সূরা ফাতির : সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু, ফযিলত ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত সহ সূরা ফাতির সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন উত্তর দেয়া হলো । আশাকরি সূরাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সূরা ফাতির (فاطر)
পরিচিতি:
সূরা ফাতির হল পবিত্র কুরআনের ৩৫তম সূরা। এটি মক্কী সূরা অর্থাৎ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এতে ৪৫টি আয়াত, ৫টি রুকু এবং এটি ২২তম পারায় অবস্থিত। সূরাটির নাম “ফাতির” (স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা) এসেছে প্রথম আয়াতের শব্দ থেকে, যা আল্লাহর সৃষ্টিশক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে।
মূল বিষয়বস্তু:
১. তাওহিদ ও আল্লাহর সৃষ্টিনৈপুণ্য:
- সূরার শুরুতে আল্লাহকে “ফাতিরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ” (আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা) হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে (আয়াত ১)।
- প্রকৃতি, মানুষ, প্রাণী ও মহাবিশ্বের নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর মহিমা ও জ্ঞান প্রকাশ পেয়েছে (যেমন: আয়াত ২৭-২৮)।
২. শয়তানের প্রতারণা ও সতর্কতা:
- শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করতে প্ররোচিত করে (আয়াত ৫-৬)।
- বিশ্বাসীদেরকে শয়তানের ধোঁকা থেকে সতর্ক করা হয়েছে।
৩. আখিরাত ও প্রতিদান:
- মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এবং ভালো-মন্দের হিসাব-নিকাশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে (আয়াত ৭-৯)।
- ঈমানদারদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি এবং কাফিরদের জন্য শাস্তির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে (আয়াত ৩২-৩৫)।
৪. জ্ঞান ও হিকমতের গুরুত্ব:
- আল্লাহর নিদর্শনগুলো বুঝতে জ্ঞানী ব্যক্তিরাই উপকৃত হয় (আয়াত ২৮)।
- নবী-রাসূলদের মাধ্যমে মানুষকে সঠিক পথ দেখানো হয়েছে (আয়াত ২৪-২৫)।
৫. দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব:
- দুনিয়ার সম্পদ ও শক্তি অহংকারের কারণ নয়, কারণ সবই আল্লাহর দান (আয়াত ১৫-১৭)।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত:
- আয়াত ১:
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা…।”
- আয়াত ১৫:
“হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী, আর আল্লাহই হলেন অভাবমুক্ত, সর্বপ্রশংসিত।”
- আয়াত ২৮:
“বস্তুত আল্লাহকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই ভয় করে।”
শিক্ষা ও তাৎপর্য:
- সূরা ফাতির আল্লাহর একত্ব, সৃষ্টির মহিমা এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসকে দৃঢ় করে।
- এটি মানুষকে অহংকার ত্যাগ করে আল্লাহর অনুগ্রহের শোকর আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করে।
- বিজ্ঞান ও প্রকৃতির নিদর্শনগুলো আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে বিজ্ঞান ও ধর্মের সমন্বয় দেখায়।
সূরা ফাতির মুমিনদের জন্য একটি গভীর চিন্তার উপাদান বহন করে, যা বিশ্বাস ও কর্ম两方面ই শক্তিশালী করে।
আল কুরআনের ৩৫তম সূরা ফাতির (فاطر) সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ
সূরা ফাতির (فاطر) সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
সাধারণ তথ্য:
- সূরা ফাতির কত নম্বর সূরা?
- উত্তর: ৩৫তম সূরা।
- সূরা ফাতির কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে?
- উত্তর: মক্কায় (মক্কী সূরা)।
- সূরাটির আয়াত সংখ্যা কত?
- উত্তর: ৪৫টি আয়াত।
- সূরা ফাতির কোন পারায় অবস্থিত?
- উত্তর: ২২তম পারায়।
- “ফাতির” শব্দের অর্থ কী?
- উত্তর: স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা।
বিষয়বস্তু ও শিক্ষা:
- সূরা ফাতিরের প্রথম আয়াতে আল্লাহকে কী বলা হয়েছে?
- উত্তর: “ফাতিরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ” (আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা)।
- সূরায় কোন পাপীর ধোঁকার কথা বলা হয়েছে?
- উত্তর: শয়তান (আয়াত ৫-৬)।
- আল্লাহর নিদর্শন বুঝতে কারা সক্ষম?
- উত্তর: জ্ঞানীরা (আয়াত ২৮)।
- সূরায় দুনিয়ার জীবনকে কী বলা হয়েছে?
