সূরা তাহরীম এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা আত তাহরীম সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।
সূরা আত তাহরীম
সূরা তাহরীম সম্পর্কে ২০টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
১. সূরা আত-তাহরীম কত নং সূরা?
উত্তর: ৬৬ নং সূরা।
২. সূরা আত-তাহরীমের আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তর: ১২টি।
৩. সূরা আত-তাহরীম কোন পারায় অবস্থিত?
উত্তর: ২৮তম পারায়।
৪. সূরা আত-তাহরীমের বিষয়বস্তু কী?
উত্তর: পারিবারিক জীবন, আল্লাহর আনুগত্য ও নবীর আদর্শ সম্পর্কে নির্দেশনা।
৫. সূরা আত-তাহরীমে কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর দুই স্ত্রী ও কিছু গৃহব্যবস্থাপনার ঘটনা।
৬. সূরা আত-তাহরীমে কোন নবীর স্ত্রীর কথা উল্লেখ আছে?
উত্তর: নূহ (আ.) ও লূত (আ.)-এর স্ত্রীদের কথা উল্লেখ আছে।
৭. সূরা আত-তাহরীমে কোন কাফির নারীর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়ার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
৮. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ তাআলা নবীজিকে কোন বিষয়ে সতর্ক করেছেন?
উত্তর: নিজের জন্য হারাম করা বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
৯. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহর নিকট তাওবার শর্ত কী?
উত্তর: আন্তরিক অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করা।
১০. সূরা আত-তাহরীমে ঈমানদার নারীদের কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর আনুগত্য করা, সত্যবাদী হওয়া ও ধৈর্য ধারণ করা।
১১. সূরা আত-তাহরীমে নবীজির কোন স্ত্রীর ঘটনা বলা হয়েছে?
উত্তর: হাফসা (রা.) ও আয়িশা (রা.)-এর ঘটনা বলা হয়েছে।
১২. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ কাদেরকে জান্নাতের উদাহরণ দিয়েছেন?
উত্তর: মরিয়ম (আ.) ও ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়াকে।
১৩. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ কাদেরকে জাহান্নামের উদাহরণ দিয়েছেন?
উত্তর: নূহ (আ.) ও লূত (আ.)-এর স্ত্রীদের।
১৪. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ কীভাবে মুমিনদের সতর্ক করেছেন?
উত্তর: কুফরির পথে না যেতে সতর্ক করেছেন।
১৫. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় কী?
উত্তর: তাওবা ও ইস্তিগফার করা।
১৬. সূরা আত-তাহরীমে নারীদের জন্য কী বার্তা রয়েছে?
উত্তর: সৎ ও আল্লাহভীরু হওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
১৭. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ কাদেরকে “মুসলিম” বলে উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: নবী মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর অনুসারীদের।
১৮. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ কাদেরকে “কাফির” বলে উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: নূহ ও লূত (আ.)-এর অবিশ্বাসী স্ত্রীদের।
১৯. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ কীভাবে মুমিনদের সাহায্য করার কথা বলেছেন?
উত্তর: ফেরেশতা ও বিশ্বাসী মানুষদের মাধ্যমে সাহায্য করবেন।
২০. সূরা আত-তাহরীমের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহ মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা ও মহান প্রতিদান দেবেন।
সূরা আত-তাহরীম সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)
১. সূরা আত-তাহরীম মোট আয়াত সংখ্যা কত?
ক) ১০
খ) ১২
গ) ১৪
ঘ) ১৬
২. সূরা আত-তাহরীমে কার স্ত্রীর কথা উল্লেখ নেই?
ক) নূহ (আ.)
খ) লূত (আ.)
গ) আইয়ুব (আ.)
ঘ) ফিরাউন
৩. সূরা আত-তাহরীমে কোন নারীর উদাহরণ জান্নাতের জন্য দেওয়া হয়েছে?
ক) খাদীজা (রা.)
খ) আসিয়া (রা.)
গ) হাওয়া (আ.)
ঘ) সারাহ (আ.)
