আসম আব্দুর রব আর সিরাজুল আলম খান এই দুইজনে জাতির যে পরিমাণ ক্ষতি করেছে, কিয়ামত পর্যন্ত এর বিপরীতে কাজ করেও এই ক্ষতি পোষানো সম্ভব নয়। এরা জাতীয় বিশ্বাসঘাতক। এদের চরিত্র পরিষ্কার করলেই গোটা জাতির ইতিহাস পরিষ্কার হয়ে যাবে। কাজেই এদের চরিত্রের ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণ করে শহরে ও পাড়ায়-মহল্লায় পথে ঘাটে রুপালী পর্দায় প্রদর্শন করা দরকার। G Mustapha
কে ছিলেন সিরাজুল আলম খান দাদাভাই
Who was Serajul Alam Khan Dadabhai | Biography | Information | সিরাজুল আলম খান: এক ‘তাত্ত্বিক’ আর রাজনীতির ‘রহস্যপুরষ’ | ১৯৪১ সালের ৬ই জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সিরাজুল আলম খান, যিনি পরবর্তীকালে সুপরিচিত হয়ে উঠেন রাজনীতির একজন তাত্ত্বিক হিসেবে এবং যাকে তার কর্মী বা সমর্থকরা দাদা হিসেবে সম্বোধন করতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। ১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহ সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৩-’৬৪ এবং ১৯৬৪-’৬৫ এই দুই বছর তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করে বাংলাদেশীদের স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ’৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যে নিউক্লিয়াস গড়ে উঠে তিনিই ছিলেন তার মূল উদ্যোক্তা। নিউক্লিয়াস স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামেও পরিচিত ছিল। এই নিউক্লিয়াসের সদস্য ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ।
১৯৬২-’৭১ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন, ৬-দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন, ১১-দফা আন্দোলন পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন করে এই ‘নিউক্লিয়াস’। আন্দোলনের এক পর্যায়ে গড়ে তোলা হয় ‘নিউক্লিয়াসে’র রাজনৈতিক উইং বি.এল.এফ এবং সামরিক ইউনিট ‘জয় বাংলা বাহিনী`।
স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে ‘জয় বাংলা’ সহ সকল স্লোগান নির্ধারণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে “…এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” বাক্যসমূহের সংযোজনের কৃতিত্ব ‘নিউক্লিয়াসে’র। এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিরাজুল আলম খানের ভুমিকা ছিল মুখ্য। সিরাজুল আলম খান দেশে-বিদেশে ‘রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে পরিচিত।
কে এই সিরাজুল আলম খান? দেশভাগের নেপথ্য কারিগর
________________________________
এক কথায় বললে, সিরাজুল আলম খান না থাকলে শেখ মুজিব কোনদিন বঙ্গবন্ধু হতে পারতেন না এবং পাকিস্তানও ভাঙতো না। ১৯৬৬ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে হওয়া যাবতীয় ঘটনার মূল কারিগর ছিল এই সিরাজ।
১৯৬২ সালে অত্যন্ত মেধাবী এবং উচ্চ বিলাসী ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান যুগান্তর দল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন গুপ্ত সংগঠন নিউক্লিয়াস। সাথে সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ছাত্রলীগের আরো দুইজন প্রভাবশালী নেতা আব্দুর রাজ্জাক এবং কাজী আরেফ আহমেদ। এরপরে সাথে যুক্ত হোন আবুল কালাম আজাদ। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করে নতুন ধারার সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। নিউক্লিয়াস পরে স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস, বিএলএফ, জয় বাংলা বাহিনী, মুজিব বাহিনী; অবস্থা বুঝে নানা নাম ধারন করে।
