সূরা আন-নামল (আরবি: سورة النمل) কুরআন মাজিদের ২৭তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হওয়া সূরাগুলোর মধ্যে একটি। সূরাটি ৯৩টি আয়াত, ৭টি রুকু এবং ১৯তম ও ২০তম পারায় অবস্থিত । সূরা আন নামল সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো
সূরা আন নামল
সূরা আন-নামল সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর:
১. প্রশ্ন: সূরা আন-নামল কুরআনের কততম সূরা?
উত্তর: সূরা আন-নামল কুরআনের ২৭তম সূরা।
২. প্রশ্ন: সূরা আন-নামল কতটি আয়াত নিয়ে গঠিত?
উত্তর: সূরা আন-নামল ৯৩টি আয়াত নিয়ে গঠিত।
৩. প্রশ্ন: সূরা আন-নামল কোন পারায় অবস্থিত?
উত্তর: সূরা আন-নামল ১৯তম এবং ২০তম পারায় অবস্থিত।
৪. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলের অর্থ কী?
উত্তর: সূরা আন-নামলের অর্থ “পিপীলিকা”।
৫. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে কোন নবীর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: সূরা আন-নামলে হযরত সুলাইমান (আ.) এবং হযরত মুসা (আ.)-এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
৬. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে পিপীলিকার কাহিনী কীভাবে উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: হযরত সুলাইমান (আ.)-এর সেনাবাহিনী পিপীলিকার এলাকায় প্রবেশ করলে পিপীলিকা তার সঙ্গীদের সতর্ক করে দেয়, যাতে তারা সুলাইমানের সেনাবাহিনীর পায়ের নিচে পিষ্ট না হয়।
৭. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর কী বিশেষ ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: হযরত সুলাইমান (আ.) পশু-পাখি এবং জিনদের সাথে কথা বলতে পারতেন।
৮. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে হযরত মুসা (আ.)-এর কাহিনীতে কী ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: হযরত মুসা (আ.)-এর লাঠি সাপে পরিণত হওয়া এবং ফিরাউনের জাদুকরদের পরাজয়ের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
৯. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে কোন মহিলার কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: সাবা রাজ্যের রানী বিলকিসের কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে।
১০. প্রশ্ন: সাবা রাজ্যের রানী বিলকিস কীভাবে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর কাছে আত্মসমর্পণ করেন?
উত্তর: তিনি হযরত সুলাইমান (আ.)-এর জ্ঞান ও ক্ষমতা দেখে ইসলাম গ্রহণ করেন।
১১. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলার কোন বিশেষ গুণের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা সবকিছু দেখেন এবং জানেন।
১২. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে কাফিরদের কী সতর্ক করা হয়েছে?
উত্তর: কাফিরদেরকে পরকালের শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
১৩. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে তাঁর নিদর্শনগুলো বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা তাঁর নিদর্শনগুলো প্রকৃতি, ইতিহাস এবং নবীদের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন।
১৪. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে মুমিনদের কী সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: মুমিনদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
১৫. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের হিদায়াতের কথা বলেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন এবং যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন।
১৬. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে তাঁর কিতাবের ব্যাপারে বলেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, কুরআন হল হিদায়াত এবং রহমত।
১৭. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে শিরকের নিন্দা করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, শিরক হল মহা অন্যায়।
১৮. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে নবীদের দায়িত্ব বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: নবীদের দায়িত্ব হল মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা।
১৯. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে কিয়ামতের দিনের কথা বলেছেন?
উত্তর: কিয়ামতের দিন সবাইকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে।
২০. প্রশ্ন: সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের সৃষ্টির কথা বলেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, তিনি মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।
সূরা আন-নামল সম্পর্কে ২৫টি MCQ:
১. সূরা আন-নামল কুরআনের কততম সূরা?
a) ২৫তম
b) ২৬তম
c) ২৭তম
d) ২৮তম
উত্তর: c) ২৭তম
২. সূরা আন-নামলের অর্থ কী?
a) মৌমাছি
b) পিপীলিকা
c) মাকড়সা
d) পাখি
উত্তর: b) পিপীলিকা
৩. সূরা আন-নামলে কোন নবীর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
a) হযরত ইব্রাহিম (আ.)
b) হযরত সুলাইমান (আ.)
c) হযরত ঈসা (আ.)
d) হযরত নূহ (আ.)