৪. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নবীজিকে কোন বিষয়ে সতর্ক করেছেন?
ক) নামাজে অবহেলা
খ) নিজের জন্য হারাম করা বিষয়
গ) সম্পদ বণ্টন
ঘ) যুদ্ধ পরিচালনা
৫. সূরা আত-তাহরীমে কার কথা বলা হয়েছে যারা স্বামীর বিরুদ্ধে গোপন পরামর্শ করেছিল?
ক) নবীজির স্ত্রীগণ
খ) সাহাবীগণ
গ) ইহুদিরা
ঘ) মুনাফিকরা
৬. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ কাদেরকে “মুসলিম” বলে উল্লেখ করেছেন?
ক) নবী ও মুমিনগণ
খ) শুধু নবীগণ
গ) শুধু পুরুষগণ
ঘ) শুধু নারীরা
৭. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ কার প্রতি অসন্তুষ্টির কথা বলেছেন?
ক) আবু লাহাব
খ) নবীজির কিছু স্ত্রী
গ) কাফির নেতারা
ঘ) মুনাফিকরা
৮. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ তাওবা কবুলের শর্ত কী?
ক) কেবল নামাজ পড়া
খ) আন্তরিক অনুতপ্ত হওয়া
গ) শুধু রোজা রাখা
ঘ) দান-খয়রাত করা
৯. সূরা আত-তাহরীমে কার উদাহরণে জাহান্নামের কথা বলা হয়েছে?
ক) নূহ (আ.)-এর স্ত্রী
খ) মুসা (আ.)-এর বোন
গ) ইবরাহীম (আ.)-এর স্ত্রী
ঘ) ঈসা (আ.)-এর মা
১০. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ মুমিন নারীদের কী করতে বলেছেন?
ক) সত্যবাদী ও ধৈর্যশীল হতে
খ) শুধু ঘরে থাকতে
গ) সম্পদ উপার্জন করতে
ঘ) সবাইকে শিক্ষা দিতে
১১. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নবীজির স্ত্রীদের কীসের জন্য সতর্ক করেছেন?
ক) গৃহকলহ
খ) অর্থ অপচয়
গ) নামাজ তরক
ঘ) হিজরত না করা
১২. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ কার প্রতি সন্তুষ্টির কথা বলেছেন?
ক) নবীজির সাহাবীগণ
খ) নবীজির স্ত্রীগণ
গ) শত্রুপক্ষ
ঘ) ফেরেশতাগণ
১৩. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ কাদেরকে ক্ষমা ও মহান প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন?
ক) মুমিন নারী-পুরুষ
খ) শুধু ধনীদের
গ) শুধু আলিমদের
ঘ) শুধু যোদ্ধাদের
১৪. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নবীজির স্ত্রীদের কীসের দায়িত্ব দিয়েছেন?
ক) আল্লাহর বিধান মেনে চলার
খ) যুদ্ধে অংশ নেওয়ার
গ) অর্থনীতি চালানোর
ঘ) সবাইকে নেতৃত্ব দেওয়ার
১৫. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নারীদের জন্য কীসের নিশ্চয়তা দিয়েছেন?
ক) পার্থিব সম্পদ
খ) জান্নাত
গ) রাজত্ব
ঘ) দীর্ঘ জীবন
১৬. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নবীজির স্ত্রীদের কীসের জন্য ভয় দেখিয়েছেন?
ক) দুনিয়ার শাস্তি
খ) তালাক
গ) আল্লাহর শাস্তি
ঘ) সমাজচ্যুতি
১৭. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নবীজির স্ত্রীদের কীসের আদেশ দিয়েছেন?
ক) আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য
খ) শুধু রাসুলের আনুগত্য
গ) শুধু আল্লাহর ইবাদত
ঘ) সম্পদ সঞ্চয়
১৮. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নবীজির স্ত্রীদের কীসের মাধ্যমে সতর্ক করেছেন?
