সূরা যারিয়াত সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত

সূরা যারিয়াত এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা যারিয়াত  সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।

সূরা যারিয়াত

সূরা যারিয়াত সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

  1. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াত মক্কায় নাকি মদিনায় নাযিল হয়েছে?
    উত্তর: মক্কায় নাযিল হয়েছে।
  2. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে কয়টি আয়াত আছে?
    উত্তর: ৬০টি আয়াত।
  3. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতের প্রধান বিষয় কী?
    উত্তর: আখিরাতের সত্যতা, তাওহিদ ও রিসালাতের প্রমাণ এবং কাফিরদের শাস্তির বর্ণনা।
  4. প্রশ্ন: “যারিয়াত” শব্দের অর্থ কী?
    উত্তর: “বিক্ষেপকারী বাতাস” বা “প্রবাহমান বাতাস”।
  5. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতের শুরুতে কীসের কসম করা হয়েছে?
    উত্তর: বাতাস, মেঘবাহী বায়ু, জাহাজসমূহ ও ফেরেশতাদের কসম করা হয়েছে।
  6. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে কোন নবীদের ঘটনা উল্লেখ আছে?
    উত্তর: হযরত ইব্রাহিম (আ.), হযরত মুসা (আ.), হযরত নূহ (আ.) ও হযরত আদ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ আছে।
  7. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজেকে কী হিসেবে উল্লেখ করেছেন?
    উত্তর: “রিয্ক দাতা” ও “শক্তিশালী” হিসেবে।
  8. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে কাফিরদের কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
    উত্তর: বিভ্রান্ত পশুর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
  9. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে জান্নাতের কী কী নিয়ামতের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে?
    উত্তর: প্রবাহিত নদী, সুস্বাদু ফল ও সম্মানিত জীবন।
  10. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে আল্লাহ কাদেরকে “মুত্তাকী” বলে আখ্যায়িত করেছেন?
    উত্তর: যারা গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ করে।
  11. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে আল্লাহর কী কী গুণবাচক নাম উল্লেখ হয়েছে?
    উত্তর: “আর-রাজ্জাক” (রিয্কদাতা), “আল-কাবিদ” (গ্রহণকারী), “আল-বাসিত” (প্রসারক)।
  12. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে আল্লাহ মানুষকে কীসের জন্য সৃষ্টি করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন?
    উত্তর: শুধুমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য।
  13. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে কিয়ামতের দিন কী হবে বলে বর্ণনা করা হয়েছে?
    উত্তর: আকাশ বিদীর্ণ হবে এবং পর্বতগুলো উড়ে যাবে।
  14. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে আল্লাহ কাফিরদের কী শাস্তির কথা বলেছেন?
    উত্তর: জাহান্নামের আগুন ও উত্তপ্ত পানি।
  15. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মেহমানদের কী পরিচয় দেওয়া হয়েছে?
    উত্তর: তারা ছিলেন ফেরেশতা, যারা লুত (আ.)-এর সম্প্রদায়কে শাস্তি দিতে এসেছিলেন।
  16. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে আল্লাহ মানুষকে কোন কাজের নির্দেশ দিয়েছেন?
    উত্তর: আল্লাহর দিকে ফিরে আসা ও তাকওয়া অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
  17. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে আল্লাহ কীসের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন?
    উত্তর: দুনিয়ার জীবনে ধোঁকায় পড়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
  18. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে আল্লাহ নবীদেরকে কীসের সুসংবাদ দিয়েছেন?
    উত্তর: সাহায্য ও বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন।
  19. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতে আল্লাহ কাদেরকে সফলকাম বলে ঘোষণা করেছেন?
    উত্তর: যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে।
  20. প্রশ্ন: সূরা যারিয়াতের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
    উত্তর: “নিশ্চয়ই আল্লাহই হচ্ছেন রিয্কদাতা, শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী।”

সূরা যারিয়াত সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)

