You are currently viewing সূরা ইউসুফ : ৪৫ টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত আলোচনা
সূরা ইউসুফ

সূরা ইউসুফ : ৪৫ টি কুইজ প্রশ্ন সহ বিস্তারিত আলোচনা

সূরা ইউসুফ হল পবিত্র কুরআনের ১২তম সূরা। এই সূরাটি নবী ইউসুফ (আ.)-এর জীবন কাহিনীকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে, যা কুরআনে “আহসানুল কাসাস” (সেরা কাহিনী) হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। সূরাটি মানব জীবনের বিভিন্ন দিক যেমন ধৈর্য, বিশ্বাস, আল্লাহর উপর ভরসা, ক্ষমা ও পুনর্মিলনের শিক্ষা প্রদান করে। সূরা ইউসুফ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ২৫টি MCQ প্রশ্ন উত্তর সহ সূরাটি সম্পর্কে বিস্তারিত অলোচনা করা হলো । আশাকরি উপকৃত হবেন।

সূরা ইউসুফ

সূরা ইউসুফ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

১. প্রশ্ন: সূরা ইউসুফ কুরআনের কততম সূরা?  

উত্তর: সূরা ইউসুফ কুরআনের ১২তম সূরা।

২. প্রশ্ন: সূরা ইউসুফ কোন পারায় অবস্থিত?  

উত্তর: সূরা ইউসুফ ১২ ও ১৩তম পারায় অবস্থিত।

৩. প্রশ্ন: সূরা ইউসুফের মূল বিষয় কী?  

উত্তর: সূরা ইউসুফের মূল বিষয় হলো নবী ইউসুফ (আ.)-এর জীবন কাহিনী।

৪. প্রশ্ন: সূরা ইউসুফে ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নের কথা উল্লেখ আছে। স্বপ্নটি কী ছিল?  

উত্তর: ইউসুফ (আ.) স্বপ্নে দেখেছিলেন ১১টি তারা, সূর্য ও চাঁদ তাকে সিজদা করছে।

 

৫. প্রশ্ন: ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তাকে কোথায় ফেলে দিয়েছিল?  

উত্তর: ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তাকে একটি কূপে ফেলে দিয়েছিল।

৬. প্রশ্ন: ইউসুফ (আ.)-কে কূপ থেকে কে উদ্ধার করেছিল?  

উত্তর: ইউসুফ (আ.)-কে কূপ থেকে একদল ব্যবসায়ী উদ্ধার করেছিল।

৭. প্রশ্ন: ইউসুফ (আ.)-কে মিসরে কে কিনেছিল?  

উত্তর: মিসরের একজন মন্ত্রী ইউসুফ (আ.)-কে কিনেছিলেন।

৮. প্রশ্ন: ইউসুফ (আ.)-কে কার ঘরে রাখা হয়েছিল?  

উত্তর: ইউসুফ (আ.)-কে মিসরের মন্ত্রী আজিজের ঘরে রাখা হয়েছিল।

৯. প্রশ্ন: ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি আজিজের স্ত্রীর আচরণ কী ছিল?  

উত্তর: আজিজের স্ত্রী ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং তাকে প্রলোভন দেখিয়েছিলেন।

১০. প্রশ্ন: ইউসুফ (আ.) কারাগারে কত বছর ছিলেন?  

উত্তর: ইউসুফ (আ.) কারাগারে প্রায় ৭ থেকে ১০ বছর ছিলেন।

১১. প্রশ্ন: কারাগারে ইউসুফ (আ.)-এর সাথে কারা ছিলেন?  

উত্তর: কারাগারে ইউসুফ (আ.)-এর সাথে রাজার দুই কর্মচারী ছিলেন।

 

১২. প্রশ্ন: ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা কীভাবে প্রকাশ পেয়েছিল?  

উত্তর: ইউসুফ (আ.) কারাগারে রাজার দুই কর্মচারীর স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

১৩. প্রশ্ন: ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে রাজা তাকে কী করেছিলেন?  

উত্তর: রাজা ইউসুফ (আ.)-কে কারাগার থেকে মুক্ত করে মিসরের অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত করেছিলেন।

১৪. প্রশ্ন: ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা কেন মিসরে এসেছিলেন?  