সিরাজুল আলম খান গণিত বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তবে নানান দর্শনের দিকে উনার ঝোক ছিল প্রবল। তিনি কার্ল মার্ক্স এবং হেগেলের কমিউনিজম আর্দশ দ্বারা প্রভাবিত হোন। তবে সিরাজুল আলম খান প্রথাগত বাম রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি নিজের অবস্থান সম্পর্কে বলেছিলেন, ইউরোপের দার্শনিকরা ইউরোপের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে যে তত্ত্ব দিয়েছেন তা বাংলাদেশে চলবে না। হেগেলের তত্ত্বকে তিনি নিজের মত করে সংযোজন, সংশোধন এবং বিয়োজন করে একটি সংকর তত্ত্ব তৈরি করেন। (পরবর্তী এর নাম দেন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র। যাইহোক সেটা অন্য আলাপ)।
এই সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বেঁচে আছেন। দেশ আলাদা করার কথা কারো কল্পনায় ছিল না। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আব্দুল্লাহ আবু সায়িদ উনার বই সংগঠন এবং বাঙালীতে লিখেছেন ১৯৬৮/৬৯ সালেও কেউ দেশ ভাগের কথা ভাবেনি। সিরাজুল আলম খান নিজেও বলেছেন ৭১ সালের আগে শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া এমনকি আওয়ামী লীগেরও আর কেউ স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেনি।
নিউক্লিয়াসের সদস্য হওয়া ছিল বেশ কঠিন। উগ্রবাদী হিন্দু দল যুগান্তর থেকে অনুপ্রাণিত নিউক্লিয়াসের সদস্য হওয়া শর্তও ছিল যুগান্তরের মতই—
১। আঙুল কেটে রক্ত দিয়ে শপথ নিতে হতো দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত অর্জন, পদ, পদবি সুযোগ বা সুবিধার পেছনে ছুটবে না,
২। বিয়ে করবে না। আবুল কালাম আজাদ বিয়ে করায় তাকে নিউক্লিয়াস থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
৩। মাঝরাতে রেল লাইন ধরে সাত-আট মাইল হাঁটা ও ফিরে আসা।
৪। টানা কয়েক রাত জেগে থাকা।
৫। কম খাওয়া এবং পানি ছাড়া কিছুই না খেয়ে ২/৩ দিন থাকা।
৬। মা/বাবা বা পরিবারের কারো সাথে কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না।
মূলত ছাত্রলীগ থেকেই নিউক্লিয়াসে রিক্রুট করা হতো। আব্দুর রাজ্জাকের কাজ ছিল রিক্রুটিং, কাজী আরেফ ছাত্রলীগে নিউক্লিয়াসের সমার্থক মতাদর্শ ছড়াতেন আর সিরাজুল আলম খান সদস্যদের তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দিতেন।
ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বগুনের কারনে ছাত্রলীগে সিরাজুল আলম খান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন৷ তাই রিক্রুটে কোন সমস্যা ছিল না। তখন ছাত্রলীগে দুইটা গ্রুপ ছিল, এক গ্রুপের নেতা সিরাজুল আলম খান অন্য গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল শেখ ফজলুল হক মণি। তবে মেধার লড়াইয়ে হেরে যায় শেখ মণি গ্রুপ। শেখ মণির গ্রুপের যাবতীয় প্রচেষ্টা ছিল কিভাবে কেন্দ্রের বড় বড় পদে অনুসারীদের ঢোকানো যায় আর সিরাজের গ্রুপ কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের কাজে বেশি গুরুত্ব দিতো। এতে যা হয় তা হল কিছুদিনের মধ্যে সিরাজ গ্রুপ ছাত্রলীগে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে। প্রায় সকল মূল পদে সিরাজ গ্রুপ থেকেই আসে৷ এর একমাত্র ব্যতিক্রম আল মুজাহিদী। তিনিই সেই সময়ে ছাত্রলীগে সিরাজ বলয়ের বাইরের একমাত্র কেন্দ্রীয় সভাপতি৷ বলা বাহুল্য আগে ১৯৭২ সালের আগে ছাত্রলীগে আওয়ামী লীগের কোন প্রভাব ছিল না। ছাত্রলীগ একটা স্বাধীন সংগঠন ছিল।
