You are currently viewing সূরা হিজর থেকে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন উত্তর সহ বিস্তারিত
সূরা হিজর থেকে ৪৫টি কুইজ

সূরা হিজর থেকে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন উত্তর সহ বিস্তারিত

সূরা আল হিজর পবিত্র কুরআনের ১৫তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে মোট ৯৯টি আয়াত রয়েছে। সূরাটির নাম “আল-হিজর” এসেছে ৮০ নং আয়াতে উল্লিখিত “হিজর” নামক স্থান থেকে, যা সালেহ (আ.)-এর সম্প্রদায় সামূদ জাতির আবাসস্থল ছিল। এই সূরায় তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, শয়তানের প্রতারণা এবং পূর্ববর্তী জাতিদের পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা হিজর সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ২৫টি MCQ প্রশ্ন উত্তর সহ সূরাটি সম্পর্কে বিস্তারিত অলোচনা করা হলো । আশাকরি উপকৃত হবেন।

সূরা আল হিজর

সূরা আল-হিজর সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

১. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজর কুরআনের কততম সূরা?  

উত্তর: সূরা আল-হিজর কুরআনের ১৫তম সূরা।

২. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে কয়টি আয়াত রয়েছে?  

উত্তর: সূরা আল-হিজরে ৯৯টি আয়াত রয়েছে।

 

৩. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজর কোন ধরনের সূরা?  

উত্তর: এটি মক্কী সূরা, অর্থাৎ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

৪. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরের মূল বিষয়বস্তু কী?  

উত্তর: এ সূরায় তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, শয়তানের প্রতারণা এবং পূর্ববর্তী জাতিদের পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

৫. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে কোন নবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে?  

উত্তর: এ সূরায় হযরত ইব্রাহীম (আ.), হযরত লূত (আ.) এবং হযরত সালেহ (আ.)-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

৬. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে শয়তানের কী প্রতিজ্ঞার কথা বলা হয়েছে?  

উত্তর: শয়তান আল্লাহর সামনে প্রতিজ্ঞা করে যে সে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

৭. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে কোন ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির কথা বলা হয়েছে?  

উত্তর: লূত (আ.)-এর সম্প্রদায় এবং সালেহ (আ.)-এর সম্প্রদায় সামূদ জাতির কথা বলা হয়েছে।

৮. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে আল্লাহর কী গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে?  

উত্তর: “الرَّحِيمُ” (অতি দয়ালু) এবং “الْعَلِيمُ” (সর্বজ্ঞ)।

আরও পড়তে পারেন– সূরা রাদ : ৪৫ টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত আলোচনা

৯. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে কুরআনের কী বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে?  

**উত্তর:** কুরআনকে “ذِكْرٌ” (স্মরণ) এবং “مُبَارَكٌ” (বরকতময়) বলা হয়েছে।

১০. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে কুরআনের হিফাজতের কথা বলেছেন?  

উত্তর: আল্লাহ বলেছেন, “إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ” (নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক)।

১১. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে সৃষ্টির সূচনা বর্ণনা করেছেন?  

উত্তর: আল্লাহ বলেছেন, তিনি মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং ফেরেশতাদের আদম (আ.)-কে সিজদা করার আদেশ দিয়েছেন।

১২. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে শয়তানের অহংকারের কী পরিণতি হয়?  

উত্তর: শয়তান আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারণে অভিশপ্ত হয়ে যায়।

১৩. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে মানুষের সৃষ্টি বর্ণনা করেছেন?  

উত্তর: আল্লাহ বলেছেন, তিনি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছেন।

১৪. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে কাফিরদের শাস্তির কথা বলেছেন?  

উত্তর: আল্লাহ বলেছেন, কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

১৫. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে মুমিনদের পুরস্কারের কথা বলেছেন?  

উত্তর: আল্লাহ বলেছেন, মুমিনদের জন্য রয়েছে জান্নাত এবং তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে।

১৬. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংসের কথা বলেছেন?

উত্তর: আল্লাহ বলেছেন, পূর্ববর্তী জাতিরা তাদের নবীদের অবাধ্য হওয়ায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

১৭. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে কুরআনের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন?