উত্তর: b) হযরত সুলাইমান (আ.)
৪. সূরা আন-নামলে পিপীলিকার কাহিনী কোন নবীর সাথে সম্পর্কিত?
a) হযরত মুসা (আ.)
b) হযরত সুলাইমান (আ.)
c) হযরত ইউসুফ (আ.)
d) হযরত দাউদ (আ.)
উত্তর: b) হযরত সুলাইমান (আ.)
৫. সূরা আন-নামলে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর বিশেষ ক্ষমতা কী ছিল?
a) পানিকে রক্তে পরিণত করা
b) পশু-পাখি ও জিনদের সাথে কথা বলা
c) মৃতকে জীবিত করা
d) অদৃশ্য হয়ে যাওয়া
উত্তর: b) পশু-পাখি ও জিনদের সাথে কথা বলা
৬. সূরা আন-নামলে হযরত মুসা (আ.)-এর লাঠি কীতে পরিণত হয়?
a) সাপে
b) পাথরে
c) আগুনে
d) পানিতে
উত্তর: a) সাপে
৭. সূরা আন-নামলে কোন রানীর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
a) রানী নাফিসা
b) রানী বিলকিস
c) রানী হাজেরা
d) রানী মারিয়াম
উত্তর: b) রানী বিলকিস
৮. সাবা রাজ্যের রানী বিলকিস কিসের মাধ্যমে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর কাছে আত্মসমর্পণ করেন?
a) যুদ্ধে
b) আলোচনায়
c) জাদুতে
d) ইসলাম গ্রহণ করে
উত্তর: d) ইসলাম গ্রহণ করে
৯. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে তাঁর নিদর্শনগুলো বর্ণনা করেছেন?
a) শুধু প্রকৃতির মাধ্যমে
b) শুধু নবীদের মাধ্যমে
c) প্রকৃতি, ইতিহাস ও নবীদের মাধ্যমে
d) শুধু ইতিহাসের মাধ্যমে
উত্তর: c) প্রকৃতি, ইতিহাস ও নবীদের মাধ্যমে
১০. সূরা আন-নামলে কাফিরদের কী সতর্ক করা হয়েছে?
a) দুনিয়ার শাস্তি
b) পরকালের শাস্তি
c) অর্থনৈতিক ক্ষতি
d) সামাজিক অপমান
উত্তর: b) পরকালের শাস্তি
১১. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের কী সুসংবাদ দিয়েছেন?
a) দুনিয়ার সম্পদ
b) জান্নাত
c) দীর্ঘ জীবন
d) শক্তি ও ক্ষমতা
উত্তর: b) জান্নাত
১২. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে শিরকের নিন্দা করেছেন?
a) শিরককে ক্ষমাযোগ্য বলা হয়েছে
b) শিরককে মহা অন্যায় বলা হয়েছে
c) শিরককে ছোট গুনাহ বলা হয়েছে
d) শিরককে উপেক্ষা করা হয়েছে
উত্তর: b) শিরককে মহা অন্যায় বলা হয়েছে
১৩. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা নবীদের দায়িত্ব কী বলেছেন?
a) শুধু নামাজ পড়ানো
b) মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা
c) শুধু যুদ্ধ করা
d) শুধু জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া
উত্তর: b) মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা
১৪. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনের কথা কীভাবে বলেছেন?
a) সবাইকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে
b) শুধু কাফিরদের শাস্তি দেওয়া হবে
c) শুধু মুমিনদের পুরস্কৃত করা হবে
d) কিয়ামতের দিনের কথা উল্লেখ নেই
উত্তর: a) সবাইকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে
১৫. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা মানুষের সৃষ্টি কী থেকে বলেছেন?
