সূরা আল মুলক এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় আলোচনা এবং সূরা আল মুলক সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো।
সূরা আল-মুলক
সূরা আল মুলক সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ
১. সূরা আল-মুলক মক্কী না মাদানী সূরা?
উত্তর: মক্কী সূরা।
২. সূরা আল-মুলক কত নং সূরা?
উত্তর: ৬৭ নং সূরা।
৩. সূরা আল-মুলকে কয়টি আয়াত আছে?
উত্তর: ৩০টি আয়াত।
৪. সূরা আল-মুলকের অন্য নাম কী?
উত্তর: “তাবারাকাল্লাযী” (যে সূরার প্রথম শব্দ)।
৫. সূরা আল-মুলকের মূল বিষয় কী?
উত্তর: আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, মহাবিশ্বের নিদর্শন, মৃত্যু ও আখিরাতের সতর্কতা।
৬. সূরা আল-মুলক পড়ার বিশেষ ফজিলত কী?
উত্তর: এটি কবরের আজাব থেকে রক্ষা করে (তিরমিযী)।
৭. সূরা আল-মুলকে কী জাহান্নামের কথা উল্লেখ আছে?
উত্তর: হ্যাঁ, জাহান্নামের শাস্তি ও সেখানে রাখালদের কথা বলা হয়েছে (আয়াত ৫-১১)।
৮. সূরা আল-মুলকে আল্লাহ কীভাবে তাঁর ক্ষমতার প্রমাণ দেন?
উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী, জীবজন্তু সৃষ্টির মাধ্যমে।
৯. সূরা আল-মুলকের কোন আয়াতে পাখির উড়ার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আয়াত ১৯।
১০. সূরা আল-মুলক পড়লে রাতে কী সওয়াব হয়?
উত্তর: নবী (ﷺ) বলেছেন, এটি রাতে পড়লে অনেক সওয়াব হয় ও কবরে সুপারিশ করবে (হাকিম)।
১১. সূরা আল-মুলকে আল্লাহ কিসের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেছেন?
উত্তর: পরীক্ষার জন্য (আয়াত ২)।
১২. সূরা আল-মুলকে কীভাবে আল্লাহর রহমতের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: তিনি বৃষ্টি দিয়ে মৃত জমিনকে জীবিত করেন (আয়াত ১৯)।
১৩. সূরা আল-মুলকে অবিশ্বাসীদের শাস্তি কী বলা হয়েছে?
উত্তর: জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে (আয়াত ১০-১১)।
১৪. সূরা আল-মুলকে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জ, পৃথিবীর সৃষ্টি ইত্যাদি তাঁর মহিমা প্রকাশ করে।
১৫. সূরা আল-মুলকে মৃত্যুর পর কী হবে?
উত্তর: মানুষকে কবরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে (হাদীসে বর্ণিত)।
১৬. সূরা আল-মুলক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: এটি আখিরাতের স্মরণ করিয়ে দেয় ও ইমান বৃদ্ধি করে।
১৭. সূরা আল-মুলকে আল্লাহ কীভাবে মানুষকে সতর্ক করেছেন?
উত্তর: তাঁর নিদর্শনগুলো চিন্তা করতে বলেছেন এবং শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
১৮. সূরা আল-মুলকের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: “বলুন, তিনি যদি আমাদের জন্য রহমত বন্ধ করে দেন, তাহলে কে তোমাদের পানি দেবে?” (আয়াত ৩০)।
১৯. সূরা আল-মুলক পড়লে কী উপকার হয়?
উত্তর: কবরের আজাব থেকে রক্ষা পায় ও ইমান মজবুত হয়।
২০. সূরা আল-মুলক নিয়মিত পড়ার অভ্যাস কীভাবে করা যায়?
উত্তর: প্রতিদিন রাতে বা ফজরের আগে পড়লে ভালো হয়।
সূরা আল-মুলক সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)
১. সূরা আল-মুলক কোন ধরনের সূরা?