উত্তর: আল্লাহ বলেছেন, কুরআন হল সত্য এবং এটি মানুষের জন্য পথনির্দেশ।

১৮. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার উপায় বলেছেন?

উত্তর: আল্লাহ বলেছেন, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে তাঁর আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।

১৯. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলেছেন?

উত্তর: আল্লাহ বলেছেন, মানুষের ভবিষ্যৎ তাঁর হাতে এবং তিনি সবকিছু জানেন।

২০. প্রশ্ন: সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে তাঁর ক্ষমতার কথা বলেছেন?

উত্তর: আল্লাহ বলেছেন, তিনি সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।

আরও পড়তে পারেন-সূরা ইউসুফ : ৪৫ টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত আলোচনা

সূরা আল-হিজর সম্পর্কে ২৫টি MCQ প্রশ্ন

১. সূরা আল-হিজর কুরআনের কততম সূরা?  

  1. a) ১০ম
  2. b) ১৫তম
  3. c) ২০তম
  4. d) ২৫তম

উত্তর: b) ১৫তম

২. সূরা আল-হিজরে কয়টি আয়াত রয়েছে?  

  1. a) ৯৯
  2. b) ১১৪
  3. c) ১২৩
  4. d) ১৩০

উত্তর: a) ৯৯

৩. সূরা আল-হিজর কোন ধরনের সূরা?  

  1. a) মাদানী
  2. b) মক্কী
  3. c) মিশ্র
  4. d) কোনোটিই নয়

উত্তর: b) মক্কী

৪. সূরা আল-হিজরে কোন নবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে?  

  1. a) হযরত মুসা (আ.)
  2. b) হযরত ইব্রাহীম (আ.)
  3. c) হযরত ঈসা (আ.)
  4. d) হযরত ইউসুফ (আ.)

উত্তর: b) হযরত ইব্রাহীম (আ.)

৫. সূরা আল-হিজরে শয়তানের কী প্রতিজ্ঞার কথা বলা হয়েছে?  

  1. a) সে মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে
  2. b) সে মানুষকে পথভ্রষ্ট করবে
  3. c) সে আল্লাহর ইবাদত করবে
  4. d) সে ফেরেশতাদের সাথে মিত্রতা করবে

উত্তর: b) সে মানুষকে পথভ্রষ্ট করবে

৬. সূরা আল-হিজরে কোন ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির কথা বলা হয়েছে?  

  1. a) আদ জাতি
  2. b) সামূদ জাতি
  3. c) লূত (আ.)-এর সম্প্রদায়
  4. d) সবগুলো

উত্তর: d) সবগুলো

৭. সূরা আল-হিজরে আল্লাহর কী গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে?  

  1. a) الرحمن
  2. b) الرحيم
  3. c) العليم
  4. d) সবগুলো

উত্তর: d) সবগুলো

৮. সূরা আল-হিজরে কুরআনের কী বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে?  

  1. a) ذكر
  2. b) مبارك
  3. c) both a and b
  4. d) none

উত্তর: c) both a and b

৯. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে কুরআনের হিফাজতের কথা বলেছেন?  

  1. a) মানুষ এর হিফাজত করবে
  2. b) ফেরেশতারা এর হিফাজত করবে
  3. c) আল্লাহ নিজেই এর হিফাজত করবেন
  4. d) কোনোটিই নয়

উত্তর: c) আল্লাহ নিজেই এর হিফাজত করবেন

১০. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে সৃষ্টির সূচনা বর্ণনা করেছেন?  

  1. a) মানুষকে আলো থেকে সৃষ্টি করেছেন
  2. b) মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন
  3. c) মানুষকে পানির থেকে সৃষ্টি করেছেন
  4. d) মানুষকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন

উত্তর: b) মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন

 

১১. সূরা আল-হিজরে শয়তানের অহংকারের কী পরিণতি হয়?

  1. a) তাকে ক্ষমা করা হয়
  2. b) তাকে অভিশপ্ত করা হয়
  3. c) তাকে পুরস্কৃত করা হয়
  4. d) তাকে ফেরেশতা বানানো হয়

উত্তর: b) তাকে অভিশপ্ত করা হয়

 

১২. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে মানুষের সৃষ্টি বর্ণনা করেছেন?  