উত্তর: ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা মিসরে খাদ্য সংগ্রহের জন্য এসেছিলেন।

১৫. প্রশ্ন: ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তাকে চিনতে পেরেছিলেন কখন?  

উত্তর: ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তাকে চিনতে পেরেছিলেন যখন তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন।

১৬. প্রশ্ন: ইউসুফ (আ.)-এর পিতা ইয়াকুব (আ.)-এর চোখের দৃষ্টি কখন ফিরে এসেছিল?  

উত্তর: ইউসুফ (আ.)-এর জামা দেখে ইয়াকুব (আ.)-এর চোখের দৃষ্টি ফিরে এসেছিল।

১৭. প্রশ্ন: সূরা ইউসুফে আল্লাহ তায়ালা কী শিক্ষা দিয়েছেন?  

উত্তর: সূরা ইউসুফে আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য, বিশ্বাস ও তাঁর উপর ভরসার শিক্ষা দিয়েছেন।

১৮. প্রশ্ন: সূরা ইউসুফে ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনী কীভাবে শেষ হয়েছে?  

উত্তর: ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনী তার পরিবারের সাথে পুনর্মিলন এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।

১৯. প্রশ্ন: সূরা ইউসুফে আল্লাহ তায়ালা ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীকে কী বলে অভিহিত করেছেন?  

উত্তর: আল্লাহ তায়ালা ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীকে “আহসানুল কাসাস” (সেরা কাহিনী) বলে অভিহিত করেছেন।

২০. প্রশ্ন: সূরা ইউসুফের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?  

উত্তর: সূরা ইউসুফের শেষ আয়াতে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।”

আরও পড়তে পারেন–

সূরা হুদ সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন, উত্তরসহ বিস্তারিত

সূরা ইউসুফ সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন)

১. সূরা ইউসুফ কুরআনের কততম সূরা?  

ক) ১০ম

খ) ১১তম

গ) ১২তম

ঘ) ১৩তম

উত্তর: গ) ১২তম

২. ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নে কতটি তারা দেখেছিলেন?  

ক) ৯টি

খ) ১০টি

গ) ১১টি

ঘ) ১২টি

উত্তর: গ) ১১টি

৩. ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তাকে কোথায় ফেলে দিয়েছিল?  

ক) নদীতে

খ) কূপে

গ) জঙ্গলে

ঘ) পাহাড়ে

উত্তর: খ) কূপে

৪. ইউসুফ (আ.)-কে কূপ থেকে কে উদ্ধার করেছিল?  

ক) ব্যবসায়ী

খ) চোর

গ) রাজা

ঘ) কৃষক

উত্তর: ক) ব্যবসায়ী

৫. ইউসুফ (আ.)-কে মিসরে কে কিনেছিল?  

ক) রাজা

খ) মন্ত্রী

গ) ব্যবসায়ী

ঘ) কৃষক

উত্তর: খ) মন্ত্রী

৬. ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন কে?  

ক) আজিজের স্ত্রী

খ) আজিজের কন্যা

গ) রাজার স্ত্রী

ঘ) ব্যবসায়ীর স্ত্রী

উত্তর: ক) আজিজের স্ত্রী

৭. ইউসুফ (আ.) কারাগারে কত বছর ছিলেন?  

ক) ৫ বছর

খ) ৭ বছর

গ) ১০ বছর

ঘ) ১২ বছর

উত্তর: গ) ১০ বছর

৮. ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে রাজা তাকে কী করেছিলেন?  

ক) কারাগারে পাঠিয়েছিলেন

খ) অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত করেছিলেন

গ) দেশ থেকে নির্বাসিত করেছিলেন

ঘ) হত্যা করেছিলেন

উত্তর: খ) অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত করেছিলেন

৯. ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা মিসরে কেন এসেছিলেন?  

ক) ব্যবসা করতে

খ) খাদ্য সংগ্রহের জন্য

গ) ইউসুফকে খুঁজতে

ঘ) রাজাকে দেখতে

উত্তর: খ) খাদ্য সংগ্রহের জন্য

১০. ইউসুফ (আ.)-এর পিতা ইয়াকুব (আ.)-এর চোখের দৃষ্টি কখন ফিরে এসেছিল?  

