সূরা মুমিনুন মক্কী সূরা, এই সূরায় মুমিনদের চরিত্র, তাদের গুণাবলি এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও কাফিরদের ভ্রান্ত ধারণা ও তাদের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। সূরাটি সম্পর্কে ৪৫টি কইজ প্রশ্ন সহ সূরা মুমিনুন এর ফজিলত ও বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হলো
সূরা মুমিনুন
সূরা আল-মুমিনুন সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুন মক্কায় নাজিল হয়েছে নাকি মদিনায়?
উত্তর: সূরা আল-মুমিনুন মক্কায় নাজিল হয়েছে।
২. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনের আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তর: সূরা আল-মুমিনুনের আয়াত সংখ্যা ১১৮টি।
৩. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনের মূল বিষয় কী?
উত্তর: সূরা আল-মুমিনুনের মূল বিষয় হলো ঈমান, তাকওয়া, নৈতিক চরিত্র এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস।
৪. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে মুমিনদের কী কী গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: মুমিনদের গুণাবলির মধ্যে রয়েছে নামাজে খুশু, অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা, জাকাত প্রদান এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করা।
৫. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষ সৃষ্টি করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছেন।
৬. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে নবী নূহ (আ.)-এর কিসসা উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: হ্যাঁ, নবী নূহ (আ.)-এর কিসসা উল্লেখ করা হয়েছে।
৭. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের জীবনচক্র বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা মানুষের জীবনচক্র বর্ণনা করেছেন মৃত্যু, কবর এবং পুনরুত্থানের মাধ্যমে।
৮. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে কিয়ামতের দিনের কী কী ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: কিয়ামতের দিনের ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ এবং জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা।
৯. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে সৃষ্টিজগতের নিদর্শন বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী, গাছপালা ইত্যাদির মাধ্যমে সৃষ্টিজগতের নিদর্শন বর্ণনা করেছেন।
১০. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মুমিনদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং সেখানে তাদের জন্য চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
১১. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে কাফিরদের শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা কাফিরদের জন্য জাহান্নামের শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদের কর্মের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
১২. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের সৃষ্টি ও বিকাশ বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা মানুষের সৃষ্টি ও বিকাশ বর্ণনা করেছেন মাটির পর্যায় থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গ মানুষের রূপে গঠনের মাধ্যমে।
১৩. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের মৃত্যু ও পুনরুত্থান বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা মানুষের মৃত্যু ও পুনরুত্থান বর্ণনা করেছেন মাটির মধ্যে পুনরায় ফিরে যাওয়া এবং পুনরায় জীবিত হওয়ার মাধ্যমে।
১৪. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের কর্মের ফলাফল বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা মানুষের কর্মের ফলাফল বর্ণনা করেছেন কিয়ামতের দিন প্রতিটি কাজের হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে।
১৫. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মুমিনদের সফলতার কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সফলতার কথা উল্লেখ করেছেন তাদের ঈমান, তাকওয়া এবং সৎকর্মের মাধ্যমে।
১৬. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে কাফিরদের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা কাফিরদের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছেন তাদের অবিশ্বাস ও পাপাচারের মাধ্যমে।
১৭. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য করার মাধ্যমে।
১৮. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা মানুষের পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে।
১৯. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণনা করেছেন সৎকর্ম, ন্যায়পরায়ণতা এবং আল্লাহর আনুগত্য করার মাধ্যমে।
২০. প্রশ্ন: সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মুমিনদের পুরস্কারের কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা মুমিনদের পুরস্কারের কথা উল্লেখ করেছেন জান্নাত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে।
সূরা আল-মুমিনুন সম্পর্কে ২৫টি MCQ
১. সূরা আল-মুমিনুন কোথায় নাজিল হয়েছে?
a) মদিনা
b) মক্কা
c) তায়েফ
d) জেরুজালেম
উত্তর: b) মক্কা
২. সূরা আল-মুমিনুনের আয়াত সংখ্যা কত?
a) ১০০
b) ১১৮
c) ১২৫
d) ১৩০
উত্তর: b) ১১৮
৩. সূরা আল-মুমিনুনে মুমিনদের কোন গুণটি উল্লেখ করা হয়েছে?
