সূরা জুমার এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা জুমার সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।
সূরা জুমার
সূরা জুমার সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. প্রশ্ন: সূরা জুমার কোন পারায় অবস্থিত?
উত্তর: ২৩ ও ২৪ পারায়।
২. প্রশ্ন: সূরা জুমার কতটি আয়াত নিয়ে গঠিত?
উত্তর: ৭৫টি।
৩. প্রশ্ন: সূরা জুমার অর্থ কী?
উত্তর: “দল” বা “গোষ্ঠী”।
৪. প্রশ্ন: সূরা জুমার কেন এই নাম দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: ৭১ ও ৭৩ নং আয়াতে জান্নাত ও জাহান্নামে প্রবেশকারী দলগুলোর কথা উল্লেখ আছে বলে।
৫. প্রশ্ন: সূরা জুমার মূল বিষয়বস্তু কী?
উত্তর: তাওহীদ, আখিরাতের বিশ্বাস, আল্লাহর একত্ব ও শিরকের পরিণতি।
৬. প্রশ্ন: সূরা জুমারে কিয়ামতের দিন কীভাবে মানুষকে বিভক্ত করা হবে?
উত্তর: দুটি দলে—জান্নাতী ও জাহান্নামী।
৭. প্রশ্ন: সূরা জুমারে আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম বেশি এসেছে?
উত্তর: “الواحد” (আল-ওয়াহিদ)—একক সত্তা।
৮. প্রশ্ন: সূরা জুমারে শিরকের পরিণতি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: শিরককারীরা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে।
৯. প্রশ্ন: সূরা জুমারে আল্লাহর কাছে খাঁটি দীন কী?
উত্তর: একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করা (আয়াত: ২-৩)।
১০. প্রশ্ন: সূরা জুমারে মৃত্যুর সময় কাফিরদের অবস্থা কী হবে?
উত্তর: তারা অনুতপ্ত হবে কিন্তু তখন আর তাওবার সুযোগ থাকবে না (আয়াত: ৫৮)।
১১. প্রশ্ন: সূরা জুমারে আল্লাহর রহমত সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর রহমত খুবই প্রশস্ত, তিনি তাওবা কবুল করেন (আয়াত: ৫৩)।
১২. প্রশ্ন: সূরা জুমারে নবীজি (সা.)-কে কীভাবে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: অহী অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, কাফিরদের অবাধ্যতা যেন তাকে দুঃখ না দেয় (আয়াত: ৩-৬)।
১৩. প্রশ্ন: সূরা জুমারে আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, রাত-দিন, নদী-পাহাড় ইত্যাদি আল্লাহর একত্বের প্রমাণ (আয়াত: ২১)।
১৪. প্রশ্ন: সূরা জুমারে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: তারা আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ, শিরক থেকে মুক্ত (আয়াত: ১১-১৪)।
১৫. প্রশ্ন: সূরা জুমারে কিয়ামতের দিন মানুষের অবস্থা কী হবে?
উত্তর: সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত হবে, কেউ কারো সাহায্য করতে পারবে না (আয়াত: ৩০-৩১)।
১৬. প্রশ্ন: সূরা জুমারে আল্লাহর কাছে উত্তম বান্দা কারা?
উত্তর: যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও আল্লাহর দিকে ফিরে আসে (আয়াত: ৩৩-৩৫)।
১৭. প্রশ্ন: সূরা জুমারে দুনিয়ার জীবনের উদাহরণ কী দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: বৃষ্টির পানির মতো, যা শুষ্ক ভূমিকে সজীব করে কিন্তু পরে শুকিয়ে যায় (আয়াত: ২১)।
১৮. প্রশ্ন: সূরা জুমারে আল্লাহর আদেশ কী?
উত্তর: একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করা ও শিরক পরিহার করা (আয়াত: ১১)।
১৯. প্রশ্ন: সূরা জুমারে কাফিরদের যুক্তি কী ছিল?
