সূরা আল আরাফ (আরবি: سورة الأعراف) হল পবিত্র কুরআনের ৭ম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয় এবং এর আয়াত সংখ্যা ২০৬টি। এই সূরার নাম “আল আরাফ” এর অর্থ হলো “উচ্চ স্থান” বা “সীমান্ত”। সূরাটি মানুষের সৃষ্টি, আদম ও ইবলিসের কাহিনী, বিভিন্ন নবী-রাসূলদের কাহিনী, এবং পরকালের বর্ণনা নিয়ে আলোচনা করে। এটি মানুষের জন্য সতর্কবাণী এবং আল্লাহর নিদর্শনগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়।
সূরা আল আরাফ সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর
১. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফ কত নম্বর সূরা?
উত্তর: ৭ নম্বর সূরা।
২. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফ কতটি আয়াত নিয়ে গঠিত?
উত্তর: ২০৬টি আয়াত।
৩. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফ কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে?
উত্তর: মক্কায়।
৪. প্রশ্ন: “আল আরাফ” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: “উচ্চ স্থান” বা “সীমান্ত”।
৫. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে কোন নবীর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: আদম, নূহ, হুদ, সালেহ, লুত, শুয়াইব এবং মুসা (আ.) এর কাহিনী।
৬. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে ইবলিসের কী ঘটনা বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: ইবলিস আদম (আ.) কে সিজদা করতে অস্বীকার করে এবং অভিশপ্ত হয়।
৭. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে “আল আরাফ” কী?
**উত্তর:** এটি একটি উচ্চ স্থান, যেখানে কিছু লোক থাকবে যারা জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে অবস্থান করবে।
৮. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে কোন সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আদ, সামুদ এবং মাদইয়ান সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে।
৯. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে আল্লাহর কী নিদর্শনগুলো উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী, গাছপালা ইত্যাদি।
আরও পড়তে পারেন-–সূরা মায়িদা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ২৫টি MCQ বিস্তারিত
১০. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে কিয়ামতের দিনের কী বর্ণনা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: কিয়ামতের দিন মানুষের হিসাব-নিকাশ এবং জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
১১. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে মুসা (আ.) ও ফেরাউনের কী ঘটনা বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: মুসা (আ.) এর সাথে ফেরাউনের সংঘাত এবং ফেরাউনের ধ্বংসের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
১২. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে শিরক থেকে সতর্ক করা হয়েছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, শিরক থেকে সতর্ক করা হয়েছে।
১৩. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে আল্লাহর অনুগ্রহের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর অনুগ্রহের উদাহরণ হিসেবে বৃষ্টি, ফসল, এবং জীবনের বিভিন্ন নিয়ামতের কথা বলা হয়েছে।
১৪. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর ইবাদত করা।
১৫. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে কাফিরদের কী পরিণতি বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: কাফিরদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি বর্ণিত হয়েছে।
১৬. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার কী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাওবা করার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
১৭. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে আল্লাহর নিদর্শনগুলো উপেক্ষা করার কী পরিণতি বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর নিদর্শনগুলো উপেক্ষা করার পরিণতি হলো ধ্বংস ও শাস্তি।
১৮. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে আল্লাহর রহমতের কী উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর রহমতের উদাহরণ হিসেবে মানুষের জন্য পৃথিবীতে জীবনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
১৯. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং তাঁর উপর ভরসা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০. প্রশ্ন: সূরা আল আরাফে আল্লাহর বিধান মেনে চলার কী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহর বিধান মেনে চলার গুরুত্ব এবং তা না মানার পরিণতির কথা বলা হয়েছে।
সূরা আল আরাফ সম্পর্কে ২৫টি MCQ
১. সূরা আল আরাফ কত নম্বর সূরা?
ক) ৫ খ) ৬
গ) ৭ ঘ) ৮
উত্তর: গ) ৭
২. সূরা আল আরাফে কতটি আয়াত আছে?
ক) ২০০ খ) ২০৬
গ) ২১০ ঘ) ২১৫
উত্তর: খ) ২০৬
৩. সূরা আল আরাফ কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে?
