সূরা মুজাম্মিল এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা মুজাম্মিল সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।
সূরা মুজাম্মিল
সূরা মুজাম্মিল সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ
- সূরা মুজাম্মিল কত নং সূরা?
- উত্তর: ৭৩ নং সূরা।
- সূরা মুজাম্মিল মক্কী না মাদানী?
- উত্তর: মক্কী সূরা।
- সূরাটির আয়াত সংখ্যা কত?
- উত্তর: ২০টি আয়াত।
- সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে কেন?
- উত্তর: প্রথম আয়াতে রাসূল (সা.)-কে “المُزَّمِّلُ” (চাদরাবৃত) বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
- সূরা মুজাম্মিলের প্রথম আয়াতে কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
- উত্তর: রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়ার নির্দেশ।
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কীভাবে ডেকেছেন?
- উত্তর: “يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ” (হে চাদরাবৃত!)
- সূরা মুজাম্মিলে কিয়ামতের দিনের কী আলোচনা হয়েছে?
- উত্তর: কিয়ামতের দিনটি অত্যন্ত কঠিন হবে (আয়াত ৯)।
- সূরা মুজাম্মিলে ধৈর্য ধারণের কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
- উত্তর: কাফিরদের বিরুদ্ধে ধৈর্য ধারণ করতে বলা হয়েছে (আয়াত ১০)।
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহর কী গুণবাচক নাম উল্লেখ হয়েছে?
- উত্তর: “رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ” (পূর্ব ও পশ্চিমের রব) (আয়াত ৯)।
- সূরা মুজাম্মিলে দুনিয়ার জীবনকে কী বলা হয়েছে?
- উত্তর: “مَتَاعٌ قَلِيلٌ” (অল্প ভোগের সামগ্রী) (আয়াত ২০)।
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কীভাবে সান্ত্বনা দিয়েছেন?
- উত্তর: কাফিরদের বিরুদ্ধে ধৈর্য ধরতে বলেছেন এবং তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
- সূরা মুজাম্মিলের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
- উত্তর: যারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদের পথ দেখাবেন (আয়াত ২০)।
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে ইবাদতের ভার লঘু করেছেন?
- উত্তর: প্রথমে সারা রাত তাহাজ্জুদ পড়ার নির্দেশ ছিল, পরে তা কমিয়ে আনা হয় (আয়াত ২০)।
- সূরা মুজাম্মিলে কাফিরদের কী সতর্ক করা হয়েছে?
- উত্তর: তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি (আয়াত ১৩)।
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কীভাবে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন?
- উত্তর: তিনি রাসূল (সা.)-এর জন্য যথেষ্ট (আয়াত ৯)।
- সূরা মুজাম্মিলে কুরআন তিলাওয়াতের কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
- উত্তর: ধীরে ধীরে স্পষ্টভাবে তিলাওয়াত করতে বলা হয়েছে (আয়াত ৪)।
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কীভাবে স্মরণ করিয়েছেন?
- উত্তর: তিনি সবকিছু জানেন এবং ক্ষমাশীল (আয়াত ২০)।
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মুমিনদের পরীক্ষা নেন?
- উত্তর: তাদের জন্য কিছুটা কষ্ট দেন, কিন্তু পরে সহজ করে দেন (আয়াত ২০)।
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কীভাবে নির্দেশ দিয়েছেন?
- উত্তর: কাফিরদের উপেক্ষা করতে এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে ত্যাগ করতে (আয়াত ১০)।
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কীভাবে সতর্ক করেছেন?
- উত্তর: কাফিরদের শাস্তি আসন্ন (আয়াত ১১-১৩)।
সূরা মুজাম্মিল সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)
- সূরা মুজাম্মিল কোন ধরনের সূরা?
- (ক) মাদানী
- (খ) মক্কী
- (গ) মিশ্র
- (ঘ) কোনোটিই নয়
- সূরা মুজাম্মিলের আয়াত সংখ্যা কত?
- (ক) ১০
- (খ) ২০
- (গ) ৩০
- (ঘ) ৪০
- “المُزَّمِّلُ” শব্দের অর্থ কী?
