সূরা ইব্রাহীম (সূরা নং ১৪) মক্কায় অবতীর্ণ একটি সূরা। এটি কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে। নিম্নে সূরা ইব্রাহীম সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ২৫টি MCQ প্রশ্ন উত্তর সহ সূরাটি সম্পর্কে বিস্তারিত অলোচনা করা হলো । আশাকরি উপকৃত হবেন।
সূরা ইব্রাহীম
সূরা ইব্রাহীম সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন
১. সূরা ইব্রাহীমের আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তর: সূরা ইব্রাহীমে মোট ৫২টি আয়াত রয়েছে।
২. সূরা ইব্রাহীমের মূল বিষয় কী?
উত্তর: সূরাটির মূল বিষয় হলো তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহ।
৩. সূরা ইব্রাহীমে কোন নবীর নামে নামকরণ করা হয়েছে?
উত্তর: সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর নামে।
৪. সূরা ইব্রাহীমে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর কোন দোয়া উল্লেখ আছে?
উত্তর: হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর দোয়া উল্লেখ আছে, যেখানে তিনি মক্কা নগরীকে শান্তির নগরী এবং তার বংশধরদের জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন।
৫. সূরা ইব্রাহীমের শুরুতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: সূরাটির শুরুতে বলা হয়েছে,
“আলিফ-লাম-রা। এটি একটি কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন…” (আয়াত: ১)।
৬. সূরা ইব্রাহীমে শয়তানের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: শয়তানকে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সে কুফর ও পাপের দিকে আহ্বান করে।
৭. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে আকাশ, পৃথিবী, নদী, পাহাড়, ফল-ফসল ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে, যা তাঁর মহিমা ও ক্ষমতার প্রমাণ।
৮. সূরা ইব্রাহীমে কাফিরদের পরিণতি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: কাফিরদের পরিণতি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি এবং তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
৯. সূরা ইব্রাহীমে মুমিনদের জন্য কী সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি।
১০. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর বাণীকে কীভাবে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর বাণীকে একটি সুদৃঢ় বৃক্ষের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যার শিকড় মজবুত এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত।
১১. সূরা ইব্রাহীমে হযরত মুসা (আ.)-এর কথা উল্লেখ আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, হযরত মুসা (আ.)-এর কথা উল্লেখ আছে, যেখানে তিনি বনি ইসরাঈলকে আল্লাহর আদেশ পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।
১২. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর রহমতের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর রহমতের উদাহরণ হিসেবে নদী, ফল-ফসল, সূর্য ও চন্দ্রের নিয়মিত গতি ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে।
১৩. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের গুরুত্ব কী?
উত্তর: আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে এবং শুকরিয়া আদায়কারীদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে।
১৪. সূরা ইব্রাহীমে কিয়ামতের দিনের বর্ণনা কী?
উত্তর: কিয়ামতের দিনের বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, সেদিন মানুষ বিভ্রান্ত ও ভীত হবে এবং তাদের আমলনামা উপস্থাপন করা হবে।
১৫. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের গুরুত্ব কী?
উত্তর: আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারীদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে।
১৬. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর নিদর্শনসমূহ অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা অহংকারী এবং তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।
১৭. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর অনুগ্রহের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর অনুগ্রহের উদাহরণ হিসেবে নদী, ফল-ফসল, সূর্য ও চন্দ্রের নিয়মিত গতি ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে।
১৮. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আহ্বান কীভাবে করা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আহ্বান করা হয়েছে এবং তাঁর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য বলা হয়েছে।
১৯. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর বাণীর শক্তি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর বাণীর শক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এটি সত্য ও সুদৃঢ়, এবং এটি মানুষের জন্য হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ।
২০. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর প্রতি ভরসা করার গুরুত্ব কী?
