You are currently viewing সূরা আনকাবুত সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন
সূরা আনকাবুত

সূরা আনকাবুত সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ প্রশ্ন

সূরা আনকাবুত সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শানে নুযূল, গুরুত্বপূর্ণ দিক, শিক্ষা, মূল বিষয়বস্তু, ফযিলত ও বিষয়ভিত্তিক আয়াত সহ সূরা আনকাবুত সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর এবং ২৫টি MCQ দেয়া হলো আশা করি উপকৃত হবেন।

সূরা আনকাবুত

সূরা আল আনকাবুত সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

১. সূরা আনকাবুত মক্কী না মাদানী সূরা?

উত্তর: মক্কী সূরা (অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে)।

২. সূরা আনকাবুতের আয়াত সংখ্যা কত?

উত্তর: ৬৯টি আয়াত।

৩. “আনকাবুত” শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: মাকড়সা।

৪. সূরা আনকাবুতের কোন আয়াতে মাকড়সার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে?

উত্তর: সূরা আনকাবুতের ৪১ নং আয়াতে।

৫. মাকড়সার জালকে কীভাবে দুর্বল বলা হয়েছে?

উত্তর: এটি সবচেয়ে নাজুক বাসস্থান, যদিও মাকড়সা জাল বুনে (আয়াত: ২৯:৪১)।

৬. সূরা আনকাবুতে কোন নবীর দীর্ঘতম পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: নূহ (আ.)-এর কওমকে ৯৫০ বছর ধরে দাওয়াত দেওয়া (আয়াত: ২৯:১৪)।

৭. “আলিফ-লাম-মীম” কী ধরনের আয়াত?

উত্তর: হুরুফে মুকাত্তা’আত (বিচ্ছিন্ন অক্ষর)।

৮. সূরা আনকাবুতে ইবরাহীম (আ.)-এর কী পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: তিনি নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে রক্ষা পেয়েছিলেন (আয়াত: ২৯:২৪)।

৯. “মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের পরীক্ষা করা হবে না?” — এটি কোন সূরার আয়াত?

উত্তর: সূরা আনকাবুত, আয়াত ২।

আরো পড়তে পারেন–

সূরা আন নামল সম্পর্কে ৪৫টি কুইজ

১০. সূরা আনকাবুতে লুত (আ.)-এর কওমের কী শাস্তির কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: তাদের উপর প্রস্তর বর্ষণ করা হয়েছিল (আয়াত: ২৯:৩৪)।

১১. সূরা আনকাবুতে আল্লাহ কাদেরকে “জালিম” বলে আখ্যায়িত করেছেন?

উত্তর: যারা মিথ্যা দেব-দেবীর পূজা করে (আয়াত: ২৯:২৫)।

১২. সূরা আনকাবুতে কার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “সে তার পিতাকে বলল, তুমি কেন এমন জিনিসের পূজা কর যারা শুনতে পায় না, দেখতে পায় না?”

উত্তর: ইবরাহীম (আ.)-এর কথা (আয়াত: ২৯:২৫)।

১৩. সূরা আনকাবুতে আল্লাহ কীভাবে পৃথিবী সৃষ্টির কথা বলেছেন?

উত্তর: “তিনিই পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পর্বত ও নদী স্থাপন করেছেন” (আয়াত: ২৯:৪৪)।

১৪. সূরা আনকাবুতে কিয়ামতের দিন কাফিররা কী বলবে?

উত্তর: “হায়! যদি আল্লাহ আমাকে আরেকবার পৃথিবীতে পাঠাতেন, তাহলে আমি সৎকর্মশীল হতাম!” (আয়াত: ২৯:৫৮)।

১৫. সূরা আনকাবুতে আল্লাহ কীভাবে মুমিনদের পুরস্কারের কথা বলেছেন?

উত্তর: “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব” (আয়াত: ২৯:৫৮)।

১৬. সূরা আনকাবুতে আল্লাহ কেন মানুষকে পরীক্ষা করেন?

উত্তর: ঈমানদার ও মুনাফিকদের আলাদা করার জন্য (আয়াত: ২৯:২-৩)।

১৭. সূরা আনকাবুতে আল্লাহ কেন পূর্ববর্তী উম্মতদের ধ্বংসের কথা বলেছেন?

উত্তর: যাতে বর্তমান উম্মত শিক্ষা গ্রহণ করে (আয়াত: ২৯:৪০)।

১৮. সূরা আনকাবুতে আল্লাহ কীভাবে কাফিরদের শাস্তির কথা বলেছেন?