ক) স্বপ্নের মাধ্যমে
খ) ওহীর মাধ্যমে
গ) ফেরেশতার মাধ্যমে
ঘ) মানুষের মাধ্যমে
১৯. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নবীজির স্ত্রীদের কীসের মর্যাদা দিয়েছেন?
ক) সাধারণ নারীর মতো
খ) অন্য নারীদের চেয়ে বেশি দায়িত্ব
গ) শুধু গৃহিণীর দায়িত্ব
ঘ) রাজনৈতিক নেতৃত্ব
২০. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নবীজির স্ত্রীদের কীসের জন্য সতর্ক করেছেন?
ক) অহংকারের জন্য
খ) গোপন পরামর্শের জন্য
গ) অর্থের অপব্যবহারের জন্য
ঘ) নামাজ বর্জনের জন্য
২১. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নারীদের কীসের জন্য প্রশংসা করেছেন?
ক) সৌন্দর্যের জন্য
খ) ঈমান ও সৎকর্মের জন্য
গ) সম্পদের জন্য
ঘ) বংশমর্যাদার জন্য
২২. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নবীজির স্ত্রীদের কীসের জন্য স্মরণ করিয়েছেন?
ক) দুনিয়ার মোহ
খ) আখিরাতের শাস্তি
গ) সমাজের সমালোচনা
ঘ) স্বামীর অধিকার
২৩. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নবীজির স্ত্রীদের কীসের দিকে আহ্বান করেছেন?
ক) জিহাদের দিকে
খ) তাওবার দিকে
গ) দানের দিকে
ঘ) হিজরতের দিকে
২৪. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নবীজির স্ত্রীদের কীসের মাধ্যমে সান্ত্বনা দিয়েছেন?
ক) জান্নাতের সুসংবাদ
খ) দুনিয়ার সম্পদ
গ) মান-সম্মান বৃদ্ধি
ঘ) বংশ বিস্তার
২৫. সূরা আত-তাহরীমে আল্লাহ নারীদের জন্য কীসের পথ দেখিয়েছেন?
ক) সাফল্যের পথ
খ) ধন-সম্পদের পথ
গ) ক্ষমতার পথ
ঘ) প্রভাব-প্রতিপত্তির পথ
সঠিক উত্তর
এই প্রশ্নোত্তর ও MCQ গুলো সূরা আত-তাহরীমের মূল বিষয়বস্তু ও শিক্ষাকে সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত
সূরা আত-তাহরীম: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু ও ফযিলত
১. সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
- নাম: সূরা আত-তাহরীম (আরবি: التحريم)।
- অর্থ: “নিষিদ্ধকরণ” বা “হারাম করা”।
- সূরার অবস্থান: কুরআনের ২৮তম পারা, ৬৬ নং সূরা।
- আয়াত সংখ্যা: ১২টি।
- নাযিলের সময়: মদিনায় নাযিল হয়েছে (মাদানী সূরা)।
২. শানে নুযূল (প্রেক্ষাপট):
এই সূরার নাযিলের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে।
- নবী (সা.) তাঁর এক স্ত্রীর ঘরে মধু পান করেছিলেন এবং অন্য স্ত্রী (হাফসা (রা.))-এর কাছে এটি গোপন রাখার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু হাফসা (রা.) এটি আয়িশা (রা.)-কে বলে দেন।
- এতে নবী (সা.) কিছু সময়ের জন্য স্ত্রীদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখেন।
- আল্লাহ তাআলা এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নবী (সা.)-কে সতর্ক করেন এবং মুমিনদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক:
১. পারিবারিক জীবন ও দাম্পত্য সম্পর্ক:
- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সততা, বিশ্বস্ততা ও পারস্পরিক সমঝোতার গুরুত্ব।
২. নারীদের জন্য আদর্শ ও সতর্কতা:
- ঈমানদার নারীদের কর্তব্য ও আল্লাহর আনুগত্যের নির্দেশ।
- নূহ (আ.) ও লূত (আ.)-এর অবিশ্বাসী স্ত্রীদের উদাহরণ দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
৩. তাওবার গুরুত্ব:
- আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তাওবা করার আহ্বান।
৪. মুমিন নারী-পুরুষের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ:
- ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া ও মরিয়ম (আ.)-এর মতো নারীদের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