ধীরে ধীরে সারা দেশে ছাত্রলীগের মূল পদগুলো নিউক্লিয়াসের সদস্যরা দখল করে। তবে নিউক্লিয়াসের সদস্যরা এই মূল ৩ জন এবং একই ব্যাচের কয়েকজন জন ছাড়া আর কাউকে চিনতো না।
তাত্ত্বিক জ্ঞানের পরে নিউক্লিয়াস সদস্যরা সামরিক প্রশিক্ষণও নিতেন। ভারত নিউক্লিয়াস সদস্যদের অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিতো। ১৯৭০ সাল নাগান নিউক্লিয়াসের ৭০০০ সদস্য সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহন করে। এরা ছিল সার্বক্ষনিক কর্মী৷ স্বাধীনতার জন্য তারা যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত ছিলো। ভারতের সাথে কিভাবে সম্পর্ক হয় তারা প্রশিক্ষণ নিতো বা কিভাবে অস্ত্র আসতো এ ব্যাপারে নিউক্লিয়াসের নেতারা কখনোই মুখ খোলেনি। কোলকাতার কেজিবি এজেন্ট ইউরি ব্রেভচিক আমেরিকা পালিয়ে যাবার পরে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন কোলকাতা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের বই পাঠাতো সোভিয়েত ইউনিয়ন, এই বইয়ের বক্সে মূলত থাকতো অস্ত্র। এই অস্ত্র নিউক্লিয়াসকে পাঠানো হতো কিনা সেটা আমরা জানি না। তবে দুইজন ব্যক্তির নাম পাওয়া যায় চিত্তরঞ্জন সুতার এবং কালিদাস বৈদ্য। এরমধ্যে কালিদাস বৈদ্য শেখ মুজিবুর রহমানের এবং ভারতের যোগাযোগেরও মূল ব্যক্তি ছিলেন।
এসময় নিউক্লিয়াসের সদস্যরা নানান অপকর্মের জরিয়ে পরে৷ কিন্তু তার নাম হতো ছাত্রলীগের। ছাত্রলীগে নিয়ন্ত্রণ নেবার পরে নিউক্লিয়াসের থিংক ট্যাংক স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেবার জন্য একজন নেতা খুঁজতে থাকে। প্রথমে তারা মওলানা ভাসানীর সাথে যোগাযোগ করে। তখন চীনের সাথে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং এই সম্পর্ক স্থাপনে ভাসানী বড় ভূমিকা পালন করে। তারা বুঝতে পারে ভাসানী আগ্রহী না।
এরপর নিউক্লিয়াস আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খানের সাথে যোগাযোগ করে। আতাউর রহমান খান অত্যন্ত চৌকস নেতা ছিলেন। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করার একটা স্বভাবজাত ক্ষমতা ছিল খান আতাউর রহমানের। কিন্তু উনার সাথে কথা বলে সিরাজ নিশ্চিত হয় আতাউর রহমান পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের কট্টর সমর্থক, একই সাথে কম্যুনিজমের বিরোধী। এই প্রসঙ্গে সিরাজ বলেন আতাউর রহমানের পেছনে তার বহু সময় অপচয় হয়েছে।
ইতিমধ্যে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করেন। নিউক্লিয়াস নড়েচড়ে বসে। তারা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে বুঝতে পারেন শেখ মুজিবুর রহমানও একই রাস্তায় আছে। ছয় দফা কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মধ্যে ভাঙন তৈরি হয়। শেখ মুজিবুর রহমান বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পরে দলের মধ্যেই। এই সময় নিউক্লিয়াসের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বাত্নক সহায়তা করে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে লাহোরে যাবার আগে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম কমিটির একটা সভা ডাকেন।
