সূরা আশ শুরা এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা আশ শুরা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।
সূরা আশ শুরা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ
সূরা আশ-শুরা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. সূরা আশ-শুরা মক্কায় নাকি মদিনায় নাযিল হয়েছে?
উত্তর: মক্কায় নাযিল হয়েছে।
২. সূরা আশ-শুরা কত নং সূরা?
উত্তর: ৪২ নং সূরা।
৩. সূরা আশ-শুরার আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তর: ৫৩ টি আয়াত।
৪. সূরা আশ-শুরার অর্থ কী?
উত্তর: “পরামর্শ” বা “মন্ত্রণা”।
৫. এই সূরায় আল্লাহ তায়ালা কোন বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: “আশ-শুরা” বা পরামর্শ প্রদানের গুণ।
৬. সূরা আশ-শুরায় কোন নবীর নাম এসেছে?
উত্তর: হযরত মুহাম্মদ (সা.), ইব্রাহিম (আ.), নূহ (আ.), মুসা (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর কথা উল্লেখ আছে।
৭. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহর কোন বিশেষ অনুগ্রহের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: রিজিক দান, বৃষ্টি বর্ষণ ও জীবন-মৃত্যুর নিয়ন্ত্রণ।
৮. এই সূরায় কাফিরদের কীসের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে?
উত্তর: তাওহীদ ও একত্ববাদের দিকে।
আরও পড়তে পারেন-- সূরা কাসাস সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন এবং MCQ
৯. সূরা আশ-শুরায় মুমিনদের কীসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: পারস্পরিক পরামর্শ (শুরা) করার।
১০. এই সূরায় আল্লাহর কোন সৃষ্টির কথা বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী, গাছপালা ইত্যাদি।
১১. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহ তায়ালা কীসের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন?
উত্তর: কিয়ামত ও হিসাব-নিকাশের ব্যাপারে।
১২. এই সূরায় আল্লাহ তায়ালা মানুষের কোন স্বভাবের কথা বলেছেন?
উত্তর: বিপদে ধৈর্য হারানো ও সুখে অহংকার করা।
১৩. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম আমল কী বলা হয়েছে?
উত্তর: একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করা।
১৪. এই সূরায় আল্লাহ কিসের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করেন?
উত্তর: ওহী ও নবীদের মাধ্যমে।
১৫. সূরা আশ-শুরায় মুমিনদের কীসের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: জান্নাত ও আল্লাহর রহমতের।
১৬. এই সূরায় শিরকের কী বলা হয়েছে?
উত্তর: শিরক মারাত্মক জুলুম ও ভ্রষ্টতা।
১৭. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহর নিদর্শনগুলো কী কী?
উত্তর: প্রকৃতি, রাত-দিনের আবর্তন, বৃষ্টি ইত্যাদি।
১৮. এই সূরায় আল্লাহ কিসের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন?
উত্তর: দুনিয়ার জীবনের মোহ ও ধোঁকা সম্পর্কে।
১৯. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহ কীসের মাধ্যমে মানুষকে হিদায়াত দেন?
উত্তর: কুরআন ও নবীদের মাধ্যমে।
২০. এই সূরার শেষে আল্লাহ কী বলেছেন?
উত্তর: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
সূরা আশ-শুরা সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)
১. সূরা আশ-শুরা কোন ধরনের সূরা?
- a) মাদানী
b) মাক্কী
c) মিশ্র
d) কোনটিই নয়
২. সূরা আশ-শুরার আয়াত সংখ্যা কত?
- a) ৫০
b) ৫৩
c) ৫৫
d) ৬০
৩. “আশ-শুরা” শব্দের অর্থ কী?
- a) রহমত
b) পরামর্শ
c) বিজয়
d) ইবাদত
৪. সূরা আশ-শুরায় কার কথা বলা হয়েছে?
- a) শুধু মুহাম্মদ (সা.)
b) একাধিক নবী
c) শুধু ফেরেশতাদের
d) শুধু কাফিরদের
৫. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহ কীসের নির্দেশ দিয়েছেন?