৫. নবী (সা.)-এর গৃহব্যবস্থাপনা ও উম্মতের জন্য শিক্ষা:
- নবীজির ব্যক্তিগত জীবন থেকে উম্মতের জন্য আদর্শ নির্দেশনা।
৪. সূরাটির শিক্ষা:
১. আল্লাহর নির্দেশের আগে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্ন গুরুত্বহীন:
- নবী (সা.) নিজের জন্য কিছু হারাম করেছিলেন, কিন্তু আল্লাহ তাকে সতর্ক করেছেন যে এটি ঠিক নয়।
২. গোপনীয়তা রক্ষার গুরুত্ব:
- স্ত্রীদের মধ্যে গোপন বিষয় ফাঁস করা অনুচিত।
৩. সৎ স্ত্রী-স্বামীর সম্পর্ক ঈমানের অংশ:
- দাম্পত্য জীবনে সততা ও আল্লাহভীতিই মূল ভিত্তি।
৪. কাফির ও মুমিন নারীদের উদাহরণ:
- নূহ ও লূত (আ.)-এর স্ত্রীরা স্বামীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করায় জাহান্নামী হয়েছে।
- ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া ঈমান আনার কারণে জান্নাত পেয়েছেন।
৫. তাওবা ও আত্মশুদ্ধির আহ্বান:
- আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে তাওবা করা।
৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু:
আল্লাহর আনুগত্য ও নবীর আদর্শ:
- নবী (সা.)-এর জীবনই উত্তম আদর্শ।
মুমিন নারী-পুরুষের দায়িত্ব:
- আল্লাহর বিধান মেনে চলা এবং সত্যের পথে অবিচল থাকা।
পারিবারিক শিষ্টাচার:
- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৌহার্দ্য ও গোপনীয়তা রক্ষা।
আখিরাতের সতর্কবার্তা:
- সৎকর্মশীলদের জন্য জান্নাত এবং অবাধ্যদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি।
৬. সূরাটির ফযিলত (মর্যাদা ও উপকারিতা):
১. পারিবারিক শান্তি ও সমাধানের নির্দেশনা:
- দাম্পত্য কলহের সমাধান ও সঠিক পথনির্দেশ।
২. মুমিন নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা:
- আসিয়া (রা.) ও মরিয়ম (আ.)-এর চরিত্র থেকে শিক্ষা লাভ।
৩. তাওবার মাধ্যমে গুনাহ মাফের সুযোগ:
- আল্লাহর রহমতের দরজা সর্বদা খোলা।
৪. কুরআনিক জ্ঞানের সমৃদ্ধি:
- নবীজির জীবনাদর্শ বুঝতে সহায়তা করে।
৫. আখিরাতে মুক্তির সুসংবাদ:
- সূরা পাঠ ও আমলে মুমিনদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা।
সারসংক্ষেপ:
সূরা আত-তাহরীম মুমিনদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা, যা পারিবারিক জীবন, নারী-পুরুষের দায়িত্ব ও তাওবার গুরুত্ব শেখায়। এটি নবীজির জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ইহকাল ও পরকালীন সাফল্যের পথ দেখায়।
সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত
সূরা আত-তাহরীমের আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ) ও বিস্তারিত বিশ্লেষণ
১. বিষয়: আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলে পরিণতি
আয়াত (৬৬:৬):
“يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ“
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে বাঁচাও, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।”
বিশ্লেষণ:
- আল্লাহ তাআলা মুমিনদের দায়িত্ব দিয়েছেন নিজেদের ও পরিবারকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করার।
- শিক্ষা:
- পরিবারের সদস্যদের ঈমান ও আমলের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
- দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর হুকুম মানার মাধ্যমে আখিরাতের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
২. বিষয়: তাওবার গুরুত্ব ও আল্লাহর ক্ষমা
আয়াত (৬৬:৮):
“يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا“
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা করো।”
বিশ্লেষণ:
