সূরা লোকমান (আরবি: سورة لقمان) হল পবিত্র কুরআনের ৩১তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩৪টি। এই সূরার নামকরণ হয়েছে হযরত লুকমান (আ.)-এর নামানুসারে, যিনি একজন জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন এবং আল্লাহ তাকে বিশেষ হিকমত (প্রজ্ঞা) দান করেছিলেন। এই সূরাতে তিনি তাঁর পুত্রকে উপদেশ দিচ্ছেন, যা মুমিনদের জন্য গভীর শিক্ষণীয়।
সূরা লোকমান
সূরা লোকমান সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. সূরা লোকমান মক্কী না মাদানী সূরা?
উত্তর: মক্কী সূরা।
২. সূরা লোকমান কত নং সূরা?
উত্তর: ৩১ নং সূরা।
৩. সূরা লোকমানের আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তর: ৩৪টি আয়াত।
৪. সূরা লোকমানের নামকরণ করা হয়েছে কোন ব্যক্তির নামে?
উত্তর: হযরত লোকমান (আ.)-এর নামে।
৫. লোকমান (আ.) কে ছিলেন?
উত্তর: তিনি একজন জ্ঞানী ও নেককার ব্যক্তি ছিলেন, নবী না হলেও আল্লাহ তাকে হিকমত দান করেছিলেন।
৬. লোকমান (আ.) তার ছেলেকে কী উপদেশ দিয়েছিলেন?
উত্তর: তিনি তাওহিদ, নামাজ প্রতিষ্ঠা, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ, ধৈর্য ধারণ, অহংকার না করা ইত্যাদি উপদেশ দিয়েছিলেন।
৭. সূরা লোকমানে শিরকের নিন্দা করা হয়েছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, শিরককে মহা অন্যায় বলা হয়েছে।
৮. “ইন্নাশ শিরকা লাজুলুমun আজীম” এর অর্থ কী?
উত্তর: “নিশ্চয় শিরক মহা অন্যায়।” (সূরা লোকমান, আয়াত: ১৩)
৯. সূরা লোকমানে আল্লাহর কতগুলো নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, গাছ-পালা ইত্যাদি আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
১০. লোকমান (আ.) তার সন্তানকে অহংকার থেকে বিরত থাকতে কী বলেছিলেন?
উত্তর: তিনি বলেছিলেন, “তুমি দম্ভভরে তোমার গাল ফুলিও না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে走路别高傲地在大地上行走。” (সূরা লোকমান, আয়াত: ১৮)
১১. সূরা লোকমানে আল্লাহর প্রশংসা কীভাবে করা হয়েছে?
উত্তর: “লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ” (আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর)।
১২. সূরা লোকমানে কিয়ামতের দিন কী হবে?
উত্তর: কিয়ামতের দিন মানুষ তার সব কাজের হিসাব দেবে, অণু পরিমাণ সৎকাজ বা পাপও গোপন থাকবে না।
১৩. সূরা লোকমানে আল্লাহর অনুগ্রহের কোন নিদর্শন উল্লেখ আছে?
উত্তর: জাহাজসমূহ সমুদ্রে চলাচল করা আল্লাহর অনুগ্রহের নিদর্শন।
১৪. লোকমান (আ.)-এর উপদেশগুলোর মূল বিষয় কী ছিল?
উত্তর: তাওহিদ, ইবাদত, নৈতিকতা ও সমাজিক দায়িত্ব।
১৫. সূরা লোকমানে “গাইবের চাবি” কার কাছে আছে?
উত্তর: আল্লাহর কাছে। (আয়াত: ৩৪)
১৬. সূরা লোকমানের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: “নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।”
১৭. সূরা লোকমানে অহংকার সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।
১৮. সূরা লোকমানে পিতামাতার সাথে কীভাবে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে?
উত্তর: তাদের সাথে সদাচরণ করতে বলা হয়েছে, তবে শিরকে সহযোগিতা না করতে।
১৯. সূরা লোকমানে আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন হিসেবে কী কী উল্লেখ আছে?
উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী, গাছপালা ইত্যাদি।
২০. সূরা লোকমান পড়ার ফজিলত কী?
উত্তর: এটি পড়লে হিকমত ও জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।
সূরা লোকমান সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)
১. সূরা লোকমান কত নং সূরা?
