সূরা ইয়াসিন : সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু, ফযিলত ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত সহ সূরা ইয়াসিন সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন উত্তর দেয়া হলো । আশাকরি সূরাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সূরা ইয়াসিন
সূরা ইয়াসিন সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ
সূরা ইয়াসিন সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. সূরা ইয়াসিন কুরআনের কত নম্বর সূরা?
উত্তর: ৩৬ নম্বর সূরা।
২. সূরা ইয়াসিন মক্কী না মাদানী সূরা?
উত্তর: মক্কী সূরা।
৩. সূরা ইয়াসিনে কয়টি আয়াত আছে?
উত্তর: ৮৩টি আয়াত।
৪. সূরা ইয়াসিনের প্রথম আয়াত কী?
উত্তর: “ইয়া-সীন” (يٰسٓ)।
৫. সূরা ইয়াসিনকে কুরআনের কী বলা হয়?
উত্তর: “কুরআনের হৃদয়” (হাদীসে এসেছে)।
৬. সূরা ইয়াসিনে কীভাবে কিয়ামতের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: মৃতদের পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশের কথা বলা হয়েছে।
৭. সূরা ইয়াসিনে কোন নবীর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: হযরত নূহ (আ.) ও আনসারদের কাহিনী (আয়াত ১৩-৩২)।
৮. সূরা ইয়াসিনে আল্লাহর কোন গুণের কথা বেশি বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর একত্ববাদ ও ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে।
৯. সূরা ইয়াসিনে কাফিরদের কী শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
১০. সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াতের ফজিলত কী?
উত্তর: হাদীসে আছে, এটি মৃত ব্যক্তির জন্য শান্তি আনে।
১১. সূরা ইয়াসিনে আল্লাহ কীভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন?
উত্তর: মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন (আয়াত ৭৭-৭৯)।
১২. সূরা ইয়াসিন পড়লে কয়টি নেকি পাওয়া যায়?
উত্তর: হাদীসে আছে, এটি ১০ বার কুরআন পড়ার সমান সওয়াব।
১৩. সূরা ইয়াসিনে কীভাবে প্রকৃতির নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: গাছ, ফল, রাত-দিনের পরিবর্তন ইত্যাদি নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে।
১৪. সূরা ইয়াসিনে মৃত্যুর পর কী হবে বলা হয়েছে?
উত্তর: পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশের কথা বলা হয়েছে।
১৫. সূরা ইয়াসিনের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: “সুবহানাল্লাহি আম্মা ইয়াসিফুন” (আল্লাহ পবিত্র তাদের বর্ণনা থেকে)।
১৬. সূরা ইয়াসিনে আল্লাহ কীভাবে মানুষকে সতর্ক করেছেন?
উত্তর: কাফিরদের পরিণাম দেখিয়ে সতর্ক করেছেন।
১৭. সূরা ইয়াসিনে কীভাবে ঈমানদারদের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
১৮. সূরা ইয়াসিনে আল্লাহর কুদরতের কোন উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: মৃত জমিনকে জীবিত করার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
১৯. সূরা ইয়াসিন পড়ার বিশেষ সময় কী?
উত্তর: রাতে পড়ার বিশেষ ফজিলত আছে।
২০. সূরা ইয়াসিনের মূল শিক্ষা কী?
উত্তর: তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাস করা।
সূরা ইয়াসিন সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)
১. সূরা ইয়াসিন কুরআনের কততম সূরা?
- a) ৩৫
b) ৩৬
c) ৩৭
d) ৩৮
২. সূরা ইয়াসিন কোন ধরনের সূরা?
- a) মাদানী
b) মক্কী
c) উভয়টি
d) কোনোটিই নয়
৩. সূরা ইয়াসিনে কয়টি আয়াত আছে?
- a) ৮১
b) ৮৩
c) ৮৫
d) ৮৭
৪. সূরা ইয়াসিনের প্রথম শব্দ কী?