- (ক) পোশাক পরিহিত
- (খ) চাদরাবৃত
- (গ) সজ্জিত
- (ঘ) ধ্যানমগ্ন
- সূরা মুজাম্মিলে রাসূল (সা.)-কে কী করতে বলা হয়েছে?
- (ক) দিনে নামাজ পড়তে
- (খ) রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে
- (গ) দান বেশি করতে
- (ঘ) সিয়াম রাখতে
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা নিজেকে কী বলে উল্লেখ করেছেন?
- (ক) রব্বুল আলামীন
- (খ) রব্বুল মাশরিক ওয়াল মাগরিব
- (গ) আল-রহমান
- (ঘ) আল-মালিক
- সূরা মুজাম্মিলে কাফিরদের জন্য কী ঘোষণা করা হয়েছে?
- (ক) ক্ষমা
- (খ) শাস্তি
- (গ) পুরস্কার
- (ঘ) সুযোগ
- সূরা মুজাম্মিলে দুনিয়ার জীবনকে কী বলা হয়েছে?
- (ক) চিরস্থায়ী
- (খ) অল্প ভোগের সামগ্রী
- (গ) পরীক্ষা
- (ঘ) বৃথা
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের নির্দেশ দিয়েছেন?
- (ক) কাফিরদের মোকাবেলা করতে
- (খ) ধৈর্য ধারণ করতে
- (গ) যুদ্ধ করতে
- (ঘ) দাওয়াত বন্ধ করতে
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন?
- (ক) বিজয়
- (খ) সাহায্য
- (গ) সম্পদ
- (ঘ) দীর্ঘ জীবন
- সূরা মুজাম্মিলে কুরআন তিলাওয়াতের পদ্ধতি কী?
- (ক) দ্রুত
- (খ) ধীরে ধীরে
- (গ) গুনগুন করে
- (ঘ) চুপে চুপে
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের কথা স্মরণ করিয়েছেন?
- (ক) দুনিয়ার মোহ
- (খ) আখিরাতের শাস্তি
- (গ) তাঁর ক্ষমা ও জ্ঞান
- (ঘ) ফেরেশতাদের ভয়
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের নির্দেশ দেননি?
- (ক) তাহাজ্জুদ পড়তে
- (খ) কাফিরদের উপেক্ষা করতে
- (গ) যুদ্ধ করতে
- (ঘ) ধৈর্য ধরতে
- সূরা মুজাম্মিলের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
- (ক) সালাত প্রতিষ্ঠা করো
- (খ) জিহাদকারীদের আল্লাহ পথ দেখাবেন
- (গ) দান করো
- (ঘ) সত্য গ্রহণ করো
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন?
- (ক) কঠিন দিনের (কিয়ামত)
- (খ) যুদ্ধের
- (গ) দাওয়াতের
- (ঘ) হিজরতের
- (ক) কঠিন দিনের (কিয়ামত)
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের কথা বলেছেন?
- (ক) তাঁর অনুগ্রহ
- (খ) তাঁর ক্ষমতা
- (গ) তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমা
- (ঘ) তাঁর শাস্তি
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের নির্দেশ দিয়েছেন?
- (ক) কাফিরদের মাফ করতে
- (খ) তাদেরকে সুন্দরভাবে ত্যাগ করতে
- (গ) তাদের সাথে বিতর্ক করতে
- (ঘ) তাদেরকে ভয় দেখাতে
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের কথা স্মরণ করিয়েছেন?
- (ক) তাঁর সাহায্য
- (খ) তাঁর শাস্তি
- (গ) তাঁর ক্ষমা ও দয়া
- (ঘ) তাঁর বিচার
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের নির্দেশ দেননি?
- (ক) তাহাজ্জুদ পড়তে
- (খ) কুরআন তিলাওয়াত করতে
- (গ) সম্পদ বণ্টন করতে
- (ঘ) ধৈর্য ধরতে
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন?
- (ক) দুনিয়ার সম্পদ
- (খ) আখিরাতের পুরস্কার
- (গ) তাঁর সাহায্য ও হিফাজত
- (ঘ) দীর্ঘ জীবন
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের নির্দেশ দিয়েছেন?