- a) ২৯
b) ৩০
c) ৩১
d) ৩২
২. সূরা লোকমানের আয়াত সংখ্যা কত?
- a) ২৮
b) ৩৪
c) ৩৬
d) ৪০
৩. লোকমান (আ.) কে ছিলেন?
- a) নবী
b) জ্ঞানী ব্যক্তি
c) ফেরেশতা
d) বাদশাহ
৪. লোকমান (আ.)-এর উপদেশে কোনটি ছিল না?
- a) নামাজ প্রতিষ্ঠা
b) অহংকার না করা
c) জিহাদ করা
d) শিরক থেকে দূরে থাকা
৫. “ইন্নাশ শিরকা লাজুলুমun আজীম” – এ আয়াতের অর্থ কী?
- a) শিরক ক্ষমাযোগ্য
b) শিরক মহা অন্যায়
c) শিরক মাফ করা যাবে
d) শিরকে লাভ আছে
৬. সূরা লোকমান কোন ধরনের সূরা?
- a) মক্কী
b) মাদানী
c) মিশ্র
d) কোনটিই নয়
৭. লোকমান (আ.) তার সন্তানকে অহংকার করতে নিষেধ করেছেন কোন আয়াতে?
- a) ১৫
b) ১৮
c) ২০
d) ২৫
৮. সূরা লোকমানে আল্লাহর কোন নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে?
- a) সূর্য ও চন্দ্র
b) জাহাজ সমুদ্রে চলাচল
c) প্রাণীর সৃষ্টি
d) সবগুলো
৯. সূরা লোকমানে পিতামাতার সাথে কেমন ব্যবহার করতে বলা হয়েছে?
- a) কঠোর
b) সদাচরণ
c) উপেক্ষা
d) শুধু материের সাথে ভালো ব্যবহার
১০. সূরা লোকমানে “গাইবের চাবি” কার কাছে আছে?
- a) ফেরেশতাদের
b) আল্লাহর
c) নবী-রাসূলদের
d) মানুষের
১১. লোকমান (আ.)-এর উপদেশে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ?
- a) সম্পদ অর্জন
b) তাওহিদ ও নামাজ
c) রাজনীতি
d) শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
১২. সূরা লোকমানের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
- a) আল্লাহ ক্ষমাশীল
b) আল্লাহ সর্বজ্ঞ
c) আল্লাহ দয়ালু
d) আল্লাহ রিজিক দাতা
১৩. সূরা লোকমানে কিসের হিসাব নেওয়ার কথা বলা হয়েছে?
- a) সম্পদের
b) আমলের
c) বংশের
d) শিক্ষার
১৪. লোকমান (আ.)-এর উপদেশের মূল উদ্দেশ্য কী?
- a) অর্থবিত্ত অর্জন
b) আল্লাহর আনুগত্য
c) সমাজে প্রভাব বিস্তার
d) রাজনৈতিক ক্ষমতা
১৫. সূরা লোকমানে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে কী উল্লেখ নেই?
- a) পাহাড়
b) নদী
c) স্বর্ণ
d) গাছপালা
১৬. “ওয়া লা তুসা’র fil ardি মারাহা” – এ আয়াতের অর্থ কী?
- a) পৃথিবীতে দ্রুত চলো
b) পৃথিবীতে গর্বভরে走路别高傲地行走
c) পৃথিবীতে ধীরে চলো
d) পৃথিবীতে লুকিয়ে চলো
১৭. সূরা লোকমানে কার কথা বলা হয়েছে যিনি জ্ঞানী ছিলেন কিন্তু নবী নন?
- a) হযরত ইউসুফ (আ.)
b) হযরত লোকমান (আ.)
c) হযরত ইদ্রিস (আ.)
d) হযরত শুয়াইব (আ.)
১৮. সূরা লোকমানে আল্লাহর প্রশংসা কীভাবে করা হয়েছে?
- a) “আলহামদুলিল্লাহ”
b) “লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ”
c) “সুবহানাল্লাহ”
d) “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”
১৯. সূরা লোকমানে শিরকের পরিণতি কী?
- a) ক্ষমা
b) মহা অন্যায়
c) সাময়িক শাস্তি
d) উপেক্ষা
২০. সূরা লোকমান পড়ার প্রধান ফজিলত কী?