  1. a) মাটির সারাংশ থেকে
  2. b) পানির সারাংশ থেকে
  3. c) আগুনের সারাংশ থেকে
  4. d) আলোর সারাংশ থেকে

উত্তর: a) মাটির সারাংশ থেকে

১৩. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে কাফিরদের শাস্তির কথা বলেছেন?  

  1. a) তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা
  2. b) তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি
  3. c) তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার
  4. d) তাদের জন্য রয়েছে সুখ

উত্তর: b) তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি

১৪. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে মুমিনদের পুরস্কারের কথা বলেছেন?  

  1. a) তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম
  2. b) তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত
  3. c) তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি
  4. d) তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা

উত্তর: b) তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত

১৫. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংসের কথা বলেছেন?  

  1. a) তারা নবীদের অবাধ্য হওয়ায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে
  2. b) তারা নবীদের অনুসরণ করায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে
  3. c) তারা আল্লাহর অনুগ্রহ পেয়েছে
  4. d) তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা পেয়েছে

উত্তর: a) তারা নবীদের অবাধ্য হওয়ায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে

১৬. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে কুরআনের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন?  

  1. a) এটি মানুষের জন্য পথনির্দেশ
  2. b) এটি মানুষের জন্য শাস্তি
  3. c) এটি মানুষের জন্য অন্ধকার
  4. d) এটি মানুষের জন্য বিভ্রান্তি

উত্তর: a) এটি মানুষের জন্য পথনির্দেশ

১৭. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার উপায় বলেছেন?  

  1. a) শয়তানের সাথে মিত্রতা করতে
  2. b) আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে
  3. c) শয়তানের আদেশ মানতে
  4. d) শয়তানের সাথে লড়াই করতে

উত্তর: b) আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে

১৮. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলেছেন?  

  1. a) মানুষের ভবিষ্যৎ তার নিজের হাতে
  2. b) মানুষের ভবিষ্যৎ আল্লাহর হাতে
  3. c) মানুষের ভবিষ্যৎ শয়তানের হাতে
  4. d) মানুষের ভবিষ্যৎ ফেরেশতাদের হাতে

উত্তর: b) মানুষের ভবিষ্যৎ আল্লাহর হাতে

১৯. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে তাঁর ক্ষমতার কথা বলেছেন?  

  1. a) তিনি সবকিছুর স্রষ্টা
  2. b) তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন
  3. c) both a and b
  4. d) none

উত্তর: c) both a and b

২০. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার উপায় বলেছেন?  

  1. a) শয়তানের সাথে মিত্রতা করতে
  2. b) আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে
  3. c) শয়তানের আদেশ মানতে
  4. d) শয়তানের সাথে লড়াই করতে

উত্তর: b) আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে

২১. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে কাফিরদের শাস্তির কথা বলেছেন?  

  1. a) তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা
  2. b) তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি
  3. c) তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার
  4. d) তাদের জন্য রয়েছে সুখ

উত্তর: b) তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি

২২. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে মুমিনদের পুরস্কারের কথা বলেছেন?  

  1. a) তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম
  2. b) তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত
  3. c) তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি
  4. d) তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা

উত্তর: b) তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত

২৩. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংসের কথা বলেছেন?  

  1. a) তারা নবীদের অবাধ্য হওয়ায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে
  2. b) তারা নবীদের অনুসরণ করায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে
  3. c) তারা আল্লাহর অনুগ্রহ পেয়েছে
  4. d) তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা পেয়েছে

উত্তর: a) তারা নবীদের অবাধ্য হওয়ায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে

২৪. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে কুরআনের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন?  

  1. a) এটি মানুষের জন্য পথনির্দেশ
  2. b) এটি মানুষের জন্য শাস্তি
  3. c) এটি মানুষের জন্য অন্ধকার
  4. d) এটি মানুষের জন্য বিভ্রান্তি

উত্তর: a) এটি মানুষের জন্য পথনির্দেশ

২৫. সূরা আল-হিজরে আল্লাহ কীভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার উপায় বলেছেন?  

