সূরা আল-মায়িদা একটি মাদানী সূরা, যা ইসলামের বিধি-বিধান, আইন-কানুন, নৈতিকতা এবং সামাজিক নিয়ম-কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে। এটি কুরআনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা মুসলিমদের জন্য হালাল-হারাম, চুক্তি, ন্যায়বিচার, ওয়াদা পালন এবং আল্লাহর আইন মেনে চলার নির্দেশনা প্রদান করে।
সূরা আল-মায়িদা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদা কুরআনের কততম সূরা?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদা কুরআনের ৫ম সূরা।
২. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদার আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদার আয়াত সংখ্যা ১২০টি।
৩. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদার অন্য নাম কী?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদার অন্য নাম “সূরা আল-আকদ” (চুক্তির সূরা)।
৪. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদা কোন ধরনের সূরা?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদা একটি মাদানী সূরা।
৫. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় হযরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারীদের জন্য আসমানী খাবারের ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়তে পারেন—সূরা আল ইমরান সম্পর্কে ২০টি প্রশ্ন ও MCQ
৬. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় হযরত ঈসা (আ.) এবং হযরত মুসা (আ.)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
৭. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের আইন-কানুন আলোচিত হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় খাদ্য, পানীয়, বিচার-আচার, চুক্তি, ওয়াদা ইত্যাদি বিষয়ে আইন-কানুন আলোচিত হয়েছে।
৮. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় ন্যায়বিচার, সত্যবাদিতা, ওয়াদা পালন এবং আল্লাহর আইন মেনে চলার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
৯. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন সম্প্রদায়ের প্রতি সতর্কতা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় ইহুদি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতি সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।
১০. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় হযরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।
১১. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আল্লাহর আইন লঙ্ঘনের জন্য কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
১২. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় ন্যায়বিচার, সত্যবাদিতা এবং আল্লাহর আইন মেনে চলার জন্য জান্নাতের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে।
১৩. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের খাবারের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় হালাল ও হারাম খাবারের কথা বলা হয়েছে।
১৪. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের পানীয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় মাদক জাতীয় পানীয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১৫. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের চুক্তির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় আল্লাহর সাথে করা চুক্তি এবং মানুষের মধ্যে করা চুক্তির কথা বলা হয়েছে।
১৬. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের বিচার-আচারের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় ন্যায়বিচার, সাক্ষ্য প্রদান এবং আইন প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে।
১৭. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের পাপের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আল্লাহর আইন লঙ্ঘনের কথা বলা হয়েছে।
১৮. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের পুণ্যের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় ন্যায়বিচার, সত্যবাদিতা এবং আল্লাহর আইন মেনে চলার কথা বলা হয়েছে।
১৯. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের দোয়ার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং সঠিক পথের জন্য দোয়ার কথা বলা হয়েছে।
২০. প্রশ্ন: সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: সূরা আল-মায়িদায় আল্লাহর আইন লঙ্ঘন এবং পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
সূরা আল-মায়িদা সম্পর্কে ২৫টি MCQ
১. সূরা আল-মায়িদা কুরআনের কততম সূরা?
ক) ৩য়
খ) ৪র্থ
গ) ৫ম
ঘ) ৬ষ্ঠ
উত্তর: গ) ৫ম
২. সূরা আল-মায়িদার আয়াত সংখ্যা কত?
ক) ১১০
খ) ১২০
গ) ১৩০
ঘ) ১৪০
উত্তর: খ) ১২০
৩. সূরা আল-মায়িদা কোন ধরনের সূরা?
ক) মাক্কী
খ) মাদানী
গ) মিশ্র
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: খ) মাদানী
৪. সূরা আল-মায়িদায় কোন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে?
ক) হযরত মুসা (আ.)
খ) হযরত ঈসা (আ.)
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
৫. সূরা আল-মায়িদায় কোন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে?
ক) হযরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের ঘটনা
খ) হযরত ঈসা (আ.)-এর আসমানী খাবারের ঘটনা
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
আরও পড়তে পারেন– সূরা আন নিসা সম্পর্কে ২০টি প্রশ্ন ও MCQ
৬. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের খাবারের কথা বলা হয়েছে?
