You are currently viewing সূরা জাসিয়া সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত
সূরা জাসিয়া

সূরা জাসিয়া সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত

সূরা জাসিয়া এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা জাসিয়া সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।

সূরা জাসিয়া সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ

সূরা জাসিয়া সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

১. সূরা জাসিয়া মক্কী না মাদানী সূরা?

উত্তর: মক্কী সূরা।

২. সূরা জাসিয়া কত নম্বর সূরা?

উত্তর: ৪৫ নম্বর সূরা।

৩. সূরা জাসিয়ার আয়াত সংখ্যা কত?

উত্তর: ৩৭টি আয়াত।

৪. সূরা জাসিয়ার অন্য নাম কী?

উত্তর: “আশ-শারী‘আহ” বা “আদ-দাহর”।

৫. “জাসিয়া” শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: “জাসিয়া” অর্থ “হাঁটু গেড়ে বসা” (কিয়ামতের দিন মানুষ হাঁটু গেড়ে উপস্থিত হবে)।

৬. সূরা জাসিয়ার মূল বিষয় কী?

উত্তর: তাওহীদ, আখিরাতের বিশ্বাস, কুরআনের সত্যতা ও কাফিরদের পরিণতি।

৭. সূরা জাসিয়ার প্রথম আয়াতে কী বলা হয়েছে?

উত্তর:
“হা-মীম। এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।”

আরও পড়তে পারেন-- সূরা কাসাস সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন এবং MCQ

৮. সূরা জাসিয়াতে কিয়ামতের দিন কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে?

উত্তর: সেদিন সব মানুষ হাঁটু গেড়ে উপস্থিত হবে এবং তাদের আমলনামা দেওয়া হবে।

৯. সূরা জাসিয়াতে আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে কোনটি উল্লেখিত হয়েছে?

উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, বৃষ্টি, ফসল, প্রাণী সৃষ্টি ইত্যাদি।

১০. সূরা জাসিয়াতে কাফিরদের কী শাস্তির কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: জাহান্নামের শাস্তি এবং লাঞ্ছনা।

১১. সূরা জাসিয়াতে কোন নবীর কথা উল্লেখ আছে?

উত্তর: বনি ইসরাইলের কথা উল্লেখ আছে, তবে সরাসরি কোনো নবীর নাম নেই।

১২. সূরা জাসিয়াতে মুমিনদের কী পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: জান্নাত ও আল্লাহর ক্ষমা।

১৩. সূরা জাসিয়ার ২৩ নম্বর আয়াতে কী বলা হয়েছে?

উত্তর:
“তুমি কি তার কথা দেখনি, যে নিজ প্রবৃত্তিকে উপাস্য করে নিয়েছে?”

১৪. সূরা জাসিয়াতে আল্লাহর আয়াতগুলোকে কাফিররা কীভাবে গ্রহণ করে?

উত্তর: তারা অবজ্ঞা ও অহংকার করে।

১৫. সূরা জাসিয়াতে মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

উত্তর: মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পুনরায় তাকে জীবিত করা হবে।

১৬. সূরা জাসিয়াতে আল্লাহর কিতাবকে কী বলা হয়েছে?

উত্তর: হিদায়াত ও রহমত।

১৭. সূরা জাসিয়াতে মৃত্যুর পর কী হবে?

উত্তর: পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশ।

১৮. সূরা জাসিয়াতে কাফিররা কিসকে ভিত্তিহীন মনে করে?

উত্তর: আখিরাতকে।

১৯. সূরা জাসিয়ার শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?

উত্তর:
“সমস্ত প্রশংসা আসমান-জমিনের রব আল্লাহর জন্য। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”

২০. সূরা জাসিয়া পড়ার ফজিলত কী?

উত্তর: এটি কিয়ামতের অবস্থা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ঈমান বৃদ্ধি করে।

সূরা জাসিয়া সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন)

১. সূরা জাসিয়া কত নম্বর সূরা?

  1. a) ৪০
    b) ৪৫ ✅
    c) ৫০
    d) ৫৫

২. সূরা জাসিয়ার আয়াত সংখ্যা কত?

  1. a) ৩০
    b) ৩৭ ✅
    c) ৪০
    d) ৪৫

৩. “জাসিয়া” শব্দের অর্থ কী?

  1. a) দাঁড়ানো
    b) হাঁটু গেড়ে বসা ✅
    c) দৌড়ানো
    d) ঘুমানো

৪. সূরা জাসিয়া কোন ধরনের সূরা?

  1. a) মাদানী
    b) মক্কী ✅
    c) উভয়টি
    d) কোনোটিই নয়

৫. সূরা জাসিয়ার অন্য নাম কী?