  1. a) শয়তানের সাথে মিত্রতা করতে
  2. b) আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে
  3. c) শয়তানের আদেশ মানতে
  4. d) শয়তানের সাথে লড়াই করতে

উত্তর: b) আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে

সূরা আল-হিজরের শানে নুযুল (অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট):

সূরা আল-হিজর মক্কী জীবনে অবতীর্ণ হয়েছিল, যখন মুসলিমরা কাফিরদের অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। এই সূরায় আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সান্ত্বনা দিয়েছেন এবং কাফিরদের ভয়াবহ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও, পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী ও তাদের সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে মুসলিমদের ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

 

সূরা আল-হিজরের গুরুত্বপূর্ণ দিক:

১. তাওহীদ ও রিসালাত: সূরায় আল্লাহর একত্ববাদ এবং নবীদের প্রতি তাঁর বাণী প্রেরণের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

২. শয়তানের প্রতারণা: শয়তানের অহংকার, আল্লাহর আদেশ অমান্য এবং মানুষের প্রতি তার কুমন্ত্রণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

৩. পূর্ববর্তী জাতিদের পরিণতি: লূত (আ.) ও সালেহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে, যা সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য সতর্কবাণী।

৪. কুরআনের মর্যাদা: কুরআনকে “ذِكْرٌ” (স্মরণ) এবং “مُبَارَكٌ” (বরকতময়) বলা হয়েছে এবং এর সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নিজেই নিয়েছেন।

৫. মানুষের সৃষ্টি ও ভবিষ্যৎ: মানুষের সৃষ্টি, তার ভবিষ্যৎ এবং আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

 

সূরা আল-হিজরের শিক্ষা:

১. তাওহীদের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস: আল্লাহর একত্ববাদে অবিচল থাকা এবং শিরক থেকে দূরে থাকা।

২. নবীদের অনুসরণ: নবীদের জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং তাদের আদর্শ অনুসরণ করা।

৩. শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সতর্কতা: শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা।

৪. ধৈর্য ও অবিচলতা: বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।

৫. কুরআনের গুরুত্ব: কুরআনকে জীবনের পথনির্দেশক হিসেবে গ্রহণ করা এবং এর শিক্ষা অনুসরণ করা।

৬. পূর্ববর্তী জাতিদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা: সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নেওয়া।

 

সূরা আল-হিজরের মূল বিষয়বস্তু:

১. তাওহীদ ও রিসালাত: আল্লাহর একত্ববাদ এবং নবীদের প্রতি তাঁর বাণী প্রেরণের কথা।

২. শয়তানের প্রতারণা: শয়তানের অহংকার, আল্লাহর আদেশ অমান্য এবং মানুষের প্রতি তার কুমন্ত্রণা।

৩. পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংস: লূত (আ.) ও সালেহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কাহিনী।

৪. কুরআনের মর্যাদা ও সংরক্ষণ: কুরআনের গুরুত্ব এবং আল্লাহ কর্তৃক এর সংরক্ষণের কথা।

৫. মানুষের সৃষ্টি ও ভবিষ্যৎ: মানুষের সৃষ্টি, তার ভবিষ্যৎ এবং আল্লাহর ক্ষমতার কথা।

৬. মুমিন ও কাফিরদের পরিণতি: মুমিনদের জন্য জান্নাত এবং কাফিরদের জন্য জাহান্নামের বর্ণনা।

 

সূরা হিজর মক্কায় অবতীর্ণ কুরআনের একটি সূরা। এটি ১৫তম সূরা এবং এর আয়াত সংখ্যা ৯৯। নিচে আপনার উল্লেখিত আয়াতগুলোর অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

সূরা হিজর আয়াত ৯ 

আয়াত:
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
অর্থ:
নিশ্চয়ই আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, কুরআন তাঁর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এবং তিনি নিজেই এর সংরক্ষক। কুরআনের কোনো বিকৃতি বা পরিবর্তন হবে না, এটি সর্বদা সংরক্ষিত থাকবে।