- (ক) কাফিরদের সাথে বিতর্ক করতে
- (খ) তাদেরকে উপেক্ষা করতে
- (গ) তাদেরকে শাস্তি দিতে
- (ঘ) তাদেরকে ক্ষমা করতে
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের কথা বলেছেন?
- (ক) তাঁর রিজিক
- (খ) তাঁর শাস্তি
- (গ) তাঁর ক্ষমা ও জ্ঞান
- (ঘ) তাঁর ফেরেশতা
- সূরা মুজাম্মিলের মূল বিষয় কী?
- (ক) জিহাদ
- (খ) তাহাজ্জুদ ও ধৈর্য
- (গ) দান
- (ঘ) সিয়াম
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের নির্দেশ দিয়েছেন?
- (ক) কাফিরদের সাথে লড়াই করতে
- (খ) তাদেরকে উপেক্ষা করতে
- (গ) তাদেরকে দাওয়াত দিতে
- (ঘ) তাদেরকে ভয় দেখাতে
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের কথা স্মরণ করিয়েছেন?
- (ক) তাঁর শাস্তি
- (খ) তাঁর ক্ষমা
- (গ) তাঁর ফেরেশতা
- (ঘ) তাঁর কিতাব
- সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে কিসের নির্দেশ দেননি?
- (ক) তাহাজ্জুদ পড়তে
- (খ) কুরআন তিলাওয়াত করতে
- (গ) সম্পদ বণ্টন করতে
- (ঘ) ধৈর্য ধরতে
সঠিক উত্তর চিহ্নিত
এই প্রশ্নোত্তর ও MCQ গুলো সূরা মুজাম্মিলের মূল বিষয়বস্তু ও শিক্ষাকে সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত
সূরা মুজাম্মিল: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু ও ফযিলত
১. সংক্ষিপ্ত পরিচয়
- নাম: সূরা মুজাম্মিল (আরবি: المُزَّمِّل)
- অর্থ: “চাদরাবৃত ব্যক্তি” (রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সম্বোধন করে)
- সূরার অবস্থান: ৭৩তম সূরা
- আয়াত সংখ্যা: ২০টি
- নাযিলের স্থান: মক্কা (মক্কী সূরা)
- পারার অবস্থান: ২৯তম পারায়
২. শানে নুযূল (প্রেক্ষাপট)
সূরা মুজাম্মিল ইসলামের প্রাথমিক যুগে নাযিল হয়, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উপর নবুয়তের দায়িত্ব অর্পিত হয়। এই সূরার প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূল ﷺ-কে “হে চাদরাবৃত!” বলে ডেকেছেন। এর পেছনে একটি ঘটনা হলো:
- একদিন রাসূল ﷺ চাদর বা কম্বল জড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন জিবরাঈল (আ.) ওহী নিয়ে আগমন করেন এবং তাঁকে নামাজের জন্য জাগ্রত করেন।
- এই সূরার মাধ্যমে রাসূল ﷺ-কে তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং তাঁর প্রতি সমর্থন ও সান্ত্বনা দেওয়া হয়, যাতে তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধে ধৈর্য ধারণ করতে পারেন।
৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক
- তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দেশ (আয়াত ১-৪)
- আল্লাহর স্মরণ ও ধৈর্যের আদেশ (আয়াত ৮-১০)
- কাফিরদের জন্য সতর্কবাণী ও শাস্তির ঘোষণা (আয়াত ১১-১৩)
- দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা (আয়াত ২০)
- কুরআন তিলাওয়াতের পদ্ধতি (আয়াত ৪)
৪. সূরাটির শিক্ষা
আধ্যাত্মিক শিক্ষা:
- তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন।
- ধীরে ধীরে কুরআন তিলাওয়াত ও তা বুঝে পড়ার গুরুত্ব।
নৈতিক শিক্ষা:
- কাফিরদের উপেক্ষা করে ধৈর্য ধারণ করা।
- দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়া।
সামাজিক শিক্ষা:
- আল্লাহর উপর ভরসা রেখে দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যাওয়া।
- অল্প আমলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা।
৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু
বিষয় | আয়াত নং |
তাহাজ্জুদ নামাজের আদেশ | ১-৪ |
আল্লাহর স্মরণ ও ধৈর্য | ৮-১০ |
কাফিরদের শাস্তির ঘোষণা | ১১-১৩ |
দুনিয়ার জীবনের স্বল্পতা | ২০ |
আল্লাহর ক্ষমা ও জ্ঞান | ২০ |
৬. সূরাটির ফযিলত (মর্যাদা ও উপকারিতা)
- তাহাজ্জুদের গুরুত্ব:
- এই সূরার মাধ্যমে রাসূল ﷺ-কে রাতের নামাজের বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা মুমিনদের জন্য আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যম।
- কঠিন সময়ে ধৈর্যের শিক্ষা:
- রাসূল ﷺ-এর প্রতি এই সূরার মাধ্যমে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে, যা মুমিনদের জন্য কষ্টে ধৈর্য ধরার অনুপ্রেরণা।
- কুরআন তিলাওয়াতের পদ্ধতি:
- আয়াত ৪-এ কুরআন ধীরে ধীরে তিলাওয়াতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা সঠিক তাজবিদ শেখার গুরুত্ব বহন করে।
- দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্তির বার্তা:
- আয়াত ২০-এ দুনিয়াকে “অল্প ভোগের সামগ্রী” বলা হয়েছে, যা মুমিনদেরকে আখিরাতমুখী হতে উদ্বুদ্ধ করে।
- আল্লাহর সাহায্যের প্রতিশ্রুতি:
- এই সূরায় আল্লাহ রাসূল ﷺ-কে বলেছেন, “আমিই তোমার জন্য যথেষ্ট” (আয়াত ৯), যা মুমিনদের জন্য আশার বাণী।
উপসংহার
সূরা মুজাম্মিল মুমিনদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা, যা তাহাজ্জুদ, ধৈর্য, কুরআন তিলাওয়াত ও দুনিয়ার মোহ ত্যাগের শিক্ষা দেয়। এটি রাসূল ﷺ-এর জীবনের কঠিন সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহস ও সান্ত্বনার বার্তা বহন করে। এই সূরার আমলে মুমিনরা আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করতে পারে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে।
সূরা মুজাম্মিলের গুরুত্ব বুঝে নিয়মিত তিলাওয়াত ও আমল করুন!
সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও তার অর্থ
সূরা মুজাম্মিল: বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও তার অর্থ
সূরা মুজাম্মিলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নিচে ৫টি মূল বিষয়ের আলোকে আয়াত ও তার অর্থ দেওয়া হলো:
১. তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দেশ
আয়াত:
﴿يَـٰٓأَيُّهَا ٱلْمُزَّمِّلُ ﴿١﴾ قُمِ ٱلَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا ﴿٢﴾ نِّصْفَهُۥٓ أَوِ ٱنقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا ﴿٣﴾﴾
অর্থ:
“হে চাদরাবৃত! রাতেই উঠুন নামাজে, অল্প সময় ছাড়া। অর্ধরাত, অথবা তার চেয়ে কিছু কম।” (সূরা মুজাম্মিল ৭৩:১-৩)
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূল ﷺ-কে রাতের বেলা তাহাজ্জুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যা ইবাদত ও আধ্যাত্মিক উন্নতির বিশেষ সময়।
২. কুরআন তিলাওয়াতের পদ্ধতি
আয়াত:
﴿وَرَتِّلِ ٱلْقُرْءَانَ تَرْتِيلًا ﴿٤﴾﴾
অর্থ:
“আর কুরআন পাঠ করুন ধীরে ধীরে, সুস্পষ্টভাবে।” (সূরা মুজাম্মিল ৭৩:৪)
ব্যাখ্যা:
কুরআন তিলাওয়াতের সময় তা সুন্দরভাবে, ধীরে ধীরে ও তাজবিদ সহকারে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে এর অর্থ ও মাহাত্ম্য বুঝা যায়।
৩. ধৈর্য ধারণ ও আল্লাহর উপর ভরসা
আয়াত:
﴿وَٱصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَٱهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيلًا ﴿١٠﴾﴾
অর্থ:
“আর তারা যা বলে, তা সহ্য করুন এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে ত্যাগ করুন।” (সূরা মুজাম্মিল ৭৩:১০)
ব্যাখ্যা:
কাফিরদের অপবাদ ও বিরোধিতা উপেক্ষা করে ধৈর্য ধারণ করতে বলা হয়েছে, যা দাওয়াতের কাজে সহনশীলতার শিক্ষা দেয়।
৪. কাফিরদের জন্য শাস্তির ঘোষণা
আয়াত:
﴿إِنَّآ أَرْسَلْنَآ إِلَيْكُمْ رَسُولًا شَـٰهِدًا عَلَيْكُمْ كَمَآ أَرْسَلْنَآ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ رَسُولًا ﴿١٥﴾ فَعَصَىٰ فِرْعَوْنُ ٱلرَّسُولَ فَأَخَذْنَـٰهُ أَخْذًا وَبِيلًا ﴿١٦﴾﴾