a) নামাজে খুশু
b) অহংকার
c) মিথ্যা বলা
d) অন্যের ক্ষতি করা
উত্তর: a) নামাজে খুশু
৪. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষকে কী থেকে সৃষ্টি করেছেন?
a) আগুন
b) মাটির সারাংশ
c) পানি
d) বাতাস
উত্তর: b) মাটির সারাংশ
৫. সূরা আল-মুমিনুনে কোন নবীর কিসসা উল্লেখ করা হয়েছে?
a) নূহ (আ.)
b) ইব্রাহিম (আ.)
c) মুসা (আ.)
d) ঈসা (আ.)
উত্তর: a) নূহ (আ.)
৬. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষের জীবনচক্র কীভাবে বর্ণনা করেছেন?
a) জন্ম, মৃত্যু, পুনরুত্থান
b) শুধু জন্ম ও মৃত্যু
c) শুধু পুনরুত্থান
d) শুধু মৃত্যু
উত্তর: a) জন্ম, মৃত্যু, পুনরুত্থান
৭. সূরা আল-মুমিনুনে কিয়ামতের দিনের কোন ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে?
a) পুনরুত্থান
b) হিসাব-নিকাশ
c) জান্নাত-জাহান্নাম
d) সবগুলো
উত্তর: d) সবগুলো
৮. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কীভাবে সৃষ্টিজগতের নিদর্শন বর্ণনা করেছেন?
a) আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়
b) নদী, গাছপালা
c) প্রাণীজগৎ
d) সবগুলো
উত্তর: d) সবগুলো
৯. সূরা আল-মুমিনুনে মুমিনদের কীসের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে?
a) জান্নাত
b) জাহান্নাম
c) দুনিয়ার সম্পদ
d) ক্ষমতা
উত্তর: a) জান্নাত
১০. সূরা আল-মুমিনুনে কাফিরদের কীসের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে?
a) জাহান্নাম
b) ক্ষমা
c) দুনিয়ার সম্পদ
d) ক্ষমতা
উত্তর: a) জাহান্নাম
১১. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষের সৃষ্টি ও বিকাশ কীভাবে বর্ণনা করেছেন?
a) মাটির পর্যায় থেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ
b) শুধু মাটির পর্যায়
c) শুধু পূর্ণাঙ্গ মানুষ
d) শুধু প্রাণীজগৎ
উত্তর: a) মাটির পর্যায় থেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ
১২. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষের মৃত্যু ও পুনরুত্থান কীভাবে বর্ণনা করেছেন?
a) মাটির মধ্যে ফিরে যাওয়া ও পুনরায় জীবিত হওয়া
b) শুধু মৃত্যু
c) শুধু পুনরুত্থান
d) শুধু জীবিত হওয়া
উত্তর: a) মাটির মধ্যে ফিরে যাওয়া ও পুনরায় জীবিত হওয়া
১৩. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষের কর্মের ফলাফল কীভাবে বর্ণনা করেছেন?
a) কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশ
b) শুধু দুনিয়ায়
c) শুধু আখিরাতে
d) শুধু ক্ষমা
উত্তর: a) কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশ
১৪. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সফলতা কীভাবে উল্লেখ করেছেন?
a) ঈমান, তাকওয়া ও সৎকর্ম
b) শুধু ঈমান
c) শুধু তাকওয়া
d) শুধু সৎকর্ম
উত্তর: a) ঈমান, তাকওয়া ও সৎকর্ম
১৫. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কাফিরদের ব্যর্থতা কীভাবে উল্লেখ করেছেন?
a) অবিশ্বাস ও পাপাচার
b) শুধু অবিশ্বাস
c) শুধু পাপাচার
d) শুধু ক্ষমা
উত্তর: a) অবিশ্বাস ও পাপাচার
১৬. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য কীভাবে বর্ণনা করেছেন?
a) ইবাদত ও আনুগত্য
b) শুধু ইবাদত
c) শুধু আনুগত্য
d) শুধু ক্ষমা
উত্তর: a) ইবাদত ও আনুগত্য
১৭. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষের পরীক্ষা কীভাবে উল্লেখ করেছেন?