- a) মাদানী
b) মক্কী
c) মিশ্র
d) কোনোটিই নয়
২. সূরা আল-মুলকে মোট আয়াত সংখ্যা কত?
- a) ২৫
b) ৩০
c) ৩৪
d) ৪০
৩. সূরা আল-মুলকের অন্য নাম কী?
- a) আল-মুনাফিকুন
b) তাবারাকাল্লাযী
c) আল-ফাতিহা
d) আল-ইখলাস
৪. সূরা আল-মুলক কোন পারায় অবস্থিত?
- a) ২৯তম পারা
b) ৩০তম পারা
c) ১ম পারা
d) ১৫তম পারা
৫. সূরা আল-মুলক পড়লে কী হয়?
- a) কবরের আজাব থেকে রক্ষা পায়
b) ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়
c) শত্রু হারিয়ে যায়
d) রোগমুক্তি হয়
৬. সূরা আল-মুলকে আল্লাহর কোন নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে?
- a) পাহাড়
b) নদী
c) আকাশ
d) সবকটি
৭. সূরা আল-মুলকের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?
- a) আল্লাহর রহমতের কথা
b) কিয়ামতের দিনের কথা
c) জান্নাতের বর্ণনা
d) নবীদের কাহিনী
৮. সূরা আল-মুলকে জাহান্নামের কী বলা হয়েছে?
- a) সেখানে শাস্তি দেওয়া হবে
b) সেখানে শান্তি আছে
c) সেখানে কেউ যাবে না
d) কোনোটিই নয়
৯. সূরা আল-মুলকে আল্লাহ মানুষকে কেন সৃষ্টি করেছেন?
- a) খেলার জন্য
b) পরীক্ষার জন্য
c) শাস্তি দেওয়ার জন্য
d) কোনোটিই নয়
১০. সূরা আল-মুলক নিয়মিত পড়লে কী হয়?
- a) কবরে সুপারিশ করবে
b) দুনিয়ার সম্পদ বাড়বে
c) সব গুনাহ মাফ হবে
d) কোনোটিই নয়
১১. সূরা আল-মুলকে আল্লাহর কীসের কথা বলা হয়েছে?
- a) ক্ষমা
b) ক্ষমতা ও রাজত্ব
c) শাস্তি
d) রিযিক
১২. সূরা আল-মুলকে পাখির উড়ার কথা কোন আয়াতে আছে?
- a) আয়াত ১৫
b) আয়াত ১৯
c) আয়াত ২৫
d) আয়াত ৩০
১৩. সূরা আল-মুলকের মূল বার্তা কী?
- a) আল্লাহর একত্ব ও আখিরাতের সতর্কতা
b) জিহাদের নির্দেশ
c) বাণিজ্যের নিয়ম
d) বিবাহের বিধান
১৪. সূরা আল-মুলকে আল্লাহ কীভাবে মৃত জমিনকে জীবিত করেন?
- a) বৃষ্টি দিয়ে
b) আগুন দিয়ে
c) বাতাস দিয়ে
d) রোদ দিয়ে
১৫. সূরা আল-মুলক রাতে পড়লে কী হয়?
- a) কবরের আজাব থেকে বাঁচা যায়
b) স্বপ্নে নবীকে দেখা যায়
c) ধন-সম্পদ বাড়ে
d) কোনোটিই নয়
১৬. সূরা আল-মুলকে অবিশ্বাসীদের কী হবে?
- a) তারা ক্ষমা পাবে
b) জাহান্নামে যাবে
c) পৃথিবীতে শাস্তি পাবে
d) কোনোটিই নয়
১৭. সূরা আল-মুলকের শুরুতে কী বলা হয়েছে?
- a) বিসমিল্লাহ
b) তাবারাকাল্লাযী
c) আলহামদুলিল্লাহ
d) লাইলাহা ইল্লাল্লাহ
১৮. সূরা আল-মুলকে আল্লাহর কীসের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে?
