You are currently viewing সূরা হাশর সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত
সূরা হাশর

সূরা হাশর সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত

সূরা হাশর এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা হাশর   সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।

সূরা হাশর 

সূরা হাশর সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

১. সূরা হাশর মক্কী না মাদানী?

উত্তর: মাদানী সূরা।

২. সূরা হাশরে কয়টি আয়াত আছে?

উত্তর: ২৪টি আয়াত।

৩. সূরা হাশরের মূল বিষয় কী?

উত্তর: ইহুদি গোত্র বনু নাদীরের বিরুদ্ধে আল্লাহর ব্যবস্থা, তাকওয়া ও আল্লাহর স্মরণ।

৪. হাশর শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: সমাবেশ বা জমায়েত।

৫. বনু নাদীরের ঘটনা কী?

উত্তর: তারা চুক্তি ভঙ্গ করায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, ফলে আল্লাহর নির্দেশে তাদের মদিনা থেকে বের করে দেওয়া হয়।

৬. সূরা হাশরে আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম বেশি আলোচিত হয়েছে?

উত্তর: “আল-মালিকুল হক্ব” (প্রকৃত মালিক)।

৭. সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতকে কী বলা হয়?

উত্তর: “মা‘কুলাত” বা আল্লাহর স্মরণের আয়াত।

৮. সূরা হাশরে ফাই’ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

উত্তর: ফাই’ (শত্রুর পরিত্যক্ত সম্পদ) আল্লাহ ও রাসূলের জন্য।

৯. সূরা হাশরে কোন নবীর দোয়া উল্লেখ আছে?

উত্তর: মুসা (আ.)-এর সম্প্রদায়ের দোয়া: “রাব্বানَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا (হাশর 59:10)।

১০. সূরা হাশরে মুনাফিকদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

উত্তর: তারা মুসলমানদের বিপদে সহায়তা করে না।

১১. সূরা হাশরের কোন আয়াতে আল্লাহর ৯টি নাম একসাথে এসেছে?

উত্তর: আয়াত ২৩-২৪।

১২. “হুয়াল্লাহুল্লাজী…” দিয়ে শুরু হয় কোন সূরাটি?

উত্তর: সূরা হাশর (আয়াত ২৩)।

১৩. সূরা হাশরে মুহাজির ও আনসারদের কী গুণ বলা হয়েছে?

উত্তর: তারা একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল।

১৪. সূরা হাশরে কাদেরকে “শয়তানের অনুসারী” বলা হয়েছে?

উত্তর: ইহুদি ও মুনাফিকদের।

১৫. সূরা হাশরের শেষ আয়াত পড়লে কী হয়?

উত্তর: সকালে পড়লে সন্ধ্যা পর্যন্ত, সন্ধ্যায় পড়লে সকাল পর্যন্ত নিরাপত্তা থাকে।

১৬. সূরা হাশরে আল্লাহর কোন সৃষ্টির কথা উল্লেখ আছে?

উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, বৃষ্টি ইত্যাদি।

১৭. সূরা হাশরে কার সম্পদ বণ্টনের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: বনু নাদীরের ফাই’ সম্পদ।

১৮. সূরা হাশরে আল্লাহ কিসের নির্দেশ দিয়েছেন?

উত্তর: তাকওয়া অবলম্বন ও আল্লাহর আদেশ মানার।

১৯. সূরা হাশরে মুমিনদের কী উপদেশ দেওয়া হয়েছে?

উত্তর: পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

২০. সূরা হাশরের শেষ আয়াতে আল্লাহর কোন বিশেষ গুণ বর্ণিত হয়েছে?

উত্তর: “আল-হাকীম, আল-খাবীর” (প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ)।

সূরা হাশর সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)

১. সূরা হাশর কোন ধরনের সূরা?

  1. a) মক্কী
    b) মাদানী ✅
    c) মিশ্রিত
    d) কোনোটিই নয়

২. সূরা হাশরে কয়টি আয়াত আছে?

  1. a) ২০
    b) ২২
    c) ২৪ ✅
    d) ২৬

৩. হাশর শব্দের অর্থ কী?

  1. a) শাস্তি
    b) সমাবেশ ✅
    c) বিজয়
    d) দান

৪. সূরা হাশরে কার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে?

  1. a) বনু কুরাইজা
    b) বনু নাদীর ✅
    c) বনু কায়নুকা
    d) বনু কিনানা

৫. সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতকে কী বলে?

