You are currently viewing সূরা সাফফাত সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত
সূরা সাফফাত

সূরা সাফফাত সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত

সূরা সাফফাত এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা সাফফাত সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।

সূরা সাফফাত

সূরা সাফফাত সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

১. প্রশ্ন: সূরা সাফফাত মক্কায় নাকি মদীনায় নাযিল হয়েছে?
উত্তর: মক্কায় নাযিল হয়েছে।

২. প্রশ্ন: সূরা সাফফাত কত নং সূরা?
উত্তর: ৩৭ নং সূরা।

৩. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতের আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তর: ১৮২ টি।

৪. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতের প্রথম আয়াতে “সাফফাত” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো ফেরেশতাগণ।

৫. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে কোন নবীর কুরবানির ঘটনা বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর কুরবানির ঘটনা।

৬. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে কাফিরদের শাস্তি হিসেবে কোন আগুনের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: “সাকার” নামক জাহান্নামের আগুন।

৭. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে কোন নবীকে “আল্লাহর বন্ধু” (খলীলুল্লাহ) বলা হয়েছে?
উত্তর: হযরত ইব্রাহীম (আ.)।

৮. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে কোন নবীর জাতি পাখি দ্বারা শাস্তি পেয়েছিল?
উত্তর: হযরত ইলিয়াস (আ.)-এর জাতি।

৯. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে কোন নবীকে “যুন-নুন” বলা হয়েছে?
উত্তর: হযরত ইউনুস (আ.)।

১০. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে আল্লাহ তাআলা কাফিরদেরকে কীসের সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর: শুকনো কাঠের মতো নিষ্প্রাণ বস্তুর সাথে।

১১. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে বেহেশতের ফল হিসেবে কী কী উল্লেখ আছে?
উত্তর: আঙুর, ডালিম ও অন্যান্য ফল।

১২. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে কিয়ামতের দিন কাফিররা কী বলবে?
উত্তর: “হায়! আমরা যদি পুনরুত্থিত হতাম!”

১৩. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাদেরকে “মুকাররাবুন ফেরেশতা” বলেছেন?
উত্তর: যারা আল্লাহর খুব নিকটবর্তী ফেরেশতা।

১৪. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাফিরদেরকে কীভাবে সতর্ক করেছেন?
উত্তর: আগুনের শাস্তি ও লাঞ্ছনার মাধ্যমে।

১৫. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ হিসেবে কী উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, চন্দ্র-সূর্য ও তারকারাজির সৃষ্টি।

১৬. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাদেরকে “মুত্তাক্বীন” (খোদাভীরু) বলেছেন?
উত্তর: যারা আল্লাহকে ভয় করে ও ভালো কাজ করে।

১৭. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে কোন নবীকে “নূহ” (আ.)-এর পর উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: হযরত লূত (আ.)।

১৮. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাফিরদেরকে কীসের উপমা দিয়েছেন?
উত্তর: পাথর ও লোহার মতো কঠিন হৃদয়ের।

১৯. প্রশ্ন: সূরা সাফফাতের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: “সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।”

২০. প্রশ্ন: সূরা সাফফাত পাঠের ফজিলত কী?
উত্তর: এটি কিয়ামতের দিন পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং বিপদ থেকে রক্ষা করবে।


সূরা সাফফাত সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)

১. সূরা সাফফাত কত নং সূরা?
a) ৩৫
b) ৩৬
c) ৩৭ ✅
d) ৩৮

২. সূরা সাফফাতের আয়াত সংখ্যা কত?
a) ১৮০
b) ১৮২ ✅
c) ১৮৫
d) ২০০

৩. সূরা সাফফাত কোন যুগে নাযিল হয়েছে?
a) মক্কী ✅
b) মাদানী
c) উভয়টি
d) কোনোটিই নয়

৪. “সাফফাত” শব্দের অর্থ কী?
a) কিতাব
b) ফেরেশতাদের সারিবদ্ধতা ✅
c) নদী
d) পাহাড়

৫. সূরা সাফফাতে কার কুরবানির ঘটনা বর্ণিত হয়েছে?
a) মুসা (আ.)
b) ইব্রাহীম (আ.) ✅
c) ঈসা (আ.)
d) দাউদ (আ.)