ক) ইউসুফের চিঠি পেয়ে

খ) ইউসুফের জামা দেখে

গ) ইউসুফের কণ্ঠস্বর শুনে

ঘ) স্বপ্নে দেখে

উত্তর: খ) ইউসুফের জামা দেখে

১১. সূরা ইউসুফে আল্লাহ তায়ালা ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীকে কী বলে অভিহিত করেছেন?  

ক) সেরা কাহিনী

খ) দীর্ঘ কাহিনী

গ) শিক্ষণীয় কাহিনী

ঘ) রহস্যময় কাহিনী

উত্তর: ক) সেরা কাহিনী

১২. সূরা ইউসুফের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?  

ক) “নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।”

খ) “এটি একটি সতর্কবার্তা।”

গ) “আল্লাহর রহমত সর্বত্র।”

ঘ) “ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য সুসংবাদ।”

উত্তর: ক) “নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।”

১৩. ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তাকে চিনতে পেরেছিলেন কখন?  

ক) যখন তিনি তাদের সাথে কথা বলেছিলেন

খ) যখন তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন

গ) যখন তিনি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলেন

ঘ) যখন তিনি তাদেরকে ক্ষমা করেছিলেন

উত্তর: খ) যখন তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন

১৪. ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনী কুরআনে কী নামে পরিচিত?  

ক) আহসানুল কাসাস

খ) সেরা গল্প

গ) শিক্ষণীয় ঘটনা

ঘ) রহস্যময় কাহিনী

উত্তর: ক) আহসানুল কাসাস

১৫. ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তাকে ফেলে দেওয়ার পর কী করেছিল?  

ক) তারা তাকে মৃত মনে করেছিল

খ) তারা তাকে খুঁজতে শুরু করেছিল

গ) তারা তাকে ক্ষমা চেয়েছিল

ঘ) তারা তাকে ফিরিয়ে এনেছিল

উত্তর: ক) তারা তাকে মৃত মনে করেছিল

১৬. ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীতে আল্লাহ তায়ালা কী শিক্ষা দিয়েছেন?  

ক) ধৈর্য ও বিশ্বাস

খ) প্রতিশোধ

গ) সম্পদের মোহ

ঘ) ক্ষমা

উত্তর: ক) ধৈর্য ও বিশ্বাস

১৭. ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীতে কারাগারে কে তার সাথে ছিলেন?  

ক) রাজার দুই কর্মচারী

খ) আজিজের স্ত্রী

গ) তার ভাইয়েরা

ঘ) ব্যবসায়ী

উত্তর: ক) রাজার দুই কর্মচারী

১৮. ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীতে রাজার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী ছিল?  

ক) ৭ বছর সুখ ও ৭ বছর দুর্ভিক্ষ

খ) ৫ বছর সুখ ও ৫ বছর দুর্ভিক্ষ

গ) ১০ বছর সুখ ও ১০ বছর দুর্ভিক্ষ

ঘ) ১২ বছর সুখ ও ১২ বছর দুর্ভিক্ষ

উত্তর: ক) ৭ বছর সুখ ও ৭ বছর দুর্ভিক্ষ

১৯. ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীতে তার পরিবারের সাথে পুনর্মিলন কীভাবে হয়েছিল?  

ক) তার ভাইয়েরা তাকে চিনতে পেরেছিলেন

খ) তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন

গ) তার পিতা তাকে স্বপ্নে দেখেছিলেন

ঘ) রাজা তাকে পাঠিয়েছিলেন

উত্তর: খ) তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন

২০. ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীতে আল্লাহ তায়ালা কীভাবে তার রহমত দেখিয়েছেন?  

ক) তাকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে

খ) তাকে ধন-সম্পদ দিয়ে

গ) তাকে ক্ষমা করে

ঘ) তাকে পরিবারের সাথে মিলিত করে

উত্তর: ক) তাকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে

২১. ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীতে আজিজের স্ত্রীর প্রলোভন থেকে বাঁচার জন্য তিনি কী করেছিলেন?  

