সূরা তাগাবুন এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা তাগাবুন সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।
সূরা তাগাবুন সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ
সূরা তাগাবুন সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. সূরা তাগাবুন কত নং সূরা?
উত্তর: ৬৪ নং সূরা।
২. সূরা তাগাবুন মক্কী না মাদানী?
উত্তর: মাদানী সূরা।
৩. সূরা তাগাবুনে কয়টি আয়াত আছে?
উত্তর: ১৮টি আয়াত।
৪. “তাগাবুন” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: “পরস্পর ধোঁকা বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া”।
৫. সূরা তাগাবুনের মূল বিষয় কী?
উত্তর: ইমান, কিয়ামত, আল্লাহর প্রতি আস্থা ও দুনিয়ার ধোঁকা থেকে সতর্কতা।
৬. সূরা তাগাবুনে কিয়ামতের দিন কী বলা হয়েছে?
উত্তর: সেদিন মানুষ নিজের সৎকর্ম ও পাপকর্ম দেখে বুঝতে পারবে।
৭. সূরা তাগাবুনে আল্লাহর কী গুণবাচক নাম উল্লেখ আছে?
উত্তর: “আল-আযীয” (পরাক্রমশালী), “আল-হাকীম” (প্রজ্ঞাময়)।
৮. সূরা তাগাবুনে কীভাবে ঈমানদারদের বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: তারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং সৎকর্ম করে।
৯. সূরা তাগাবুনে কাফিরদের কী সতর্ক করা হয়েছে?
উত্তর: তারা দুনিয়ার জীবনে ধোঁকায় পড়েছে এবং আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
১০. সূরা তাগাবুনে আল্লাহ কীভাবে বান্দাকে পরীক্ষা করেন?
উত্তর: সম্পদ, সন্তান ও জীবনের মাধ্যমে।
১১. সূরা তাগাবুনে কীভাবে তাওবাহ করার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু, তাঁর কাছে তাওবাহ করা উচিত।
১২. সূরা তাগাবুনে দান-খয়রাতের কী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করলে তা কল্যাণ বয়ে আনে।
১৩. সূরা তাগাবুনে পরিবারের সদস্যদের কী বলা হয়েছে?
উত্তর: তারা কখনো শত্রুও হতে পারে, তাই আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে।
১৪. সূরা তাগাবুনে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: আকাশ, পৃথিবী ও প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শন ছড়িয়ে আছে।
১৫. সূরা তাগাবুনে রাসূল (সা.)-এর দায়িত্ব কী বলা হয়েছে?
উত্তর: তিনি শুধু সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
১৬. সূরা তাগাবুনের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং তিনি প্রজ্ঞাময়।
১৭. সূরা তাগাবুনে ধন-সম্পদের কী হুকুম দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: তা আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে, অহংকার না করে।
১৮. সূরা তাগাবুনে মুনাফিকদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: তাদের অন্তরে রোগ আছে এবং তারা ধোঁকাবাজ।
১৯. সূরা তাগাবুনে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার পরিণতি কী?
উত্তর: তা আখিরাতে বড় ক্ষতির কারণ হবে।
২০. সূরা তাগাবুন তিলাওয়াতের ফজিলত কী?
উত্তর: এটি কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।
সূরা তাগাবুন সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)
১. সূরা তাগাবুন কত নং সূরা?
- a) ৬২
b) ৬৩
c) ৬৪
d) ৬৫
উত্তর: c) ৬৪
২. সূরা তাগাবুনে কয়টি আয়াত আছে?
- a) ১৫
b) ১৮
c) ২০
d) ২২
উত্তর: b) ১৮
৩. “তাগাবুন” শব্দের অর্থ কী?
- a) শান্তি
b) ধোঁকা
c) বিজয়
d) ক্ষমা
উত্তর: b) ধোঁকা
৪. সূরা তাগাবুন কোন ধরনের সূরা?
- a) মক্কী
b) মাদানী
c) মিশ্রিত
d) কোনোটিই নয়
উত্তর: b) মাদানী
৫. সূরা তাগাবুনে কার কথা বলা হয়েছে যারা কিয়ামতের দিন ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
- a) মুমিন
b) কাফির
c) ফেরেশতা
d) নবী
উত্তর: b) কাফির
৬. সূরা তাগাবুনে আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম উল্লেখ আছে?
- a) আর-রহীম
b) আল-আযীয
c) আল-মালিক
d) আল-কুদ্দুস
উত্তর: b) আল-আযীয
৭. সূরা তাগাবুনে কীসের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা করেন?