- a) আলিফ-লাম-মীম
b) ইয়া-সীন
c) কাফ-হা-ইয়া-আইন-সাদ
d) ত্বা-সীন
৫. সূরা ইয়াসিনকে কী বলা হয়?
- a) কুরআনের হৃদয়
b) কুরআনের আলো
c) কুরআনের সূর্য
d) কুরআনের চাঁদ
৬. সূরা ইয়াসিনে কার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে?
- a) হযরত মুসা (আ.)
b) হযরত ঈসা (আ.)
c) হযরত নূহ (আ.)
d) হযরত ইব্রাহীম (আ.)
৭. সূরা ইয়াসিনে কাফিরদের শাস্তি কী বলা হয়েছে?
- a) জান্নাত
b) জাহান্নাম
c) পৃথিবীর শাস্তি
d) ক্ষমা
৮. সূরা ইয়াসিনে আল্লাহর কোন গুণের কথা বলা হয়েছে?
- a) ক্ষমাশীল
b) রহমতকারী
c) এক ও অদ্বিতীয়
d) সকল গুণ
৯. সূরা ইয়াসিন পড়লে কত নেকি পাওয়া যায়?
- a) ৫ বার কুরআন তিলাওয়াতের সমান
b) ১০ বার কুরআন তিলাওয়াতের সমান
c) ২০ বার
d) ৩০ বার
১০. সূরা ইয়াসিনে আল্লাহ মানুষকে কী থেকে সৃষ্টি করেছেন?
- a) আলো থেকে
b) আগুন থেকে
c) মাটি থেকে
d) পানি থেকে
১১. সূরা ইয়াসিনে প্রকৃতির কোন নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে?
- a) সূর্য ও চন্দ্র
b) গাছ-পালা
c) রাত-দিন
d) সবকিছু
১২. সূরা ইয়াসিনের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
- a) “আল্লাহু আকবার”
b) “সুবহানাল্লাহি আম্মা ইয়াসিফুন”
c) “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”
d) “আলহামদুলিল্লাহ”
১৩. সূরা ইয়াসিনে মৃত্যুর পর কী হবে বলা হয়েছে?
- a) সব শেষ
b) পুনরুত্থান
c) শুধু কবরের শাস্তি
d) কিছুই না
১৪. সূরা ইয়াসিনে ঈমানদারদের কী দেওয়া হয়েছে?
- a) শাস্তি
b) জান্নাতের সুসংবাদ
c) ধন-সম্পদ
d) ক্ষমা
১৫. সূরা ইয়াসিনে আল্লাহর কুদরতের উদাহরণ কী?
- a) পাহাড় সৃষ্টি
b) মৃত জমিনকে জীবিত করা
c) নদী সৃষ্টি
d) আকাশ সৃষ্টি
১৬. সূরা ইয়াসিন পড়ার বিশেষ সময় কোনটি?
- a) সকাল
b) দুপুর
c) রাত
d) বিকাল
১৭. সূরা ইয়াসিনের মূল শিক্ষা কী?
- a) দান করা
b) নামাজ পড়া
c) তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাস
d) রোজা রাখা
১৮. সূরা ইয়াসিনে কোন শহরের বাসিন্দাদের কথা বলা হয়েছে?
- a) মক্কা
b) মদিনা
c) আনতাকিয়া
d) জেরুজালেম
১৯. সূরা ইয়াসিনে আল্লাহ কীভাবে মানুষকে সতর্ক করেছেন?
- a) নবীদের মাধ্যমে
b) ফেরেশতাদের মাধ্যমে
c) জিনদের মাধ্যমে
d) প্রাণীদের মাধ্যমে
২০. সূরা ইয়াসিনে আল্লাহর কোন সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে?
- a) ফেরেশতা
b) মানুষ
c) জিন
d) সবকিছু
২১. সূরা ইয়াসিনে আল্লাহর কতজন রাসূলের কথা বলা হয়েছে?
- a) ১ জন
b) ২ জন
c) ৩ জন
d) ৪ জন
২২. সূরা ইয়াসিনে কাফিররা কীভাবে নবীকে প্রত্যাখ্যান করেছিল?