উত্তর: আল্লাহর প্রতি ভরসা করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আল্লাহই সর্বোত্তম রক্ষক ও সাহায্যকারী।
এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলি সূরা ইব্রাহীমের মূল বিষয়বস্তু ও শিক্ষাকে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করে। সূরাটি তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারি এবং আমাদের ঈমানকে মজবুত করতে পারি।
সূরা ইব্রাহীম সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন)
সূরা ইব্রাহীম সম্পর্কে ২৫টি বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ) নিম্নে দেওয়া হলো। এই প্রশ্নগুলি সূরাটির বিষয়বস্তু, আয়াত, শিক্ষা এবং তাৎপর্য সম্পর্কে ধারণা দেবে।
১. সূরা ইব্রাহীম কত নং সূরা?
a) ১০
b) ১২
c) ১৪
d) ১৬
উত্তর: c) ১৪
২. সূরা ইব্রাহীমে মোট কতটি আয়াত আছে?
a) ৫০
b) ৫২
c) ৫৫
d) ৬০
উত্তর: b) ৫২
৩. সূরা ইব্রাহীম কোন ধরনের সূরা?
a) মাদানী
b) মক্কী
c) মিশ্র
d) কোনোটিই নয়
উত্তর: b) মক্কী
৪. সূরা ইব্রাহীমে কার নামে নামকরণ করা হয়েছে?
a) হযরত মুসা (আ.)
b) হযরত ইব্রাহীম (আ.)
c) হযরত ঈসা (আ.)
d) হযরত নূহ (আ.)
উত্তর: b) হযরত ইব্রাহীম (আ.)
৫. সূরা ইব্রাহীমের মূল বিষয় কী?
a) জিহাদ
b) তাওহীদ ও রিসালাত
c) বাণিজ্য
d) রাজনীতি
উত্তর: b) তাওহীদ ও রিসালাত
৬. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর বাণীকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
a) পাহাড়
b) সুদৃঢ় বৃক্ষ
c) নদী
d) বাতাস
উত্তর: b) সুদৃঢ় বৃক্ষ
৭. সূরা ইব্রাহীমে শয়তানকে কী বলা হয়েছে?
a) বন্ধু
b) সাহায্যকারী
c) প্রকাশ্য শত্রু
d) শিক্ষক
উত্তর: c) প্রকাশ্য শত্রু
৮. সূরা ইব্রাহীমে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর কোন দোয়া উল্লেখ আছে?
a) ধন-সম্পদের জন্য
b) মক্কা নগরীকে শান্তির নগরী করার জন্য
c) শত্রুদের ধ্বংসের জন্য
d) দুনিয়ার রাজত্বের জন্য
উত্তর: b) মক্কা নগরীকে শান্তির নগরী করার জন্য
৯. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে কোনটি উল্লেখ নেই?
a) আকাশ
b) পৃথিবী
c) নদী
d) প্রযুক্তি
উত্তর: d) প্রযুক্তি
১০. সূরা ইব্রাহীমে কাফিরদের পরিণতি কী?
a) জান্নাত
b) জাহান্নাম
c) ক্ষমা
d) সম্পদ
উত্তর: b) জাহান্নাম
১১. সূরা ইব্রাহীমে মুমিনদের জন্য কী সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে?
a) দুনিয়ার সম্পদ
b) জান্নাত
c) ক্ষমতা
d) বাহাদুরি
উত্তর: b) জান্নাত
১২. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর রহমতের উদাহরণ কী?
a) নদী ও ফল-ফসল
b) অস্ত্র
c) প্রাসাদ
d) গাড়ি
উত্তর: a) নদী ও ফল-ফসল
১৩. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের গুরুত্ব কী?
- a) অর্থনৈতিক উন্নতি
b) আল্লাহর রহমত লাভ
c) শত্রুদের পরাজয়
d) ক্ষমতা লাভ
উত্তর: b) আল্লাহর রহমত লাভ
১৪. সূরা ইব্রাহীমে কিয়ামতের দিনের বর্ণনায় কী বলা হয়েছে?
a) সবাই সুখী হবে
b) মানুষ বিভ্রান্ত ও ভীত হবে
c) সবাই সম্পদশালী হবে
d) সবাই ক্ষমা পাবে
উত্তর: b) মানুষ বিভ্রান্ত ও ভীত হবে
১৫. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর বাণীর শক্তি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
a) এটি দুর্বল
b) এটি সত্য ও সুদৃঢ়
c) এটি অপ্রয়োজনীয়
d) এটি শুধু ইতিহাস
উত্তর: b) এটি সত্য ও সুদৃঢ়
১৬. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ অস্বীকারকারীদের জন্য কী রয়েছে?