ক) হালাল
খ) হারাম
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
৭. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের পানীয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে?
ক) মাদক
খ) দুধ
গ) পানি
ঘ) শরবত
উত্তর: ক) মাদক
৮. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের চুক্তির কথা বলা হয়েছে?
ক) আল্লাহর সাথে চুক্তি
খ) মানুষের সাথে চুক্তি
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
৯. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের বিচার-আচারের কথা বলা হয়েছে?
ক) ন্যায়বিচার
খ) সাক্ষ্য প্রদান
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
১০. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের পাপের কথা বলা হয়েছে?
ক) মিথ্যা বলা
খ) ওয়াদা ভঙ্গ করা
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
১১. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের পুণ্যের কথা বলা হয়েছে?
ক) ন্যায়বিচার
খ) সত্যবাদিতা
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
১২. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের দোয়ার কথা বলা হয়েছে?
ক) ক্ষমা প্রার্থনা
খ) সঠিক পথের জন্য দোয়া
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
১৩. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে?
ক) আল্লাহর আইন লঙ্ঘন
খ) পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
১৪. সূরা আল-মায়িদায় কোন সম্প্রদায়ের প্রতি সতর্কতা দেওয়া হয়েছে?
ক) ইহুদি
খ) খ্রিস্টান
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
১৫. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
ক) মিথ্যা বলার শাস্তি
খ) ওয়াদা ভঙ্গের শাস্তি
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
১৬. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে?
ক) জান্নাত
খ) দুনিয়ার সমৃদ্ধি
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: ক) জান্নাত
১৭. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে?
ক) ন্যায়বিচার
খ) সত্যবাদিতা
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
১৮. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের আইন-কানুন আলোচিত হয়েছে?
ক) খাদ্য ও পানীয়
খ) বিচার-আচার
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
১৯. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের ঘটনার উল্লেখ রয়েছে?
ক) হযরত ঈসা (আ.)-এর আসমানী খাবারের ঘটনা
খ) হযরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের ঘটনা
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
২০. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের পাপের কথা বলা হয়েছে?
ক) মিথ্যা বলা
খ) ওয়াদা ভঙ্গ করা
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
২১. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের পুণ্যের কথা বলা হয়েছে?
ক) ন্যায়বিচার
খ) সত্যবাদিতা
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
২২. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের দোয়ার কথা বলা হয়েছে?
ক) ক্ষমা প্রার্থনা
খ) সঠিক পথের জন্য দোয়া
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
২৩. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে?
ক) আল্লাহর আইন লঙ্ঘন
খ) পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
২৪. সূরা আল-মায়িদায় কোন সম্প্রদায়ের প্রতি সতর্কতা দেওয়া হয়েছে?
ক) ইহুদি
খ) খ্রিস্টান
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
২৫. সূরা আল-মায়িদায় কোন ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
ক) মিথ্যা বলার শাস্তি
খ) ওয়াদা ভঙ্গের শাস্তি
গ) উভয়ই
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) উভয়ই
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু
সূরা আল-মায়িদার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
সূরার নাম: সূরা আল-মায়িদা
অর্থ: খাদ্য বা টেবিল
আয়াত সংখ্যা: ১২০
নাযিলের স্থান: মাদানী
সূরার অবস্থান: কুরআনের ৫ম সূরা
নাযিলের ক্রম: ১১২তম (মাদানী পর্যায়ে)
সূরা আল-মায়িদা একটি মাদানী সূরা, যা ইসলামের বিধি-বিধান, আইন-কানুন, নৈতিকতা এবং সামাজিক নিয়ম-কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে। এটি কুরআনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা মুসলিমদের জন্য হালাল-হারাম, চুক্তি, ন্যায়বিচার, ওয়াদা পালন এবং আল্লাহর আইন মেনে চলার নির্দেশনা প্রদান করে।
শানেনুযূল (নাযিলের প্রেক্ষাপট)
সূরা আল-মায়িদা মদিনায় নাযিল হয়েছিল, যখন মুসলিম সম্প্রদায় একটি সুসংগঠিত সমাজ গঠন করছিল। এই সময়ে ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় আইন-কানুন এবং নৈতিক নির্দেশনা প্রদান করা প্রয়োজন ছিল। সূরাটি নাযিলের সময় মুসলিমরা ইহুদি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে মেলামেশা করছিল, তাই তাদের ভ্রান্ত ধারণা ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সতর্কতা এবং সঠিক পথের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও, এই সূরায় হযরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারীদের জন্য আসমানী খাবারের ঘটনা এবং হযরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক
১. হালাল ও হারামের বিধান: সূরাটিতে হালাল ও হারাম খাদ্য, পানীয় এবং অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