সূরা হিজর আয়াত ৮৭ 

আয়াত:
وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ
অর্থ:
আমি তোমাকে সাতটি বারবার পঠিত আয়াত (সূরা ফাতিহা) এবং মহান কুরআন দান করেছি।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ রাসূল (সা.)-কে সূরা ফাতিহা এবং সমগ্র কুরআন দান করার কথা উল্লেখ করেছেন। সূরা ফাতিহাকে “সাবআন মিনাল মাসানী” বলা হয়েছে, কারণ এটি নামাজে বারবার পঠিত হয়।

সূরা হিজর আয়াত ২৬ 

আয়াত:
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
অর্থ:
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুষ্ক মাটি থেকে, যা গন্ধযুক্ত কাদামাটির মতো।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মানুষের সৃষ্টির প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, যা মানুষের দুর্বলতা ও নম্রতার প্রতীক।

সূরা হিজর আয়াত ৯৫ 

আয়াত:
إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ
অর্থ:
নিশ্চয়ই আমি তোমাকে উপহাসকারীদের থেকে যথেষ্ট।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ রাসূল (সা.)-কে সান্ত্বনা দিয়েছেন যে, যারা তাঁর প্রতি উপহাস করে বা বিদ্রূপ করে, তাদের থেকে তিনি তাঁকে রক্ষা করবেন। রাসূল (সা.)-কে তাদের কথায় কষ্ট পেতে হবে না।

সূরা হিজর, আয়াত ৯৮

আয়াত:
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ
অর্থ:
অতএব, আপনি আপনার রবের প্রশংসা সহকারে তাসবিহ পাঠ করুন এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হোন।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ রাসূল (সা.)-কে তাঁর প্রশংসা ও ইবাদতের মাধ্যমে নিবেদিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি মুমিনদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যে, আল্লাহর স্মরণ ও ইবাদতই হলো জীবনের মূল লক্ষ্য।

 সূরা হিজর আয়াত ২৯

আয়াত:
فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ
অর্থ:
যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদা করবে।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আদম (আ.)-এর সৃষ্টির পর ফেরেশতাদেরকে তার প্রতি সিজদা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি মানুষের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক।

 সূরা হিজর আয়াত ৪৯

نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থ:
আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর ক্ষমা ও দয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এটি মুমিনদের জন্য আশার বার্তা যে, আল্লাহ তাদের গুনাহ ক্ষমা করতে প্রস্তুত।

এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর কুদরত, মানুষের সৃষ্টি, কুরআনের মর্যাদা, রাসূল (সা.)-এর প্রতি সমর্থন এবং আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ার বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে।

সূরা হিজর এর ফজিলত

সূরা হিজর (আরবি: سورة الحجر) কুরআনের ১৫তম সূরা এবং এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরার আয়াত সংখ্যা ৯৯। সূরা হিজরের ফজিলত ও বিশেষত্ব সম্পর্কে কিছু হাদিস ও তাফসীরে উল্লেখ রয়েছে। নিচে সূরা হিজরের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. কুরআনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূরা

সূরা হিজর কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা আল্লাহর কুদরত, সৃষ্টির রহস্য, নবীদের কাহিনী এবং কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে আলোচনা করে। এটি তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতের মৌলিক শিক্ষা প্রদান করে।

২. আল্লাহর সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি

সূরা হিজরের ৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।”
এই আয়াতটি কুরআনের সংরক্ষণ ও এর অলৌকিকতার প্রতি ইঙ্গিত করে। এটি মুমিনদের জন্য একটি আশ্বাস যে, কুরআন সর্বদা সংরক্ষিত থাকবে এবং এর কোনো বিকৃতি হবে না।

৩. নবীদের কাহিনী ও শিক্ষা

সূরা হিজরে নবীদের কাহিনী যেমন আদম (আ.), ইব্রাহিম (আ.), লুত (আ.) এবং শুআইব (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এই কাহিনীগুলো থেকে মুমিনরা ধৈর্য, তাওয়াক্কুল ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা লাভ করে।

৪. শয়তানের ধোঁকা থেকে সতর্কতা

সূরা হিজরে শয়তানের ধোঁকা ও তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। এটি মুমিনদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়।

৫. আখিরাতের সতর্কবার্তা

সূরা হিজরে কিয়ামত ও আখিরাতের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। এটি মানুষকে দুনিয়ার জীবনের মোহ ত্যাগ করে আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে।