a) জীবনের পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ
b) শুধু পরিস্থিতি
c) শুধু চ্যালেঞ্জ
d) শুধু ক্ষমা
উত্তর: a) জীবনের পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ
১৮. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য কীভাবে বর্ণনা করেছেন?
a) সৎকর্ম, ন্যায়পরায়ণতা ও আল্লাহর আনুগত্য
b) শুধু সৎকর্ম
c) শুধু ন্যায়পরায়ণতা
d) শুধু আল্লাহর আনুগত্য
উত্তর: a) সৎকর্ম, ন্যায়পরায়ণতা ও আল্লাহর আনুগত্য
১৯. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের পুরস্কার কীভাবে উল্লেখ করেছেন?
a) জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি
b) শুধু জান্নাত
c) শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি
d) শুধু ক্ষমা
উত্তর: a) জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি
২০. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষের সৃষ্টি ও বিকাশের কোন পর্যায়টি উল্লেখ করেছেন?
a) মাটির পর্যায় থেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ
b) শুধু মাটির পর্যায়
c) শুধু পূর্ণাঙ্গ মানুষ
d) শুধু প্রাণীজগৎ
উত্তর: a) মাটির পর্যায় থেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ
২১. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের কোন পর্যায়টি উল্লেখ করেছেন?
a) মাটির মধ্যে ফিরে যাওয়া ও পুনরায় জীবিত হওয়া
b) শুধু মৃত্যু
c) শুধু পুনরুত্থান
d) শুধু জীবিত হওয়া
উত্তর: a) মাটির মধ্যে ফিরে যাওয়া ও পুনরায় জীবিত হওয়া
২২. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষের কর্মের ফলাফল কীভাবে বর্ণনা করেছেন?
a) কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশ
b) শুধু দুনিয়ায়
c) শুধু আখিরাতে
d) শুধু ক্ষমা
উত্তর: a) কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশ
২৩. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সফলতা কীভাবে উল্লেখ করেছেন?
a) ঈমান, তাকওয়া ও সৎকর্ম
b) শুধু ঈমান
c) শুধু তাকওয়া
d) শুধু সৎকর্ম
উত্তর: a) ঈমান, তাকওয়া ও সৎকর্ম
২৪. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা কাফিরদের ব্যর্থতা কীভাবে উল্লেখ করেছেন?
a) অবিশ্বাস ও পাপাচার
b) শুধু অবিশ্বাস
c) শুধু পাপাচার
d) শুধু ক্ষমা
উত্তর: a) অবিশ্বাস ও পাপাচার
২৫. সূরা আল-মুমিনুনে আল্লাহ তাআলা মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য কীভাবে বর্ণনা করেছেন?
a) ইবাদত ও আনুগত্য
b) শুধু ইবাদত
c) শুধু আনুগত্য
d) শুধু ক্ষমা
উত্তর: a) ইবাদত ও আনুগত্য
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু
সূরা আল-মুমিনুনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
সূরার নাম: সূরা আল-মুমিনুন (المؤمنون)
অর্থ: “মুমিনগণ”
আয়াত সংখ্যা: ১১৮
নাজিলের স্থান: মক্কা
সূরার অবস্থান: কুরআনের ২৩তম সূরা
পারা: ১৮তম পারা
শানে নুযূল (নাজিলের প্রেক্ষাপট)
সূরা আল-মুমিনুন মক্কী সূরা, অর্থাৎ এটি মক্কায় নাজিল হয়েছে। এই সূরাটি নবুয়তের মধ্যপর্যায়ে নাজিল হয়েছিল, যখন মক্কার কাফিররা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করছিল এবং মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছিল। এই সূরায় মুমিনদের চরিত্র, তাদের গুণাবলি এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও কাফিরদের ভ্রান্ত ধারণা ও তাদের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।
সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক
১. মুমিনদের গুণাবলি: সূরার শুরুতে মুমিনদের গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন নামাজে খুশু, অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা, জাকাত প্রদান, লজ্জাস্থানের হিফাজত করা ইত্যাদি।
২. মানুষের সৃষ্টি ও বিকাশ: আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার বিকাশের বিভিন্ন পর্যায় বর্ণনা করা হয়েছে।
৩. আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস: মৃত্যু, পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ এবং জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
৪. নবী নূহ (আ.)-এর কিসসা: নবী নূহ (আ.)-এর দাওয়াত এবং তার সম্প্রদায়ের প্রত্যাখ্যানের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