উত্তর: “আমি অবশ্যই কাফিরদেরকে কঠিন শাস্তি দেব” (আয়াত: ২৯:৫৫)।

১৯. সূরা আনকাবুতে আল্লাহ কেন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন?

উত্তর: “তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা তাঁকে ইবাদত করে” (আয়াত: ২৯:৫৬)।

২০. সূরা আনকাবুতে শেষ বিচারের দিন কী বলা হয়েছে?

উত্তর: “সেদিন জাহান্নাম কাফিরদেরকে ঘিরে ফেলবে” (আয়াত: ২৯:৫৫)।




সূরা আনকাবুত সম্পর্কে ২৫টি MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন)

১. সূরা আনকাবুত কত নং সূরা?

a) ২৮
b) ২৯ ✅
c) ৩০
d) ৩১

২. “আনকাবুত” অর্থ কী?

a) পিঁপড়া
b) মাকড়সা ✅
c) মৌমাছি
d) উট

৩. সূরা আনকাবুতে মাকড়সার উদাহরণ কোন আয়াতে আছে?

a) ৪০
b) ৪১ ✅
c) ৪২
d) ৪৩

৪. নূহ (আ.) কত বছর তার কওমকে দাওয়াত দিয়েছিলেন?

a) ৫০০
b) ৭৫০
c) ৯৫০ ✅
d) ১০০০

৫. সূরা আনকাবুতের মূল বিষয় কী?

a) অর্থনীতি
b) পরীক্ষা ও ধৈর্য ✅
c) যুদ্ধ
d) বিবাহ

৬. “আলিফ-লাম-মীম” কী?

a) কুরআনের বিচ্ছিন্ন অক্ষর ✅
b) একটি সূরার নাম
c) একটি দুয়ার নাম
d) কোনো নবীর নাম

৭. ইবরাহীম (আ.)-এর পরীক্ষা কী ছিল?

a) সাগর পার হওয়া
b) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়া ✅
c) পাহাড়ে উঠা
d) সিংহের মুখে পড়া

৮. সূরা আনকাবুতে লুত (আ.)-এর কওমের শাস্তি কী ছিল?

a) প্লেগ
b) প্রস্তর বর্ষণ ✅
c) ভূমিকম্প
d) বন্যা

৯. “মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের পরীক্ষা করা হবে না?” — এটি কোন সূরার আয়াত?

a) সূরা বাকারা
b) সূরা আনকাবুত ✅
c) সূরা ইখলাস
d) সূরা ফাতিহা

১০. সূরা আনকাবুতে আল্লাহ কাদেরকে “জালিম” বলেছেন?

a) মুমিনদের
b) মুনাফিকদের
c) মূর্তিপূজকদের ✅
d) ফকিরদের

১১. সূরা আনকাবুতে কার কথা বলা হয়েছে, যে তার পিতাকে মূর্তিপূজা থেকে নিষেধ করেছিল?

a) মুসা (আ.)
b) ইবরাহীম (আ.) ✅
c) ঈসা (আ.)
d) দাউদ (আ.)

১২. সূরা আনকাবুতে আল্লাহ কীভাবে পৃথিবী সৃষ্টির কথা বলেছেন?

a) “তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন” ✅
b) “তিনি পৃথিবীকে গোলাকার করেছেন”
c) “তিনি পৃথিবীকে শূন্য থেকে সৃষ্টি করেছেন”
d) “তিনি পৃথিবীকে জলে ভাসিয়েছেন”

১৩. কিয়ামতের দিন কাফিররা কী বলবে?

a) “আমরা জানতাম না!”
b) “আমরা আবার পৃথিবীতে যেতে চাই!” ✅
c) “আমরা বিজয়ী হয়েছি!”
d) “আমরা সঠিক ছিলাম!”



