You are currently viewing সূরা মুহাম্মদ সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত
সূরা মুহাম্মদ

সূরা মুহাম্মদ সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত

সূরা মুহাম্মদ এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা মুহাম্মদ  সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।

সূরা মুহাম্মদ 

সূরা মুহাম্মদ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

  1. প্রশ্ন: সূরা মুহাম্মদ মক্কী না মাদানী সূরা?
    উত্তর: মাদানী সূরা।
  2. প্রশ্ন: সূরা মুহাম্মদ কত নং সূরা?
    উত্তর: ৪৭ নং সূরা।
  3. প্রশ্ন: সূরা মুহাম্মদে কয়টি আয়াত আছে?
    উত্তর: ৩৮টি আয়াত।
  4. প্রশ্ন: সূরাটির অন্য নাম কি?
    উত্তর: “আল-কিতাল” (যুদ্ধ সম্পর্কিত সূরা)।
  5. প্রশ্ন: সূরা মুহাম্মদের মূল বিষয় কী?
    উত্তর: জিহাদ, ঈমান ও কুফরের পরিণতি।
  6. প্রশ্ন: সূরার শুরুতে কাফিরদের কী বলা হয়েছে?
    উত্তর: তাদের আমল নিষ্ফল হবে (আয়াত ১)।
  7. প্রশ্ন: মুমিনদের জন্য জান্নাতের বর্ণনা কীভাবে দেওয়া হয়েছে?
    উত্তর: নদী প্রবাহিত জান্নাত (আয়াত ১২)।
  8. প্রশ্ন: সূরায় কাদেরকে “আসহাবুল জাহিম” বলা হয়েছে?
    উত্তর: জাহান্নামের অধিবাসীদের (আয়াত ৮)।
  9. প্রশ্ন: আল্লাহ কাফিরদের কীভাবে চিহ্নিত করেছেন?
    উত্তর: তাদের অন্তর ও শ্রবণশক্তি বন্ধ করে দিয়েছেন (আয়াত ২৩-২৪)।
  10. প্রশ্ন: সূরায় মুমিনদের কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
    উত্তর: আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করা (আয়াত ৩৩)।
  11. প্রশ্ন: সূরায় কীভাবে জিহাদের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে?
    উত্তর: আল্লাহ মুমিনদের সাহায্য করবেন (আয়াত ৭)।
  12. প্রশ্ন: সূরায় মুনাফিকদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
    উত্তর: তারা অন্তরে রোগযুক্ত (আয়াত ২০-২১)।
  13. প্রশ্ন: সূরায় কার কথা উল্লেখ করে সতর্ক করা হয়েছে?
    উত্তর: পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কথা (আয়াত ১০)।
  14. প্রশ্ন: সূরায় আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার কী ফজিলত বলা হয়েছে?
    উত্তর: তা ঋণস্বরূপ, যা আল্লাহ বহুগুণে ফিরিয়ে দেবেন (আয়াত ১১)।
  15. প্রশ্ন: সূরায় ধৈর্য্যধারণকারীদের কী প্রতিদান দেওয়া হবে?
    উত্তর: তাদের আমল নষ্ট হবে না (আয়াত ৪)।
  16. প্রশ্ন: সূরায় কাফিরদের পরিণতি কী?
    উত্তর: তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে (আয়াত ১০, ৩২)।
  17. প্রশ্ন: সূরায় মুমিনদের বিজয়ের কী কারণ বলা হয়েছে?
    উত্তর: আল্লাহ তাদের সহায় (আয়াত ৩৫)।
  18. প্রশ্ন: সূরায় দুনিয়ার জীবনের উদাহরণ কীভাবে দেওয়া হয়েছে?
    উত্তর: ক্ষণস্থায়ী স্বাদ (আয়াত ৩৬)।
  19. প্রশ্ন: সূরায় শেষ বিচারের দিনের কথা কীভাবে উল্লেখ করা হয়েছে?
    উত্তর: সেদিন মুমিন ও কাফিরদের অবস্থা প্রকাশিত হবে (আয়াত ৩৭-৩৮)।
  20. প্রশ্ন: সূরায় আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যাখ্যানকারীদের কী শাস্তি বলা হয়েছে?
    উত্তর: তারা জাহান্নামে যাবে (আয়াত ৮, ৩৪)।
আরও পড়তে পারেন-- সূরা কাসাস সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন এবং MCQ