  1. a) আল-ফাতিহা
    b) আশ-শারী‘আহ ✅
    c) আল-মুলক
    d) আল-কাহফ

৬. সূরা জাসিয়ার প্রথম আয়াতে কী আছে?

  1. a) বিসমিল্লাহ
    b) হা-মীম ✅
    c) আলিফ-লাম-মীম
    d) ইয়া-সীন

৭. সূরা জাসিয়াতে কার কথা উল্লেখ নেই?

  1. a) মুমিন
    b) কাফির
    c) নবী মুসা ✅
    d) ফেরেশতা

৮. সূরা জাসিয়াতে কাফিরদের শাস্তি কী?

  1. a) জান্নাত
    b) জাহান্নাম ✅
    c) ক্ষমা
    d) ধন-সম্পদ

৯. সূরা জাসিয়াতে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে কী উল্লেখিত হয়েছে?

  1. a) আকাশ ✅
    b) গাছ
    c) পাহাড়
    d) সবকিছু ✅

১০. সূরা জাসিয়াতে মানুষের সৃষ্টি কী থেকে?

  1. a) আগুন
    b) মাটি ✅
    c) পানি
    d) আলো

১১. সূরা জাসিয়াতে আল্লাহর কিতাব কী হিসেবে বর্ণিত?

  1. a) শাস্তি
    b) হিদায়াত ✅
    c) পরীক্ষা
    d) ধোঁকা

১২. সূরা জাসিয়ার ২৩ নম্বর আয়াতে কী বলা হয়েছে?

  1. a) নামাজ পড়
    b) নিজ প্রবৃত্তিকে উপাস্য না করতে ✅
    c) দান কর
    d) সত্য গ্রহণ কর

১৩. সূরা জাসিয়াতে কিয়ামতের দিন মানুষ কী করবে?

  1. a) দৌড়াবে
    b) হাঁটু গেড়ে বসবে ✅
    c) ঘুমাবে
    d) লুকাবে

১৪. সূরা জাসিয়াতে মুমিনদের পুরস্কার কী?

  1. a) জাহান্নাম
    b) জান্নাত ✅
    c) ধন-সম্পদ
    d) ক্ষমা

১৫. সূরা জাসিয়াতে আল্লাহর গুণবাচক নাম কী আছে?

  1. a) পরাক্রমশালী ✅
    b) দয়ালু
    c) ক্ষমাশীল
    d) সর্বজ্ঞ

১৬. সূরা জাসিয়াতে কাফিররা কিসকে অবজ্ঞা করে?

  1. a) দুনিয়াকে
    b) আল্লাহর আয়াত ✅
    c) সম্পদ
    d) ক্ষমা

১৭. সূরা জাসিয়াতে পুনরুত্থানের কথা বলা হয়েছে?

  1. a) হ্যাঁ ✅
    b) না
    c) কিছুটা
    d) নির্দিষ্ট নয়

১৮. সূরা জাসিয়াতে আল্লাহর কিতাব কেমন?

  1. a) মিথ্যা
    b) সত্য ✅
    c) অসম্পূর্ণ
    d) পরিবর্তনযোগ্য

১৯. সূরা জাসিয়ার শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?

  1. a) আল্লাহর প্রশংসা ✅
    b) শাস্তির কথা
    c) দানের কথা
    d) নামাজের কথা

২০. সূরা জাসিয়া পড়লে কী হয়?

  1. a) গুনাহ মাফ হয়
    b) ঈমান বৃদ্ধি পায় ✅
    c) ধনী হওয়া যায়
    d) সবকিছু

২১. সূরা জাসিয়াতে কোন জাতির কথা বলা হয়েছে?

  1. a) বনি ইসরাইল ✅
    b) আদ
    c) সামুদ
    d) লুত

২২. সূরা জাসিয়াতে আল্লাহর নিদর্শন দেখেও কারা অবিশ্বাস করে?

  1. a) মুমিন
    b) কাফির ✅
    c) ফেরেশতা
    d) নবী

২৩. সূরা জাসিয়াতে মানুষের আমলনামা কীভাবে দেওয়া হবে?

  1. a) ডান হাতে
    b) বাম হাতে
    c) সম্পূর্ণভাবে ✅
    d) গোপনভাবে

২৪. সূরা জাসিয়াতে আল্লাহ কীসের সাক্ষী?

  1. a) মানুষের আমলের ✅
    b) শুধু ইবাদতের
    c) শুধু গুনাহের
    d) কিছুই নয়

২৫. সূরা জাসিয়াতে আল্লাহ কেমন?

