সূরা মারিয়াম (আরবি: سورة مريم) হল পবিত্র কুরআনের ১৯তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৯৮টি। এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে হযরত মারিয়াম (আ.)-এর নামানুসারে, যিনি হযরত ঈসা (আ.)-এর মা। সূরাটিতে হযরত মারিয়াম (আ.)-এর পবিত্র জীবন, হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম, এবং অন্যান্য নবী-রাসূলদের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। এটি তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত এবং আল্লাহর অনুগ্রহের উপর গুরুত্বারোপ করে। সূরা মারিয়াম এর ফজিলত সহ বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।
সূরা মারিয়াম
সূরা মারিয়াম সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর:
১. প্রশ্ন: সূরা মারিয়াম কত নং সূরা?
উত্তর: ১৯ নং সূরা।
২. প্রশ্ন: সূরা মারিয়াম কতটি আয়াত নিয়ে গঠিত?
উত্তর: ৯৮টি আয়াত।
৩. প্রশ্ন: সূরা মারিয়াম কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে?
উত্তর: মক্কায়।
৪. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে কিসের নামে?
উত্তর: হযরত মারিয়াম (আ.)-এর নামে।
৫. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে কোন নবীর জন্মের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের কাহিনী।
৬. প্রশ্ন: হযরত মারিয়াম (আ.)-এর পিতা ও মাতার নাম কী?
উত্তর: পিতা ইমরান, মাতা হান্নাহ।
৭. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে হযরত যাকারিয়া (আ.)-এর দোয়া কী ছিল?
উত্তর: তিনি সন্তানের জন্য দোয়া করেছিলেন।
৮. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পিতার সাথে কী আলোচনা হয়েছে?
উত্তর: তিনি পিতাকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করার আহ্বান জানান।
৯. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে কিয়ামতের দিনের কী বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা ও মানুষের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।
১০. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে আল্লাহর অনুগ্রহের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: হযরত মারিয়াম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ দেখানো হয়েছে।
১১. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রথম কথা কী ছিল?
উত্তর: তিনি বলেছিলেন, “আমি আল্লাহর বান্দা।”
১২. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে হযরত ইসমাইল (আ.)-এর কী গুণ বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও আল্লাহর প্রতি অনুগত।
১৩. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে হযরত ইদ্রিস (আ.)-এর কী গুণ বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন।
১৪. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে কী উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: আকাশ, পৃথিবী ও মানুষের সৃষ্টি।
১৫. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে কাফিরদের কী শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: জাহান্নামের শাস্তি।
১৬. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে মুমিনদের কী পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: জান্নাত।
১৭. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে আল্লাহর রহমতের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: হযরত মারিয়াম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম।
১৮. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে হযরত মুসা (আ.)-এর কী গুণ বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রতি অনুগত ও নির্ভরযোগ্য।
১৯. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে হযরত আদম (আ.)-এর কী গুণ বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: তিনি ছিলেন আল্লাহর নির্দেশে সৃষ্ট প্রথম মানুষ।
২০. প্রশ্ন: সূরা মারিয়ামে আল্লাহর একত্ববাদের কী বার্তা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহই একমাত্র ইলাহ, তাঁর কোনো শরিক নেই।
আরও পড়তে পারেন– সূরা কাহফ ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন উত্তরসহ বিস্তারিত
সূরা মারিয়াম সম্পর্কে ২৫টি MCQ:
১. সূরা মারিয়াম কত নং সূরা?
ক) ১৮
খ) ১৯
গ) ২০
ঘ) ২১
উত্তর: খ) ১৯
২. সূরা মারিয়ামে কতটি আয়াত আছে?
ক) ৯৮
খ) ১১৪
গ) ১২৩
ঘ) ১৩০
উত্তর: ক) ৯৮
৩. সূরা মারিয়াম কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে?
ক) মদিনা
খ) মক্কা
গ) তায়েফ
ঘ) জেরুজালেম
উত্তর: খ) মক্কা
৪. সূরা মারিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে কিসের নামে?
ক) হযরত ঈসা (আ.)
খ) হযরত মারিয়াম (আ.)
গ) হযরত ইব্রাহিম (আ.)
ঘ) হযরত মুসা (আ.)
উত্তর: খ) হযরত মারিয়াম (আ.)
৫. সূরা মারিয়ামে হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
ক) সত্য
খ) মিথ্যা
উত্তর: ক) সত্য
৬. হযরত মারিয়াম (আ.)-এর পিতার নাম কী?
ক) ইমরান
খ) ইব্রাহিম
গ) মুসা
ঘ) দাউদ
উত্তর: ক) ইমরান
৭. সূরা মারিয়ামে হযরত যাকারিয়া (আ.)-এর দোয়া কী ছিল?