- a) জিহাদ
b) শুরা (পরামর্শ)
c) সাদাকা
d) হজ্জ
৬. এই সূরায় আল্লাহর কোন গুণের কথা বলা হয়েছে?
- a) পরামর্শদাতা
b) শাস্তিদাতা
c) সম্পদদাতা
d) বিজয়দাতা
৭. সূরা আশ-শুরায় কাফিরদের কী বলা হয়েছে?
- a) তারা সত্য গ্রহণ করে
b) তারা অহংকার করে
c) তারা ইমান আনে
d) তারা ক্ষমাপ্রার্থী
৮. এই সূরায় আল্লাহ কীসের নিদর্শন বর্ণনা করেছেন?
- a) শুধু আকাশ
b) শুধু পৃথিবী
c) প্রকৃতি ও সৃষ্টিজগত
d) শুধু সমুদ্র
৯. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহ কীসের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন?
- a) ব্যবসা-বাণিজ্য
b) কিয়ামত ও হিসাব
c) বিয়ে-শাদী
d) রাজনীতি
১০. এই সূরায় মুমিনদের কীসের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে?
- a) শুধু দুনিয়ার সম্পদ
b) শুধু সুখ
c) জান্নাত ও রহমত
d) শুধু সম্মান
১১. সূরা আশ-শুরায় শিরককে কী বলা হয়েছে?
- a) ছোট গুনাহ
b) মারাত্মক জুলুম
c) সাধারণ ভুল
d) ক্ষমাযোগ্য অপরাধ
১২. এই সূরায় আল্লাহ কীসের মাধ্যমে হিদায়াত দেন?
- a) শুধু কুরআন
b) শুধু নবী
c) কুরআন ও নবী
d) শুধু ফেরেশতা
১৩. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহর নিদর্শন কী কী?
- a) শুধু রাত-দিন
b) শুধু বৃষ্টি
c) প্রকৃতি ও মহাবিশ্ব
d) শুধু পাহাড়
১৪. এই সূরায় মানুষকে কোন স্বভাবের কথা বলা হয়েছে?
- a) সব সময় ধৈর্যশীল
b) বিপদে ধৈর্য হারায়
c) সব সময় কৃতজ্ঞ
d) সব সময় সত্যবাদী
১৫. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম আমল কী?
- a) বেশি নামাজ পড়া
b) বেশি দান করা
c) একনিষ্ঠ ইবাদত
d) বেশি রোজা রাখা
১৬. এই সূরায় আল্লাহ কীসের মাধ্যমে সতর্ক করেন?
- a) শুধু স্বপ্নের মাধ্যমে
b) শুধু ফেরেশতার মাধ্যমে
c) ওহী ও নবীদের মাধ্যমে
d) শুধু কুরআনের মাধ্যমে
১৭. সূরা আশ-শুরায় দুনিয়ার জীবনকে কী বলা হয়েছে?
- a) স্থায়ী সুখ
b) ধোঁকা ও মোহ
c) শাস্তির স্থান
d) ইবাদতের শেষ স্থান
১৮. এই সূরার শেষ আয়াতে আল্লাহর কোন গুণ বর্ণিত হয়েছে?
- a) ক্ষমাশীল ও দয়ালু
b) শক্তিশালী ও প্রতাপশালী
c) জ্ঞানী ও বিচক্ষণ
d) ধৈর্যশীল ও সহনশীল
১৯. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহ কীসের উল্লেখ করেছেন?
- a) শুধু ইহকাল
b) শুধু পরকাল
c) ইহকাল ও পরকাল
d) শুধু নবীদের ইতিহাস
২০. এই সূরায় কোন নবীর উল্লেখ নেই?
- a) মুসা (আ.)
b) ঈসা (আ.)
c) ইউসুফ (আ.)
d) ইব্রাহিম (আ.)
২১. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহ কীসের মালিক?
- a) শুধু আকাশের
b) শুধু পৃথিবীর
c) সব কিছুর
d) শুধু মানুষের
২২. এই সূরায় আল্লাহ কীসের নির্দেশ দেন?
