সূরা যুখরুফ এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা যুখরুফ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।
সূরা যুখরুফ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ
সূরা যুখরুফ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. সূরা যুখরুফ কুরআনের কত নম্বর সূরা?
উত্তর: এটি কুরআনের ৪৩ নম্বর সূরা।
২. সূরা যুখরুফ কোন পারায় অবস্থিত?
উত্তর: এটি ২৫তম পারায় (সুরা ফুসসিলাত থেকে সূরা জাসিয়াহ পর্যন্ত) অবস্থিত।
৩. সূরা যুখরুফের আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তর: ৮৯টি আয়াত।
৪. সূরা যুখরুফ মক্কী না মাদানী সূরা?
উত্তর: এটি মক্কী সূরা।
৫. সূরা যুখরুফের নামের অর্থ কী?
আরও পড়তে পারেন-- সূরা কাসাস সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন এবং MCQ
উত্তর: “যুখরুফ” অর্থ সোনা-রূপার অলংকার বা ধন-সম্পদ।
৬. সূরা যুখরুফে কীভাবে কাফিরদের ধন-সম্পদের প্রতি মোহের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: এ সূরায় বলা হয়েছে, কাফিররা ধন-সম্পদ ও বিলাসিতাকে শ্রেষ্ঠত্বের লক্ষণ মনে করে, কিন্তু এটি তাদের ধ্বংসের কারণ হবে।
৭. সূরা যুখরুফে কোন নবীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: হযরত ইব্রাহীম (আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.)-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
৮. সূরা যুখরুফে কাফিররা নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে কী বলে উপহাস করত?
উত্তর: তারা তাকে “জাদুকর” বা “পাগল” বলে উপহাস করত।
৯. সূরা যুখরুফে আল্লাহ কীভাবে কুরআনের মহিমা বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: এতে বলা হয়েছে, কুরআন আরবি ভাষায় নাযিল করা হয়েছে যাতে মানুষ বুঝতে পারে।
১০. সূরা যুখরুফে আল্লাহর একত্ববাদের কী দলিল দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: বলা হয়েছে, আল্লাহই সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি কারো সন্তান নন।
১১. সূরা যুখরুফে জাহান্নামের বর্ণনা কীভাবে দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: বলা হয়েছে, জাহান্নামের খাদ্য হবে বিষাক্ত এবং তা পান করলে মুখমণ্ডল গলে যাবে।
১২. সূরা যুখরুফে মুমিনদের জান্নাতের কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: জান্নাতে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র স্ত্রী ও চিরস্থায়ী সুখ।
১৩. সূরা যুখরুফে আল্লাহ কেন মানুষের পরীক্ষা নেন?
উত্তর: মানুষ কে সত্য গ্রহণ করে আর কে অস্বীকার করে তা পরীক্ষার জন্য।
১৪. সূরা যুখরুফে কাফিরদের শেষ পরিণতি কী বলা হয়েছে?
উত্তর: তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা ও শাস্তি।
১৫. সূরা যুখরুফে আল্লাহ কিসের শপথ করেছেন?
উত্তর: তিনি কিতাব (লৌহ-মহফুজ) এর শপথ করেছেন।
১৬. সূরা যুখরুফে আল্লাহ কীভাবে মানুষের সৃষ্টি বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: তিনি মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং পর্যায়ক্রমে তার রূপ দিয়েছেন।
১৭. সূরা যুখরুফে আল্লাহ কেন নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন?
উত্তর: মানুষকে সত্য পথে ডাকার জন্য এবং সতর্ক করার জন্য।
১৮. সূরা যুখরুফে কিয়ামতের দিন কী হবে?
উত্তর: সেদিন শত্রুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে।
১৯. সূরা যুখরুফে আল্লাহ কেন মানুষকে সতর্ক করেছেন?