a) আগুন থেকে
b) পানির থেকে
c) মাটি থেকে
d) আলো থেকে
উত্তর: c) মাটি থেকে
১৬. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে কুরআনকে বর্ণনা করেছেন?
a) শুধু একটি বই
b) হিদায়াত ও রহমত
c) শুধু সতর্কবার্তা
d) শুধু গল্পের বই
উত্তর: b) হিদায়াত ও রহমত
১৭. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মানুষের হিদায়াতের কথা বলেছেন?
a) শুধু নবীরা হিদায়াত দেন
b) আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন
c) শুধু মুমিনরা হিদায়াত পায়
d) হিদায়াত শুধু কিতাবের মাধ্যমে
উত্তর: b) আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন
১৮. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে তাঁর ক্ষমতার কথা বলেছেন?
a) শুধু সৃষ্টি করার ক্ষমতা
b) সবকিছু দেখেন ও জানেন
c) শুধু শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা
d) শুধু রহমত করার ক্ষমতা
উত্তর: b) সবকিছু দেখেন ও জানেন
১৯. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে নবীদের পাঠানোর কারণ বলেছেন?
a) শুধু যুদ্ধ করার জন্য
b) মানুষকে সতর্ক করার জন্য
c) শুধু জ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার জন্য
d) শুধু রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য
উত্তর: b) মানুষকে সতর্ক করার জন্য
২০. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে কাফিরদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন?
a) তারা সব সময় সঠিক পথে থাকে
b) তারা অন্ধ ও বধির
c) তারা সব সময় সত্য গ্রহণ করে
d) তারা সব সময় আল্লাহর অনুগত
উত্তর: b) তারা অন্ধ ও বধির
২১. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে মুমিনদের পুরস্কারের কথা বলেছেন?
a) শুধু দুনিয়ার সম্পদ
b) জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি
c) শুধু দীর্ঘ জীবন
d) শুধু শক্তি ও ক্ষমতা
উত্তর: b) জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি
২২. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে কুরআনের গুরুত্ব বলেছেন?
a) শুধু আরবদের জন্য
b) সমগ্র মানবতার জন্য হিদায়াত
c) শুধু নবীদের জন্য
d) শুধু ধর্মীয় নেতাদের জন্য
উত্তর: b) সমগ্র মানবতার জন্য হিদায়াত
২৩. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে শিরকের পরিণতি বলেছেন?
a) শিরক ক্ষমাযোগ্য
b) শিরকের কোনো পরিণতি নেই
c) শিরক মহা অন্যায় ও ক্ষমাহীন
d) শিরক ছোট গুনাহ
উত্তর: c) শিরক মহা অন্যায় ও ক্ষমাহীন
২৪. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে নবীদের দায়িত্ব বর্ণনা করেছেন?
a) শুধু নামাজ পড়ানো
b) মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা
c) শুধু যুদ্ধ করা
d) শুধু জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া
উত্তর: b) মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা
২৫. সূরা আন-নামলে আল্লাহ তাআলা কীভাবে কিয়ামতের দিনের কথা বলেছেন?