  1. সূরা যারিয়াত কোন ধরনের সূরা?
    a) মাদানি
    b) মক্কি ✅
    c) মিশ্র
    d) কোনোটিই নয়
  2. সূরা যারিয়াতে কয়টি আয়াত আছে?
    a) ৫০
    b) ৬০ ✅
    c) ৭০
    d) ৮০
  3. “যারিয়াত” শব্দের অর্থ কী?
    a) বৃষ্টি
    b) প্রবাহমান বাতাস ✅
    c) পাহাড়
    d) সমুদ্র
  4. সূরা যারিয়াতের শুরুতে কিসের কসম করা হয়েছে?
    a) সূর্য ও চন্দ্রের
    b) বাতাস ও ফেরেশতাদের ✅
    c) মানুষ ও জিনের
    d) পাহাড় ও নদীর
  5. সূরা যারিয়াতে কার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে?
    a) হযরত ইউসুফ (আ.)
    b) হযরত ইব্রাহিম (আ.) ✅
    c) হযরত দাউদ (আ.)
    d) হযরত সুলাইমান (আ.)
  6. সূরা যারিয়াতে আল্লাহ নিজেকে কী বলে উল্লেখ করেছেন?
    a) আল-মুমিত (মৃত্যুদাতা)
    b) আর-রাজ্জাক (রিয্কদাতা) ✅
    c) আল-মুহাইমিন (রক্ষক)
    d) আল-জাব্বার (প্রবল)
  7. সূরা যারিয়াতে কাফিরদের কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
    a) গাধার
    b) পাথরের
    c) বিভ্রান্ত পশুর ✅
    d) মৃতের
  8. সূরা যারিয়াতে জান্নাতের কোন নিয়ামতের কথা বলা হয়েছে?
    a) স্বর্ণ-রৌপ্য
    b) প্রবাহিত নদী ✅
    c) প্রাসাদ
    d) সবই
  9. সূরা যারিয়াতে আল্লাহ মানুষকে কেন সৃষ্টি করেছেন?
    a) ধন-সম্পদের জন্য
    b) শুধু তাঁর ইবাদতের জন্য ✅
    c) পরীক্ষার জন্য
    d) ক্ষমতার জন্য
  10. সূরা যারিয়াতে কিয়ামতের দিন আকাশের কী হবে?
    a) অন্ধকার হবে
    b) বিদীর্ণ হবে ✅
    c) উজ্জ্বল হবে
    d) স্থির হবে
  11. সূরা যারিয়াতে কাফিরদের কী শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
    a) শীতল পানি
    b) উত্তপ্ত পানি ✅
    c) অন্ধকার
    d) শিকল
  12. সূরা যারিয়াতে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মেহমানরা কে ছিলেন?
    a) মানুষ
    b) ফেরেশতা ✅
    c) জিন
    d) পশু
  13. সূরা যারিয়াতে আল্লাহ কীসের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন?
    a) দুনিয়ার ধোঁকা ✅
    b) ব্যবসায়িক ক্ষতি
    c) রোগ-শোক
    d) শত্রুর আক্রমণ
  14. সূরা যারিয়াতে মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য কী?
    a) গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে ✅
    b) শুধু নামাজ পড়ে
    c) শুধু রোজা রাখে
    d) শুধু হজ করে
  15. সূরা যারিয়াতে আল্লাহ নবীদের কীসের সুসংবাদ দিয়েছেন?
    a) ধন-সম্পদের
    b) সাহায্য ও বিজয়ের ✅
    c) দীর্ঘ জীবনের
    d) বড় পরিবারের
  16. সূরা যারিয়াতে আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম নেই?
    a) আর-রাজ্জাক
    b) আল-কাবিদ
    c) আল-মালিক ✅
    d) আল-বাসিত
  17. সূরা যারিয়াতে আল্লাহ মানুষকে কোন কাজের নির্দেশ দেননি?
    a) তাওবা করা
    b) দান করা
    c) জিহাদ করা ✅
    d) তাকওয়া অবলম্বন করা
  18. সূরা যারিয়াতে কার সম্প্রদায়ের শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
    a) হযরত লুত (আ.)-এর সম্প্রদায় ✅
    b) হযরত সালেহ (আ.)-এর সম্প্রদায়
    c) হযরত হুদ (আ.)-এর সম্প্রদায়
    d) ফিরাউনের সম্প্রদায়
  19. সূরা যারিয়াতে আল্লাহ কাদেরকে সফলকাম বলেছেন?
    a) ধনীদের
    b) ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের ✅
    c) শক্তিশালীদের
    d) জ্ঞানীদের
  20. সূরা যারিয়াতের শেষ আয়াতে আল্লাহকে কী বলা হয়েছে?
    a) ক্ষমাশীল
    b) রিয্কদাতা ও শক্তিশালী ✅
    c) মহাজ্ঞানী
    d) সর্বশ্রোতা
  21. সূরা যারিয়াতে কোন নবীর নাম উল্লেখ নেই?
    a) হযরত নূহ (আ.)
    b) হযরত ঈসা (আ.) ✅
    c) হযরত মুসা (আ.)
    d) হযরত ইব্রাহিম (আ.)
  22. সূরা যারিয়াতে আল্লাহ কিসের বর্ণনা দিয়েছেন?
    a) সৃষ্টির রহস্য
    b) কিয়ামতের ভয়াবহতা ✅
    c) ব্যবসায়িক নিয়ম
    d) রাজনৈতিক ব্যবস্থা
  23. সূরা যারিয়াতে আল্লাহ কাদেরকে “মুত্তাকী” বলেন?
    a) যারা রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ✅
    b) যারা শুধু নামাজ পড়ে
    c) যারা শুধু হজ করে
    d) যারা শুধু রোজা রাখে
  24. সূরা যারিয়াতে আল্লাহর কীসের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে?
    a) তাওহিদ ও আখিরাতের ✅
    b) ব্যবসায়িক সাফল্যের
    c) রাজনৈতিক শক্তির
    d) সামরিক শক্তির
  25. সূরা যারিয়াতে আল্লাহ মানুষকে কোন পথে চলতে বলেছেন?
    a) সম্পদের পথে
    b) তাকওয়ার পথে ✅
    c) ক্ষমতার পথে
    d) বিলাসিতার পথে