উত্তর: তারা নবীজি (সা.)-কে জাদুকর বা পাগল বলত (আয়াত: ৪৯)।
২০. প্রশ্ন: সূরা জুমারে শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: “আর বলো, হে আমার রব! আমাকে সত্যিসত্যি প্রবেশ করাও প্রবিষ্টদের দলে এবং আমাকে বের করো সত্যিসত্যি বেরকারীদের দলে…” (আয়াত: ৭৩-৭৫)।
সূরা জুমার সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন)
১. সূরা জুমার কোন ধরনের সূরা?
a) মাদানী
b) মাক্কী
c) মিশ্রিত
২. সূরা জুমারে কতটি আয়াত আছে?
a) ৭৫
b) ৭৮
c) ৮০
৩. “জুমার” শব্দের অর্থ কী?
a) একতা
b) দল বা গোষ্ঠী
c) বিচার
৪. সূরা জুমারে আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম বারবার এসেছে?
a) الرحمن
b) الواحد
c) العليم
৫. সূরা জুমারে কাফিরদের পরিণতি কী?
a) ক্ষমা
b) জাহান্নাম
c) পরীক্ষা
৬. সূরা জুমারে মুমিনদের কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে?
a) ধৈর্যশীল
b) একনিষ্ঠ
c) সম্পদশালী
৭. সূরা জুমারে দুনিয়ার জীবনকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
a) ছায়া
b) বৃষ্টির পানি
c) ধোঁয়া
৮. সূরা জুমারে আল্লাহর রহমত সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
a) সীমিত
b) অফুরন্ত
c) শুধু মুমিনদের জন্য
৯. সূরা জুমারে নবীজি (সা.)-কে কী করতে বলা হয়েছে?
a) ধৈর্য ধারণ
b) অহী অনুসরণ
c) জিহাদ
১০. সূরা জুমারে শিরকের পরিণতি কী?
a) ক্ষমা
b) চিরস্থায়ী শাস্তি
c) সাময়িক শাস্তি
১১. সূরা জুমারে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য কী বলা হয়েছে?
a) তাওবা
b) কুরবানি
c) হিজরত
১২. সূরা জুমারে কিয়ামতের দিন মানুষ কয়টি দলে বিভক্ত হবে?
a) ১
b) ২
c) ৩
১৩. সূরা জুমারে আল্লাহর ইবাদত কীভাবে করতে বলা হয়েছে?
a) লোক দেখানো
b) একনিষ্ঠভাবে
c) শর্তসাপেক্ষে
১৪. সূরা জুমারে কাফিররা নবীজি (সা.)-কে কী বলত?
a) জাদুকর
b) রাজা
c) দরবেশ
১৫. সূরা জুমারে আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে কোনটি উল্লেখ নেই?
a) পাহাড়
b) নদী
c) সোনা
১৬. সূরা জুমারে মুমিনদের পুরস্কার কী?
a) জান্নাত
b) দুনিয়ার সম্পদ
c) মান-সম্মান
১৭. সূরা জুমারে আল্লাহর কাছে উত্তম বান্দা কে?
a) ধনী
b) তাকওয়াবান
c) বিদ্বান
১৮. সূরা জুমারে মৃত্যুর সময় কাফিরদের অনুভূতি কী?
a) আনন্দ
b) অনুতাপ
c) ভয়হীন
১৯. সূরা জুমারে আল্লাহর ইবাদতের জন্য কী প্রয়োজন?
a) সম্পদ
b) ইখলাস
c) ক্ষমতা
২০. সূরা জুমারে শেষ আয়াতে কী চাওয়া হয়েছে?
a) সম্পদ
b) জান্নাত
c) দীর্ঘ জীবন
২১. সূরা জুমারে আল্লাহর একত্বের প্রমাণ কী?
a) সৃষ্টিনিদর্শন
b) অলৌকিক ঘটনা
c) স্বপ্ন
২২. সূরা জুমারে নবীজি (সা.)-এর দায়িত্ব কী?
a) শুধু সতর্ক করা
b) জবাবদিহি করা
c) শাস্তি দেওয়া
২৩. সূরা জুমারে দুনিয়ার জীবনকে কী বলা হয়েছে?
a) স্থায়ী
b) ক্ষণস্থায়ী
c) মিথ্যা
২৪. সূরা জুমারে আল্লাহর রহমত কাদের জন্য?
a) মুমিন
b) সকলের জন্য
c) শুধু নবী
২৫. সূরা জুমারে কাফিরদের যুক্তি কী ছিল?