১৪. সূরা আনকাবুতে মুমিনদের পুরস্কার কী?

a) দুনিয়ার সম্পদ
b) জান্নাত ✅
c) রাজত্ব
d) দীর্ঘ জীবন

১৫. আল্লাহ কেন মানুষকে পরীক্ষা করেন?

a) শাস্তি দেওয়ার জন্য
b) ঈমানদার ও মুনাফিক আলাদা করার জন্য ✅
c) ভয় দেখানোর জন্য
d) সময় কাটানোর জন্য

১৬. পূর্ববর্তী উম্মতদের ধ্বংসের কারণ কী?

a) তারা দরিদ্র ছিল
b) তারা আল্লাহর নাফরমানি করেছিল ✅
c) তারা যুদ্ধ করতে পারেনি
d) তারা শিক্ষিত ছিল না

১৭. সূরা আনকাবুতে কাফিরদের শাস্তি কী?

a) ক্ষমা
b) কঠিন শাস্তি ✅
c) পুরস্কার
d) সতর্কতা

১৮. আল্লাহ মানুষকে কেন সৃষ্টি করেছেন?

a) খেলার জন্য
b) ইবাদতের জন্য ✅
c) ধন-সম্পদ অর্জনের জন্য
d) শাসন করার জন্য

১৯. সূরা আনকাবুতে শেষ বিচারের দিন কী হবে?

a) সবাই ক্ষমা পাবে
b) জাহান্নাম কাফিরদের ঘিরে ফেলবে ✅
c) পৃথিবী ধ্বংস হবে না
d) কোনো শাস্তি নেই

২০. সূরা আনকাবুতের রুকু সংখ্যা কত?

a) ৫
b) ৭ ✅
c) ১০
d) ১২

২১. সূরা আনকাবুতে কার কথা বলা হয়েছে যে অগ্নিকুণ্ড থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন?

a) মুসা (আ.)
b) ইবরাহীম (আ.) ✅
c) ইউসুফ (আ.)
d) ঈসা (আ.)

২২. “মাকড়সার জাল সবচেয়ে দুর্বল বাসস্থান” — এটি কোন সূরার শিক্ষা?

a) সূরা ফাতিহা
b) সূরা বাকারা
c) সূরা আনকাবুত ✅
d) সূরা ইখলাস

২৩. সূরা আনকাবুতে আল্লাহ কীভাবে মুমিনদের সাহায্য করার কথা বলেছেন?

a) সম্পদ দিয়ে
b) ধৈর্য ও ইবাদতের মাধ্যমে ✅
c) যুদ্ধের মাধ্যমে
d) রাজ্য দিয়ে

২৪. সূরা আনকাবুতে আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে কোনটি উল্লেখ আছে?

a) চাঁদ ও সূর্য
b) আকাশ ও পৃথিবী ✅
c) সমুদ্র ও মরুভূমি
d) পাহাড় ও নদী

২৫. সূরা আনকাবুতের শেষ আয়াতে কী বলা হয়েছে?

a) “তোমরা সালাত কায়েম কর”
b) “তোমরা জিহাদ কর” ✅
c) “তোমরা সদকা দাও”
d) “তোমরা হজ কর”


এই প্রশ্নোত্তরগুলি সূরা আনকাবুতের মূল বিষয়বস্তু বুঝতে সহায়ক হবে।


১. সূরা আনকাবুতের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

  • নাম: সূরা আনকাবুত (المعنی: মাকড়সা)
  • আয়াত সংখ্যা: ৬৯
  • রুকু সংখ্যা:
  • সূরার অবস্থান: কুরআনের ২৯তম সূরা, ২০-২১তম পারায়
  • নাযিলের সময়: মক্কী জীবনের মধ্যভাগে (হিজরতের আগে)
  • প্রধান বিষয়: ঈমানের পরীক্ষা, ধৈর্য, তাওহীদের দাওয়াত ও পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী।

২. শানে নুযূল (প্রেক্ষাপট)

মক্কায় মুসলমানরা যখন চরম নির্যাতনের শিকার, তখন এই সূরা নাযিল হয়। এটি মুমিনদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের ঈমানকে পরিশুদ্ধ করার শিক্ষা দেয়। মাকড়সার উদাহরণ দিয়ে আল্লাহ দেখিয়েছেন যে, কুফরী ব্যবস্থা দুর্বল ও ধ্বংসপ্রবণ, যেমন মাকড়সার জাল নড়বড়ে।


৩. সূরাটির গুরুত্বপূর্ণ দিক

  1. ঈমানের পরীক্ষা: শুধু মুখে ঈমান আনলেই যথেষ্ট নয়, বরং পরীক্ষার মাধ্যমে ঈমানের সত্যতা প্রমাণিত হয়।
  2. নবীদের সংগ্রামের ইতিহাস: নূহ, ইবরাহীম, লুত, শু‘আইব (আ.)-এর কাহিনী দ্বারা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, সত্যের পথে সংগ্রাম করতে হয়।
  3. তাওহীদের দাওয়াত: মূর্তিপূজা ও শিরকের অসারতা তুলে ধরা হয়েছে।
  4. আখিরাতের স্মরণ: দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের কথা স্মরণ করানো হয়েছে।

