إِلَّا سِحْرٌ مُّبِينٌ
বাংলা অর্থ:
“তিনিই সেই সত্তা, যিনি ছয় দিনে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। এটি এজন্য যে, তিনি পরীক্ষা করতে চান তোমাদের মধ্যে কে কর্মে উত্তম। আর যদি তুমি বল, ‘তোমরা মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত হবে,’ তবে অবশ্যই কাফিররা বলবে, ‘এটি তো প্রকাশ্য যাদু ছাড়া কিছুই নয়।'”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর সৃষ্টির মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি ছয় দিনে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের কর্মের মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করেন। কাফিররা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে, কিন্তু এটি তাদের অজ্ঞতা ও অবিশ্বাসের প্রকাশ।
সূরা হুদ আয়াত ১১৩
وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ
বাংলা অর্থ:
“তোমরা যারা জালিম, তাদের দিকে ঝুঁকো না; অন্যথায় অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো সাহায্যকারী নেই, তারপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে জালিমদের সাথে সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। জালিমদের দিকে ঝুঁকলে আল্লাহর শাস্তি অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সাহায্যকারী নেই, তাই তাঁর উপরই পূর্ণ ভরসা রাখা উচিত।
এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর মহিমা, মানুষের স্বভাব, নেক আমলের গুরুত্ব এবং জালিমদের পরিণতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি আয়াত মুমিনদের জন্য উপদেশ ও হিদায়াতের উৎস।