সূরা সাবা : সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু, ফযিলত ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত সহ সূরা সাবা সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন উত্তর দেয়া হলো । আশাকরি সূরাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সূরা সাবা
সূরা সাবা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর:
- সূরা সাবা মক্কা না মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে?
- উত্তর: মক্কায়।
- সূরা সাবা কত নং সূরা?
- উত্তর: ৩৪ নং সূরা।
- সূরা সাবায় কয়টি আয়াত আছে?
- উত্তর: ৫৪টি।
- সূরা সাবা নামকরণের কারণ কী?
- উত্তর: এই সূরায় সাবা নামক একটি সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ আছে (আয়াত ১৫)।
- সাবা সম্প্রদায়ের প্রধান শাস্তি কী ছিল?
- উত্তর: তাদের উপর বন্যার পানি প্রবাহিত করা হয়েছিল (আয়াত ১৬)।
- সূরা সাবায় কার কথা বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে?
- উত্তর: সুলাইমান (আ.) ও দাউদ (আ.)-এর কথা।
- সুলাইমান (আ.) কীভাবে জিনদের উপর কর্তৃত্ব করতেন?
- উত্তর: আল্লাহ তাকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছিলেন (আয়াত ১২-১৩)।
- সূরা সাবায় কাফিরদের কী সতর্ক করা হয়েছে?
- উত্তর: কিয়ামত ও আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
- সূরা সাবায় মুমিনদের কী সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে?
- উত্তর: জান্নাত ও আল্লাহর রহমতের সুসংবাদ (আয়াত ৪)।
- সাবা জনপদ কোথায় অবস্থিত ছিল?
- উত্তর: ইয়েমেনে (প্রাচীন সভ্যতা)।
- সূরা সাবায় আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম বেশি উল্লেখ হয়েছে?
- উত্তর: “الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ” (সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়)।
- সূরা সাবায় কিয়ামতের দিন কী হবে বলা হয়েছে?
- উত্তর: কাফিররা অনুশোচনা করবে কিন্তু কোনো লাভ হবে না (আয়াত ৩০-৩৩)।
- সাবা সম্প্রদায়ের পতনের কারণ কী ছিল?
- উত্তর: আল্লাহর নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা (আয়াত ১৬-১৭)।
- সূরা সাবায় শয়তানের কী ভূমিকা বর্ণনা করা হয়েছে?
- উত্তর: সে মানুষকে পথভ্রষ্ট করে (আয়াত ২০)।
- দাউদ (আ.)-কে আল্লাহ কী বিশেষ নেয়ামত দিয়েছিলেন?
- উত্তর: লোহা নরম করে দেওয়ার ক্ষমতা (আয়াত ১০-১১)।
- সূরা সাবায় মৃত্যুর পর কী হবে বলা হয়েছে?
- উত্তর: সকলকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে (আয়াত ৪০-৪২)।
- সূরা সাবায় মুশরিকদের কী বলা হয়েছে?
- উত্তর: তারা মিথ্যা উপাস্যের পূজা করে (আয়াত ৪২-৪৩)।
- সূরা সাবায় আল্লাহর কুদরতের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
- উত্তর: আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি, বৃষ্টি দেওয়া ইত্যাদি (আয়াত ৯)।
- সূরা সাবায় নবীদের দায়িত্ব কী বলা হয়েছে?
- উত্তর: শুধু সুস্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া (আয়াত ২৮)।
- সূরা সাবার শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
- উত্তর: “আর তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়” (আয়াত ৫৪)।
সূরা সাবা সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন):
- সূরা সাবা কোন ধরনের সূরা?
a) মদনী
b) মক্কী
c) মিশ্র - সূরা সাবায় কয়টি আয়াত আছে?
a) ৫৪
b) ৭৮
c) ১১৪ - সাবা সম্প্রদায়ের শাস্তি কী ছিল?
a) ভূমিকম্প
b) বন্যা
c) আগুন - সুলাইমান (আ.)-এর বিশেষ ক্ষমতা কী ছিল?