- a) হত্যা করে
b) উপহাস করে
c) জেলে ভরে
d) দেশ থেকে তাড়িয়ে
২৩. সূরা ইয়াসিনে আল্লাহর কোন নিদর্শনকে “আয়াত” বলা হয়েছে?
- a) কুরআন
b) প্রকৃতি
c) নবী
d) ফেরেশতা
২৪. সূরা ইয়াসিন পড়লে মৃত ব্যক্তির কী হয়?
- a) শাস্তি কমে
b) শান্তি পায়
c) কবর প্রশস্ত হয়
d) মর্যাদা বৃদ্ধি পায়
২৫. সূরা ইয়াসিনের ভাষা কী?
- a) সরল ও স্পষ্ট
b) কঠিন
c) রূপক
d) গাণিতিক
এই প্রশ্নোত্তরগুলো সূরা ইয়াসিনের মূল বিষয়বস্তু ও ফজিলত বুঝতে সহায়ক হবে।
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই
সূরা ইয়াসিন: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু, ফযিলত ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত
১. সংক্ষিপ্ত পরিচয়
- নাম: সূরা ইয়াসিন (سورة يس)।
- অবস্থান: কুরআনের ৩৬তম সূরা।
- আয়াত সংখ্যা: ৮৩টি।
- নাযিলের স্থান: মক্কায় (মক্কী সূরা)।
- বিশেষত্ব: হাদীসে একে “কুরআনের হৃদয়” বলা হয়েছে।
২. শানে নুযূল (প্রেক্ষাপট)
সূরা ইয়াসিন মক্কী জীবনে নাযিল হয়, যখন কুরাইশ নেতৃবৃন্দ ইসলাম ও রাসূল (ﷺ)-কে কঠোরভাবে প্রতিহত করছিল। এটি কাফিরদের অহংকার, সত্য প্রত্যাখ্যান এবং পরকালীন শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বিশেষত, এ সূরায় আনতাকিয়া (أنطاكية) নগরীর তিন জন রাসূলের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, যারা তাদের সম্প্রদায়কে আল্লাহর পথে ডাকেন কিন্তু উপহাস ও শাস্তির শিকার হন।
৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক
- তাওহীদ ও রিসালাত: আল্লাহর একত্ববাদ ও নবীদের প্রতি ঈমানের দাবি।
- কিয়ামত ও পুনরুত্থান: মৃত্যুর পর জীবিত হওয়া ও হিসাব-নিকাশের বর্ণনা।
- প্রকৃতির নিদর্শন: সৃষ্টিজগতের মাধ্যমে আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ।
- কাফিরদের পরিণতি: জাহান্নামের শাস্তির বিবরণ।
- ঈমানদারদের পুরস্কার: জান্নাতের সুসংবাদ।
৪. সূরাটির শিক্ষা
- আল্লাহর একত্বে অবিচল বিশ্বাস রাখা।
- নবীদের শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া।
- আখিরাতের জীবনে বিশ্বাস করে ভালো কাজ করা।
- প্রকৃতির নিদর্শন থেকে আল্লাহর মহিমা উপলব্ধি করা।
- কাফিরদের ভ্রান্ত পথ থেকে সতর্ক থাকা।
৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু
বিষয় | বিবরণ |
তাওহীদ | আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা ও পালনকর্তা (আয়াত ৩৬-৪০)। |
রিসালাত | নবীদের মাধ্যমে সত্য প্রচার (আয়াত ১৩-২০)। |
আখিরাত | মৃত্যু, পুনরুত্থান ও হিসাব (আয়াত ৫১-৫৮)। |
প্রকৃতির নিদর্শন | সূর্য, চন্দ্র, গাছ-পালা ইত্যাদি (আয়াত ৩৩-৩৫)। |
সতর্কবার্তা | কাফিরদের শাস্তি ও ঈমানদারদের পুরস্কার (আয়াত ৬৩-৬৭)। |
৬. সূরাটির ফযিলত (মর্যাদা)