এই প্রশ্নোত্তরগুলো সূরা যারিয়াতের মূল বিষয়বস্তু ও শিক্ষাকে সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।

সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই

সূরা যারিয়াত: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু, ফযিলত ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত

১. সংক্ষিপ্ত পরিচয়

  • নাম: সূরা যারিয়াত (আরবি: الذاريات)
  • অর্থ: “বিক্ষেপকারী বাতাস” বা “প্রবাহমান ঝড়”
  • আয়াত সংখ্যা: ৬০
  • মাক্কি/মাদানি: মাক্কি সূরা (মক্কায় নাযিল হয়েছে)
  • পারা: ২৬ ও ২৭তম পারায় অবস্থিত
  • নাযিলের ক্রম: ৬৭তম সূরা (তাফসীরকারীদের মতে)

২. শানে নুযূল (প্রেক্ষাপট)

সূরা যারিয়াত মক্কী জীবনে নাযিল হয়, যখন কুরাইশ নেতৃবৃন্দ রাসূল (ﷺ)-এর দাওয়াতকে উপহাস করত এবং আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাস করত। এ সূরায় কাফিরদের ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করে আখিরাত, তাওহিদ ও রিসালাতের সত্যতা প্রমাণ করা হয়েছে। বিশেষত, হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও লুত (আ.)-এর কাহিনী উল্লেখ করে সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতির কথা স্মরণ করানো হয়েছে।

৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক

  1. প্রাকৃতিক নিদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ (বাতাস, মেঘ, ফেরেশতাদের কাজ ইত্যাদি)।
  2. আখিরাতের অবশ্যম্ভাবিতা ও কিয়ামতের ভয়াবহ চিত্র।
  3. নবীদের ইতিহাস (ইব্রাহিম, মুসা, নূহ ও লুত (আ.)-এর উম্মতের শাস্তি)।
  4. মুত্তাকীদের গুণাবলি (গোপনে-প্রকাশ্যে দান, রাগ নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমা করা)।
  5. জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা

৪. সূরাটির শিক্ষা

  1. আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস ও শিরক থেকে দূরে থাকা।
  2. আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করা।
  3. সৎকর্মশীল হওয়া, গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা।
  4. ধৈর্য ধারণ করা ও অহংকার ত্যাগ করা।
  5. অবিশ্বাসীদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নেওয়া

৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু

✅ তাওহিদ ও রিসালাতের দলিল (আয়াত ১-২৩)।
✅ কাফিরদের যুক্তি খণ্ডন ও আখিরাতের সত্যতা (আয়াত ২৪-৪৬)।
✅ নবীদের কাহিনী ও পূর্ববর্তী জাতির ধ্বংসের ইতিহাস (আয়াত ২৪-৩৭)।
✅ মুত্তাকীদের পুরস্কার (জান্নাত) ও পাপীদের শাস্তি (জাহান্নাম) (আয়াত ৪৭-৬০)।

৬. সূরাটির ফযিলত (মর্যাদা)

  1. কিয়ামতের ভয়াবহতা স্মরণ: এ সূরা পাঠে আখিরাতের স্মরণ বাড়ে।
  2. রিয্ক বৃদ্ধি: সূরা যারিয়াত তিলাওয়াত করলে আল্লাহ রিয্ক বাড়িয়ে দেন (তাফসীরে ইবনে কাসীর)।
  3. আল্লাহর কুদরতের উপলব্ধি: প্রাকৃতিক নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়।
  4. নবীদের ধৈর্যের শিক্ষা: হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও অন্যান্য নবীদের ঘটনা থেকে ধৈর্য শেখা যায়।

৭. সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ)

(১) আল্লাহর কুদরত ও সৃষ্টিনির্দেশ

আয়াত ২০-২১:
“ভূপৃষ্ঠে নিদর্শন রয়েছে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য। আর তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তবুও কি তোমরা দেখবে না?”
শিক্ষা: প্রকৃতি ও মানবদেহে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ রয়েছে।

(২) আখিরাতের সত্যতা

আয়াত ৫-৬:
“অতঃপর অঙ্গীকার পূরণের দিন আসবেই। নিশ্চয়ই কিয়ামত আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
শিক্ষা: মৃত্যু ও কিয়ামত অবধারিত, তাই প্রস্তুতি নিতে হবে।

(৩) মুত্তাকীদের গুণাবলি

আয়াত ১৫-১৯:
“নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে ও প্রস্রবণে। তারা দান করত যা তাদের রব তাদের দিয়েছেন, তারা ছিল ন্যায়পরায়ণ।”
শিক্ষা: দানশীলতা ও ইনসাফ মুত্তাকীর বৈশিষ্ট্য।

(৪) কাফিরদের শাস্তির বর্ণনা

আয়াত ৪২-৪৪:
“যা কিছুকে স্পর্শ করত, তাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করত। তারা সতর্কবাণীকে মিথ্যা বলেছিল, ফলে তাদেরকে পাকড়াও করলাম।”
শিক্ষা: সত্য প্রত্যাখ্যানের পরিণতি ধ্বংস।

(৫) আল্লাহর প্রতি আনুগত্য

আয়াত ৫৬:
“আমি জিন ও মানুষকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।”
শিক্ষা: মানুষের একমাত্র লক্ষ্য আল্লাহর ইবাদত করা।

উপসংহার

সূরা যারিয়াত তাওহিদ, আখিরাত ও নৈতিক জীবনযাপনের উপর গুরুত্বারোপ করে। এটি কাফিরদের যুক্তি খণ্ডন করে এবং মুমিনদের জন্য সুসংবাদ বহন করে। সূরাটি পাঠ ও অধ্যয়নের মাধ্যমে আল্লাহর কুদরত, নবীদের সংগ্রাম ও পরকালীন জীবনের প্রস্তুতির শিক্ষা লাভ করা যায়।

সূরা যারিয়াত আয়াত ৫৬, ১০, ৪৭, ২১, ৩০, ৪৮, ৫৬ , ৫৮, ২২ আয়াত ও অর্থসহ ব্যাখ্যা

সূরা যারিয়াতের নির্বাচিত আয়াতসমূহের অর্থ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর

১. আয়াত ৫৬:

আরবী:

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

অর্থ:

“আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।”

তাফসীর:

  • এ আয়াত মানুষ ও জিন জাতির সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে।
  • আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত ও আনুগত্যের জন্য
  • ইবাদত শুধু নামাজ-রোজা নয়, সমস্ত কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করাই ইবাদত।
  • ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, এ আয়াত তাওহিদের ঘোষণা দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করা যাবে না।

২. আয়াত ১০:

আরবী:

الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ

অর্থ:

“যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।”