- উত্তর: ক্ষণস্থায়ী ও প্রতারণাময় (আয়াত ৫)।
- আখিরাতে কাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও পুরস্কার?
- উত্তর: মুমিন ও নেককার বান্দাদের (আয়াত ৩২-৩৫)।
- সূরায় আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকারকারীদের কী বলা হয়েছে?
- উত্তর: তারা শয়তানের ধোঁকায় পড়েছে (আয়াত ৬)।
- কোন আয়াতে আল্লাহকে “আল-গানি” (অভাবমুক্ত) বলা হয়েছে?
- উত্তর: আয়াত ১৫।
- সূরায় নবী-রাসূলদের প্রেরণের উদ্দেশ্য কী?
- উত্তর: মানুষকে সতর্ক করা ও সুসংবাদ দেওয়া (আয়াত ২৪-২৫)।
- সূরায় প্রকৃতির কোন নিদর্শনগুলোর কথা বলা হয়েছে?
- উত্তর: বৃষ্টি, পাহাড়, নদী, বিভিন্ন ফল ও রং (আয়াত ২৭-২৮)।
- কোন আয়াতে বলা হয়েছে যে মানুষ আল্লাহর মুখাপেক্ষী?
- উত্তর: আয়াত ১৫।
- সূরায় ঈমানদারদের কীসের মাধ্যমে তুলনা করা হয়েছে?
- উত্তর: উত্তম কথার মতো, যা যেমন একটি সুস্থ গাছের মতো (আয়াত ১০-১১)।
- সূরায় আল্লাহর শাস্তি থেকে কারা নিরাপদ নয়?
- উত্তর: অহংকারী ও পাপীরা (আয়াত ৪৩)।
- সূরায় আল্লাহর কিসের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে?
- উত্তর: তাঁর ক্ষমতা, জ্ঞান ও ন্যায়বিচার।
- সূরায় কোন গুণের লোকেরা আল্লাহকে ভয় করে?
- উত্তর: জ্ঞানীরা (আয়াত ২৮)।
- সূরার শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
- উত্তর: আল্লাহর অনুগ্রহই সবচেয়ে বড় সম্পদ (আয়াত ৪৫)।
সূরা ফাতির সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন)
- সূরা ফাতির কোন ধরনের সূরা?
- ক) মাদানী
- খ) মক্কী
- গ) হিজরী
- ঘ) মিশ্র
- “ফাতির” শব্দের অর্থ কী?
- ক) ক্ষমাশীল
- খ) সৃষ্টিকর্তা
- গ) রহমতকারী
- ঘ) শাস্তিদাতা
- সূরাটি কততম পারায় আছে?
- ক) ২০তম
- খ) ২১তম
- গ) ২২তম
- ঘ) ২৩তম
- সূরায় আল্লাহকে কী বলা হয়েছে?
- ক) রহমান
- খ) ফাতিরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ
- গ) মালিকুল মাউত
- ঘ) আল-কাদির
- সূরায় কাদেরকে আল্লাহর নিদর্শন বুঝতে সক্ষম বলা হয়েছে?
- ক) ধনীরা
- খ) জ্ঞানীরা
- গ) শাসকরা
- ঘ) ব্যবসায়ীরা
- সূরায় শয়তানকে কীসের প্রতীক বলা হয়েছে?
- ক) সত্যের
- খ) মিথ্যার
- গ) সাহায্যের
- ঘ) আশীর্বাদের
- সূরায় দুনিয়ার জীবনকে কী বলা হয়েছে?
- ক) চিরস্থায়ী
- খ) ক্ষণস্থায়ী
- গ) সম্পূর্ণ সুখময়
- ঘ) শাস্তিমূলক
- সূরায় আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকারকারীদের কী বলা হয়েছে?
- ক) তারা বিজয়ী
- খ) তারা শয়তানের ধোঁকায় পড়েছে
- গ) তারা জ্ঞানী
- ঘ) তারা ধার্মিক
- আয়াত ১৫ অনুযায়ী মানুষ কিসের মুখাপেক্ষী?
- ক) সম্পদের
- খ) আল্লাহর
- গ) শাসকের
- ঘ) প্রাকৃতিক সম্পদের
- সূরায় নবী-রাসূলদের প্রেরণের উদ্দেশ্য কী?
- ক) শাসন করা
- খ) সতর্ক করা ও সুসংবাদ দেওয়া
- গ) সম্পদ বণ্টন করা
- ঘ) যুদ্ধ করা
- সূরায় প্রকৃতির কোন নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে?