- a) ধন-সম্পদ বৃদ্ধি
b) হিকমত ও জ্ঞান লাভ
c) শত্রু থেকে রক্ষা
d) রোগমুক্তি
২১. লোকমান (আ.) তার সন্তানকে কীভাবে কথা বলতে নিষেধ করেছেন?
- a) জোরে
b) কর্কশভাবে
c) ধীরে
d) কম
২২. সূরা লোকমানে আল্লাহর কোন গুণের কথা বলা হয়েছে?
- a) শুধু রহমত
b) সর্বজ্ঞ, মহাজ্ঞানী
c) শুধু ক্ষমাশীল
d) শুধু পরাক্রমশালী
২৩. সূরা লোকমানে “মাকারিমুল আখলাক” বা উত্তম চরিত্রের কথা বলা হয়েছে কি?
- a) হ্যাঁ
b) না
c) আংশিক
d) শুধু নামাজে
২৪. সূরা লোকমানে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে কোন প্রাণীর কথা বলা হয়েছে?
- a) উট
b) গরু
c) কোনটিই না
d) ঘোড়া
২৫. সূরা লোকমানের মূল বার্তা কী?
- a) অর্থনৈতিক উন্নতি
b) তাওহিদ ও নৈতিকতা
c) রাজনৈতিক শক্তি
d) সামরিক শক্তি
আশা করি, এই প্রশ্নোত্তর ও MCQ গুলো আপনার জন্য সহায়ক হবে!
সূরা লোকমান এর পরিচয়, সূরা লোকমানের শিক্ষা, সূরা লোকমান এর ফজিলত, সূরা লোকমানের শানে নুযুল, সূরা লোকমানের উপদেশ,
সূরা লোকমান: সম্পূর্ণ পরিচয়, শিক্ষা, ফজিলত, শানে নুযুল ও উপদেশ
সূরা লোকমানের পরিচয়
- নামকরণ: হযরত লোকমান (আ.)-এর নামানুসারে এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
- অবতীর্ণের স্থান: মক্কায় অবতীর্ণ (মক্কী সূরা)।
- সূরার ক্রম: কুরআনের ৩১তম সূরা।
- আয়াত সংখ্যা: ৩৪টি।
- রুকু সংখ্যা: ৪টি।
- পূর্ববর্তী সূরা: সূরা রূম (৩০), পরবর্তী সূরা: সূরা সাজদা (৩২)।
সূরা লোকমানের শিক্ষা
- তাওহিদের শিক্ষা:
- শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম (আয়াত: ১৩)।
- আল্লাহই একমাত্র ইলাহ, তিনি সবকিছুর মালিক (আয়াত: ২৫-২৬)।
- পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার:
- তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে (আয়াত: ১৪)।
- তবে শিরকের ব্যাপারে তাদের আনুগত্য না করা (আয়াত: ১৫)।
- নৈতিক উপদেশ:
- নামাজ প্রতিষ্ঠা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ (আয়াত: ১৭)।
- ধৈর্য ধারণ করা (আয়াত: ১৭)।
- অহংকার ত্যাগ করা (আয়াত: ১৮)।
- আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে চিন্তা:
- আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী, গাছপালা ইত্যাদি আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ (আয়াত: ১০-১১)।
- গাইবের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে:
- বৃষ্টি, মৃত্যু, কিয়ামত—এসবের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে (আয়াত: ৩৪)।
সূরা লোকমানের ফজিলত
- হিকমত ও জ্ঞান লাভ:
- এই সূরা পাঠে আল্লাহ বান্দাকে প্রজ্ঞা দান করেন।
- পাপ মোচন:
- নিয়মিত তিলাওয়াত করলে গুনাহ মাফ হয়।
- আখিরাতে আলো:
- কিয়ামতের দিন এই সূরা পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে।
- অহংকার দূরীকরণ:
- লোকমান (আ.)-এর উপদেশ অনুযায়ী অহংকার ত্যাগের তাওফিক হয়।
সূরা লোকমানের শানে নুযুল (নাজিলের কারণ):
- মক্কার মুশরিকদের অহংকার:
- তারা দুনিয়ার সম্পদ ও বংশগত গর্বে স্ফীত ছিল। আল্লাহ তাদের সতর্ক করতে এই সূরা নাজিল করেন।
- লোকমান (আ.)-এর কাহিনীর মাধ্যমে শিক্ষা:
- মানুষ যেন নম্রতা ও হিকমত শেখে।
- শিরকের বিপদ সম্পর্কে সতর্কতা:
- মুশরিকরা আল্লাহর সাথে অন্যকে শরিক করত, এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে।
সূরা লোকমানের মূল উপদেশসমূহ:
- লোকমান (আ.)-এর উপদেশ:
- তাওহিদ: “হে বৎস! আল্লাহর সাথে শরিক করো না।” (আয়াত: ১৩)
- নামাজ ও দাওয়াত: “নামাজ কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও ও অসৎ কাজে নিষেধ করো।” (আয়াত: ১৭)