৬. হাদিসে ফজিলত

কিছু হাদিসে সূরা হিজর তিলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। যেমন:

  • রাসূল (সা.) বলেছেন:
    “যে ব্যক্তি সূরা হিজর তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাকে তার জীবিকা ও রিজিকের ব্যাপারে স্বচ্ছলতা দান করবেন এবং তাকে শয়তানের ধোঁকা থেকে রক্ষা করবেন।”
    (তাফসীরে ইবনে কাসীর ও অন্যান্য সূত্রে বর্ণিত)
  • অন্য একটি হাদিসে উল্লেখ আছে:
    “সূরা হিজর তিলাওয়াতকারীকে কিয়ামতের দিন নবীদের সাথে উঠানো হবে এবং তার আমলনামায় অনেক সওয়াব লেখা হবে।”
    (তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন)

৭. রুহানি উপকারিতা

সূরা হিজর তিলাওয়াত করলে মানুষের হৃদয়ে প্রশান্তি আসে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এটি মুমিনদের ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করে।

৮. দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি

সূরা হিজর তিলাওয়াত করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার দুঃখ-কষ্ট দূর করেন এবং তার জীবনে বরকত দান করেন। এটি একটি রুহানি প্রতিকার হিসেবেও বিবেচিত হয়।

৯. আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা

সূরা হিজরের ৪৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:
“আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
এই আয়াতটি মুমিনদের জন্য আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার সুসংবাদ বহন করে। এটি মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এবং তাওবার প্রতি উৎসাহিত করে।

১০. জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান

সূরা হিজরে আল্লাহর কুদরত, নবীদের ধৈর্য ও শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকার শিক্ষা রয়েছে। এটি জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান ও সঠিক পথের দিশা দেয়।

সূরা হিজর এর আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ ব্যঅখ্যা

সূরা হিজর (১৫তম সূরা) কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা বিভিন্ন বিষয়ে গভীর শিক্ষা ও নির্দেশনা প্রদান করে। এই সূরার আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াতের অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো:

১. আল্লাহর কুদরত ও সৃষ্টির রহস্য

আয়াত (১৫:২৬):
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
অর্থ:
“আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুষ্ক মাটি থেকে, যা গন্ধযুক্ত কাদামাটির মতো।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মানুষের সৃষ্টির প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, যা মানুষের দুর্বলতা ও নম্রতার প্রতীক। এটি আল্লাহর কুদরত ও সৃষ্টির রহস্যের প্রতি ইঙ্গিত করে। মানুষকে তার উৎস স্মরণ করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।

২. কুরআনের সংরক্ষণ ও অলৌকিকতা

আয়াত (১৫:৯):
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
অর্থ:
“নিশ্চয়ই আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা কুরআনের সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কুরআন আল্লাহর বাণী এবং এটি যেকোনো বিকৃতি বা পরিবর্তন থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। এটি মুমিনদের জন্য একটি আশ্বাস যে, কুরআন সর্বদা হেফাজত থাকবে।

৩. শয়তানের ধোঁকা থেকে সতর্কতা

আয়াত (১৫:৩৯-৪০):
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
অর্থ:
“শয়তান বলল, হে আমার রব, যেহেতু তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছ, আমি পৃথিবীতে মানুষের জন্য পাপকে সুশোভিত করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। তবে তোমার মাখলুস (নিষ্ঠাবান) বান্দাদের ব্যতীত।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে শয়তানের ধোঁকা ও তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। শয়তান মানুষের জন্য পাপকে আকর্ষণীয় করে তোলে, কিন্তু আল্লাহর নিষ্ঠাবান বান্দারা এর থেকে রক্ষা পায়। এটি মুমিনদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সতর্ক থাকার শিক্ষা দেয়।

৪. আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত

আয়াত (১৫:৪৯):
نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থ:
“আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর ক্ষমা ও দয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এটি মুমিনদের জন্য আশার বার্তা যে, আল্লাহ তাদের গুনাহ ক্ষমা করতে প্রস্তুত। মানুষ যতই পাপী হোক না কেন, আল্লাহর দরজা সর্বদা খোলা।