a) জিনদের উপর নিয়ন্ত্রণ
b) পানিকে রক্তে পরিণত করা
c) মৃতকে জীবিত করা - সূরা সাবায় কার কথা বিশেষভাবে এসেছে?
a) মুসা (আ.)
b) সুলাইমান (আ.)
c) নূহ (আ.) - সাবা সম্প্রদায় কোথায় বসবাস করত?
a) মক্কা
b) ইয়েমেন
c) সিরিয়া - দাউদ (আ.)-কে আল্লাহ কী ক্ষমতা দিয়েছিলেন?
a) লোহা নরম করার ক্ষমতা
b) সমুদ্র বিভক্ত করার ক্ষমতা
c) অদৃশ্য জানার ক্ষমতা - সূরা সাবায় কাফিরদের কীসে সতর্ক করা হয়েছে?
a) দুনিয়াবি শাস্তি
b) আখিরাতের শাস্তি
c) অর্থনৈতিক সংকট - সূরা সাবায় আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম বারবার এসেছে?
a) الرحمن
b) العليم الحكيم
c) السميع البصير - সাবা সম্প্রদায়ের পতনের মূল কারণ কী?
a) যুদ্ধ
b) অকৃতজ্ঞতা
c) দুর্ভিক্ষ - সূরা সাবায় শয়তানের প্রধান কাজ কী?
a) মানুষকে পথভ্রষ্ট করা
b) মানুষকে সাহায্য করা
c) ফেরেশতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা - সূরা সাবায় নবীদের প্রধান দায়িত্ব কী?
a) শাসন করা
b) সুস্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছে দেওয়া
c) যুদ্ধ করা - সূরা সাবায় মুমিনদের কীসের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে?
a) দুনিয়াবি সম্পদ
b) জান্নাত
c) রাজ্য - সূরা সাবার শেষ আয়াতে আল্লাহর কোন গুণ বলা হয়েছে?
a) العليم الحكيم
b) الرحمن الرحيم
c) القدوس السلام - সূরা সাবায় কিয়ামতের দিন কাফিররা কী করবে?
a) আনন্দ করবে
b) অনুশোচনা করবে
c) গর্ব করবে - সূরা সাবায় আল্লাহর কুদরতের উদাহরণ কী?
a) পাহাড় সৃষ্টি
b) বৃষ্টি দেওয়া
c) নদী সৃষ্টি - সূরা সাবায় মুশরিকরা কিসের পূজা করত?
a) আল্লাহর
b) মূর্তি
c) ফেরেশতা - সূরা সাবায় দাউদ (আ.)-এর কী বিশেষত্ব বলা হয়েছে?
a) তিনি নবী ছিলেন
b) তিনি বাদশাহ ছিলেন
c) তিনি সৈন্য ছিলেন - সূরা সাবায় সাবা সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কারণ কী?
a) তারা নবীকে হত্যা করেছিল
b) তারা নেয়ামতের অকৃতজ্ঞ ছিল
c) তারা যুদ্ধ করেছিল - সূরা সাবায় আল্লাহর শাস্তি কেমন বলা হয়েছে?
a) দ্রুত
b) কঠোর
c) নরম - সূরা সাবায় নবীদের বিরুদ্ধে কারা যুদ্ধ করত?
a) মুমিনরা
b) কাফিররা
c) ফেরেশতারা - সূরা সাবায় আল্লাহর রহমত কাদের জন্য?
a) মুমিনদের
b) কাফিরদের
c) সবাই - সূরা সাবায় সুলাইমান (আ.)-এর সেনাবাহিনীতে কারা ছিল?
a) মানুষ
b) জিন ও পাখি
c) ফেরেশতা - সূরা সাবায় মৃত্যুর পর কী হবে?
a) সবাই স্বাধীন
b) আল্লাহর সামনে হাজির
c) সবাই ঘুমাবে - সূরা সাবায় আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন কী বলা হয়েছে?