a) পুরস্কার
b) শাস্তি
c) ক্ষমা
d) সম্পদ
উত্তর: b) শাস্তি
১৭. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর অনুগ্রহের উদাহরণ কী?
a) নদী ও ফল-ফসল
b) যুদ্ধ
c) প্রাসাদ
d) গাড়ি
উত্তর: a) নদী ও ফল-ফসল
১৮. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আহ্বান কীভাবে করা হয়েছে?
a) ভয় দেখিয়ে
b) চিন্তা-ভাবনা করে
c) জোর করে
d) উপেক্ষা করে
উত্তর: b) চিন্তা-ভাবনা করে
১৯. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর প্রতি ভরসা করার গুরুত্ব কী?
a) সম্পদ লাভ
b) আল্লাহই সর্বোত্তম রক্ষক
c) শত্রুদের ধ্বংস
d) ক্ষমতা লাভ
উত্তর: b) আল্লাহই সর্বোত্তম রক্ষক
২০. সূরা ইব্রাহীমে হযরত মুসা (আ.)-এর কথা উল্লেখ আছে কি?
a) হ্যাঁ
b) না
c) শুধু ইঙ্গিত
d) অস্পষ্ট
উত্তর: a) হ্যাঁ
২১. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে কোনটি উল্লেখ আছে?
a) সূর্য ও চন্দ্র
b) গাড়ি
c) কম্পিউটার
d) টেলিভিশন
উত্তর: a) সূর্য ও চন্দ্র
২২. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারীদের জন্য কী রয়েছে?
a) শাস্তি
b) পুরস্কার
c) উপেক্ষা
d) ভয়
উত্তর: b) পুরস্কার
২৩. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর বাণীকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
a) পাহাড়
b) সুদৃঢ় বৃক্ষ
c) নদী
d) বাতাস
উত্তর: b) সুদৃঢ় বৃক্ষ
২৪. সূরা ইব্রাহীমে কাফিরদের জন্য কী রয়েছে?
- a) জান্নাত
b) জাহান্নাম
c) ক্ষমা
d) সম্পদ
উত্তর: b) জাহান্নাম
২৫. সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর রহমতের উদাহরণ কী?
a) নদী ও ফল-ফসল
b) অস্ত্র
c) প্রাসাদ
d) গাড়ি
উত্তর: a) নদী ও ফল-ফসল
এই MCQ প্রশ্নগুলি সূরা ইব্রাহীমের মূল বিষয়বস্তু ও শিক্ষাকে সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।
সূরা ইব্রাহীম এর ফজিলত
সূরা ইব্রাহীম (সূরা নং ১৪) কুরআন মাজিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যাতে তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই সূরাটির তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও জ্ঞানগতভাবে উপকৃত হতে পারেন। নিম্নে সূরা ইব্রাহীমের কিছু ফজিলত ও তাৎপর্য উল্লেখ করা হলো:
১. আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার সুযোগ
সূরা ইব্রাহীমে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ (যেমন আকাশ, পৃথিবী, নদী, ফল-ফসল ইত্যাদি) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই সূরাটি তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির মহিমা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে, যা ঈমানকে মজবুত করে।
২. তাওহীদ ও রিসালাতের শিক্ষা
সূরাটিতে তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ) এবং রিসালাত (নবী-রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস) সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এটি মুমিনদের জন্য তাওহীদ ও রিসালাতের মৌলিক শিক্ষাকে পুনর্ব্যক্ত করে।
৩. আখিরাতের স্মরণ
সূরাটিতে আখিরাত (পরকাল) সম্পর্কে সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে। এটি মানুষকে দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা এবং আখিরাতের প্রস্তুতির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে।
৪. হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর দোয়া শিক্ষা
সূরাটিতে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে, যা মুমিনদের জন্য আদর্শ। বিশেষ করে, তিনি মক্কা নগরীকে শান্তির নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য এবং তার বংশধরদের জন্য রিজিক ও হিদায়াতের জন্য দোয়া করেছেন।
৫. শয়তানের চক্রান্ত থেকে সতর্কতা
সূরাটিতে শয়তানকে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তার চক্রান্ত থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি মুমিনদেরকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকার শিক্ষা দেয়।
৬. আল্লাহর অনুগ্রহ ও শুকরিয়ার গুরুত্ব
সূরাটিতে আল্লাহর অনুগ্রহ ও শুকরিয়া আদায়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এটি মানুষকে আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে এবং তাঁর ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হতে উদ্বুদ্ধ করে।
৭. কুরআনের বাণীর শক্তি ও মর্যাদা
সূরাটিতে আল্লাহর বাণীকে একটি সুদৃঢ় বৃক্ষের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যা ঈমানদারদের জন্য হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ। এটি কুরআনের মর্যাদা ও শক্তিকে তুলে ধরে।
৮. কাফিরদের পরিণতির সতর্কবাণী
সূরাটিতে কাফিরদের পরিণতি সম্পর্কে সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে, যা মুমিনদেরকে কুফর ও পাপ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়।
৯. মুমিনদের জন্য সুসংবাদ