- ক) শহর
- খ) বৃষ্টি ও পাহাড়
- গ) যানবাহন
- ঘ) প্রযুক্তি
- সূরায় আল্লাহর শাস্তি থেকে কারা নিরাপদ নয়?
- ক) দানশীলরা
- খ) অহংকারীরা
- গ) নামাজীরা
- ঘ) রোজাদাররা
- সূরায় আল্লাহর কোন গুণের কথা বলা হয়েছে?
- ক) শুধু ক্ষমা
- খ) শুধু শাস্তি
- গ) ক্ষমা ও শাস্তি
- ঘ) শুধু দয়া
- সূরায় ঈমানদারদের কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
- ক) পাথরের সাথে
- খ) উত্তম গাছের সাথে
- গ) আগুনের সাথে
- ঘ) বাতাসের সাথে
- সূরায় কার কথা বলা হয়েছে যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে?
- ক) ফেরেশতা
- খ) শয়তান
- গ) নবী
- ঘ) জিন
- সূরায় আল্লাহর নিদর্শন বুঝতে পারার জন্য কী প্রয়োজন?
- ক) সম্পদ
- খ) ক্ষমতা
- গ) জ্ঞান
- ঘ) বংশগত মর্যাদা
- সূরায় আল্লাহর অনুগ্রহকে কী বলা হয়েছে?
- ক) ক্ষুদ্র
- খ) অপরিমেয়
- গ) অপ্রয়োজনীয়
- ঘ) শাস্তিমূলক
- সূরায় আল্লাহকে “আল-গানি” (অভাবমুক্ত) বলা হয়েছে কোন আয়াতে?
- ক) আয়াত ১
- খ) আয়াত ১৫
- গ) আয়াত ২৮
- ঘ) আয়াত ৪৫
- সূরায় আখিরাতে কাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার?
- ক) কাফিরদের
- খ) মুমিনদের
- গ) মুনাফিকদের
- ঘ) শয়তানদের
- সূরার শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
- ক) শাস্তির কথা
- খ) আল্লাহর অনুগ্রহই সবচেয়ে বড় সম্পদ
- গ) দুনিয়ার জীবনের কথা
- ঘ) যুদ্ধের নির্দেশ
- সূরায় আল্লাহর নিদর্শনগুলো কিসের প্রমাণ?
- ক) মানুষের শক্তির
- খ) আল্লাহর অস্তিত্ব ও মহিমার
- গ) প্রকৃতির স্বয়ংক্রিয়তার
- ঘ) বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার
- সূরায় আল্লাহর ক্ষমতাকে কীসের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে?
- ক) যুদ্ধের মাধ্যমে
- খ) সৃষ্টির মাধ্যমে
- গ) ধন-সম্পদের মাধ্যমে
- ঘ) রাজ্যের মাধ্যমে
- সূরায় আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকারকারীরা কী হারায়?
- ক) শুধু সম্পদ
- খ) শুধু সুযোগ
- গ) আখিরাতের পুরস্কার
- ঘ) শুধু সম্মান
- সূরায় প্রকৃতির বৈচিত্র্য কিসের ইঙ্গিত বহন করে?
- ক) মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের
- খ) আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্যের
- গ) বিজ্ঞানের উন্নতির
- ঘ) প্রাকৃতিক দুর্যোগের
- সূরায় আল্লাহর হুকুম কীসের উপর প্রতিষ্ঠিত?