a) আকাশ ও পৃথিবী
b) শুধু মানুষ
c) শুধু প্রাণী
এই প্রশ্নগুলো সূরা সাবা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেবে এবং পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে।
সূরা সাবা এর শানে নুযুল, সূরা সাবা এর ফজিলত,
সূরা সাবা এর শানে নুযুল (অবতীর্ণ হওয়ার কারণ)
সূরা সাবা একটি মাক্কী সূরা যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এর শানে নুযুল বা অবতীর্ণ হওয়ার পটভূমি সম্পর্কে তাফসীরবিদগণ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন:
- মুশরিকদের অপপ্রচার ও সন্দেহ:
- মক্কার কাফিররা নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে জাদুকর, কবি বা পাগল বলে অপপ্রচার করত। এই সূরায় তাদের মিথ্যা দাবিগুলো খণ্ডন করে আল্লাহর একত্ব ও রিসালাতের সত্যতা প্রমাণ করা হয়েছে।
- সাবা সম্প্রদায়ের ইতিহাস:
- সাবা (ইয়েমেনের একটি প্রাচীন সভ্যতা) ছিল সম্পদ ও সুখে সমৃদ্ধ, কিন্তু তারা আল্লাহর নেয়ামতের অকৃতজ্ঞ হলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় (আয়াত ১৫-১৭)। এটি মক্কার কাফিরদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
- দাউদ (আ.) ও সুলাইমান (আ.)-এর কাহিনী:
- কাফিররা নবীদের অলৌকিক ঘটনায় অবিশ্বাস করত। এই সূরায় দাউদ (আ.) ও সুলাইমান (আ.)-এর মুজিজার বর্ণনা দিয়ে তাদের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
- আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাস:
- মক্কার লোকেরা পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশে অবিশ্বাস করত। সূরাটিতে কিয়ামত ও আল্লাহর শাস্তির বর্ণনা দিয়ে তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
সূরা সাবা এর ফজিলত (মাহাত্ম্য)
কুরআনের প্রতিটি সূরারই বিশেষ ফজিলত রয়েছে। সূরা সাবা সম্পর্কে কিছু ফজিলত হাদিস ও তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে:
- আল্লাহর কুদরত ও হিকমাতের জ্ঞান:
- এই সূরায় আল্লাহর ক্ষমতা, প্রজ্ঞা ও সৃষ্টির নিদর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আছে, যা ঈমান বৃদ্ধি করে।
- সাবা সম্প্রদায়ের শিক্ষা:
- এটি অকৃতজ্ঞতা ও আল্লাহর নেয়ামতের অপব্যবহারের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে (আয়াত ১৬-১৭)।
- দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা:
- সূরাটিতে মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ ও কাফিরদের জন্য শাস্তির বর্ণনা রয়েছে, যা মানুষকে সঠিক পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে।
- রোগ-শোক ও বিপদ থেকে মুক্তি:
- কিছু আলেমের মতে, সূরা সাবা নিয়মিত তিলাওয়াত করলে আল্লাহ বিপদ-আপদ থেকে হিফাজত করেন (তবে এ বিষয়ে সরাসরি সহীহ হাদিস নেই, তাই সাধারণ ফজিলত হিসাবে বিবেচ্য)।
- কিয়ামতের ভয়াবহতা স্মরণ:
- এই সূরায় কিয়ামতের বর্ণনা মানুষকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং তাকওয়া অর্জনে সাহায্য করে।
- নবীদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা:
- দাউদ (আ.) ও সুলাইমান (আ.)-এর ঘটনা থেকে নেতৃত্ব, ন্যায়বিচার ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার শিক্ষা পাওয়া যায়।
উপসংহার:
সূরা সাবা মূলত তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত এবং ইতিহাসের শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করে। এটি মক্কার কাফিরদের মিথ্যা অপপ্রচারকে驳斥 করে এবং মুমিনদের জন্য একটি সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। এই সূরার ফজিলত হলো এটি ঈমানী শক্তি বাড়ায় এবং আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে শেখায়।
সতর্কতা:
সূরা সাবা সম্পর্কে কোনো বিশেষ আমল বা মুজিযা (যেমন—কোনো সমস্যার সমাধান) নিয়ে সহীহ হাদিসে উল্লেখ নেই। তাই শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জ্ঞান অর্জনের জন্য এটি পড়া উচিত।
সূত্র:
- তাফসীর ইবনে কাসীর
- তাফসীর জালালাইন
- সহীহ বুখারী ও মুসলিম (সাধারণ ফজিলত সংক্রান্ত হাদিস)
সূরা সাবা আয়াত ৩৯, ৪৬, ২৮, ১৩, ১০, আয়াত ও অর্থসহ ব্যাখ্যা
সূরা সাবা এর নির্বাচিত আয়াতসমূহের অর্থ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১. আয়াত ৩৯:
আয়াত:
قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থ:
“বলুন, নিশ্চয় আমার রব যাকে ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।”
তাফসীর:
- এ আয়াতে আল্লাহর রিজিকদানের ক্ষমতা বর্ণনা করা হয়েছে।
- তিনি কারো রিজিক বাড়ান, কাউকে কম দেন—এটা তাঁর ইচ্ছা ও হিকমতের উপর নির্ভরশীল।
- মানুষ সাধারণত এ সত্য বুঝতে পারে না যে, রিজিকের সম্প্রসারণ বা সংকোচন আল্লাহর পরীক্ষা বা প্রজ্ঞার অংশ।
২. আয়াত ৪৬:
আয়াত:
قُلْ إِنَّمَا أَعِظُكُم بِوَاحِدَةٍ ۖ أَن تَقُومُوا لِلَّهِ مَثْنَىٰ وَفُرَادَىٰ ثُمَّ تَتَفَكَّرُوا ۚ مَا بِصَاحِبِكُم مِّن جِنَّةٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌ لَّكُم بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٍ شَدِيدٍ
অর্থ:
“বলুন, আমি তোমাদেরকে শুধু একটি উপদেশ দিচ্ছি—তোমরা আল্লাহর জন্য দু’জন করে বা একাকী দাঁড়াও, затем চিন্তা করো। তোমাদের সাথী (নবী) কোন জিনে আক্রান্ত নন। তিনি তো শুধু কঠোর শাস্তির আগে তোমাদেরকে সতর্ককারী।”
তাফসীর:
- এ আয়াতে নবী (ﷺ)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সত্য চিন্তা ও গবেষণার জন্য।
- কাফিররা নবীকে পাগল বা জিনগ্রস্ত বলত—এটি তাদের অপবাদ খণ্ডন করে।
- মূল বার্তা: নবী (ﷺ) শুধু সতর্ককারী, তাঁর দাওয়াতের সত্যতা যাচাই করতে আল্লাহর একত্ব নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত।
৩. আয়াত ২৮:
আয়াত:
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থ:
“আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবেই প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।”
তাফসীর:
- এ আয়াতে নবী (ﷺ)-এর বিশ্বব্যাপী রিসালাত ঘোষণা করা হয়েছে।