ক) ধন-সম্পদের জন্য
খ) সন্তানের জন্য
গ) ক্ষমার জন্য
ঘ) বিজয়ের জন্য
উত্তর: খ) সন্তানের জন্য
৮. সূরা মারিয়ামে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পিতার সাথে কী আলোচনা হয়েছে?
ক) ব্যবসা নিয়ে
খ) মূর্তিপূজা ত্যাগ করার আহ্বান
গ) যুদ্ধের প্রস্তুতি
ঘ) ধর্মান্তর
উত্তর: খ) মূর্তিপূজা ত্যাগ করার আহ্বান
৯. সূরা মারিয়ামে কিয়ামতের দিনের কী বর্ণনা করা হয়েছে?
ক) শান্তির দিন
খ) ভয়াবহ দিন
গ) উৎসবের দিন
ঘ) সাধারণ দিন
উত্তর: খ) ভয়াবহ দিন
১০. সূরা মারিয়ামে আল্লাহর অনুগ্রহের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
ক) হযরত মারিয়াম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম
খ) হযরত মুসা (আ.)-এর নেতৃত্ব
গ) হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগ
ঘ) হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা
উত্তর: ক) হযরত মারিয়াম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম
১১. সূরা মারিয়ামে হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রথম কথা কী ছিল?
ক) আমি আল্লাহর বান্দা
খ) আমি নবী
গ) আমি রাজা
ঘ) আমি শিক্ষক
উত্তর: ক) আমি আল্লাহর বান্দা
১২. সূরা মারিয়ামে হযরত ইসমাইল (আ.)-এর কী গুণ বর্ণনা করা হয়েছে?
ক) সত্যবাদী
খ) ধনী
গ) যোদ্ধা
ঘ) শিল্পী
উত্তর: ক) সত্যবাদী
১৩. সূরা মারিয়ামে হযরত ইদ্রিস (আ.)-এর কী গুণ বর্ণনা করা হয়েছে?
ক) উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন
খ) ধনী
গ) যোদ্ধা
ঘ) শিল্পী
উত্তর: ক) উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন
১৪. সূরা মারিয়ামে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে কী উল্লেখ করা হয়েছে?
ক) আকাশ ও পৃথিবী
খ) সমুদ্র
গ) পাহাড়
ঘ) মরুভূমি
উত্তর: ক) আকাশ ও পৃথিবী
১৫. সূরা মারিয়ামে কাফিরদের কী শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
ক) জাহান্নাম
খ) ক্ষমা
গ) ধন-সম্পদ
ঘ) সম্মান
উত্তর: ক) জাহান্নাম
১৬. সূরা মারিয়ামে মুমিনদের কী পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে?
ক) জান্নাত
খ) ধন-সম্পদ
গ) ক্ষমা
ঘ) সম্মান
উত্তর: ক) জান্নাত
১৭. সূরা মারিয়ামে আল্লাহর রহমতের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
ক) হযরত মারিয়াম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম
খ) হযরত মুসা (আ.)-এর নেতৃত্ব
গ) হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগ
ঘ) হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা
উত্তর: ক) হযরত মারিয়াম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম
১৮. সূরা মারিয়ামে হযরত মুসা (আ.)-এর কী গুণ বর্ণনা করা হয়েছে?
ক) আল্লাহর প্রতি অনুগত
খ) ধনী
গ) যোদ্ধা
ঘ) শিল্পী
উত্তর: ক) আল্লাহর প্রতি অনুগত
১৯. সূরা মারিয়ামে হযরত আদম (আ.)-এর কী গুণ বর্ণনা করা হয়েছে?
ক) আল্লাহর নির্দেশে সৃষ্ট প্রথম মানুষ
খ) ধনী
গ) যোদ্ধা
ঘ) শিল্পী
উত্তর: ক) আল্লাহর নির্দেশে সৃষ্ট প্রথম মানুষ
২০. সূরা মারিয়ামে আল্লাহর একত্ববাদের কী বার্তা দেওয়া হয়েছে?
ক) আল্লাহই একমাত্র ইলাহ
খ) আল্লাহর শরিক আছে
গ) আল্লাহ দুর্বল
ঘ) আল্লাহ অস্তিত্বহীন
উত্তর: ক) আল্লাহই একমাত্র ইলাহ
২১. সূরা মারিয়ামে হযরত মারিয়াম (আ.)-এর পবিত্রতার কী বর্ণনা করা হয়েছে?
ক) তিনি ছিলেন পবিত্র ও নিষ্পাপ
খ) তিনি ছিলেন ধনী
গ) তিনি ছিলেন যোদ্ধা
ঘ) তিনি ছিলেন শিল্পী
উত্তর: ক) তিনি ছিলেন পবিত্র ও নিষ্পাপ
২২. সূরা মারিয়ামে হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের সময় কী ঘটেছিল?