তাফসীর:

  • মুত্তাকীদের ৩টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে:
  1. গায়েবে ঈমান (আল্লাহ, ফেরেশতা, আখিরাত ইত্যাদিতে বিশ্বাস)।
  2. নামাজ প্রতিষ্ঠা (সময়মতো নামাজ আদায়)।
  3. দান-খয়রাত (আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে ব্যয় করা)।
  • এ আয়াত সূরা বাকারার ৩ নং আয়াতের অনুরূপ, যা মুত্তাকীদের গুণ বর্ণনা করে।

৩. আয়াত ৪৭:

আরবী:

وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ

অর্থ:

“আমি আকাশকে শক্তি দিয়ে নির্মাণ করেছি এবং নিশ্চয়ই আমি সম্প্রসারণশীল।”

তাফসীর:

  • এ আয়াত আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রমাণ দেয়।
  • আকাশের বিশালতা ও সম্প্রসারণ আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত (বিগ ব্যাং থিওরি)।
  • ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ আকাশকে প্রতিদিন বাড়িয়ে দিচ্ছেন

৪. আয়াত ২১:

আরবী:

وَفِي أَنفُسِكُمْ ۚ أَفَلَا تُبْصِرُونَ

অর্থ:

“এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও (নিদর্শন রয়েছে), তবুও কি তোমরা দেখবে না?”

তাফসীর:

  • মানবদেহে আল্লাহর অসীম নিদর্শন রয়েছে (হৃদস্পন্দন, মস্তিষ্কের কার্যক্রম, DNA ইত্যাদি)।
  • এ আয়াত চিন্তা ও গবেষণার প্রতি উৎসাহ দেয়।

৫. আয়াত ৩০:

আরবী:

قَالُوا كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ ۖ إِنَّهُ هُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ

অর্থ:

“ফেরেশতারা বলল, ‘এভাবেই তোমার রব বলেছেন, নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।'”

তাফসীর:

  • এটি হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর স্ত্রীর প্রতি ফেরেশতাদের উত্তর
  • আল্লাহর প্রতিটি কাজ হিকমত ও জ্ঞানে পূর্ণ

৬. আয়াত ৪৮:

আরবী:

وَالْأَرْضَ فَرَشْنَاهَا فَنِعْمَ الْمَاهِدُونَ

অর্থ:

“আমি পৃথিবীকে বিছানা করেছি, অতএব কত উত্তম আমি এই বিছানাপ্রস্তুতকারী!”

তাফসীর:

  • পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের জন্য উপযোগী করে সৃষ্টি করা হয়েছে।
  • এ আয়াত প্রকৃতির সৌন্দর্য ও ভারসাম্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

৭. আয়াত ৫৮:

আরবী:

إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ

অর্থ:

“নিশ্চয়ই আল্লাহই রিয্কদাতা, শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী।”

তাফসীর:

  • আল্লাহই সমস্ত রিয্কের মালিক
  • তিনি অজেয় ও অপরাজেয়

৮. আয়াত ২২:

আরবী:

وَفِي السَّمَاءِ رِزْقُكُمْ وَمَا تُوعَدُونَ

অর্থ:

“আকাশে রয়েছে তোমাদের রিয্ক ও যা তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।”

তাফসীর:

  • বৃষ্টি, সূর্যালোক, অক্সিজেন ইত্যাদি আকাশ থেকে প্রাপ্ত রিয্ক
  • “প্রতিশ্রুতি” বলতে আখিরাতের পুরস্কার বা শাস্তি বোঝানো হয়েছে।

সারসংক্ষেপ:

আয়াত মূল বিষয়
৫৬ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো ইবাদত
১০ মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য
৪৭ আল্লাহর কুদরত ও আকাশের সম্প্রসারণ
২১ মানবদেহে আল্লাহর নিদর্শন
৩০ আল্লাহর হিকমত ও জ্ঞান
৪৮ পৃথিবীর সৃষ্টির সৌন্দর্য
৫৮ আল্লাহ রিয্কদাতা ও শক্তিশালী
২২ আকাশে রিয্ক ও প্রতিশ্রুতির উৎস

এ আয়াতগুলো তাওহিদ, রিয্ক, কুদরত ও আখিরাতের শিক্ষা দেয়।