- a) শুধু নামাজের
b) শুধু যাকাতের
c) ন্যায়বিচার ও সত্যের
d) শুধু হজ্জের
২৩. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহর রহমত কেমন?
- a) সীমিত
b) অসীম
c) শুধু মুমিনদের জন্য
d) শুধু নবীদের জন্য
২৪. এই সূরায় আল্লাহ কীসের কথা বলেছেন?
- a) শুধু শাস্তির
b) শুধু পুরস্কারের
c) শাস্তি ও পুরস্কার উভয়ই
d) শুধু দুনিয়ার জীবন
২৫. সূরা আশ-শুরায় আল্লাহর বাণী কীসের মাধ্যমে এসেছে?
- a) শুধু কিতাবের মাধ্যমে
b) শুধু নবীদের মাধ্যমে
c) কিতাব ও নবীদের মাধ্যমে
d) শুধু ফেরেশতাদের মাধ্যমে
এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো সূরা আশ-শুরার মূল বিষয়বস্তু ও শিক্ষাকে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করে। আশা করি এটি আপনার জন্য সহায়ক হবে!
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই
সূরা আশ-শুরা: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু, ফযিলত ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত
১. সংক্ষিপ্ত পরিচয়
- নাম: সূরা আশ-শুরা (আরবি: الشورى)
- অর্থ: “পরামর্শ”
- সূরার নম্বর: ৪২
- আয়াত সংখ্যা: ৫৩
- নুযূলের স্থান: মক্কা (মাক্কী সূরা)
- পারা: ২৫তম পারা
- রুকু সংখ্যা: ৫
এই সূরায় তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, আল্লাহর নিদর্শন, শুরা (পরামর্শ) ও নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
২. শানে নুযূল (প্রেক্ষাপট)
সূরা আশ-শুরা মক্কায় নাযিল হয়, যখন কুরাইশ নেতারা ইসলাম ও রাসূল (সা.)-কে কঠোরভাবে প্রতিহত করছিল। এই সূরায় আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের দাওয়াতের পদ্ধতি ও কাফিরদের অহংকারের জবাব দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, শুরা (পরামর্শ)-এর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, যা মুসলিম সমাজের জন্য একটি মূলনীতি।
৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক
- তাওহীদের দাওয়াত: আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর গুণাবলীর বর্ণনা।
- রিসালাতের ধারাবাহিকতা: পূর্ববর্তী নবীদের দাওয়াতের মিল খুঁজে দেখা।
- আখিরাতের সতর্কতা: কিয়ামত, হিসাব-নিকাশ ও জান্নাত-জাহান্নামের বিবরণ।
- শুরার গুরুত্ব: মুমিনদের পারস্পরিক পরামর্শের আদেশ।
- প্রকৃতির নিদর্শন: আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে হিকমত ও ইবাদতের আহ্বান।
৪. সূরাটির শিক্ষা
- আল্লাহর উপর ভরসা রেখে যেকোনো কাজে পরামর্শ নেওয়া।
- অহংকার ত্যাগ করে সত্য গ্রহণ করা।
- প্রকৃতির নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করে আল্লাহর পরিচয় লাভ করা।
- দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়া।
- ন্যায়বিচার ও সৎকর্মের মাধ্যমে সমাজ গঠন করা।
৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু
বিষয় | আলোচ্য要点 |
তাওহীদ | আল্লাহর একত্ব, ক্ষমতা ও রহমতের বর্ণনা (আয়াত ১-১২)। |
রিসালাত | নবীদের আগমন ও তাদের প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়া (আয়াত ১৩-২০)। |
আখিরাত | কিয়ামত, পুনরুত্থান ও প্রতিদান (আয়াত ২১-৩৫)। |
শুরা (পরামর্শ) | মুমিনদের জন্য পরামর্শের গুরুত্ব (আয়াত ৩৬-৩৯)। |
প্রকৃতির নিদর্শন | আকাশ, পৃথিবী, বৃষ্টি ইত্যাদিতে আল্লাহর হিকমত (আয়াত ৪০-৫৩)। |
৬. সূরাটির ফযিলত
- পরামর্শের গুরুত্ব: এই সূরায় শুরা (পরামর্শ)-এর বিধান দেওয়া হয়েছে, যা ইসলামী শাসন ও সমাজ ব্যবস্থার মূলভিত্তি।
- আল্লাহর রহমতের প্রতিশ্রুতি: সূরার শেষে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য ক্ষমাশীল ও দয়ালু” (আয়াত ৫৩)।
- তাওহীদের শিক্ষা: এই সূরায় আল্লাহর গুণাবলী ও নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৭. সূরার আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ)
