সূরা জুমা এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা জুমা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।
সূরা জুমা
সূরা জুমা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ
- সূরা জুমা মক্কী না মাদানী?
- উত্তর: মাদানী সূরা।
- সূরা জুমা কত নং সূরা?
- উত্তর: কুরআনের ৬২ নং সূরা।
- সূরা জুমার আয়াত সংখ্যা কত?
- উত্তর: ১১ টি আয়াত।
- সূরা জুমার মূল বিষয় কী?
- উত্তর: জুমার দিনের গুরুত্ব ও নামাজের নির্দেশ।
- জুমার দিন কোন আমলের বিশেষ ফজিলত আছে?
- উত্তর: জুমার নামাজে অংশগ্রহণ ও ইবাদতের বিশেষ সওয়াব।
- জুমার দিন কিসের সম্মানে নামাজের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
- উত্তর: আল্লাহর স্মরণ ও জুমার নামাজের সম্মানে।
- সূরা জুমায় কাদেরকে ‘গাধার মতো’ বলা হয়েছে?
- উত্তর: যারা তাওরাতের বিধান বহন করে কিন্তু মানে না তাদের।
- জুমার নামাজ কত রাকাত?
- উত্তর: ফরজ ২ রাকাত (সুন্নতসহ মোট ১০ বা ১৪ রাকাত)।
- জুমার খুতবা কে পড়েন?
- উত্তর: ইমাম বা খতীব।
- জুমার দিন কোন নবীকে সম্মানিত করা হয়েছে?
- উত্তর: হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে।
- জুমার নামাজের আগে কী পড়া সুন্নত?
- উত্তর: সূরা কাহফ তিলাওয়াত।
- সূরা জুমায় আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম উল্লেখিত হয়েছে?
- উত্তর: “الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ” (মালিক, পবিত্র)।
- জুমার দিনে কোন দোয়া কবুল হয়?
- উত্তর: বিশেষ সময়ে (আসরের আগে) করা দোয়া।
- জুমার নামাজের জন্য কত বার আযান দেওয়া হয়?
- উত্তর: ২ বার (প্রথম আযান ও ইকামত)।
- সূরা জুমায় কাদেরকে জ্ঞানী বলা হয়েছে?
- উত্তর: যারা আল্লাহর বিধান মেনে চলে।
- জুমার দিনে মৃত্যু হলে কী সওয়াব পাওয়া যায়?
- উত্তর: শহীদের মর্যাদা (হাদিস অনুযায়ী)।
- সূরা জুমার শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
- উত্তর: আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করতে ও তাঁর স্মরণে বেশি সময় দিতে।
- জুমার নামাজ কখন ফরজ হয়েছিল?
- উত্তর: হিজরতের পর মদিনায়।
- জুমার দিনে গোসল করা কী?
- উত্তর: সুন্নত।
- সূরা জুমায় ব্যবসায়ীদের কী সতর্ক করা হয়েছে?
- উত্তর: জুমার নামাজ ছেড়ে ব্যবসায় ব্যস্ত না হতে।
সূরা জুমা সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)
- সূরা জুমা কোন ধরনের সূরা?
- ক) মক্কী
- খ) মাদানী
- গ) মিশ্র
- ঘ) মাদানী
- সূরা জুমার আয়াত সংখ্যা কত?
- ক) ১০
- খ) ১১
- গ) ১২
- ঘ) ৯
- জুমার নামাজ কত রাকাত ফরজ?
- ক) ৪
- খ) ৩
- গ) ২
- ঘ) ১
- সূরা জুমায় কাদেরকে ‘গাধার মতো’ বলা হয়েছে?
- ক) নামাজ না পড়া লোকদের
- খ) তাওরাত বহনকারী কিন্তু মানে না এমন লোকদের
- গ) মুশরিকদের
- ঘ) কাফিরদের
- জুমার দিনে কোন সূরা পড়া উত্তম?
- ক) সূরা ইখলাস
- খ) সূরা কাহফ
- গ) সূরা ইয়াসিন
- ঘ) সূরা ফাতিহা
- জুমার খুতবা কে দেন?
- ক) মুয়াজ্জিন
- খ) ইমাম
- গ) মুসল্লি
- ঘ) সরকার
- জুমার দিনে মৃত্যুবরণকারী কী মর্যাদা পাবে?
- ক) সাধারণ মুমিন
- খ) শহীদ
- গ) নবী
- ঘ) ফেরেশতা
- সূরা জুমায় আল্লাহর কোন নাম উল্লেখ আছে?