- ধৈর্য: “যেকোনো বিপদে ধৈর্য ধারণ করো।” (আয়াত: ১৭)
- অহংকার বর্জন: “তুমি গর্বভরে走路别高傲地行走 না।” (আয়াত: ১৮)
- নম্রতা: “তোমার চলাফেরায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো।” (আয়াত: ১৯)
- আল্লাহর উপদেশ:
- কৃতজ্ঞতা: “আমার ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।” (আয়াত: ১৪)
- গাইবের জ্ঞান: “নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই গাইবের জ্ঞান আছে।” (আয়াত: ৩৪)
সূরা লোকমানের বিশেষ তাৎপর্য:
- এটি একটি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক গাইডলাইন সমৃদ্ধ সূরা।
- পারিবারিক বন্ধন, সমাজিক দায়িত্ব ও আল্লাহভীতির সমন্বয় এ সূরার মূল বার্তা।
- বিজ্ঞান ও প্রকৃতির আলোচনা দিয়ে আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে।
উপসংহার: সূরা লোকমান একজন মুমিনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নির্দেশনা দেয়—যা তাওহিদ, ইবাদত, নৈতিকতা ও সমাজিক দায়িত্বের সমন্বয়ে গঠিত।
নোট: নিয়মিত এই সূরা তিলাওয়াত ও আমলে পরিণত করলে ব্যক্তিগত ও সমাজিক জীবনে ভারসাম্য আসবে।**
সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই
সূরা লোকমানের গুরুত্বপূর্ণ দিক, মূল বিষয়বস্তু ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত বিশ্লেষণ
সূরা লোকমানের গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- তাওহিদের ঘোষণা: শিরকের কঠোর নিন্দা ও একত্ববাদের শিক্ষা।
- পারিবারিক সম্পর্ক: পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ।
- নৈতিকতা: অহংকার বর্জন, ধৈর্য ও ন্যায়ের আদেশ।
- প্রকৃতির নিদর্শন: আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে জ্ঞান অন্বেষণ।
- আখিরাতের সতর্কতা: সকল কাজের হিসাব দেওয়ার কথা।
সূরা লোকমানের মূল বিষয়বস্তু:
- আল্লাহর একত্ব ও শিরকের নিষেধ
- লোকমান (আ.)-এর উপদেশ
- পিতামাতার অধিকার
- প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শন
- গাইবের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে
বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ:
১. তাওহিদ ও শিরকের নিষেধ
আয়াত ১৩:
“وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ“
অর্থ: “যখন লোকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলল, ‘হে আমার পুত্র! আল্লাহর সাথে শরিক করো না। নিশ্চয় শিরক মহা অন্যায়।’”
বিশ্লেষণ:
- লোকমান (আ.) তার সন্তানকে সর্বপ্রথম তাওহিদের শিক্ষা দেন।
- শিরককে “মহা অন্যায়” বলা হয়েছে, যা সমস্ত পাপের চেয়ে ভয়ঙ্কর।
২. পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার
আয়াত ১৪:
“وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَىٰ وَهْنٍ…”
অর্থ: “আমি মানুষকে তার পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছেন…”
বিশ্লেষণ:
- মায়ের কষ্টের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ পিতামাতার মর্যাদা বোঝিয়েছেন।
- শর্তসাপেক্ষে আনুগত্য: শিরকের ক্ষেত্রে পিতামাতার আদেশ মান্য করা যাবে না (আয়াত ১৫)।
৩. নৈতিক উপদেশ: অহংকার বর্জন
সূরা লোকমান আয়াত ১৮
“وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا…”
অর্থ: “তুমি মানুষকে অবজ্ঞায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না এবং পৃথিবীতে দাম্ভিকভাবে走路别高傲地行走 করো না…”
বিশ্লেষণ:
- অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না (হাদিসে এসেছে: “অহংকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না”)।