উত্তর: যাতে তারা জাহান্নামের শাস্তি থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
২০. সূরা যুখরুফের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: শেষ আয়াতে বলা হয়েছে, “আপনি বলুন, হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য সতর্ককারী মাত্র।”
সূরা যুখরুফ সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন)
১. সূরা যুখরুফ কুরআনের কত নম্বর সূরা?
a) ৪১
b) ৪২
c) ৪৩
d) ৪৪
২. সূরা যুখরুফের অর্থ কী?
a) সোনা-রূপার অলংকার
b) রাত্রি
c) সূর্য
d) বৃষ্টি
৩. সূরা যুখরুফে কার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে?
a) হযরত মুসা (আ.)
b) হযরত ইব্রাহীম (আ.)
c) হযরত নূহ (আ.)
d) হযরত ইউসুফ (আ.)
৪. সূরা যুখরুফে কাফিররা নবী (সা.)-কে কী বলত?
a) কবি
b) জাদুকর
c) বাদশাহ
d) পণ্ডিত
৫. সূরা যুখরুফে জান্নাতের বর্ণনায় কী বলা হয়েছে?
a) সেখানে স্বর্ণের প্রাসাদ থাকবে
b) পবিত্র স্ত্রী ও চিরস্থায়ী সুখ থাকবে
c) সেখানে সবাই যুবক হবে
d) সেখানে অমর ফল থাকবে
৬. সূরা যুখরুফে জাহান্নামের খাদ্য কেমন হবে?
a) মিষ্টি কিন্তু ক্ষতিকর
b) বিষাক্ত ও মুখ গলানো
c) তিক্ত কিন্তু পুষ্টিকর
d) স্বাদহীন
৭. সূরা যুখরুফে আল্লাহ কীসের শপথ করেছেন?
a) কিতাব (লৌহ-মহফুজ)
b) সূর্য ও চন্দ্র
c) পাহাড়
d) ফেরেশতাদের
৮. সূরা যুখরুফ মক্কী না মাদানী সূরা?
a) মক্কী
b) মাদানী
c) উভয়টিই
d) কিছু অংশ মক্কী
৯. সূরা যুখরুফে আল্লাহ মানুষকে কী থেকে সৃষ্টি করেছেন?
a) আগুন
b) পানি
c) মাটি
d) আলো
১০. সূরা যুখরুফে আল্লাহ কেন নবী পাঠিয়েছেন?
a) রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য
b) সতর্ক করার জন্য
c) ধন-সম্পদ বণ্টনের জন্য
d) যুদ্ধ করার জন্য
১১. সূরা যুখরুফে কাফিরদের শেষ পরিণতি কী?
a) ক্ষমা
b) লাঞ্ছনা ও শাস্তি
c) সম্পদ লাভ
d) উচ্চ মর্যাদা
১২. সূরা যুখরুফে আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ কী?
a) তিনি কারো সন্তান নন
b) তিনি মানুষের মতো খান
c) তিনি পৃথিবীতে বাস করেন
d) তিনি মানুষের মতো ঘুমান
১৩. সূরা যুখরুফে কুরআন কোন ভাষায় নাযিল হয়েছে?
a) ফার্সি
b) গ্রিক
c) হিব্রু
d) আরবি
১৪. সূরা যুখরুফের শেষ আয়াতে নবী (সা.)-কে কী বলা হয়েছে?
a) বিজয়ী
b) সতর্ককারী
c) শাসক
d) ধনী
১৫. সূরা যুখরুফে কাফিররা ধন-সম্পদকে কী মনে করে?
a) অস্থায়ী
b) শ্রেষ্ঠত্বের লক্ষণ
c) আল্লাহর নেয়ামত
d) পরীক্ষা
১৬. সূরা যুখরুফে আল্লাহ কীভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন?
a) একবারে
b) পর্যায়ক্রমে
c) অদৃশ্য শক্তি থেকে
d) কোনো বর্ণনা নেই
১৭. সূরা যুখরুফে কিয়ামতের দিন শত্রুরা কী করবে?
a) একে অপরকে ভালোবাসবে
b) একে অপরের শত্রু হবে
c) একসাথে জান্নাতে যাবে
d) সবাই ক্ষমা পাবে
১৮. সূরা যুখরুফে আল্লাহ কেন মানুষকে পরীক্ষা করেন?
a) তাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধির জন্য
b) কে সত্য গ্রহণ করে তা দেখার জন্য
c) তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য
d) তাদের উচ্চ মর্যাদা দেওয়ার জন্য
১৯. সূরা যুখরুফে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে?