a) শুধু কাফিরদের শাস্তি দেওয়া হবে
b) সবাইকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে
c) শুধু মুমিনদের পুরস্কৃত করা হবে
d) কিয়ামতের দিনের কথা উল্লেখ নেই
উত্তর: b) সবাইকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে
সূরাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানেনুযূল, সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক, সূরাটির শিক্ষা
সূরা আন-নামলের সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
সূরা আন-নামল (আরবি: سورة النمل) কুরআন মাজিদের ২৭তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হওয়া সূরাগুলোর মধ্যে একটি। সূরাটি ৯৩টি আয়াত, ৭টি রুকু এবং ১৯তম ও ২০তম পারায় অবস্থিত। সূরাটির নাম “আন-নামল” (পিপীলিকা) রাখা হয়েছে কারণ এতে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর কাহিনীতে পিপীলিকার একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরাটিতে বিভিন্ন নবী-রাসূলের কাহিনী, আল্লাহর নিদর্শন, শিরকের নিন্দা এবং পরকালের সতর্কবাণী বর্ণনা করা হয়েছে।
শানে নুযূল (অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট):
সূরা আন-নামল মক্কী সূরা হওয়ায় এটি মক্কার কাফিরদের মোকাবেলায় অবতীর্ণ হয়েছে। মক্কার কাফিররা নবুয়ত ও আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাস করত এবং শিরকে লিপ্ত ছিল। এই সূরার মাধ্যমে তাদেরকে আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের মিশন এবং পরকালের শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়াও, সূরাটিতে পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী বর্ণনা করে মুমিনদের ঈমানকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হয়েছে।
সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক:
১. নবীদের কাহিনী:
- হযরত সুলাইমান (আ.)-এর কাহিনী, যেখানে তার বিশেষ ক্ষমতা, পিপীলিকার ঘটনা এবং রানী বিলকিসের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
- হযরত মুসা (আ.)-এর কাহিনী, যেখানে তার লাঠি সাপে পরিণত হওয়া এবং ফিরাউনের জাদুকরদের পরাজয়ের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
২. আল্লাহর নিদর্শন:
- সূরাটিতে আল্লাহর সৃষ্টি, ক্ষমতা এবং নিদর্শনগুলো বর্ণনা করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াতের উৎস।
৩. শিরকের নিন্দা:
- শিরককে মহা অন্যায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং কাফিরদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।
৪. পরকালের সতর্কবাণী:
- কিয়ামতের দিনের কথা এবং কাফিরদের জন্য শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
৫. কুরআনের মর্যাদা:
- কুরআনকে হিদায়াত ও রহমত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
সূরাটির শিক্ষা:
১. আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি ঈমান:
- সূরাটি আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর অসীম ক্ষমতার প্রতি ঈমান আনার শিক্ষা দেয়।
২. শিরক থেকে দূরে থাকা:
- শিরককে মহা অন্যায় হিসেবে উল্লেখ করে শিরক থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়।
৩. নবীদের অনুসরণ:
- নবীদের কাহিনী থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদের পথে চলার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
৪. পরকালের প্রস্তুতি:
- কিয়ামতের দিনের কথা স্মরণ করে দুনিয়ার জীবনে সৎকর্ম করার শিক্ষা দেয়।
৫. আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা করা:
- প্রকৃতি ও ইতিহাসে আল্লাহর নিদর্শনগুলো সম্পর্কে চিন্তা করে তাঁর মহিমা উপলব্ধি করার শিক্ষা দেয়।
৬. কুরআনের গুরুত্ব:
- কুরআনকে হিদায়াত ও রহমত হিসেবে গ্রহণ করে এর নির্দেশনা অনুসরণ করার শিক্ষা দেয়।
৭. ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা:
- হযরত সুলাইমান (আ.)-এর ন্যায়বিচার থেকে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার শিক্ষা নেওয়া যায়।
৮. অহংকার ত্যাগ করা:
- রানী বিলকিসের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা থেকে অহংকার ত্যাগ করে সত্য গ্রহণের শিক্ষা পাওয়া যায়।
৯. আল্লাহর রহমতের প্রতি আশাবাদী হওয়া:
- আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার প্রতি আশাবাদী হওয়ার শিক্ষা দেয়।