- ক) الرحمن
- খ) القدوس
- গ) السميع
- ঘ) البصير
- জুমার নামাজের জন্য কয়টি আযান দেওয়া হয়?
- ক) ১
- খ) ২
- গ) ৩
- ঘ) ৪
- জুমার দিনে গোসল করা কী?
- ক) ফরজ
- খ) ওয়াজিব
- গ) সুন্নত
- ঘ) মুস্তাহাব
- সূরা জুমার মূল বার্তা কী?
- ক) জিহাদের গুরুত্ব
- খ) জুমার নামাজের গুরুত্ব
- গ) রোজার ফজিলত
- ঘ) হজের বিধান
- জুমার নামাজের সময় কোন কাজ নিষিদ্ধ?
- ক) ঘুমানো
- খ) খাওয়া
- গ) ব্যবসা-বাণিজ্য
- ঘ) কথা বলা
- সূরা জুমায় কোন নবীর উল্লেখ আছে?
- ক) হযরত মুসা (আ.)
- খ) হযরত ঈসা (আ.)
- গ) হযরত মুহাম্মদ (সা.)
- ঘ) হযরত ইব্রাহিম (আ.)
- জুমার দিনে দোয়া কবুলের বিশেষ সময় কোনটি?
- ক) ফজরের পর
- খ) আসরের আগে
- গ) রাতের শেষ ভাগ
- ঘ) যোহরের সময়
- সূরা জুমা নাযিলের কারণ কী?
- ক) জুমার নামাজের বিধান দেওয়া
- খ) জিহাদের নির্দেশ
- গ) রোজার হুকুম
- ঘ) হজের বিধান
- ক) জুমার নামাজের বিধান দেওয়া
- জুমার নামাজের আগে কোন আমল করা ভালো?
- ক) তাসবিহ পড়া
- খ) দরুদ পড়া
- গ) সূরা কাহফ পড়া
- ঘ) নফল নামাজ
- সূরা জুমায় ব্যবসায়ীদের কী বলা হয়েছে?
- ক) বেশি লাভ কর
- খ) নামাজের সময় ব্যবসা বন্ধ রাখো
- গ) মিথ্যা বলো না
- ঘ) জাকাত দাও
- জুমার দিনে কোন কাজে বাধা দেওয়া হয় না?
- ক) নামাজে যাওয়া
- খ) ঘুমানো
- গ) খাওয়া
- ঘ) কাজ করা
- ক) নামাজে যাওয়া
- সূরা জুমার শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
- ক) আল্লাহর শাস্তি ভয় কর
- খ) বেশি দান কর
- গ) আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর
- ঘ) জিহাদ কর
- জুমার নামাজের পর কোন নামাজ পড়া হয়?
- ক) ফজর
- খ) যোহর
- গ) আসর
- ঘ) সুন্নত
- জুমার খুতবার সময় কথা বলা কী?
- ক) জায়েজ
- খ) মাকরুহ
- গ) ফরজ
- ঘ) ওয়াজিব
- সূরা জুমায় আল্লাহ কিসের নির্দেশ দিয়েছেন?
- ক) ধৈর্য ধরার
- খ) তাঁর স্মরণে ব্যস্ত থাকার
- গ) সম্পদ বিলিয়ে দেওয়ার
- ঘ) সফর করার
- জুমার দিনে কোন নেক কাজের সওয়াব বেশি?
- ক) রোজা রাখা
- খ) দান করা
- গ) নামাজ পড়া
- ঘ) কুরআন তিলাওয়াত
- জুমার নামাজ ছেড়ে দিলে কী হবে?
- ক) গুনাহ হবে
- খ) কিছুই হবে না
- গ) সওয়াব কমবে
- ঘ) কাফের হয়ে যাবে
- ক) গুনাহ হবে
- সূরা জুমায় কার কথা বলা হয়েছে যারা জ্ঞানী নয়?