সূরাটিতে মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, যা তাদেরকে আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টির প্রতি আশাবাদী করে তোলে।
১০. আধ্যাত্মিক শান্তি ও প্রশান্তি
সূরা ইব্রাহীমের তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন মুমিনদের আধ্যাত্মিক শান্তি ও প্রশান্তি দান করে। এটি তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে এবং ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি করে।
হাদীসে সূরা ইব্রাহীমের ফজিলত:
সূরা ইব্রাহীমের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট হাদীস না থাকলেও, এটি কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা হিসেবে বিবেচিত হয়। কুরআনের যে কোনো সূরার তিলাওয়াতই মুমিনের জন্য সওয়াব ও বরকতের কারণ হয়। বিশেষ করে, এই সূরাটিতে তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের মতো মৌলিক বিষয়গুলোর আলোচনা থাকায় এটি অধ্যয়ন ও আমলের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি আধ্যাত্মিকভাবে লাভবান হতে পারেন।
সূরা ইব্রাহীম (সূরা নং ১৪) কুরআন মাজিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যাতে তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে সূরা ইব্রাহীমের নির্দিষ্ট কিছু আয়াত (৭, ২৭, ৪১, ৪২, ৪০) এর অর্থসহ ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
সূরা ইব্রাহীম আয়াত ৭
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
অর্থ:
“আর (স্মরণ কর) যখন তোমাদের রব ঘোষণা করলেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরো বেশি দেবো; আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি কঠোর।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা কৃতজ্ঞতা ও অকৃতজ্ঞতার পরিণতি সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি আরো বেশি দান করবেন, কিন্তু অকৃতজ্ঞ হলে তাঁর শাস্তি কঠোর হবে। এটি মুমিনদেরকে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে এবং অহংকার ও অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকতে শিক্ষা দেয়।
সূরা ইব্রাহীম আয়াত ২৭
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ ۚ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ
অর্থ:
“আল্লাহ ঈমানদারদেরকে দৃঢ় বাক্যের মাধ্যমে দৃঢ়তা দান করেন, দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে। আর আল্লাহ জালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তা করেন।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ঈমানদারদেরকে দৃঢ় বাক্য (যেমন কালিমা তাইয়্যিবা) দ্বারা দৃঢ়তা দান করেন, যা তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্থিরতা ও সাফল্য দান করে। অন্যদিকে, জালিমদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন। এটি ঈমানদারদের জন্য আশার বাণী এবং জালিমদের জন্য সতর্কবাণী।
সূরা ইব্রাহীম আয়াত ৪১
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
অর্থ:
“হে আমাদের রব! আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং সকল মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর একটি দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি আল্লাহর কাছে নিজের, তার পিতামাতার এবং সকল মুমিনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এটি মুমিনদেরকে আখিরাতের দিনের হিসাবের ভয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার শিক্ষা দেয়।
সূরা ইব্রাহীম আয়াত ৪২
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ ۚ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصَارُ
অর্থ:
“তুমি কখনো এ ধারণা করো না যে, জালিমরা যা করে, আল্লাহ তা থেকে গাফিল। তিনি তাদেরকে শুধু এমন এক দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন চোখ স্থির হয়ে যাবে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ জালিমদের সম্পর্কে সতর্ক করেছেন যে, তিনি তাদের কাজকর্ম থেকে গাফিল নন। তিনি তাদেরকে শুধু সময় দেন, যাতে তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য কিয়ামতের দিন ভয়াবহ শাস্তি পায়। এটি মুমিনদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে এবং আল্লাহর আদালতের প্রতি আস্থা রাখতে শিক্ষা দেয়।
সূরা ইব্রাহীম আয়াত ৪০
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ
অর্থ:
“হে আমার রব! আমাকে নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী বানাও এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও (এমন বানাও)। হে আমাদের রব! আমার দোয়া কবুল করুন।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর আরেকটি দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন যেন তিনি এবং তার বংশধররা নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী হয়। এটি নামাজের গুরুত্ব এবং বংশধরদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার জন্য দোয়ার শিক্ষা দেয়।