৪. সূরাটির মূল শিক্ষা

✅ পরীক্ষাই ঈমানের মাপকাঠি: “মানুষ কি মনে করে যে, তারা শুধু এ কথাই বললেই ছেড়ে দেওয়া হবে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এবং তাদের পরীক্ষা করা হবে না?” (আয়াত: ২)।
✅ ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল: বিপদে ধৈর্য ধারণকারীরাই সফল (আয়াত: ৫৮-৫৯)।
✅ শিরকের ধ্বংসাত্মক পরিণতি: মাকড়সার জালের মতো কুফরী ব্যবস্থা দুর্বল (আয়াত: ৪১)।

✅ আল্লাহর সাহায্য অবশ্যম্ভাবী: যারা সত্যের পথে অটল, আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন (আয়াত: ৬৯)।




৫. সূরাটির মূল বিষয়বস্তু

📌 ঈমানের পরীক্ষা ও প্রকৃত মুমিনের পরিচয়
📌 নবীদের সংগ্রাম ও ধৈর্যের ইতিহাস
📌 শিরকের অসারতা ও তাওহীদের শ্রেষ্ঠত্ব
📌 দুনিয়ার জীবনের অস্থায়িত্ব ও আখিরাতের প্রস্তুতি
📌 মুমিনদের জন্য সুসংবাদ ও কাফিরদের জন্য সতর্কবার্তা


৬. সূরা আনকাবুতের ফযিলত

🔹 পরীক্ষায় ধৈর্য বাড়ায়: এই সূরা তিলাওয়াতকারীকে বিপদে ধৈর্য ধারণের শক্তি দেয়।
🔹 ঈমান মজবুত করে: নবীদের কাহিনী দ্বারা ঈমানী শক্তি অর্জন হয়।
🔹 শিরক থেকে বাঁচায়: মাকড়সার জালের উদাহরণ দ্বারা শিরকের দুর্বলতা বুঝা যায়।
🔹 আখিরাতের স্মরণ বাড়ায়: এই সূরা পড়লে দুনিয়ার মোহ কমে ও আখিরাতের প্রস্তুতি বাড়ে।


৭. সূরাটির আলোকে ৫টি বিষয়ভিত্তিক আয়াত (অর্থসহ)

১. ঈমানের পরীক্ষা

আয়াত:

“وَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْمُنَافِقِينَ”
অর্থ: “আল্লাহ অবশ্যই জানেন কারা ঈমানদার এবং কারা মুনাফিক।” (আয়াত: ১১)

ব্যাখ্যা: আল্লাহ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মুমিন ও মুনাফিক চিহ্নিত করেন।

২. ধৈর্যের গুরুত্ব

আয়াত:

“وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ”
অর্থ: “ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।” (আয়াত: ৪৫)

ব্যাখ্যা: ধৈর্য ও নামাজই মুমিনের প্রধান হাতিয়ার।

৩. শিরকের দুর্বলতা

আয়াত:

“مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاءَ كَمَثَلِ الْعَنكَبُوتِ”
অর্থ: “যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে অভিভাবক বানায়, তাদের উদাহরণ মাকড়সার মতো।” (আয়াত: ৪১)

ব্যাখ্যা: শিরকের ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল, যেমন মাকড়সার জাল।

৪. নবীদের সংগ্রাম

আয়াত:

“وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ فَلَبِثَ فِيهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمْسِينَ عَامًا”
অর্থ: “আমি নূহকে তার কওমের কাছে পাঠিয়েছিলাম, তিনি তাদের মধ্যে ৯৫০ বছর অবস্থান করেছিলেন।” (আয়াত: ১৪)

ব্যাখ্যা: নবীরা দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনেনি।

৫. আখিরাতের সতর্কতা

আয়াত:

“وَمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ”
অর্থ: “এই দুনিয়ার জীবন তো কেবল ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া কিছুই নয়।” (আয়াত: ৬৪)

ব্যাখ্যা: দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতই চিরস্থায়ী।


সারসংক্ষেপ:

সূরা আনকাবুত মুমিনদেরকে পরীক্ষায় ধৈর্য ধারণ, শিরক থেকে বেঁচে থাকা এবং নবীদের আদর্শে চলার শিক্ষা দেয়। এটি দুনিয়ার মোহ কাটিয়ে আখিরাতমুখী জীবন গড়ার প্রেরণা যোগায়।

সূরা আনকাবুতের নির্বাচিত আয়াতসমূহের অর্থ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর

১. আয়াত ৬৪: দুনিয়ার জীবনের মোহ ও আখিরাতের বাস্তবতা

আয়াত:

وَمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ ۚ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
অর্থ:
“এই দুনিয়ার জীবন তো কেবল ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া কিছুই নয়। আর নিশ্চয়ই আখিরাতের গৃহই হল প্রকৃত জীবন। যদি তারা জানত!”

তাফসীর:

  • দুনিয়ার জীবন ভ্রান্তি ও ক্ষণস্থায়ী সুখের খেলামাত্র।
  • প্রকৃত স্থায়ী জীবন হলো আখিরাত, যা কাফিররা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়।
  • শিক্ষা: দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়া।

২. আয়াত ৪৫: নামাজ ও ধৈর্যের গুরুত্ব

আয়াত:

اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ ۖ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ ۗ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
অর্থ:
“আপনি এই কিতাবের যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তিলাওয়াত করুন এবং সালাত কায়েম করুন। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।”

তাফসীর:

  • নামাজ গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করে।
  • শিক্ষা: নামাজ ঈমানের স্তম্ভ ও নৈতিকতা রক্ষার হাতিয়ার।

৩. আয়াত ৫৬-৬৪: আল্লাহর রহমত ও আখিরাতের সতর্কতা

আয়াত ৫৬:

يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ أَرْضِي وَاسِعَةٌ فَإِيَّايَ فَاعْبُدُونِ
অর্থ:
“হে আমার ঈমানদার বান্দারা! নিশ্চয় আমার পৃথিবী প্রশস্ত। সুতরাং তোমরা শুধু আমারই ইবাদত কর।”

তাফসীর:

  • আল্লাহর রহমত সর্বত্র বিস্তৃত, তাই শিরক থেকে দূরে থাকতে হবে।

আয়াত ৬৪ (পূর্বে উল্লিখিত): দুনিয়ার মোহ ও আখিরাতের শ্রেষ্ঠত্ব।


৪. আয়াত ৬৯: সত্যের পথে সংগ্রামে আল্লাহর সাহায্য

আয়াত:

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ:
“আর যারা আমার পথে সংগ্রাম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথের সন্ধান দেব। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন।”

তাফসীর:

  • আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীকে তিনি সঠিক পথ দেখান।
  • শিক্ষা: সত্যের জন্য প্রচেষ্টা করলে আল্লাহ সাহায্য করেন।

৫. আয়াত ২: ঈমানের পরীক্ষা

আয়াত:

أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ
অর্থ:
“মানুষ কি মনে করে যে, তারা শুধু এ কথাই বললেই ছেড়ে দেওয়া হবে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?”

তাফসীর:

  • ঈমান কেবল দাবি নয়, বরং পরীক্ষার মাধ্যমেই এর সত্যতা প্রমাণিত হয়।

৬. আয়াত ২০: আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন

আয়াত:

قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ بَدَأَ الْخَلْقَ ۚ ثُمَّ اللَّهُ يُنْشِئُ النَّشْأَةَ الْآخِرَةَ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থ:
“বলুন, পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ আখিরাতের সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”

তাফসীর:

  • প্রকৃতি গবেষণা করে আল্লাহর কুদরত বুঝতে হবে।
  • শিক্ষা: সৃষ্টি নিদর্শন ঈমান বাড়ায়।

সারসংক্ষেপ:

  • আয়াত ৬৪: দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আখিরাতমুখী হওয়া।
  • আয়াত ৪৫: নামাজ গুনাহ থেকে রক্ষা করে।
  • আয়াত ৫৬-৬৪: আল্লাহর রহমত ও শিরক থেকে বেঁচে থাকা।
  • আয়াত ৬৯: সত্যের পথে সংগ্রামে আল্লাহর সাহায্য লাভ।
  • আয়াত ২: ঈমানের দাবি পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়।
  • আয়াত ২০: সৃষ্টি নিদর্শন আল্লাহর ক্ষমতার প্রমাণ।

এই আয়াতগুলো মুমিনদেরকে ধৈর্য, তাওহীদ ও আখিরাতমুখী জীবনের শিক্ষা দেয়।