ক) তিনি কথা বলেছিলেন
খ) তিনি চুপ ছিলেন
গ) তিনি কেঁদেছিলেন
ঘ) তিনি হাসেছিলেন
উত্তর: ক) তিনি কথা বলেছিলেন
২৩. সূরা মারিয়ামে হযরত যাকারিয়া (আ.)-এর সন্তানের নাম কী ছিল?
ক) ইয়াহিয়া
খ) ইব্রাহিম
গ) মুসা
ঘ) দাউদ
উত্তর: ক) ইয়াহিয়া
২৪. সূরা মারিয়ামে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পিতার সাথে কী আলোচনা হয়েছে?
ক) মূর্তিপূজা ত্যাগ করার আহ্বান
খ) ব্যবসা নিয়ে
গ) যুদ্ধের প্রস্তুতি
ঘ) ধর্মান্তর
উত্তর: ক) মূর্তিপূজা ত্যাগ করার আহ্বান
২৫. সূরা মারিয়ামে আল্লাহর অনুগ্রহের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
ক) হযরত মারিয়াম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম
খ) হযরত মুসা (আ.)-এর নেতৃত্ব
গ) হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগ
ঘ) হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা
উত্তর: ক) হযরত মারিয়াম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম
সূরা মারিয়ামের শানেনুযূল:
সূরা মারিয়াম মক্কী সূরা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে। এটি নবুওয়তের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ হয়েছিল, যখন মুসলমানরা মক্কায় অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। এই সূরাটি মুসলমানদেরকে সান্ত্বনা দেয় এবং তাদেরকে আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি কাফিরদেরকে সতর্ক করে এবং মুমিনদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়।
সূরা মারিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ দিক:
১. তাওহীদ: আল্লাহর একত্ববাদের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
২. রিসালাত: নবী-রাসূলদের মিশন ও তাদের সংগ্রামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
৩. আখিরাত: কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা ও জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
৪. আল্লাহর অনুগ্রহ: হযরত মারিয়াম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
৫. নৈতিক শিক্ষা: সত্যবাদিতা, ধৈর্য, আল্লাহর প্রতি আস্থা ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলীর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সূরা মারিয়ামের শিক্ষা:
১. আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখা।
২. নৈতিক গুণাবলী অর্জন করা।
৩. কিয়ামতের দিনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
৪. আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া।
৫. মূর্তিপূজা ও শিরক থেকে দূরে থাকা।
সূরা মারিয়ামের মূল বিষয়বস্তু:
১. তাওহীদ: আল্লাহর একত্ববাদ।
২. রিসালাত: নবী-রাসূলদের মিশন।
৩. আখিরাত: কিয়ামত ও পরকাল।
৪. আল্লাহর অনুগ্রহ: হযরত মারিয়াম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম।
৫. নৈতিক শিক্ষা: সত্যবাদিতা, ধৈর্য, আল্লাহর প্রতি আস্থা।
সূরা মারিয়ামের ফযিলত:
১. এই সূরা তিলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ লাভ হয়।
২. এটি কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।
৩. এটি মুমিনদেরকে সান্ত্বনা ও আশ্বস্ত করে।
৪. এটি কাফিরদেরকে সতর্ক করে।
সূরা মারিয়ামের আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ ব্যাখ্যা:
১. আয়াত: “وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مَرْيَمَ إِذِ انْتَبَذَتْ مِنْ أَهْلِهَا مَكَانًا شَرْقِيًّا” (সূরা মারিয়াম, আয়াত ১৬)
অর্থ: “আপনি এই কিতাবে মারিয়ামের কথা স্মরণ করুন, যখন তিনি তার পরিবার থেকে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে এক স্থানে চলে গিয়েছিলেন।”
ব্যাখ্যা: এই আয়াতে হযরত মারিয়াম (আ.)-এর পবিত্রতা ও আল্লাহর প্রতি তাঁর আস্থার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি আল্লাহর ইবাদতের জন্য একাকী চলে গিয়েছিলেন।
২. আয়াত: “قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي وَلَدٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ ۖ قَالَ كَذَٰلِكِ اللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ” (সূরা মারিয়াম, আয়াত ২০)
অর্থ: “মারিয়াম বললেন, ‘হে আমার রব, আমার সন্তান কীভাবে হবে, যখন কোনো মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি?’ আল্লাহ বললেন, ‘এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যখন তিনি কোনো বিষয় নির্ধারণ করেন, তখন তিনি শুধু বলেন, ‘হও’, আর তা হয়ে যায়।'”