ক) মক্কায় খ) মদিনায়
গ) তায়েফে ঘ) জেদ্দায়
উত্তর: ক) মক্কায়
৪. “আল আরাফ” শব্দের অর্থ কী?
ক) নদী খ) উচ্চ স্থান
গ) পাহাড় ঘ) বাগান
উত্তর: খ) উচ্চ স্থান
৫. সূরা আল আরাফে কোন নবীর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে?
ক) ইব্রাহিম (আ.)
খ) মুসা (আ.)
গ) ঈসা (আ.)
ঘ) দাউদ (আ.)
উত্তর: খ) মুসা (আ.)
৬. সূরা আল আরাফে ইবলিসের কী ঘটনা বর্ণিত হয়েছে?
ক) সে আদম (আ.) কে সিজদা করে
খ) সে আদম (আ.) কে সিজদা করতে অস্বীকার করে
গ) সে আদম (আ.) কে সাহায্য করে
ঘ) সে আদম (আ.) কে উপদেশ দেয়
উত্তর: খ) সে আদম (আ.) কে সিজদা করতে অস্বীকার করে
৭. সূরা আল আরাফে “আল আরাফ” কী?
ক) একটি নদী
খ) একটি পাহাড়
গ) একটি উচ্চ স্থান
ঘ) একটি বাগান
উত্তর: গ) একটি উচ্চ স্থান
৮. সূরা আল আরাফে কোন সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে?
ক) কুরাইশ
খ) আদ ও সামুদ
গ) ইহুদি
ঘ) খ্রিস্টান
উত্তর: খ) আদ ও সামুদ
৯. সূরা আল আরাফে আল্লাহর নিদর্শনগুলো কী?
ক) আকাশ ও পৃথিবী
খ) পাহাড় ও নদী
গ) গাছপালা
ঘ) সবকিছু
উত্তর: ঘ) সবকিছু
১০. সূরা আল আরাফে কিয়ামতের দিনের কী বর্ণনা দেওয়া হয়েছে?
ক) শান্তির দিন
খ) হিসাব-নিকাশের দিন
গ) উৎসবের দিন
ঘ) কাজের দিন
উত্তর: খ) হিসাব-নিকাশের দিন
১১. সূরা আল আরাফে মুসা (আ.) ও ফেরাউনের কী ঘটনা বর্ণিত হয়েছে?
ক) শান্তি চুক্তি
খ) সংঘাত ও ধ্বংস
গ) বন্ধুত্ব
ঘ) বাণিজ্য
উত্তর: খ) সংঘাত ও ধ্বংস
১২. সূরা আল আরাফে শিরক থেকে সতর্ক করা হয়েছে কি?
ক) হ্যাঁ খ) না
গ) কিছুটা ঘ) নির্দিষ্ট নয়
উত্তর: ক) হ্যাঁ
১৩. সূরা আল আরাফে আল্লাহর অনুগ্রহের উদাহরণ কী?
ক) বৃষ্টি ও ফসল
খ) সোনা ও রূপা
গ) সম্পদ
ঘ) সবকিছু
উত্তর: ক) বৃষ্টি ও ফসল
১৪. সূরা আল আরাফে মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী?
ক) বিনোদন
খ) আল্লাহর ইবাদত
গ) সম্পদ অর্জন
ঘ) ক্ষমতা
উত্তর: খ) আল্লাহর ইবাদত
১৫. সূরা আল আরাফে কাফিরদের কী পরিণতি বর্ণিত হয়েছে?
ক) জান্নাত
খ) জাহান্নাম
গ) পৃথিবীতে শান্তি
ঘ) ক্ষমা
উত্তর: খ) জাহান্নাম
১৬. সূরা আল আরাফে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার গুরুত্ব কী?
ক) কম
খ) বেশি
গ) নেই
ঘ) নির্দিষ্ট নয়
উত্তর: খ) বেশি
১৭. সূরা আল আরাফে আল্লাহর নিদর্শনগুলো উপেক্ষা করার পরিণতি কী?
ক) শান্তি খ) ধ্বংস ও শাস্তি
গ) সম্পদ ঘ) ক্ষমা
উত্তর: খ) ধ্বংস ও শাস্তি
১৮. সূরা আল আরাফে আল্লাহর রহমতের উদাহরণ কী?