a) তিনি সবকিছুর স্রষ্টা
b) তিনি মানুষের মতো চাহিদা রাখেন
c) তিনি ফেরেশতাদের সন্তান
d) তিনি মানুষের মতো খাদ্য গ্রহণ করেন
২০. সূরা যুখরুফে কাফিরদের ধ্বংসের কারণ কী?
a) তারা দান-খয়রাত করত
b) তারা ধন-সম্পদ ও অহংকারে মত্ত ছিল
c) তারা নামায পড়ত
d) তারা হজ্জ করত
২১. সূরা যুখরুফে আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে কী অন্তর্ভুক্ত?
a) আকাশ ও পৃথিবী
b) শুধু পাহাড়
c) শুধু নদী
d) শুধু গাছ
২২. সূরা যুখরুফে নবী (সা.)-এর দায়িত্ব কী ছিল?
a) শাসন করা
b) সতর্ক করা
c) যুদ্ধ করা
d) সম্পদ সংগ্রহ করা
২৩. সূরা যুখরুফে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ কী?
a) মানুষের সৃষ্টি
b) মানুষের ধন-সম্পদ
c) মানুষের শক্তি
d) মানুষের জ্ঞান
২৪. সূরা যুখরুফে কাফিররা কীভাবে নবী (সা.)-কে প্রত্যাখ্যান করেছিল?
a) তারা তাকে সম্মান দিয়েছিল
b) তারা তাকে জাদুকর ও পাগল বলেছিল
c) তারা তার অনুসারী হয়েছিল
d) তারা তাকে উপহার দিয়েছিল
২৫. সূরা যুখরুফে আল্লাহর কিতাবের নাম কী?
a) তাওরাত
b) ইনজিল
c) লৌহ-মহফুজ
d) যাবুর
এই প্রশ্নোত্তরগুলো সূরা যুখরুফের মূল বিষয়বস্তু ও শিক্ষাকে সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই
সূরা যুখরুফ: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু, ফযিলত ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত
১. সূরা যুখরুফের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
- নাম: সূরা যুখরুফ (আরবি: الزخرف)
- অর্থ: “সোনা-রূপার অলংকার” বা “বিলাসিতা”
- আয়াত সংখ্যা: ৮৯
- সূরার অবস্থান: কুরআনের ৪৩তম সূরা, ২৫তম পারায়
- নাযিলের স্থান: মক্কা (মক্কী সূরা)
- নাযিলের ক্রম: ৬৩তম সূরা (নবীজির ﷺ দাওয়াতের মধ্যযুগে নাযিল হয়েছে)
২. শানে নুযূল (প্রাসঙ্গিক পটভূমি)
সূরা যুখরুফ মক্কার কাফিরদের সমৃদ্ধি, অহংকার ও শিরকের বিপরীতে নাযিল হয়েছে। মক্কার কুরাইশ নেতারা ধন-সম্পদ ও ক্ষমতাকে আল্লাহর নেয়ামত না মনে করে বরং নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ হিসেবে দেখত। তারা নবী মুহাম্মাদ ﷺ-কে “জাদুকর” বা “পাগল” বলে উপহাস করত এবং কুরআনের শিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করত। এ সূরায় তাদের ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করে তাওহিদ, আখিরাত ও নবীদের মিশনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
৩. সূরা যুখরুফের গুরুত্বপূর্ণ দিক
- তাওহিদের দলিল: আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তিনি কারো সন্তান নন (আয়াত ৮১-৮২)।
- কাফিরদের ভ্রান্ত ধারণা: তারা ধন-সম্পদকে আল্লাহর প্রিয় হওয়ার লক্ষণ মনে করত (আয়াত ৩১-৩৫)।
- আখিরাতের বর্ণনা: জান্নাত-জাহান্নামের বিবরণ (আয়াত ৭১-৭৭)।
- নবীদের ইতিহাস: হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর আলোচনা (আয়াত ২৬-২৮, ৫৭-৬৫)।
- কুরআনের মর্যাদা: এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য ও হিদায়াত (আয়াত ২-৪)।
৪. সূরা যুখরুফের শিক্ষা
- ধন-সম্পদ ও বিলাসিতা অহংকারের কারণ নয়, বরং আল্লাহর পরীক্ষা।
- আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস ও শিরক থেকে দূরে থাকা।
