সূরা আল-ইসরা (بني إسرائيل) কুরআনের ১৭তম সূরা এবং এটি মক্কায় নাযিল হয়েছে। এ সূরাটি ১১১টি আয়াত নিয়ে গঠিত। সূরা ইসরা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ , সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই
সূরা ইসরা
সূরা আল-ইসরা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর:
১. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরা কুরআনের কততম সূরা?
উত্তর: ১৭তম সূরা।
২. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরা মক্কায় নাযিল হয়েছে নাকি মদিনায়?
উত্তর: মক্কায় নাযিল হয়েছে।
৩. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরা কতটি আয়াত নিয়ে গঠিত?
উত্তর: ১১১টি আয়াত।
৪. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরার অপর নাম কী?
উত্তর: বনি ইসরাইল।
৫. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় কোন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে?
উত্তর: নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মিরাজের ঘটনা।
৬. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে কতটি নির্দেশনা দিয়েছেন?
উত্তর: ১২টি নির্দেশনা।
৭. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে বনি ইসরাইলকে সতর্ক করেছেন?
উত্তর: তাদের অবাধ্যতা ও পাপের জন্য শাস্তির কথা বলে।
৮. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য কী ধরনের আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন?
উত্তর: ন্যায়বিচার, সদাচরণ ও ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন।
৯. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের আত্মার কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: আত্মাকে আল্লাহর আমানত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
১০. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে কুরআনের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: কুরআনকে হিদায়াত ও রহমত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১১. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে দুনিয়ার জীবনের মোহ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন?
উত্তর: দুনিয়ার জীবনের মোহ ক্ষণস্থায়ী এবং পরকালই চিরস্থায়ী বলে উল্লেখ করেছেন।
১২. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: মানুষকে মাটির থেকে সৃষ্টি করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
১৩. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: মৃত্যু ও পুনরুত্থান আল্লাহর ইচ্ছাধীন বলে উল্লেখ করেছেন।
১৪. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের ইবাদতের কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
১৫. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের সম্পদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন?
উত্তর: সম্পদকে আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
১৬. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের আচরণের কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: উত্তম আচরণ ও ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন।
১৭. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
১৮. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলার দায়িত্ব দিয়েছেন।
১৯. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: দুনিয়ার জীবনে মানুষকে পরীক্ষা করা হয় বলে উল্লেখ করেছেন।
২০. প্রশ্ন: সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের সফলতার কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চললে সফলতা লাভ করা যায় বলে উল্লেখ করেছেন।
সূরা আল-ইসরা সম্পর্কে ২৫টি MCQ:
১. সূরা আল-ইসরা কুরআনের কততম সূরা?
- a) ১৫তম
- b) ১৭তম
- c) ২০তম
- d) ২৫তম
উত্তর: b) ১৭তম
২. সূরা আল-ইসরা কোন ধরনের সূরা?
- a) মাদানি
- b) মক্কি
- c) মিশ্র
- d) কোনোটিই নয়
উত্তর: b) মক্কি
৩. সূরা আল-ইসরার অপর নাম কী?
- a) সূরা আল-ফাতিহা
- b) সূরা বনি ইসরাইল
- c) সূরা আল-কাহাফ
- d) সূরা আন-নূর
উত্তর: b) সূরা বনি ইসরাইল
৪. সূরা আল-ইসরায় কতটি আয়াত রয়েছে?
- a) ১০০
- b) ১১১
- c) ১২০
- d) ১৫০
উত্তর: b) ১১১
৫. সূরা আল-ইসরায় কোন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে?
- a) হিজরত
- b) মিরাজ
- c) বদর যুদ্ধ
- d) উহুদ যুদ্ধ
উত্তর: b) মিরাজ
৬. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে কতটি নির্দেশনা দিয়েছেন?
- a) ১০টি
- b) ১২টি
- c) ১৫টি
- d) ২০টি
উত্তর: b) ১২টি
৭. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের আত্মাকে কী হিসেবে উল্লেখ করেছেন?
- a) আমানত
- b) পরীক্ষা
- c) শাস্তি
- d) পুরস্কার
উত্তর: a) আমানত
৮. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কুরআনকে কী হিসেবে বর্ণনা করেছেন?