- “তাওবাতুন নাসুহা” অর্থ আন্তরিক ও পূর্ণাঙ্গ তাওবা, যাতে গুনাহে ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প থাকে।
- শিক্ষা:
- গুনাহের পর পশ্চাতাপ করা এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা ঈমানের লক্ষণ।
- আল্লাহর রহমত অফুরন্ত, তিনি তাওবা কবুল করেন।
৩. বিষয়: নেককার নারীদের উদাহরণ
আয়াত (৬৬:১১):
“وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا لِّلَّذِينَ آمَنُوا امْرَأَتَ فِرْعَوْنَ“
অর্থ: “আল্লাহ মুমিনদের জন্য ফিরাউনের স্ত্রীর উদাহরণ দিয়েছেন…”
বিশ্লেষণ:
- আসিয়া (রা.) ফিরাউনের মতো জালিম স্বামীর বিরুদ্ধে ঈমান আনার সাহস দেখিয়েছিলেন।
- শিক্ষা:
- সত্যের পথে অবিচল থাকলে আল্লাহ সম্মান দেন, এমনকি শত্রুর ঘরেও।
- নারী-পুরুষ উভয়েই ঈমান ও সৎকর্মের মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদা পেতে পারে।
৪. বিষয়: কাফির নারীদের পরিণতি
আয়াত (৬৬:১০):
“ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا لِّلَّذِينَ كَفَرُوا امْرَأَتَ نُوحٍ وَامْرَأَتَ لُوطٍ“
অর্থ: “আল্লাহ কাফিরদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের উদাহরণ দিয়েছেন…”
বিশ্লেষণ:
- নূহ (আ.) ও লূত (আ.)-এর স্ত্রীরা নবীগণের সহধর্মিণী হয়েও কুফরি করায় জাহান্নামী হয়েছে।
- শিক্ষা:
- আত্মীয়তা বা অবস্থান ঈমানের বিকল্প নয়, আমলই মুখ্য।
- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও ঈমানের সমন্বয় জরুরি।
৫. বিষয়: মুমিন নারী-পুরুষের জন্য পুরস্কার
আয়াত (৬৬:১২):
“وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا“
অর্থ: “এবং মরিয়ম বিনতে ইমরানের কথা, যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছিল…”
বিশ্লেষণ:
- মরিয়ম (আ.)-এর পবিত্র জীবন মুমিন নারীদের জন্য আদর্শ।
- শিক্ষা:
- পবিত্রতা ও আল্লাহভীতিই নারী-পুরুষের সম্মানের মাপকাঠি।
- আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীলদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন।
সারসংক্ষেপ:
বিষয় | আয়াত | মূল বার্তা |
আল্লাহর আনুগত্য | ৬৬:৬ | পরিবারকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো দায়িত্ব |
তাওবার গুরুত্ব | ৬৬:৮ | খাঁটি তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন |
নেককার নারীর উদাহরণ | ৬৬:১১ | আসিয়া (রা.)-এর ঈমানী দৃঢ়তা |
কাফির নারীর পরিণতি | ৬৬:১০ | নবীগণের স্ত্রীরাও শাস্তি পেতে পারে |
মুমিনদের পুরস্কার | ৬৬:১২ | মরিয়ম (আ.)-এর মতো পবিত্র জীবন লাভ |
এই আয়াতগুলো থেকে আমরা শিখতে পারি—ঈমান, তাওবা, পারিবারিক দায়িত্ব ও আখিরাতের প্রস্তুতি কীভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হয়।
সূরা তাহরীম আয়াত ৬, ৮, ১, ১১, 6, আয়াত এবং এর বাংলা অর্থসহ ব্যাখ্যা
সূরা আত-তাহরীমের নির্বাচিত আয়াতসমূহের বাংলা অর্থ ও ব্যাখ্যা
১. আয়াত ৬ (সূরা তাহরীম:৬)
আরবি:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
বাংলা অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে ঐ আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।”
ব্যাখ্যা:
- এই আয়াতে মুমিনদেরকে নিজেদের ও পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব শুধু নিজেকে নয়, পরিবারের সদস্যদেরও সঠিক পথে পরিচালিত করা।
- জাহান্নামের ভয়াবহতা বোঝাতে ‘মানুষ ও পাথর’কে এর ইন্ধন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- পারিবারিক দায়িত্ব ইসলামে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এখানে ফুটে উঠেছে।