- তিনি শুধু আরব বা কোনো特定 গোষ্ঠীর জন্য নন, বরং সব মানুষের জন্য।
- অধিকাংশ মানুষ এ সত্য বুঝতে ব্যর্থ হয় বলে আয়াতের শেষে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
৪. আয়াত ১৩:
আয়াত:
يَعْمَلُونَ لَهُ مَا يَشَاءُ مِن مَّحَارِيبَ وَتَمَاثِيلَ وَجِفَانٍ كَالْجَوَابِ وَقُدُورٍ رَّاسِيَاتٍ ۚ اعْمَلُوا آلَ دَاوُودَ شُكْرًا ۚ وَقَلِيلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ
অর্থ:
“তারা (জিনরা) সুলাইমানের জন্য ইচ্ছামতো প্রাসাদ, মূর্তি, বিশাল পানপাত্র ও স্থির পাত্র তৈরি করত। হে দাউদ-পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে আমল করো। কিন্তু আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।”
তাফসীর:
- এ আয়াতে সুলাইমান (আ.)-এর রাজ্য ও জিনদের সেবার বর্ণনা আছে।
- আল্লাহ তাকে এমন ক্ষমতা দিয়েছিলেন যে, জিনরা তাঁর জন্য জটিল নির্মাণ কাজ করত।
- শিক্ষা:
১. আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা (দাউদ পরিবারকে এ নির্দেশ)।
২. প্রকৃত কৃতজ্ঞ বান্দা খুব কম (আয়াতের শেষাংশ)।
৫. আয়াত ১০:
আয়াত:
وَلَقَدْ آتَيْنَا دَاوُودَ مِنَّا فَضْلًا ۖ يَا جِبَالُ أَوِّبِي مَعَهُ وَالطَّيْرَ ۖ وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيدَ
অর্থ:
“আমি দাউদকে আমার পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ দান করেছিলাম। হে পর্বতগুলো! তোমরা তাঁর সাথে তাসবিহ পাঠ করো এবং হে পাখিরা! (তোমরাও)। আর আমি তাঁর জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছিলাম।”
তাফসীর:
- এ আয়াতে দাউদ (আ.)-এর ৩টি মুজিজা উল্লেখিত হয়েছে:
১. পর্বত ও পাখির তাসবিহ: প্রকৃতি তাঁর সাথে আল্লাহর জিকরে অংশ নিত।
২. লোহা নরম করা: তিনি হাতেই লোহা বেঁকিয়ে বর্ম তৈরি করতেন (সুরা আল-আম্বিয়ায় বিস্তারিত)। - শিক্ষা:
- আল্লাহ তাঁর নির্বাচিত বান্দাদের বিশেষ নেয়ামত দেন।
- প্রকৃতিই আল্লাহর গুণগান করে—এটা মানুষের জন্য অনুসরণীয়।
সারসংক্ষেপ:
আয়াত | মূল বিষয় | শিক্ষা |
৩৯ | রিজিকের মালিক আল্লাহ | আল্লাহর উপর ভরসা রাখা |
৪৬ | সত্য চিন্তার আহ্বান | নবীর দাওয়াত যুক্তি ও গভীর চিন্তার দাবিদার |
২৮ | নবীর সার্বজনীন রিসালাত | ইসলাম শুধু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য নয় |
১৩ | সুলাইমানের রাজ্য ও কৃতজ্ঞতা | নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় |
১০ | দাউদের মুজিজা | আল্লাহর কুদরত ও নবীদের মর্যাদা |
এই আয়াতগুলো আল্লাহর ক্ষমতা, নবীদের মিশন ও মানুষের দায়িত্ব সম্পর্কে গভীর দিকনির্দেশনা দেয়।
সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা , সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই
সূরা সাবা: গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত বিশ্লেষণ
১. সূরা সাবা এর গুরুত্বপূর্ণ দিক
- আল্লাহর একত্ব ও ক্ষমতার প্রকাশ:
- সূরাটিতে আল্লাহর সৃষ্টি, রিজিকদান ও শাস্তির ক্ষমতার বর্ণনা রয়েছে (আয়াত ১-৯, ৩৯)।