৫. আখিরাতের সতর্কবার্তা

আয়াত (১৫:৯২-৯৩):
فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থ:
“আপনার রবের শপথ! আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব তাদের কর্ম সম্পর্কে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে মানুষের কর্মের হিসাব নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মানুষকে দুনিয়ার জীবনের মোহ ত্যাগ করে আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার আমলের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।

উপসংহার:

সূরা হিজরের এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর কুদরত, কুরআনের মর্যাদা, শয়তানের ধোঁকা থেকে সতর্কতা, আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত এবং আখিরাতের সতর্কবার্তা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এই শিক্ষাগুলো মুমিনদের জীবনের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে।

সূরা হিজর এর শানে নুযুল

সূরা হিজর (আরবি: سورة الحجر) কুরআনের ১৫তম সূরা এবং এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরার শানে নুযুল (অবতরণের প্রেক্ষাপট) সম্পর্কে তাফসীরবিদগণ বিভিন্ন বর্ণনা দিয়েছেন। সূরা হিজরের শানে নুযুল ও এর প্রেক্ষাপট নিচে আলোচনা করা হলো:

১. মক্কী সূরা

সূরা হিজর মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগের সূরাগুলোর মধ্যে একটি, যখন মুসলমানরা মক্কায় কাফিরদের অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। এই সূরায় মুমিনদেরকে ধৈর্য ধারণ করার এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২. কাফিরদের প্রত্যাখ্যান ও উপহাস

সূরা হিজরের শানে নুযুল সম্পর্কে বলা হয় যে, মক্কার কাফিররা রাসূল (সা.)-কে উপহাস করত এবং কুরআনের আয়াতগুলোকে অস্বীকার করত। তারা রাসূল (সা.)-কে জাদুকর, পাগল ইত্যাদি অপবাদ দিত। এই সূরায় আল্লাহ কাফিরদের প্রত্যাখ্যান ও তাদের শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন।

৩. নবীদের কাহিনী ও শিক্ষা

সূরা হিজরে নবীদের কাহিনী যেমন আদম (আ.), ইব্রাহিম (আ.), লুত (আ.) এবং শুআইব (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এই কাহিনীগুলো মুমিনদেরকে ধৈর্য, তাওয়াক্কুল ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা দেয়। এটি মক্কার কাফিরদেরকে সতর্ক করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে যে, যারা নবীদেরকে মিথ্যা বলেছে, তাদের পরিণতি ভয়াবহ হয়েছে।

৪. শয়তানের ধোঁকা থেকে সতর্কতা

সূরা হিজরে শয়তানের ধোঁকা ও তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। এটি মুমিনদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়। শয়তান আদম (আ.)-কে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং সে এখনও মানুষকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। এই সূরায় শয়তানের চক্রান্ত থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৫. কুরআনের সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি

সূরা হিজরের ৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।”
এই আয়াতটি কাফিরদের অপপ্রচার ও কুরআন বিকৃত করার চেষ্টার জবাবে অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ কুরআনের সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা মুমিনদের জন্য একটি আশ্বাস।

৬. মুমিনদের জন্য সান্ত্বনা

সূরা হিজরে মুমিনদেরকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন কাফিরদের উপহাস ও নির্যাতনে বিচলিত না হয়। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তাদের ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করবেন। এই সূরায় মুমিনদেরকে ধৈর্য ধারণ ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৭. আখিরাতের সতর্কবার্তা

সূরা হিজরে কিয়ামত ও আখিরাতের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। এটি মানুষকে দুনিয়ার জীবনের মোহ ত্যাগ করে আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে। মক্কার কাফিররা আখিরাতকে অস্বীকার করত, তাই এই সূরায় তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।

উপসংহার:

সূরা হিজরের শানে নুযুল মক্কার কাফিরদের প্রত্যাখ্যান, মুমিনদের সান্ত্বনা, নবীদের কাহিনী, শয়তানের ধোঁকা থেকে সতর্কতা এবং কুরআনের সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতির সাথে সম্পর্কিত। এই সূরায় মুমিনদেরকে ধৈর্য, তাওয়াক্কুল ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটি মক্কার কাফিরদেরকে সতর্ক করার পাশাপাশি মুমিনদের জন্য একটি আশার বার্তা বহন করে।