- ক) ব্যবসায়ীরা
- খ) তাওরাতধারী ইহুদিরা
- গ) মুসলিমরা
- ঘ) মুশরিকরা
সঠিক উত্তর চিহ্নিত
এই প্রশ্নগুলো সূরা জুমা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
সূরা জুমা: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু, ফযিলত ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত বিশ্লেষণ
১. সূরা জুমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
- নাম: সূরা জুমা (আরবি: الجمعة)
- অবস্থান: কুরআনের ৬২তম সূরা
- আয়াত সংখ্যা: ১১টি
- নাযিলের স্থান: মাদানী সূরা
- পারার অবস্থান: ২৮তম পারায়
- মূল বিষয়: জুমার দিনের ফরজ নামাজের গুরুত্ব, ইবাদতের জন্য আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়া এবং দুনিয়াবি লোভে ইবাদত বিস্বাদ হওয়ার সতর্কতা।
২. শানে নুযূল (প্রাসঙ্গিক পটভূমি)
- এই সূরা মদিনায় নাযিল হয়, যখন রাসূল (সা.) ও মুসলিমরা জুমার নামাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
- ইহুদিরা তাওরাতের জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তা অনুশীলন না করায় তাদের সমালোচনা করা হয়েছে (আয়াত ৫)।
- মদিনার কিছু ব্যবসায়ী জুমার নামাজ ছেড়ে ব্যবসায় ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সতর্কতা হিসেবে আয়াত ৯-১১ নাযিল হয়।
৩. সূরা জুমার গুরুত্বপূর্ণ দিক
- জুমার নামাজের ফরজ হওয়া (আয়াত ৯)।
- আল্লাহর যিকিরের জন্য দুনিয়াবি কাজ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ।
- ইহুদিদের সমালোচনা—তারা তাওরাতের জ্ঞান রাখে কিন্তু আমল করে না (গাধার মতো যারা বই বহন করে কিন্তু উপকার পায় না)।
- মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহর রহমত ও নবুওয়াত দেওয়ার কথা (আয়াত ২-৩)।
- আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানের তাগিদ (আয়াত ১০)।
৪. সূরা জুমার শিক্ষা
- জুমার নামাজ ঈমানের অপরিহার্য অংশ।
- ইবাদতের সময় দুনিয়াবি কাজে ব্যস্ত না হওয়া।
- জ্ঞান অর্জন করলে তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।
- আল্লাহর রহমত লাভের জন্য বেশি বেশি ইবাদত ও দোয়া করা।
- ব্যবসা-বাণিজ্য ইবাদতের অন্তরায় হলে তা পরিহার করা।
৫. সূরা জুমার মূল বিষয়বস্তু
- আল্লাহর মহিমা ও নবীর মিশন (আয়াত ১-৪)।
- ইহুদিদের নিন্দা—জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আমল না করা (আয়াত ৫)।
- জুমার নামাজের বিধান ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিষেধ (আয়াত ৯-১১)।
- আল্লাহর অনুগ্রহ ও ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান (আয়াত ১০)।
৬. সূরা জুমার ফযিলত
- জুমার দিনে সূরা জুমা তিলাওয়াত করলে বিশেষ সওয়াব (হাদিস: তিরমিজি)।
- জুমার নামাজ ঈমানের পরিচয়, এটি ছেড়ে দেওয়া কবিরা গুনাহ।
- জুমার দিনে দোয়া কবুল হয় (আসরের পূর্ববর্তী সময়ে)।
- সূরা কাহফের সাথে সূরা জুমা পড়া মুস্তাহাব।
৭. সূরা জুমার আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ)
(১) আল্লাহর তাসবিহ ও নবীর প্রেরণ
আয়াত ১:
يُسَبِّحُ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ
অর্থ: “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে, যিনি অধিপতি, পবিত্র, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
মর্ম: সব সৃষ্টি আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করে।
(২) নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন
আয়াত ২:
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
অর্থ: “তিনিই নিরক্ষরদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতগুলো তিলাওয়াত করেন, তাদের পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেন।”
মর্ম: নবী (সা.)-এর প্রেরণ জাহেলি সমাজকে আলোর পথ দেখিয়েছে।
(৩) ইহুদিদের নিন্দা
আয়াত ৫:
مَثَلُ الَّذِينَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا
অর্থ: “যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা তা বহন করেনি, তাদের উদাহরণ হলো গাধার মতো, যে বইয়ের বোঝা বহন করে কিন্তু তার কিছুই বুঝে না।”
মর্ম: জ্ঞান অর্জন করলে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
(৪) জুমার নামাজের নির্দেশ
আয়াত ৯:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য ডাক দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করো।”
মর্ম: জুমার নামাজের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিহার করতে হবে।
(৫) আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান
আয়াত ১০:
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ
অর্থ: “নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো।”
মর্ম: ইবাদতের পর হালাল রুজি অন্বেষণে বের হওয়া।
সারসংক্ষেপ:
সূরা জুমা জুমার নামাজের ফরজিয়াত, ইবাদতের গুরুত্ব ও দুনিয়াবি লোভ থেকে সতর্কতা শেখায়। এটি মুসলিমদেরকে সপ্তাহিক ইবাদতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ দেয়।