You are currently viewing সূরা আস সাজদাহ সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্নসহ বিস্তারিত
সূরা আস সাজদাহ

সূরা আস সাজদাহ সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্নসহ বিস্তারিত

সূরা আস সাজদাহ (আরবি: السجدة) হল পবিত্র কুরআনের ৩২তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩০টি। এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে ১৫নং আয়াতে উল্লিখিত “সাজদাহ” (সিজদা) থেকে, যেখানে ঈমানদারদের সিজদা করার কথা বলা হয়েছে। সূরা আস সাজদাহ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো । আশা করি, এই প্রশ্নোত্তর ও MCQ গুলো আপনার জন্য সহায়ক হবে!

সূরা আস সাজদাহ

সূরা আস-সাজদাহ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

১. সূরা আস-সাজদাহ মক্কী নাকি মাদানী সূরা?

উত্তর: মক্কী সূরা।

২. সূরা আস-সাজদাহ কত নং সূরা?

উত্তর: ৩২ নং সূরা।

৩. সূরা আস-সাজদাহর আয়াত সংখ্যা কত?

উত্তর: ৩০টি আয়াত।

৪. সূরা আস-সাজদাহর নামকরণের কারণ কী?

উত্তর: এ সূরার ১৫নং আয়াতে “সাজদাহ” (সিজদা) শব্দটি উল্লেখ আছে, যা আল্লাহর নিদর্শনে সিজদা করার নির্দেশ দেয়।

৫. সূরা আস-সাজদাহর অন্য নাম কী?

উত্তর: “সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদাহ”।

৬. সূরা আস-সাজদাহতে কিয়ামতের কী আলোচনা আছে?

উত্তর: কিয়ামতের দিন মানুষ কবর থেকে উঠবে এবং আল্লাহর সামনে হাজির হবে।

৭. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর কী গুণ বর্ণনা করা হয়েছে?

উত্তর: আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান ও মৃত্যু ও জীবন দানকারী।

৮. সূরা আস-সাজদাহতে মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

উত্তর: মানুষ মাটি থেকে সৃষ্টি এবং আবার মাটিতেই ফিরে যাবে।

৯. সূরা আস-সাজদাহতে ঈমানদারদের কী বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে?

উত্তর: তারা রাতে কম ঘুমায়, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং সদকা করে।

১০. সূরা আস-সাজদাহতে কাফিরদের শাস্তি কী বলা হয়েছে?

উত্তর: জাহান্নামের আগুন, যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।

১১. সূরা আস-সাজদাহতে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ আছে কি?

উত্তর: হ্যাঁ, তাদের পথভ্রষ্টতা ও শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

১২. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে কী কী উল্লেখ আছে?

উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী, গাছপালা ইত্যাদি।

১৩. সূরা আস-সাজদাহতে “সিজদাহ” করার নির্দেশ কোন আয়াতে আছে?

উত্তর: ১৫নং আয়াতে।

১৪. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর কিতাবের আলোচনা আছে কি?

উত্তর: হ্যাঁ, কুরআনকে হিদায়াত ও রহমত বলা হয়েছে।

১৫. সূরা আস-সাজদাহতে মুমিনদের জান্নাতের বর্ণনা কী?

উত্তর: জান্নাতে তারা চিরস্থায়ী হবে, সেখানে নদী প্রবাহিত হবে।

১৬. সূরা আস-সাজদাহতে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

উত্তর: মৃত্যুর পর মানুষ আবার জীবিত হবে এবং আমলের হিসাব দেবে।

১৭. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর কাছে গাইবের জ্ঞান সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

উত্তর: গাইবের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে, তিনি সব জানেন।

১৮. সূরা আস-সাজদাহতে দুনিয়ার জীবনকে কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে?

উত্তর: এটি ক্ষণস্থায়ী ও ধোঁকাময়।

১৯. সূরা আস-সাজদাহতে নবী-রাসূলদের প্রেরণের উদ্দেশ্য কী বলা হয়েছে?