অর্থ:
“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট একজন রাসূল পাঠিয়েছি, যে তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, যেমন আমি ফিরাউনের নিকট একজন রাসূল পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর ফিরাউন সেই রাসূলের অবাধ্য হয়েছিল, তাই আমি তাকে কঠিন শাস্তি দিয়েছিলাম।” (সূরা মুজাম্মিল ৭৩:১৫-১৬)
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে কাফিরদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যে, যারা রাসূল ﷺ-এর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে, তাদের পরিণতি ফিরাউনের মতো ধ্বংস হবে।
৫. দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা
আয়াত:
﴿إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَىٰ مِن ثُلُثَىِ ٱلَّيْلِ وَنِصْفَهُۥ وَثُلُثَهُۥ وَطَآئِفَةٌ مِّنَ ٱلَّذِينَ مَعَكَ ۚ وَٱللَّهُ يُقَدِّرُ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ ۚ عَلِمَ أَن لَّن تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ ۖ فَٱقْرَءُوا۟ مَا تَيَسَّرَ مِنَ ٱلْقُرْءَانِ ۚ عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَىٰ ۙ وَءَاخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِى ٱلْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ ٱللَّهِ ۙ وَءَاخَرُونَ يُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۖ فَٱقْرَءُوا۟ مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ ۚ وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَقْرِضُوا۟ ٱللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا۟ لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًا ۚ وَٱسْتَغْفِرُوا۟ ٱللَّهَ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌۢ ﴿٢٠﴾﴾
অর্থ:
“নিশ্চয়ই তোমার রব জানেন যে, তুমি রাতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ সময় দাঁড়িয়ে থাক (নামাজে)। আর তোমাদের মধ্যে একদলও তাই করে। আল্লাহই রাত ও দিনের পরিমাপ নির্ধারণ করেন। তিনি জানেন যে, তোমরা তা পূর্ণভাবে গণনা করতে পারবে না, তাই তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হয়েছেন। সুতরাং কুরআন থেকে যা সহজ হয়, তা পড়। তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে পৃথিবীতে সফর করবে এবং কেউ আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে। সুতরাং তা থেকে যা সহজ হয়, তা পড়। আর নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজেদের জন্য যে ভালো কাজ অগ্রিম পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে, যা সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিদান। আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরা মুজাম্মিল ৭৩:২০)
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে দুনিয়ার জীবনের সীমাবদ্ধতা ও ইবাদতের সহজীকরণের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মানুষের সীমাবদ্ধতা বুঝে ইবাদতকে সহজ করে দিয়েছেন এবং আখিরাতের প্রস্তুতির তাগিদ দিয়েছেন।
উপসংহার
সূরা মুজাম্মিলের এই আয়াতগুলো মুমিনদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে:
- তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতি।
- কুরআন সুন্দরভাবে তিলাওয়াতের আদেশ।
- ধৈর্য ধারণ ও আল্লাহর উপর ভরসা।
- কাফিরদের জন্য সতর্কবার্তা।
- দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা ও আখিরাতের প্রস্তুতি।
এই শিক্ষাগুলো মুমিনদের জীবনে আমল করলে আত্মিক ও সামাজিক উন্নতি সম্ভব।