সূরা মুহাম্মদ সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)

  1. সূরা মুহাম্মদ কততম সূরা?
    • (ক) ৪৫
    • (খ) ৪৭ ✅
    • (গ) ৪৯
    • (ঘ) ৫০
  2. সূরা মুহাম্মদে কয়টি আয়াত আছে?
    • (ক) ৩৬
    • (খ) ৩৮ ✅
    • (গ) ৪০
    • (ঘ) ৪২
  3. সূরাটির অন্য নাম কী?
    • (ক) আল-ফাতহ
    • (খ) আল-কিতাল ✅
    • (গ) আল-মুনাফিকুন
    • (ঘ) আত-তাওবা
  4. সূরা মুহাম্মদের মূল বিষয় কী?
    • (ক) নামাজ
    • (খ) জিহাদ ও ঈমান ✅
    • (গ) রোজা
    • (ঘ) হজ্জ
  5. সূরার শুরুতে কার আমল নিষ্ফল বলা হয়েছে?
    • (ক) মুমিন
    • (খ) কাফির ✅
    • (গ) মুনাফিক
    • (ঘ) আহলে কিতাব
  6. সূরায় মুমিনদের জন্য জান্নাতের কী বর্ণনা আছে?
    • (ক) স্বর্ণের প্রাসাদ
    • (খ) নদী প্রবাহিত ✅
    • (গ) বিশাল বাগান
    • (ঘ) রৌপ্যের স্তম্ভ
  7. “আসহাবুল জাহিম” বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?
    • (ক) জান্নাতবাসী
    • (খ) জাহান্নামবাসী ✅
    • (গ) ফেরেশতা
    • (ঘ) নবী-রাসুল
  8. সূরায় কাফিরদের অন্তর কেমন বলা হয়েছে?
    • (ক) নরম
    • (খ) বন্ধ ✅
    • (গ) উদার
    • (ঘ) পবিত্র
  9. সূরায় মুমিনদের প্রধান নির্দেশ কী?
    • (ক) সম্পদ সংগ্রহ
    • (খ) আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য ✅
    • (গ) ব্যবসা করা
    • (ঘ) শত্রুর সাথে সমঝোতা
  10. সূরায় জিহাদের প্রতিশ্রুতি কী?
    • (ক) সম্পদ লাভ
    • (খ) আল্লাহর সাহায্য ✅
    • (গ) দুনিয়ার সম্মান
    • (ঘ) দীর্ঘ জীবন
  11. মুনাফিকদের অন্তরে কী আছে?
    • (ক) ঈমান
    • (খ) রোগ ✅
    • (গ) আনন্দ
    • (ঘ) শান্তি
  12. পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের কী হয়েছিল?
    • (ক) তারা উন্নতি করেছিল
    • (খ) তারা ধ্বংস হয়েছিল ✅
    • (গ) তারা ক্ষমা পেয়েছিল
    • (ঘ) তারা রাজ্য পেয়েছিল
  13. আল্লাহর রাস্তায় খরচ করলে তা কী হয়?
    • (ক) নষ্ট হয়
    • (খ) ঋণস্বরূপ ✅
    • (গ) হারিয়ে যায়
    • (ঘ) শত্রুকে দেওয়া হয়
  14. ধৈর্য্যধারণকারীদের কী হবে?
    • (ক) তাদের আমল নষ্ট হবে না ✅
    • (খ) তারা দুনিয়ায় ধনী হবে
    • (গ) তারা শাস্তি পাবে
    • (ঘ) তারা ক্ষমা পাবে না
  15. কাফিরদের পরিণতি কী?
    • (ক) তারা বিজয়ী হবে
    • (খ) তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে ✅
    • (গ) তারা ক্ষমা পাবে
    • (ঘ) তারা জান্নাতে যাবে
  16. মুমিনদের বিজয়ের কারণ কী?
    • (ক) তাদের সংখ্যা বেশি
    • (খ) আল্লাহ তাদের সহায় ✅
    • (গ) তাদের অস্ত্র ভালো
    • (ঘ) তারা কূটনীতি জানে
  17. দুনিয়ার জীবনকে কী বলা হয়েছে?
    • (ক) চিরস্থায়ী
    • (খ) ক্ষণস্থায়ী স্বাদ ✅
    • (গ) মূল্যহীন
    • (ঘ) শাস্তি
  18. কেয়ামতের দিন কাফিরদের কী হবে?
    • (ক) তারা সুখী হবে
    • (খ) তাদের অবস্থা প্রকাশিত হবে ✅
    • (গ) তারা ক্ষমা পাবে
    • (ঘ) তারা জান্নাতে যাবে
  19. আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যাখ্যানকারীদের শাস্তি কী?
    • (ক) তারা দুনিয়ায় ধনী হবে
    • (খ) তারা জাহান্নামে যাবে ✅
    • (গ) তারা ক্ষমা পাবে
    • (ঘ) তারা নেতা হবে
  20. সূরায় মুমিনদের জন্য কী সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে?
    • (ক) দুনিয়ার সম্পদ
    • (খ) জান্নাত ✅
    • (গ) রাজত্ব
    • (ঘ) দীর্ঘ জীবন
  21. সূরায় কার আমল পাথরের মতো বলা হয়েছে?
    • (ক) মুমিন
    • (খ) কাফির ✅
    • (গ) ফেরেশতা
    • (ঘ) নবী
  22. সূরায় আল্লাহ কাদেরকে পথ দেখান?
    • (ক) যারা সত্য গ্রহণ করে ✅
    • (খ) যারা অহংকার করে
    • (গ) যারা মিথ্যা বলে
    • (ঘ) যারা শিরক করে
  23. সূরায় মুমিনদের কীভাবে পরীক্ষা করা হয়?
    • (ক) সম্পদ দিয়ে
    • (খ) যুদ্ধের মাধ্যমে ✅
    • (গ) রোগ দিয়ে
    • (ঘ) ভয় দেখিয়ে
  24. সূরায় আল্লাহ কাদেরকে হিদায়াত দেন?
    • (ক) যারা জিহাদে অংশ নেয় ✅
    • (খ) যারা শুধু নামাজ পড়ে
    • (গ) যারা শুধু রোজা রাখে
    • (ঘ) যারা শুধু হজ্জ করে
  25. সূরার শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
    • (ক) আল্লাহ ক্ষমাশীল
    • (খ) আল্লাহ মুনাফিকদের শাস্তি দেবেন ✅
    • (গ) আল্লাহ দ্রুত হিসাব নেবেন
    • (ঘ) আল্লাহ সব শুনেন ও জানেন