- a) মহাবিশ্বের নিদর্শন
b) যুদ্ধের বিজয়
c) নবীদের মুজিজা
d) ফেরেশতাদের কাজ
১৯. সূরা আল-মুলক কোন জিনিসের উপর জোর দেয়?
- a) নামাজ
b) আল্লাহর নিদর্শন চিন্তা করা
c) হজ্জ
d) সাদাকাহ
২০. সূরা আল-মুলকে আল্লাহর রাজত্ব সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
- a) এটি অসীম
b) এটি সীমিত
c) এটি মানুষের জন্য নয়
d) কোনোটিই নয়
২১. সূরা আল-মুলকের কোন আয়াতে কবরের শাস্তির কথা ইঙ্গিত আছে?
- a) আয়াত ৯
b) আয়াত ১৫
c) আয়াত ২০
d) আয়াত ২৫
২২. সূরা আল-মুলক পড়লে কোন ফেরেশতা সুপারিশ করে?
- a) জিবরাঈল (আ.)
b) মিকাঈল (আ.)
c) ইসরাফিল (আ.)
d) সূরা নিজে সুপারিশ করবে(হাদীস অনুযায়ী)
২৩. সূরা আল-মুলকে আল্লাহ কীভাবে মানুষকে সতর্ক করেছেন?
- a) নবীদের মাধ্যমে
b) কুরআনের মাধ্যমে
c) প্রকৃতির নিদর্শন দেখিয়ে
d) ফেরেশতাদের মাধ্যমে
২৪. সূরা আল-মুলকের শেষে কী বলা হয়েছে?
- a) আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভর করতে
b) নামাজ পড়তে
c) জিহাদ করতে
d) সাদাকাহ দিতে
২৫. সূরা আল-মুলক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- a) এটি আখিরাতের স্মরণ করিয়ে দেয়
b) এটি ফিকাহের বিধান বলে
c) এটি ইতিহাস বর্ণনা করে
d) এটি বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করে
সঠিক উত্তর
এই প্রশ্নোত্তরগুলো সূরা আল-মুলকের বিষয়বস্তু ও ফজিলত বুঝতে সহায়ক হবে। আশা করি উপকারে আসবে!
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা, সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত
সূরা আল-মুলক: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু ও ফযিলত
১. সংক্ষিপ্ত পরিচয়
- নাম: সূরা আল-মুলক (আরবি: سورة الملك)
- অন্য নাম: “তাবারাকাল্লাযী” (প্রথম আয়াতের শব্দ অনুসারে)
- সূরার অবস্থান: কুরআনের ২৯তম পারা, ৬৭তম সূরা
- আয়াত সংখ্যা: ৩০টি
- প্রকার: মক্কী সূরা (মক্কায় নাযিল হয়েছে)
- মূল বিষয়: আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, সৃষ্টির নিদর্শন, মৃত্যু ও আখিরাতের সতর্কতা
২. শানে নুযূল (প্রেক্ষাপট ও নাযিলের কারণ)
- এটি মক্কায় নাযিল হয়েছিল, যখন কুরাইশ নেতারা ইসলাম ও রাসূল (ﷺ)-কে অস্বীকার করছিল।
- এ সূরার মাধ্যমে আল্লাহর মহিমা, সৃষ্টির রহস্য ও পরকালের সতর্কতা দেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষ তাওহীদ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে।
- হাদীসে এসেছে, নবী (ﷺ) প্রতিদিন রাতে এ সূরা তিলাওয়াত করতেন (তিরমিযী)।
৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক
- আল্লাহর রাজত্ব ও ক্ষমতার বর্ণনা (আয়াত ১-৫)।
- জাহান্নামের ভয়াবহতা ও সেখানে কাফিরদের শাস্তি (আয়াত ৬-১১)।
- প্রকৃতির নিদর্শনে আল্লাহর কুদরত (আয়াত ১২-২০)।
- মানুষের অহংকার ও আল্লাহর রহমতের প্রতি নির্ভরতা (আয়াত ২১-৩০)।
- মৃত্যু ও কবরের জীবন সম্পর্কে ইঙ্গিত (হাদীসে বর্ণিত)।
৪. সূরাটির শিক্ষা
আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি: সবকিছুর মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ শুধু আল্লাহর হাতে।
প্রকৃতি চিন্তা: আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী ইত্যাদি আল্লাহর নিদর্শন (আয়াত ৩-৪)।
আখিরাতের প্রস্তুতি: মৃত্যুর পর জবাবদিহি ও শাস্তি/পুরস্কার অবধারিত।
অহংকার ত্যাগ: মানুষ দুর্বল, আল্লাহর রহমত ছাড়া তার কোনো শক্তি নেই (আয়াত ২৩-২৪)।