উত্তর: মানুষকে সত্যপথে ডাকার জন্য।

২০. সূরা আস-সাজদাহর শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?

উত্তর: আল্লাহই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিচারক।

📝 সূরা আস-সাজদাহ সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)

১. সূরা আস-সাজদাহ কত নং সূরা?

  1. a) ৩০
    b) ৩১
    c) ৩২
    d) ৩৩

২. সূরা আস-সাজদাহর আয়াত সংখ্যা কত?

  1. a) ২৮
    b) ৩০
    c) ৩৪
    d) ৩৬

৩. সূরা আস-সাজদাহ মক্কী নাকি মাদানী সূরা?

  1. a) মক্কী
    b) মাদানী
    c) উভয়টি
    d) কোনোটিই নয়

৪. সূরা আস-সাজদাহতে “সিজদাহ” করার নির্দেশ কোন আয়াতে আছে?

  1. a) ১০
    b) ১৫
    c) ২০
    d) ২৫

৫. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে কী উল্লেখ নেই?

  1. a) আকাশ
    b) পাহাড়
    c) স্বর্ণ
    d) নদী

৬. সূরা আস-সাজদাহতে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য কী?

  1. a) তারা দিনে ঘুমায়
    b) তারা রাতে কম ঘুমায়
    c) তারা সদকা করে না
    d) তারা নামাজ পড়ে না

৭. সূরা আস-সাজদাহতে দুনিয়ার জীবনকে কী বলা হয়েছে?

  1. a) স্থায়ী
    b) ক্ষণস্থায়ী
    c) সুখময়
    d) দুঃখময়

৮. সূরা আস-সাজদাহতে কাফিরদের শাস্তি কী?

  1. a) ক্ষমা
    b) জাহান্নাম
    c) শুধু তিরস্কার
    d) কোনো শাস্তি নেই

৯. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর গুণ কী বলা হয়েছে?

  1. a) শুধু রহমত
    b) সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান
    c) শুধু ক্ষমাশীল
    d) শুধু ন্যায়বান

১০. সূরা আস-সাজদাহতে পুনরুত্থানের কথা বলা হয়েছে কি?

  1. a) হ্যাঁ
    b) না
    c) আংশিক
    d) শুধু কিয়ামতের আলোচনা

১১. সূরা আস-সাজদাহতে ফেরাউনের কথা উল্লেখ আছে কি?

  1. a) হ্যাঁ
    b) না
    c) শুধু ইঙ্গিত
    d) শুধু মিশরীদের কথা

১২. সূরা আস-সাজদাহতে জান্নাতের বর্ণনা কী?

  1. a) শুধু ফল
    b) নদী প্রবাহিত
    c) শুধু সুখ
    d) শুধু শান্তি

১৩. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর কিতাবকে কী বলা হয়েছে?

  1. a) শুধু জ্ঞান
    b) হিদায়াত ও রহমত
    c) শুধু বিধান
    d) শুধু সতর্কতা

১৪. সূরা আস-সাজদাহতে মানুষের সৃষ্টি কী থেকে?

  1. a) আগুন
    b) মাটি
    c) পানি
    d) আলো

১৫. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর কাছে কী গোপন নেই?

  1. a) কিছুই না
    b) গাইবের জ্ঞান
    c) শুধু ভবিষ্যত
    d) শুধু অতীত

১৬. সূরা আস-সাজদাহর শেষ আয়াতে আল্লাহকে কী বলা হয়েছে?

  1. a) শুধু ক্ষমাশীল
    b) শ্রেষ্ঠ বিচারক
    c) শুধু দয়ালু
    d) শুধু রহমত

১৭. সূরা আস-সাজদাহতে নবী-রাসূলদের প্রেরণের উদ্দেশ্য কী?

  1. a) শুধু রাজত্ব
    b) সত্যপথে ডাকা
    c) শুধু শিক্ষা
    d) শুধু সতর্ক করা

১৮. সূরা আস-সাজদাহতে মৃত্যুর পর কী হবে?

  1. a) শুধু কবর
    b) পুনরুত্থান
    c) শুধু শাস্তি
    d) শুধু পুরস্কার

১৯. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর নিদর্শন দেখেও কারা অবিশ্বাস করে?