২. আয়াত ৮ (সূরা তাহরীম:৮)
আরবি:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا
বাংলা অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট খাঁটি তওবা কর।”
ব্যাখ্যা:
- এ আয়াতে ‘তওবাতুন নাসুহা’ বা খাঁটি তওবার কথা বলা হয়েছে।
- গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- তওবা শুধু মুখে বললেই হয় না, তা হতে হবে আন্তরিক।
- তওবার তিনটি শর্ত:
১. গুনাহ ত্যাগ করা
২. তা থেকে লজ্জিত হওয়া
৩. ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় সংকল্প - আল্লাহ তাআলা বান্দার তওবা কবুল করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত।
৩. আয়াত ১ (সূরা তাহরীম:১)
আরবি:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ
বাংলা অর্থ:
“হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা হালাল করেছেন, তুমি তা নিজের জন্য হারাম করছ কেন?”
ব্যাখ্যা:
- নবীজি (সা.) তাঁর এক স্ত্রীর ঘরে মধু পান করাকে নিজের জন্য হারাম করেছিলেন।
- গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- আল্লাহর দেওয়া হালাল জিনিসকে হারাম করা যাবে না।
- নবীজির জীবনেও আল্লাহ তাআলা সংশোধনী এনেছেন, যা উম্মতের জন্য শিক্ষা।
- ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত যেন শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়।
৪. আয়াত ১১ (সূরা তাহরীম:১১)
আরবি:
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا لِّلَّذِينَ آمَنُوا امْرَأَتَ فِرْعَوْنَ
বাংলা অর্থ:
“আল্লাহ মুমিনদের জন্য ফিরআউনের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন।”
ব্যাখ্যা:
- এ আয়াতে ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া (রা.)-এর কথা বলা হয়েছে।
- গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- আসিয়া (রা.) ফিরআউনের মতো জালিম স্বামীর ঘরে থেকেও ঈমান আনার সাহস দেখিয়েছিলেন।
- তাঁর দৃঢ়তার জন্য আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
- এটি প্রমাণ করে যে, কঠিন পরিস্থিতিতেও ঈমান ধরে রাখা সম্ভব।
৫. আয়াত ৬ (সূরা তাহরীম:৬) – পুনরালোচনা
আরবি:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
বাংলা অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।”
গভীর ব্যাখ্যা:
- এই আয়াতের বার্তা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে সূরা তাহরীমে এটি দু’বার এসেছে।
- প্রয়োগিক দিক:
১. সন্তানদের ইসলামী শিক্ষা দেওয়া
২. পরিবারে নামাজ-রোজার পরিবেশ তৈরি করা
৩. গুনাহ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা
৪. পারিবারিক সদস্যদের সাথে ইসলামী আচরণ করা
সারসংক্ষেপ:
আয়াত | মূল বিষয় | শিক্ষা |
৬৬:৬ | জাহান্নাম থেকে রক্ষা | পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া |
৬৬:৮ | তওবার গুরুত্ব | আন্তরিকভাবে তওবা করা |
৬৬:১ | হালাল-হারাম | আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন না করা |
৬৬:১১ | আসিয়া (রা.)-এর উদাহরণ | কঠিন পরিস্থিতিতে ঈমান ধারণ |
এই আয়াতগুলো থেকে আমরা শিখতে পারি:
১. ঈমান রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া
২. তওবার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ
৩. পারিবারিক দায়িত্বের গুরুত্ব
৪. যে কোনো পরিস্থিতিতে সত্যের পথে অবিচল থাকা
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই সূরার শিক্ষাগুলো বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।