৬. সূরা সাফফাতে কোন নবীকে “যুন-নুন” বলা হয়েছে?
a) ইউনুস (আ.) ✅
b) আইয়ুব (আ.)
c) ইদ্রিস (আ.)
d) শুআইব (আ.)

৭. সূরা সাফফাতে “সাকার” কী?
a) বেহেশতের নাম
b) জাহান্নামের একটি নাম ✅
c) ফেরেশতার নাম
d) নদীর নাম

৮. সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাদেরকে “মুকাররাবুন” বলেছেন?
a) নবীগণ
b) ফেরেশতাগণ ✅
c) শহীদগণ
d) সিদ্দিকীন

৯. সূরা সাফফাতে কার জাতি পাখি দ্বারা শাস্তি পেয়েছিল?
a) ইলিয়াস (আ.) ✅
b) লূত (আ.)
c) হুদ (আ.)
d) সালেহ (আ.)

১০. সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাফিরদেরকে কীসের সাথে তুলনা করেছেন?
a) পানি
b) বাতাস
c) শুকনো কাঠ ✅
d) পাথর

১১. সূরা সাফফাতে বেহেশতে কোন ফলের কথা বলা হয়েছে?
a) আঙুর ✅
b) আম
c) কলা
d) কমলা

১২. সূরা সাফফাতে আল্লাহর “খলীল” কে?
a) মুহাম্মদ (সা.)
b) ইব্রাহীম (আ.) ✅
c) মুসা (আ.)
d) ঈসা (আ.)

১৩. সূরা সাফফাতে কিয়ামতের দিন কাফিররা কী বলবে?
a) “আমরা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিলাম”
b) “হায়! আমরা যদি পুনরুত্থিত হতাম!” ✅
c) “আমরা ক্ষমা চাই”
d) “আমরা ঈমান আনব”

১৪. সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাদেরকে “মুত্তাক্বীন” বলেছেন?
a) ধনীদের
b) আল্লাহভীরুদের ✅
c) নবী-রাসূলদের
d) ফেরেশতাদের

১৫. সূরা সাফফাতে নূহ (আ.)-এর পর কার কথা বলা হয়েছে?
a) লূত (আ.) ✅
b) ইব্রাহীম (আ.)
c) ইসমাঈল (আ.)
d) ইসহাক (আ.)

১৬. সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাফিরদের হৃদয়কে কীসের সাথে তুলনা করেছেন?
a) পানি
b) লোহা ও পাথর ✅
c) মোম
d) কাঠ

১৭. সূরা সাফফাতের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
a) “আল্লাহর কাছে সবাই ফিরে যাবে”
b) “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য” ✅
c) “আল্লাহ ক্ষমাশীল”
d) “কিয়ামত আসবে”

১৮. সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাদেরকে “মুকাজ্জিবিন” (প্রার্থনা কবুলকারী) বলেছেন?
a) ফেরেশতাগণ ✅
b) নবীগণ
c) শহীদগণ
d) সিদ্দিকীন

১৯. সূরা সাফফাতে কোন নবীকে “নূহ” (আ.)-এর উম্মত বলা হয়েছে?
a) হুদ (আ.)
b) সালেহ (আ.)
c) লূত (আ.) ✅
d) শুআইব (আ.)

২০. সূরা সাফফাত পাঠের ফজিলত কী?
a) ধন-সম্পদ বৃদ্ধি
b) কিয়ামতে সুপারিশকারী ✅
c) রোগমুক্তি
d) দীর্ঘ জীবন

২১. সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাফিরদের শাস্তি হিসেবে কী উল্লেখ করেছেন?
a) বন্যা
b) ভূমিকম্প
c) সাকার (জাহান্নামের আগুন) ✅
d) ঝড়

২২. সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাদেরকে “মুসলিম” বলেছেন?
a) ইসলাম গ্রহণকারী
b) আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী ✅
c) যুদ্ধকারী
d) ধর্ম প্রচারকারী

২৩. সূরা সাফফাতে আল্লাহ কাদেরকে “মুহসিনীন” (সৎকর্মশীল) বলেছেন?
a) নেককার বান্দাগণ ✅
b) ধনী ব্যক্তিগণ
c) আলেমগণ
d) শাসকগণ

২৪. সূরা সাফফাতে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে কী উল্লেখ করা হয়েছে?
a) পাহাড়
b) নদী
c) চন্দ্র-সূর্য ✅
d) গাছ