২. চুক্তি ও ওয়াদা পালন: আল্লাহর সাথে এবং মানুষের মধ্যে করা চুক্তি ও ওয়াদা পালনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
৩. ন্যায়বিচার: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সাক্ষ্য প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৪. পাপ ও পুণ্যের আলোচনা: মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আল্লাহর আইন লঙ্ঘনের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে।
৫. ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রতি সতর্কতা: তাদের ভ্রান্ত ধারণা ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে।
৬. ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ: হযরত ঈসা (আ.)-এর আসমানী খাবারের ঘটনা এবং হযরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
সূরাটির শিক্ষা
১. আল্লাহর আইন মেনে চলা: সূরা আল-মায়িদা মুসলিমদেরকে আল্লাহর আইন মেনে চলার এবং তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করার শিক্ষা দেয়।
২. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সত্যবাদিতার মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
৩. চুক্তি ও ওয়াদা পালন: চুক্তি ও ওয়াদা পালনের মাধ্যমে বিশ্বস্ততা ও আস্থা গড়ে তোলার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
৪. হালাল ও হারামের পার্থক্য: হালাল খাদ্য গ্রহণ এবং হারাম থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতা অর্জনের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
৫. পাপ থেকে দূরে থাকা: মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আল্লাহর আইন লঙ্ঘনের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৬. ঐক্য ও সম্প্রীতি: মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখার এবং অন্যান্য ধর্মের লোকদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
সূরাটির মূল বিষয়বস্তু
১. হালাল ও হারামের বিধান: সূরাটিতে হালাল ও হারাম খাদ্য, পানীয় এবং অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
২. চুক্তি ও ওয়াদা পালন: আল্লাহর সাথে এবং মানুষের মধ্যে করা চুক্তি ও ওয়াদা পালনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
৩. ন্যায়বিচার: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সাক্ষ্য প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৪. পাপ ও পুণ্যের আলোচনা: মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আল্লাহর আইন লঙ্ঘনের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে।
৫. ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রতি সতর্কতা: তাদের ভ্রান্ত ধারণা ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে।
৬. ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ: হযরত ঈসা (আ.)-এর আসমানী খাবারের ঘটনা এবং হযরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
৭. আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা: সূরাটিতে আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর আইন মেনে চলার গুরুত্ব বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।
৮. দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা: সূরাটিতে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা অর্জনের জন্য আল্লাহর আইন মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সূরা আল-মায়িদা মুসলিমদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান প্রদান করে, যা ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মেনে চলার মাধ্যমে সফলতা অর্জনের পথ দেখায়।
সূরা আল-মায়িদা কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যাতে বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে ইসলামী জীবনব্যবস্থা, নৈতিকতা, আইন-কানুন এবং আল্লাহর নির্দেশনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিচে সূরা আল-মায়িদার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
১. সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৯০
আয়াত:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ। সুতরাং তোমরা এগুলো থেকে দূরে থাকো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মদ, জুয়া, প্রতিমা পূজা এবং ভাগ্য নির্ধারণের মতো অপবিত্র ও হারাম কাজ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব কাজ শয়তানের প্ররোচনায় হয়ে থাকে এবং এগুলো মানব জীবনে ধ্বংস ও অশান্তি ডেকে আনে। আল্লাহ মুমিনদেরকে এসব থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে সফলতা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন।
২. সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৫১
আয়াত:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সঠিক পথ দেখান না।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মুমিনদেরকে ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ তারা ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুতা পোষণ করে। তবে এখানে সাধারণ মানবিক সম্পর্ক বা ন্যায়সঙ্গত আচরণ নিষিদ্ধ নয়, বরং শত্রুতা ও ষড়যন্ত্রমূলক সম্পর্ক থেকে সতর্ক করা হয়েছে।
৩. সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩২
আয়াত:
مِنْ أَجْلِ ذَٰلِكَ كَتَبْنَا عَلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا ۚ وَلَقَدْ جَاءَتْهُمْ رُسُلُنَا بِالْبَيِّنَاتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ بَعْدَ ذَٰلِكَ فِي الْأَرْضِ لَمُسْرِفُونَ