  1. a) মুফাসসালাত
    b) মা‘কুলাত ✅
    c) মুবাশশিরাত
    d) মুজিজাত

৬. সূরা হাশরে আল্লাহর কোন গুণ বেশি উল্লেখিত?

  1. a) আল-রহমান
    b) আল-মালিকুল হক্ব ✅
    c) আল-জাব্বার
    d) আল-মুতাকাব্বির

৭. “হুয়াল্লাহুল্লাজী…” কোন সূরার অংশ?

  1. a) সূরা ফাতিহা
    b) সূরা ইখলাস
    c) সূরা হাশর ✅
    d) সূরা নাস

৮. সূরা হাশরে ফাই’ সম্পদ কার জন্য?

  1. a) সাধারণ মুসলমান
    b) আল্লাহ ও রাসূল ✅
    c) শুধু আনসার
    d) শুধু মুহাজির

৯. সূরা হাশরে কার দোয়া উল্লেখ আছে?

  1. a) ইব্রাহিম (আ.)
    b) মুসা (আ.)-এর সম্প্রদায় ✅
    c) ঈসা (আ.)
    d) নূহ (আ.)

১০. সূরা হাশরে মুনাফিকদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

  1. a) তারা বিশ্বাসী
    b) তারা সাহায্যকারী
    c) তারা শয়তানের অনুসারী ✅
    d) তারা নেতৃত্ব দেয়

১১. সূরা হাশরের শেষ আয়াত পড়লে কী লাভ হয়?

  1. a) ধন-সম্পদ বৃদ্ধি
    b) নিরাপত্তা ✅
    c) রোগমুক্তি
    d) বিজয় লাভ

১২. সূরা হাশরে আল্লাহর কয়টি নাম একসাথে উল্লেখ আছে?

  1. a) ৫টি
    b) ৭টি
    c) ৯টি ✅
    d) ১১টি

১৩. সূরা হাশরে কার সম্পদ বণ্টন নিয়ে আলোচনা আছে?

  1. a) বনু কুরাইজা
    b) বনু নাদীর ✅
    c) বনু উমাইয়া
    d) বনু হাশিম

১৪. সূরা হাশরে মুমিনদের প্রধান উপদেশ কী?

  1. a) সম্পদ কুক্ষিগত করা
    b) তাকওয়া অবলম্বন ✅
    c) যুদ্ধ করা
    d) ব্যবসা করা

১৫. সূরা হাশরের শেষ আয়াতে আল্লাহর কোন গুণ বলা হয়েছে?

  1. a) আল-সামী
    b) আল-হাকীম ✅
    c) আল-কাহহার
    d) আল-ফাত্তাহ

১৬. সূরা হাশরে কোন গোত্রের চুক্তি ভঙ্গের কথা বলা হয়েছে?

  1. a) বনু কাইনুকা
    b) বনু নাদীর ✅
    c) বনু সাকিফ
    d) বনু তামিম

১৭. সূরা হাশরে আল্লাহর সৃষ্টির কোন উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?

  1. a) সাগর
    b) পাহাড় ✅
    c) মরুভূমি
    d) বন

১৮. সূরা হাশরে কার প্রতি সহানুভূতিশীল বলা হয়েছে?

  1. a) মুহাজির ও আনসার ✅
    b) ইহুদি ও খ্রিস্টান
    c) মুনাফিক ও কাফির
    d) আরব ও অনারব

১৯. সূরা হাশরে আল্লাহর নির্দেশ কী?

  1. a) শত্রুকে ক্ষমা করা
    b) আল্লাহর আদেশ মানা ✅
    c) সম্পদ জমা করা
    d) সবাইকে দান করা

২০. সূরা হাশরের শেষে আল্লাহর কোন নাম এসেছে?

  1. a) আল-খালিক
    b) আল-খাবীর ✅
    c) আল-মুহাইমিন
    d) আল-কাদির

২১. সূরা হাশর নাজিল হয়েছে মূলত কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে?

  1. a) বদরের যুদ্ধ
    b) উহুদের যুদ্ধ
    c) বনু নাদীরের বহিষ্কার ✅
    d) মক্কা বিজয়

২২. সূরা হাশরে আল্লাহর কোন বিশেষ ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে?