- a) শাস্তি
- b) হিদায়াত
- c) পরীক্ষা
- d) মোহ
উত্তর: b) হিদায়াত
৯. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার জীবনকে কী হিসেবে বর্ণনা করেছেন?
- a) চিরস্থায়ী
- b) ক্ষণস্থায়ী
- c) মোহ
- d) পুরস্কার
উত্তর: b) ক্ষণস্থায়ী
১০. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষকে কী থেকে সৃষ্টি করেছেন?
- a) আগুন
- b) মাটি
- c) পানি
- d) আলো
উত্তর: b) মাটি
১১. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের মৃত্যু ও পুনরুত্থানকে কী হিসেবে উল্লেখ করেছেন?
- a) মানুষের ইচ্ছাধীন
- b) আল্লাহর ইচ্ছাধীন
- c) প্রকৃতির নিয়ম
- d) কোনোটিই নয়
উত্তর: b) আল্লাহর ইচ্ছাধীন
১২. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের ইবাদতের জন্য কাকে নির্দেশ দিয়েছেন?
- a) ফেরেশতাদের
- b) নবী-রাসূলদের
- c) শুধুমাত্র আল্লাহকে
- d) মূর্তিদের
উত্তর: c) শুধুমাত্র আল্লাহকে
১৩. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের সম্পদকে কী হিসেবে উল্লেখ করেছেন?
- a) পুরস্কার
- b) পরীক্ষা
- c) শাস্তি
- d) মোহ
উত্তর: b) পরীক্ষা
১৪. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের আচরণের জন্য কী নির্দেশ দিয়েছেন?
- a) উত্তম আচরণ
- b) খারাপ আচরণ
- c) মিথ্যা বলা
- d) কোনোটিই নয়
উত্তর: a) উত্তম আচরণ
১৫. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টির কী হিসেবে উল্লেখ করেছেন?
- a) নিকৃষ্ট জীব
- b) সেরা জীব
- c) সাধারণ জীব
- d) কোনোটিই নয়
উত্তর: b) সেরা জীব
১৬. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের দায়িত্ব কী বলে উল্লেখ করেছেন?
- a) আল্লাহর নির্দেশনা মানা
- b) সম্পদ অর্জন করা
- c) মিথ্যা বলা
- d) কোনোটিই নয়
উত্তর: a) আল্লাহর নির্দেশনা মানা
১৭. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের পরীক্ষার কথা কীভাবে উল্লেখ করেছেন?
- a) দুনিয়ার জীবনে
- b) পরকালে
- c) উভয়টিই
- d) কোনোটিই নয়
উত্তর: a) দুনিয়ার জীবনে
১৮. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের সফলতার জন্য কী নির্দেশ দিয়েছেন?
- a) আল্লাহর নির্দেশনা মানা
- b) সম্পদ অর্জন করা
- c) মিথ্যা বলা
- d) কোনোটিই নয়
উত্তর: a) আল্লাহর নির্দেশনা মানা
১৯. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের মর্যাদার কথা কীভাবে উল্লেখ করেছেন?
- a) সৃষ্টির সেরা জীব
- b) নিকৃষ্ট জীব
- c) সাধারণ জীব
- d) কোনোটিই নয়
উত্তর: a) সৃষ্টির সেরা জীব
২০. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের আত্মাকে কী হিসেবে উল্লেখ করেছেন?
- a) আমানত
- b) পরীক্ষা
- c) শাস্তি
- d) পুরস্কার
উত্তর: a) আমানত
২১. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা কুরআনকে কী হিসেবে বর্ণনা করেছেন?
- a) হিদায়াত
- b) শাস্তি
- c) পরীক্ষা
উত্তর: d) মোহ
উত্তর: a) হিদায়াত
২২. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার জীবনকে কী হিসেবে বর্ণনা করেছেন?
- a) চিরস্থায়ী
- b) ক্ষণস্থায়ী
- c) মোহ
- d) পুরস্কার
উত্তর: b) ক্ষণস্থায়ী
২৩. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষকে কী থেকে সৃষ্টি করেছেন?
- a) আগুন
- b) মাটি
- c) পানি
- d) আলো
উত্তর: b) মাটি
২৪. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের মৃত্যু ও পুনরুত্থানকে কী হিসেবে উল্লেখ করেছেন?