- নম্রতা ঈমানের অংশ।
৪. আল্লাহর নিদর্শন: প্রকৃতির শিক্ষা
সূরা লোকমান আয়াত ১০
“خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ وَأَلْقَىٰ فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ…”
অর্থ: “তিনি আকাশসমূহ স্তম্ভবিহীনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যা তোমরা দেখছ… এবং পৃথিবীতে পাহাড় স্থাপন করেছেন।”
বিশ্লেষণ:
- বিজ্ঞানের আলোকে: আকাশের ভারসাম্য (গ্র্যাভিটি) ও পাহাড়ের ভূমিকা (ভূতাত্ত্বিক স্থিতিশীলতা) আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ।
৫. গাইবের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে
সূরা লোকমান আয়াত ৩৪
“إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ…”
অর্থ: “নিশ্চয় কিয়ামতের জ্ঞান আল্লাহর কাছেই আছে…”
বিশ্লেষণ:
- ভবিষ্যৎ, মৃত্যু, বৃষ্টি ইত্যাদির জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে।
- এ আয়াত অতীত-ভবিষ্যতের জ্ঞান নিয়ে মানুষের সীমাবদ্ধতা বুঝিয়ে দেয়।
সূরা লোকমানের আলোকে ৫টি মূল শিক্ষা:
- শিরক পরিহার করে খাঁটি তাওহিদে বিশ্বাস করা।
- পিতামাতার সেবা করা, তবে দ্বীনের সীমা লঙ্ঘন না করে।
- অহংকার ত্যাগ করে নম্র জীবনযাপন করা।
- প্রকৃতির নিদর্শন থেকে আল্লাহর মহিমা উপলব্ধি করা।
- গাইবের জ্ঞানের মোহ ত্যাগ করে আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।
এই সূরার আমল:
- নিয়মিত তিলাওয়াত করে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন।
- লোকমান (আ.)-এর উপদেশগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা।
মহান আল্লাহ আমাদের সূরা লোকমানের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফিক দিন! আমীন।
সূরা লোকমান আয়াত ৩৪, ২৭, ৩৩, ১২, ১৭, ১৫ আয়াত ও অর্থসহ ব্যাখ্যা
সূরা লোকমানের নির্বাচিত আয়াতসমূহ: অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সূরা লোকমান আয়াত ৩৪
“إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ“
অর্থ:
“নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কিয়ামতের জ্ঞান আছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা আছে তা তিনি জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন ভূমিতে সে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।”
ব্যাখ্যা:
- গাইবের ৫টি জ্ঞান:
- কিয়ামতের সময় (শুধু আল্লাহ জানেন)।
- বৃষ্টি (কখন, কোথায় হবে তা আল্লাহর ইচ্ছায়)।
- গর্ভের সন্তান (লিঙ্গ, রিযিক, ভাগ্য)।
- ভবিষ্যতের কর্ম (মানুষ আগামীকাল কী করবে তা জানে না)।
- মৃত্যুর স্থান ও সময় (এটি একমাত্র আল্লাহর জানা)।
- শিক্ষা: মানুষের জ্ঞান সীমিত, তাই আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা উচিত।
সূরা লোকমান আয়াত ২৭
“وَلَوْ أَنَّمَا فِي الْأَرْضِ مِن شَجَرَةٍ أَقْلَامٌ وَالْبَحْرُ يَمُدُّهُ مِن بَعْدِهِ سَبْعَةُ أَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ“
অর্থ:
“যদি পৃথিবীর সব গাছ কলম হয় এবং সাগরের পানি কালি হয়, তারপরও সাত সাগর যোগ করা হলে, তবুও আল্লাহর বাণীসমূহ লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
ব্যাখ্যা:
- আল্লাহর জ্ঞান, ক্ষমতা ও বাণী অসীম।
- উদাহরণ: পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ দিয়ে আল্লাহর নিদর্শন বর্ণনা করা অসম্ভব।
- শিক্ষা: মানুষের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে আল্লাহর মহিমা অনুধাবন করা।
সূরা লোকমান আয়াত ৩৩
“يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَّا يَجْزِي وَالِدٌ عَن وَلَدِهِ وَلَا مَوْلُودٌ هُوَ جَازٍ عَن وَالِدِهِ شَيْئًا ۚ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ ۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا…”
অর্থ:
“হে মানুষ! তোমাদের রবকে ভয় করো এবং সেই দিনকে ভয় করো যখন কোনো পিতা তার সন্তানের জন্য কিছুই প্রতিদান দিতে পারবে না এবং না কোনো সন্তান তার পিতার জন্য কিছুই প্রতিদান দিতে পারবে। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে…”
ব্যাখ্যা:
- কিয়ামতের ভয়াবহতা: সেদিন কারো কারো জন্য সুপারিশ কাজে আসবে না।
- দুনিয়ার মোহ: সম্পদ, ক্ষমতা ইত্যাদি ধোঁকা দেওয়ার মাধ্যম।
- শিক্ষা: আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়া এবং দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করা।
সূরা লোকমান আয়াত ১২
“وَلَقَدْ آتَيْنَا لُقْمَانَ الْحِكْمَةَ أَنِ اشْكُرْ لِلَّهِ ۚ وَمَن يَشْكُرْ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ“
অর্থ:
“আমি লোকমানকে হিকমত (প্রজ্ঞা) দান করেছিলাম এই মর্মে যে, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের জন্যই করে। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।”
ব্যাখ্যা:
- হিকমতের উৎস: আল্লাহই প্রকৃত জ্ঞানদাতা।
- কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব: শুকরিয়া ব্যক্তির নিজের জন্য কল্যাণকর।
- শিক্ষা: আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা এবং অহংকার ত্যাগ করা।
সূরা লোকমান আয়াত ১৭
“يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا أَصَابَكَ ۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ“
অর্থ:
“হে আমার পুত্র! নামাজ প্রতিষ্ঠা করো, সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজে নিষেধ করো, আর যে বিপদ তোমাকে স্পর্শ করে তাতে ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয় এগুলো দৃঢ় সংকল্পের কাজ।”
ব্যাখ্যা:
- ৪টি মূল নির্দেশ:
- নামাজ কায়েম (আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা)।
- আমর বিল মারুফ (সৎকাজের আদেশ)।
- নাহি আনিল মুনকার (অসৎ কাজে বাধা দেওয়া)।
- ধৈর্য ধারণ (বিপদে স্থির থাকা)।
- শিক্ষা: ঈমানের দাবি হলো সমাজিক দায়িত্ব পালন করা।
সূরা লোকমান আয়াত ১৫
“وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ…”
অর্থ:
“যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়ে শরিক করতে জোর করে, যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। তবে দুনিয়ায় তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করো এবং আমার দিকে ফিরে আসাদের পথ অনুসরণ করো…”
ব্যাখ্যা:
- সীমিত আনুগত্য: শিরকের ক্ষেত্রে পিতামাতার আদেশ মানা যাবে না।
- সদাচরণ: দ্বীনি বিষয়ে অসম্মত হলেও সাধারণ জীবনে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে।
- শিক্ষা: দ্বীনের সীমার মধ্যে থেকে পিতামাতার হক আদায় করা।
সারসংক্ষেপ:
আয়াত | মূল বিষয় | প্রধান শিক্ষা |
৩৪ | গাইবের জ্ঞান | আল্লাহর উপর ভরসা রাখা |
২৭ | আল্লাহর জ্ঞানের অসীমতা | মানুষের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা |
৩৩ | কিয়ামতের ভয় | দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করা |
১২ | কৃতজ্ঞতা ও হিকমত | শুকরিয়া আদায় করা |
১৭ | নামাজ, দাওয়াত ও ধৈর্য | সমাজিক দায়িত্ব পালন |
১৫ | পিতামাতার সাথে সীমিত আনুগত্য | দ্বীন ও পরিবারের ভারসাম্য |
এই আয়াতগুলোর আলোকে জীবন গড়লে ঈমানী শক্তি ও নৈতিকতা বৃদ্ধি পাবে।