  1. a) দুর্বল
    b) পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় ✅
    c) অমনোযোগী
    d) নিরপেক্ষ

✅ সঠিক উত্তরের জন্য চিহ্নিত

এই প্রশ্নোত্তরগুলো সূরা জাসিয়া সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেবে এবং পরীক্ষা বা সাধারণ জ্ঞানের জন্য সহায়ক হবে।

সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই

সূরা জাসিয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও বিস্তারিত বিশ্লেষণ

১. সংক্ষিপ্ত পরিচয়

  • নাম: সূরা জাসিয়া (আরবি: الجاثية)
  • অর্থ: “হাঁটু গেড়ে বসা” (কিয়ামতের দিন মানুষের অবস্থা বোঝাতে)
  • সূরার নম্বর: ৪৫
  • আয়াত সংখ্যা: ৩৭
  • পর্ব: ২৫ (মাক্কী সূরা)
  • নাজিলের ক্রম: ৬৫তম (মক্কায় নাজিল হয়েছে)

২. শানে নুযূল (নাজিলের প্রেক্ষাপট)

সূরা জাসিয়া মক্কী জীবনে নাজিল হয়েছিল, যখন কুরাইশ নেতারা ইসলাম ও রাসূল (ﷺ)-এর দাওয়াতকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করছিল। এই সূরায় তাদের অহংকার, আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকার এবং আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাসের সমালোচনা করা হয়েছে।

৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক

  1. তাওহীদের দলিল: প্রকৃতি ও মানবসৃষ্টিতে আল্লাহর একত্বের প্রমাণ।
  2. আখিরাতের বর্ণনা: কিয়ামতের দিন মানুষের হাঁটু গেড়ে বসার দৃশ্য।
  3. কাফিরদের পরিণতি: জাহান্নামের শাস্তির বিবরণ।
  4. কুরআনের মর্যাদা: এটি হিদায়াত ও রহমত হিসেবে অবতীর্ণ।
  5. মানুষের দায়িত্ব: আমলনামা গ্রহণ ও হিসাব-নিকাশের কথা।

৪. সূরাটির শিক্ষা

  • আল্লাহর নিদর্শনগুলো গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত।
  • আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য।
  • অহংকার ও প্রবৃত্তির অনুসরণ ধ্বংসাত্মক।
  • কুরআন হলো সত্যের আলো, এটি প্রত্যাখ্যানের পরিণতি ভয়াবহ।

৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু

✅ তাওহীদ: আল্লাহর একত্ব ও ক্ষমতার প্রমাণ (আয়াত ৩-৬)।
✅ আখিরাত: পুনরুত্থান, হাশর ও হিসাব (আয়াত ২৬-২৮)।
✅ কাফিরদের মনোভাব: নিদর্শন অস্বীকার ও অহংকার (আয়াত ৭-৯)।
✅ কুরআনের সত্যতা: এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াত (আয়াত ২০-২২)।
✅ ইতিহাসের শিক্ষা: পূর্ববর্তী জাতিদের শাস্তির উদাহরণ (আয়াত ১৬-১৮)।

৬. সূরাটির ফযিলত

  • কিয়ামতের স্মরণ: সূরা জাসিয়া পড়লে আখিরাতের প্রস্তুতি বৃদ্ধি পায়।
  • ঈমানী শক্তি বাড়ে: আল্লাহর কুদরত ও ন্যায়বিচারের কথা স্মরণ হয়।
  • সুরক্ষা: নিয়মিত তিলাওয়াতকারীকে আল্লাহ অহংকার থেকে রক্ষা করেন।

৭. সূরার আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও অর্থ

  1. তাওহীদ:
    আয়াত ৩৬:
    “অতএব, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আসমান-জমিনের রব। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
  2. আখিরাত:
    আয়াত ২৮:
    “তুমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখবে। প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের আমলনামার দিকে ডাকা হবে।”
  3. কাফিরদের শাস্তি:
    আয়াত ১০:
    “তাদের জন্য অপেক্ষা করছে লাঞ্ছনা, আর তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।”
  4. কুরআনের মর্যাদা:
    আয়াত ২০:
    “এটি (কুরআন) মানুষের জন্য হিদায়াত ও রহমত, যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।”
  5. প্রবৃত্তির অনুসরণের বিপদ:
    আয়াত ২৩:
    “তুমি কি তার কথা দেখনি, যে নিজ প্রবৃত্তিকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ তাকে জ্ঞান দিয়েও পথভ্রষ্ট করেছেন।”

সারসংক্ষেপ:

সূরা জাসিয়া মক্কায় নাজিল হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যাতে তাওহীদ, আখিরাত, কুরআনের সত্যতা ও কাফিরদের পরিণতি বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এটি মানুষকে আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করতে ও আখিরাতের প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে। নিয়মিত এই সূরা তিলাওয়াত করলে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং অহংকার থেকে বাঁচার শিক্ষা মেলে।