২৫. সূরা সাফফাতের মূল বিষয় কী?
a) অর্থনীতি
b) তাওহীদ ও আখিরাত ✅
c) যুদ্ধ
d) ইতিহাস


✅ সঠিক উত্তর চিহ্নিত

সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই

সূরা সাফফাত: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, বিষয়বস্তু, শিক্ষা ও ফযিলত

১. সংক্ষিপ্ত পরিচয়:

  • নাম: সূরা “সাফফাত” (আরবি: الصافات)।
  • অর্থ: “সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান ফেরেশতাগণ”।
  • আয়াত সংখ্যা: ১৮২ টি।
  • মাক্কী/মাদানী: মাক্কী সূরা (মক্কায় নাযিল হয়েছে)।
  • পারা: ২৩তম পারায় অবস্থিত (আয়াত: ১-১৮২)।

২. শানে নুযূল (নাযিলের প্রেক্ষাপট):

সূরা সাফফাত মক্কায় নাযিল হয়, যখন কুরাইশ নেতৃবৃন্দ ও মুশরিকরা ইসলাম ও রাসূল (সা.)-এর দাওয়াতকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করছিল। এ সূরায় আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের সংগ্রাম, কিয়ামতের ভয়াবহতা ও পরকালের শাস্তি-পুরস্কার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষত, ইব্রাহীম (আ.)-এর কুরবানির ঘটনা উল্লেখ করে মুমিনদেরকে ত্যাগ ও আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।


৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক:

  1. ফেরেশতাদের ভূমিকা: সূরার শুরুতে ফেরেশতাদের সারিবদ্ধ অবস্থানের কথা বলা হয়েছে (আয়াত ১-৩)।
  2. তাওহীদের দলিল: আল্লাহর একত্ববাদ ও সৃষ্টির নিদর্শনসমূহের বিবরণ (আয়াত ৪-১১)।
  3. নবীদের কাহিনী:
    • নূহ (আ.), ইব্রাহীম (আ.), লূত (আ.), ইলিয়াস (আ.), ইউনুস (আ.) প্রমুখ নবীর ঘটনা।
    • ইব্রাহীম (আ.)-এর কুরবানি: পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানির পরীক্ষা (আয়াত ১০০-১১১)।
  4. কাফিরদের পরিণতি: জাহান্নামের শাস্তি ও তাদের অপমানকর অবস্থা (আয়াত ৬২-৭৩)।
  5. মুমিনদের পুরস্কার: জান্নাতের নেয়ামত ও আল্লাহর নৈকট্য (আয়াত ৪০-৬১)।

৪. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু:

✅ তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ):

  • “নিশ্চয়ই তোমাদের ইলাহ এক” (আয়াত ৪)।

✅ আখিরাতের বিশ্বাস:

  • কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা ও পুনরুত্থান (আয়াত ১৬-২১)।

✅ নবীদের সংগ্রাম:

  • বিভিন্ন নবীর দাওয়াত ও তাদের উম্মতের প্রতিক্রিয়া।

✅ কুরবানির শিক্ষা:

  • ইব্রাহীম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও আল্লাহর নির্দেশে আনুগত্য।

✅ ফেরেশতাদের ভূমিকা:

  • তারা আল্লাহর আদেশ পালনে সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান (আয়াত ১-২)।

৫. সূরাটির শিক্ষা:

  1. আল্লাহর একত্বে অবিচল থাকা: সকল নবীই তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন।
  2. আত্মত্যাগ ও ধৈর্য: ইব্রাহীম (আ.)-এর কুরবানি থেকে ত্যাগের শিক্ষা।
  3. কাফিরদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা: সত্যের পথে অটল থাকা, যেমন নবী ইউনুস (আ.)।
  4. পরকালের প্রস্তুতি: জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা ও জান্নাত লাভের তাওফিক চাওয়া।
  5. ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস: তারা আল্লাহর আদেশে নিয়োজিত।

৬. সূরাটির ফযিলত (মর্যাদা):