ক) তিনি আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন

খ) তিনি কারাগারে চলে গিয়েছিলেন

গ) তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন

ঘ) তিনি তার ভাইয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন

উত্তর: ক) তিনি আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন

২২. ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীতে তার ভাইয়েরা তাকে ফেলে দেওয়ার পর কী বলেছিল?  

ক) “তিনি মারা গেছেন।”

খ) “তিনি হারিয়ে গেছেন।”

গ) “তিনি পালিয়ে গেছেন।”

ঘ) “তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।”

উত্তর: ক) “তিনি মারা গেছেন।”

২৩. ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীতে তার পিতা ইয়াকুব (আ.)-এর চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার কারণ কী ছিল?  

ক) ইউসুফের জামা

খ) ইউসুফের চিঠি

গ) ইউসুফের কণ্ঠস্বর

ঘ) ইউসুফের স্বপ্ন

উত্তর: ক) ইউসুফের জামা

২৪. ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীতে আল্লাহ তায়ালা কীভাবে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন?  

ক) ইউসুফকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে

খ) ইউসুফের ভাইয়েরা তাকে ক্ষমা করে

গ) ইউসুফের পরিবারের সাথে পুনর্মিলন করে

ঘ) সবকিছু

উত্তর: ঘ) সবকিছু

২৫. ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনীতে আল্লাহ তায়ালা কীভাবে তার রহমত দেখিয়েছেন?  

ক) তাকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে

খ) তাকে ধন-সম্পদ দিয়ে

গ) তাকে ক্ষমা করে

ঘ) তাকে পরিবারের সাথে মিলিত করে

উত্তর: ক) তাকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে

সূরা ইউসুফের সানে নুযূল

সূরা ইউসুফ মক্কী সূরা হিসেবে মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তের প্রাথমিক পর্যায়ে অবতীর্ণ হয়েছিল। এই সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পেছনে একটি বিশেষ প্রেক্ষাপট রয়েছে। মক্কার কাফিররা নবী (সা.)-কে চ্যালেঞ্জ করেছিল যে তিনি যদি সত্যিকারের নবী হন, তাহলে তাদেরকে একটি পূর্ণাঙ্গ কাহিনী শোনান। আল্লাহ তায়ালা এই চ্যালেঞ্জের জবাবে সূরা ইউসুফ নাজিল করেন, যা ইউসুফ (আ.)-এর জীবন কাহিনী বর্ণনা করে। এই সূরাটি নবী (সা.)-এর নবুয়তের সত্যতা প্রমাণ করে এবং মানব জীবনের গভীর শিক্ষা প্রদান করে।

সূরা ইউসুফ এর গুরুত্বপূর্ণ দিক  

১. ইউসুফ (আ.)-এর জীবন কাহিনী: এই সূরাটি নবী ইউসুফ (আ.)-এর জীবন কাহিনীকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে, যা মানব জীবনের বিভিন্ন পরীক্ষা ও সংগ্রামের প্রতীক।

২. ধৈর্য ও বিশ্বাস: ইউসুফ (আ.)-এর জীবনে ধৈর্য ও আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাসের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।

৩. আল্লাহর পরিকল্পনা: এই সূরায় আল্লাহর পরিকল্পনার মহিমা প্রকাশ পেয়েছে, যা মানুষের চিন্তার ঊর্ধ্বে।

৪. ক্ষমা ও পুনর্মিলন: ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তার প্রতি অন্যায় করলেও তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, যা ক্ষমা ও পুনর্মিলনের শিক্ষা দেয়।

৫. নৈতিক শিক্ষা: এই সূরাটি নৈতিকতা, পবিত্রতা ও আল্লাহর ভয়ের শিক্ষা প্রদান করে।

সূরা ইউসুফ শিক্ষা  

১. ধৈর্য ধারণ: ইউসুফ (আ.)-এর জীবনে ধৈর্যের গুরুত্ব দেখানো হয়েছে। তিনি কূপে ফেলা, কারাগারে বন্দী হওয়া এবং নানাবিদ পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েও ধৈর্য ধারণ করেছিলেন।

২. আল্লাহর উপর ভরসা: সব পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর ভরসা রাখার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