নিউক্লিয়াস আগে খবর পেয়ে যায় তাজ উদ্দিন ছাড়া প্রেসিডিয়াম কমিটির আর তেমন কারো সায় নেই। কমিটির সভা শুরু হলে সিরাজুল আলম খান তার একদন ক্যাডার সাথে করে অস্ত্র নিয়ে সভাকক্ষের বাইরে মহড়া শুরু করে। অস্ত্রের মহড়া দেখে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম কমিটির সদস্যরা দমে যায়৷ নিউক্লিয়াস ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছয় দফা আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই নিউক্লিয়াসের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ শেখ মুজিবুর রহমানকে আওয়ামী লীগের তথা দেশের সবচেয়ে বড় নেতায় পরিনত করে। সিরাজুল আলম খান শেখ মুজিবুর রহমানকে একটু ইশারা দেন নিউক্লিয়াসের ব্যাপারে। তবে তার ভাষ্য মতেই শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে নিউক্লিয়াসের অবস্থা এবং মূল পরিকল্পনা কখনোই পরিষ্কার করেন নি ১৯৬৯ সালের পূর্ব পর্যন্ত।
ছাত্রদের পাশাপাশি শ্রমিকদের মাঝেও নিউক্লিয়াস প্রভাব বিস্তার করে। সিরাজুল আলম খান শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলে। ১৯৬৬ থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত সকল আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছিল ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন ছাত্র সমাজ এতে সহায়তা করে শ্রমিক সংগঠনগুলো। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মূল চার নেতা শাহজাহান সিরাজ, আ.স.ম আব্দুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, নুরু আলম সিদ্দিকীসহ অনান্য প্রভাবশালী নেতা সবাই ছিল নিউক্লিয়াসের সদস্য। সকল আন্দোলন হতো নিউক্লিয়াসের থিংক ট্যাংকের প্রসক্রিপশন মতে।
১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনের সময় প্রথম শেখ মুজিবুর রহমানকে নিউক্লিয়াস সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। শেখ মুজিবুর রহমান শেখ ফজলুল হক মণি এবং তোফায়েল আহমেদকে তাদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে বলে। এরপর আসে নির্বাচন। নিউক্লিয়াস অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহন করে। কেন্দ্র দখল এবং জাল ভোট দেবার ঘটনা পাকিস্তানে এর আগের কোন নির্বাচনে হয়নি। নিউক্লিয়াস এই জাল ভোট দেবার ব্যাপারটা শুরু করে। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের তখনো ভোট দেবার বয়স হয়নি, তিনি কিছু বছর আগে একটা টকশোতে ৭০ সালের নির্বাচনে জাল ভোট দেবার গল্প বলেন (গর্বের সাথে)। তাদের কাজে অভাবনীয় ফলাফল পায় আওয়ামী লীগ। শেখ মুজিবুর রহমান কাজী সিরাজকে বলেন তিনিও চিন্তা করতে পারেন নাই এমন জয়ের কথা।
শেখ মুজিব মনে করতো সে নিউক্লিয়াসকে ব্যবহার করছে। অন্যদিকে সিরাজ ভাবতো তারা শেখ মুজিবকে ব্যবহার করছে।
১৯৭০ সালে নিউক্লিয়াস তাদের অন্যতম প্রভাবশালী “জয় বাংলা” শ্লোগানের সূচনা করে। আওয়ামী লীগের সবাই এই শ্লোগানের বিরোধিতা করে। তবে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং ছাত্রলীগের শক্তির সামনে তাদের বিরোধিতা টেকে না।
এরপর তারা পতাকা বানায়। সবুজ হল পূর্ব বাংলা আর লাল হল কমিউনিজমের প্রতীক। (অনেক জ্ঞানী বলে লাল হল শহীদদের প্রতীক। তারা জানে না এই পতাকা বানানো হয় যুদ্ধ শুরু হবার অনেক আগেই)।
পতাকা বানানো ছাড়াও পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত নির্ধারন, স্বাধীনতার ইশতেহার বানানো সবই হয় নিউক্লিয়াসের পরিকল্পনা অনুসারে। তাজ উদ্দিন আহমেদ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রায় সবাই এসবের বিরোধিতা করে। তবে নিউক্লিয়াসের সাথে তাজ উদ্দিন আহমেদের সু-সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। সিরাজুল আলম খান বলেন,
❝ বুদ্ধিজীবীরা ‘৭১-এর মার্চের আগের দিনও বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে পেলেন না।