১০. সৃষ্টিজগতের সাথে সুসম্পর্ক:
- হযরত সুলাইমান (আ.)-এর পশু-পাখি ও জিনদের সাথে সুসম্পর্ক থেকে সৃষ্টিজগতের সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখার শিক্ষা পাওয়া যায়।
সূরা আন-নামল মুমিনদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান উপস্থাপন করে, যা ঈমান, আমল ও আখলাকের ক্ষেত্রে পথনির্দেশনা দেয়।
সূরাটির মূল বিষয়বস্তু, সূরাটির ফযিলত, এবং সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত অর্থসহ প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত চাই
সূরা আন-নামলের মূল বিষয়বস্তু:
সূরা আন-নামলের মূল বিষয়বস্তু হলো আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের মিশন, শিরকের নিন্দা, পরকালের সতর্কবাণী এবং কুরআনের মর্যাদা। সূরাটিতে বিভিন্ন নবীর কাহিনী বর্ণনা করে আল্লাহর ক্ষমতা ও নিদর্শনগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও, কাফিরদেরকে সতর্ক করা হয়েছে এবং মুমিনদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। সূরাটি মানুষের জন্য হিদায়াত ও রহমত হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে।
সূরা আন-নামলের ফযিলত:
১. হাদিসে বর্ণিত ফযিলত:
- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূরা আন-নামল তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করবেন।” (তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন)
- এই সূরায় হযরত সুলাইমান (আ.)-এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য শিক্ষণীয় ও অনুপ্রেরণাদায়ক।
২. আধ্যাত্মিক উপকারিতা:
- সূরা আন-নামল তিলাওয়াত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি জন্মে।
- এটি শিরক থেকে বেঁচে থাকার জন্য একটি শক্তিশালী উপায়।
৩. পরকালীন পুরস্কার:
- এই সূরা তিলাওয়াতকারীকে কিয়ামতের দিন আল্লাহর রহমত ও জান্নাত লাভের সুযোগ দেবে।
সূরা আন-নামলের আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা:
১. আল্লাহর একত্ববাদ:
আয়াত:
“قُلِ ٱللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ”
(সূরা আন-নামল, আয়াত: ৮৮)
অর্থ: “বলুন, তারা যা করে আল্লাহ তা ভালো জানেন।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর সর্বজ্ঞতা ও একত্ববাদের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং দেখেন। মানুষের সব কাজের হিসাব আল্লাহর কাছে রয়েছে। এটি মানুষকে আল্লাহর প্রতি ভয় ও শ্রদ্ধা রাখতে উদ্বুদ্ধ করে।
২. নবীদের মিশন:
আয়াত:
“إِنَّمَآ أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ رَبَّ هَٰذِهِ ٱلْبَلْدَةِ ٱلَّذِى حَرَّمَهَا وَلَهُۥ كُلُّ شَىْءٍ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ ٱلْمُسْلِمِينَ”
(সূরা আন-নামল, আয়াত: ৯১)
অর্থ: “আমি তো শুধু এই নগরীর রবের ইবাদত করার আদেশ পেয়েছি, যিনি এটিকে পবিত্র করেছেন এবং সবকিছু তাঁরই। আর আমাকে মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে নবীদের মিশন স্পষ্ট করা হয়েছে। তারা শুধু আল্লাহর ইবাদত করার এবং মানুষকে তাঁর পথে ডাকার জন্য প্রেরিত হয়েছেন। এটি নবীদের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে তুলে ধরে।
৩. শিরকের নিন্দা:
আয়াত:
“إِنَّ ٱلشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ”
(সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৩)
অর্থ: “নিশ্চয় শিরক মহা অন্যায়।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে শিরককে মহা অন্যায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শিরক হলো আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরিক করা, যা সবচেয়ে বড় জুলুম। এটি মানুষকে শিরক থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়।
৪. পরকালের সতর্কবাণী:
আয়াত:
“وَيَوْمَ يُنفَخُ فِى ٱلصُّورِ فَفَزِعَ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُ ۚ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَٰخِرِينَ”
(সূরা আন-নামল, আয়াত: ৮৭)
অর্থ: “যেদিন শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, সেদিন আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা সবাই ভয়ে কেঁপে উঠবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করবেন তিনি ব্যতীত। আর সবাই তাঁর কাছে অবনত মস্তকে উপস্থিত হবে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা বর্ণনা করা হয়েছে। এটি মানুষকে পরকালের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সতর্ক করে এবং দুনিয়ার জীবনে সৎকর্ম করার তাগিদ দেয়।