- a) সম্পদ
b) সন্তান
c) জীবন
d) সবগুলো
উত্তর: d) সবগুলো
৮. সূরা তাগাবুনে দান-খয়রাতের কী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?
- a) অর্থ নষ্ট
b) কল্যাণ বয়ে আনে
c) বাধ্যতামূলক নয়
d) শুধু ধনীদের জন্য
উত্তর: b) কল্যাণ বয়ে আনে
৯. সূরা তাগাবুনে পরিবারের সদস্যরা কখনো কী হতে পারে?
- a) সাহায্যকারী
b) শত্রু
c) উদাসীন
d) বন্ধু
উত্তর: b) শত্রু
১০. সূরা তাগাবুনে রাসূল (সা.)-এর দায়িত্ব কী?
- a) শাসক
b) সতর্ককারী
c) যোদ্ধা
d) বিচারক
উত্তর: b) সতর্ককারী
১১. সূরা তাগাবুনের শেষ আয়াতে আল্লাহর কোন গুণের কথা বলা হয়েছে?
- a) ক্ষমাশীল
b) প্রজ্ঞাময়
c) দয়ালু
d) মহান
উত্তর: b) প্রজ্ঞাময়
১২. সূরা তাগাবুনে মুনাফিকদের অন্তরে কী আছে?
- a) ঈমান
b) রোগ
c) শান্তি
d) আনন্দ
উত্তর: b) রোগ
১৩. সূরা তাগাবুনে আল্লাহর নিদর্শন কোথায় দেখা যায়?
- a) শুধু কুরআনে
b) আকাশ ও পৃথিবীতে
c) শুধু নবীদের মধ্যে
d) মানুষের মনে
উত্তর: b) আকাশ ও পৃথিবীতে
১৪. সূরা তাগাবুনে ধন-সম্পদ কীভাবে ব্যয় করতে বলা হয়েছে?
- a) অহংকার সহকারে
b) আল্লাহর পথে
c) শুধু আত্মীয়দের জন্য
d) গোপনে
উত্তর: b) আল্লাহর পথে
১৫. সূরা তাগাবুনে কাফিররা কিসে ধোঁকায় পড়েছে?
- a) দুনিয়ার জীবনে
b) আখিরাতে
c) উভয়ই
d) কোনোটিই নয়
উত্তর: a) দুনিয়ার জীবনে
১৬. সূরা তাগাবুনে আল্লাহর আদেশ অমান্যের পরিণতি কী?
- a) শাস্তি
b) ক্ষতি
c) পুরস্কার
d) ক্ষমা
উত্তর: b) ক্ষতি
১৭. সূরা তাগাবুনে তাওবাহ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
- a) আল্লাহ ক্ষমাশীল
b) তাওবাহ无用
c) শুধু নবীদের জন্য
d) শুধু মুমিনদের জন্য
উত্তর: a) আল্লাহ ক্ষমাশীল
১৮. সূরা তাগাবুনে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য কী?
- a) তারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস রাখে
b) তারা শুধু নামাজ পড়ে
c) তারা শুধু রোজা রাখে
d) তারা শুধু হজ করে
উত্তর: a) তারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস রাখে
১৯. সূরা তাগাবুনে আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
- a) তা ভুল
b) তা অস্পষ্ট
c) তা স্পষ্ট
d) তা অপ্রয়োজনীয়
উত্তর: c) তা স্পষ্ট
২০. সূরা তাগাবুন তিলাওয়াতের ফজিলত কী?
- a) ধন বৃদ্ধি
b) কিয়ামতে সুপারিশ
c) শত্রু ধ্বংস
d) রোগমুক্তি
উত্তর: b) কিয়ামতে সুপারিশ
২১. সূরা তাগাবুনে আল্লাহ কীসের মালিক?
- a) শুধু আকাশের
b) শুধু পৃথিবীর
c) আকাশ ও পৃথিবীর
d) শুধু মানুষের
উত্তর: c) আকাশ ও পৃথিবীর
২২. সূরা তাগাবুনে আল্লাহর কীসের কথা বলা হয়েছে?
- a) শাস্তি
b) ক্ষমা
c) প্রজ্ঞা
d) সবগুলো
উত্তর: d) সবগুলো
২৩. সূরা তাগাবুনে কাফিররা কিসে মগ্ন?
- a) ইবাদতে
b) দুনিয়ার মোহে
c) জ্ঞানে
d) ধ্যানে
উত্তর: b) দুনিয়ার মোহে
২৪. সূরা তাগাবুনে আল্লাহ কী দেখেন?