কবরের আজাব থেকে মুক্তি: এ সূরা নিয়মিত পড়লে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু
তাওহীদ: আল্লাহই একমাত্র মালিক, রাজা ও সৃষ্টিকর্তা।
সৃষ্টির লক্ষ্য: মানুষকে পরীক্ষার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে (আয়াত ২)।
প্রকৃতির নিদর্শন: পাখির উড়া, বৃষ্টি, মৃত জমির জীবনদান ইত্যাদি আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ।
সতর্কবার্তা: যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত (আয়াত ১০-১১)।
আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসা: তিনিই জীবন-মৃত্যুর মালিক (আয়াত ৩০)।
৬. সূরাটির ফযিলত (মাহাত্ম্য)
কবরের আজাব থেকে রক্ষা:
রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
“সূরা আল-মুলক কবরের আজাব থেকে বাঁচায় এবং কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।” (তিরমিযী, হাকিম)
রাতে পড়ার ফযিলত:
নবী (ﷺ) বলেছেন,
“এ সূরা প্রতিদিন রাতে পড়লে তা ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য দেবে ও কবরে তার সঙ্গী হবে।” (নাসাঈ)
৩০টি আয়াত ৩০টি গুনাহ মাফের কারণ:
হাদীসে এসেছে,
“এ সূরার প্রতিটি আয়াত একটি করে গুনাহ মাফ করে দেয়।” (তাবরানী)
জান্নাতের সুসংবাদ:
ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন,
“যে ব্যক্তি সূরা আল-মুলক মুখস্থ করবে ও নিয়মিত পড়বে, তা তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।”
সারসংক্ষেপ:
সূরা আল-মুলক আল্লাহর ক্ষমতা, সৃষ্টির রহস্য ও আখিরাতের সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করে।
নিয়মিত তিলাওয়াত কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করে ও আধ্যাত্মিক শক্তি বাড়ায়।
শিক্ষা: আল্লাহর নিদর্শন চিন্তা করুন, অহংকার ত্যাগ করুন এবং আখিরাতের প্রস্তুতি নিন।
উপদেশ: প্রতিদিন এ সূরা পড়ুন, বিশেষত রাতে ঘুমানোর আগে, যাতে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত
সূরা আল-মুলকের আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ) ও বিস্তারিত বিশ্লেষণ
**১. আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও সৃষ্টির মহিমা
আয়াত (৬৭:১-২):
تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“মহিমান্বিত তিনি, যার হাতে সব রাজত্ব এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
“যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন—কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ।”
বিশ্লেষণ:
- আল্লাহই একমাত্র মালিক, তাঁর হাতেই সব ক্ষমতা (مُلْكُ)।
- মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টির উদ্দেশ্য: মানুষকে পরীক্ষা করা (ليبلوكم)।
- শিক্ষা: আমাদের প্রতিটি কাজই আল্লাহর দরবারে মূল্যায়িত হবে।
**২. জাহান্নামের ভয়াবহতা ও সতর্কতা
আয়াত (৬৭:৬-৮):
وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
“যারা তাদের রবকে অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি—এটা অত্যন্ত নিকৃষ্ট গন্তব্য।”
إِذَا أُلْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُ
“যখন তাদের সেখানে নিক্ষেপ করা হবে, তারা জাহান্নামের গর্জন শুনবে আর তা উত্তাল হয়ে ফুটতে থাকবে।”
বিশ্লেষণ:
- কুফরকারীদের জন্য জাহান্নাম অনিবার্য।
- বর্ণনা: জাহান্নামের গর্জন ও উত্তাপ এত ভয়ঙ্কর যে কাফিররা তা শুনেই আতঙ্কিত হবে।