a) নবী মিথ্যাবাদী
b) নবী জাদুকর
c) নবী রাজা
সূরা জুমার: গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা ও মূল বিষয়বস্তু
১. শানে নুযূল (নাযিলের প্রেক্ষাপট)
সূরা জুমার মক্কায় নাযিল হয়, যখন কুরাইশ নেতারা ইসলামকে ঠেকানোর জন্য নানা চক্রান্ত করছিল। এ সূরায় তাদের শিরক ও অহংকারের জবাব দেওয়া হয়েছে এবং তাওহীদের দাওয়াত স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
২. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক
- তাওহীদের ঘোষণা: আল্লাহই একমাত্র ইলাহ, তাঁর কোনো শরিক নেই (আয়াত: ৩-৬)।
- আখিরাতের বর্ণনা: কিয়ামতের দিন মানুষ দুটি দলে বিভক্ত হবে (আয়াত: ৭১-৭৩)।
- শিরকের ভয়াবহ পরিণতি: শিরককারীরা জাহান্নামে স্থায়ী হবে (আয়াত: ৬৫)।
- আল্লাহর রহমতের ব্যাপকতা: তিনি গুনাহগারদের তাওবা কবুল করেন (আয়াত: ৫৩)।
- দুনিয়ার জীবনের অস্থায়িত্ব: এটি ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতই চিরস্থায়ী (আয়াত: ২৬)।
৩. সূরাটির শিক্ষা
- আল্লাহর ইবাদতে ইখলাস (একনিষ্ঠতা) আবশ্যক।
- শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম ও অপরাধ।
- মৃত্যুর পূর্বেই তাওবা করা জরুরি, পরে কোনো সুযোগ নেই।
- দুনিয়ার জীবনের মোহে পড়ে আখিরাত ভুলে থাকা ঠিক নয়।
- আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া, তিনি ক্ষমাশীল।
৪. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু
- তাওহীদ: আল্লাহর একত্ব ও ইবাদত কেবল তাঁরই জন্য।
- আখিরাত: কিয়ামত, হিসাব-কিতাব ও জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা।
- শিরকের বিপদ: এটি মানুষকে চিরস্থায়ী ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়।
- দাওয়াত: সত্য গ্রহণের জন্য আহ্বান ও সতর্কতা।
৫. সূরাটির ফযিলত
- হাদীসে এসেছে, সূরা জুমার তিলাওয়াতকারীর জন্য কিয়ামতের দিন নূর হবে।
- এটি তাওহীদ ও আখিরাতের স্মরণ বৃদ্ধি করে।
- শিরক থেকে বেঁচে থাকার উপদেশ রয়েছে।
সূরা জুমারের আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও অর্থ
১. তাওহীদ ও ইখলাস
আয়াত ২:
“নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি। সুতরাং আপনি আল্লাহর ইবাদত করুন, তাঁর জন্যে ধর্মকে খাঁটি করুন।”
শিক্ষা: আল্লাহর ইবাদত একনিষ্ঠভাবে করতে হবে, কোনো শিরক থাকবে না।
২. শিরকের পরিণতি
আয়াত ৬৫:
“আর যদি আপনি শিরক করেন, তবে আপনার সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।”
শিক্ষা: শিরক সব আমল ধ্বংস করে দেয়।
৩. আল্লাহর রহমত
আয়াত ৫৩:
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন।”
শিক্ষা: আল্লাহর ক্ষমা অফুরন্ত, তাওবা করে ফিরে আসতে হবে।
৪. আখিরাতের স্মরণ
আয়াত ৭১:
“আর যারা কুফরি করেছে, তাদের দলকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে…।”
শিক্ষা: কুফরির পরিণতি ভয়াবহ, আখিরাতে কোনো সুযোগ থাকবে না।
৫. দুনিয়ার মোহ
আয়াত ২৬:
“আল্লাহ দুনিয়ার জীবনে তাদের স্বাদ গ্রহণ করালেন, কিন্তু আখিরাতের জীবন তো গুরুত্বের দিক থেকে অনেক বড়।”
শ教育: দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতই মূল লক্ষ্য।
সূরা জুমারের আলোকে জীবন গঠনের উপদেশ
- আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস রাখুন, শিরক থেকে দূরে থাকুন।
- মৃত্যুর আগেই তাওবা করুন, আখিরাতের প্রস্তুতি নিন।
- দুনিয়ার মোহে না পড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করুন।
- আল্লাহর রহমত থেকে কখনো নিরাশ হবেন না।
- সৎকর্মশীলদের দলভুক্ত হওয়ার জন্য দোয়া করুন।
সূরা জুমার আমাদেরকে তাওহীদের পথে অবিচল থাকতে এবং শিরকের ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে সতর্ক হতে শেখায়। এটি আল্লাহর অসীম রহমত ও ক্ষমার বার্তা দিয়ে হৃদয়কে প্রাণবন্ত করে।