- a) শুধু কর্ম
b) শুধু অন্তর
c) সবকিছু
d) কিছুই না
উত্তর: c) সবকিছু
২৫. সূরা তাগাবুনে মুমিনদের কীসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
- a) ধৈর্য্য ধারণ
b) আল্লাহর উপর ভরসা
c) দান-খয়রাত
d) সবগুলো
উত্তর: d) সবগুলো
এই প্রশ্নোত্তরগুলি সূরা তাগাবুনের মূল বিষয়বস্তু ও শিক্ষা বুঝতে সহায়ক হবে।
সূরা তাগাবুন: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু ও ফযিলত
১. সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
- নাম: সূরা তাগাবুন (আরবি: التغابن)।
- অর্থ: “পরস্পর ধোঁকা বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া”।
- সূরার অবস্থান: কুরআনের ৬৪তম সূরা।
- আয়াত সংখ্যা: ১৮টি।
- নুযূলের স্থান: মাদানী সূরা (মদিনায় অবতীর্ণ)।
- পারার অবস্থান: ২৮তম পারায়।
২. শানে নুযূল (প্রেক্ষাপট):
সূরা তাগাবুন মদিনায় অবতীর্ণ হয়, যখন মুসলিম সমাজে কিছু লোক দ্বিধা ও কপটতা প্রদর্শন করছিল। এ সূরায় আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদেরকে সতর্ক করেছেন এবং দুনিয়ার জীবনের ধোঁকা থেকে সাবধান করেছেন। বিশেষত, সম্পদ, সন্তান ও পার্থিব জীবনের মোহে যেন মুমিনরা বিভ্রান্ত না হয়, সে বিষয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।
৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- কিয়ামতের দিনের সতর্কতা: সূরাটিতে কিয়ামতের দিনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেদিন মানুষ নিজের আমল দেখে বুঝতে পারবে এবং অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
- আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতা: আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন, তাঁর প্রজ্ঞা ও পরাক্রমের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
- দুনিয়ার ধোঁকা থেকে সতর্কতা: দুনিয়ার সম্পদ ও সন্তান যেন মুমিনদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ না করে।
- তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনা: আল্লাহ ক্ষমাশীল, তাই তাঁর দিকে ফিরে আসার আহ্বান।
- দান-খয়রাতের গুরুত্ব: আল্লাহর পথে ব্যয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪. সূরাটির শিক্ষা:
- দুনিয়ার জীবনে ধোঁকায় না পড়া: সম্পদ, সন্তান ও পার্থিব সুখ-সুবিধা যেন ঈমান ও আখিরাতের চিন্তাকে ম্লান না করে।
- আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা: সব পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রাখা।
- পরিবার ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার: পরিবার ও সম্পদ আল্লাহর আমানত, তাই তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
- কিয়ামতের প্রস্তুতি: প্রতিটি কাজের হিসাব আখিরাতে দেওয়া হবে, তাই সৎকর্মে আত্মনিয়োগ করা।
- মুনাফিকী থেকে দূরে থাকা: অন্তরের রোগ (মুনাফিকী) থেকে বেঁচে থাকা।
৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু:
- তাগাবুন (ধোঁকা): দুনিয়ার জীবনে মানুষ ধোঁকায় পড়ে, কিন্তু আখিরাতে সত্য প্রকাশিত হবে।
- আল্লাহর একত্ব ও ক্ষমতা: আকাশ, পৃথিবী ও মানব জীবনে আল্লাহর নিদর্শন বিদ্যমান।
- ইমান ও আমলের গুরুত্ব: শুধু মুখে ঈমানই যথেষ্ট নয়, সৎকর্ম প্রয়োজন।
- দুনিয়া ও আখিরাতের সমন্বয়: দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতই স্থায়ী।
- তাওবাহ ও আল্লাহর ক্ষমা: আল্লাহ দয়ালু, তাই তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
৬. সূরাটির ফযিলত (মর্যাদা ও উপকারিতা):
- কিয়ামতের দিন সুপারিশকারী:
- হাদীসে বর্ণিত আছে, সূরা তাগাবুন কিয়ামতের দিন তার তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।
- দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ:
- এ সূরার শিক্ষা অনুসরণ করলে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করা যায়।
- আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়:
- সূরাটি পাঠ করলে আল্লাহর নেয়ামতের কদর বোঝা যায় এবং শুকরিয়া আদায়ের প্রেরণা মেলে।