৫. সৃষ্টিজগতের নিদর্শন: আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী, গাছপালা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে।
৬. কাফিরদের ভ্রান্ত ধারণা ও শাস্তি: কাফিরদের ভ্রান্ত ধারণা এবং তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সূরাটির শিক্ষা
১. মুমিনদের চরিত্র গঠন: মুমিনদের উচিত নামাজে খুশু, অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা, জাকাত প্রদান এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করা।
২. আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস: মুমিনদের উচিত মৃত্যু, পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ এবং জান্নাত-জাহান্নামের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা।
৩. আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা: সৃষ্টিজগতের নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা করে আল্লাহর কুদরত ও মহিমা উপলব্ধি করা।
৪. কাফিরদের ভ্রান্ত ধারণা থেকে সতর্কতা: কাফিরদের ভ্রান্ত ধারণা ও তাদের পরিণাম থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলা।
৫. নবীদের আদর্শ অনুসরণ: নবী নূহ (আ.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে আল্লাহর দাওয়াত দেওয়া এবং ধৈর্য ধারণ করা।
সূরাটির মূল বিষয়বস্তু
১. মুমিনদের গুণাবলি: সূরার শুরুতে মুমিনদের গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে, যা একজন মুমিনের আদর্শ চরিত্র গঠনে সাহায্য করে।
২. মানুষের সৃষ্টি ও বিকাশ: আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার বিকাশের বিভিন্ন পর্যায় বর্ণনা করা হয়েছে।
৩. আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস: মৃত্যু, পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ এবং জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যা মুমিনদের আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসকে দৃঢ় করে।
৪. নবী নূহ (আ.)-এর কিসসা: নবী নূহ (আ.)-এর দাওয়াত এবং তার সম্প্রদায়ের প্রত্যাখ্যানের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যা নবীদের ধৈর্য ও দাওয়াতের পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষা দেয়।
৫. সৃষ্টিজগতের নিদর্শন: আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী, গাছপালা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে, যা মানুষকে আল্লাহর মহিমা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
৬. কাফিরদের ভ্রান্ত ধারণা ও শাস্তি: কাফিরদের ভ্রান্ত ধারণা এবং তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা মানুষকে সঠিক পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে।
সূরা আল-মুমিনুন মুমিনদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান উপস্থাপন করে, যা তাদের ঈমান, তাকওয়া এবং নৈতিক চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। এই সূরাটি মুমিনদের আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসকে দৃঢ় করে এবং তাদেরকে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে।
সূরা মুমিনুন (২৩তম সূরা) মক্কায় অবতীর্ণ একটি সূরা। এটি ঈমান, আখিরাত, সৃষ্টি, এবং মানব জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর বক্তব্য উপস্থাপন করে। আপনার উল্লেখিত আয়াতগুলোর অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা নিম্নে দেওয়া হলো:
১. সূরা মুমিনুন, আয়াত ১-১০:
আয়াত ১-১০:
“নিশ্চয়ই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা তাদের সালাতে বিনয়ী, যারা অসার কথা থেকে বিরত থাকে, যারা যাকাত আদায় করে, যারা তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে, তাদের স্ত্রী ও মালিকানাধীন দাসীদের ক্ষেত্রে ছাড়া, তবে এতে তারা নিন্দনীয় নয়। অতঃপর যারা এর অতীত কামনা করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। আর যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা তাদের সালাতের হিফাজত করে, তারাই উত্তরাধিকারী হবে। তারা উত্তরাধিকার লাভ করবে ফিরদাউসের; তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতগুলোতে মুমিনদের গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে। সফল মুমিনরা হলেন:
- যারা সালাতে বিনয়ী ও একাগ্র।