ক) জীবনের সুযোগ খ) সম্পদ
গ) ক্ষমতা ঘ) সবকিছু
উত্তর: ক) জীবনের সুযোগ
১৯. সূরা আল আরাফে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ কী?
ক) হ্যাঁ খ) না
গ) কিছুটা ঘ) নির্দিষ্ট নয়
উত্তর: ক) হ্যাঁ
২০. সূরা আল আরাফে আল্লাহর বিধান মেনে চলার গুরুত্ব কী?
ক) কম খ) বেশি
গ) নেই ঘ) নির্দিষ্ট নয়
উত্তর: খ) বেশি
২১. সূরা আল আরাফে আল্লাহর নিদর্শনগুলো কী ধরনের?
ক) শুধু আধ্যাত্মিক
খ) শুধু প্রাকৃতিক
গ) আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক
২২. সূরা আল আরাফে আল্লাহর অনুগ্রহের উদাহরণ হিসেবে কী বলা হয়েছে?
ক) বৃষ্টি ও ফসল
খ) সম্পদ
গ) ক্ষমতা
ঘ) সবকিছু
উত্তর: ক) বৃষ্টি ও ফসল
২৩. সূরা আল আরাফে আল্লাহর বিধান মেনে চলার পরিণতি কী?
ক) শান্তি
খ) শাস্তি
গ) সম্পদ
ঘ) ক্ষমা
উত্তর: ক) শান্তি
২৪. সূরা আল আরাফে আল্লাহর নিদর্শনগুলো উপেক্ষা করার পরিণতি কী?
ক) শান্তি
খ) ধ্বংস ও শাস্তি
গ) সম্পদ
ঘ) ক্ষমা
উত্তর: খ) ধ্বংস ও শাস্তি
২৫. সূরা আল আরাফে আল্লাহর রহমতের উদাহরণ কী?
ক) জীবনের সুযোগ
খ) সম্পদ
গ) ক্ষমতা
ঘ) সবকিছু
উত্তর: ক) জীবনের সুযোগ
এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো সূরা আল আরাফ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেবে এবং এর শিক্ষা ও বার্তা বুঝতে সাহায্য করবে।
সূরা আল আরাফ এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়
সূরা আল আরাফ (আরবি: سورة الأعراف) হল পবিত্র কুরআনের ৭ম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয় এবং এর আয়াত সংখ্যা ২০৬টি। এই সূরার নাম “আল আরাফ” এর অর্থ হলো “উচ্চ স্থান” বা “সীমান্ত”। সূরাটি মানুষের সৃষ্টি, আদম ও ইবলিসের কাহিনী, বিভিন্ন নবী-রাসূলদের কাহিনী, এবং পরকালের বর্ণনা নিয়ে আলোচনা করে। এটি মানুষের জন্য সতর্কবাণী এবং আল্লাহর নিদর্শনগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়।
সূরাটিতে আল্লাহর একত্ববাদ, শিরকের বিপদ, নবী-রাসূলদের মাধ্যমে প্রেরিত আল্লাহর বিধান, এবং কিয়ামতের দিনের হিসাব-নিকাশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও, সূরাটিতে আদম (আ.) ও ইবলিসের ঘটনা, মুসা (আ.) ও ফেরাউনের সংঘাত, এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। সূরা আল আরাফ মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও সতর্কবার্তা বহন করে।
সূরা আরাফের নির্বাচিত আয়াতগুলোর অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা নিম্নে দেওয়া হলো:
সূরা আরাফ আয়াত ১১৭
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ
অর্থ:
“আর আমি মুসাকে ওহী করলাম যে, তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর। অতঃপর তা তাদের জালিয়াতি সবকিছু গিলে খেতে লাগল।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে মুসা (আ.) এর মুজিযার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। ফেরাউনের জাদুকররা তাদের জাদু দ্বারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল। মুসা (আ.) এর লাঠি নিক্ষেপের পর তা সাপে পরিণত হয়ে জাদুকরদের জালিয়াতি সব গিলে ফেলে। এটি আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ এবং মুসা (আ.) এর নবুয়তের সত্যতা প্রতিষ্ঠা করে।
সূরা আরাফ আয়াত ১২২
رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ
অর্থ:
“মুসা ও হারুনের রব।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতটি ফেরাউনের জাদুকরদের ঈমান আনার পরের অবস্থা বর্ণনা করে। তারা মুসা (আ.) ও হারুন (আ.) এর রব হিসেবে আল্লাহকে স্বীকার করে নেয়। এটি তাদের ঈমানের ঘোষণা এবং আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি।
সূরা আরাফ আয়াত ৩
اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۗ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ
অর্থ:
“তোমরা অনুসরণ করো সেই বিষয়, যা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং তিনি ছাড়া অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ করো।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর বিধান অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং অন্য কারো অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এটি মানুষকে আল্লাহর বিধানের প্রতি মনোযোগী হতে এবং অন্য সব ধরনের ভ্রান্ত পথ পরিহার করতে উৎসাহিত করে।
সূরা আরাফ আয়াত ১৭৯
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُولَٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ
অর্থ:
“আমি জাহান্নামের জন্য অনেক জিন ও মানুষ সৃষ্টি করেছি। তাদের অন্তর আছে, কিন্তু তারা তা দিয়ে বুঝে না; তাদের চোখ আছে, কিন্তু তারা তা দিয়ে দেখে না; তাদের কান আছে, কিন্তু তারা তা দিয়ে শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তারা আরও পথভ্রষ্ট। তারাই হলো গাফিল।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ এমন লোকদের কথা বলেছেন যারা আল্লাহর নিদর্শন ও হিদায়াত উপেক্ষা করে। তাদের হৃদয়, চোখ ও কান থাকা সত্ত্বেও তারা সত্য গ্রহণ করে না। তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট, কারণ পশু অন্তত নিজের প্রয়োজন বুঝতে পারে, কিন্তু তারা তা পারে না।
সূরা আরাফ আয়াত ৩১
يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ
অর্থ:
“হে আদম সন্তানগণ! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সাজসজ্জা গ্রহণ করো এবং খাও, পান করো, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ আদম সন্তানদেরকে সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে বলেছেন এবং অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। এটি মুসলমানদেরকে সংযমী ও পরিমিতিবোধ শেখায়।
সূরা আরাফ আয়াত ৫৬
وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا ۚ إِنَّ رَحْمَتَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ:
“তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, তা সংশোধনের পর। আর তাঁকে ডাকো ভয় ও আশা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে পৃথিবীতে শান্তি ও ভারসাম্য বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কাছে দুআ করার সময় ভয় ও আশার সাথে ডাকতে বলা হয়েছে। এটি মুসলমানদেরকে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং আল্লাহর রহমত লাভের উপায় শেখায়।
সূরা আরাফ আয়াত ৯৭
أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا بَيَاتًا وَهُمْ نَائِمُونَ
অর্থ:
“তাহলে কি জনপদবাসীরা এতে নিরাপদ হয়ে গেছে যে, তাদের কাছে রাতের বেলায় আমাদের শাস্তি আসবে, যখন তারা ঘুমিয়ে থাকবে?”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ পূর্ববর্তী সম্প্রদায়গুলির ধ্বংসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তাদের অহংকার ও পাপের কারণে আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর নেমে এসেছিল। এটি মানুষকে সতর্ক করে যে, আল্লাহর শাস্তি যেকোনো সময় আসতে পারে।
সূরা আরাফ আয়াত ২৩
قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
অর্থ:
“তারা বলল, হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের উপর জুলুম করেছি। যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না করো এবং আমাদের প্রতি দয়া না করো, তাহলে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) এর তাওবার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তারা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে গুনাহ করেছিলেন এবং পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। এটি তাওবার গুরুত্ব এবং আল্লাহর রহমতের প্রতি বিশ্বাসের শিক্ষা দেয়।
সারমর্ম:
এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের কাহিনী, তাওবা, আল্লাহর রহমত, শাস্তি এবং পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলো মুসলমানদেরকে সঠিক পথে চলার এবং আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করার শিক্ষা দেয়।