- হৃদয়ের সূরা: রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই প্রতিটি জিনিসের একটি হৃদয় থাকে, আর কুরআনের হৃদয় হলো সূরা ইয়াসিন।” (তিরমিযী)।
- মৃতের জন্য শান্তি: এটি পাঠ করলে মৃত ব্যক্তির কবরে শান্তি আসে।
- ১০ বার কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব: হাদীসে এসেছে, “যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন পড়ে, তার জন্য ১০ বার কুরআন খতমের সওয়াব লেখা হয়।” (দারেমী)।
- কঠিন সময়ে সহায়ক: বিপদ-আপদে পাঠ করলে আল্লাহ সাহায্য করেন।
- রাতে পাঠের বিশেষ ফজিলত: রাতে পড়লে আল্লাহর রহমত নাযিল হয়।
৭. সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ)
১. তাওহীদ (আল্লাহর একত্ব)
আয়াত ৩৬:
“পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন; যা ভূমি উৎপন্ন করে, তাদের নিজেদের থেকে এবং যা তারা জানে না।”
ব্যাখ্যা: আল্লাহর সৃষ্টি কৌশলের প্রতি ইঙ্গিত, যা তাঁর একত্ব প্রমাণ করে।
২. রিসালাত (নবীদের দাওয়াত)
আয়াত ১৪:
“যখন আমি তাদের নিকট দুইজন রাসূল পাঠালাম, তারা উভয়কে মিথ্যা বলল; অতঃপর আমি তৃতীয় একজন দ্বারা শক্তিশালী করলাম। তারা বলল, ‘নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের দিকে প্রেরিত হয়েছি।'”
ব্যাখ্যা: নবীদের দাওয়াত ও মানুষের অস্বীকৃতির ইতিহাস।
৩. আখিরাত (পুনরুত্থান)
আয়াত ৫২:
“তারা বলবে, ‘হায়! কে আমাদেরকে আমাদের কবর থেকে উঠাল?’ (জবাব হবে) ‘এটা হল দয়াময় আল্লাহর ওয়াদা এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন।'”
ব্যাখ্যা: কিয়ামতের দিন সবাই আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে।
৪. প্রকৃতির নিদর্শন
আয়াত ৩৩:
“মৃত ভূমি তাদের জন্য একটি নিদর্শন; আমি তা জীবিত করি এবং তা থেকে শস্য উৎপন্ন করি, যা তারা আহার করে।”
ব্যাখ্যা: আল্লাহর কুদরতের প্রকাশ মৃত জমিকে জীবিত করার মাধ্যমে।
৫. সতর্কবার্তা (কাফিরদের শাস্তি)
আয়াত ৬৩:
“এটাই জাহান্নাম, যা তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল প্রতিশ্রুত শাস্তি হিসেবে।”
ব্যাখ্যা: কুফরির পরিণাম জাহান্নাম, যা থেকে সতর্ক করা হয়েছে।
উপসংহার
সূরা ইয়াসিন কুরআনের একটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ সূরা, যা তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহের উপর জোর দেয়। এর ফজিলত অপরিসীম, বিশেষত মৃত ব্যক্তির জন্য ইসালে সওয়াব ও জীবদ্দশায় বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য এটি পাঠ করা হয়। সূরাটি মানুষের ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং পরকালীন জীবনের প্রস্তুতিতে উদ্বুদ্ধ করে।
সূরা ইয়াসিন
সূরা ইয়াসিন: পূর্ণাঙ্গ পরিচয় ও বিশ্লেষণ
১. সূরার মৌলিক তথ্য
- নাম: ইয়াসিন (سورة يس)