- যারা অনর্থক ও অসার কথা থেকে দূরে থাকে।
- যারা যাকাত আদায় করে এবং সামাজিক দায়িত্ব পালন করে।
- যারা তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে এবং শুধুমাত্র বৈধ সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
- যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।
- যারা সালাতের প্রতি যত্নশীল।
এই গুণাবলি অর্জনকারীরা জান্নাতের উত্তরাধিকারী হবে এবং চিরস্থায়ীভাবে ফিরদাউসে বসবাস করবে।
২. সূরা মুমিনুন, আয়াত ৬:
আয়াত ৬:
“তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাধীন দাসীদের ক্ষেত্রে ছাড়া, কারণ এতে তারা নিন্দনীয় নয়।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে বৈধ যৌন সম্পর্কের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্ত্রী এবং মালিকানাধীন দাসীদের সাথে সম্পর্ক ইসলামে বৈধ, তবে এর বাইরে যৌনাচার নিষিদ্ধ এবং গর্হিত কাজ।
৩. সূরা মুমিনুন, আয়াত ৭:
আয়াত ৭:
“অতঃপর যারা এর অতীত কামনা করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।”
ব্যাখ্যা:
যারা বৈধ সম্পর্কের বাইরে যৌনাচারে লিপ্ত হয়, তারা সীমালঙ্ঘনকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে।
৪. সূরা মুমিনুন, আয়াত ৮:
আয়াত ৮:
“আর যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।”
ব্যাখ্যা:
মুমিনদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তারা আমানত (অর্পিত দায়িত্ব) ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। এটি ঈমানের পূর্ণতার লক্ষণ।
৫. সূরা মুমিনুন, আয়াত ১২:
আয়াত ১২:
“আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির সারাংশ থেকে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছেন, যা মানুষের মর্যাদা ও আল্লাহর কুদরতের প্রতি ইঙ্গিত করে।
৬. সূরা মুমিনুন, আয়াত ১৪:
আয়াত ১৪:
“অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুতে রূপান্তরিত করলাম, তারপর শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করলাম, তারপর জমাট রক্তকে মাংসপিণ্ডে পরিণত করলাম, তারপর মাংসপিণ্ড থেকে হাড় সৃষ্টি করলাম, তারপর হাড়কে মাংস দ্বারা আবৃত করলাম, তারপর তাকে অন্য সৃষ্টিতে পরিণত করলাম। সুতরাং মহান আল্লাহ, সর্বোত্তম স্রষ্টা।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মানব সৃষ্টির ধাপগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। এটি আল্লাহর সৃষ্টি কৌশলের অপার মহিমা প্রকাশ করে।
৭. সূরা মুমিনুন, আয়াত ১৮:
আয়াত ১৮:
“আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে, তারপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষণ করি, আর আমি তা অপসারণ করতেও সক্ষম।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে বৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ পানি বর্ষণ করেন এবং তা মাটিতে সংরক্ষণ করেন, যা জীবনের জন্য অপরিহার্য।
৮. সূরা মুমিনুন, আয়াত ১১৫-১১৮:
আয়াত ১১৫-১১৮:
“তোমরা কি মনে কর যে, আমি তোমাদের অযথা সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না? অতএব, মহান আল্লাহ, সত্যিকার মালিক, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি মহান আরশের অধিপতি। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহকে ডাকে, তার কোনো প্রমাণ নেই, তার হিসাব তার রবের কাছে। নিশ্চয়ই কাফিররা সফলকাম হয় না। আর বল, হে আমার রব! ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন, আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতগুলোতে মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য এবং আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। মানুষকে অযথা সৃষ্টি করা হয়নি, বরং তাদেরকে আল্লাহর ইবাদত ও দায়িত্ব পালনের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা শিরকের শামিল, এবং এর কোনো প্রমাণ নেই। শেষে নবীকে (সা.) আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে।
সারমর্ম:
সূরা মুমিনুনের এই আয়াতগুলোতে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য, মানব সৃষ্টির ধাপ, আল্লাহর কুদরত, এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এটি মানুষকে সঠিক পথে চলার এবং আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি দৃঢ় থাকার নির্দেশ দেয়।