৩. ক্ষমা ও মহানুভবতা: ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তার প্রতি অন্যায় করলেও তিনি তাদের ক্ষমা করেছিলেন, যা ক্ষমার মহিমা দেখায়।

৪. নৈতিক পবিত্রতা: ইউসুফ (আ.)-এর জীবনে নৈতিক পবিত্রতা ও আল্লাহর ভয়ের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।

৫. আল্লাহর পরিকল্পনার প্রতি বিশ্বাস: আল্লাহর পরিকল্পনা সর্বদা মানুষের কল্যাণের জন্য হয়, তা যত কঠিনই মনে হোক না কেন।

সূরা ইউসুফ এর মূল বিষয়বস্তু  

সূরা ইউসুফের মূল বিষয়বস্তু হলো নবী ইউসুফ (আ.)-এর জীবন কাহিনী এবং এর মাধ্যমে মানব জীবনের বিভিন্ন শিক্ষা। এই সূরায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে:

১. ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্ন: তার স্বপ্ন ও তার ভাইয়েরা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হওয়া।

২. কূপে নিক্ষেপ: ইউসুফ (আ.)-কে কূপে ফেলা এবং তার উদ্ধার।

৩. মিসরে আগমন: ইউসুফ (আ.)-এর মিসরে পৌঁছানো ও আজিজের ঘরে বসবাস।

৪. প্রলোভন ও কারাবাস: আজিজের স্ত্রীর প্রলোভন ও ইউসুফ (আ.)-এর কারাবাস।

৫. স্বপ্নের ব্যাখ্যা: ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও রাজার কাছে তার মর্যাদা লাভ।

৬. ভাইদের সাথে পুনর্মিলন: ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা মিসরে আসা ও তাদের সাথে পুনর্মিলন।

৭. ইয়াকুব (আ.)-এর চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়া: ইউসুফ (আ.)-এর জামা দেখে ইয়াকুব (আ.)-এর চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়া।

৮. আল্লাহর পরিকল্পনার মহিমা: সবকিছুর পেছনে আল্লাহর পরিকল্পনা ও তার রহমতের প্রকাশ।

 

সূরা ইউসুফ মানব জীবনের বিভিন্ন দিক যেমন ধৈর্য, বিশ্বাস, ক্ষমা, পুনর্মিলন ও আল্লাহর পরিকল্পনার শিক্ষা প্রদান করে। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন উপস্থাপন করে, যা মানুষের জন্য পথনির্দেশক।

সূরা ইউসুফ (সূরা ১২) কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা নবী ইউসুফ (আ.)-এর জীবন কাহিনী বর্ণনা করে। এই সূরাটি ধৈর্য, বিশ্বাস, আল্লাহর উপর ভরসা এবং ঐশী পরিকল্পনার গভীর তাৎপর্য বহন করে। নিচে সূরা ইউসুফ থেকে ৭টি বিষয়ভিত্তিক আয়াতের আরবী, অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

১. স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও আল্লাহর পরিকল্পনা

সূরা ইউসুফ আয়াত ৪

﴿إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَاجِدِينَ﴾
অর্থ:
“যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল, ‘হে আমার পিতা! আমি দেখেছি এগারোটি তারা, সূর্য ও চন্দ্র; আমি তাদেরকে আমার প্রতি সিজদা করতে দেখেছি।'” (সূরা ইউসুফ, আয়াত ৪)

ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে, যা তার ভবিষ্যতের মহান অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। এটি আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ, যা ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। এই স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ ইউসুফকে জানান যে তিনি একদিন উচ্চ মর্যাদা লাভ করবেন।

২. ঈর্ষা ও ভাইদের ষড়যন্ত্র

সূরা ইউসুফ আয়াত ৮

﴿قَالُوا لَيُوسُفُ وَأَخُوهُ أَحَبُّ إِلَىٰ أَبِينَا مِنَّا وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّ أَبَانَا لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
অর্থ:
“তারা বলল, ‘ইউসুফ ও তার ভাই আমাদের পিতার কাছে আমাদের চেয়ে বেশি প্রিয়, অথচ আমরা একটি দল। নিশ্চয় আমাদের পিতা স্পষ্ট ভ্রান্তিতে রয়েছেন।'” (সূরা ইউসুফ, আয়াত ৮)