৫. কুরআনের মর্যাদা:
আয়াত:
“إِنَّ هَٰذَا ٱلْقُرْءَانَ يَهْدِى لِلَّتِى هِىَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ ٱلْمُؤْمِنِينَ ٱلَّذِينَ يَعْمَلُونَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا”
(সূরা আন-নামল, আয়াত: ৯)
অর্থ: “নিশ্চয় এই কুরআন সেই পথের দিকে পরিচালিত করে, যা সবচেয়ে সরল। আর যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে কুরআনের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআন হলো হিদায়াতের উৎস এবং এটি মানুষকে সঠিক পথ দেখায়। এটি মুমিনদের জন্য সুসংবাদ বহন করে।
উপসংহার:
সূরা আন-নামল আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের মিশন, শিরকের নিন্দা, পরকালের সতর্কবাণী এবং কুরআনের মর্যাদা সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এটি মুমিনদের জন্য ঈমান, আমল ও আখলাকের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগ্রন্থ।
সূরা নামল আয়াত ৬৫, ৯৩, ৬২, ৩০, ৩১, ৬২ , ৪০, ১৯, ১৮ আয়াত এবং এর বাংলা অর্থসহ ব্যাখ্যা চাই
সূরা আন-নামলের নির্বাচিত আয়াতসমূহের বাংলা অর্থ ও ব্যাখ্যা:
১. আয়াত ৬৫:
আয়াত:
“قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ٱلْغَيْبَ إِلَّا ٱللَّهُ ۚ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ”
অর্থ: “বলুন, আসমান ও জমিনে কেউ গায়েবের জ্ঞান রাখে না, আল্লাহ ছাড়া। আর তারা উপলব্ধি করতে পারে না যে, কখন তাদের পুনরুত্থিত করা হবে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর সর্বজ্ঞতা ও গায়েবের জ্ঞানের একচেটিয়া অধিকারের কথা বলা হয়েছে। মানুষ, ফেরেশতা বা অন্য কোনো সৃষ্টি গায়েবের জ্ঞান রাখে না। এটি মানুষকে আল্লাহর ক্ষমতা ও মহিমা সম্পর্কে সচেতন করে এবং তাঁর প্রতি ভয় ও শ্রদ্ধা রাখতে উদ্বুদ্ধ করে।
২. আয়াত ৯৩:
আয়াত:
“وَقُلِ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ سَيُرِيكُمْ ءَايَٰتِهِۦ فَتَعْرِفُونَهَا ۚ وَمَا رَبُّكَ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ”
অর্থ: “এবং বলুন, সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি শীঘ্রই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শন দেখাবেন, ফলে তোমরা তা চিনতে পারবে। আর তোমরা যা কর, তোমার রব তা থেকে গাফিল নন।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়েছে এবং তাঁর নিদর্শন দেখানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এটি মানুষকে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে সচেতন করে এবং তাদের কর্মের জন্য জবাবদিহিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
৩. আয়াত ৬২:
আয়াত:
“أَمَّن يُجِيبُ ٱلْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ ٱلسُّوٓءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ ٱلْأَرْضِ ۗ أَءِلَٰهٌ مَّعَ ٱللَّهِ ۚ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ”
অর্থ: “যিনি বিপদগ্রস্তের ডাকে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে এবং অসুবিধা দূর করেন, আর তোমাদেরকে পৃথিবীর উত্তরাধিকারী বানান। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো উপাস্য আছে? তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহর ক্ষমতা ও করুণার কথা বলা হয়েছে। তিনি বিপদগ্রস্তের ডাকে সাড়া দেন এবং অসুবিধা দূর করেন। এটি মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি ঈমান আনতে এবং শিরক থেকে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে।
৪. আয়াত ৩০:
আয়াত:
“إِنَّهُۥ مِن سُلَيْمَٰنَ وَإِنَّهُۥ بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ”
অর্থ: “এটা সুলাইমানের পক্ষ থেকে এবং এটা শুরু করা হয়েছে আল্লাহর নামে, যিনি পরম দয়ালু, অতি দয়ালু।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর চিঠির কথা বলা হয়েছে, যা তিনি রানী বিলকিসের কাছে পাঠিয়েছিলেন। চিঠিটি শুরু করা হয়েছে আল্লাহর নামে, যা আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তির প্রকাশ। এটি আমাদেরকে সব কাজ আল্লাহর নামে শুরু করার শিক্ষা দেয়।