শুধু বুদ্ধিজীবীরাই নন, সে সময়ের আওয়ামী লীগসহ ছােটো-বড়ো কোনাে রাজনৈতিক দলই মার্চ মাসের আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়টিকে সমর্থন করেনি। এমনকি তাদের রাজনৈতিক চিন্তার মধ্যেও স্বাধীনতা বিষয়টি আনতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবস্থানটি ছিলাে একেবারেই ভিন্ন। ‘৬৯-এ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি লাভের পরই বঙ্গবন্ধুকে ‘নিউক্লিয়াস’ ও ‘বিএলএফ’ সম্পর্কে অবহিত করা হয়। তখন থেকে তিনি স্বাধীনতার প্রশ্নে শুধু আপােষহীনই ছিলেন না, নিউক্লিয়াস’ ও বিএলএফ’ এর কর্মকাণ্ড সমর্থন করতেন এবং যে কোনাে পদক্ষেপে উৎসাহ যােগাতেন।
এখানে স্পষ্টভাবে বলা প্রয়ােজন যে, আওয়ামী লীগ দলগতভাবে স্বাধীনতাকে সমর্থন করেনি। এমনকি ১৯৬৯-এর আগে বঙ্গবন্ধুও “নিউক্লিয়াস’ ও ‘বিএলএফ’-এর কর্ম- তৎপরতা সম্পর্কে জানতেন না। জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ বিরােধিতা করলেও বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও অবস্থান এবং “নিউক্লিয়াস-বিএলএফ’-এর প্রচণ্ড চাপ ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বলে “জয় বাংলা স্লোগানকে তারা মেনে নিতে বাধ্য হয়। ❞
১৯৭০ সালের শেষের দিকে নিউক্লিয়াস কিছুটা প্রকাশ্যে আসে বাংলাদেশের লিবারেশন ফ্রন্ট- বিএলএফ এবং জয় বাংলা বাহিনী নামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষন দেওয়া শুরু করে।
১৯৭১ সালের শুরু থেকেই নিউক্লিয়াস সহিংস আন্দোলন শুরু করে। উদ্দেশ্য যেন কোন ভাবেই সমঝোতা না হয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নেতারা আসলে তারা, ভুট্টোকে জবাই করো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো ধরনের শ্লোগান দেয়। পতাকায় আগুন ধরানো, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের ছবিতে আগুন ধরানো, বিহারিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করতে থাকে।
মার্চের শুরুর দিকে এটা চরমে চলে যায়। খুলনা, চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহসহ সারা দেশে বিহারিদের উপর হত্যাযজ্ঞ চলে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে এর ভয়াবহতা ছিল সবচেয়ে বেশি। পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, সৈয়দপুরে হাজার হাজার বিহারিকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
বাঙালিদের প্রিয় সাংবাদিক এন্থনি মাসকোরেনহাস সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে লিখেছিলেন,
❝ Thousands of families of unfortunate Muslims, many of them refugees from Bihar were mercilessly wiped out. Women were raped or had their breasts torn out… Children did not escape the horror: the lucky ones were killed with their parents…. The real toll have been as may high as 100,000. ❞
২৩ মার্চ, পাকিস্তান ইসলামিক রিপাবলিক দিবসে পল্টন ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে, তাদের প্রস্তাবিত পতাকা উড়িয়ে, ‘জয়বাংলা বাহিনীর চার প্লাটুন মার্চ পাস্টের মাধ্যমে পতাকাকে অভিবাদন জানায় এবং পতাকা উত্তোলনের সময় ৭ মিমি রাইফেলের গুলির আওয়াজে পতাকাকে স্বাগত জানানাে হয়। পরে জয়বাংলা বাহিনী শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে গিয়ে তার হাতে পতাকা তুলে দেয়। শেখ মুজিবুর রহমানের গাড়ি ও বাসভবনে পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এরপর ২৫ মার্চের রহস্যময় রাত। কেন শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে সেচ্ছায় বন্দী হোন, এর উত্তর কোন