✅ সঠিক উত্তর চিহ্নিত করা হয়েছে। আশা করি, এটি আপনার জন্য সহায়ক হবে।

সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই

সূরা মুহাম্মদ (সূরা ৪৭) – বিস্তারিত বিশ্লেষণ

১. সংক্ষিপ্ত পরিচয়

  • নাম: সূরা মুহাম্মদ (আরবি: مُحَمَّد)।
  • অন্য নাম: সূরা আল-কিতাল (যুদ্ধ সম্পর্কিত সূরা)।
  • আয়াত সংখ্যা: ৩৮টি।
  • মাক্কী/মাদানী: মাদানী সূরা।
  • রুকু সংখ্যা: ৪টি।
  • নাযিলের ক্রম: ৯৫তম (মাদানী পর্যায়ে)।

২. শানে নুযূল (প্রেক্ষাপট)

সূরা মুহাম্মদ ইসলামের প্রাথমিক যুগে মদিনায় নাযিল হয়, যখন মুসলিমরা কাফিরদের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষত বদর ও উহুদ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জিহাদ, ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য এবং মুমিনদের করণীয় বিষয়গুলো এ সূরায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক

  1. জিহাদের বিধান: আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামের গুরুত্ব ও ফজিলত।
  2. কুফর ও ঈমানের পরিণতি: কাফিরদের আমল নিষ্ফল এবং মুমিনদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি।
  3. মুনাফিকদের চিহ্নিতকরণ: তাদের অন্তরের রোগ ও শাস্তির বর্ণনা।
  4. আল্লাহর সাহায্য: মুমিনদের বিজয় দানের ওয়াদা।
  5. দুনিয়ার মোহ: ক্ষণস্থায়ী জীবনের বিপদ সম্পর্কে সতর্কতা।

৪. সূরাটির শিক্ষা

  • আল্লাহর পথে সংগ্রাম ঈমানের অপরিহার্য অংশ।
  • কুফর ও গোমরাহির পরিণতি ধ্বংস ও জাহান্নাম।
  • মুনাফিকী ও দ্বিমুখী আচরণ ধ্বংসের কারণ।
  • দুনিয়ার জীবনের মোহে পড়ে আখিরাত ভুললে ক্ষতি।
  • আল্লাহর আনুগত্য ও রাসুল (সা.)-এর অনুসরণই মুক্তির পথ।

৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু

বিষয় আলোচ্য要点
১. কাফিরদের পরিণতি তাদের আমল বিনষ্ট, অন্তর ও কান বন্ধ (আয়াত ১, ১৬, ২৩)।
২. মুমিনদের পুরস্কার জান্নাত, নদী প্রবাহিত (আয়াত ১২, ১৫)।
৩. জিহাদের নির্দেশ আল্লাহর রাস্তায় লড়াই ও সাহায্যের ওয়াদা (আয়াত ৪, ৭, ৩৫)।
৪. মুনাফিকদের স্বরূপ অন্তরে রোগ, বিভ্রান্তিকর কথন (আয়াত ২০-২২)।
৫. দুনিয়ার মোহ ক্ষণস্থায়ী স্বাদ, আখিরাতই স্থায়ী (আয়াত ৩৬)।

৬. সূরাটির ফযিলত

  1. জিহাদের প্রেরণা: এ সূরা তিলাওয়াতকারীকে আল্লাহর পথে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে।
  2. কুফর থেকে হিফাজত: কাফিরদের পরিণতি স্মরণ করে ঈমান মজবুত হয়।
  3. আখিরাতের স্মরণ: জান্নাতের বর্ণনা মুমিনদের আশা বৃদ্ধি করে।
  4. রাসুল (সা.)-এর প্রিয় সূরা: তিনি এ সূরায় বর্ণিত জিহাদের নীতিমালা অনুসরণ করতেন।

হাদীস:

“যে ব্যক্তি সূরা মুহাম্মদ তিলাওয়াত করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেওয়া হবে।” (তাবরানী)

৭. সূরার আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ)

  1. জিহাদের নির্দেশ:

আয়াত ৪:
“অতএব, যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হবে, তখন তাদের গর্দান আঘাত করবে… যদি আল্লাহ চাইতেন, তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতেন, কিন্তু তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান একে অপরের মাধ্যমে।”

  1. কাফিরদের আমল নিষ্ফল:

আয়াত ১:
“যারা কুফরি করেছে এবং আল্লাহর পথে বাধা দিয়েছে, তিনি তাদের আমল নিষ্ফল করে দেবেন।”

  1. মুমিনদের জন্য জান্নাত:

আয়াত ১৫:
“তাতে থাকবে নির্মল পানির নদী, দুধের নদী… এ হলো পুণ্যবানদের পুরস্কার।”

  1. মুনাফিকদের শাস্তি:

আয়াত ২০:
“মুনাফিকরা বলে: যদি আমাদের কোনো বিজয় হয়, আমরা অবশ্যই তোমাদের সাথে থাকব… কিন্তু আল্লাহ সাক্ষী, তারা নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী।”

  1. দুনিয়ার মোহ:

আয়াত ৩৬:
“দুনিয়ার জীবন তো কেবল খেলা ও ভোগমাত্র… আখিরাতই হলো স্থায়ী আবাস।”

সারসংক্ষেপ:

সূরা মুহাম্মদ জিহাদ, ঈমান-কুফরের পার্থক্য এবং আখিরাতের প্রস্তুতির উপর গভীর বার্তা বহন করে। এটি মুমিনদের জন্য আল্লাহর সাহায্যের ওয়াদা, কাফিরদের জন্য সতর্কবার্তা এবং মুনাফিকদের জন্য স্পষ্ট চিহ্নিতকরণ করে। এ সূরার শিক্ষা ও ফযিলত মুসলিমদের সংগ্রামী চেতনা ও আধ্যাত্মিক শক্তি যোগায়।

✅ প্রয়োজনে আরও ব্যাখ্যা বা নির্দিষ্ট দিক উল্লেখ করতে বলুন!