- মুনাফিকী থেকে হিফাজত:
- এ সূরায় মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে, তাই তা থেকে সতর্ক হওয়া যায়।
- আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জন:
- সূরাটি নিয়মিত তিলাওয়াত ও চিন্তা-গবেষণা করলে অন্তর পরিশুদ্ধ হয়।
উপসংহার:
সূরা তাগাবুন মুমিনদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা, যা দুনিয়ার মোহ ও আখিরাতের প্রস্তুতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে শেখায়। এটি পাঠ ও অধ্যয়ন করে আমরা দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারি।
সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই
সূরা তাগাবুনের আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ ও বিস্তারিত বিশ্লেষণ)
১. বিষয়: আল্লাহর একত্ব ও সৃষ্টির নিদর্শন
আয়াত:
“তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য সবকিছু জানেন। তিনি পরম দয়ালু, অতি দয়ালু।”
(সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৮)
অর্থ ও ব্যাখ্যা:
- আল্লাহই একমাত্র উপাস্য, তাঁর কোনো শরিক নেই।
- তিনি সবকিছু দেখেন ও জানেন—গোপন-প্রকাশ্য সবই তাঁর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।
- তাঁর রহমত সর্বব্যাপী; তিনি বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল।
শিক্ষা:
- আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং সর্বদা তাঁর দয়া ও ক্ষমার প্রতি আশাবাদী হওয়া।
২. বিষয়: দুনিয়ার ধোঁকা ও আখিরাতের সত্য
আয়াত:
“দুনিয়ার জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া কিছুই নয়। আর নিশ্চয়ই আখিরাতের আবাসই হচ্ছে প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত!”
(সূরা তাগাবুন, আয়াত: ৯)
অর্থ ও ব্যাখ্যা:
- দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী ও ভোগ-বিলাসের খেলামাত্র।
- প্রকৃত স্থায়ী জীবন হলো আখিরাত, যেখানে চিরস্থায়ী সুখ বা শাস্তি পাওয়া যাবে।
শিক্ষা:
- দুনিয়ার মোহে না পড়ে আখিরাতমুখী জীবনযাপন করা।
৩. বিষয়: সম্পদ ও সন্তানের পরীক্ষা
আয়াত:
“নিশ্চয়ই তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি একটি পরীক্ষা। আর আল্লাহর কাছেই রয়েছে মহাপুরস্কার।”
(সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৫)
অর্থ ও ব্যাখ্যা:
- সম্পদ ও সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা—এগুলো যেন আমাদেরকে আল্লাহ থেকে বিমুখ না করে।
- আল্লাহর সন্তুষ্টিই হলো প্রকৃত সাফল্য, যা আখিরাতে দেওয়া হবে।
শিক্ষা:
- সম্পদ ও সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহার করা এবং এগুলোকে আখিরাতের পুঁজি বানানো।
৪. বিষয়: তাওবাহ ও আল্লাহর ক্ষমা
আয়াত:
“অতএব, তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।”
(সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১০)
অর্থ ও ব্যাখ্যা:
- আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আহ্বান; তিনি বান্দাদের তাওবাহ গ্রহণ করেন।
- তাঁর ক্ষমা ও দয়া অসীম—কোনো গুনাহই তাঁর ক্ষমার বাইরে নয়।
শিক্ষা:
- গুনাহের পর তাওবাহ করা এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া।
৫. বিষয়: দান-খয়রাত ও আল্লাহর পথে ব্যয়
আয়াত:
“আর তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না। আর সৎকাজ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।”
(সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬)
অর্থ ও ব্যাখ্যা:
- আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা ঈমানের দাবি এবং আত্মধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়।
- সৎকর্মশীলদের জন্য আল্লাহর বিশেষ ভালোবাসা ও পুরস্কার রয়েছে।
শিক্ষা:
- সম্পদে কার্পণ্য না করে দান-খয়রাতের মাধ্যমে আখিরাত সুরক্ষিত করা।
সারসংক্ষেপ:
সূরা তাগাবুনে উল্লিখিত এই ৫টি বিষয় মুমিনদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা বহন করে:
- আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস → ঈমানের ভিত্তি।