ঐতিহাসিক দিতে পারেনি। এর আগে অখন্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন এটা শেখ মুজিবুর রহমান এমনটা হয়তো কখনো চিন্তাই করেননি। এই সুযোগ সামনে আসার পরে তার চিন্তাভাবনা সব পাল্টে যায়? এর কোন উত্তর আসলে নেই। তবে এই সেচ্ছা বন্দীর ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমানের দুই হাত তাজ উদ্দিন আহমেদ এবং নিউক্লিয়াস নেতারা কেউই কিছু জানতো না৷ এরপর নিউক্লিয়াস নেতারা ভারতে চলে যায়। এদিকে নিউক্লিয়াসকে কিছুই না জানিয়ে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে বসে তাজ উদ্দিন আহমেদ। এতে তার উপর চরম ক্ষুব্ধ হয় নিউক্লিয়াস। সুচারু রুপে আন্দোলনের নাটাই ঘোরানো নিউক্লিয়াসের হাত থেকে হঠাৎ নাটাই সরে যায়।
মুক্তিবাহিনীতে যোগ না দিয়ে নিউক্লিয়াসের নেতারা নিজেদের পূর্ব প্রশিক্ষিত কর্মীদের নিয়ে গঠন করে “মুজিব বাহিনী”। ভারত জেনারেল সুজত সিং উবানকে দ্বায়িত্ব দেন মুজিব বাহিনীর উপদেষ্টা হিসেবে। মুজিব বাহিনী মুক্তি বাহিনীর চেয়ে উন্নত অস্ত্র এবং রশদ পেতো। মুজিব বাহিনী চারটা সেক্টরে ভাগ করে যুদ্ধ শুরু করে, তাদের সেক্টর কমান্ডার ছিলো সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মণি, আব্দুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমেদ। মুজিব বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৪০,০০০
এখানে নিউক্লিয়াসের একটা ছন্দ পতন হয়। মুজিব বাহিনীর চেয়ে মুক্তি বাহিনী আকারে বড় এবং সেনাবাহিনীর সদস্য দিয়ে গঠিত ছিলো। আর তাজ উদ্দিন আহমেদের সাথে নিউক্লিয়াসের বিরোধ। তাই এ সময়ে নিউক্লিয়াসের প্রভাব অতটা ছিল না।
এই নিউক্লিয়াসের মুজিব বাহিনী নিয়ে আরেকটা বড় আলোচনা ১৪ ডিসেম্বর রাতের ঘটনা নিয়ে৷ এই সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে৷ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আত্নসমর্পণ নিয়ে দর কষাকষি চলছে৷ পাকিস্তানপন্থী লোকজন পালাচ্ছে ঠিক সেই সময়ে পাকিস্তানের প্রতি প্রকাশ্যে আনুগত্যের প্রকাশকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের হত্যা করা হয়৷ অনেকেরই সন্দেহের তীর নিউক্লিয়াসের দিকে। কারন তাদের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বড় বাঁধা হত এই বুদ্ধিজীবীরা।
একাত্তরের এত দ্রুত পরিসমাপ্তিও সিরাজের পরিকল্পনার বাইরে ছিলো। তারা দীর্ঘ মেয়াদি গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
আরও পড়তে পারেন–শিক্ষামূলক বাণী ও ১০০০ শ্রেষ্ঠ বাণী চিরন্তনী
যুদ্ধের পরে ক্ষমতার ভাগাভাগি, সরকারের প্রকৃতি নিয়ে সিরাজের সাথে মুজিবের বিরোধ বাঁধে। সিরাজ চেয়েছিলো, শেখ মুজিব ‘জাতির পিতা’। তিনি দল এবং সরকারের প্রধান হবেন না। বাইরে থেকে তিনি নির্দেশনা দেবেন, নৈতিক শক্তি জোগাবেন। দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে এ বিষয়ে সিরাজ পয়েন্ট আকারে দফাওয়ারি কিছু সুপারিশ তৈরি করে।
তবে শেখ মুজিব এগুলো প্রত্যাখ্যান করে নিজের মত দেশ চালাতে থাকেন।
শ্রমিক লীগ এবং ছাত্রলীগ তখনো সিরাজের প্রভাবিত। মণির কিছু অনুসারী ছাত্রলীগে ছিল তবে সেটা খুব বেশি না। রাজনীতিতে মণি নিজের প্রভাব বৃদ্ধি করার জন্য নিজের শ্বশুড়কে কৃষক লীগের প্রেসিডেন্ট করে কমিটি দেন। জবাবে সিরাজও পাল্টা কমিটি দেন। মুজিবের ভাগ্নে এর বাইরে মণির তেমন কোন যোগ্যতা ছিল না। ছাত্রলীগে সিরাজ এবং মণির অনুসারি দুইভাগ হয়ে যায়।
শেখ মুজিব সিরাজের গ্রুপ পাশে রেখে মণির গ্রুপের সম্মেলনে অংশ নেন। এবং এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানিকভাবে শেখ মুজিবের সাথে সিরাজের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছেদ হয়।