- শিক্ষা: আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকতে ইমান ও নেক আমল জরুরি।
**৩. প্রকৃতির নিদর্শনে আল্লাহর কুদরত
আয়াত (৬৭:১৯):
أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَافَّاتٍ وَيَقْبِضْنَ ۚ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا الرَّحْمَٰنُ
“তারা কি উড়ন্ত পাখিদের দিকে দেখে না, যারা ডানা মেলে ধরে ও ভাঁজ করে? তাদেরকে (বাতাসে) ধরে রাখেন পরম দয়ালু আল্লাহ ছাড়া কেউ নয়।”
বিশ্লেষণ:
- পাখির উড়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিখুঁত ব্যবস্থাপনা প্রমাণিত।
- বৈজ্ঞানিক ইঙ্গিত: বাতাসের প্রবাহ, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি—সবই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে।
- শিক্ষা: প্রকৃতির ছোট থেকে বড় সবকিছুতেই তাওহীদের প্রমাণ নিহিত।
**৪. মানুষের দুর্বলতা ও আল্লাহর রহমতের প্রতি নির্ভরতা
আয়াত (৬৭:২৩-২৪):
قُلْ هُوَ الَّذِي أَنشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۖ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ
“বলো, তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও হৃদয়। অথচ তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।”
قُلْ هُوَ الَّذِي ذَرَأَكُمْ فِي الْأَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
“বলো, তিনিই তোমাদের পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদের একত্রিত করা হবে।”
বিশ্লেষণ:
- মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা আল্লাহর দান, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অকৃতজ্ঞ।
- মৃত্যুপরবর্তী জীবন: সবাইকে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হবে (حشر)।
- শিক্ষা: আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় ও আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়া আবশ্যক।
**৫. আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসা
আয়াত (৬৭:৩০):
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَن يَأْتِيكُم بِمَاءٍ مَّعِينٍ
“বলো, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভে তলিয়ে যায়, তবে কে তোমাদের জন্য প্রবাহিত পানি নিয়ে আসবে?”
বিশ্লেষণ:
- পানির মতো মৌলিক নিয়ামতও আল্লাহর ইচ্ছাধীন।
- মক্কার প্রেক্ষাপট: মরুভূমিতে পানির অপরিহার্যতা তুলে ধরে আল্লাহর রহমতের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
- শিক্ষা: সব কিছুর জন্য আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করতে হবে এবং তাঁর নিয়ামতের মূল্য দিতে হবে।
সারসংক্ষেপ:
বিষয় | আয়াত | মূল বার্তা |
আল্লাহর রাজত্ব | ৬৭:১-২ | সব ক্ষমতা আল্লাহর, জীবন-মৃত্যু তাঁর পরীক্ষা। |
জাহান্নামের শাস্তি | ৬৭:৬-৮ | কুফরির পরিণতি ভয়াবহ। |
প্রকৃতির নিদর্শন | ৬৭:১৯ | পাখির উড়ান আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ। |
মানুষের অকৃতজ্ঞতা | ৬৭:২৩-২৪ | আল্লাহর দেয়া নিয়ামতের শুকরিয়া কম। |
আল্লাহর রহমতের প্রয়োজন | ৬৭:৩০ | সব কিছুর জন্য তাঁরই ওপর নির্ভরতা। |
প্রয়োগ:
- এই আয়াতগুলো তাফসীর সহকারে পড়লে ইমান বৃদ্ধি পায়।
- প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে আল্লাহর মহিমা উপলব্ধি করুন।
- কবরের আজাব থেকে বাঁচতে সূরা আল-মুলক নিয়মিত তিলাওয়াত করুন।