১. তাওহীদ (আল্লাহর একত্ব)
আয়াত ১১:
“আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
(فَاطِرُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَمِنَ الْأَنْعَامِ أَزْوَاجًا ۖ يَذْرَؤُكُمْ فِيهِ ۚ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ)
২. রিসালাত (নবীদের দায়িত্ব)
আয়াত ১৩:
“তিনি তোমাদের জন্য দ্বীন নির্ধারণ করেছেন, যা নূহকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং যা আমি তোমার প্রতি ওহী করেছি…”
(شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ…)
৩. শুরা (পরামর্শ)
আয়াত ৩৮:
“তাদের কাজ হলো পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া…”
(وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ…)
৪. প্রকৃতির নিদর্শন
আয়াত ২৯:
“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তাঁর নিদর্শন…”
(وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ…)
৫. আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত
আয়াত ৫৩:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
(وَأَنَّ اللَّهَ بِالْعِبَادِ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ)
সারসংক্ষেপ:
সূরা আশ-শুরা তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, শুরা ও প্রকৃতির নিদর্শন নিয়ে গভীর দিকনির্দেশনা দেয়। এটি মুমিনদেরকে পরামর্শ, ন্যায়বিচার ও আল্লাহর রহমতের প্রতি আস্থাশীল হতে শিক্ষা দেয়। এই সূরার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, ইসলামী জীবনব্যবস্থা জ্ঞান, পরামর্শ ও আল্লাহর ইবাদতের উপর প্রতিষ্ঠিত।
এই তথ্যগুলো সূরা আশ-শুরার ব্যাপক জ্ঞান প্রদান করে।
যদি আরও কোনো বিষয় জানার থাকে, জানাতে পারেন!
সূরা আশ শুরা আয়াত ৪২ , ৩০, ১৩, ২২৭, ২৩, ৫০, ৮০, ২৯, ১১, ১০ আয়াত এবং এর বাংলা অর্থসহ ব্যাখ্যা চাই
সূরা আশ-শুরা: নির্বাচিত আয়াতসমূহের বাংলা অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
নিচে সূরা আশ-শুরার আয়াত ১০, ১১, ১৩, ২৩, ২৯, ৩০, ৪২, ৫০, ৮০, ২২৭-এর বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর দেওয়া হলো। (দ্রষ্টব্য: সূরা আশ-শুরার আয়াত সংখ্যা ৫৩, তাই ৮০ ও ২২৭ নং আয়াত এ সূরায় নেই। সম্ভবত সূরার নম্বর বা আয়াত নম্বরে ভুল হয়েছে। আমি শুধুমাত্র সঠিক আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা দিচ্ছি।)
১. আয়াত ১০ (সূরা আশ-শুরা ৪২:১০)
আরবি:
وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِن شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ
বাংলা অর্থ:
“তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছ, তার ফায়সালা আল্লাহরই কাছে।”
ব্যাখ্যা:
- এ আয়াতে মতভেদের সমাধান আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- ইসলামে সকল বিরোধের চূড়ান্ত সমাধান হলো কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণ।
- এটি মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে ও ব্যক্তিগত মতপার্থক্য এড়াতে শিক্ষা দেয়।
২. আয়াত ১১ (সূরা আশ-শুরা ৪২:১১)
আরবি:
فَاطِرُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَمِنَ الْأَنْعَامِ أَزْوَاجًا ۖ يَذْرَؤُكُمْ فِيهِ ۚ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
বাংলা অর্থ:
“তিনি আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা; তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তুদের মধ্য থেকেও জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশবৃদ্ধি করেন। তাঁর মতো কেউ নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”
ব্যাখ্যা:
- এ আয়াতে আল্লাহর তাওহীদ ও সৃষ্টির মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে।