  1. a) জীবিকা দান
    b) মৃত্যু দেওয়া
    c) হৃদয় পরিবর্তন করা ✅
    d) বৃষ্টি দেওয়া

২৩. সূরা হাশরে কার প্রতি সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে?

  1. a) মুমিন
    b) মুনাফিক ও ইহুদি ✅
    c) শুধু কাফির
    d) শুধু মুশরিক

২৪. সূরা হাশরের শেষ আয়াত পড়লে কতক্ষণ নিরাপত্তা থাকে?

  1. a) ১২ ঘণ্টা ✅
    b) ২৪ ঘণ্টা
    c) ১ সপ্তাহ
    d) ১ মাস

২৫. সূরা হাশরে আল্লাহর স্মরণের গুরুত্ব কী?

  1. a) সম্পদ বৃদ্ধি
    b) হৃদয়ের প্রশান্তি ✅
    c) দীর্ঘ জীবন
    d) সন্তান লাভ

✅ সঠিক উত্তর

এই প্রশ্নোত্তরগুলো সূরা হাশর সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেবে এবং পরীক্ষার জন্য সহায়ক হবে।

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত (আয়াত ২২-২৪)

আরবি:

هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِى لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَـٰلِمُ ٱلْغَيْبِ وَٱلشَّهَـٰدَةِ ۖ هُوَ ٱلرَّحْمَـٰنُ ٱلرَّحِيمُ ﴿٢٢﴾
هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِى لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْمَلِكُ ٱلْقُدُّوسُ ٱلسَّلَـٰمُ ٱلْمُؤْمِنُ ٱلْمُهَيْمِنُ ٱلْعَزِيزُ ٱلْجَبَّارُ ٱلْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَـٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ ﴿٢٣﴾
هُوَ ٱللَّهُ ٱلْخَـٰلِقُ ٱلْبَارِئُ ٱلْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ ٱلْأَسْمَآءُ ٱلْحُسْنَىٰ ۚ يُسَبِّحُ لَهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۖ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ﴿٢٤﴾

বাংলা উচ্চারণ:

আয়াত ২২:
“হুওয়াল্লা-হুল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়া, ‘আ-লিমুল গায়বি ওয়াশ শাহা-দাহ, হুওয়ার রাহমা-নুর রাহীম।”

আয়াত ২৩:
“হুওয়াল্লা-হুল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়া, আল-মালিকুল কুদ্দু-সুস সালা-মুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল ‘আযীযুল জাব্বা-রুল মুতাকাব্বির, সুবহা-নাল্লা-হি ‘আম্মা- ইউশরিকূন।”

আয়াত ২৪:
“হুওয়াল্লা-হুল খা-লিকুল বা-রি’উল মুসাও-ওয়ির, লাহুল আসমা-উল হুসনা-, ইউসাব্বিহু লাহু- মা- ফিস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব, ওয়া হুওয়াল ‘আযীযুল হাকীম।”

বাংলা অনুবাদ (মাওলানা মুহিউদ্দীন খান):

আয়াত ২২:

“তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী, তিনি পরম দয়ালু, অতি দয়ালু।”

আয়াত ২৩:

“তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি বাদশাহ, পবিত্র, শান্তিদাতা, নিরাপত্তাদানকারী, প্রহরী, পরাক্রমশালী, প্রবলতা প্রদর্শনকারী, মহান। তারা যা শরিক করে, তিনি তা থেকে পবিত্র।”

আয়াত ২৪:

“তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদানকারী। তাঁর জন্য রয়েছে সব সুন্দর নাম। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”

বিশেষ তাৎপর্য:

  1. আল্লাহর নাম ও গুণবাচক সিফাত: এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর ১৬টি সুন্দর নাম (আসমাউল হুসনা) উল্লেখ করা হয়েছে।
  2. তাওহীদের ঘোষণা: একত্ববাদের শক্তিশালী বর্ণনা রয়েছে।
  3. সকাল-সন্ধ্যার আমল: রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ আয়াতগুলো পড়বে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহর হিফাজতে থাকবে, আর সন্ধ্যায় পড়লে সকাল পর্যন্ত নিরাপত্তা পাবে (তিরমিজি)।
  4. শিরক থেকে পবিত্রতা: আয়াত ২৩-এ আল্লাহ শিরক থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র বলে ঘোষিত হয়েছেন।

এ আয়াতগুলো নিয়মিত পাঠ করলে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহর রহমত ও হিফাজত লাভ করা যায়।