- অবস্থান: ৩৬তম সূরা
- আয়াত সংখ্যা: ৮৩
- নাযিলের সময়: মক্কী জীবনের মধ্যপর্যায়
- পারার অবস্থান: ২২ ও ২৩তম পারায়
২. নামকরণের কারণ
সূরার শুরুতে “ইয়া-সীন” শব্দ দিয়ে শুরু হওয়ায় এ নামকরণ করা হয়েছে। আলেমদের মতে এটি রাসূল (ﷺ) এর একটি বিশেষ নাম।
৩. শানে নুযূল (প্রেক্ষাপট)
মক্কার কাফিরদের অবিশ্বাস ও রাসূল (ﷺ) কে অস্বীকারের প্রেক্ষাপতে নাযিল হয়। বিশেষভাবে আনতাকিয়া নগরীর তিন রাসূলের ঘটনা উল্লেখ করে সতর্ক করা হয়েছে।
৪. মূল বিষয়বস্তু
- কুরআনের মর্যাদা: (আয়াত ১-১২)
- ঐতিহাসিক উপদেশ: তিন রাসূলের ঘটনা (১৩-৩২)
- প্রকৃতির নিদর্শন: (৩৩-৫০)
- কিয়ামতের বর্ণনা: (৫১-৮৩)
৫. শিক্ষণীয় বিষয়াবলী
- আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা
- নবুয়তের ধারাবাহিকতা
- মৃত্যুপরবর্তী জীবনের বাস্তবতা
- সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নিদর্শন
- কুফরের পরিণাম
৬. বিশেষ ফজিলত
- কুরআনের হৃদয়: রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “প্রত্যেক জিনিসের হৃদয় আছে, কুরআনের হৃদয় হলো ইয়াসিন” (তিরমিযী)
- মৃত্যুশয্যায় পাঠ: সহজ মৃত্যুর জন্য
- কবর যিয়ারতকালীন: মৃতের জন্য রহমত
- রাত্রিকালীন পাঠ: বিশেষ সওয়াব
- ১০ কুরআন খতমের সমতুল্য: (দারেমী)
৭. গুরুত্বপূর্ণ আয়াতসমূহ
আয়াত নং | বিষয় | বাংলা অনুবাদ |
১২ | আমলনামার রেকর্ড | “নিশ্চয় আমি মৃতকে জীবিত করব এবং তারা যা করেছে ও যা রেখে গেছে তা লিপিবদ্ধ করব” |
৩৬ | সৃষ্টির জোড়া ব্যবস্থা | “পবিত্র তিনি যিনি সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন” |
৫৮ | জান্নাতীদের সালাম | “সালাম, রবের পক্ষ থেকে কথিত বাক্য” |
৭৯ | পুনরুত্থানের প্রমাণ | “তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, তিনি পুনরায় সৃষ্টি করবেন” |
৮. বাস্তব জীবনে প্রয়োগ
- আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা: আনতাকিয়ার ঘটনায় দাওয়াতের পদ্ধতি শিক্ষা
- পরিবেশ সংরক্ষণ: প্রকৃতির নিদর্শন সম্পর্কে সচেতনতা
- মৃত্যু স্মরণ: আখিরাতের প্রস্তুতি
- ধৈর্য্য শিক্ষা: নবীদের জীবন থেকে ধৈর্য্যের আদর্শ
৯. তাফসীরের বিশেষ দিক
- ইবনে কাসীর: কিয়ামতের বিবরণে বিশদ ব্যাখ্যা
- কুরতুবী: আইনগত দিকনির্দেশনা
- আধুনিক তাফসীর: বৈজ্ঞানিক নিদর্শনের ব্যাখ্যা
১০. পাঠের আদব
- পবিত্র অবস্থায় পাঠ
- ধীরে ধীরে তিলাওয়াত
- অর্থ চিন্তা করা
- বিশেষ মুহূর্তে পাঠ:
- ফজরের পর
- রোগীর সেবায়
- মৃতের জন্য
উপসংহার: সূরা ইয়াসিন কুরআনের একটি কেন্দ্রীয় সূরা যা ঈমানী শক্তি বাড়ায়, আখিরাতের স্মরণ জাগ্রত করে এবং আল্লাহর মহিমা উপলব্ধির সুযোগ দেয়। এর নিয়মিত তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন মুমিনের জীবনে বিশেষ বরকত বয়ে আনে।