ব্যাখ্যা: এই আয়াতে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। হযরত মারিয়াম (আ.)-এর মাধ্যমে হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতার প্রকাশ।
৩. আয়াত: “إِنَّ اللَّهَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۗ هَٰذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ” (সূরা মারিয়াম, আয়াত ৩৬)
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার রব এবং তোমাদেরও রব। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদত কর। এটাই সরল পথ।”
ব্যাখ্যা: এই আয়াতে হযরত ঈসা (আ.)-এর বাণী উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তিনি আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান জানিয়েছেন।
৪. আয়াত: “وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَحْسَنَ الَّذِي كَانُوا يَعْمَلُونَ” (সূরা মারিয়াম, আয়াত ৬০)
অর্থ: “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের পাপসমূহ মোচন করব এবং তাদেরকে তাদের উত্তম আমলের প্রতিদান দেব।”
ব্যাখ্যা: এই আয়াতে মুমিনদের জন্য আল্লাহর ক্ষমা ও পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে।
৫. আয়াত: “وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَلَا هَضْمًا” (সূরা মারিয়াম, আয়াত ৭২)
অর্থ: “যে সৎকর্ম করে এবং মুমিন হয়, সে কোনো জুলুম বা হ্রাসের আশঙ্কা করবে না।”
ব্যাখ্যা: এই আয়াতে মুমিনদেরকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে যে, তাদের সৎকর্মের প্রতিদান নিশ্চিতভাবে দেওয়া হবে।
এই বিশদ আলোচনার মাধ্যমে সূরা মারিয়ামের গুরুত্ব, শিক্ষা, এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায়।
সূরা মারিয়াম এর ফজিলত
সূরা মারিয়াম (সূরা ১৯) হল পবিত্র কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরার ফজিলত বা মর্যাদা সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস ও ইসলামিক স্কলারদের বক্তব্য রয়েছে। নিম্নে সূরা মারিয়ামের কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো:
১. আধ্যাত্মিক মর্যাদা ও সওয়াব:
- সূরা মারিয়াম পাঠ করলে আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করা যায়। এটি পাঠকারীর জন্য সওয়াব ও আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যম।
- এই সূরায় নবী মারিয়াম (আ.) ও নবী ঈসা (আ.)-এর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, যা পাঠকারীকে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে সচেতন করে।
২. কিয়ামতের দিন সুপারিশ:
- কিছু হাদিসে উল্লেখ আছে যে, সূরা মারিয়াম পাঠকারীকে কিয়ামতের দিন এই সূরা সুপারিশ করবে। এটি পাঠকারীর জন্য শাফায়াতের কারণ হবে।
৩. পরিবারে বরকত:
- সূরা মারিয়াম পাঠ করলে পরিবারে শান্তি ও বরকত বৃদ্ধি পায়। বিশেষত সন্তান লাভের ইচ্ছা পূরণের জন্য এই সূরা পাঠ করা হয়।
৪. দুঃখ-কষ্ট দূরীকরণ:
- এই সূরা পাঠ করলে আল্লাহর রহমতে দুঃখ-কষ্ট দূর হয় এবং মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়।
৫. নবীজি (সা.)-এর বিশেষ পছন্দ:
- নবী মুহাম্মদ (সা.) এই সূরাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন এবং এটি তিলাওয়াত করতেন। এটি তার প্রিয় সূরাগুলোর মধ্যে একটি।
৬. সন্তান লাভের দোয়া:
- সূরা মারিয়ামে নবী যাকারিয়া (আ.)-এর সন্তান লাভের দোয়া উল্লেখ রয়েছে। যারা সন্তান কামনা করেন, তারা এই সূরা পাঠ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন।
৭. ঈমান বৃদ্ধি:
- এই সূরায় আল্লাহর কুদরত, নবীদের জীবনী এবং আখিরাতের বর্ণনা রয়েছে, যা ঈমানকে শক্তিশালী করে।
৮. রোগ-শোক থেকে মুক্তি:
- কিছু বর্ণনায় রয়েছে যে, সূরা মারিয়াম পাঠ করলে রোগ-শোক থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং আল্লাহর রহমত নাজিল হয়।
সূরা মারিয়াম পাঠের গুরুত্ব:
সূরা মারিয়াম পাঠ করা যেমন ফজিলতপূর্ণ, তেমনি এর শিক্ষা ও বার্তা অনুধাবন করাও জরুরি। এটি আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি আস্থা, ধৈর্য এবং নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
সতর্কতা: সূরা মারিয়ামের ফজিলত সম্পর্কে কিছু বর্ণনা দুর্বল বা জাল হাদিসের মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তাই যেকোনো ফজিলত সম্পর্কে জানার সময় বিশুদ্ধ হাদিস ও নির্ভরযোগ্য উৎসের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।