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ার নিয়ম

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত (২২-২৪) পড়ার নিয়ম ও ফজিলত

📖 পঠন পদ্ধতি:

  1. পবিত্রতা অর্জন:
    • ওজু করে নেওয়া উত্তম (তবে ওজু ছাড়াও পড়া যায়)।
    • নির্জন ও শ্রদ্ধার সাথে পাঠ করা ভালো।
  2. সময়:
    • সকালে: ফজরের পর বা সূর্যোদয়ের পর (সারা দিনের হিফাজতের জন্য)।
    • সন্ধ্যায়: মাগরিব বা এশার পর (সারা রাতের হিফাজতের জন্য)।
    • বিপদ, অসুস্থতা বা দুশ্চিন্তার সময়ও পড়া যায়।
  3. কতবার পড়বেন?
    • ১ বার পড়লেই ফজিলত রয়েছে।
    • সুন্নত অনুযায়ী ৩ বার পড়া ভালো (বিশেষ নিরাপত্তার জন্য)।
  4. দোয়া ও ইস্তেগফার:
    • আয়াত পড়ার পর “সুবহানাল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ”দরুদ পড়ুন।
    • নিজের প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।

🌟 ফজিলত ও উপকারিতা (হাদিসের আলোকে):

  1. নিরাপত্তা:
    • রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি সকালে সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়বে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহর হিফাজতে থাকবে। আর যে সন্ধ্যায় পড়বে, সে সকাল পর্যন্ত হিফাজতে থাকবে।” (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

  1. আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা:
    • এ আয়াতগুলোতে আল্লাহর ১৬টি নাম রয়েছে, যা ইবাদত ও দোয়ার জন্য বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ।
  2. শিরক থেকে পবিত্রতা:
    • আয়াত ২৩-এ আল্লাহ শিরক থেকে পবিত্র—এটি ঈমানকে শক্তিশালী করে।
  3. অসুস্থতা ও বিপদ থেকে রক্ষা:
    • নিয়মিত পাঠ করলে শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা লাভ হয়।

📿 আমলের টিপস:

  • নিয়মিত অভ্যাস করুন: প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার চেষ্টা করুন।
  • পরিবারের সদস্যদের শেখান: সুরক্ষার জন্য এটি পারিবারিক আমল হিসেবে গ্রহণ করুন।
  • দোয়ার আগে পড়ুন: বিশেষ হাজত পূরণের জন্য এ আয়াত পড়ে দোয়া করুন।

✅ সতর্কতা: শুধু আয়াত পড়াই যথেষ্ট নয়—আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সতর্ক জীবনযাপন করুন।

উদাহরণ:

“হে আল্লাহ! আমি সূরা হাশরের শেষ আয়াত দ্বারা আপনার কাছে আশ্রয় চাই সকল অনিষ্ট থেকে।”

এই নিয়মে পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহর বিশেষ রহমত ও হিফাজত লাভ হবে।

সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই

সূরা হাশর: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্ব ও শিক্ষা

📜 সূরা হাশরের সংক্ষিপ্ত পরিচয়:

  • নাম: সূরা হাশর (আরবি: الحشر)
  • অর্থ: “সমাবেশ” বা “জমায়েত” (কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টিকে একত্রিত করা হবে)।
  • সূরার ধরন: মাদানী সূরা।
  • আয়াত সংখ্যা: ২৪টি।
  • পারা: ২৮তম পারায় অবস্থিত (কুরআনের ৫৯তম সূরা)।
  • নাযিলের সময়: হিজরি ৪র্থ সনে (বনু নাদীরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে)।

📖 শানে নুযূল (নাযিলের প্রেক্ষাপট):

সূরা হাশর ইহুদি গোত্র বনু নাদীরের বিরুদ্ধে নাযিল হয়। তারা মদিনায় মুসলমানদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানরা তাদেরকে মদিনা থেকে বহিষ্কার করে। এই সূরায় তাদের পরাজয়, ফাই‘ (যুদ্ধবিহীন লব্ধ সম্পদ) এর বিধান এবং মুমিনদের জন্য শিক্ষা বর্ণনা করা হয়েছে।

🔍 সূরা হাশরের মূল বিষয়বস্তু:

  1. বনু নাদীরের শাস্তি: তাদের ষড়যন্ত্র ও পরিণতি।
  2. ফাই‘ সম্পদের বিধান: আল্লাহ ও রাসূলের জন্য নির্ধারিত।
  3. আল্লাহর মহিমা ও গুণাবলী: বিশেষত শেষ তিন আয়াতে ১৬টি সুন্দর নাম উল্লেখ।
  4. মুনাফিকদের চরিত্র: তারা মুসলমানদের বিপদে সহায়তা করে না।
  5. মুমিনদের বৈশিষ্ট্য: আনসার-মুহাজিরের ভ্রাতৃত্ব ও ত্যাগ।
  6. পরকালের প্রস্তুতি: তাকওয়া ও আল্লাহর স্মরণের গুরুত্ব।

📚 সূরা হাশরের গুরুত্বপূর্ণ দিক:

  1. আল্লাহর কুদরতের প্রকাশ: বনু নাদীরের পরাজয় আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছিল।
  2. সম্পদ বণ্টনের নীতি: ফাই‘ সম্পদ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ব্যবহারের নির্দেশ।
  3. আল্লাহর নাম ও সিফাত: আয়াত ২২-২৪ তাওহীদের শ্রেষ্ঠ ঘোষণা।
  4. সামাজিক ন্যায়বিচার: দুর্বলদের অধিকার রক্ষার শিক্ষা।
  5. আখিরাতমুখী জীবন: সম্পদের মোহ ত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।

💡 সূরা হাশর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা:

  1. আল্লাহর উপর ভরসা: সব ক্ষমতা তাঁর হাতে (আয়াত ২৩-২৪)।
  2. চুক্তির গুরুত্ব: বিশ্বাসঘাতকতার পরিণতি ভয়াবহ (আয়াত ২-৫)।
  3. সম্পদের সদব্যবহার: ফাই‘ সম্পদ সমাজের কল্যাণে ব্যয় (আয়াত ৭-১০)।
  4. মুনাফিকদের সতর্কতা: তাদের থেকে সাবধান থাকা (আয়াত ১১-১৭)।
  5. আনসার-মুহাজিরের আদর্শ: ভ্রাতৃত্ব ও সমাজগঠনের মডেল (আয়াত ৯)।

📖 সূরা হাশরের আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ):

১. আল্লাহর একত্ব ও গুণাবলী:

আয়াত ২৩:
“তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; তিনি রাজা, পবিত্র, শান্তিদাতা, নিরাপত্তাদানকারী, প্রহরী, পরাক্রমশালী, প্রবল, অহংকারী। তারা যা শরিক করে, তিনি তা থেকে পবিত্র।”

২. ফাই‘ সম্পদের বিধান:

আয়াত ৭:
“আল্লাহ তাঁর রাসূলকে যে ফাই‘ (শত্রুর পরিত্যক্ত সম্পদ) দিয়েছেন, তা আল্লাহ, রাসূল ও নিকটাত্মীয়দের জন্য… যাতে সম্পদ কেবল ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়।”

৩. মুনাফিকদের চরিত্র:

আয়াত ১৪:
“তারা মুমিনদের সাথে একত্রে যুদ্ধ করে না, শুধু সুরক্ষিত দুর্গে থেকে লড়াই করে। তাদের শক্তি অহংকারে পূর্ণ, কিন্তু তারা বোঝে না।”

৪. মুমিনদের ভ্রাতৃত্ব:

আয়াত ৯:
“যারা তাদের আগে বাড়তি পেয়েছে (মুহাজির), তারা অভাবগ্রস্তদের প্রতি ঈর্ষা করে না এবং নিজেরা দারিদ্র্য সত্ত্বেও অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়।”

৫. তাকওয়া ও আখিরাতের স্মরণ:

আয়াত ১৮:
“হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত চিন্তা করা যে, সে আগামীকালের (পরকালের) জন্য কী প্রেরণ করেছে।”

🎯 উপসংহার:

সূরা হাশর মুসলমানদের জন্য একটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক নির্দেশিকা। এটি শত্রুর মোকাবেলা, সম্পদ বণ্টন, আল্লাহর স্মরণ এবং সমাজ গঠনের ভারসাম্য শেখায়। নিয়মিত এ সূরা তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করলে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পার্থিব জীবনে সঠিক পথের দিশা মিলে।

📌 বিশেষ সুপারিশ: সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত (২২-২৪) প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় পড়ুন—এটি হিফাজত ও প্রশান্তির উৎস।