- দুনিয়ার জীবনের মোহ ত্যাগ করে আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়া।
- নবীদের শিক্ষাকে গ্রহণ করা এবং তাদের অনুসরণ করা।
- কুরআনকে জীবন-ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা।
৫. সূরা যুখরুফের মূল বিষয়বস্তু
- তাওহিদ ও শিরকের বিরুদ্ধে যুক্তি (আয়াত ৮১-৮৪)।
- কাফিরদের সম্পদ ও অহংকারের পরিণতি (আয়াত ৩১-৩৫)।
- পূর্ববর্তী নবীদের সংগ্রাম ও শিক্ষা (ইব্রাহীম ও ঈসা আ.)।
- কিয়ামত ও পরকালের বাস্তবতা (জান্নাত-জাহান্নামের বিবরণ)।
- কুরআনের সত্যতা ও রাসূল ﷺ-এর দায়িত্ব (আয়াত ৪৪)।
৬. সূরা যুখরুফের ফযিলত
- জাহান্নাম থেকে মুক্তি:
- নবীজি ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূরা যুখরুফ তিলাওয়াত করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জাহান্নামের দরজাগুলো থেকে নিরাপদ রাখবেন।” (তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন)
- আল্লাহর নৈকট্য লাভ:
- এ সূরায় আল্লাহর মহিমা ও শক্তির বর্ণনা থাকায় এটি তিলাওয়াতকারীর ঈমান বৃদ্ধি করে।
- সুবহানাল্লাহর সওয়াব:
- সূরা যুখরুফের শেষ আয়াত (৮৯) পড়লে “সুবহানাল্লাহ” বলার সওয়াব পাওয়া যায়।
৭. সূরা যুখরুফের আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ)
১. তাওহিদ ও আল্লাহর একত্ব
আয়াত ৮৪:
“তিনিই (আল্লাহ) আসমান-যমীনে ইলাহ (উপাস্য), আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।”
ব্যাখ্যা: আল্লাহই একমাত্র ইলাহ, তিনি সবকিছু জানেন এবং তাঁর সব সিদ্ধান্তই হিকমতপূর্ণ।
২. ধন-সম্পদের মোহ ও পরিণতি
আয়াত ৩৫:
“এবং সোনা-রূপার অলংকার (যুখরুফ)। এসব তো পার্থিব জীবনের ভোগমাত্র, আর পরকালে তোমার রবের কাছে রয়েছে মুত্তাকীদের জন্য (চিরস্থায়ী নেয়ামত)।”
ব্যাখ্যা: দুনিয়ার সম্পদ ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতের সাফল্যই প্রকৃত সাফল্য।
৩. নবী ইব্রাহীম (আ.)-এর দাওয়াত
আয়াত ২৬-২৭:
“যখন ইব্রাহীম তার পিতা ও সম্প্রদায়কে বলল, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের উপাস্যদের থেকে বিমুখ। আমি তো একমাত্র তাঁকেই ডাকি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন।”
ব্যাখ্যা: শিরক ত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান।
৪. ঈসা (আ.)-এর প্রকৃত অবস্থান
আয়াত ৫৯:
“তিনি (ঈসা) তো একজন বান্দা, যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং তাকে বনী ইসরাঈলের জন্য উদাহরণ বানিয়েছিলাম।”
ব্যাখ্যা: ঈসা (আ.) আল্লাহর বান্দা ও নবী, তিনি আল্লাহর সন্তান নন।
৫. কুরআনের হিদায়াত
আয়াত ৪৪:
“নিশ্চয় এ কুরআন আমার ও তোমাদের জন্য উপদেশ। অতঃপর তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।”
ব্যাখ্যা: কুরআন মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পথনির্দেশ।
সারসংক্ষেপ:
সূরা যুখরুফে তাওহিদ, সম্পদের মোহ, নবীদের সংগ্রাম, আখিরাতের সতর্কতা ও কুরআনের মর্যাদা আলোচিত হয়েছে। এটি তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আখিরাতমুখী জীবন গঠন করতে পারি।
সূরা যুখরুফ আয়াত ৬৭, ৩৬, ৭০, ৭৯, আয়াত এবং এর বাংলা অর্থসহ ব্যাখ্যা চাই
সূরা যুখরুফের নির্বাচিত আয়াতসমূহের বাংলা অনুবাদ ও ব্যাখ্যা