ব্যাখ্যা:
ইউসুফের ভাইয়েরা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয় এবং তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিকল্পনা করে। এটি মানুষের হৃদয়ে ঈর্ষা ও হিংসার কুপ্রভাবকে চিত্রিত করে।

৩. ধৈর্য ও আল্লাহর উপর ভরসা

সূরা ইউসুফ আয়াত ৮৬

﴿قَالَ إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللَّهِ وَأَعْلَمُ مِنَ اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾
অর্থ:
“ইউসুফ বলল, ‘আমি আমার দুঃখ ও বেদনার কথা শুধু আল্লাহকেই জানাই, এবং আমি আল্লাহর কাছে এমন জ্ঞান রাখি যা তোমরা জান না।'” (সূরা ইউসুফ, আয়াত ৮৬)

ব্যাখ্যা:
ইউসুফ (আ.) তার কষ্ট ও দুঃখ শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে প্রকাশ করেন। এটি ধৈর্য ও আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসার একটি উদাহরণ।

৪. পরীক্ষা ও আল্লাহর সাহায্য

সূরা ইউসুফ আয়াত ২৪

﴿وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِ ۖ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَا أَن رَّأَىٰ بُرْهَانَ رَبِّهِ﴾
অর্থ:
“নিশ্চয় সে (জুলাইখা) তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল, এবং সেও তার প্রতি আকৃষ্ট হত যদি না সে তার রবের প্রমাণ দেখত।” (সূরা ইউসুফ, আয়াত ২৪)

ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে ইউসুফ (আ.)-এর পবিত্রতা ও আল্লাহর সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। তিনি আল্লাহর ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকেন।

৫. ক্ষমা ও মহানুভবতা

সূরা ইউসুফ আয়াত ৯২

﴿قَالَ لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ ۖ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ ۖ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ﴾
অর্থ:
“ইউসুফ বলল, ‘আজ তোমাদের প্রতি কোনো তিরস্কার নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন; তিনি সর্বাধিক দয়ালু।'” (সূরা ইউসুফ, আয়াত ৯২)

ব্যাখ্যা:
ইউসুফ (আ.) তার ভাইদের ক্ষমা করে দেন, যা ক্ষমা ও মহানুভবতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

৬. আল্লাহর পরিকল্পনার গভীরতা

সূরা ইউসুফ আয়াত ২১

﴿وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰ أَمْرِهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾
অর্থ:
“আল্লাহ তাঁর কাজে প্রবল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।” (সূরা ইউসুফ, আয়াত ২১)

ব্যাখ্যা:
এই আয়াত আল্লাহর পরিকল্পনার গভীরতা ও মানুষের অজ্ঞতার প্রতি ইঙ্গিত করে। আল্লাহর ইচ্ছা সবকিছুর ঊর্ধ্বে।

৭. ইউসুফের দোয়া ও শিক্ষা

সূরা ইউসুফ আয়াত ১০১

﴿رَبِّ قَدْ آتَيْتَنِي مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِي مِن تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ ۚ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَنتَ وَلِيِّي فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۖ تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ﴾
অর্থ:
“হে আমার রব! আপনি আমাকে রাজ্য দান করেছেন এবং আমাকে ঘটনার ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমান ও জমিনের স্রষ্টা! আপনি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার অভিভাবক। আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের সাথে মিলিত করুন।” (সূরা ইউসুফ, আয়াত ১০১)

ব্যাখ্যা:
ইউসুফ (আ.)-এর এই দোয়া তার বিনয়, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আখিরাতের প্রতি আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করে। এটি আমাদেরকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ ও সৎপথে চলার শিক্ষা দেয়।

সূরা ইউসুফের এই আয়াতগুলো আমাদেরকে ধৈর্য, আল্লাহর উপর ভরসা, ক্ষমা ও নৈতিকতার গুরুত্ব শেখায়। এটি জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিতে আল্লাহর পরিকল্পনার প্রতি আস্থা রাখার প্রেরণা দেয়