  • কিয়ামতে সুপারিশকারী: রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূরা সাফফাত নিয়মিত পড়বে, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য সুপারিশ করবে।” (তিরমিযী)।
  • বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা: এটি পাঠ করলে শয়তানের অনিষ্ট থেকে হিফাজত হয়।
  • আখিরাতের স্মরণ: এ সূরা পাঠে মৃত্যু ও পরকালের প্রস্তুতির অনুপ্রেরণা মেলে।

৭. সূরার আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ):

১. তাওহীদ (আল্লাহর একত্ব):

আয়াত ৪:

“নিশ্চয়ই তোমাদের ইলাহ এক।”
ব্যাখ্যা: সমস্ত সৃষ্টির মালিক ও উপাস্য একমাত্র আল্লাহ।

২. কুরবানির শিক্ষা:

আয়াত ১০২:

“অতঃপর যখন সে (ইসমাঈল) তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছাল, তখন ইব্রাহীম বলল, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবেহ করছি; এখন তোমার মতামত কী?’ সে বলল, ‘পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।’”
ব্যাখ্যা: আল্লাহর নির্দেশে পূর্ণ আত্মসমর্পণের উদাহরণ।

৩. জাহান্নামের শাস্তি:

আয়াত ৬৩:

“নিশ্চয়ই আমি জাহান্নামকে কাফিরদের জন্য ফাঁদস্বরূপ তৈরি করেছি।”
ব্যাখ্যা: অবিশ্বাসীদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা।

৪. জান্নাতের নেয়ামত:

আয়াত ৪১-৪২:

“তাদের জন্য রয়েছে নির্ধারিত রিজিক, ফলমূল; এবং তারা হবে সম্মানিত।”
ব্যাখ্যা: মুমিনদের জন্য আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার।

৫. নবীদের ধৈর্য:

আয়াত ১৩৯-১৪৪:

“ইউনুসও ছিলেন রাসূলদের একজন… অতঃপর আমি তাকে অসুস্থ অবস্থায় একটি খোলা মাঠে নিক্ষেপ করলাম।”
ব্যাখ্যা: নবীদের বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর রহমতের প্রতি বিশ্বাস।


৮. উপসংহার:

সূরা সাফফাত তাওহীদ, আখিরাত, নবীদের সংগ্রাম ও ইবাদতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে। এটি মুমিনদেরকে আল্লাহর আনুগত্য, ত্যাগ ও পরকালীন প্রস্তুতির দিকনির্দেশনা দেয়। নিয়মিত এ সূরা তিলাওয়াত ও আমলে জীবনকে আল্লাহমুখী করার তাওফিক কামনা করা উচিত।

📌 Key Takeaways:

  • আল্লাহর একত্বে অটল থাকা।
  • নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ।
  • কিয়ামতের প্রস্তুতি ও সৎ আমল করা।
  • সূরা সাফফাতের ফযিলত লাভের চেষ্টা করা।

সূরা সাফফাত আয়াত ১০০,১৮০-১৮২, ১২৫, ১০০-১১১, ৯৯, ৭৯, ১০২ আয়াত ও অর্থসহ ব্যাখ্যা

সূরা সাফফাতের নির্বাচিত আয়াতসমূহের অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

১. আয়াত ১০০: ইব্রাহীম (আ.)-এর দোয়া

আয়াত:

رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
অর্থ: “হে আমার রব! আমাকে একজন সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন।”

ব্যাখ্যা:

  • হযরত ইব্রাহীম (আ.) বৃদ্ধ বয়সে সন্তানহীন ছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে নেককার সন্তানের জন্য এ দোয়া করেন।
  • আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে ইসমাঈল (আ.)-কে দান করেন, যিনি পরবর্তীতে নবী হন এবং কুরবানির মহান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

২. আয়াত ১৮০-১৮২: আল্লাহর মহিমা ও প্রশংসা

আয়াত ১৮০:

وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ
অর্থ: “রাসূলদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।”

আয়াত ১৮১:

وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থ: “আর সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।”

ব্যাখ্যা:

  • সূরার শেষে আল্লাহ রাসূলদের প্রতি শান্তি বর্ষণের ঘোষণা দেন, যা নবীদের মর্যাদা নির্দেশ করে।
  • সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য—এটি তাওহীদের মূল বাণী।

৩. আয়াত ১২৫: ইলিয়াস (আ.)-এর উম্মতের ভ্রষ্টতা

আয়াত:

أَتَدْعُونَ بَعْلًا وَتَذَرُونَ أَحْسَنَ الْخَالِقِينَ
অর্থ: “তোমরা ‘বাআল’ (মূর্তি)-এর পূজা করছ এবং সৃষ্টিকর্তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠকে ছেড়ে দিচ্ছ?”