১. আয়াত ৬৭
আরবি:
“الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ”
বাংলা অনুবাদ:
“সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, তবে মুত্তাকীদের (আল্লাহভীরুদের) ক্ষেত্রে তা হবে না।”
ব্যাখ্যা:
- কিয়ামতের দিন দুনিয়ার সব মিথ্যা বন্ধুত্ব ধ্বংস হবে। যারা পার্থিব স্বার্থে বন্ধুত্ব করত, তারা পরস্পর শত্রু হয়ে যাবে।
- ব্যতিক্রম: মুত্তাকী বা আল্লাহভীরু ব্যক্তিরা। তাদের বন্ধুত্ব আল্লাহর জন্য হওয়ায় তা স্থায়ী হবে।
- শিক্ষা: আমাদের বন্ধুত্ব শুধু দুনিয়ার স্বার্থের জন্য নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত।
২. আয়াত ৩৬
আরবি:
“وَمَن يَعْشُ عَن ذِكْرِ الرَّحْمَٰنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ”
বাংলা অনুবাদ:
“যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়, আমি তার জন্য একটি শয়তান নিযুক্ত করি, অতঃপর সেটাই তার সঙ্গী হয়।”
ব্যাখ্যা:
- আল্লাহর জিকির ও কুরআন থেকে যে বিমুখ হয়, শয়তান তার নিত্যসঙ্গী হয়ে যায়।
- শয়তান তাকে পাপ ও ভ্রষ্টতার দিকে প্ররোচিত করে।
- শিক্ষা: নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও ইবাদতে লিপ্ত থাকা আবশ্যক, নতুবা শয়তানের প্রভাব বাড়ে।
৩. আয়াত ৭০
আরবি:
“ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ”
বাংলা অনুবাদ:
“(বলা হবে,) তোমরা ও তোমাদের স্ত্রীরা জান্নাতে প্রবেশ করো, যেখানে তোমাদেরকে সম্মানিত করা হবে।”
ব্যাখ্যা:
- মুমিনদের জান্নাতে প্রবেশের সময় এই সুসংবাদ দেওয়া হবে।
- তারা তাদের পবিত্র জীবনসঙ্গীসহ জান্নাতের অনন্ত সুখ ভোগ করবে।
- শিক্ষা: সৎকর্মশীল দম্পতির জন্য জান্নাতে একত্রে থাকার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
৪. আয়াত ৭৯
আরবি:
“أَمْ أَبْرَمُوا أَمْرًا فَإِنَّا مُبْرِمُونَ”
বাংলা অনুবাদ:
“তারা কি কোনো পরিকল্পনা করেছে? আমরাও পরিকল্পনা করছি।”
ব্যাখ্যা:
- কাফিররা নবী ﷺ-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করত, কিন্তু আল্লাহ তাদের চেয়েও শক্তিশালী।
- আল্লাহর পরিকল্পনা অপরাজেয়—তিনি কাফিরদের ধ্বংস করেন ও মুমিনদের রক্ষা করেন।
- শিক্ষা: আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উচিত, কারণ তিনি সবচেয়ে বড় পরিকল্পনাকারী।
সারসংক্ষেপ:
আয়াত | মূল বিষয় | শিক্ষা |
৬৭ | কিয়ামতে মিথ্যা বন্ধুত্ব ধ্বংস | আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব করুন |
৩৬ | আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হলে শয়তান সঙ্গী হয় | নিয়মিত ইবাদত ও জিকির করুন |
৭০ | মুমিনদের জান্নাতে প্রবেশ ও সম্মান | সৎকর্মের মাধ্যমে জান্নাত লাভ |
৭৯ | কাফিরদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ | আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখুন |
এই আয়াতগুলো থেকে আমরা শিখতে পারি:
১. আল্লাহকেন্দ্রিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
২. শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচতে নিয়মিত ইবাদত করতে হবে।
৩. আখিরাতের প্রস্তুতি নিতে সৎকর্ম করা জরুরি।
৪. কাফিরদের ষড়যন্ত্রে ভয় না পেয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উচিত।