৭২ সালের অক্টোবরে সিরাজ তার অনুসারীদের নিয়ে গঠন করেন নতুন দল জাসদ। ছাত্রলীগে সিরাজের অনুসারীরা তাদের দলের নাম দেয় জাসদ ছাত্রলীগ।
খুবই অল্প সময়ের মধ্যে জাসদ তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বুদ্ধিজীবী মহলেও জাসদের বেশ শক্তিশালী সমর্থক তৈরি হয়। জনপ্রিয় তরুন বুদ্ধিজীবী আহমদ ছফাও জাসদের থিংক ট্যাংকের অংশ ছিলো। জাসদের মোট তিনটা শাখা ছিল— রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামরিক(গণবাহিনী)। জাসদ ছাত্রলীগও ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। জাসদ ছাত্রলীগকে ঠেকাতে ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্রলীগ এক হয়ে যায়। এরপরেও ১৯৭৩ সালের ডাকসু নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগ পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়, ফল ঘোষণার আগে লীগ হামলা করে ব্যালট ছিনতাই করে এবং ফলাফল বানচাল করে দেয়।
এরপর জাসদ এবং লীগ মুখোমুখি হয়ে যায়। জেলগুলো ভরে যায় জাসদের নেতা-কর্মীতে। লীগ, রক্ষী বাহিনীর অত্যাচারের জবাবে শুরু হয় গণবাহিনীর লাল সন্ত্রাস— থানা লুট, ব্যাংক লুট, ডাকাতি— রক্ষী বাহিনীর সাথে পাল্লা দিয়ে এহেন কোন অপকর্ম নাই যে গণবাহিনী করে নাই।
মজার ব্যাপার হল লীগ এবং জাসদ মুখোমুখি হলেও শেখ মুজিবের সাথে সিরাজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক অটুটই ছিলো। গণবাহিনীর সদস্যদের প্রতি সিরাজের কঠোর নির্দেশ ছিল কোনভাবেই শেখ পরিবারের সংশ্লিষ্ট কারো ক্ষতি করা যাবে না। তবে এরপরও পনের আগস্টের ঘটনায় জাসদ সমর্থন দেয়। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ৩ নভেম্বর, ৭ নভেম্বরের বিপ্লব-প্রতিবিপ্লবের ঘটনা প্রবাহে ভুল সিদ্ধান্তে জাসদ জনপ্রিয়তা হারায়।
জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক সফলতার মধ্যদিয়ে জাসদ রাজনীতিতে আরো অজনপ্রিয় এবং অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। সিরাজুল আলম খান রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে নিভৃত জীবনযাপন শুরু করেন। নিউক্লিয়াস করার সময় একটা নিয়ম ছিল দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত সদস্যরা কেউ বিয়ে করতে পারবে না। সিরাজ দেশ ভাগের পরেও বিয়ে করেননি।
একাত্তরের যুদ্ধে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কারনে অংশ নিয়েছে, কেউ অপ্রস্তুত অবস্থায়, বাধ্য হয়ে, প্রতিশোধ নিতে, কোন উপায় না পেয়ে ইত্যাদি। তবে জাসদের কর্মীদের সেই ১৯৬২ সাল থেকেই পরিকল্পনা ছিল দেশভাগের। তাদের মানসিক এবং সামরিক প্রস্তুতি ছিল পর্যাপ্ত, তারা জানতো কেন এই যুদ্ধ। একমাত্র শেখ মুজিব এবং তাজউদ্দিন ছাড়া আওয়ামী লীগের কোন নেতা একাত্তর সালের মার্চ পর্যন্তও দেশভাগের কথা চিন্তা করে নাই। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে ছাত্রলীগের বিপ্লবী অংশ (তথা নিউক্লিয়াস তথা জাসদ) একাত্তরের চেতনার মূল উত্তরাধিকার।
অতি অল্প সময়ে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ধস৷ রাজনীতির ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। জাসদের উত্থান-পতন রাজনীতির ইতিহাসে একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। সিরাজুল আলম খানও একটা অদ্ভুত চরিত্র। সফল হয়েও ট্রাজেডির শিকার হয়েছেন। ইতিহাসের মহানয়াক হতে পারতেন তিনি তবে হয়ে গেছেন একটা ফুটনোট….