- a) মানুষের ইচ্ছাধীন
- b) আল্লাহর ইচ্ছাধীন
- c) প্রকৃতির নিয়ম
- d) কোনোটিই নয়
উত্তর: b) আল্লাহর ইচ্ছাধীন
২৫. সূরা আল-ইসরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের ইবাদতের জন্য কাকে নির্দেশ দিয়েছেন?
- a) ফেরেশতাদের
- b) নবী-রাসূলদের
- c) শুধুমাত্র আল্লাহকে
- d) মূর্তিদের
উত্তর: c) শুধুমাত্র আল্লাহকে
শানে নুযূল (নাযিলের প্রেক্ষাপট):
সূরা আল-ইসরা মক্কী জীবনের শেষ দিকে নাযিল হয়েছিল। এই সময় মুসলিমরা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। মক্কার কাফিররা ইসলাম ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা করছিল। এই সূরায় আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের ধৈর্য ধারণ করতে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে উৎসাহিত করেছেন। এছাড়াও, বনি ইসরাইলের ইতিহাস ও তাদের অবাধ্যতার পরিণতি বর্ণনা করে মুসলিমদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে।
সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক:
১. মিরাজের ঘটনা: এই সূরায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মিরাজের ঘটনা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. বনি ইসরাইলের ইতিহাস: বনি ইসরাইলের অবাধ্যতা, তাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামত এবং তাদের শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
৩. মানবজাতির জন্য নির্দেশনা: এই সূরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য নৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
৪. কুরআনের মর্যাদা: কুরআনকে হিদায়াত ও রহমত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
৫. আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস: দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা এবং আখিরাতের চিরস্থায়ীত্বের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সূরাটির শিক্ষা:
১. আল্লাহর একত্ববাদ: শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক না করা।
২. ন্যায়বিচার ও সদাচরণ: মানুষের সাথে ন্যায়বিচার ও উত্তম আচরণ করা।
৩. ধৈর্য ও ভরসা: কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।
৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা: আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের অধিকার আদায় করা।
৫. দুনিয়ার মোহ থেকে সতর্কতা: দুনিয়ার জীবনের মোহ থেকে সতর্ক থাকা এবং আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়া।
৬. কুরআনের অনুসরণ: কুরআনকে হিদায়াত হিসেবে গ্রহণ করা এবং এর নির্দেশনা অনুসরণ করা।
সূরাটির মূল বিষয়বস্তু:
১. তাওহীদ ও ইবাদত: আল্লাহর একত্ববাদ এবং শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ।
২. নৈতিক ও সামাজিক নির্দেশনা: ন্যায়বিচার, সদাচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার।
৩. বনি ইসরাইলের ইতিহাস: তাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামত, তাদের অবাধ্যতা এবং এর পরিণতি।
৪. মিরাজের ঘটনা: নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মিরাজের মাধ্যমে আল্লাহর মহিমা প্রকাশ।
৫. কুরআনের মর্যাদা: কুরআনকে হিদায়াত ও রহমত হিসেবে বর্ণনা এবং এর অনুসরণের আহ্বান।
৬. দুনিয়া ও আখিরাতের সমন্বয়: দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা এবং আখিরাতের চিরস্থায়ীত্বের প্রতি গুরুত্ব।
৭. মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য: আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলা এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।
সূরা আল-ইসরা মুসলিমদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান উপস্থাপন করে, যা ব্যক্তিগত, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সকল দিককে স্পর্শ করে। এই সূরার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করেছেন এবং ভুল পথ থেকে সতর্ক করেছেন।
সূরা ইসরা (বনি ইসরাইল) কুরআনের ১৭তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১১১। এই সূরাটি মানুষের আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। নিচে আপনার উল্লেখিত আয়াতগুলোর অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
সূরা ইসরা আয়াত ৮১
আয়াত:
وَ قُلْ جَآءَ الْحَقُّ وَ زَهَقَ الْبَاطِلُ، اِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوْقًا
অর্থ:
এবং বলুন, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। সত্য চিরস্থায়ী এবং মিথ্যা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এটি মুমিনদেরকে সত্যের পথে অবিচল থাকার প্রেরণা দেয়।