৫. আয়াত ৩১:
আয়াত:
“أَلَّا تَعْلُوا۟ عَلَىَّ وَأْتُونِى مُسْلِمِينَ”
অর্থ: “তোমরা আমার বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করো না এবং আমার কাছে আত্মসমর্পণকারী হয়ে আসো।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে হযরত সুলাইমান (আ.) রানী বিলকিসকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। এটি নবীদের মিশন ও দাওয়াতের পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। নবীরা মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকেন এবং তাদেরকে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানান।
৬. আয়াত ৪০:
আয়াত:
“قَالَ ٱلَّذِى عِندَهُۥ عِلْمٌ مِّنَ ٱلْكِتَٰبِ أَنَا۠ ءَاتِيكَ بِهِۦ قَبْلَ أَن يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ ۚ فَلَمَّا رَءَاهُ مُسْتَقِرًّا عِندَهُۥ قَالَ هَٰذَا مِن فَضْلِ رَبِّى لِيَبْلُوَنِىٓ ءَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ ۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِۦ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّى غَنِىٌّ كَرِيمٌ”
অর্থ: “যার কাছে কিতাবের জ্ঞান ছিল, সে বলল, আমি তা আপনার কাছে এনে দেব, আপনার চোখের পলক ফেলার আগেই। যখন সুলাইমান তা নিজের সামনে স্থির দেখলেন, তখন বললেন, এটা আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞ হই না অকৃতজ্ঞ। আর যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো নিজের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, তবে আমার রব তো অভাবমুক্ত, মহিমান্বিত।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর বিশেষ ক্ষমতা ও আল্লাহর অনুগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এটি মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে এবং তাঁর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শিক্ষা দেয়।
৭. আয়াত ১৯:
আয়াত:
“فَتَبَسَّمَ ضَاحِكًا مِّن قَوْلِهَا وَقَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِىٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ ٱلَّتِىٓ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَٰلِحًا تَرْضَىٰهُ وَأَدْخِلْنِى بِرَحْمَتِكَ فِى عِبَادِكَ ٱلصَّٰلِحِينَ”
অর্থ: “তিনি তার কথায় হাসতে হাসতে মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার রব, আমাকে তাওফিক দান করুন যেন আমি আপনার সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি, যা আপনি আমাকে ও আমার পিতামাতাকে দান করেছেন এবং যেন আমি সৎকর্ম করি, যা আপনি পছন্দ করেন। আর আমাকে আপনার রহমত দ্বারা আপনার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর বিনয় ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ দেখা যায়। এটি মানুষকে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে এবং সৎকর্ম করার শিক্ষা দেয়।
৮. আয়াত ১৮:
আয়াত:
“حَتَّىٰٓ إِذَآ أَتَوْا۟ عَلَىٰ وَادِ ٱلنَّمْلِ قَالَتْ نَمْلَةٌ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّمْلُ ٱدْخُلُوا۟ مَسَٰكِنَكُمْ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَٰنُ وَجُنُودُهُۥ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ”
অর্থ: “যখন তারা পিপীলিকার উপত্যকায় পৌঁছল, তখন একটি পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকারা, তোমরা তোমাদের বাসস্থানে প্রবেশ করো, যাতে সুলাইমান ও তার সৈন্যরা অজান্তে তোমাদেরকে পিষ্ট না করে।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে পিপীলিকার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, যা হযরত সুলাইমান (আ.)-এর বিশেষ ক্ষমতা ও আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে সচেতন করে। এটি আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি সদয় হওয়ার শিক্ষা দেয়।
উপসংহার:
এই আয়াতগুলো সূরা আন-নামলের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও বার্তা বহন করে। এগুলো আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের মিশন, শিরকের নিন্দা, পরকালের সতর্কবাণী এবং আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।