বিস্তারিত পড়াশোনাঃ
- আওয়ামী লীগঃ উত্থান পর্ব- মহিউদ্দিন আহমেদ
- জাসদের উত্থান-পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি- মহিউদ্দিন আহমেদ
- তাজ উদ্দিন আহমেদঃ নেতা এবং পিতা- শারমিন আহমেদ
- স্বাধীনতা, সশস্ত্র সংগ্রাম এবং আগামীর বাংলাদেশ- সিরাজুল আলম খান
- আমি সিরাজুল আলম খানঃ একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য- শামসুদ্দিন পেয়ারা
- সিরাজুল আলম খান এবং স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস- মহিউদ্দিন আহমেদ
- মুক্তিযুদ্ধে এক যুবকের কাহিনী- নীতিশ হালদার।
- আওয়ামী লীগঃ যুদ্ধ দিনের কথা- মহিউদ্দিন আহমেদ
৯. বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্রচিন্তায় সিরাজুল আলম খান এবং স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস- কামাল উদ্দিন আহমেদ
১০. প্রতিনায়ক- মহিউদ্দিন আহমেদ
১১. Fifty years of Bangladesh- Prof. Taj Hashmi
Nizam Mohammad Serajul Alam Khan also known as Serajul Alam Kh, Dada and Dadabhai, was a Bangladeshi politician, political analyst, philosopher and writer. He was one of the founders of Swadhin Bangla Biplobi Parishad (which came to be known as Bangladesh’s ‘Nucleus’), a secret organisation of Chhatra League, which played a significant role in the Bangladesh Liberation War. He along with Tofael Ahmed, Sheikh Fazlul Haque Moni and Abdur Razzaq formed and commanded Mujib Bahini (aka BLF) Khan was born on 6 January 1941 in Noakhali District in the then Bengal Presidency, British India.[3] His father, Khorshed Alam Khan, was a government officer. He graduated from Khulna Zilla School in 1956 and Dhaka College in 1958. He studied mathmatics at the University of Dhaka from 1958 to 1962. Khan served as the general secretary of the student political organization East Pakistan Chhatra League from 1963 to 1965.[4][5] Soon after returning to free the country from dissension within pro-liberation mainstream power base, Khan became conspicuous between left-of-center leadership and simmering far left young radicals. He was involved in a political struggle with Sheikh Fazlul Haque Mani. He developed an ideological difference from Sheikh Fazlul Haque Mani, due to the former’s advocacy of scientific socialism, thus forming the Jatiyo Samajtantrik Dal. In 1975, Sheikh Fazlul Haque Mani urged him to join BaKSAL, but he refused. Khan served as a professor of political science in the University of Wisconsin-Oshkosh, a post he has held since 1996.
areq Mahmud
সিরাজুল আলম খান মৃত্যু বরণ করলেন অবশেষে। তাকে রহস্যপুরুষ বল বাম ঘরানার সাংবাদিকরা। আমিও তাকে রহস্য পুরুষ মনে করি, কিন্তু ভিন্ন কারণে।
পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ হওয়ার পেছনে যারা ভূমিকা সবচেয়ে বেশি – তিনি সিরাজুল আলম খান। কিন্তু দুর্ভাগ্য তিনি খুব কম ভাত খেতে পেরেছিলেন; বলতে গেলে পারেনইনি। অনেকে হয়তো বলবেন – না, তিনি আসলে অনেক ভাত খেতে চাননি। আমরা মন্তব্য হলো – তিনি টেবিলেই বসতে পারেননি। ভাত আর প্লেট তো পরের বিষয়।
তিনি আমার নোয়াখালীর লোক। তার মৃত্যুতে ইন্না লিল্লাহি বলতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু সে উপায় বোধহয় নেই।