সূরা ইসরা আয়াত ৯
আয়াত:
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ
অর্থ:
নিশ্চয় এই কুরআন সেই পথের দিকে পরিচালিত করে, যা সর্বাধিক সুদৃঢ়।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে কুরআনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআন মানুষকে সঠিক ও সুদৃঢ় পথের দিকে পরিচালিত করে, যা জীবনের সব ক্ষেত্রে সফলতা এনে দেয়।
সূরা ইসরা আয়াত
وَ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِي الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ اِلَّا اِيَّاهُ
অর্থ:
যখন সমুদ্রে তোমাদের বিপদ আপতিত হয়, তখন যাদের তোমরা ডাকতে, তারা সবাই হারিয়ে যায়, কেবল তিনি (আল্লাহ) ছাড়া।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মানুষের অসহায়ত্ব ও আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা বর্ণনা করা হয়েছে। বিপদে মানুষ শুধু আল্লাহকেই স্মরণ করে এবং তিনিই একমাত্র মুক্তিদাতা।
সূরা ইসরা, আয়াত ১
سُبْحَانَ الَّذِيْ اَسْرٰى بِعَبْدِهٖ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَا
অর্থ:
পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে গেছেন।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এটি আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও নবীর মর্যাদার প্রমাণ।
সূরা ইসরা আয়াত ৩৬
وَ لَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ، اِنَّ السَّمْعَ وَ الْبَصَرَ وَ الْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْـُٔوْلًا
অর্থ:
এবং যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তর, এ সবই জিজ্ঞাসিত হবে।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে জ্ঞানহীনভাবে কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানুষকে তার কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
সূরা ইসরা আয়াত ৩২
وَ لَا تَقْرَبُوا الزِّنٰى، اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً وَ سَآءَ سَبِيْلًا
অর্থ:
এবং ব্যভিচারের নিকটেও যেও না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে ব্যভিচার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের মূল কারণ এবং আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা।
সূরা ইসরা আয়াত ৮২
وَ نُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
অর্থ:
এবং আমরা কুরআন থেকে এমন বিষয় নাযিল করি, যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে কুরআনের মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআন মানুষের আত্মিক ও শারীরিক রোগের জন্য নিরাময় এবং আল্লাহর রহমতের উৎস।
সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত:
১. তাওহিদ ও আল্লাহর একত্ব:
আয়াত ১:
سُبْحَانَ الَّذِيْ اَسْرٰى بِعَبْدِهٖ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَا
অর্থ:
পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে গেছেন।
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও একত্বের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে।
২. কুরআনের মর্যাদা:
আয়াত ৯:
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ
অর্থ:
নিশ্চয় এই কুরআন সেই পথের দিকে পরিচালিত করে, যা সর্বাধিক সুদৃঢ়।
ব্যাখ্যা:
কুরআন মানুষের জন্য সর্বোত্তম পথনির্দেশক।
৩. নৈতিক নির্দেশনা:
আয়াত ৩২:
وَ لَا تَقْرَبُوا الزِّنٰى، اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً وَ سَآءَ سَبِيْلًا
অর্থ:
এবং ব্যভিচারের নিকটেও যেও না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ।
ব্যাখ্যা:
ব্যভিচার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪. জ্ঞান ও বুদ্ধির ব্যবহার:
আয়াত ৩৬:
وَ لَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ، اِنَّ السَّمْعَ وَ الْبَصَرَ وَ الْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْـُٔوْلًا
অর্থ:
এবং যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তর, এ সবই জিজ্ঞাসিত হবে।
ব্যাখ্যা:
জ্ঞানহীনভাবে কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ।
৫. আল্লাহর উপর নির্ভরতা:
আয়াত ৬৭:
وَ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِي الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ اِلَّا اِيَّاهُ
অর্থ:
যখন সমুদ্রে তোমাদের বিপদ আপতিত হয়, তখন যাদের তোমরা ডাকতে, তারা সবাই হারিয়ে যায়, কেবল তিনি (আল্লাহ) ছাড়া।
ব্যাখ্যা:
বিপদে আল্লাহর উপরই সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়ার শিক্ষা।
এই আয়াতগুলো সূরা ইসরার মূল শিক্ষা ও নির্দেশনাকে প্রতিফলিত করে।