উপসংহার:
এই আয়াতগুলি সূরা ইব্রাহীমের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও বার্তা বহন করে। এগুলোতে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া, ঈমানের দৃঢ়তা, আখিরাতের হিসাব, ক্ষমা প্রার্থনা এবং নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে মুমিনরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা, ধৈর্য ও আস্থা রাখার শিক্ষা পায় এবং আখিরাতের প্রস্তুতির জন্য অনুপ্রাণিত হয়।
সূরা ইব্রাহীম এর আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও অর্থ
সূরা ইব্রাহীম (সূরা নং ১৪) কুরআন মাজিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যাতে তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে সূরা ইব্রাহীমের আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও তার অর্থ উল্লেখ করা হলো:
১. তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ):
আয়াত নং ১০:
قَالَتْ رُسُلُهُمْ أَفِي اللَّهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ يَدْعُوكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ قَالُوا إِنْ أَنتُمْ إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَا تُرِيدُونَ أَن تَصُدُّونَنَا عَمَّا كَانَ يَعْبُدُ آبَاؤُنَا فَأْتُونَا بِسُلْطَانٍ مُّبِينٍ
অর্থ:
“তাদের রাসূলগণ বললেন, আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা আল্লাহ সম্পর্কে কি সন্দেহ আছে? তিনি তোমাদেরকে ডাকছেন, যাতে তোমাদের পাপ ক্ষমা করেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেন। তারা বলল, তোমরা তো আমাদেরই মতো মানুষ। তোমরা আমাদেরকে আমাদের পিতৃপুরুষদের ইবাদত করা থেকে বিরত রাখতে চাও। সুতরাং আমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন কর।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে তাওহীদের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে এবং আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ হিসেবে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
২. রিসালাত (নবী-রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস):
আয়াত নং ৪:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থ:
“আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার সম্প্রদায়ের ভাষায় পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে রিসালাতের গুরুত্ব এবং নবী-রাসূলদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের ভাষায় পাঠানোর হিকমত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
৩. আখিরাত (পরকাল):
আয়াত নং ৪৮:
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ ۖ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
অর্থ:
“সেদিন পৃথিবী অন্য পৃথিবীতে পরিবর্তিত হবে এবং আকাশমণ্ডলীও (পরিবর্তিত হবে)। আর তারা একক, পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে কিয়ামতের দিনের পরিবর্তন এবং আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যা আখিরাতের প্রতি ঈমানকে জাগ্রত করে।
৪. আল্লাহর নিদর্শনসমূহ:
আয়াত নং ৩২:
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْأَنْهَارَ
অর্থ:
“আল্লাহই তিনি, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপন্ন করেছেন, যা তোমাদের রিজিক। আর তিনি তোমাদের জন্য নৌকাকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তা তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলাচল করে। আর তিনি তোমাদের জন্য নদীসমূহকে নিয়োজিত করেছেন।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে আকাশ, পৃথিবী, বৃষ্টি, ফল-ফসল, নৌকা এবং নদীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাঁর মহিমা ও ক্ষমতার প্রমাণ।
৫. দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা:
আয়াত নং ৪১:
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
অর্থ:
“হে আমাদের রব! আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং সকল মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তিনি নিজের, তার পিতামাতার এবং সকল মুমিনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এটি দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
উপসংহার:
সূরা ইব্রাহীমের এই আয়াতগুলি তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, আল্লাহর নিদর্শনসমূহ এবং দোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা দেয়। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে মুমিনরা আল্লাহর প্রতি ঈমান, আখিরাতের প্রস্তুতি এবং দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার শিক্ষা পায়।