- প্রকৃতি, মানব ইতিহাস ও নবীদের মুজিজার মাধ্যমে তাঁর কুদরত প্রমাণিত।
- ইতিহাসের শিক্ষা:
- সাবা জাতির ধ্বংস (আয়াত ১৫-১৭), দাউদ ও সুলাইমান (আ.)-এর ঘটনা (আয়াত ১০-১৩) থেকে অকৃতজ্ঞতা ও অহংকারের পরিণতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
- আখিরাতের সতর্কতা:
- কাফিরদের জন্য কঠোর শাস্তি (আয়াত ৩০-৩৩) এবং মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ (আয়াত ৪)।
- নবীর দায়িত্ব ও মানুষের কর্তব্য:
- নবী (ﷺ)-এর রিসালাত সার্বজনীন (আয়াত ২৮), মানুষের দায়িত্ব হলো চিন্তা-গবেষণা করে সত্য গ্রহণ করা (আয়াত ৪৬)।
- শিরকের খণ্ডন:
- মুশরিকদের মিথ্যা উপাস্যের অসারতা তুলে ধরা হয়েছে (আয়াত ২২-২৭)।
২. সূরা সাবা এর শিক্ষা
- আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া:
- সাবা জাতির ধ্বংসের কারণ ছিল অকৃতজ্ঞতা (আয়াত ১৭)।
- অহংকার থেকে বেঁচে থাকা:
- সুলাইমান (আ.)-এর রাজ্য ছিল আল্লাহর দান, কিন্তু তিনি অহংকার করেননি (আয়াত ১২-১৩)।
- সত্য অনুসন্ধান:
- আল্লাহর অস্তিত্ব ও নবীর সত্যতা যাচাই করতে গভীর চিন্তার নির্দেশ (আয়াত ৪৬)।
- দুনিয়ার মোহ ত্যাগ:
- কিয়ামতের দিন সম্পদ ও সন্তান কোনো কাজে আসবে না (আয়াত ৩৫-৩৭)।
- ন্যায়পরায়ণতা:
- দাউদ (আ.)-কে লোহা নরম করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য (আয়াত ১০)।
৩. সূরা সাবা এর মূল বিষয়বস্তু
বিষয় | আলোচ্য要点 | উদাহরণ আয়াত |
তাওহীদ | আল্লাহর একত্ব, ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা | ১-৯, ২২-২৭ |
রিসালাত | নবীদের মিশন ও নবী (ﷺ)-এর সার্বজনীনতা | ২৮, ৪৬ |
আখিরাত | পুনরুত্থান, হিসাব ও শাস্তি/পুরস্কার | ৩-৫, ৩০-৩৩ |
ইতিহাস | সাবা, দাউদ, সুলাইমান (আ.)-এর ঘটনা | ১০-১৭ |
নৈতিকতা | শুকরিয়া, অহংকার ত্যাগ, চিন্তা | ১৩, ১৭, ৪৬ |
৪. বিষয়ভিত্তিক আয়াত: অর্থ ও ব্যাখ্যা
ক. আল্লাহর একত্ব ও কুদরত
আয়াত ৯:
أَفَلَمْ يَرَوْا إِلَىٰ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُم مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ۚ إِن نَّشَأْ نَخْسِفْ بِهِمُ الْأَرْضَ أَوْ نُسْقِطْ عَلَيْهِمْ كِسَفًا مِّنَ السَّمَاءِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّكُلِّ عَبْدٍ مُّنِيبٍ
অর্থ:
“তারা কি তাদের সামনে ও পিছনে আসমান-জমিনের দিকে তাকায় না? আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে জমিতে ধসিয়ে দেব বা আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করব। নিশ্চয় এতে প্রত্যাবর্তনশীল প্রত্যেক বান্দার জন্য নিদর্শন রয়েছে।”
ব্যাখ্যা:
- আল্লাহর ক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে প্রকৃতির বিশালতা ও ধ্বংসের ক্ষমতা উল্লেখ করা হয়েছে।
- শিক্ষা: আল্লাহর আজাব থেকে নিরাপদ মনে করা глупо, তাঁর নিদর্শনগুলো চিন্তা করা উচিত।
খ. নবীর দায়িত্ব ও মানুষের কর্তব্য
আয়াত ২৮:
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থ:
“আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবেই প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।”
ব্যাখ্যা:
- নবী (ﷺ)-এর রিসালাত শুধু আরব বা কোনো特定 গোষ্ঠীর জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবতার জন্য।
- শিক্ষা: ইসলামের বার্তা সার্বজনীন, তাই সবাইকে এ দাওয়াত গ্রহণ করতে হবে।
গ. ইতিহাসের শিক্ষা: সাবা জাতির পতন
আয়াত ১৬:
فَأَعْرَضُوا فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ سَيْلَ الْعَرِمِ وَبَدَّلْنَاهُم بِجَنَّتَيْهِمْ جَنَّتَيْنِ ذَوَاتَيْ أُكُلٍ خَمْطٍ وَأَثْلٍ وَشَيْءٍ مِّن سِدْرٍ قَلِيلٍ
অর্থ:
“তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি তাদের উপর প্রেরণ করলাম ভয়াবহ বন্যা। তাদের দু’টি সুন্দর বাগানের পরিবর্তে দিলাম দু’টি এমন বাগান যেখানে ছিল তিক্ত ফল, ঝোপ ও কিছু কাঁটাযুক্ত গাছ।”
ব্যাখ্যা:
- সাবা জাতি সম্পদে সচ্ছল ছিল, কিন্তু অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহ তাদের বাগান ধ্বংস করে দেন।
- শিক্ষা: নেয়ামতের শুকরিয়া না করলে তা হারাতে হয়।
ঘ. আখিরাতের সতর্কতা
আয়াত ৩৩:
وَمَا كَانَ لَكُمْ أَن تَأْتِيَكُمُ الرُّسُلُ بِبَيِّنَاتٍ ثُمَّ تَسْتَكْبِرُوا فِي الْأَرْضِ وَمَا يَكُونُ لَكُمْ مِّنَ اللَّهِ مِن وَاقٍ
অর্থ:
“তোমাদের জন্য শোভা পায় না যে, রাসূলরা স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসার পরও তোমরা পৃথিবীতে অহংকার করো। আর আল্লাহর (শাস্তি) থেকে তোমাদের কোনো রক্ষাকারী নেই।”
ব্যাখ্যা:
- কাফিররা নবীদের প্রত্যাখ্যান করে অহংকার করত, কিন্তু আখিরাতে তাদের কোনো সাহায্যকারী থাকবে না।
- শিক্ষা: অহংকার ধ্বংসের মূল, আখিরাতে এর শাস্তি ভয়াবহ।
ঙ. নৈতিকতা: চিন্তা ও গবেষণা
আয়াত ৪৬:
قُلْ إِنَّمَا أَعِظُكُم بِوَاحِدَةٍ ۖ أَن تَقُومُوا لِلَّهِ مَثْنَىٰ وَفُرَادَىٰ ثُمَّ تَتَفَكَّرُوا ۚ مَا بِصَاحِبِكُم مِّن جِنَّةٍ
অর্থ:
“বলুন, আমি তোমাদেরকে শুধু একটি উপদেশ দিচ্ছি—তোমরা আল্লাহর জন্য দু’জন করে বা একাকী দাঁড়াও, затем চিন্তা করো। তোমাদের সাথী (নবী) কোন জিনে আক্রান্ত নন।”
ব্যাখ্যা:
- সত্য জানতে একাকী বা সম্মিলিতভাবে চিন্তা করার নির্দেশ।
- শিক্ষা: অন্ধ বিশ্বাস ত্যাগ করে যুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে ইসলামের সত্যতা যাচাই করা উচিত।
৫. উপসংহার
সূরা সাবা তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, ইতিহাসের শিক্ষা ও নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে গভীর আলোচনা করে। এর মূল বার্তাগুলো হলো:
- আল্লাহর একত্ব ও নিদর্শন চিন্তা করুন।
- নবীর সার্বজনীন দাওয়াত গ্রহণ করুন।
- নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুন, অকৃতজ্ঞ হলে সাবা জাতির মতো ধ্বংস হতে পারেন।
- আখিরাতের প্রস্তুতি নিন—অহংকার ও শিরক পরিহার করুন।
- সত্য জানতে গভীরভাবে চিন্তা ও গবেষণা করুন।
এই সূরার শিক্ষাগুলো ব্যক্তিগত, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে প্রয়োগ করে মুমিন হিসেবে উত্তরণ সম্ভব।