ব্যাখ্যা:

  • হযরত ইলিয়াস (আ.) তার সম্প্রদায়কে মূর্তি পূজা ত্যাগ করে আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেন।
  • “বাআল” ছিল তাদের পূজিত মূর্তির নাম। এ আয়াতে শিরকের নিন্দা করা হয়েছে।

৪. আয়াত ১০০-১১১: ইব্রাহীম (আ.)-এর কুরবানির ঘটনা

আয়াত ১০২ (মূল অংশ):

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَىٰ فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَىٰ ۚ قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ ۖ سَتَجِدُنِي إِن شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ
অর্থ: “যখন সে (ইসমাঈল) তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছাল, ইব্রাহীম বললেন, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবেহ করছি; এখন তোমার মতামত কী?’ সে বলল, ‘পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।’”

ব্যাখ্যা:

  • এ আয়াতে আল্লাহর নির্দেশে পূর্ণ আত্মসমর্পণপিতাপুত্রের অতুলনীয় ত্যাগ ফুটে উঠেছে।
  • ইসমাঈল (আ.)-এর উত্তর থেকে শিক্ষা: আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা
  • পরবর্তীতে আল্লাহ একটি মেষ পাঠিয়ে ইসমাঈল (আ.)-কে রক্ষা করেন (আয়াত ১০৭)।

৫. আয়াত ৯৯: ইব্রাহীম (আ.)-এর দৃঢ় প্রত্যয়

আয়াত:

وَإِنِّي ذَاهِبٌ إِلَىٰ رَبِّي سَيَهْدِينِ
অর্থ: “আমি আমার রবের দিকে চলেছি, তিনি আমাকে পথ দেখাবেন।”

ব্যাখ্যা:

  • ইব্রাহীম (আ.) তার সম্প্রদায়ের শিরক ত্যাগ করে আল্লাহর সন্ধানে দেশান্তরী হন।
  • শিক্ষা: আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করলে তিনি পথনির্দেশ দেন।

৬. আয়াত ৭৯: নূহ (আ.)-এর প্রতি শান্তি

আয়াত:

سَلَامٌ عَلَىٰ نُوحٍ فِي الْعَالَمِينَ
অর্থ: “নূহের উপর সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য শান্তি বর্ষিত হোক।”

ব্যাখ্যা:

  • নূহ (আ.) দীর্ঘ ৯৫০ বছর দাওয়াত দেওয়ার পরও যখন তার সম্প্রদায় ঈমান আনল না, আল্লাহ তাকে মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা করেন।
  • এ আয়াতে নবীদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ মর্যাদা প্রকাশ পায়।

সারসংক্ষেপ:

আয়াত প্রসঙ্গ মূল শিক্ষা
১০০ ইব্রাহীম (আ.)-এর দোয়া আল্লাহ নেক সন্তান দান করেন।
১০২ কুরবানির আদেশ আল্লাহর নির্দেশে আত্মসমর্পণ।
১২৫ ইলিয়াস (আ.)-এর দাওয়াত শিরক ত্যাগ করে তাওহীদের দিকে আহ্বান।
১৮০-১৮২ রাসূলদের প্রতি শান্তি নবীদের মর্যাদা ও আল্লাহর প্রশংসা।
৯৯ ইব্রাহীম (আ.)-এর হিজরত আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা।
৭৯ নূহ (আ.)-এর প্রতি শান্তি নবীদের ধৈর্য ও সাফল্য।

📌 গুরুত্বপূর্ণ বার্তা:

  • আত্মত্যাগ: ইব্রাহীম (আ.)-এর কুরবানির ঘটনা থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগের শিক্ষা।
  • তাওহীদ: সব প্রশংসা ও ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য।
  • ধৈর্য: নবীদের জীবন থেকে বিপদে ধৈর্য ধারণের অনুপ্রেরণা।

এ আয়াতগুলো ইবাদত, তাওয়াক্কুল ও তাওহীদের জীবন্ত উদাহরণ, যা মুমিনদের জন্য পথনির্দেশক।