- দুনিয়ার মোহ ত্যাগ → আখিরাতমুখী জীবন।
- সম্পদ-সন্তানের সঠিক ব্যবহার → পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
- তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনা → আধ্যাত্মিক শুদ্ধি।
- দান-খয়রাত → সমাজের কল্যাণ ও আত্মিক উন্নতি।
এই শিক্ষাগুলো অনুসরণ করেই একজন মুমিন দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা অর্জন করতে পারে।
সূরা তাগাবুন আয়াত ১১, ১৬, ১৮, ১৪ আয়াত এবং এর বাংলা অর্থসহ ব্যাখ্যা চাই
সূরা তাগাবুনের নির্বাচিত আয়াতসমূহের বাংলা অর্থ ও ব্যাখ্যা
১. আয়াত ১১: পরীক্ষা ও বিপদে ধৈর্য্য ধারণ
আয়াত:
مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ ۚ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
“কোনো বিপদই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া আপতিত হয় না। আর যে আল্লাহর উপর ঈমান রাখে, তিনি তার হৃদয়কে সৎপথে পরিচালিত করেন। আর আল্লাহ সবকিছু জানেন।”
(সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১১)
ব্যাখ্যা:
- আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদ আসে না: সবকিছুই আল্লাহর জ্ঞান ও ইচ্ছায় ঘটে।
- ঈমানদারের হৃদয়ে সঠিক পথনির্দেশ: বিপদে ধৈর্য্য ধারণকারীদের আল্লাহ হিদায়াত দেন।
- শিক্ষা: বিপদে আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং ধৈর্য্য ধারণ করা ঈমানের লক্ষণ।
২. আয়াত ১৬: দান-খয়রাত ও আত্মরক্ষা
আয়াত:
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ ۗ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো, শুনো ও আনুগত্য করো, এবং নিজেদের মঙ্গলের জন্য ব্যয় করো। আর যে নিজের কৃপণতা থেকে রক্ষা পায়, তারাই সফলকাম।”
(সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬)
ব্যাখ্যা:
- তাকওয়া ও আনুগত্য: সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর আদেশ মান্য করা।
- সদকাহর গুরুত্ব: দান-খয়রাত আত্মশুদ্ধি ও সমাজের কল্যাণ বয়ে আনে।
- কৃপণতা থেকে বাঁচা: কৃপণতা ধ্বংসের কারণ, আর দান সফলতার চাবিকাঠি।
- শিক্ষা: সম্পদে কার্পণ্য না করে আল্লাহর পথে ব্যয় করা।
৩. আয়াত ১৮: আল্লাহর জ্ঞান ও ক্ষমতা
আয়াত:
عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
“তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
(সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৮)
ব্যাখ্যা:
- আল্লাহর সর্বজ্ঞান: গোপন-প্রকাশ্য সবই তাঁর জানা।
- পরাক্রম ও প্রজ্ঞা: তাঁর শক্তি অপরাজেয় এবং সবকিছুই হিকমতপূর্ণ।
- শিক্ষা: আল্লাহর সিদ্ধান্তে বিশ্বাস রাখা এবং তাঁর প্রজ্ঞার উপর ভরসা করা।
৪. আয়াত ১৪: পরিবার ও সম্পদের পরীক্ষা
আয়াত:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ ۚ وَإِن تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
“হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু। সুতরাং তাদের থেকে সতর্ক থাকো। আর যদি ক্ষমা করো, উপেক্ষা করো এবং মার্জনা করো, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।”
(সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৪)
ব্যাখ্যা:
- পরিবারও পরীক্ষা: স্ত্রী-সন্তান কখনো ঈমানের প্রতিবন্ধক হতে পারে।
- সতর্কতা ও ক্ষমা: তাদের ভুলত্রুটিতে ধৈর্য্য ধারণ ও ক্ষমা করা উত্তম।
- শিক্ষা: আল্লাহর সন্তুষ্টিকে পরিবারের ভালোবাসার উপর প্রাধান্য দেওয়া।
সারসংক্ষেপ:
আয়াত | মূল বিষয় | শিক্ষা |
১১ | বিপদে ধৈর্য্য | আল্লাহর ইচ্ছায় সব ঘটে, ঈমানদারদের হিদায়াত দেওয়া হয়। |
১৬ | দান-খয়রাত | কৃপণতা ত্যাগ করে আল্লাহর পথে ব্যয় করা সফলতার চাবিকাঠি। |
১৮ | আল্লাহর গুণাবলি | তিনি সব জানেন, তাঁর সিদ্ধান্তে প্রজ্ঞা নিহিত। |
১৪ | পরিবারের পরীক্ষা | ঈমানের শত্রু হতে পারে আত্মীয়রাও, তবে ক্ষমাই শ্রেয়। |
এই আয়াতগুলো মুমিনদের জন্য ঈমান, তাকওয়া, দানশীলতা ও পারিবারিক দায়িত্বের উপর গুরুত্বারোপ করে। প্রতিটি আয়াতের শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করাই হলো সফলতার পথ।