- ক) শুধু শাস্তির
- খ) শুধু পুরস্কারের
- গ) ন্যায়বিচার ও হিকমতের উপর
- ঘ) মানুষের ইচ্ছার উপর
সঠিক উত্তর চিহ্নিত
এই প্রশ্নোত্তরগুলো সূরা ফাতিরের মূল বিষয়বস্তু, শিক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ আয়াত সম্পর্কে ধারণা দেবে।
আল কুরআনের ৩৫তম সূরা ফাতির (فاطر) আয়াত ১০, ৪৩, ২২ , ২৯, ২৬ , ২৬, ৫, ১১ , ৫৩ আয়াত অর্থসহ ব্যাখ্যা
সূরা ফাতিরের নির্বাচিত আয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা
১. আয়াত ১০ (সূরা ফাতির ৩৫:১০)
আরবি:
مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلْعِزَّةَ فَلِلَّهِ ٱلْعِزَّةُ جَمِيعًا ۚ إِلَيْهِ يَصْعَدُ ٱلْكَلِمُ ٱلطَّيِّبُ وَٱلْعَمَلُ ٱلصَّـٰلِحُ يَرْفَعُهُۥ ۚ وَٱلَّذِينَ يَمْكُرُونَ ٱلسَّيِّـَٔاتِ لَهُمْ عَذَابٌۭ شَدِيدٌۭ ۖ وَمَكْرُ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُوَ يَبُورُ
অনুবাদ:
“যে সম্মান চায়, সমস্ত সম্মান তো আল্লাহরই জন্য। তাঁর কাছেই উত্তম বাক্য উঠে যায় এবং নেক আমল তা উন্নীত করে। আর যারা মন্দ চক্রান্ত করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি এবং তাদের চক্রান্তই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
ব্যাখ্যা:
- আসল সম্মান শুধু আল্লাহর জন্য: মানুষ যদি ইজ্জত চায়, তা আল্লাহর কাছে তাকওয়া ও ইবাদতের মাধ্যমেই পাওয়া যায়।
- উত্তম কথা ও নেক আমল: সত্য কথা ও সৎ কাজ আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় এবং ব্যক্তির মর্যাদা বাড়ায়।
- মন্দ চক্রান্তের পরিণতি: যারা অন্যদের ক্ষতির ষড়যন্ত্র করে, তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় এবং তারা আখিরাতে কঠিন শাস্তি পাবে।
২. আয়াত ৪৩ (সূরা ফাতির ٣٥:٤٣)
আরবি:
ٱسْتِكْبَارًۭا فِى ٱلْأَرْضِ وَمَكْرَ ٱلسَّيِّئِ ۖ وَلَا يَحِيقُ ٱلْمَكْرُ ٱلسَّيِّئُ إِلَّا بِأَهْلِهِۦ ۚ فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا سُنَّتَ ٱلْأَوَّلِينَ ۚ فَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ ٱللَّهِ تَبْدِيلًۭا ۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ ٱللَّهِ تَحْوِيلًۭا
অনুবাদ:
“পৃথিবীতে অহংকার ও মন্দ চক্রান্তের কারণে। কিন্তু মন্দ চক্রান্ত তার সৃষ্টিকর্তাকেই ঘিরে ফেলে। অতএব, তারা কি পূর্ববর্তীদের নিয়ম ছাড়া অন্য কিছু প্রত্যাশা করে? তুমি আল্লাহর নিয়মে কোনো পরিবর্তন পাবে না এবং আল্লাহর নিয়মে কোনো বিপর্যয়ও পাবে না।”
ব্যাখ্যা:
- অহংকার ও ষড়যন্ত্রের পরিণতি: ফেরাউন, নমরুদসহ ইতিহাসের অহংকারী শক্তিগুলো ধ্বংস হয়েছে। তাদের মতো যারা অহংকার করে, তাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে।
- আল্লাহর সুন্নত অপরিবর্তনীয়: আল্লাহর আইন অনুযায়ী অত্যাচারীদের ধ্বংস অবধারিত। এতে কোনো পরিবর্তন হয় না।
৩. আয়াত ২২ (সূরা ফাতির ٣٥:٢٢)
আরবি:
وَمَا يَسْتَوِى ٱلْأَحْيَآءُ وَلَا ٱلْأَمْوَٰتُ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُسْمِعُ مَن يَشَآءُ ۖ وَمَآ أَنتَ بِمُسْمِعٍۢ مَّن فِى ٱلْقُبُورِ
অনুবাদ:
“জীবিত ও মৃত সমান নয়। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে চান শোনান, আর তুমি কবরবাসীদের শোনাতে পারবে না।”
ব্যাখ্যা:
- ঈমানদার ও কাফিরের পার্থক্য: ঈমানদাররা ‘আধ্যাত্মিকভাবে জীবিত’, আর কাফিররা ‘মৃতসদৃশ’।
- হিদায়াত আল্লাহর হাতে: নবী (ﷺ) শুধু সতর্ককারী; হিদায়াত দেওয়ার মালিক আল্লাহ।
৪. আয়াত ২৯ (সূরা ফাতির ٣٥:٢٩)
আরবি:
إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَـٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُوا۟ مِمَّا رَزَقْنَـٰهُمْ سِرًّۭا وَعَلَانِيَةًۭ يَرْجُونَ تِجَـٰرَةًۭ لَّن تَبُورَ
অনুবাদ:
“নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা করে যা কখনো ক্ষয় হবে না।”
ব্যাখ্যা:
- সফলতার ৩টি শর্ত:
১. কুরআন তিলাওয়াত,
২. সালাত প্রতিষ্ঠা,
৩. গোপনে-প্রকাশ্যে সদকা। - লাভজনক ‘ব্যবসা’: এগুলো আখিরাতে অফুরন্ত পুরস্কার এনে দেবে।
৫. আয়াত ২৬ (সূরা ফাতির ٣٥:٢٦)
আরবি:
ثُمَّ أَخَذْتُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ۖ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ
অনুবাদ:
“অতঃপর আমি কাফিরদের পাকড়াও করেছি। তখন কত ভয়ঙ্কর ছিল আমার শাস্তি!”