অর্থ:
“এই কারণে বনি ইসরাইলের উপর আমরা এই বিধান জারি করেছি যে, যে ব্যক্তি কোনো প্রাণকে হত্যা করবে অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ ছাড়া, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি কোনো প্রাণকে রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল। নিশ্চয়ই তাদের কাছে আমাদের রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু এরপরও তাদের অনেকেই পৃথিবীতে সীমা লঙ্ঘনকারী।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মানব জীবনের মর্যাদা ও মূল্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে, একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবতার কল্যাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি ইসলামের শান্তি ও মানবতার বার্তা প্রকাশ করে।
৪. সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ১৫
আয়াত:
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِمَّا كُنْتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ ۚ قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ
অর্থ:
“হে আহলে কিতাবগণ! নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আমাদের রাসূল এসেছেন, যিনি তোমাদের কাছে সেই সব বিষয় স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যা তোমরা কিতাব থেকে গোপন করতে। আর তিনি অনেক কিছু ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নূর (আলো) এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান) সম্প্রদায়কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাদের কাছে সত্য প্রকাশ করেছেন এবং তাদের গোপন করা অনেক বিষয় উন্মোচিত করেছেন। এতে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
৫. সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৫৪
আয়াত:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, আল্লাহ তার পরিবর্তে এমন এক সম্প্রদায় নিয়ে আসবেন, যাদের তিনি ভালোবাসেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসে। তারা মুমিনদের প্রতি বিনম্র এবং কাফিরদের প্রতি কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং কোনো নিন্দাকারীর নিন্দার পরোয়া করে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ মুমিনদেরকে সতর্ক করেছেন যে, যারা ঈমান থেকে বিচ্যুত হবে, আল্লাহ তাদের স্থলে নতুন এক দল তৈরি করবেন, যারা আল্লাহর পথে অটল থাকবে এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে। এটি মুমিনদের জন্য একটি অনুপ্রেরণামূলক বার্তা।
৬. সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩
আয়াত:
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
অর্থ:
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করেছি এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করেছি।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতটি ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করে। এটি হজ্জের সময় নাযিল হয়েছিল এবং এতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, ইসলাম এখন একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা এবং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে শেষ ও চূড়ান্ত দ্বীন।
৭. সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩৫
আয়াত:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার উপায় অনুসন্ধান করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ মুমিনদেরকে তাকওয়া অবলম্বন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা এবং তাঁর পথে সংগ্রাম করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি মুমিনদের জন্য সফলতার পথনির্দেশক।
৮. সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ১২০
আয়াত:
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا فِيهِنَّ ۚ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থ:
“আসমান ও জমিন এবং এতে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মুমিনদেরকে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখার শিক্ষা দেয়।
৯. সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৫
আয়াত:
الْيَوْمَ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ ۖ وَطَعَامُ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَهُمْ ۖ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِي أَخْدَانٍ ۗ وَمَنْ يَكْفُرْ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
অর্থ:
“আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হয়েছে। আর আহলে কিতাবদের খাবার তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাবার তাদের জন্য হালাল। আর মুমিন নারীদের মধ্যে সতী-সাধ্বী নারী এবং তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের মধ্যে সতী-সাধ্বী নারী (তাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হালাল), যখন তোমরা তাদেরকে তাদের মাহর প্রদান করো, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে, ব্যভিচার না করে এবং গোপনে বন্ধু না রেখে। আর যে ব্যক্তি ঈমানকে প্রত্যাখ্যান করবে, তার সব আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে হালাল খাদ্য এবং আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান) সম্প্রদায়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কের বিধান দেওয়া হয়েছে। এতে ইসলামের উদারতা ও মানবিক দিক ফুটে উঠেছে।