  1. a) মুমিনরা
    b) কাফিররা
    c) মুনাফিকরা
    d) শুধু ইহুদিরা

২০. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর রহমতের কথা বলা হয়েছে কি?

  1. a) হ্যাঁ
    b) না
    c) শুধু শাস্তি
    d) শুধু বিচার

২১. সূরা আস-সাজদাহতে ঈমানদাররা কী করে?

  1. a) শুধু নামাজ পড়ে
    b) সদকা করে ও ক্ষমা চায়
    c) শুধু রোজা রাখে
    d) শুধু হজ করে

২২. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

  1. a) সীমিত
    b) অসীম
    c) শুধু সৃষ্টি
    d) শুধু ধ্বংস

২৩. সূরা আস-সাজদাহতে দুনিয়ার জীবনকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?

  1. a) স্বর্গ
    b) ধোঁকা
    c) শাস্তি
    d) পরীক্ষা

২৪. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর আদেশ কী?

  1. a) শুধু ইবাদত
    b) সিজদা করা
    c) শুধু দান
    d) শুধু জিহাদ

২৫. সূরা আস-সাজদাহতে আল্লাহর বিচার কেমন?

  1. a) অন্যায়
    b) ন্যায়সংগত
    c) শুধু কঠোর
    d) শুধু মাফ

✅ 📖✨

সূরা আস সাজদাহ পরিচয়, সূরা আস সাজদাহ এর ফজিলত,

সূরা আস-সাজদাহর পরিচয়, ফজিলত ও গুরুত্ব

📖 সূরা আস-সাজদাহর পরিচয়:

  1. নামকরণ:
    • এই সূরার ১৫ নং আয়াতে সিজদাহ (সিজদা) করার কথা উল্লেখ আছে, তাই এর নাম “সূরা আস-সাজদাহ” বা “সিজদার সূরা” রাখা হয়েছে।
    • অন্য নাম: “সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদাহ” (কারণ এটি সিজদাহযুক্ত আলিফ-লাম-মীম দিয়ে শুরু হয়)।
  2. অবতীর্ণের স্থান:
    • মক্কী সূরা (মক্কায় নাযিল হয়েছে)।
  3. সূরার ক্রম:
    • কুরআনের ৩২তম সূরা
    • পূর্ববর্তী সূরা: সূরা লোকমান (৩১), পরবর্তী সূরা: সূরা আল-আহযাব (৩৩)।
  4. আয়াত সংখ্যা:
    • ৩০টি আয়াত (কোনো কোনো রেওয়ায়েতে ২৯ বা ৩১ও উল্লেখ আছে, তবে প্রসিদ্ধ মত ৩০)।
  5. রুকু ও সিজদাহ:
    • ৩টি রুকু
    • ১টি ওয়াজিব সিজদাহ (১৫ নং আয়াতে, যা পড়লে বা শুনলে সিজদা দিতে হয়)।

🌟 সূরা আস-সাজদাহর ফজিলত ও বিশেষত্ব:

  1. সিজদাহর সূরা:
    • এ সূরা পাঠ করলে সিজদাহ দেওয়া ওয়াজিব হয় (হাদিসে এসেছে: রাসূল (ﷺ) এ সূরা পড়ে সিজদা দিতেন)।
  2. কিয়ামতের ভয় ও আখিরাতের স্মরণ:
    • এ সূরায় মৃত্যু, পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশের কথা বর্ণিত হয়েছে, যা ঈমান বাড়ায়।
  3. রাতের কিয়ামের ফজিলত:
    • হাদিসে আছে, রাসূল (ﷺ) রাতে সূরা আস-সাজদাহ ও সূরা আল-ইনসান পড়তেন (বুখারী)।
  4. গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধি:
    • এ সূরা নিয়মিত পড়লে আল্লাহ গুনাহ মাফ করেন এবং বান্দার মর্যাদা বাড়ান।
  5. শয়তান থেকে হিফাজত:
    • এটি পড়লে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়
  6. দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্তি:
    • এ সূরায় দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ীত্বের কথা বলা হয়েছে, যা যথাযথ জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে

📜 সূরা আস-সাজদাহর মূল শিক্ষা ও বিষয়বস্তু:

  1. আল্লাহর একত্ব ও কুদরত:
    • আকাশ, পৃথিবী, মানবসৃষ্টি ইত্যাদি আল্লাহর নিদর্শন (আয়াত: ৪-৯)।
  2. কিয়ামত ও পুনরুত্থান:
    • মৃত্যুর পর পুনর্জীবন ও হিসাবের দিন (আয়াত: ১০-১২)।
  3. ঈমানদার ও কাফিরদের পরিণতি:
    • মুমিনদের জন্য জান্নাত, কাফিরদের জন্য জাহান্নাম (আয়াত: ১৭-২২)।
  4. সিজদাহর গুরুত্ব:
    • আল্লাহর নিদর্শনে সিজদা করা ঈমানের লক্ষণ (আয়াত: ১৫)।
  5. দুনিয়ার ধোঁকা থেকে সতর্কতা:
    • দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতই স্থায়ী (আয়াত: ১৪)।

💡 সূরা আস-সাজদাহর আমল ও প্রয়োগ:

  1. নিয়মিত তিলাওয়াত:
    • বিশেষত রাতের নামাজে (তাহাজ্জুদ) পড়া উত্তম।
  2. সিজদাহ আদায়:
    • ১৫ নং আয়াত পড়া বা শোনার পর ওয়াজিব সিজদাহ দিতে হবে।
  3. আখিরাতের প্রস্তুতি:
    • মৃত্যু ও কিয়ামতের স্মরণে জীবন গঠন করা।
  4. দুনিয়ার মোহ ত্যাগ:
    • অহংকার, লোভ ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা।

📚 হাদিসে বর্ণিত ফজিলত:

  1. রাসূল () বলেছেন:

“যে ব্যক্তি সূরা আস-সাজদাহ পড়বে, সে যেন পূর্ণ রাত কিয়াম করল।” (তিরমিজি)।

  1. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন:

“এ সূরা পড়লে শয়তান পালিয়ে যায় এবং কিয়ামতের ভয় জাগ্রত হয়।”

✅ উপসংহার:

সূরা আস-সাজদাহ আল্লাহর মহিমা, কিয়ামতের ভয় ও সিজদাহর গুরুত্ব শিক্ষা দেয়। এটি নিয়মিত পড়লে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্তি মেলে।

📌 সূত্র:

  • কুরআনুল কারিম (সূরা আস-সাজদাহ)।
  • সহিহ বুখারী, তিরমিজি।
  • তাফসীর ইবনে কাসির।

🌿 আল্লাহ আমাদের এ সূরার শিক্ষা অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফিক দিন! আমীন।

সূরাটির শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই

সূরা আস-সাজদাহ: শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত বিশ্লেষণ

📜 সূরা আস-সাজদাহর শানে নুযূল (নাজিলের প্রেক্ষাপট)

  1. মক্কার মুশরিকদের সংশয়ের জবাব:
    • মক্কার কাফিররা পুনরুত্থান (কিয়ামত) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করত। তারা প্রশ্ন করত: “মৃত্যুর পর কীভাবে আমরা পুনর্জীবিত হব?” (আয়াত ১০)।
    • এ সূরায় তাদের সংশয়ের জবাবে মানুষের সৃষ্টি, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
  2. ফেরাউন ও পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের ইতিহাস:
    • ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের অহংকার ও শাস্তির কথা উল্লেখ করে সতর্ক করা হয়েছে (আয়াত ২৩-২৫)।
  3. ঈমানদারদের উৎসাহ:
    • মক্কার নিষ্পেষিত মুসলিমদের সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে: “জান্নাতই চূড়ান্ত বিজয়” (আয়াত ১৯)।