ব্যাখ্যা:
- ইতিহাসের শিক্ষা: আদ, সামুদ, ফেরাউন প্রভৃতি জাতি আল্লাহর শাস্তিতে ধ্বংস হয়েছে। এটি বর্তমান কাফিরদের জন্য সতর্কবার্তা।
৬. আয়াত ৫ (সূরা ফাতির ٣٥:٥)
আরবি:
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّ وَعْدَ ٱللَّهِ حَقٌّۭ ۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا ۖ وَلَا يَغُرَّنَّكُم بِٱللَّهِ ٱلْغَرُورُ
অনুবাদ:
“হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে এবং ধোঁকাবাজ (শয়তান) যেন আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে।”
ব্যাখ্যা:
- দুনিয়ার মোহ: সম্পদ, ক্ষমতা ইত্যাদি যেন আখিরাত ভুলিয়ে না দেয়।
- শয়তানের ধোঁকা: সে আল্লাহর রহমত নিয়ে গাফিল করে বা শাস্তিকে অবিশ্বাস করায়।
৭. আয়াত ১১ (সূরা ফাতির ٣٥:١١)
আরবি:
وَٱللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍۢ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍۢ ثُمَّ جَعَلَكُمْ أَزْوَٰجًۭا ۚ وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنثَىٰ وَلَا تَضَعُ إِلَّا بِعِلْمِهِۦ ۚ وَمَا يُعَمَّرُ مِن مُّعَمَّرٍۢ وَلَا يُنقَصُ مِنْ عُمُرِهِۦٓ إِلَّا فِى كِتَـٰبٍ ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٌۭ
অনুবাদ:
“আল্লাহই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর বীর্য থেকে, তারপর জোড়া জোড়া করেছেন। কোনো নারী গর্ভধারণ করে না বা প্রসব করে না except তাঁর জ্ঞানে। কোনো দীর্ঘজীবীকে দীর্ঘ জীবন দেওয়া হয় না এবং কোনো عمر কমিয়ে দেওয়া হয় না except তা লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর জন্য সহজ।”
ব্যাখ্যা:
- মানব সৃষ্টির ধাপ: মাটি → বীর্য → জোড়া সৃষ্টি (নর-নারী)।
- আল্লাহর পূর্ণ জ্ঞান: জন্ম, মৃত্যু, জীবনকাল—সবই তাঁর ইলম ও কুদরতের অধীন।
৮. আয়াত ৫৩ (সূরা ফাতির ٣٥:٥٣)
আরবি:
وَأَوْحَىٰ رَبُّكَ إِلَى ٱلنَّحْلِ أَنِ ٱتَّخِذِى مِنَ ٱلْجِبَالِ بُيُوتًۭا وَمِنَ ٱلشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ
অনুবাদ:
“আর তোমার রব মৌমাছিকে ওহী করেছেন: ‘পাহাড়ে, গাছে এবং মানুষের তৈরি মাচায় বাসা বানাও।'”
ব্যাখ্যা:
- প্রকৃতির মধ্যে আল্লাহর হিকমত: মৌমাছির কর্মকাণ্ডে আল্লাহর নির্দেশনা কাজ করে, যা বিজ্ঞানীরা পরে আবিষ্কার করে।
- শিক্ষা: ক্ষুদ্র প্রাণীতেও আল্লাহর জ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিদ্যমান।
সারসংক্ষেপ:
এই আয়াতগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো:
১. আল্লাহর একত্ব ও সৃষ্টি নিদর্শন,
২. নেক আমল ও সদকার গুরুত্ব,
৩. দুনিয়ার মোহ ও শয়তানের ধোঁকা থেকে সতর্কতা,
৪. ইতিহাসের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ।
এসব আয়াত মুমিনদের জন্য বিশ্বাস, কর্ম ও চিন্তার দিকনির্দেশনা দেয়।