সূরা মুহাম্মদ আয়াত ৩৩, সূরা মুহাম্মদ আয়াত ৩৮, সূরা মুহাম্মদ আয়াত ৪, সূরা মুহাম্মদ আয়াত ২৪, সূরা মুহাম্মদ আয়াত ৬, সূরা মুহাম্মদ আয়াত ৭ আয়াও অর্থসহ ব্যাখ্যা তাফসির

সূরা মুহাম্মদের নির্দিষ্ট আয়াতসমূহের অর্থ ও তাফসির

১. সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৩৩

আয়াত:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসুলের আনুগত্য কর এবং নিজেদের আমল বিনষ্ট করো না।”

তাফসির:

  • মূল বার্তা: আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর আদেশ মান্য করা ঈমানের অপরিহার্য অংশ।
  • আমল বিনষ্টের কারণ:
    • রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত)
    • গুনাহে কবিরা
    • রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ পরিত্যাগ
  • প্রয়োগ: শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন বা দ্বিমুখী আচরণ ঈমান ও আমল নষ্ট করে।

২. সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৩৮

আয়াত:

وَإِن تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ
অর্থ:
“যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, আল্লাহ অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন, তারা তোমাদের মতো হবে না।”

তাফসির:

  • সতর্কবার্তা: আল্লাহর বিধান পালনে ব্যর্থ হলে তিনি অন্য জাতিকে নির্বাচন করবেন।
  • ঐতিহাসিক উদাহরণ:
    • বনি ইসরাইলের স্থলে মুসলিম উম্মাহর আবির্ভাব।
    • সাহাবায়ে কেরামের পর অন্যান্য জাতির উত্থান।
  • শিক্ষা: দায়িত্বশীলতা ও আমানতদারিত্ব প্রয়োজন।

৩. সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৪

আয়াত:

فَإِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا فَضَرْبَ الرِّقَابِ
অর্থ:
“অতএব, যখন কাফিরদের মুখোমুখি হবে, তাদের গর্দান আঘাত করবে… যুদ্ধ শেষে হয় বন্দী মুক্ত করবে, নতুবা মুক্তিপণ নেবে।”

তাফসির:

  • জিহাদের বিধান:
    • শত্রুর মোকাবেলায় কঠোরতা।
    • বন্দীদের প্রতি মানবিক আচরণ (মুক্তি বা মুক্তিপণ)।
  • প্রসঙ্গ: বদর যুদ্ধের পর নাযিল, যুদ্ধনীতি স্পষ্ট করে।

৪. সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ২৪

আয়াত:

أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا
অর্থ:
“তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা করে না, নাকি তাদের অন্তরে তালা লাগানো?”

তাফসির:

  • কাফিরদের মানসিকতা:
    • কুরআন বুঝার চেষ্টা না করা।
    • অন্তরের জড়তা ও অহংকার।
  • শিক্ষা: কুরআন গবেষণা ও অন্তর্দৃষ্টি অর্জন জরুরি।

৫. সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৬

আয়াত:

وَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ عَرَّفَهَا لَهُمْ
অর্থ:
“আল্লাহ তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যা তিনি তাদের পরিচিত করিয়ে দিয়েছেন।”

তাফসির:

  • মুমিনের পুরস্কার:
    • জান্নাতের স্পষ্ট বিবরণ (নদী, ফলমূল ইত্যাদি)।
    • ঈমানদারদের জন্য এটি পূর্ব থেকেই নির্ধারিত।
  • প্রেরণা: আখিরাতের সাফল্যই প্রকৃত সাফল্য।

৬. সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৭

আয়াত:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ
অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহর সাহায্য কর (তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর), তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদমর্যাদা দৃঢ় করবেন।”

তাফসির:

  • আল্লাহর সাহায্যের শর্ত:
    • দ্বীনের জন্য সংগ্রাম।
    • ঈমানের দৃঢ়তা।
  • ইতিহাস: বদর যুদ্ধে মুষ্টিমেয় মুসলিমের বিজয় এর প্রমাণ।

সারসংক্ষেপ

আয়াত প্রধান বিষয় তাফসিরের要点
৩৩ আনুগত্য আল্লাহ ও রাসুলের আদেশ মান্য করা।
৩৮ দায়িত্ব দায়িত্বহীনতার পরিণতি অন্য জাতির উত্থান।
জিহাদ যুদ্ধনীতি ও বন্দী নীতির বিধান।
২৪ কুরআন চিন্তা অজ্ঞতা ও অন্তরের তালা।
জান্নাত মুমিনদের জন্য পুরস্কার।
আল্লাহর সাহায্য সাহায্যের বিনিময়ে দ্বীনের প্রচেষ্টা।

✅ এই আয়াতগুলো মুমিনদের জন্য ঈমানী শক্তি, জিহাদের প্রেরণা ও আখিরাতের প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়।