🔍 সূরা আস-সাজদাহর গুরুত্বপূর্ণ দিক

  1. সিজদাহর নির্দেশ:
    • এ সূরার ১৫ নং আয়াতে ওয়াজিব সিজদাহ রয়েছে, যা আল্লাহর নিদর্শনে বিনয় প্রকাশের শিক্ষা দেয়।
  2. কিয়ামতের বর্ণনা:
    • কবর থেকে উত্থান, হিসাব-নিকাশ ও জান্নাত-জাহান্নামের স্পষ্ট চিত্র (আয়াত ১০-১২, ১৭-২২)।
  3. দুনিয়া ও আখিরাতের সমীকরণ:
    • দুনিয়ার জীবন “মাত্র খেলাধুলা ও শোভা” (আয়াত ১৪), আর আখিরাতই স্থায়ী।
  4. প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শন:
    • আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী ইত্যাদি আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ (আয়াত ৪-৯)।
  5. মুমিন-কাফিরের বৈশিষ্ট্য:
    • মুমিনরা রাতে সিজদায় পড়ে থাকে, কাফিররা নিদর্শন দেখেও অস্বীকার করে (আয়াত ১৫-১৬)।

📚 সূরা আস-সাজদাহর মূল শিক্ষা

  1. তাওহিদ ও আল্লাহর কুদরত:
    • সবকিছুর স্রষ্টা আল্লাহ, তিনি জীবিত করেন ও মৃত্যু দেন।
  2. আখিরাতের প্রস্তুতি:
    • দুনিয়ার জীবনের সব কাজের হিসাব দেওয়া হবে।
  3. প্রকৃতি থেকে শিক্ষা:
    • আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে গভীর চিন্তা করা ঈমান বাড়ায়।
  4. সিজদাহর গুরুত্ব:
    • আল্লাহর সামনে পূর্ণ আত্মসমর্পণ।
  5. ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল:
    • বিপদে ধৈর্য ধারণ ও আল্লাহর উপর ভরসা করা।

📖 সূরা আস-সাজদাহর মূল বিষয়বস্তু

বিষয় আয়াত নং সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
১. আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন ৪-৯ আকাশ, পৃথিবী, মানবসৃষ্টির বিস্ময়
২. কিয়ামত ও পুনরুত্থান ১০-১২ মৃত্যুর পর পুনর্জীবন
৩. সিজদাহর নির্দেশ ১৫ আল্লাহর নিদর্শনে সিজদা
৪. মুমিন-কাফিরের পরিণতি ১৭-২২ জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা
৫. দুনিয়ার মোহ ১৪, ১৬ ক্ষণস্থায়ী জীবনের সতর্কতা

📜 সূরা আস-সাজদাহর আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ

১. আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন (আয়াত ৪-৫)

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ…”
অর্থ: “আল্লাহই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন…”

বিশ্লেষণ:

  • আল্লাহর সৃষ্টির পরিকল্পনা ও শক্তি সম্পর্কে আলোচনা।
  • বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্য: “ছয় দিন” বলতে ছয়টি ধাপ বোঝানো হয়েছে (যেমন: বিগ ব্যাং, পৃথিবীর গঠন ইত্যাদি)।

২. কিয়ামতের ভয়াবহতা (আয়াত ১০-১২)

وَقَالُوا أَئِذَا ضَلَلْنَا فِي الْأَرْضِ أَئِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ…”
অর্থ: “তারা বলে, ‘যখন আমরা মাটিতে মিশে যাব, তখন কি নতুনভাবে সৃষ্টি করা হবে?’…”

বিশ্লেষণ:

  • কাফিরদের পুনরুত্থান নিয়ে সন্দেহের জবাব দেওয়া হয়েছে।
  • উদাহরণ: মানুষকে প্রথমবার সৃষ্টি করা যেমন সম্ভব, পুনরায় সৃষ্টি করাও তেমনই সহজ।

৩. সিজদাহর নির্দেশ (আয়াত ১৫)

إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا الَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِهَا خَرُّوا سُجَّدًا…”
অর্থ: “আমার আয়াতসমূহে তারাই ঈমান আনে, যাদেরকে যখন স্মরণ করানো হয়, তারা সিজদায় পড়ে যায়…”