- তিনি মানুষ ও প্রাণীর জোড়া সৃষ্টি করেছেন, যা তাঁর অসীম ক্ষমতার প্রমাণ।
- “তাঁর মতো কেউ নেই”—এ অংশে শিরকের অসারতা প্রমাণিত হয়।
৩. আয়াত ১৩ (সূরা আশ-শুরা ৪২:১৩)
আরবি:
شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ ۖ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
বাংলা অর্থ:
“তিনি তোমাদের জন্য সেই দ্বীন প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং যা আমি তোমার প্রতি ওহী করেছি, আর যা ইব্রাহিম, মুসা ও ঈসাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে বিভেদ সৃষ্টি করো না।”
ব্যাখ্যা:
- এ আয়াতে সমস্ত নবীর দাওয়াতের মূল বিষয় এক—তা হলো তাওহীদ ও ইবাদত।
- “দ্বীনে বিভেদ সৃষ্টি করো না”—এ অংশে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪. আয়াত ২৩ (সূরা আশ-শুরা ৪২:২৩)
আরবি:
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً
বাংলা অর্থ:
“তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।”
ব্যাখ্যা:
- এ আয়াতে বিবাহ ও দাম্পত্য জীবনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
- ভালোবাসা ও রহমত আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত, যা দাম্পত্য সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে।
৫. আয়াত ২৯ (সূরা আশ-শুরা ৪২:২৯)
আরবি:
وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَثَّ فِيهِمَا مِن دَابَّةٍ
বাংলা অর্থ:
“তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এ দুটিতে যা কিছু বিচরণশীল প্রাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন।”
ব্যাখ্যা:
- এ আয়াতে প্রকৃতির নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করতে বলা হয়েছে।
- আকাশ, পৃথিবী ও প্রাণীকুল আল্লাহর মহিমার সাক্ষ্য দেয়।
৬. আয়াত ৩০ (সূরা আশ-শুরা ৪২:৩০)
আরবি:
وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ
বাংলা অর্থ:
“তোমাদের উপর যে বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজেদের কৃতকর্মের কারণে; আর তিনি অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন।”
ব্যাখ্যা:
- এ আয়াতে বিপদ-আপদের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
- মানুষের পাপই অনেক সময় বিপদের কারণ হয়, তবে আল্লাহ অনেক গুনাহ মাফও করেন।
৭. আয়াত ৪২ (সূরা আশ-শুরা ৪২:৪২)
আরবি:
إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَظْلِمُونَ النَّاسَ وَيَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ
বাংলা অর্থ:
“পথ (শাস্তি) সেইসব লোকদের উপর, যারা মানুষদের উপর জুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে।”
ব্যাখ্যা:
- এ আয়াতে জালিমদের জন্য শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
- অন্যায় ও সীমালঙ্ঘন আল্লাহর কাছে অগ্রহণযোগ্য।
৮. আয়াত ৫০ (সূরা আশ-শুরা ৪২:৫০)
আরবি:
أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا ۖ وَيَجْعَلُ مَن يَشَاءُ عَقِيمًا ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ
বাংলা অর্থ:
“অথবা তিনি তাদেরকে পুত-কন্যা দিয়ে জোড়া দেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।”
ব্যাখ্যা:
- এ আয়াতে সন্তানদান আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়—এ truth প্রকাশ পায়।
- তিনি যাকে ইচ্ছা সন্তান দেন, আবার কাউকে বন্ধ্যাও রাখেন।
সারসংক্ষেপ:
এই আয়াতগুলোতে তাওহীদ, নবীদের শিক্ষা, দাম্পত্য জীবন, প্রকৃতির নিদর্শন, বিপদের কারণ, ন্যায়বিচার ও সন্তানলাভ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যদি নির্দিষ্ট কোনো আয়াত সম্পর্কে আরও ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয়, জানাতে পারেন!