বিশ্লেষণ:

  • সিজদাহর মাধ্যমে ঈমানের প্রকাশ ঘটে।
  • ওয়াজিব সিজদাহ: এ আয়াত পড়া বা শোনার পর সিজদা দেওয়া আবশ্যক।

৪. মুমিনদের জান্নাত (আয়াত ১৯)

أَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَأْوَىٰ…”
অর্থ: “যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য আছে জান্নাতুল মাওয়া…”

বিশ্লেষণ:

  • জান্নাতের প্রতিদান ঈমান ও আমলের উপর নির্ভরশীল।
  • জান্নাতুল মাওয়া: উচ্চ মর্যাদার জান্নাত।

৫. দুনিয়ার ধোঁকা (আয়াত ১৪)

ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمُ اسْتَحَبُّوا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْآخِرَةِ…”
অর্থ: “এটা এ কারণে যে, তারা আখিরাতের চেয়ে দুনিয়ার জীবনকে বেশি পছন্দ করে…”

বিশ্লেষণ:

  • দুনিয়ার মোহ মানুষকে আখিরাত থেকে গাফিল করে।
  • সতর্কতা: দুনিয়ার সম্পদ ও শক্তি ক্ষণস্থায়ী।

📌 উপসংহার: সূরা আস-সাজদাহর মূল বার্তা

  1. আল্লাহর একত্ব ও সৃষ্টি নিদর্শনে বিশ্বাস
  2. কিয়ামতের প্রস্তুতি ও হিসাবের ভয়
  3. সিজদাহর মাধ্যমে বিনয় প্রকাশ
  4. দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আখিরাতকেই প্রাধান্য দেওয়া
  5. প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে ঈমান বাড়ানো

🌿 আল্লাহ আমাদের এ সূরার শিক্ষা বাস্তবায়নের তাওফিক দিন! আমীন।

সূরা আস সাজদাহ আয়াত ১৩, ৯৩, ১৪, ১৭, ১৩-১৪ আয়াত ও অর্থসহ ব্যাখ্যা

সূরা আস-সাজদাহর নির্বাচিত আয়াতসমূহ: অর্থ ও ব্যাখ্যা

🔹 আয়াত ১৩ (সূরা আস-সাজদাহ ৩২:১৩)

وَلَوْ شِئْنَا لَآتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا وَلَٰكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّي لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
অর্থ:
“আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সঠিক পথ দান করতাম, কিন্তু আমার পক্ষ থেকে এ বাক্য সত্য হয়েছে যে, আমি জাহান্নামকে জিন ও মানুষ দ্বারা পূর্ণ করব।”

📌 ব্যাখ্যা:

  • আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতা প্রকাশ: তিনি চাইলে সবাইকে হিদায়াত দিতে পারতেন, কিন্তু ইলাহী হিকমতে কিছু সৃষ্টিকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন।
  • গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা:
  1. হিদায়াত আল্লাহর হাতে, কিন্তু মানুষকে পছন্দের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
  2. জাহান্নামের শাস্তি অহংকারী ও পথভ্রষ্টদের জন্য প্রস্তুত।

🔹 আয়াত ৯৩ (দ্রষ্টব্য: সূরা আস-সাজদাহতে ৯৩ নং আয়াত নেই)

সূরা আস-সাজদাহ মোট ৩০টি আয়াত বিশিষ্ট। সম্ভবত আয়াত ১৯ বা অন্য কোনো সূরার আয়াত উদ্দেশ্য। নিচে প্রাসঙ্গিক আয়াত দেওয়া হলো:

আয়াত ১৯ (সূরা আস-সাজদাহ ৩২:১৯)

أَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَأْوَىٰ نُزُلًا بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থ:
“যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া, তাদের আমলের প্রতিদানস্বরূপ।”

📌 ব্যাখ্যা:

  • মুমিনদের জন্য জান্নাতুল মাওয়া (উচ্চ মর্যাদার জান্নাত) এর প্রতিশ্রুতি।
  • শিক্ষা: ঈমান ও আমলই জান্নাতের একমাত্র চাবিকাঠি।

🔹 আয়াত ১৪ (সূরা আস-সাজদাহ ৩২:১৪)

فَذُوقُوا بِمَا نَسِيتُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَٰذَا إِنَّا نَسِينَاكُمْ ۖ وَذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
অর্থ:
“অতএব আজকের দিনের সাক্ষাতকে তোমরা যেভাবে ভুলে ছিলে, তার শাস্তি আস্বাদন করো। নিশ্চয় আমিও তোমাদের ভুলে গেলাম। আর তোমরা যা করতে, তার কারণে চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করো।”

📌 ব্যাখ্যা:

  • কাফিরদেরকে জাহান্নামের শাস্তি দেওয়ার সময় বলা হবে।
  • গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:
  1. আখিরাতকে উপেক্ষা করার পরিণতি ভয়াবহ।
  2. “আমিও তোমাদের ভুলে গেলাম” অর্থাৎ আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করা।

🔹 আয়াত ১৭ (সূরা আস-সাজদাহ ৩২:১৭)

فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থ:
“কেউ জানে না তাদের জন্য কী কী চোখজুড়ানো নেয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তাদের আমলের প্রতিদানস্বরূপ।”

📌 ব্যাখ্যা:

  • জান্নাতের অবর্ণনীয় সুখ সম্পর্কে বর্ণনা: যা কোনো মানুষ কল্পনাও করতে পারে না।
  • শিক্ষা:
  1. আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার মানুষের ধারণার বাইরে।
  2. সৎকাজের প্রতিদান শুধু দুনিয়ায় নয়, আখিরাতেই পূর্ণ হবে।

🔹 আয়াত ১৩-১৪ (সূরা আস-সাজদাহ ৩২:১৩-১৪)

وَلَوْ شِئْنَا لَآتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا وَلَٰكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّي لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ ﴿١٣﴾ فَذُوقُوا بِمَا نَسِيتُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَٰذَا إِنَّا نَسِينَاكُمْ ۖ وَذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ﴿١٤﴾
অর্থ:
“আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যেককে হিদায়াত দিতাম, কিন্তু আমার বাক্য সত্য যে, জাহান্নামকে জিন ও মানুষ দ্বারা পূর্ণ করব (১৩)। অতএব, আজকের দিনের সাক্ষাতকে তোমরা যেভাবে ভুলে ছিলে, তার শাস্তি আস্বাদন করো। নিশ্চয় আমিও তোমাদের ভুলে গেলাম। চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করো তোমাদের কর্মের কারণে (১৪)।”

📌 সমন্বিত ব্যাখ্যা:

  1. আল্লাহর ন্যায়বিচার:
    • আল্লাহ সবাইকে হিদায়াত দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি পরীক্ষার জন্য স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন।
  2. জাহান্নামের ভয়াবহতা:
    • যারা আল্লাহ ও কিয়ামতকে ভুলে যায়, তাদের জন্য চিরস্থায়ী শাস্তি।
  3. শিক্ষা:
    • দুনিয়ার জীবনে সঠিক পথ বেছে নেওয়া জরুরি, কারণ পরিণতি অনন্তকালীন।

📋 সারসংক্ষেপ: আয়াতগুলোর মূল বার্তা

আয়াত মূল বিষয় প্রধান শিক্ষা
১৩ আল্লাহর ইচ্ছা ও জাহান্নাম হিদায়াত আল্লাহর হাতে, কিন্তু পছন্দের দায়িত্ব মানুষের
১৪ কাফিরদের শাস্তি আখিরাতকে ভুললে চিরস্থায়ী শাস্তি
১৭ জান্নাতের অদৃশ্য নেয়ামত সৎকাজের পুরস্কার অপরিসীম
১৩-১৪ ন্যায়বিচার ও শাস্তির ঘোষণা দুনিয়ার কাজের ফল আখিরাতে ভোগ করতে হবে

🌿 আল্লাহ আমাদের এই সূরার শিক্ষা অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফিক দিন! আমীন।